ভল্ফগাং আমাডেউস মোৎসার্ট

অস্ট্রীয় সঙ্গীত রচয়িতা

ভল্ফগাং আমাডেউস মোৎসার্ট[ক][খ][গ] (জার্মান: Wolfgang Amadeus Mozart, উচ্চারণ [ˈvɔlfɡaŋ ʔamaˈdeːʊs ˈmoːtsaʁt] (); ২৭শে জানুয়ারি ১৭৫৬ – ৫ই ডিসেম্বর ১৭৯১) ছিলেন ধ্রুপদী যুগের একজন অতিপ্রজ ও প্রভাবশালী অস্ট্রীয় সুরকার

ভল্ফগাং আমাডেউস মোৎসার্ট
মোৎসার্টের প্রতিকৃতি, আনু. ১৭৮১
জন্ম নাময়োআন্নেস ক্রিসস্টোমুস ভল্ফগাঙুস থেওফিলিউস মোৎসার্ট (অন্যান্য নাম)
জন্ম(১৭৫৬-০১-২৭)২৭ জানুয়ারি ১৭৫৬
গেট্রাইডেগাসে ৯, জালৎস্‌বুর্গ, পবিত্র রোম সাম্রাজ্য (অধুনা অস্ট্রিয়া)
মৃত্যু৫ ডিসেম্বর ১৭৯১(1791-12-05) (বয়স ৩৫)
ভিয়েনা, পবিত্র রোম সাম্রাজ্য (অধুনা অস্ট্রিয়া)
উল্লেখযোগ্য পরিবারমোৎসার্ট পরিবার
কর্মতালিকাসুরকর্মের তালিকা

জালৎস্‌বুর্গ শহরে জন্মগ্রহণকারী মোৎসার্ট শৈশব থেকেই তার বিস্ময়কর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। কিবোর্ড ও বেহালায় দক্ষতা অর্জন করে তিনি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার প্রথম সুর সৃষ্টি করেন এবং ইউরোপীয় অভিজাতদের সামনে তা পরিবেশন করেন। ১৭ বছর বয়সেই তিনি জালৎস্‌বুর্গের দরবারী সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, পাশাপাশি নিরলসভাবে অসংখ্য সুর সৃষ্টির মাধ্যমে আরও উচ্চ অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। ১৭৮১ সালে যখন তিনি ভিয়েনা ভ্রমণ করছিলেন, তখন তাকে জালৎস্‌বুর্গের দরবার পদ থেকে পদচ্যুত করা হয়।

তিনি ৬০০-এর অধিক সুর সৃষ্টি করেন, তন্মধ্যে অসংখ্য সুর সিম্ফোনিক, কনসার্টেন্ট, চেম্বার, গীতিনাট্যধর্মী, ও দলীয় সঙ্গীতের শীর্ষ সুর বলে বিবেচিত হয়। তিনি ধ্রুপদী সুরকারদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রভাব বিস্তারকারী এবং পরবর্তী পাশ্চাত্য শৈল্পিক সঙ্গীতে তার প্রভাব অনস্বীকার্য। লুডভিগ ফান বেটোফেন তার শুরুর কাজগুলো মোৎসার্টের অনুকরণে সৃষ্টি করেন এবং জোসেফ হ্যাডন লিখেন, "পরবর্তী ১০০ বছরেও এমন প্রতিভা দেখা যাবে না।"[১]

জীবনী

জন্ম ও শৈশব

মোৎসার্ট ১৭৫৬ সালের ২৭শে জানুয়ারি জালৎস্‌বুর্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লেওপোল্ড মোৎসার্ট (১৭১৯-১৭৮৯) জাল্‌ৎস্‌বুর্গ আর্চবিশপের সভাতে সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন এবং তার মাতা আন্না মারিয়া মোৎসার্ট (প্রদত্ত নাম: পার্টল, ১৭২০-১৭৭৮)।[২] তিনি তার পিতামাতার সাত সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। তার পাঁচ ভাইবোন শিশু অবস্থায় মারা যায়। তার বড় বোন মারিয়া আন্না মোৎসার্ট (১৭৫১-১৮২৯), যার ডাকনাম ছিল "নান্নেরল"। জন্মের পরদিনই জালৎস্‌বুর্গের সেন্ট রুপার্ট ক্যাথিড্রালে মোৎসার্টের অভিসিঞ্চন করা হয়। অভিসিঞ্চনের নথিতে তার নামের লাতিন রুপ ছিল Joannes Chrysostomus Wolfgangus Theophilus Mozart (ইয়োনেস ক্রিসোস্টোমুস ভোল্‌ফগাংক্‌ থিওফিলুস মোৎসার্ট)।[ঘ] বাল্যকালে তিনি নিজেকে "ভোল্‌ফগাংক্‌ আমাডে মোৎসার্ট" বলে পরিচয় দিতেন।[৩]

মোৎসার্টের পিতা লেওপল্ড জার্মানির আউসবুর্গের অধিবাসী[৪] একজন সুরকার ও অভিজ্ঞ শিক্ষক ছিলেন। ১৭৪৩ সালে তিনি জাৎস্‌বুর্গের প্রিন্স-আর্চবিশপ কাউন্ট লেওপল্ড আন্টন ফন ফির্মিয়ানের দরবারে চতুর্থ বেহালা বাদক হিসেবে নিয়োগ পান।[৫] চার বছর পর তিনি জাৎস্‌বুর্গে আন্না মারিয়াকে বিয়ে করেন। লেওপল্ড ১৭৬৩ সালে ঐকতান বাদকদলের উপ-কাপেলমেইস্টার হন। তার পুত্রের জন্মের বছর তিনি বেহালা বাজানোর উপর একটি পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করেন। ভেরসাখ আইনার গ্রুন্ডলিচেন ভিওলিনশুল নামক বইটি বেশ সাড়া ফেলে।[৬]

শৈশবে ভোল্‌ফগাংকের পিতাই তার একমাত্র শিক্ষক ছিলেন। সঙ্গীতের পাশাপাশি তিনি তার সন্তানদের ভাষা ও শিক্ষায়নিক বিষয়াবলী পাঠ দিতেন। সলোমন উল্লেখ করেন যে যখন লেওপল্ড তার সন্তানদের শিক্ষাদান করতেন, তখন মোৎসার্টের অগ্রগতি তার শিক্ষার চেয়েও অধিক ছিল।[৭] তার প্রথম সুর ও বেহালায় তার কাজ অভিনব ছিল, যা তার পিতাকে আশ্চর্যান্বিত করে।[৮] তার পুত্রের সঙ্গীত প্রতিভা বিকশিত হতে থাকলে তিনি সুর রচনা ত্যাগ করেন।[৯]

সঙ্গীত সফর (১৭৬২-১৭৭৩)

১৭৭০ সালের জানুয়ারিতে ১৪ বছর বয়সী মোৎসার্ট।

মোৎসার্টের শৈশবে তার পরিবার কয়েকটি ইউরোপীয় সফরে যায়, যেখানে তিনি ও নান্নেরল শিশুশিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশনা করেন। এই পরিবেশনা শুরু হয় ১৭৬২ সালে মিউনিখে বাভারিয়ার প্রিন্স-ইলেক্টর তৃতীয় মাক্সিমিলিয়ানের রাজদরবারে ও ভিয়েনাপ্রাগে সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এরপর তারা স্বপরিবারে সাড়ে তিন বছর ব্যাপী একটি দীর্ঘ কনসার্ট সফরে বের হন এবং মিউনিখ, মানহাইম, প্যারিস, লন্ডন,[১০] হেগ, পুনরায় প্যারিস এবং জুরিখ, ডনাউশিঙ্গেন, ও মিউনিখ হয়ে বাড়ি ফিরেন। এই সফরে তিনি অসংখ্য সঙ্গীতজ্ঞের সাথে পরিচিত হন এবং তাদের কাজের সাথে পরিচিত হন। ১৭৬৪ থেকে ১৭৬৫ সালে লন্ডনে ইয়োহান ক্রিস্টিয়ান বাখের সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তার কাজে বাখের বিশেষ প্রভাব ছিল।[১০] আট বছর বয়সে মোৎসার্ট তার প্রথম সুর রচনা করেন, ধারণা করা হয় এর বেশিরভাগ অংশই তার পিতা সুর করে দিয়েছিলেন।[১১] ১১ বছর বয়সে তিনি একটি ওরাটোরিয়া রচনা করেন এবং ১২ বছর বয়সে তিনি প্রথম অপেরার সুর করেন। ১৭৬৪ সালে মোৎসার্টের করা প্রথম সুর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।[১১]

তাদের পারিবারিক সফর প্রায়ই কষ্টকর এবং ভ্রমণের অবস্থা সেকেলে ছিল।[১২] তাদের অভিজাতদের নিকট থেকে আমন্ত্রণপত্র ও প্রত্যর্পণের জন্য অপেক্ষা করতে হত, এবং তারা বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে প্রায়ই দীর্ঘস্থায়ী ও মারাত্মক অসুখে পড়তেন। প্রথমে লেওপল্ড ১৭৬৪ সালের গ্রীষ্মে লন্ডনে[১৩] এবং পরে ১৭৬৫ সালে শরতে হেগে দুই সন্তানই অসুস্থ হয়ে পড়েন।[১৪] তারা ১৭৬৭ সালের শেষের দিকে ভিয়েনা সফরে যান এবং ১৭৬৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।

জালৎসবুর্গে এক বছর কাটানোর পর লেওপল্ড ও উল্‌ফগাংক আন্না মারিয়া ও নান্নেরলকে বাড়িতে রেখে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ১৭৬৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৭৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত তারা এই সফরে ছিলেন। পূর্ববর্তী সফরগুলোর মত লেওপল্ড পরিবেশক ও দ্রুত পরিপক্ব হয়ে উঠতে থাকা সুরকার হিসেবে তার পুত্রের দক্ষতা প্রদর্শন করতে চাইতেন। মোৎসার্ট বলঙ্গায় ইয়োসেফ মাইস্লিভেসেক ও জোভান্নি বাতিস্তা মার্তিনির সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে বিখ্যাত আকাদেমিয়া ফিলারমোনিকার সদস্য করা হয়। রোমের সিস্টিন চ্যাপেলে তিনি দুইবার গ্রেগরিও আলেগ্রির মিজারেরে পরিবেশন করতে শুনেন এবং নিজের স্মৃতি থেকে এই সুর রচনা করেন। ফলে তিনিই ভ্যাটিকানের এই সংরক্ষিত সম্পদের প্রথম অননুমোদিত কপি তৈরি করেন।[১৫]

জালৎস্‌বুর্গের দরবারে নিয়োগ (১৭৭৩-১৭৭৭)

১৭৭৩ সালের ১৩ই মার্চ তার পিতার সাথে ইতালি থেকে ফিরে আসার পর জালৎস্‌বুর্গের শাসক প্রিন্স-আর্চবিশপ হিয়েরোনিমাস কোলোরেডো তাকে দরবারী সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে জালৎস্‌বুর্গের দরবারী সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি পাশাপাশি নিরলসভাবে অসংখ্য সুর সৃষ্টির মাধ্যমে আরও উচ্চ অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। জালৎস্‌বুর্গে তার অসংখ্য বন্ধু ও গুণগ্রাহী ছিল[১৬] এবং তার বিভিন্ন ধরনের সুর, যেমন - সিম্ফনি, সোনাটা, স্ট্রিং কোয়ার্টেট, গণসঙ্গীত, সেরেনেডস ও কয়েকটি অপ্রধান অপেরার সুর করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১৭৭৫ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বেহালা কনসার্টোর প্রতি মোৎসার্টের আগ্রহ জন্মে এবং ধারাবাহিকভাবে পাঁচটি সুর রচনা করে, যা ধীরে ধীরে তার সঙ্গীতের আধুনিকায়নে ভূমিকা পালন করেন। শেষ তিনটি সুর - কে. ২১৬, কে. ২১৮ ও কে. ২১৯ বর্তমানে রিপার্টোয়ারের প্রধান সুর। ১৯৭৬ সালে তিনি পিয়ানো কনসার্টোতে তার প্রচেষ্টা শুরু করেন এবং ১৯৭৭ সালের শুরুর দিকে ই♭ কনসার্টো কে. ২১৭ সুর সৃষ্টি করেন। এই কাজটিকে সামালোচকগণ তার আলোচিত সাফল্য বলে গণ্য করেন।[১৭]

প্যারিস সফর (১৭৭৭-১৭৭৮)

১৭৭০ সালে পোপ চতুর্দশ ক্লেমেন্তের নিকট থেকে গৃহীত অর্ডার অব দ্য গোল্ডেন স্পুর ব্যাজ পরিহিত মোৎসার্ট। এটি ১৭৭৭ সালের একটি চিত্রকর্মের অনুলিপি।[১৮]

১৭৭৭ সালের আগস্ট মাসে মোৎসার্ট জালৎসবুর্গের পদ থেকে অব্যহতি দেন[১৯] এবং ২৩শে সেপ্টেম্বর কর্ম খোঁজার উদ্দেশ্যে আউগসবুর্গ, মানহাইম, প্যারিস ও মিউনিখ সফরে যান।[২০] তিনি মানহাইমে বিখ্যাত ঐকতান বাদকদলের সদস্যদের সাথে পরিচিত হন, যারা সে সময়ে ইউরোপের সেরা ছিল। তিনি আলোয়সিয়া ওয়েবারের প্রেমে পড়েন। ওয়েবার একটি সঙ্গীত পরিবারের চার কন্যার একজন ছিলেন। মোৎসার্ট ১৭৭৮ সালের ১৪ই মার্চ প্যারিসের উদ্দেশ্যে মানহাইম ত্যাগ করেন।[২১] প্যারিসের একটি চিঠি থেকে জানা যায় তিনি ভার্সাইয়ে অরগান বাদক পদে ছিলেন, কিন্তু মোৎসার্ট এই কাজে আগ্রহী ছিলেন না।[২২] তিনি ধার করতে শুরু করেন এবং মূল্যবান জিনিসপত্র বন্ধক রাখতে শুরু করেন। ১৭৭৮ সালের ৩রা জুলাই তার মাতা মারা যান।[২৩] হ্যালিওয়েলের মতে, আর্থিক সংকটের কারণে ডাক্তার ডাকতে দেরি হয়েছিল।[২৪] মোৎসার্ট ডিউক ডোরলিয়ন্সের একান্ত সচিব মেলচোয়ার গ্রিমের সাথে তার বাড়িতে বাস করতে শুরু করেন।

প্যারিসে মোৎসার্টের অবস্থানকালে তার পিতা জালৎসবুর্গে তার জন্য চাকরির বন্দোবস্ত করেন।[২৫] স্থানীয় অভিজাতদের সহায়তায় মোৎসার্টকে রাজদরবারে অরগান বাদক ও কনসার্ট প্রধানের পদে যোগদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই পদে বার্ষিক বেতন ছিল ৪৫০ ফ্লোরিন,[২৬] কিন্তু তিনি এই প্রস্তাবে সম্মত হতে অনিচ্ছুক ছিলেন।[২৭] এই সময়ে গ্রিম ও মোৎসার্টের মধ্যকার সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরে এবং মোৎসার্ট গ্রিমের কাছ থেকে সরে যান। ১৭৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জালৎসবুর্গের উদ্দেশ্যে প্যারিস ছাড়ার পর তিনি মানহাইম ও মিউনিখে বিলম্ব করেন এবং তখনো জালৎসবুর্গের বাইরো কোথাও চাকরির প্রত্যাশা করতে থাকেন। মিউনিখে তিনি পুনরায় আলোয়সিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। আলোয়সিয়া তখন সফল গায়িকা, কিন্তু তখন আর তার প্রতি আগ্রহী ছিলেন না।[২৮] মোৎসার্ট পরিশেষে ১৭৭৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জালৎসবুর্গে ফিরে আসেন এবং নতুন চাকরিতে যোগদান করেন, কিন্তু তিনি জালৎসবুর্গে তার কাজের প্রতি উদাসীন ছিলেন।[২৯]

ভিয়েনার জীবন (১৭৮১-১৭৮৭)

পরবর্তীতে ভিয়েনায় একজন পিয়ানোবাদক রূপে তার জীবনের নতুন অধ্যায় আরম্ভ হয় এবং অল্প সময়েই তিনি নিজেকে ভিয়েনার শ্রেষ্ঠ পিয়ানোবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৭৮২ সালে ডাই এন্টফুরুং আউস ডেম সেরাইল (Die Entführung aus dem Serail) অপেরায় তার কাজের সাফল্য মোৎসার্টকে একজন সুরকার হিসেবে ভিয়েনায় সুপ্রতিষ্ঠিত করে।

ডাই এন্টফুরুং আউস ডেম সেরাইল অপেরায় সাফল্য লাভের পরও মোৎসার্ট পরবর্তী ৪ বছর অপেরার জন্য খুব সামান্যই কাজ করেন। এসময় তিনি নিজেকে একজন পিয়ানোবাদক এবং কন্সার্টো রচয়িতা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেছিলেন। অতঃপর ১৭৮৫ সালের শেষ দিকে তিনি কীবোর্ড এ সুর সম্পাদনার কাজ থেকে সরে আসেন এবং librettist Lorenzo Da Ponte-এর সাথে অপেরায় সহযোগীতার কাজ শুরু করেন, যা বেশ খ্যাতি অর্জন করে। ১৭৮৬ সালে,ভিয়েনায়, তার বিখ্যাত সৃষ্টি দ্য ম্যারিজ অব ফিগারো-এর সফল উন্মোচন ঘটে। ডিসেম্বর ১৭৮৭ এ, মোৎসার্ট খানদানী পৃষ্ঠপোষকতা অধীনে কাজে নিয়োগ প্রাপ্ত হন, যখন সম্রাট জোসেফ দ্বিতীয় তার দরবারী সুরকার গ্লুক-এর মৃত্যুর পর মোৎসার্টকে ঐ পদে নিযুক্ত হবার আহ্বান জানান। এটি ছিল একটি সাময়িক নিয়োগ যার যন্য মোৎসার্ট পেতেন প্রতি বছর মাত্র ৪০০ ফ্লৌরিন্স (মুদ্রা)। অবশ্য এসময় মোৎসার্টকে কেবল Redoutensaal-এ বার্ষিক বল নাচের জন্য সুর তৈরি করতে হত। এবং বস্তুত এই স্বল্প আয়ই তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

১৭৮৭ সালে, আরেক সুর সম্রাট লুডভিগ ফান বেটোফেন মোৎসার্টের সঙ্গে অধ্যয়ন করার জন্য ভিয়েনায় কয়েক সপ্তাহ অতিবাহিত করেন। বিটোফেন তখন ছিলেন তরুণ, এবং এই দুই সুর সম্রাটের আদৌ কখনো দেখা হয়েছিল কি-না সে প্রসঙ্গে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।

কন্সতান্জে মোৎসার্ট

১৭৮২ সালের ৪ঠা আগস্ট মোৎসার্ট কন্সটানৎসের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ছয় সন্তানের চারজন শিশু অবস্থায় মারা যান। তারা হলেন:

  • রেমন্ড্‌ লেওপোল্ড (১৭ই জুন – ১৯শে অগাস্ট, ১৭৮৩),
  • কার্ল টমাস মোৎসার্ট (২১শে সেপ্টেম্বর, ১৭৮৪ – ৩১শে অক্টোবর, ১৮৫৮),
  • ইয়োহান টমাস লেওপোল্ড (১৮ই অক্টোবর – ১৫ই নভেম্বর, ১৭৮৬),
  • তেরেসা কোন্সতানসিয়া আডেলহিড ফ্রিয়েদেরিক মারিয়া আন্না (২৭শে ডিসেম্বর, ১৭৮৭ – ২৯শে জুন, ১৭৮৮),
  • মারিয়া আন্না (জন্মের পরই মারা যায়, ২৫শে ডিসেম্বর, ১৭৮৯),
  • ফ্রান্ৎস ক্সাভার ভোল্‌ফগাংক্‌ মোৎসার্ট (২৬শে জুলাই, ১৭৯১ – ২৯শে জুলাই, ১৮৪৪)

ভিয়েনা পরবর্তী জীবন (১৭৮৮-১৭৯১)

ডোরা স্টকের আঁকা মোৎসার্টের চিত্র, এপ্রিল ১৭৮৯।

১৭৮৮ এর মাঝামাঝি সময়ে মোৎসার্ট এবং তার পরিবার কেন্দ্রীয় ভিয়েনা ছেড়ে আলসেরগ্রান্দ (অস্ট্রিয়াতেই)-এর শহরতলীতে চলে আসেন।[৩০] ধারণা করা হয়েছিল মোৎসার্ট তার ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য এমনটি করেছিলেন, যদিও বর্তমান সময়ের গবেষণা বলে, এটি সত্য নয়।[৩১] এসময় মোৎসার্টের বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছ থেকে অর্থ ধার নেওয়া এবং মলিন পোশাক-পরিচ্ছদের কারণে তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন বলে Maynard Solomon এবং আরও কিছু ব্যক্তির মতামত জানা যায়।[৩২] এ সময়ের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে তার শেষ তিনটি সুর, যা সিম্ফোনি 39, 40, এবং 41 নামে খ্যাত (প্রতিটিই ১৭৮৮ সালে সৃষ্ট), এবং তিনটি Da Ponte operas-এর শেষটি (Così fan tutte) যার উন্মোচন হয় ১৭৯০ এ।

কাছাকাছি সময়েই মোৎসার্ট ভাগ্যের সন্ধানে লাইপ্‌ৎসিশ, বার্লিন এবং ড্রেসডেন (১৭৮৯) এবং ফ্রাংকফুর্ট, মানহাইম এবং জার্মানির অন্যান্য শহরে (১৭৯০) দীর্ঘকালীন সফর করেন। সফরে বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন সাফল্য লাভ করলেও এর দ্বারা তার ও তার পরিবারের আর্থিক দূরবস্থার কোনরূপ স্থায়ী উন্নতি হয়নি।

শেষ বছরগুলো

মোৎসার্টের জীবনের শেষ বছরগুলো ছিল তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুর সৃষ্টি-কাল এবং এক প্রকারে তার নিজেকে ফিরে পাওয়ার কাল। অপেরা The Magic Flute, চূড়ান্ত পিয়ানো কন্সার্টো (K. 595 in B-flat), তার string quintets সিরিজের শেষ খন্ড, প্রার্থনাসংগীত (Motet) Ave verum corpus K. 618, এবং অসমাপ্ত Requiem K. 626. —এই কালজয়ী সৃষ্টিগুলো এই সময়েই করা, যার জন্য তিনি বহুল সমাদৃত হন।

১৭৯০ সালে, অবশেষে মোৎসার্টের আর্থিক দূরবস্থার অবসান ঘটে, যদিও এটির কারণ বা প্রমাণ মীমাংসাহীন। এটা প্রমাণ হয় যে হাঙ্গেরি এবং আমস্টারডাম এর ধনী পৃষ্ঠপোষকদের জন্য বার্ষিক বৃত্তির বিনিময়ে মোৎসার্ট নৈমিত্তিক রচনা করেন। তিনি সম্ভবত ইম্পেরিয়াল সভাগৃহ সুরকার হিসাবে তার লিখিত নাচ সঙ্গীত বিক্রয় থেকেও সুবিধাপ্রাপ্ত হন। মোৎসার্ট এরপর আর অর্থ ধার করেননি এবং ধারের অর্থও শোধ করে দেন।

প্রাগে, ৬ সেপ্টেম্বর ১৭৯১ এ অপেরা La clemenza di Tito-এর উন্মোচন-এর সময়কালে, মোৎসার্ট অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তার স্ত্রী, তার কনিষ্ঠ বোন এবং পরিবারের ডাক্তার টমাস ফ্রান্ত্জ ক্লসেত তার দেখাশোনা করেন। ৩৫ বছর বয়সি মোৎসার্ট ১৭৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত ১টায় মারা যান।

সেন্ট মার্কস সিমেট্রির একটি সাধারণ কবরে এই সুর সম্রাটকে শায়িত করা হয় ৭ ডিসেম্বর। দিনটি ছিল সাধারণ, শান্ত আবহাওয়ার।

জনসংস্কৃতিতে মোৎসার্ট

মোৎসার্টের জীবনী ও কর্ম অসংখ্য বই, নাটক ও চলচ্চিত্রের মূল বিষয়বস্তু। অস্ট্রেলীয় চকলেট বল মোৎসার্ট বুলেট তার নামানুসারে রাখা হয়। মিলশ ফরমান পরিচালিত ১৯৮৪ সালের আমাডেয়ুস চলচ্চিত্রে টম হালচ মোৎসার্টের ভূমিকায় অভিনয় করেন।[৩৩] চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রশ্রেষ্ঠ পরিচালনার পুরস্কারসহ ৮টি বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করে।[৩৪]

টীকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ