ভোট

ভোট হল, কোনো সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা প্রতিনিধি নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কোনো সভা, সমিতি বা নির্বাচনী এলাকায়, মতামত প্রকাশের একটি মাধ্যম বা পদ্ধতি। সাধারণত আলোচনা, বিতর্ক বা নির্বাচনী প্রচারণার পর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দায়িক্ত লাভ করেন। একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। ভোটদানের অধিকার সম্পন্ন ব্যক্তিদের বলা হয় "ভোটার"। ভোট সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে সকল ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেও ব্যবহার করা যায়। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে কোন ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হতে হলে দলসমূহের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যার ভিত্তিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ থাকা অত্যাবশ্যকীয়।

উপরে বাম থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: পানামার গণভোটের ব্যালট, ফ্রান্সের একটি নির্বাচনের ব্যালট বাক্স, বাংলাদেশের মহিলারা ভোট দিচ্ছেন, ব্রাজিলের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটদানের স্থান নির্দেশক, আফগানিস্তানে একজন পুরুষের আঙুলে নির্বাচনের কালি

ভোটগ্রহণ আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক নানা ভাবে হতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ সাধারণত ব্যালটের মাধ্যমে, যেমন কোনো রাজনৈতিক সমিতির সদস্য নির্বাচন বা কর্মক্ষেত্রে দায়িক্ত নির্ধারণে সংঘঠিত হয়। আর অনানুষ্ঠানিক ভোটদান মৌখিকভাবে, বা হাত তোলার মাধ্যমে অথবা বৈদ্যুতিকভাবে ঘটতে পারে।

রাজনীতিতে

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে, নির্বাচকমণ্ডলী পছন্দের প্রার্থীদের সরকার গঠনের জন্য মনোনীত করেন। নির্বাচনে অধিকাংশ প্রার্থী কোন না কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে বেশ কিছু সংখ্যক দল থাকলেও, নির্বাচন সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় দুটি প্রতিপক্ষ দলের মধ্যেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটদের, ভারতের কংগ্রেস ও বিজেপি বা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এর কথা বলা যেতে পারে। পরোক্ষ গণতন্ত্রে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তি, অন্যান্য কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্বাচকমণ্ডলীর আকাঙ্ক্ষা এবং দলের নীতির প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে, প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে, নির্বাচিত ব্যক্তি নীতিসমূহ বাস্তবায়নে স্বাধীন এবং তৃতীয় কোনো কর্তৃপক্ষের নিকট নীতিগুলি পাস করার প্রয়োজন হয় না।

যখন বেশিরভাগ ভোটার একই প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেন তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বলা হয়। প্রত্যেক ভোটারের মতামত গ্রহণ করা হলেও অনেক দেশই ভৌগোলিক এলাকা (যেমন জয়লাভ করা কেন্দ্র সংখ্যার) ভিত্তিতে বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করে। উদাহরণ স্বরূপ, যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী এলাকার বিজয়ী ব্যক্তির, সবসময় সর্বাধিক স্বতন্ত্র ভোট নাও থাকতে পারে। অনেক উদার গণতান্ত্রিক দেশে ভোটারগণ গোপন ব্যালট ব্যবহার করেন যাতে তারা রাজনৈতিক গোপনীয়তা বজায় রেখে প্রভাবমুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ব্যালট উন্মুক্ত থাকলে, অনেক সময় সময় ভোটার সামাজিক চাপ, জ্ঞানের অভাব, বা অধিকাংশ যাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে মনে করে তার পক্ষে দাঁড়ানোর তাড়না থেকে, কিছু নির্দিষ্ট দলকে ভোট দিতে বাধ্য হতে পারে। গোপন ব্যালট ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো আরো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান জনগণ সুরক্ষিত বোধ করবে এবং যাকে সেরা প্রতিনিধি বলে মনে করেন তাকে নিঃসংকোচে ভোট দিতে সক্ষম হবেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। অবশ্য ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমের মাধ্যমেও ভোটগ্রহণ করা যেতে পারে, যা ভারত, ব্রাজিল এবং ফিলিপাইনে ব্যবহৃত হয়। ভোটদান ঐচ্ছিক বা বাধ্যতামূলক দুই-ই হতে পারে। বেশিরভাগ দেশেই ভোটদান ঐচ্ছিক, তবে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া সহ বেশ কিছু দেশে এটি বাধ্যতামূলক।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য

একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, সংশ্লিষ্টরা চেষ্টা করেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে একক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর। ভোটার এবং/অথবা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত জানার উদ্দেশ্যে কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এর মধ্যে রয়েছে, তুলনামূলক সরল ওয়েটেড (Weighted) বা যৌথ (consociational) মেজোরিটি ভোট, এছাড়াও অন্যান্য একাধিক-বিকল্প (Mulit-Option) বেছে নেওয়ার পদ্ধতিও রয়েছে। মাল্টি-অপশন ভোটিং এর মধ্যে রয়েছে দুই-রাউন্ড ভোটিং, অল্টারনেটিভ ভোট বা AV, (যা ইনস্ট্যান্ট রান-অফ ভোটিং (IRV), এবং সিঙ্গেল ট্রান্সফারেবল ভোট (STV নামেও পরিচিত), অনুমোদন ভোট (Apporval Voting), বোর্ডা কাউন্ট (Borda Count), পরিবর্তিত বোর্ডা কাউন্ট (Modified Borda Count-MBC), এবং কর্ন্ডোসে নিয়ম (Condorcet Rule), যার প্রায় সবগুলোই নির্বাচনী ব্যবস্থা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

নির্বাচনে

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব এর ফলে বর্তমানে অনেক ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা নির্বাচনের মাধ্যমে একজনকে বা একটি কমিটি, এমনকি পুরো সংসদ বাছাই করতে চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে, সাধারণত একজন বিজয়ী হয়, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল নির্বাচনী ব্যবস্থায় একজন রানার আপ প্রার্থী ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হতেন। সংসদ নির্বাচন করার সময়, হয় অনেক ছোট নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেকটি একক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, যেমনটি ব্রিটেনে আছে। অথবা আয়ারল্যান্ডের মতো বেশ কয়েকটি বহু-সদস্যীয় নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেকটি কয়েকজন প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে; অথবা নেদারল্যান্ডসের মতো সমগ্র দেশকে একটি নির্বাচনী এলাকা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

সুইজারল্যান্ডে, নিবন্ধন ছাড়াই, প্রত্যেক নগরিক, ভোটের জন্য ব্যালট পেপার এবং তথ্য সংবলিত পুস্তিকা ঘরে বসে পায় (এবং ডাকযোগে পাঠিয়ে ভোট দিতে পারে)। সুইজারল্যান্ড প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের দেশ। এখানে বছরে বছরে প্রায় চারবার ভোট (এবং নির্বাচন) অনুষ্ঠিত হয়;

বিভিন্ন নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ভোট ব্যবহার করা হয়। বহুত্ব ভোট (Plurality Voting) পদ্ধতিতে বিজয়ী হওয়ার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এক ব্যক্তি এক ভোট পদ্ধতিতে যখন দুই এর বেশি প্রার্থী থাকে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজয়ী প্রার্থী ৫০% এর কম ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

এ ধরনের সিঙ্গেল ভোট পার রেস (single vote per race) পদ্ধতির ভোটের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল ভোট বিভাজন। এ পদ্ধতিতে মধ্যপন্থা সমর্থন করে না এমন প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায় এবং ফলশ্রুতিতে একটি দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা তৈরি হয়। একক-ভোট পদ্ধতির অন্যান্য অনেক পদ্ধতির মধ্যে একটি হল অনুমোদন ভোট।

সিঙ্গেল ভোট পার রেস পদ্ধতি কীভাবে কম জনসমর্থন থাকা প্রার্থীদের পক্ষে যেতে পারে তা বোঝার জন্য আমারা এমন একটি নির্বাচন কল্পনা করি যেখানে একটি ক্লাসের ছাত্ররা তাদের প্রিয় মার্বেলকে ভোট দেয়। যদি পাঁচটি মার্বেলকে নির্বাচনের জন্য রাখা হয়, যাদের মধ্যে তিনটি সবুজ, একটি লাল এবং একটি নীল হয়, তাহলে একটি সবুজ মার্বেল খুব কমই নির্বাচনে জিতবে। কারণ তিনটি সবুজ মার্বেল যারা সবুজ পছন্দ করে তাদের ভোট ভাগ হয়ে যাবে।

এই নির্বাচনে, একটি সবুজ মার্বেল জয় তখনই সম্ভব যখন ষাট শতাংশের বেশি ভোটার সবুজ পছন্দ করেন। যদি সমসংখ্যক মানুষ সবুজ, লাল এবং নীল পছন্দ করে, অর্থাৎ, যদি ৩৩ শতাংশ ভোটার সবুজ পছন্দ করে, ৩৩ শতাংশ নীল পছন্দ করে এবং ৩৩ শতাংশ লাল পছন্দ করে, তাহলেও প্রতিটি সবুজ মার্বেল শুধুমাত্র এগারো শতাংশ ভোট পাবে, যেখানে লাল ও নীল মার্বেল পাবে ৩৩ শতাংশ।দেখা যাচ্ছে এ ভোটব্যবস্থা, সবুজ মার্বেলগুলির জন্য ন্যায়সঙ্গত নয় কেননা সংখ্যাগরিষ্ঠের পছন্দের রং হওয়া সত্ত্বেও এখানে সবুজ বিজয়ী হতে পারবে না। ৷ অন্য কথায়, বিশুদ্ধভাবে গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সিঙ্গেল ভোট পার রেস ভোট ব্যবস্থা এমন একজন বিজয়ীর পক্ষে থাকে যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠদের থেকে আলাদা।

অনুমোদনের ভোট পদ্ধতিতে, ভোটাররা যতগুলি প্রার্থীকে পছন্দ ততজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, তাই সবুজ মার্বেলের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি কারণ যারা সবুজ পছন্দ করে তারা প্রতিটি সবুজ মার্বেলের জন্য ভোট দিতে পারবেন।

'একক ভোট' পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার উপায় হল দুই দফা নির্বাচন, অথবা ফার্স্ট পাস্ট দা পোস্ট (first-past-the-post) পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি। এ ভোট গ্রহণ পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে প্রচলিত। এ পদ্ধতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, বিজয়ীকে অবশ্যই অর্ধেকেরও বেশি ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হয় ।[১] এবং যদি কোন প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য সর্বাধিক ভোট অর্জনকারী দুইজন প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়। অবশ্য প্রথম রাউন্ডে নির্বাচিত হওয়ার জন্য কখনও কখনও ৫০% এর কম ভোট পেলেও চলে এবং রানঅফে (২য় রাউন্ডে) অংশগ্রহণের নিয়মও পরিবর্তিত হতে পারে।

তৃতীয় একটি পদ্ধতি হল এক রাউন্ডবিশিষ্ট তাৎক্ষণিক-পুণঃরায়-ভোট (instant-runoff voting) পদ্ধতি। এ পদ্ধতিকে বিকল্প ভোট বা একক স্থানান্তরযোগ্য ভোট বা অগ্রাধিকারমূলক ভোটিংও বলা হয়। এটি অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আয়ারল্যান্ডের কিছু নির্বাচনে পিআর ফরমেটে ব্যবহৃত হয়। ভোটাররা প্রত্যেক প্রার্থীকে পছন্দের ক্রমানুসারে সাজান (১,২,৩,৪ ইত্যাদি)। ভোটারদের পছন্দের ক্রমানুসারে প্রতিটি প্রার্থীর ভোট হিসাব করা হয়। যদি কোনো একক প্রার্থীর ৫০% ভোট না থাকে, তাহলে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হবে এবং ভোটারদের মনোনীত পছন্দের ক্রম অনুসারে তাদের ভোট পুনর্বন্টন করা হবে। একজন প্রার্থীর ৫০% বা তার বেশি ভোট না পাওয়া পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করা হয়। সিস্টেমটি একটি এক রাউন্ড ভোটিং ব্যবহার একক প্রার্থী নির্বাচিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

একাধিক ভোট ব্যবহার করে এমন একটি ভোটিং ব্যবস্থায়, ভোটার প্রার্থীদের মধ্যে হতে পছন্দের সকল প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। যেমন, একজন ভোটার, ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ড্যানিয়েল এবং এমিলিকে প্রত্যাখ্যান করে অ্যালিস, বব এবং চার্লিকে ভোট দিতে পারে। অনুমোদন ভোটিং (Approval Voting) এই ধরনের একাধিক প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকে।

অবস্থানভিত্তিক (Ranked) ভোট ব্যবহার করে এমন ভোটিং সিস্টেমে, ভোটারকে পছন্দের ক্রমানুসারে প্রার্থীদের র‌্যাঙ্ক করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, তারা প্রথমে বব, তারপরে এমিলি, তারপর অ্যালিস, তারপর ড্যানিয়েল এবং অবশেষে চার্লিকে ভোট দিতে পারে। কিছু দেশ যেমন: অস্ট্রেলিয়া এবং আয়ারল্যান্ড র‌্যাঙ্কড ভোটিং সিস্টেম ব্যবহার করে।

স্কোর (বা রেঞ্জ) ভোটিং পদ্ধতিতে, ভোটার প্রত্যেক প্রার্থীকে এক থেকে দশের মধ্যে একটি নম্বর দেয় (ঊর্দ্ব এবং নিম্ন সীমা পরিবর্তিত হতে পারে)। কার্ডিনাল ভোটিং সিস্টেম দেখুন।

আফগানিস্তানে ব্যবহৃত একক অ-হস্তান্তরযোগ্য ভোট (Single Non-Transferable Vote-SNTV) -এর মতো কিছু "একাধিক বিজয়ী" সিস্টেমে একটি একক ভোট বা প্রতি নির্বাচক প্রতি একটি ভোট থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ভোটার একটি ব্যালটে দুটি ভোট দিয়ে বব এবং চার্লিকে মনোনীত করতে পারে। এই ধরনের সিস্টেম র‌্যাঙ্ক করা অথবা আন-র‍্যাঙ্কড যে কোনো ভোটিং ব্যবহার। এ পদ্ধতি সাধারণত সিটি কাউন্সিলের মতো পদ, যেখানে সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন এমন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

অবশেষে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহৃত কনডরসেট নিয়ম (Condorcet rule), এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ভোটার বা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একক হস্তান্তরযোগ্য ভোট (PR-STV) বা কিউবিএস পদ্ধতির মতো একজন, কয়েকজন বা সকল প্রার্থীদের পছন্দের ক্রমানুসার ১,২,৩,৪ এভাবে সাজান। প্রার্থী ক-কে প্রার্থী খ-এর সাথে তুলনা করা হয়, এবং ক যদি খ-এর থেকে বেশি জনপ্রিয় হয়, তাহলে ক এই জুটি জয়ী ধরা হয়। এর পরে, প্রার্থী ক কে গ, তারপর ঘ, ইত্যাদির সাথে তুলনা করা হয়। একইভাবে, খ-কে গ, ঘ ইত্যাদির সাথে তুলনা করা হয়। যে প্রার্থীটি সবচেয়ে বেশি জোড়ায় জয়লাভ করে, তিনি কনডরসেট বিজয়ী।

গণভোট

একটি দেশের নাগরিকদের সাধারণত নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে, জনগণ গণভোট বা কোনো আইন প্রণয়ন বা প্রবর্তনের জন্যও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ থেকে, বিশ্বে পাঁচ শতাধিক জাতীয় গণভোট (ইনিশিয়েটিভ সহ) সংগঠিত হয়েছে; তাদের মধ্যে, সবচেয়ে বেশি, তিন শতাধিক সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়।[২] কয়েক ডজন গণভোট গ্রহণের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

অধিকাংশ গণভোট হ্যা-না ভিত্তিক হয়ে থাকে। ১৮৯৪ সালে নিউজিল্যান্ডে প্রথম একাধিক বিকল্প বাছাইয়ের সুযোগ সহ গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ গণভোটগুলোর বেশিরভাগই দুই-রাউন্ড পদ্ধতিতে নেওয়া হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডে ১৯৯২ সালে একটি ৫টি বিকল্প সহ গণভোট হয়েছিল। এছাড়াও গুয়ামে ১৯৮২ সালে ছয়টি-বিকল্প সহ গণভোট হয়েছিল। এতে একটি ফাঁকা বিকল্পও প্রস্তাব লেখার জায়গা রাখা হয়েছিল যেন কোন ভোটার চাইলে সপ্তম বিকল্প লিখে, ভোট দিতে পারে।

সুষ্ঠু ভোট

ভোট ফলাফল বেশ সংবেদশীল একটি বিষয়। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিকট ভোটের ফলাফল বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা, এমনকি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকেও নিয়ে যেতে পারে। ভোটাররা প্রার্থীদের কাউকেই পছন্দ-অপছন্দ কোনোটাই নাও করতে পারেন। অধিকাংশের পছন্দকে পছন্দ করা অনেক সময় অধিকাংশের অপছন্দ এড়িয়ে যাওয়ার মতই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

সামাজিক পছন্দ তত্ত্ব, আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিসঙ্গত কিছু মানদণ্ডের মাধ্যমে ভোট কতটা সুষ্ঠু তা সম্পর্কে ধারণা দিতে সমর্থ হলেও অ্যারোর অসম্ভবতা উপপাদ্য বলে যে কোনও ভোটিং পদ্ধতিই এককভাবে সম্পূর্ণ সুষ্ঠ ভোটের সকল পূর্বশর্ত পূরণ করতে পারে না।

২০১৯ সালের এপ্রিলে, ভারত ও অন্যান্য কয়েকটি দেশে সাধারণ নির্বাচন শুরুর আগে, সুষ্ঠ ভোটদান নিশ্চিকরণ এবং মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার রোধে, ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে পারে এমন টুইটগুলো রিপোর্ট করার সুবিধা যুক্ত করার ঘোষণা দেয় টুইটার।[৩]

নেগেটিভ ভোটিং বা না-সূচক ভোট

না-সূচক ভোট বা নেগেটিভ ভোটিং একজন ভোটারকে কোন প্রার্থীর প্রতি অসমর্থন প্রকাশ করা সুযোগ দেয়। বোঝার সুবিধার্থে না-সূচক ভোট ব্যবহার করে এমন একটি নির্বাচন কল্পনা করা যাক। নেগেটিভ ভোটিং পদ্ধতিতে প্রত্যেক ভোটার যে কোনো একজন প্রার্থীর পক্ষে অথবা বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন। প্রতিটি পক্ষে ভোটের জন্য ঐ প্রার্থীর মোট ভোটের সাথে এক যোগ হয় আবার প্রতিটি বিপক্ষে (না-সূচক) ভোটের জন্য মোট থেকে এক বিয়োগ হয়। এভাবে যে প্রার্থীর স্কোর সবচেয়ে বেশি থাকে, তিনি বিজয়ী হন। উল্লেখ্য যে, এ পদ্ধতিতে একজন প্রার্থী ০ ভোট পেয়েও নির্বাচিত হতে পারে যদি তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যথেষ্ট নেতিবাচক ভোট দেওয়া হয়।

নির্বাচনে শুধুমাত্র দুইজন প্রার্থী থকলে নেগেটিভ ভোটিং পদ্ধতি, অন্যান্য ভোটিং সিস্টেমের মতই কাজ করে। তবে, তিন বা ততোধিক প্রার্থীর ক্ষেত্রে, একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে না-সূচক ভোট, অন্যান্য সকল প্রার্থীর পক্ষে যায়।

নিচের তিনটি উদাহরণ বিবেচনা করা যেতে পারে:

একই আসনে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ভেটিং পদ্ধতি এবং নেগেটিভ ভোটিং পদ্ধতির নির্বাচনের ফলাফল তুলনা করা যাক। কোনো ভোট নষ্ট হয়নি এবং ভোটার উপস্থিতি ১০০ শতাংশ ধরা হয়েছে।

ভোটারদের সমর্থনের হার
প্রার্থীদলপক্ষে ভোটারের সংখ্যা
দল ১৪০%
দল ২৩০%
দল ৩৩০%
সাধারণ পদ্ধতির নির্বাচনের ফলাফল (যেখানে না-সূচক ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই)
প্রার্থীক এর ভোটখ এর ভোটগ এর ভোটসর্বমোট
+৪০+১৫+55
+১৫+৩০+৪৫
নেতিবাচক ভোটের পরে নির্বাচনের ফলাফল
প্রার্থীক এর ভোটখ এর ভোটগ এর ভোটসর্বমোট
+৪০-১৫-৩০-৫
-১৫-১৫

সাধারণ পদ্ধতির (যেখানে না-সূচক ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই) নির্বাচনের ফলাফল:

ক এর সমর্থকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায়, এবং ৪০% মেজরিটি থাকায়, ক কে ভোট দেয়। খ এর পক্ষের ভোটাররা, তাদের প্রার্থীর জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী না হওয়ায়, ভোট বৃথা যাওয়ার আশঙ্কায়, তাদের ভোট ঠিক অর্ধেক ভাগ করে, ক এবং গ উভয়কে ১৫% করে ভোট দেয়। গ এর-ভোটাররাও তাদের প্রার্থী গ কে ভোট দেয়। ফলাফল ক ৫৫% ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়, গ ৪৫% এবং খ ০% ভোট পায় ।

নেগেটিভ (ন-সূচক) ভোট পদ্ধতির নির্বাচনের ফলাফল:

ক এর সমর্থকরা মেজরিটি থাকায়, ক কে ভোট দেয়। এ পদ্ধতিতে যেহেতু অন্য প্রার্থীর প্রতি অসমর্থন প্রকাশের সুযোগ রয়েছে, খ এর সমর্থকরা ক ও গ এর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গ এর সমর্থকরাও একইভাবে প্রার্থী ক- এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ফলাফল, প্রার্থী খ শূন্য ভোট পেয়ে বিজয়ী। প্রার্থী খ এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট না-বোধক ভোট পড়ায়, তাদের মোট ভোট ঋণাত্মক হয়েছে। প্রার্থী ক, ৪০% পক্ষে ভোট পাওয়া সত্ত্বেও, খ এবং গ এর ভোটারদের নেগেটিভ ভোটের কারণে -৫% স্কোর করে। আর প্রার্থী গ -১৫% স্কোর করে ৩য় হয়।

প্রক্সি ভোটিং

প্রক্সি ভোটিং হল এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একজন ভোটার তার পক্ষে ভোটদানের জন্য একজন প্রতিনিধিকে নিযুক্ত করতে পারেন। উক্ত প্রতিনিধি ঐ ভোটারের পক্ষে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

ভোটদানে বিরত থাকা

দক্ষিণ আফ্রিকায়,বিশেষত দরিদ্র নাগরিকদের ভোটবিরোধী আন্দোলনে জোরালো সমর্থন রয়েছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, কোন রাজনৈতিক দলই প্রকৃতপক্ষে তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই আন্দোলনের প্রভাবে, দেশটিতে প্রতিবার নির্বাচনের সময়ই "জমি নেই! বাড়ি নেই! ভোট নেই!" আন্দোলন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।[৪][৫] দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম কয়েকটি সামাজিক আন্দোলন : ওয়েস্টার্ন কেপ এন্টি-ইভিকশন ক্যাম্পেইন, আবাহলালি বেস এমজোন্ডলো এবং ভূমিহীন জনগণের আন্দোলন এর মধ্যে এ আন্দোলনটি অন্যতম।

বিশ্বের অন্যান্য অংশে, অন্যান্য সামাজিক আন্দোলনেরও এ ধরনের ভোটবিরোধী প্রবণতা লক্ষণীয়। উদাহরণ হিসেবে, জাপাটিস্তা আর্মি অফ ন্যাশনাল লিবারেশন এবং বিভিন্ন নৈরাজ্যবাদী আন্দোলন এর কথা বলা যেতে পারে।

প্রতিবাদ হিসেবে, কখনও কখনও ফাঁকা ভোটও দেওয়া হয়। এতে ভোটদানে অংশগ্রহণ করা হয়, যা অনেকসময় বাধ্যতামূলক। তবে ভোটার, কোন প্রার্থী পক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। অনেক নির্বাচনে, "কোনটিই নয়" এ ধরনের অপশন থাকে এবং এ অপশনে দেওয়া ভোটও বৈধ ভোট হিসাবে পরিগণিত হয়। সাধারণত, ফাঁকা এবং নষ্ট ভোটও গণনা করা হয় কিন্তু বৈধ ভোট হিসেবে বিবেচিত হয় না।

ভোট এবং তথ্য

সাধারণ নাগরিকদের কার্যকর ভোট দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত রাজনৈতিক তথ্য আছে কিনা এ ব্যাপারে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রশ্ন করে। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে করা মিশিগান ইউনিভার্সিটি একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, ভোটারদের বর্তমান সমস্যা, উদার-রক্ষণশীল মতাদর্শ এবং মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব সম্পর্কে দরকারি ধারণার অভাব রয়েছে।[৬]

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায়, প্রার্থীদের বাহ্যিক বেশভূষা ও চেহারা, ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।[৭][৮]

ধর্ম মত

ক্রিস্টাডেলফিয়ানস, জেহোভাস উইটনেস, ওল্ড অর্ডার আমিশ, রাস্তাফেরিয়ানস, দ্য অ্যাসেম্বলি অফ ইয়াহওয়ে এবং কিছু অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভোটের মাধ্যমে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করার নীতি রয়েছে।[৯][১০] ইহুদি সম্প্রদায়ের রাব্বিরা ভোট দিতে উৎসাহিত করে; এমনকি কেউ কেউ এটাকে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতাও মনে করেন।[১১]

সভা এবং সমাবেশ

একমত নয় এমন কিছু লোকের শান্তিপূর্ণভাবে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর প্রচলিত একটি পদ্ধতি হলো ভোট। ভোটের অধিকার সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু মানুষ মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। একটি সোসাইটি বা ক্লাবের সদস্যরা, বা কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার, কিন্তু বহিরাগত নয়, এমন ব্যক্তিরাই অফিসিয়াল পদে লোকেদের নির্বাচন, নিয়ম ও আইন প্রণয়ন বা পরিবর্তন করতে পারে।ভোটের মাধ্যমে, বিচারকদের প্যানেল নির্বাচন করা যেতে পারে, হতে পারে তা আনুষ্ঠানিক বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বা কোনো প্রতিযোগিতার বিচারক। বন্ধুরা বা পরিবারের সদস্যরা ভোটাভুটির মাধ্যমে কোন সিনেমা দেখা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে লিখিত ভোট জমা দেওয়া থেকে শুরু করে হাত দেখানো, ভয়েস ভোটিং বা দর্শকদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ সহ নানা উপায়ে অধিকাংশের পছন্দ জানার সুযোগ রয়েছে।

ভোটের ভিত্তি

সংসদীয় পদ্ধতিতে বহুল ব্যবহৃত রবার্টের রুলস অফ অর্ডার অনুসারে, ভোটের ফলাফল নির্ধারণের উপাদান দুটি: (১) একটি প্রস্তাব গৃহীত হওয়া বা একজন প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের শতাংশ (যেমন অর্ধেকের বেশি, দুই-তৃতীয়াংশ, তিন-চতুর্থাংশ ইত্যাদি); এবং (২) প্রযোজ্য সদস্যদের সংখ্যা (যেমন, উপস্থিত ভোটদানকারী সদস্য, উপস্থিত সদস্য, সংগঠনের সকল সদস্যবৃন্দ, সম্পূর্ণ নির্বাচকমণ্ডলী ইত্যাদি)।[১২] একটি উদাহরণ হল, উপস্থিত সদস্যদের অধিকাংশের ভোট।

ভোটের ফলাফল প্লুরালিটি অথবা, সর্বাধিক প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা যেতে পারে।[১৩] এছাড়া, সর্বসম্মতিক্রমে, আনুষ্ঠানিক ভোট ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।[১৪]

নির্বাচন বা গণভোটে ভোটাররা যে উপায়ে ভোট প্রদান করে তাই হলো ভোটিং পদ্ধতি। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভোটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

ইচ্ছাকৃত সমাবেশে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি

স্বেচ্ছাকৃত সমাবেশ - অর্থাৎ যে সকল সমাবেশ বা সংস্থাগুলি উত্থাপিত প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য সংসদীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই ধরনের ইচ্ছাকৃত সমাবেশে ভোট দেওয়ার নিয়মিত পদ্ধতিগুলি হল একটি কন্ঠ ভোট, একটি দাঁড়ানো ভোট বা হাত প্রদর্শন। এছাড়াও রয়েছে রেকর্ড ভোট এবং ব্যালটিং। সংসদ চাইলে ভোটগ্রহণ পদ্ধতির বিষয়ে প্রস্তাব এনে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিভিন্ন আইনসভার তাদের নিজস্ব ভোট দেওয়ার পদ্ধতি থাকতে পারে।

ভোট পদ্ধতি

কাগজ ভিত্তিক পদ্ধতি

তরুনীর প্রথম ভোট. Cooktown, Australia.

সবচেয়ে ভোটদান পদ্ধতি হলো কাগজের ব্যালট ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থী বা মতামত (গণভোটের ক্ষেত্রে) চিহ্নিত করেন। সাধারণত ব্যালটে তালিকাভুক্ত কোনো প্রার্থী বা দলের প্রতি তাদের সমর্থন সিল মেরে বা টিক চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করেন। তবে অনেক সময় ভোটারদের পছন্দের প্রার্থীর নাম বা মতামত তালিকাভুক্ত না থাকলে, তারা তা ব্যালটে লিখতে পারে।

ইসরাইলের ব্যালট লেটার

ইসরায়েলে ব্যালট লেটার নামে পরিচিত একটি কাগজ-ভিত্তিক ব্যালটের বিকল্প ব্যবহার করা হয়, যেখানে ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রতিটি দলের জন্য ব্যালট সহ একটি ট্রে থাকে। ব্যালটগুলিতে প্রত্যেক দলের জন্য নির্ধারিত বর্ণ অঙ্কিত থাকে। ভোটারদের একটি খাম দেওয়া হয়। তারা যে দলকে ভোট দিতে চান, সে দলের ব্যালট খামে ঢুকিয়ে তারপর খাম ব্যালট বাক্সে রাখেন। লাতভিয়াতেও এ পদ্ধতি প্রচলিত।

মেশিন ভোটিং

মেশিন ভোটে ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে, যা ম্যানুয়াল (যেমন লিভার মেশিন) বা ইলেকট্রনিক হতে পারে।[১৫]

অনলাইন ভোটিং

কিছু দেশে অনলাইনে ভোট দেওয়া যায়। এস্তোনিয়া অনলাইন ভোটিং ব্যবহার করা প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি। ২০০৫ সালে একটি স্থানীয় নির্বাচনে প্রথম অনলাইন ভোটিং ব্যবহার করা হয়েছিল।[১৬]

ডাক ভোটিং

অনেক দেশে পোস্টাল ভোটিংয়ের অনুমতি দেয়, যেখানে ভোটারদের একটি ব্যালট পাঠানো হয় এবং ভোটদানের পার তা ডাকযোগে ফেরত নেওয়া হয়।

খোলা ব্যালট

এটি গোপন ব্যালটের বিপরীত। খোলা ব্যালটের মাধ্যমে ভোট সাধারণত উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত হাত উঠানো পদ্ধতিতে ভোটদান সম্পন্ন করা হয়। সুইজারল্যান্ডের ল্যান্ডেমেইন্ড সিস্টেম এ পদ্ধতির একটি উদাহরণ, যা এখনও অ্যাপেনজেল ​​ইনারহোডেন, গ্লারাস, গ্রিসন এবং শোয়েজের ক্যান্টনগুলিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অন্যান্য পদ্ধতি

গাম্বিয়াতে, মার্বেল ব্যবহার করে ভোটদান করা হয়। ১৯৬৫ সালে নিরক্ষরতা মোকাবেলায় ভোটারদের সুবিধার্থে এ পদ্ধতি চালু হয়েছিল।[১৭] ভোটকেন্দ্রে দলীয় রঙে আঁকা ধাতব ড্রাম এবং প্রার্থীদের ছবি যুক্ত প্রতীক রাখা হয়।[১৭][১৮] ভোটারদের তাদের পছন্দের প্রার্থীর ড্রামে রাখার জন্য একটি মার্বেল দেওয়া হয়; মার্বেল ড্রামে রাখা হলে বেল বেজে উঠে। এভাবে ভোট প্রদান সম্পন্ন হয়। বেলের শব্দটি বাইসাইকেলের বেলের মত হওয়ায়, বিভ্রান্তি এড়াতে, নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রের কাছে সাইকেল নিষিদ্ধ।[১৭] মার্বেল ড্রামে না রেখে উপরে রেখে দিলে ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।[১৯]

ক্লাবগুলিতে অনুরূপ সিস্টেমে ভোটারদের সমর্থন বোঝানের জন্য সাদা বল এবং বিরোধিতা নির্দেশ করার জন্য একটি কালো বল দেওয়া হয়। এর থেকেই ব্ল্যাকবলিং শব্দটির উদ্ভব ঘটেছে।

স্বশরীরে ভোট

অনেক সময় স্বশরীরে ভোট গ্রহণ করা হয় যদি ভোট দেওয়ার যোগ্য সকল ব্যক্তি উপস্থিত থাকে। ভোট প্রদান হাত দেখানো বা কিপ্যাড পোলিং দ্বারা হতে পারে।

আরও দেখুন

  • কসমোপলিটান গণতন্ত্র
  • গণতান্ত্রিক বিশ্বায়ন
  • ডলার ভোটিং
  • নির্বাচনী জালিয়াতি
  • নির্বাচনী ব্যবস্থা
  • গেরিম্যান্ডারিং
  • ম্যান্ডেট (রাজনীতি)
  • র‌্যাঙ্কড ভোটিং সিস্টেম
  • মতামত জরিপ
  • রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
  • আনুপাতক উপস্থাপন
  • মনস্তত্ত্ব
  • রিডিস্ট্রিক্টিং
  • গণভোট
  • ভোটাধিকার
  • ভোটার উপস্থিতি
  • ইচ্ছাকৃত সমাবেশে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি
  • ভোট ব্যবস্থা
  • প্রবাসীদের তাদের জন্মের দেশে ভোট দেওয়ার অধিকার
  • ভোট বিভাজন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ