ভাগবত পুরাণ

হিন্দু ধর্মগ্রন্থ
(মহাভাগবত পুরাণ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ভাগবত পুরাণ (দেবনাগরী: भागवतपुराण; অন্যান্য নাম শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবতম্‌ বা ভাগবত;) হল একটি হিন্দু মহাপুরাণ। এটি একটি ভক্তিবাদী ধর্মগ্রন্থ। বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার তথা "স্বয়ং ভগবান" কৃষ্ণের প্রতি গভীর ব্যক্তিগত ভক্তিই এই পুরাণের প্রধান আলোচ্য বিষয়।[১] হিন্দু পৌরাণিক সাহিত্যের অনেক কাহিনি তথা বিষ্ণুর চব্বিশ জন অবতারের কাহিনি ভাগবত পুরাণে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ভাগবত পুরাণই প্রথম পুরাণ যেটি কোনো ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়। ১৭৮৮ সালে ভাগবতের তামিল সংস্করণের একটি ফরাসি অনুবাদ প্রকাশিত হয় যা ঔপনিবেশিক যুগে অনেক ইউরোপীয়কে হিন্দুধর্ম তথা ১৮ শতকের হিন্দু সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। [২] এরপর ১৮৪০ থেকে ১৮৫৭ সালের মধ্যে ভাগবত পুরাণের তিনটি ফরাসি অনুবাদ প্রকাশিত হয়।[৩] পদ্মপুরাণের শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে ভাগবত পুরাণ একটি সাত্ত্বিক পুরাণ (অর্থাৎ, এই পুরাণ কল্যাণ ও পবিত্রতার সঙ্গে যুক্ত)।[৪] প্রচলিত হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, ব্যাস এই পুরাণের রচয়িতা। ভাগবত পুরাণে প্রায়শই আদি শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈত দর্শন, রামানুজাচার্যের বিশিষ্টাদ্বৈত দর্শন এবং মধ্বাচার্যের দ্বৈতবাদ দর্শনের সংমিশ্রণ দেখা যায়।[৫][৬][৭][৮] প্রায় সব ভারতীয় ভাষায় এটি ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়।

কালযবন পরিবেষ্টিত মথুরা (যেখানে কৃষ্ণবলরাম উপবিষ্ট), ভাগবত পুরাণের একটি পুথিচিত্র, ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ)

ভাগবত পুরাণ কে পবিত্রতম ও সর্বশ্রেষ্ঠ পুরাণ মনে করা হয়। কারণ, এটি বিষ্ণু ও তার বিভিন্ন অবতারের (প্রধানত কৃষ্ণের) প্রতি ভক্তির কথা প্রচার করে।[৯] এই পুরাণে জাগতিক কর্মের বন্ধন থেকে মুক্তি, বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের উপায় ও বিষ্ণুভক্তির মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।[১০]

ভাগবত পুরাণে , অন্যান্য পুরাণের মতোই বিশ্বতত্ত্ব , জ্যোতির্বিদ্যা, বংশতালিকা , ভূগোল, কিংবদন্তি, সঙ্গীত, নৃত্য, যোগসংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । [৫][১১]

ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে যে কিংবদন্তিটি বহুবার লক্ষ্য করা যায় তা হলোঃ

অশুভ শক্তি ও পরোপকারী দেবতাদের পরস্পর যুদ্ধে অসুরেরা জয়লাভ করে ও পৃথিবী শাসন করে। পরম সত্য পুনরায় কৃষ্ণরূপে (যার অপর নাম "হরি" বা "বাসুদেব" ) আবির্ভূত হন। তিনি প্রথমে অসুরদের সাথে শান্তি স্থাপন করেন, তাদের স্বভাব বোঝেন, তারপর তৎপরতার সাথে তাদের পরাজিত করে আশা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং সুখ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। [১২]

ভাগবত পুরাণ সর্বাধিক প্রভাবশালী পুরাণ। অষ্টাদশ পুরাণের মাঝে এটি অন্যতম। ইতিহাস রামায়ণ, মহাভারতের পাশাপাশি অন্যান্য পুরাণের সাথে এটিকে "পঞ্চম বেদ" বলা হয়ে থাকে।[১৩][১৪]

ভাগবত পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণের অভ্যন্তরীণ প্রকৃতি এবং বহিঃস্থ রূপ বেদের অনুরূপ এবং তা বিশ্বকে অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করে। [১৫]

ভাগবত পুরাণে বিষ্ণুকে (নারায়ণ) পরব্রহ্ম বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনিই অসংখ্য বিশ্ব সৃষ্টি করে প্রতিটির মধ্যে ঈশ্বর-রূপে প্রবেশ করেন।[১৬] বিষ্ণু রজোগুণ অবলম্বন করে ব্রহ্মা রূপে প্রত্যেক বিশ্বের মধ্যে চোদ্দোটি করে জগৎ সৃষ্টি করেন; সত্ত্বগুণ গ্রহণ করে বিষ্ণু রূপে সেই জগৎগুলি রক্ষা ও প্রতিপালন করেন এবং মহাকল্পের অন্তকালে তমোগুণ অবলম্বন করে রুদ্র রূপে সেই জগৎগুলি ধ্বংস করেন।[১৭][১৮]

এই পুরাণ প্রথমে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। এর বর্তমান রূপটি খ্রিস্টীয় ৪র্থ থেকে ১০ম শতাব্দীর মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে লিপিবদ্ধ হয়। [৩] ভাগবত পুরাণের পাণ্ডুলিপিগুলি আঠার শতকের মধ্যে সংশোধিত অসংখ্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ সংস্করণে টিকে আছে ও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা জুড়ে অসংখ্য বার সংশোধিত হয়েছে। [১৯]

ভাগবত পুরাণের সংস্কৃত (উপরে) ও বাংলা পুঁথিলিপি, ১৬শ-১৯শ শতাব্দী।

গ্রন্থটি মোট ৩৩২টি অধ্যায় ও ১৮,০০০ শ্লোক সহ দ্বাদশ স্কন্ধের সমন্বয়ে গঠিত। [২০] বিষ্ণুর যে মানবরূপ কৃষ্ণের প্রতি ভক্তি ভাগবত পুরাণের আলোচ্য, সেই কৃষ্ণের কাহিনি এই পুরাণের ১০ম স্কন্ধে প্রায় ৪,০০০ শ্লোকে এককভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই স্কন্ধটি সমগ্র ভাগবত পুরাণের এক-চতুর্থাংশ জুড়ে রয়েছে।[৩] কৃষ্ণের জন্ম থেকে অন্তর্ধান পর্যন্ত সকল ঘটনা এই স্কন্ধেই সুসংবদ্ধভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে ভক্তিযোগের আচরণ-পদ্ধতি, ভক্তির ব্যাখ্যা এবং বিভিন্ন ধরনের ভক্তির বর্ণনা।[৫] অনেক বৈষ্ণব ভাগবত (১/৩/৪০) অনুসারে, এই গ্রন্থটিকে ও কৃষ্ণকে অভিন্ন এবং এই গ্রন্থটিকেই কৃষ্ণের বাণীমূর্তি বা বাঙ্ময় বিগ্রহ মনে করেন। [২০][২১]

ভাগবত পুরাণের সকল কাহিনি ব্যাসের পুত্র শুকের মুখে বর্ণনাচ্ছলে কথিত হয়েছে। ভাগবত পুরাণ অনুসারে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে পরীক্ষিতের নিকট ভাগবত কথিত হয়েছিল। মহাভারতে আছে রাজা পরীক্ষিৎ কৃষ্ণের তৎপরতায় জীবন পেয়েছিলেন। ভাগবত পুরাণে দেখা যায়, মৃত্যুপথযাত্রী পরীক্ষিৎ শুকের মুখে কৃষ্ণের কথা জানতে চান। তার নানা প্রশ্নের উত্তরে সাত দিনে শুক তার কাছে ভাগবত পুরাণের কাহিনি বিবৃত করেন। আজ অবধি ভক্তদের দ্বারা ভাগবত পাঠ ও কীর্তন করা হয়।

নামপঞ্জি

'ভাগবত পুরাণ' হলো 'বিষ্ণু ভক্তগণের ইতিহাস' । 'শ্রীমদ্ভাগবত' মানে যেখানে 'বিষ্ণুর প্রসিদ্ধ ভক্তদের' কথা রয়েছে ।[যাচাই করার জন্য উদ্ধৃতি প্রয়োজন]

  • ''ভাগবত' (বা 'ভাগবতম্ বা 'ভাগবত' , সংস্কৃত भागवत) মানে 'বিষ্ণুর অনুগামী বা উপাসক'।[২২]
      • 'ভগবান' (সংস্কৃত भगवन्) অর্থ 'বিশুদ্ধ, পবিত্র বা শ্রদ্ধেয়', 'ঈশ্বর' বা 'প্রভু'৷[২৩] কৃষ্ণকে এই শাস্ত্রে স্বয়ং 'ভগবান' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম স্কন্ধ, অধ্যায় ৩, ২৮ শ্লোকে বলা হয়েছে, "কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্" "শ্রীকৃষ্ণ হলেন আদি পরমেশ্বর ভগবান" (এ.সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদকৃত অনুবাদ।"[২৪]
      • 'পুরাণ' (সংস্কৃত पुराण) শব্দের অর্থ 'প্রাচীন' বা 'পুরাতন' (বা 'পুরাতন ইতিহাস')।[২৫] পুরাণের অপর অর্থ 'সম্পূর্ণ করা' বা 'সম্পূর্ণ'। [২৫] অর্থাৎ পুরাণ 'বেদকে সম্পূর্ণ বা পরিপূর্ণ করে'। সংক্ষেপে, পুরাণ অর্থে বেদের পরিপূরক শাস্ত্রকে বোঝায়। [২৬]
      • 'মহা' ('সংস্কৃত महत्) মানে 'মহান্', 'বৃহৎ' বা 'বিশাল'৷[২৭]
      • 'শ্রীমদ্' (বা 'শ্রীমৎ', সংস্কৃত श्रीमत्) অর্থ 'উজ্জ্বল', 'পবিত্র', 'অপূর্ব', বা 'ঐশ্বর্যময়'। [২৮]। শ্রীমদ্ একটি সম্মানজনক ধর্মীয় উপাধি।
      • 'শ্রী' (বা 'শ্রী' বা 'শ্রী', সংস্কৃত श्री) মানে ' সম্পদ'।[২৯] সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী( বিষ্ণু/কৃষ্ণের স্ত্রী) -কে 'শ্রী' বলা হয়।
      • 'মদ্' (বা 'মৎ', সংস্কৃত मत्) অর্থ 'শ্রেয়' বা 'সত্যবিশ্বাসী বা সত্য বলে বিশ্বাস করা'৷[৩০]
      • ঐশ্বরিক শ্রী সমন্বিত ('শ্রী') ('মৎ') যা কিছু 'উজ্জ্বল' , ' পবিত্র', ও 'শোভামণ্ডিত ', বা 'গৌরবান্বিত' তাকেই 'শ্রীমদ্ বা শ্রীমৎ' বলা হয়ে থাকে।

বিষয়বস্তু ও বিন্যাস

শ্রীমদ্ভাগবতের ১৮,০০০ শ্লোক বেশ কিছু আন্তঃসংযুক্ত, পরস্পর পরিব্যাপ্ত, নাতিদীর্ঘ কথোপকথন, শিক্ষা ও ভাষ্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে, এবং তা ভক্তি যোগের পক্ষ অবলম্বন করে। সময়ের প্রবাহে ভাগবতের বারোটি স্কন্ধ সৃষ্টি হয়েছে ।

আমরা ভাগবতকে পুরাণ হিসেবে উল্লেখ করেছি। ভাগবতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর বহুস্তরীয় সংলাপ কাঠামো... কথোপকথনের স্তরযুক্ত বিন্যাস। এখানে ভাগবতের প্রধান বক্তা শুকদেব মূল শ্রোতা পরীক্ষিৎকে সম্বোধন করছেন, এবং সেখানে বক্তা পূর্ববর্তী বক্তাদের প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন [যেমন নারদ যুধিষ্ঠিরকে( পরীক্ষিতের পিতামহের ভ্রাতা) উপদেশ দিচ্ছেন]। এভাবে পর্যায়ক্রমে বক্তা অপর একজন বক্তাকে উদ্ধৃত করে থাকেন। এই ধরনের দুই বা তিনটি সংলাপের স্তর সাধারণত একযোগে কাজ করে... বক্তাগণের সংমিশ্রিত কথোপকথন নির্দিষ্ট বার্তাটিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

— রবি.এম.গুপ্ত ও কেনেথ আর. ওয়ালপে, দ্য ভাগবত পুরাণঃ সিলেক্টড রিডিংস্ [৩১]

আদি রচয়িতা

গণেশ বাসুদেও তাগারে / এন.পি. জৈন এর মতিলাল বেনারসিদাস অনুবাদ:

এই শ্রীমদ্ভাগবত ভগবানের গ্রন্থাবতার। ভগবদবতার শ্রীল ব্যাসদেব এর সংকলক। সমস্ত মানুষের চূড়ান্ত মঙ্গলসাধনই জন্য এর অভিপ্রেত। এটি সর্বসমৃদ্ধিপূর্ণ, সর্বশ্রীপ্রযুত ও সুনির্মল। [২১]

বিবেক দেবরায় অনুবাদ :

যখন কৃষ্ণ ধর্ম ও জ্ঞান প্রভৃতি সঙ্গে নিয়ে তার নিজ ধামে ফিরে গেছেন,কলিযুগের জ্ঞানচক্ষুরহিত মানুষের মঙ্গলের জন্যই সূর্যের মতোই উজ্জ্বল তথা অধ্যাত্মজ্ঞানে পরিপূর্ণ এই ভাগবত পুরাণের উদয় হয়েছে।

— দ্য ভাগবত পুরাণ ১, স্কন্ধ ১, অধ্যায় ১(৩) (s.b ১.৩.৪৩) [৩২]

পৌরাণিক বৈশিষ্ট্য

মৎস্য মহাপুরাণে বিশদভাবে বলা হয়েছে, সমস্ত পুরাণ সাহিত্য পাঁচটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত - সংস্কৃতে একে "পঞ্চ লক্ষন" ( পাঁচটি উপাদান সমন্বিত) বলা হয়। [৩৩][৩৪] -এখানে নির্দিষ্ট দেবতা ও মোক্ষ আদি অন্যান্য বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ আছে। কেএল জোশীর (সম্পাদক) অনুবাদ :

পুরাণের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য যথা (১) ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি(সর্গ), (২) বংশতালিকা এবং প্রলয়(প্রতিসর্গ), (৩) রাজবংশ, (৪) মন্বন্তর, (৫)বংশানুচরিত । পুরাণে এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্য সহ ব্রহ্মা, বিষ্ণু, সূর্য এবং রুদ্র-এর মাহাত্ম্য কীর্তিত হয়েছে। সেই সাথে, পৃথিবীর সৃষ্টি ও সংহার কথাও বর্ণিত হয়েছে।মানব জীবনের চারটি প্রধান লক্ষ্য বা চতুর্বর্গ (ধর্ম, অর্থ, কামমোক্ষ) তথা পাপকর্মের বিষাদময় পরিণতি সকল পুরাণেই বলা হয়েছে। সাত্ত্বিক পুরাণে মূলত হরিমাহাত্ম্যের উল্লেখ আছে।

— মৎস্য পুরাণ , ৫৩ অধ্যায় [৩৫]

বৈষ্ণবধর্মের অন্যতম সাত্ত্বিক মহাপুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতে তদতিরিক্ত আরও পাঁচটি পৌরাণিক বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ রয়েছে। [৩৬] জে এম সান্যাল অনুবাদ :

শুকদেব বললেন, - "হে রাজন্! এই ভাগবত পুরাণে দশটি বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে, যথা: (১) সর্গ ( ঈশ্বরকৃত নিত্যনৈমিত্তিক সৃষ্টি), (২) বিসর্গ ( ব্রহ্মার সৃষ্টি), (৩) স্থান (বিন্যাস), (৪) পোষণ (পরিরক্ষণ), (৫) উতি ( ক্রিয়া সম্পাদনেচ্ছা), (৬) মন্বন্তর (নির্মল চরিত্র মানবের অধ্যাত্ম জীবনযাপনের পদ্ধতি), (৭) ঈশানুকথা (ভগবান ও তাঁর ভক্তগণ সম্পর্কিত আলোচনা), (৮) নিরোধ (সংযুক্তি), (৯) মুক্তি (মোক্ষ), এবং (১০) আশ্রয় (নিবৃত্ত অবস্থায় থাকা )।এই দশ বিষয়ের মধ্যে দশম আশ্রয় তত্ত্বটি যথাযথরূপে জানার জন্য মহাত্মাগণ অন্য নয়টি বিষয়কে অত্যন্ত সাবলীলভাবে বর্ণনা করেছেন।

— দ্য শ্রীমদ্ভাগবতম্ অব কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ণ ব্যাস (ভলিউম. ১), স্কন্ধ ২, অধ্যায় ১০, শ্লোক ১-২ (শ্রী.ভা ২.১০.১-২)[৩৭]

ভাগবত আরও বিশদভাবে বর্ণনা করেছে যে, পঞ্চ বা দশ লক্ষণযুক্ত পুরাণ ও মহা পুরাণ এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে ।[৩৮] স্বামী প্রভুপাদের শিষ্যগণকৃত বিবিটি অনুবাদ:

হে ব্রাহ্মণ্, পৌরাণিক তত্ত্ববিদগণ পুরাণকে দশটি লক্ষণ সংযুক্ত বলেন।সেগুলি হচ্ছে —এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, জীব ও জগতের গৌণ সৃষ্টি, জীবের পালন,রক্ষণ,মন্বন্তর, মহান রাজবংশ, উক্ত বংশীয় রাজাদের চরিত,প্রলয়,অভিপ্রায় এবং পরম আশ্রয় সম্পর্কিত বর্ণনা, অন্যান্য পণ্ডিতগণ বলেন যে মহাপুরাণ এই দশবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে,যেখানে উপপুরাণগুলি পাঁচ প্রকার বিষয়ের আলোচনা করতে পারে।

— স্কন্ধ ১২, অধ্যায় ৭, শ্লোক ৯-১০ [৩৯]

শ্লোক

মূল সংস্কৃত শ্লোক এর সংখ্যা ভাগবত স্বয়ং ১৮,০০০ বলে উল্লেখ করেছে।[৪০] অন্যান্য পুরাণ যেমন মৎস্য মহাপুরাণে শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোকসংখ্যা দেওয়া হয়েছে [৪১]। অন্যান্য ভাষায় ভাগবত অনুবাদ করার সময় সমতুল্য শ্লোকের সংখ্যা প্রায়ই পরিবর্তিত হয়। ভাষা ও পাণ্ডুলিপি একই থাকলেও অনুবাদের ক্ষেত্রে শ্লোকের পার্থক্য রয়ে যায়। [৪২] উদাহরণস্বরূপ, বিবেক দেবরায় (বি. দে রায়) এর ইংরেজি অনুবাদে এ.সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ / বিবিটির ইংরেজি অনুবাদের চেয়ে ৭৮টি বেশি শ্লোক রয়েছে।যদিও সম্ভবত একই পাণ্ডুলিপির উপর নির্ভর করে অনুবাদ করা হয়েছে:[৪২]

শ্রীমদ্ভাগবতের অধ্যায় ও শ্লোক
বিবিটি অনুবাদবিবেক দেবরায় অনুবাদ
স্কন্ধঅধ্যায়শ্লোক%অধ্যায়শ্লোক%
১৯৮০৮৫.৭১৯৮১১৫.৭
১০৩৯৩২.৮১০৩৯১২.৮
৩৩১,৪১৬১০৩৩১,৪১২১০
৩১১,৪৪৯১০.৩৩১১,৪৫০১০.২
২৬৬৬৮৪.৮২৬৭৩৮৫.২
১৯৮৫১১৯৮৫৫
১৫৭৫০৫.৩১৫৭৫২৫.৩
২৪৯৩১৬.৬২৪৯২৯৬.৬
২৪৯৬০৬.৮২৪৯৬২৬.৮
১০৯০৩,৯৩৬২৭.৯৯০৩,৯৪৮২৭.৯
১১৩১১,৩৬৭৯.৭৩১১,৩৬০৯.৬
১২১৩৫৬৫১৩৫৬৪
মোট৩৩৫'১৪,০৯৪'১০০৩৩৫১৪,১৭২১০০
'পার্থক্য (বিবিটি/বি.দে রায়)'-৭৮+৭৮
'পার্থক্য (সংস্কৃত)'-৩,৯০৬-৩,৮২৮

শ্রীমদ্ভাগবতের অনুবাদে বিভিন্ন সংখ্যক শ্লোকের বিষয় আলোচনায় দেবরায় বলেছেন:

এখানে ভারতীয় ভাষায় ভাগবতের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ রয়েছে। যাইহোক, আমার জানামতে ইংরেজিতে মাত্র পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ আছে [৪৩]... কারও সিদ্ধান্ত করা উচিত নয় যে দেবরায়ের অনুবাদে প্রচুর সংখ্যক শ্লোক অনুপস্থিত। কিছু শ্লোক অনুপস্থিত হতে পারে। যদিও শ্লোক গণনা করার ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়ে যায়। বিষয়বস্তু অভিন্ন থাকার কারণে পাঠে এক জায়গায় একটি শ্লোক ও অন্যত্র দুটি শ্লোক গণনা করা যেতে পারে... আমাদের পাঠ্যের সংস্করণের মধ্যে কোন পার্থক্য নাও থাকতে পারে। বলা যায়, স্বামী প্রভুপাদের ব্যবহৃত সংখ্যায়ন কিছুটা ভিন্ন। (কখনও কখনও সংস্কৃত বইয়ে ছোটখাটো পার্থক্য রয়ে যায় )।

শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোকগণনায় টীকাকার গঙ্গাসহায় তার অন্বিকার্থ প্রকাশিকা টীকায় বলেছেন, সংস্কৃতে অনুষ্টুপ ছন্দে বত্রিশটি অক্ষর থাকে। শ্রীমদ্ভাগবতের সমস্ত অক্ষরকে গণনা করে সেই সংখ্যাকে ৩২ দ্বারা ভাগ করলে ১৮,০০০ সংখ্যা পাওয়া যায়। ভাগবত পুরাণের পঞ্চম স্কন্ধের শ্লোকগুলি গদ্যাকারে রচিত।সেখানে অধিকাংশ শ্লোক একসাথে জুড়ে যাওয়ায় ভাগবতের শ্লোকসংখ্যা গণনা করে কিছু কম হয়। [৪৪][৪৫]

পাণ্ডুলিপি

একটি ভাগবত পুরাণ পাণ্ডুলিপি।

পশ্চিমা সংস্কৃতির বিপরীতে অভিনবত্ব, কাব্যিক বা শৈল্পিক অনুজ্ঞা ইত্যাদি উপকরণসমেত ভাগবত ভারতীয় সংস্কৃতিতে [৪৬] কয়েকশ বছরের শক্তিশালী ভাষাগত সৃজনশীলতার প্রতীক রূপে পরিগণিত হয়ে আসছে।[৪৭] শ্রীমদ্ভাগবতম্ সহ প্রতিটি পুরাণের মূল পাণ্ডুলিপির পাঠান্তর পাওয়া যায়। [৪৬] আপাতদৃষ্টিতে স্বামী প্রভুপাদ ও বিবেক দেবরায় উভয়ই ভাগবত পুরাণের অনুবাদের ক্ষেত্রে সাধারণ পাণ্ডুলিপি ভাগবতমহাপুরাণম (নাগ পাবলিশার্স, দিল্লি) ব্যবহার করেছেন। [৪৮][৪২] পুরাণের পাণ্ডুলিপির ভিন্নতা প্রসঙ্গে পণ্ডিত ড. গ্রেগরি বেইলি বলেছেন:

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্ভূত একই পুরাণের পাণ্ডুলিপিগুলির বহু বিস্তৃত বৈচিত্র্য রয়েছে। বিষয়টি বড়ই তাৎপর্যপূর্ণ ... সংস্কৃত ঘরানার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল পুরাণ যাকে ডোনিগার "তরল গ্রন্থ" বলেছেন " (Doniger ১৯৯১, ৩১)। পুরাণের অনন্ত বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যসমন্বিত বিষয়বস্তু পুরাণকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অবস্থানের যোগাযোগের বাহন হতে সক্ষম করেছে... মৌলিকতার ধারণাটি প্রাথমিকভাবে পাশ্চাত্য। ভারতে সাংস্কৃতিক সৃষ্টির অধিকাংশের মতো পুরাণগুলি ছিল পুরাতন জ্ঞানের সঞ্চিত সম্পদ ...

— দ্য স্টাডি ইন্ দ্য হিন্দুইজম্ (অরবিন্দ শর্মা, সম্পাদক), অধ্যায় ৬ ('দ্য পুরাণাস্: অ্যা স্টাডি ইন দ্য ডেভেলপমেন্ট অব হিন্দুইজম')[৪৬]

সমালোচনামূলক সংস্করণ(ক্রিক্টিক্যাল এডিশন্)

দ্য ভাগবত (শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ): ক্রিকটিক্যাল এডিশন (সমালোচনামূলক সংস্করণ), এইচ.জি. শাস্ত্রী ও অন্যান্য দ্বারা সম্পাদিত, ৪ খণ্ড, ৬ ভাগ, আহমেদাবাদ: বি.জে. ইনস্টিটিউট অফ লার্নিং অ্যান্ড রিসার্চ, ১৯৯৬-২০০২ (খণ্ড ১, স্কন্ধ ১-৩, এইচ. জি. শাস্ত্রী, ১৯৯৬ সংস্করণ; ভলিউম ২, স্কন্ধ ৪-৬, ভারতী কে. শেলাত সংস্করণ , ১৯৯৬; খণ্ড ৩, স্কন্ধ ৭-৯, সংস্করণ, এইচ. জি. শাস্ত্রী, বি. কে. শেলাত, এবং কে. কে. শাস্ত্রী, ১৯৯৮; খণ্ড ৪, অংশ ১, স্কন্ধ ১০, কে. কে. শাস্ত্রী সংস্করণ, ১৯৯৪, ১৯৯৪; পার্ট ২, স্কন্ধ ১১-১২, কে. কে. শাস্ত্রী সংস্করণ, ১৯৯৮; খণ্ড ৪, অংশ ৩, উপসংহার, কে. কে. শাস্ত্রী, ২০০২)।

চরিত্র

প্রদত্ত সারণীটি ভাগবত পুরাণের সকল সম্পূর্ণ অনুবাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সমস্ত সারি শিরোনাম দিয়ে সাজানো হয়েছে ।

বিষ্ণুর অবতার

নিম্নের সারণীতে প্রাথমিকভাবে প্রথম স্কন্ধ , তৃতীয় অধ্যায় (শ্রী.ভা. ১/৩)[৪৯] ও দ্বিতীয় স্কন্ধ,সপ্তম অধ্যায়ের (শ্রীমদ্ভাগবত ২/৭) উদ্ধৃতিগুলি [৫০] ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্টের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে৷ একটি নামের পরে বন্ধনী "()" দিয়ে প্রথম স্কন্ধ বর্ণিত অবতারের ক্রমসংখ্যা নির্দেশ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য :

  • উপরের অধ্যায়ে তালিকাভুক্ত নয় এমন অবতার - যেমন হংস, হয়গ্রীব, ও অজিত - এদেরকে প্রদত্ত স্কন্ধে তাদের সাধারণ (বা শুধুমাত্র) উপস্থিতির উপর নির্ভর করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
  • সমস্ত ভাগবত জুড়ে প্রদর্শিত বা বহুবার উল্লিখিত অবতারগণ(কৃষ্ণ ছাড়া) স্কন্ধ সারিতে "--" দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
  • অবতারগণের উপস্থিতি শুধুমাত্র সংক্ষিপ্তভাবে দেওয়া হয়েছে (উদাহরণস্বরূপ, উপরের তালিকায়) স্কন্ধ সারিতে একটি ফাঁকা স্থান দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
  • বিষ্ণু ও কৃষ্ণের বিভিন্ন সময়ে আবির্ভাব (যেমন যজ্ঞ ও দর্শনদানের সময়) তালিকাভুক্ত করা হয়নি।
  • কৃষ্ণাবতারের প্রতিমূর্তি বা সম্প্রসারণ সারণীর তালিকাভুক্ত নয়(যেমন, ১৬,১০০ রাজকন্যাকে উদ্ধার করে ১৬,১০০ মূর্তি পরিগ্রহ করে বিবাহ করণ; দশম স্কন্ধে ব্রহ্মার হরণকৃত গোপবালক ও গো-বৎসের অসংখ্য প্রতিমূর্তি গ্রহণ)।
অবতার (অবতারের ক্রমসংখ্যা)পরিচিতিকার্যস্কন্ধ
চতুঃসন (১)সনক, সনাতন, সনন্দন ও সনৎকুমারএরা বৈদিক সত্যকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন।১,৩,৪
বরাহ (২)শূকরপৃথিবীকে গর্ভোদক নামধেয় সমুদ্র থেকে দন্ত দ্বারা উত্তোলন করেছিলেন।
নারদ (৩)ঋষিবৈদিক জ্ঞানের ব্যাখ্যাতা।--
নর-নারায়ণ (৪)যমজ ভ্রাতাসংযম ও তপস্যা আচরণকারী।
কপিল (৫)ঋষিসাংখ্য(সেশ্বর সাংখ্য) ব্যাখ্যা করেছিলেন।[৫১]
দত্তাত্রেয় (৬)ত্রিমূর্তির রূপধারীসন্ন্যাসধর্মের পথপ্রদর্শক।
যজ্ঞ (৭)যজ্ঞের মূর্তরূপযজ্ঞের বিস্তারকারী, যজ্ঞের অধীশ্বর।
ঋষভ (৮)জৈন ধর্মের প্রথম তীর্থঙ্করজপ যোগ (জড়বাদী যোগ) ব্যাখ্যাকারী।
পৃথু (৯)পৃথিবীর প্রথম প্রতিষ্ঠিত রাজাপৃথিবীকে প্রাচুর্যসম্পন্ন করে তা শাসন করেন।
মৎস্য (১০)মাছসহস্র বৎসরান্তে বিশাল জলরাশিতে অবস্থান করেছিলেন।
কূর্ম (১১)কচ্ছপমন্থনদন্ডরূপে ব্যবহৃত মন্দার পর্বতকে নিজের পিঠে ধারণ করেছিলেন।
ধন্বন্তরি (১২)আয়ুর্বেদিক ঔষধের জনকচিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক৮,৯
মোহিনী (১৩)নারী; প্রলোভনসঙ্কুল ভ্রমোৎপন্নকারীনিপ্রথমে অসুরগণ, পরে শিবকে মায়া দ্বারা মোহাবিষ্ট করেন।
নৃসিংহ (১৪)অর্ধ সিংহ, অর্ধ মানব। চাক্ষুষ মন্বন্তরে আবির্ভূত হয়েছিলেন।হিরণ্যকশিপুর বিনাশকর্তা।
বামন (১৫)খর্বাকৃতি। বর্তমান বৈবস্বত মন্বন্তরের সপ্তম চতুর্যুগের সত্যযুগে আবির্ভূত হন।তিন পদবিক্ষেপে বলির অধিকৃত সমস্ত ভূমি পুনরায় উদ্ধার করে দেবতাদের অর্পণ করেন।
পরশুরাম / ভৃগুপতি (১৬)যোদ্ধা। বৈবস্বত মন্বন্তরের সতেরোতম চতুর্যুগের ত্রেতাযুগে তার আবির্ভাব হয়।অত্যাচারী ক্ষত্রিয় শাসকদের একুশ বার পৃথিবী থেকে বধ করে নির্মূল করেন।
ব্যাসদেব (১৭)বৈদিক শাস্ত্রের সংকলকবৈদিক জ্ঞানকে বিভক্ত করেছিলেন যাতে মানুষ সহজে বৈদিক জ্ঞান বুঝতে পারে।--
রাম / রামচন্দ্র (১৮)বৈবস্বত মন্বতরীয় চব্বিশতম চতুর্যুগান্তর্গত ত্রেতাযুগের অবতাররাবণকে বধ করেন।
বলরাম (১৯)কৃষ্ণের ভাইঅসুর বধ করে ভূ-ভার হরণ করেন।১০
কৃষ্ণ (২০)সকল অবতারের উৎসপৃথিবীর ভার লাঘবের উদ্দেশ্যে দুরাচারী অসুরদের বধ করেন।১,১০,১১
বুদ্ধ (২১)বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতানাস্তিকদের কাছে শূন্যবাদী দর্শন ব্যাখ্যা করেন।বুদ্ধ অবতার সম্পর্কে মতভেদ আছে। কেউ কেউ অবশ্য গৌতম বুদ্ধের পরিবর্তে সুগত বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার বলে থাকেন।এর কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে তারা বলেন, ভাগবতে বর্ণিত বুদ্ধ অবতার কীকটদেশে( বুদ্ধগয়া) জাত ও অজিন/অঞ্জনের পুত্র ছিলেন।১২
কল্কি (২২)মহান্ দণ্ডদাতাঅশুভ প্রকৃতির লোকেদের বিনাশ করতে কলিযুগের অন্তে আবির্ভূত হবেন।১২
হয়গ্রীবঅর্ধ অশ্ব, অর্ধ মানববেদযজ্ঞের মূর্ত প্রতীক। বৈদিক জ্ঞান ও যজ্ঞ পুনরুদ্ধার করেন।২,৫
হংসহাঁসবৈদিক তত্ত্ব পুনরুদ্ধার করেন।১১
অনিরুদ্ধকৃষ্ণের পৌত্র, প্রদুম্নের পুত্র (ব্রহ্মা ও ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুর যুগল অবতার)পৃথিবীর ভার লাঘব করেন।১০
প্রদ্যুম্নকৃষ্ণের পুত্র; কামদেব ও গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর যুগল অবতার।অসুরবধকল্পে ভূ-ভার হরণ করেন।১০
শাম্বকৃষ্ণের পুত্রপৃথিবীর ভার হরণ করেন।১০
সুযজ্ঞ (হরি)প্রজাপতির পুত্রদুঃখহারী; হরিণী ও হরিধর্মা হতে জাত।
মনুশাসক মনু রাজবংশের বংশধরপৃথিবী শাসন করেন।
অনন্ত/সংকর্ষণ/শেষ/তামসীশিব দ্বারা পূজিত সর্প/নাগভূ-মণ্ডল ধারণ ও সংহার করেন।
অজিতক্ষীর সাগর মন্থনের সময় আবির্ভূত হনক্ষীর সাগর মন্থনের উদ্দেশ্যে মন্দার পর্বত নিজের পিঠে ধারণ করেন।

বিখ্যাত ভক্ত

নিচের সারণীতে বিষ্ণুর ভক্তাবতার নারদ, কপিল, বা পৃথুর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ভাগবত জুড়ে পুনঃপুন প্রদর্শিত ভক্তদের স্কন্ধ সারিতে "--" দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নামপরিচিতিকার্যস্কন্ধ
প্রহ্লাদভক্তরাজহিরণ্যকশিপুর পুত্র
বিদুরযমের শূদ্র অবতারঅর্যমা তার অনুপস্থিতিতে যমরাজের দায়িত্ব পরিচালনা করেছিলেন (SB ১.১৩.১৫)
উদ্ধববৃহস্পতির শিষ্যকৃষ্ণের সখা ও পরামর্শদাতা।৩,১০,১১
পরীক্ষিৎযুধিষ্ঠিরের ভ্রাতৃপৌত্র;যুধিষ্ঠিরের পরে রাজ্যের উত্তরাধিকারী হন; শ্রীমদ্ভাগবতের বেশিরভাগ অংশই শুকদেব গোস্বামী কর্তৃক বর্ণনাকারে তার নিকট কথিত।১,২, --
শুকদেব গোস্বামীঋষি ব্যাসদেবের পুত্রভাগবতের প্রধান বক্তা।--
মৈত্রেয়ঋষিবিদুরের প্রতি জ্ঞান অধ্যাত্মিক জ্ঞান উপদেশ দিয়েছিলেন।
বৃত্রাসুরদানবরাজ (শুদ্ধ ভক্ত)ছিলেন।ইন্দ্রের নেতৃত্বাধীন দেবতাদের পরাজিত করেছিলেন।
ধ্রুববালক তপস্বীউত্তানপাদের পুত্র;স্বায়ম্ভুব মনুর পৌত্র।
প্রচেতা / বরুণতপস্বীনারদের নির্দেশে মোক্ষলাভের উদ্দেশ্যে সমুদ্রজলে তপস্যা করেছিলেন।
ভরতরাজাহরিণ শিশুর প্রতি অত্যধিক স্নেহপরায়ণ হওয়ার দরুণ মোক্ষলাভের সুযোগ হারিয়েছিলেন; ফলে হরিণ হয়ে পুনর্জন্ম নেন, পরে মানুষ হয়ে পুনর্জন্ম গ্রহণ করেন ও দেবী কালী কর্তৃক বলি হওয়া থেকে রক্ষা পান।
প্রিয়ব্রতরাজাতিনি ছিলেন সংসারের প্রতি অনাসক্ত। পরে মুক্তি লাভ করেন; তাঁর রথের চাকা সপ্ত মহাসমুদ্র ও দ্বীপ তৈরি করেছিল।
অজামিলব্রাহ্মণইন্দ্রিয়-সংযমহীন ও কামাসক্ত হয়ে পতিত হন- কেবলমাত্র ভগবানের "নারায়ণ" নাম আকস্মিকভাবে উচ্চারণের ফলে যমপাশ থেকে রক্ষা পান।
চিত্রকেতুরাজাতার একমাত্র পুত্রকে হত্যা করা হয়েছিল; তাই দুঃখে, পারিবারিক সম্পর্কের মায়ার প্রভাব সম্পর্কে নারদের কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করেছিলেন; পরে শিবকে উপহাস করায় পার্বতী তাকে অভিশাপ দেন।
গজেন্দ্রহাতিগরুড়বাহন বিষ্ণু কুমিরের(মকর) আক্রমণ থেকে একে উদ্ধার করেন।
যযাতিরাজাঅকালে বার্ধক্য ভোগ করার অভিশাপ পান;সেই বার্ধক্য তার পুত্র কে দেন। পরে ইন্দ্রিয়সুখের অসারতা অনুভব করে বার্ধক্য ফিরিয়ে নেন ও মুক্তি লাভ করেন।
অক্রুরকংসের অমাত্যকংস কৃষ্ণ কে ছলনা ও হত্যার ষড়যন্ত্র করে তাকে প্রেরণ করেছিলেন যা পরে কৃষ্ণকে জানিয়েছিলেন।১০
বসুদেব-দেবকীকৃষ্ণ-বলরাম এর পিতামাতাকারারুদ্ধ থাকাকালীন তাদের সন্তানদের কংস হত্যা করে।১০
সান্দিপনী মুনিকৃষ্ণ-বলরাম এর গুরুকৃষ্ণ পরে তার মৃত পুত্রকে যমলোক থেকে ফিরিয়ে আনেন।১০
নন্দ-যশোদাকৃষ্ণ-বলরাম এর পালক পিতামাতানন্দ গোপগোত্রের তথা গোপেদের প্রধান ছিলেন।১০
মুচুকুন্দরাজাঅসুরদের সাথে যুদ্ধের পর ইন্দ্রের নিকট নিদ্রার বর পান যদি কেউ তার ঘুম ভঙ্গ করে সে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।১০
জাম্ববানভল্লুকরাজকৃষ্ণ স্যমন্তক মণির জন্য এর সাথে যুদ্ধ করেছিলন; পরে জাম্ববান আত্মসমর্পণ করেন এবং কৃষ্ণের কৃপা পান, কৃষ্ণ তাঁর কন্যা জাম্ববতীকে বিবাহ করেন।১০
নৃগরাজাঘটনাক্রমে তিনি একজন ব্রাহ্মণকে একটি গরু দেন।কিন্তু সেটি ব্রাহ্মণের ছিল না।ব্রাহ্মণ তাকে গিরগিটি হওয়ার অভিশাপ দেন। রাজা কাকলাস (গিরগিটি) হয়ে কূয়োয় অবস্থান করেন; পরে কৃষ্ণ তাকে উদ্ধার করেন।১০
সুদামাদরিদ্র ভক্ত ও কৃষ্ণের বাল্যসখাইনি এত দরিদ্র ছিলেন যে, দ্বারকা গিয়ে কৃষ্ণকে উপহার হিসেবে চিড়ের খুদ মাত্র দিয়েছিলেন।১০
ভৃগুঋষিইনি ত্রিদেবের মধ্যে কে সর্বশ্রেষ্ঠ তা নির্ধারণোদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় ব্রহ্মাকে অপমান করেন, শিবকে অসন্তুষ্ট করেন ও বিষ্ণু বক্ষে পদপ্রহার করেন।১০
নিমিরাজাএকে 'নব যোগেন্দ্র' কৃষ্ণভক্তি সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছিলেন (নারদ কৃষ্ণপিতা বসুদেবকে নবযোগেন্দ্র কর্তৃক নিমিকে প্রদত্ত নির্দেশনাবলী বলেছিলেন )১১
অম্বরীষসূর্য বংশের ভক্ত রাজাঋষি দূর্বাসা তাকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র দুর্বাসাকে আক্রমণ করে। কিন্তু অম্বরীষের প্রার্থনায় তিনি রক্ষা পান।
হরিশচন্দ্রসূর্য বংশের অপর একজন রাজাতার রোহিতাশ্ব নামে পুত্র ছিল।

উল্লেখযোগ্য অসুর

শ্রীমদ্ভাগবতে বহু অসুরের উল্লেখ করা হয়েছে; তালিকাভুক্ত সারণীটি স্কন্ধসমেত তাদের সাধারণ উপস্থিতি অথবা বর্ণনার সাথে সম্পর্কিত। এই সারণীটি সম্পূর্ণ নয়।

নামবিবরণস্কন্ধ
অশ্বত্থামাদ্রৌপদীর ঘুমন্ত সন্তানদের হত্যার পরে উত্তরার পুত্র গর্ভস্থ পুত্র পরীক্ষিতকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।
হিরণ্যাক্ষ-হিরণ্যকশিপুদিতির যমজ পুত্র; দিতির পুত্র বলে এদের দৈত্য বলা হতো, জয়-বিজয় এর প্রথম অবতার।চতুষ্কুমার দ্বারা অভিশাপ প্রাপ্ত হন।১, ৩, ৭
বেণদুর্ভিক্ষসৃষ্টিকারী দুর্নীতিগ্রস্ত দুষ্ট রাজা ; পৃথুর আবির্ভাবের পূর্বে ব্রাহ্মণদের দ্বারা অভিশপ্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।
বৃত্রাসুরদানব রাজা (একজন শুদ্ধ ভক্ত)। তিনি ইন্দ্রের অধীন দেবতাদের পরাজিত করেন।
বলি / মহাবলীত্রিলোকবিজয়ী দৈত্যরাজ (একজন শুদ্ধ ভক্ত); বামন তার কাছে ত্রিপাদ ভূমি প্রার্থনার ছলনায় ত্রিলোক পুনরায় উদ্ধার করেন।
রাবণ-কুম্ভকর্ণরামচন্দ্রের রাক্ষস শত্রু (দেখুন রামায়ণ); জয়-বিজয় এর দ্বিতীয় অবতার।৭,৯
কংসঅত্যাচারী রাজা কৃষ্ণের পিতামাতাকে বন্দী করেছিল। কৃষ্ণের ভ্রাতাদের হত্যা করেছিল। সর্বোপরি কৃষ্ণকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।১০
পূতনাশিশু কৃষ্ণকে বিষ মাখানো স্তন পান করানোর উদ্দেশ্যে কংসপ্রেরিতা রাক্ষসী।১০
তৃণাবর্তশিশু কৃষ্ণকে হত্যার উদ্দেশ্যে কংস কর্তৃক প্রেরিত ঘূর্ণিরূপী অসুর।১০
অঘাসুরবালক কৃষ্ণকে হত্যার জন্য কংস কর্তৃক প্রেরিত বিশালাকৃতি সর্প অসুর।১০
বকাসুরবিকটাকৃতি বক অসুর বালক কৃষ্ণকে গ্রাস করেছিল।১০
ধেনুকগাধারূপী অসুর, যমুনার নিকটবর্তী তালবনে বাস করত।১০
কালিয়কালিয় নাগ যমুনা নদীর অন্তর্গত কালিন্দী হ্রদে এসে হ্রদের জলকে দূষিত করে। সেই জল পান কৃষ্ণের গোপবালক সখাদের মৃত্যু হয়। পরে কৃষ্ণ তাদের বাঁচিয়ে তোলেন।১০
প্রলম্বকংস কর্তৃক প্রেরিত অসুর যে গোপবালকের ছদ্মবেশ ধারণ করে কৃষ্ণকে বধের চেষ্টা করে।১০
অরিষ্টাসুরষাঁড়রূপী অসুর, কৃষ্ণের গোপজাতিকে আক্রমণ করেছিল।১০
কেশিকিশোর কৃষ্ণের প্রাণ হরণের উদ্দেশ্যে কংস কর্তৃক প্রেরিত অশ্বরূপী অসুর।১০
ব্যোমাসুরকংস কর্তৃক প্রেরিত অসুর, গোপবালক ছদ্মবেশে কৃষ্ণের গোপবন্ধুদের অপহরণ করেছিল।১০
কুবলয়াপীড়মত্ত উন্মাদ হাতি। মল্লমঞ্চের প্রবেশপথে কংসের দ্বারা আনীত হয়ে কৃষ্ণকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল।১০
জরাসন্ধকংসের শ্বশুর; কৃষ্ণের দ্বারকা প্রতিষ্ঠার পূর্বে তেইশ অক্ষৌহিণী সৈন্য নিয়ে জরাসন্ধ মথুরা অবরোধ করে।১০
কালযবনযবনরাজ, জরাসন্ধের মিত্র; কৃষ্ণের দ্বারা প্রতারিত হয়ে মুচুকুন্দকে পাদপ্রহার করে তাকে জাগিয়ে তোলে, ফলে কালযবন ভস্মীভূত হয় ।১০
শিশুপালদন্তবক্রকুচক্রী রাজা; কৃষ্ণের পিসতুতো ভাই ও শত্রু; জয়-বিজয়-এর তৃতীয় অবতার।৭,১০
রুক্মীএকাধারে রাজা ও রুক্মিণীর ভ্রাতা; তিনি চেয়েছিলেন রুক্মিণী কৃষ্ণের পরিবর্তে শিশুপালকে বিয়ে করুক; পাশা খেলায় প্রতারণা করায় বলরাম তাকে বধ করেন।১০
নরকাসুরঅসুর ১৬,০০০ রাজকন্যাকে অপহরণ করেছিল; কৃষ্ণ তাদের সবাইকে উদ্ধার করে বিবাহ করেন।১০
বাণাসুরবলির দৈত্যপুত্র। ইনি অনিরুদ্ধকে বন্দী করেছিলেন; কৃষ্ণের হাতে নিহত হওয়া থেকে তাকে তার নগ্ন মা রক্ষা করেছিলেন।১০
পৌণ্ড্রক বাসুদেবকৃষ্ণকে অনুকরণ করেছিলেন ও নিজেকে পরমেশ্বর ভগবান বলে ঘোষণা করেছিলেন।১০
দ্বিবিদনরকাসুরের মর্কট বন্ধু; কৃষ্ণের রাজ্য দ্বারকায় মানুষকে আতঙ্কিত করেছিল।১০
শাল্বদুর্বৃত্ত রাজা, শিশুপালদন্তবক্রের বন্ধু, একজন মায়াবাদী; কৃষ্ণের শহর দ্বারকা আক্রমণ করেছিল।১০
বিদুরথদন্তবক্রের ভাই; তলোয়ার দিয়ে কৃষ্ণকে আক্রমণ করে ভ্রাতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।১০
বল্বলএই রাক্ষস পবিত্র নৈমিষারণ্যে যজ্ঞের স্থানকে দূষিত করেছিল।১০
বৃকাসুরশিব তাকে বর দিয়েছিলেন, কোনও ব্যক্তির মস্তকে যদি সে হাত দিয়ে স্পর্শ করে তৎক্ষনাৎ সেই ব্যক্তি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে ; সেই বর পেয়ে শিবকেই ভস্ম করার চেষ্টা করেছিল।১০
কার্তবীর্যার্জুনহৈহয় বংশের অত্যাচারী ক্ষত্রিয় রাজা; জোরপূর্বক কামধেনু গাভী অপহরণ করলে পরশুরাম তাকে বধ করেন।

স্কন্ধ

নিম্নে বিবিটির মূল ইংরেজি ভাগবতের ভক্তিচারু স্বামীকৃত বাংলা অনুবাদ অনুসরণ করা হয়েছে। তুলনার জন্য অন্যান্য অনুবাদও দেওয়া হয়েছে।

শ্রীমদ্ভাগবত, ১/১/৩:

নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং
শুকমুখাদমৃতদ্রবসংযুতম্ ।
পিবত ভাগবতং রসমালয়ং
মুহুরহো রসিকা ভুবি ভাবুকাঃ ॥ ৩ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

হে বিচক্ষণ এবং চিন্তাশীল মানুষ, কল্পবৃক্ষরূপী বৈদিক শাস্ত্রের অত্যন্ত সুপক্ক ফল শ্রীমদ্ভাগবত আস্বাদন করুন। তা শ্রীল শুকদেব গোস্বামীর শ্রীমুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছিল। তাই এই ফলটি আরও অধিক উপাদেয় হয়েছে,যদিও এই অমৃতময় রসমুক্ত পুরুষেরা পর্যন্ত আস্বাদন করে থাকেন।

— স্কন্ধ ১, অধ্যায় ১, শ্লোক ৩। [৫২]

বিবেক দেবরায় অনুবাদ:

বিশুদ্ধ ভাগবত বেদরূপ কল্পবৃক্ষের সুপক্ব ফল। শুকদেবের মুখনিঃসৃত এই গ্রন্থ পরানন্দময়ী সুধায় পরিপূর্ণ। হে রস আস্বাদনকারীগণ! এই দিব্য ভগবৎরস পান করুন।

— প্রথম স্কন্ধ, অয় ১(৩)[৫৩]

প্রথম স্কন্ধ

উনিশটি অধ্যায় দিয়ে [৫৪] প্রথম স্কন্ধ শুরু হয়েছে। কৃষ্ণকে আবাহন করে বলা হয়েছে ব্যাসদেব দ্বারা সংকলিত শ্রীমদ্ভাগতবম্ই ঈশ্বরোপলব্ধির প্রকৃত শাস্ত্র। কলিযুগের সূচনায় শুকদেব গোস্বামী (ব্যাসপুত্র) ও শৌনকের নেতৃত্বে একদল ঋষিদের মাঝে একটি সংলাপরূপে বিস্তারিত বিবরণ প্রথম স্কন্ধ দিয়ে শুরু হয়েছে নৈমিষারণ্যে কৃষ্ণ ও তার ভক্তদের উদ্দেশ্যে সহস্র বৎসরব্যাপী যজ্ঞে ঋষিদের দ্বারা জিজ্ঞাসিত হয়ে সুত গোস্বামী নিম্নোক্ত কথাপ্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন:

  • পরীক্ষিতের জন্ম–শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা গর্ভস্থ পরীক্ষিৎকে রক্ষা।
  • শ্রীমদ্ভাগবত রচনায় ব্যাসদেবের সম্মুখে নারদের আবির্ভাব ও নির্দেশ প্রদান।
  • ভাগবত সংকলন ও সংশোধনের জন্য সরস্বতীর পশ্চিম তীরে ব্যাসদেবের ধ্যান ও অনুপ্রেরণা প্রাপ্তি।
  • ব্যাসদেব কর্তৃক তাঁর মুক্তাত্মা পুত্র শুকদেব গোস্বামীকে ভাগবত শিক্ষা দান।
  • কৃষ্ণের প্রস্থান ও অন্তর্ধান, কলিযুগের লক্ষণ ও সূচনা।
  • পাণ্ডবদের অবসর গ্রহণ। পরীক্ষিতের সিংহাসনারোহণ
  • কলির প্রভাব রোধের উদ্দেশ্যে পরীক্ষিতের প্রচেষ্টা।ব্রাহ্মণ পুত্রের দ্বারা সাত দিনের মধ্যে তক্ষক দংশনের অভিশাপপ্রাপ্তি।
  • কৃষ্ণের প্রতি ভক্তি প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে পরীক্ষিতের রাজ্যত্যাগ। গঙ্গার তীরে মৃত্যু পর্যন্ত (প্রায়োপবেশন) অনশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
  • (নারদ ও ভৃগু আদি) ঋষিদের আগমন ও শিষ্যগণসহ পরীক্ষিতের সপ্তাহশ্রবণে যোগদান যা সুত গোস্বামী কর্তৃক কথিত হয়েছে।

শ্রীমদ্ভাগবত ১/৩/৩৮:

স বেদ ধাতুঃ পদবীং পরস্য দুরন্তবীর্যস্য রথাঙ্গপাণেঃ ।
যোঽমায়য়া সংততয়ানুবৃত্ত্যা ভজেত তৎপাদসরোজগন্ধম্ ৷৷ ৩৮ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

যারা দুরন্তবীর্য রথচক্রধারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মে অনুকূলভাবে অহৈতুকী এবং অপ্রতিহতা সেবাপরায়ণ, তাঁরাই কেবল জগতের সৃষ্টিকর্তার পূর্ণ মহিমা, শক্তিএবং দিব্য ভাব সম্বন্ধে অবগত হতে পারেন।

— স্কন্ধ ১, অধ্যায় ৩, শ্লোক ৩৮ [৫৫]

জে. এম. সান্যাল অনুবাদ:

চক্রধারী ভগবানের শক্তি ও পরাক্রম অসীম—তার শেষ অনুধাবন করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। মায়ারূপ জগৎ সৃষ্টি করেও তিনি তাতে লিপ্ত হন না। তাঁর স্বরূপ তথা তাঁর লীলা ভক্তগণই নিষ্কপটভাবে একাগ্রচিত্তে তাঁর পাদপদ্মের সেবাচিন্তা করে। একমাত্র তাঁর ভক্তই তার সম্পর্কে অবগত হয়।

— স্কন্ধ, অধ্যায় III, শ্লোক ৩৮ [৫৬]

দ্বিতীয় স্কন্ধ

শুকদেব গোস্বামীর পরীক্ষিতের প্রতি সম্বোধন করছেন

দশটি অধ্যায় নিয়ে গঠিত [৫৭] দ্বিতীয় স্কন্ধ কৃষ্ণকে আবাহন করে শুরু হয়। গঙ্গা নদীর তীরে শুকদেব গোস্বামী ও পরীক্ষিতের মধ্যকার কথোপকথনরূপে বিস্তৃত বর্ণনাসমেত দ্বিতীয় স্কন্ধটি শুরু হয় ( নৈমিষারণ্যে শৌনকের নেতৃত্বাধীন একদল ঋষির নিকট শুকদেব গোস্বামী বর্ণনা করেছিলেন )। পরীক্ষিতের দ্বারা যে বিষয়গুলি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে, সুত গোস্বামী সেই প্রসঙ্গের বর্ণনা করেছেন :

  • কৃষ্ণের সর্বোত্তম, শাশ্বত ও বিশুদ্ধ প্রকৃতি বর্ণন।
  • বিরাট রূপ, মহাবিষ্ণুর উদ্দেশ্যানুযায়ী অবতার গ্রহণ।
  • ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি ও প্রলয়ের প্রক্রিয়া।
  • ঈশ্বর উপলব্ধি, ভক্তি যোগ, ভক্তিমূলক কর্তব্য, ও একজন আধ্যাত্মিক গুরুর প্রয়োজনীয়তা।
  • বৈদিক জ্ঞান, জড়া প্রকৃতির কার্যাবলী, কর্ম,মিথ্যা অহংকার ও অজ্ঞতাজনিত দুঃখভোগ।
  • সমাজের বর্ণ বিভাগ, সাধারণ ধর্মীয় অনুষঙ্গ, ও বিশ্বাস বনাম নাস্তিক্যবাদ

শ্রীমদ্ভাগবত, ২/৫/৩৫:

স এব পুরুষস্তম্মাদণ্ডং নির্ভিদ্য নির্গতঃ।
সহস্রোর্বাঙ্ঘ্রি বাহ্বক্ষঃ সহস্ৰাননশীৰ্ষবান্ ॥ ৩৫ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

যদিও ভগবান (মহাবিষ্ণু) কারণ সমুদ্রে শায়িত রয়েছেন, তথাপি তিনি তার থেকে নির্গত হয়ে নিজেকে হিরণ্যগর্ভরূপে বিভক্ত করে প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ডে প্রবেশ করেছেন ও শত-সহস্র পাদ, হস্ত, মুখ, অক্ষি, মস্তক ইত্যাদি সহ বিরাটরূপ পরিগ্রহ করেছেন। [৫৮]

বিবেক দেবরায় অনুবাদঃ

সেই পুরুষ ব্রহ্মাণ্ড ভেদপূর্বক সহস্রসংখ্যক উরু,চরণ,হস্ত, নেত্র ও বদন সমন্বিত মূর্তিতে বাইরে প্রকাশিত হলেন।

— দ্বিতীয় স্কন্ধ, অধ্যায় ২ (৫) [৫৯]

তৃতীয় স্কন্ধ

তেত্রিশটি অধ্যায়সমন্বিত [৬০] তৃতীয় স্কন্ধে গঙ্গা নদীর তীরে শুকদেব গোস্বামীপরীক্ষিতের কথোপকথন চলতে থাকে।কৃষ্ণের ভক্ত ও যমের শূদ্র অবতার বিদুর এই স্কন্ধের প্রধান অধিবক্তা। কৌরবগণের পাণ্ডবদের প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণের উপদেশ দেওয়ায় রাজা ধৃতরাষ্ট্র প্রাসাদ ত্যাগ করার পর, বিদুর তীর্থযাত্রায় চলে যান। সেখানে তিনি কৃষ্ণের অপর ভক্ত যেমন উদ্ধব ও ঋষি মৈত্রেয়ের সাথে দেখা করেন; তাদের সংলাপের মাধ্যমে তৃতীয় স্কন্ধ গঠিত হয়। শুকদেব গোস্বামী, উদ্ধব ও মৈত্রেয় দ্বারা কথিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে:

শ্রীমদ্ভাগবত, ৩/২৫/২৫:

সতাং প্রসঙ্গান্মম বীর্যসংবিদো
ভবন্তি হৃৎকর্ণরসায়নাঃ কথাঃ ।
তজ্জোষণাদাশ্চাপবর্গবর্ত্মনি
শ্রদ্ধা রতির্ভক্তিরণুক্রমিষ্যতি ॥ ২৫ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

শুদ্ধ ভক্তদের সঙ্গে পরমেশ্বর ভগবানের লীলা-বিলাস এবং কার্যকলাপেরআলোচনা হৃদয় ও কর্ণের প্রীতি সম্পাদন করে এবং সন্তুষ্টি বিধান করে। এই প্রকার জ্ঞানের আলোচনার ফলে, ধীরে ধীরে মুক্তির পথে অগ্রসর হওয়া যায়।এই ভাবে মুক্ত হওয়ার পর, যথাক্রমে প্রথমে শ্রদ্ধা, পরে রতি ও অবশেষে প্রেম-ভক্তির উদয় হয়।

— স্কন্ধ ৩, অধ্যায় ২৫, শ্লোক ২৫ [৬১]

জে এম সান্যাল অনুবাদ:

ভক্তগণ ভগবানের পবিত্র মহিমা সম্বন্ধে পারস্পরিক আলোচনায় এতই আন্তরিক ও আগ্রহের সাথে সংযুক্ত যে তাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যায় কারণ তাদের প্রসিদ্ধ প্রভুর কথা কীর্তন করার জন্য তাদের উদ্যমের কোনো অলসতা নেই;সেইসব কথা শ্রবণে ও অনুশীলনে তাদের শীঘ্রই মুক্তিপথের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রেম ও ভক্তির ক্রমশ বিকাশ হয়। তাই তারা দয়াগুণের অধিকারী হন যা সমস্ত সদ্ ব্যক্তির মাঝে বিদ্যমান।

— স্কন্ধ ৩, অধ্যায় XV, শ্লোক ২৫ [৬২]

চতুর্থ স্কন্ধ

বিষ্ণু ধ্রুবের সম্মুখে আবির্ভূত হন

একত্রিশটি অধ্যায় নিয়ে গঠিত [৬৩] চতুর্থ স্কন্ধে শুকদেব গোস্বামী, উদ্ধব ও মৈত্রেয় ঋষির কথোপকথন চলতে থাকে । স্কন্ধের কথোপকথনে আরও কিছু ভাগ রয়েছে , যেমন ঋষি অবতার নারদ ও রাজা প্রাচীনবর্হীর পরস্পর সংলাপ ( মৈত্রেয় বিদুরকে বলছেন)।বিশেষত স্বায়ম্ভুব মনুর কন্যার বংশধরদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে:

  • স্বয়ম্ভুব মনুধ্রুবের বংশবর্ণন।
  • দক্ষ ও শিবের পারস্পরিক কলহ, সতীর আত্মত্যাগ,দক্ষযজ্ঞে শিবের আক্রমণ
  • বালতাপস ধ্রুবের মুক্তি, নারদের পরামর্শে বিষ্ণু সম্পর্কে জ্ঞানলাভ, ধ্রুব ও যক্ষের যুদ্ধ।
  • পৃথিবীর প্রাচুর্য পুনরুদ্ধারোদ্দেশ্যে পৃথু অবতারের আবির্ভাবের পূর্বে ব্রাহ্মণ কর্তৃক কুশ দ্বারা অত্যাচারী রাজা বেণের বিনাশ।
  • রাজা পুরঞ্জনের রূপক গল্প বর্ণন, রাজা মৃত্যুর সময় স্ত্রীচিন্তার হেতু নারীরূপে পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন।
  • প্রচেতাগণের কার্য ও শিবের সাথে সাক্ষাৎ, নারদের নির্দেশনা ও মুক্তি।
  • কৃষ্ণ, বৈষ্ণব ভক্তির গুণাবলী, ভক্তি যোগ, পরমাত্মা ও সংসার বর্ণন।


শ্রীমদ্ভাগবত ৪/১৬/১৭:

মাতৃভক্তিঃ পরস্ত্রীষু পত্ন্যামর্ধ ইবাত্মনঃ ।
প্রজাসু পিতৃবৎস্নিগ্ধঃ কিঙ্করো ব্রহ্মবাদিনাম্ ॥ ১৭ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

রাজা অন্য রমণীদের মাতৃবৎ শ্রদ্ধা করবেন, এবং তাঁর নিজের স্ত্রীকে তাঁর দেহের অর্ধ অঙ্গসদৃশ মনে করবেন। তিনি তাঁর প্রজাদের পুত্রবৎ স্নেহে পালন করবেন,এবং তিনি নিজেকে সর্বদা ভগবানের মহিমা প্রচারকারী ভক্তদের পরম আজ্ঞাকারী দাস বলে মনে করবেন।

— স্কন্ধ ৪, অধ্যায় ১৬, শ্লোক ১৭ [৬৪]

বিবেক দেব রায় অনুবাদঃ

পরস্ত্রীকে ইনি মাতার মতো ভক্তি করবেন, নিজ পত্নীকে নিজের অর্ধাঙ্গরূপে দেখবেন, প্রজাদের প্রতি পিতৃস্নেহ পোষণ করবেন এবং ব্রাহ্মণগণের সেবক হবেন।

— চতুর্থ স্কন্ধ, অধ্যায় ৪(১৬) [৬৫]

পঞ্চম স্কন্ধ

ঋষভদেব

ছাব্বিশটি অধ্যায় নিয়ে গঠিত [৬৬] পঞ্চম স্কন্ধে গঙ্গার তীরে শুকবর্ণিত কথার উল্লেখযোগ্য অতিরিক্ত স্তর যেমন, ঋষভ অবতার ও তার পুত্রগণের কথাবার্তা , ভরত ও রাজা রাহুগনের কথোপকথন ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত:

  • বহির্দৃষ্টিতে জুগুপ্সিতি অবতার প্রথম তীর্থঙ্কর (জৈন ধর্মের আধ্যাত্মিক শিক্ষক) ঋষভ এর জীবন ও শিক্ষা বর্ণন।
  • ব্রহ্মার কাছে বৈদিক জ্ঞান পুনঃপ্রদানের উদ্দেশ্যে হয়গ্রীবের আবির্ভাব
  • রাজা ভরত এর কার্যকলাপ, চরিত্র, শিক্ষা ও মুক্তি।
  • রাজা প্রিয়ব্রতের ক্রিয়াকলাপ ও বংশধর। তার রথের চাকা সাতটি মহাসাগর ও দ্বীপ ( মহাদেশ) তৈরি করেছিল।
  • ব্রহ্মাণ্ডের বর্ণন, সূর্যের গতির বর্ণন, গ্রহের কক্ষপথ বর্ণন ও স্বর্গীয় ও নরক গ্রহের অবস্থান বর্ণন।
  • গঙ্গার প্রবাহ ও নারায়ণের বাসুদেব (কৃষ্ণ, সংকর্ষণ,প্রদ্যুম্ন ও অনিরূদ্ধরূপে সম্প্রসারণ।
  • অনন্ত/ সঙ্কর্ষণ / শেষ / তামসীর মহিমা।

শ্রীমদ্ভাগবত, ৫/৫/১:

ঋষভ উবাচ
নায়ং দেহো দেহভাজং নৃলোকে
কষ্টান্ কামানর্হতে বিড়্‌ভুজাং যে ।
তপো দিব্যং পুত্রকা যেন সত্ত্বং
শুদ্ধ্যেদ্যস্মাদ্ ব্রহ্মসৌখ্য ত্বনন্তং ॥ ১ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

ভগবান ঋষভদেব তার পুত্রদের বললেন—হে পুত্রগণ, এই জগতে দেহধারী প্রাণীদের মধ্যে এই নরদেহ লাভ করে, কেবল ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের জন্য দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করা উচিত নয়। ঐ প্রকার ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ বিষ্ঠাভোজী কুকুর ও শূকরদেরও লাভ হয়ে থাকে। ভগবৎ সেবাপর অপ্রাকৃত তপস্যাই করা উচিত, কারণ তার ফলে হৃদয় নির্মল হয়, এবং হৃদয় নির্মল হলে জড় সুখের অতীত অন্তহীন চিন্ময় আনন্দ লাভ হয়।

— স্কন্ধ ৫, অধ্যায় ৫, শ্লোক ১ [৬৭]

জে এম সান্যাল অনুবাদ:

মঙ্গলময় ঋষভদেব বলছেন—হে আমার পুত্রগণ! এই নরলোকে মনুষ্য শরীর দুঃখময় বিষয় ভোগের জন্য নয়। এই ভোগ তো বিষ্টাভোজী শূকর আর কুকুররাও করে থাকে।এই শরীর উৎকৃষ্ট তপস্যার যোগ্য,তাতে চিত্ত শুদ্ধ হয়; কারণ তার থেকেই চিরন্তন ব্রহ্মসুখ লাভ করা যায়।

— স্কন্ধ ৫, অধ্যায় V, শ্লোক ১[৬৮]

ষষ্ঠ স্কন্ধ

বৃত্রাসুর ইন্দ্রকে আক্রমণ করেন

উনিশটি অধ্যায় দ্বারা গঠিত ষষ্ঠ স্কন্ধে [৬৯] গঙ্গা তীরে শুক-পরীক্ষিতের সংলাপের একটি উল্লেখযোগ্য স্তর হল যম ও তার দূতদের মধ্যে (যমদূত ) কথোপকথন। অসুরভক্ত বৃত্রাসুরইন্দ্রের নেতৃত্বাধীন দেবতাদের বিরুদ্ধে তার সৈন্যবাহিনীর যুদ্ধ তথা রাজা চিত্রকেতুর বৃত্তান্ত ইত্যাদি বিষয়গুলি রয়েছে:

শ্রীমদ্ভাগবত ৬/৩/১৩:

যো নামভির্বাচি জনং নিজায়াং
বধ্নাতি তন্ত্র্যামিব দামভির্গাঃ ।
যস্মৈ বলিং ত ইমে নামকর্ম-
নিবন্ধবদ্ধাশ্চকিতা বহন্তি ॥ ১৩ ৷৷

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

গরুর গাড়ির চালক যেমন নাসা সংলগ্ন রজ্জুর দ্বারা বলদদের নিয়ন্ত্রণ করে,তেমনই ভগবান বেদবাক্যরূপী রজ্জুর দ্বারা সমস্ত মানুষকে আবদ্ধ করেছেন, যা মানব সমাজের ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র আদি বিভিন্ন নাম এবং কর্ম অনুসারে বর্ণিত হয়েছে। ভয়ে ভীত হয়ে এই সমস্ত বর্ণের মানুষেরা তাদের স্বীয় কর্ম অনুসারে ভগবানকে পূজোপহার প্রদান করেন

— স্কন্ধ ৬, অধ্যায় ৩, শ্লোক ৩[৭০]

বিবেক দেবরায় অনুবাদঃ

মানুষ যেমন সব গরুগুলোকে প্রথমে একটা একটা করে দড়ি দিয়ে বেঁধে তারপর সেই দড়িগুলো একটা বড় দড়ির সঙ্গে বাঁধে সেইরকমই ভগবানই ব্রাহ্মণাদি বর্ণ ও ব্রহ্মচর্যাদি আশ্রমরূপ ছোট ছোট নামের দড়ি দিয়ে বেঁধে তারপর সকলকে বেদবাক্যরূপ একটা বড় দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। এইভাবে জীবগণ নাম ও কর্ম বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ভীতচকিতভাবে তাঁকেই সর্বস্ব অর্পণ করছে।

— ষষ্ঠ স্কন্ধ, অধ্যায় ৬(৩)[৭১]

সপ্তম স্কন্ধ

নৃসিংহপ্রহ্লাদ

পনেরোটি অধ্যায়প্রযুক্ত [৭২] সপ্তম স্কন্ধ শুকদেব গোস্বামী ও পরীক্ষিতের গঙ্গা নদীর তীরে কথিত ভাগবতের সপ্তম ভাগ। সংলাপের উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট স্তর হল নারদযুধিষ্ঠির-এর প্রহ্লাদ, দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর (হিরণ্যক্ষের ভাই) চরিত্র বর্ণনা ; জয় -বিজয় এর প্রথম দৈত্য অবতার থেকে প্রহ্লাদকে বিষ্ণু কর্তৃক সুরক্ষা করা ইত্যাদি বিষয় এই স্কন্ধের অন্তর্গত:

  • দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বিষ্ণুকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তপস্যা করে অজেয় হয়ে ওঠে ও সমগ্র বিশ্বজগতকে জয় করে।
  • ভক্ত প্রহ্লাদের(হিরণ্যকশিপুর পুত্র) প্রতি অত্যাচার, কৃষ্ণের দ্বারা মৃত্যু থেকে রক্ষা করা।
  • হিরণ্যকশিপু বধকল্পে নৃসিংহ অবতার ধারণ।
  • চতুর্বর্ণ তথা সুষ্টু সমাজব্যবস্থার বর্ণন।
  • সদ্ মানুষের গুণাবলি, আদর্শ পারিবারিক জীবন ও আদর্শ ব্যক্তি হওয়ার নির্দেশনা বর্ণন।
  • পরম সত্যরূপে আবির্ভূত - কৃষ্ণ - সকলের কর্তা ও নিয়ন্ত্রক।
  • নারদ এর পূর্ববর্তী অবতার, ও একজন সাধারণ মানুষের মতো কৃষ্ণের পাণ্ডবদের সাথে বসবাস।

শ্রীমদ্ভাগবত, ৭/৪/৯ :

মৃগোষ্ট্রখরমর্কাখুসরীসৃপ্‌খগমক্ষিকাঃ ।
আত্মনঃ পুত্রবৎ পশ্যেৎ তৈরেষামন্তরং কিয়ৎ ॥ ॥ ৯ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

হরিণ, উট, গাধা, বানর, ইঁদুর, সাপ, পাখি এবং মাছি, এদের নিজের পুত্রের মতো দর্শন করা উচিত। পুত্র এবং এই সমস্ত নিরীহ প্রাণীদের মধ্যে পার্থক্য খুবই কম।

— স্কন্ধ ৭, অধ্যায় ১৪, শ্লোক ৯ [৭৩]

জে. এম. সান্যাল অনুবাদ:

গৃহকর্তার উচিত হরিণ, উট,গাধা,বাঁদর,ইঁদুর,সরীসৃপ,পক্ষী এবং মক্ষিকাদেরকে পুত্রবৎ স্নেহ করা। প্রকৃতপক্ষে আপন সন্তান থেকে তাদের পার্থক্যই বা কতটুকু।

— স্কন্ধ ৭, অধ্যায় XIV, শ্লোক ৯[৭৪]

অষ্টম স্কন্ধ

বলি ও বামন

চব্বিশটি অধ্যায় দ্বারা গঠিত [৭৫] অষ্টম স্কন্ধে গঙ্গা নদীর তীরে শুকদেব গোস্বামী ও পরীক্ষিতের মধ্যে কথোপকথন চলতে থাকে । দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু প্রসঙ্গে বামন অবতার ও বলির মাঝে সংলাপের একটি অতিরিক্ত স্তর । এখানে অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে:

  • চতুসংখ্যক মনু ও (স্বায়ম্ভুব, স্বারোচিষ, উত্তম ও তামস) তাদের শাসনকালের বর্ণনা , ভবিষ্যৎ মনুগণের বর্ণন।
  • আত্মসমর্পণমূলক স্তবের পর গরুড় বাহনে চড়ে বিষ্ণু কুমির থেকে গজেন্দ্র নামক হস্তীকে উদ্ধার করেছিলেন।
  • দেবতাঅসুরদের যুদ্ধ , বিষ্ণুর মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি , উভয় পক্ষের দ্বারা সমুদ্র মন্থন।
  • ক্ষীরোদ সমুদ্র মন্থন সময়ে কূর্ম , ধন্বন্তরী , মোহিনী, অজিত অবতার ও লক্ষ্মীর আবির্ভাব।
  • শিবকে বিমোহনের উদ্দেশ্যে মোহিনীর দ্বিতীয় আবির্ভাব।
  • ইন্দ্র দ্বারা অসুরদের বিনাশ।
  • বামন অবতারের আবির্ভাব; তিন পদে রাজা বলির নিকট হতে ত্রিলোক পুনরুদ্ধার ও বলির তাঁর চরণে আত্মসমর্পণ
  • (তৃতীয় স্কন্ধে বর্ণিত হিরণ্যাক্ষের অবস্থানকালে ) ভক্ত রাজা সত্যব্রতকে প্রলয় থেকে উদ্ধারকল্পে মৎস্য অবতারের আবির্ভাব।

শ্রী.ভা ৮/৫/৩০ :

ন যস্য কশ্চাতিতিতর্তি মায়াং
যয়া জনো মুহাতি বেদ নাৰ্থম্ ৷
তং নির্জিতাত্মাত্মগুণং পরেশং
নমাম ভূতেষু সমং চরস্তম্ ॥ ৩০ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

ভগবানের মায়াকে কেউই অতিক্রম করতে পারে না, এবং তা এত প্রবল যে,সকলকে জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য বুঝতে না দিয়ে মোহিত করে। সেই মায়া কিন্তু ভগবানের বশীভূত, যিনি সকলকে শাসন করেন এবং সকলের প্রতি সমদর্শী।সেই ভগবানকে আমরা আমাদের সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।

— স্কন্ধ ৮, অধ্যায় ৫, শ্লোক ৩০[৭৬]

বিবেক দেবরায় অনুবাদ:

কেউ তার মায়াকে অতিক্রম করতে পারে না। এই কারণে, মানুষ বিভ্রান্ত হয় ও পরম সত্য অবগত নয়। তিনি পরম প্রভু। তিনি স্বয়ং নিজ মায়াকে নিয়ন্ত্রণ করেন । তিনি পক্ষপাতহীন হয়ে সকল প্রাণীদের পরিচালনা করেন।

— স্কন্ধ ৮, অধ্যায় ৫(৩০)।[৭৭]

অষ্টম স্কন্ধের সপ্তম অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে শিব বিষ্ণু থেকে পৃথক নন । তিনি ব্রহ্মাণ্ডের শাসক ও সমস্ত জীবের প্রভু

মতিলাল বেনারসিদাস প্রকাশনা:

আপনিই পরম গুহ্য ব্রহ্ম। উৎকৃষ্ট-নিকৃষ্ট দেবতা, মানুষ, পশুপক্ষী যত প্রাণী রয়েছে সকলেরই আপনি জীবনদাতা। কারণ আপনি সকলের আত্মা।আপনিই জগদীশ্বর। নানা শক্তি( সত্ত্ব,রজ ও তম) দ্বারা আপনিই জগৎরূপে প্রতীয়মান হন।

— স্কন্ধ ৮, অধ্যায় ৭, শ্লোক ২৪

হে প্রভু! পাঁচটি উপনিষদরূপ পাঁচ মন্ত্র আপনার পাঁচটি মুখ। এইসব মন্ত্রের পদচ্ছেদ থেকে আটত্রিশ কলাত্মক মন্ত্র উৎপন্ন হয়েছে। আপনি যখন সমস্ত প্রপঞ্চ থেকে স্বতন্ত্র হয়ে স্বরূপে স্থিত হন তখন সেই স্থিতির নাম হলো 'শিব'।

— স্কন্ধ ৮, অধ্যায় ৭, শ্লোক ২৯

নবম স্কন্ধ

পরশুরাম

এই স্কন্ধে চব্বিশটি অধ্যায় রয়েছে। [৭৮] শুক-পরীক্ষিৎ সংবাদরূপে সূর্য ও চন্দ্র বংশের রাজাদের বর্ণন স্কন্ধের প্রধান অভিপ্রায়। নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ এর অন্তর্ভুক্ত:

  • রাম অবতার বর্ণন। রামচন্দ্র রাক্ষসরাজ রাবণ কে বিনাশ করেন। (রাবণ ও কুম্ভকর্ণ ছিলেন জয় ও বিজয়ের দ্বিতীয় অবতার)
  • দুর্নীতিগ্রস্ত, ভগবদ্ভক্তিহীন (ক্ষত্রিয়) শাসক শ্রেণী বধের উদ্দশ্যে পরশুরাম অবতারের আবির্ভাব।
  • বংশবর্ণন ; কামানুভুতির বশবর্তী হয়ে সৌভরি মুনির পতন, পুনরায় তপস্যা করে মুক্তি।
  • রাজা যযাতির কথা, বার্ধক্য ভোগের অভিশাপ প্রাপ্তি; পুত্রকে অভিশাপ প্রদানের পর, তিনি ইন্দ্রিয়পরায়ণতার অসারতা অনুভব করেন ও মুক্তি লাভ করেছিলেন।
  • পুরুরবার কথা, অপ্সরা উর্বশী কর্তৃক প্রতারিত হওয়া, উর্বশীকে পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি অগ্নিপাত্রে আহুতি প্রদান করেন।
  • স্বায়ম্ভুব মনু, রাজা মান্ধাতা, অংশুমান, যযাতি, ভরত পুত্রগণের বংশতালিকা।
  • কৃষ্ণের বংশতালিকা, তাঁর আবির্ভাব ও লীলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

শ্রীমদ্ভাগবত ৯/২৪/৫৯ :

অক্ষৌহিণীনাং পতিভিরসুরৈর্নৃপলাঞ্ছনৈঃ ।
ভুব আক্রম্যমাণায়া অভারায় কৃতোদ্যমঃ ৷৷ ৫৯ ॥

স্বামী প্রভুপাদ অনুবাদ:

অসুরেরা রাজপুরুষের বেশে রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে, কিন্তু রাজার কর্তব্য সম্বন্ধে তাদের কোন ধারণা নেই। তার ফলে ভগবানের ব্যবস্থাপনায় বিশাল সামরিক শক্তির অধিকারী এই সমস্ত অসুরেরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করে, এবং তার ফলে পৃথিবীতে অসুরদের মহাভার লাঘব হয়। ভগবানের ইচ্ছায় অসুরেরা তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে, যাতে তাদের সংখ্যা লাঘব হয় এবং ভক্তরা কৃষ্ণভক্তির মার্গে উন্নতি সাধন করার সুযোগ পায়।

— স্কন্ধ ৯, অধ্যায় ২৪, শ্লোক ৫৯ [৭৯]

বিবেক দেবরায় অনুবাদ :

বহু অক্ষৌহিণী সেনার অধীশ্বর হয়ে অসুরগণ নৃপতিবেশে পৃথিবীকে ভারাক্রান্ত করলে পৃথিবীর সেই ভার লাঘবের জন্য ভগবান ধরাধামে অবতীর্ণ হন।

— নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ৯(২৪) [৮০]

দশম স্কন্ধ

দশম স্কন্ধে নব্বইটি অধ্যায় বিদ্যমান, [৮১] যেখানে গঙ্গা তীরে শুকদেব গোস্বামী -পরীক্ষিৎ মহারাজ সংবাদরূপে কৃষ্ণলীলা বর্ণিত হয়েছে।

কুবলয়াপীড় বধ

অত্র স্কন্ধে কৃষ্ণের প্রকটকাল ও লীলা সম্বন্ধীয় বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে  :

  • কৃষ্ণের পিতামাতা বসুদেব-দেবকী কে কারারুদ্ধ করা,কৃষ্ণের ভ্রাতাগণের নিধনপ্রাপ্ত হওয়া ও রাজা কংস কর্তৃক শিশু কৃষ্ণকে বধের প্রচেষ্টা।
  • নন্দ যশোদা কর্তৃক কৃষ্ণ-বলরামের প্রতিপালন ; বালক-কৃষ্ণের মুখে যশোদার বিশ্বরূপ দর্শন।
  • শিশুগণ ও বালক কৃষ্ণকে কংস কর্তৃক বিভিন্ন অসুর (পূতনা, তৃণাবর্ত, অঘাসুর, প্রলম্বাসুর, কেশি ইত্যাদি) প্রেরণপূর্বক হত্যার প্রয়াস।
  • কালীয়ের শাস্তি, দাবাগ্নি পান, গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন, গোপীগণের বস্ত্রহরণ ও রাস নৃত্য।
  • দশম স্কন্ধে রাস লীলা অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।।
কৃষ্ণ-বলরাম ব্রাহ্মণ সান্দীপনির কাছে পাঠ শিক্ষা করছেন (ভাগবত পুরাণ, ১৫২৫-১৫৫০ মুদ্রণ)। ঘনশ্যাম কৃষ্ণ বলরামের পাশে উপবিষ্ট, উভয়েই মস্তকে ময়ূর-পালক ধারণ করেছেন, তারা সান্দীপনি মুনির সম্মুখে বিদ্যাশিক্ষায় রত, অপর দুই ছাত্র বাম পাশে বসে আছে।

শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৯০/৫০ :

মর্ত্যস্তয়ানুসবমেধিতয়া মুকুন্দ-
শ্রীমৎকথাশ্রবণকীর্তনচিন্তয়ৈতি ।
তদ্ধাম দুস্তরকৃতান্তজবাপবর্গং
গ্রামাদ্বনং ক্ষিতিভুজোঽপি যযুর্যদৰ্থাঃ ॥ ৫০ ॥

স্বামী প্রভুপাদের শিষ্যগণকৃত অনুবাদ:

নিত্য বর্ধিত নিষ্ঠার সঙ্গে ভগবান মুকুন্দের বিষয়ে নিয়মিত শ্রবণ, কীর্তন ও স্মরণের মাধ্যমে যে কেউ অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর প্রভাব রহিত দিব্য ভগবদ্ধাম প্রাপ্ত হবেন। এই উদ্দেশ্যে মহান রাজাগণ সহ বহু ব্যক্তি তাঁদের জড়গৃহ পরিত্যাগ করে বনে গমন করেছিলেন।

— দশম স্কন্ধ, অধ্যায় নব্বই, শ্লোক পঞ্চাশ [৮২]

জে. এম সান্যাল অনুবাদ:

এভাবে যখন কেউ ভগবান মুকুন্দের পরম রমণীয় লীলাকথা শ্রবণ-কীর্তন করেন তখন সেই ভক্তির দ্বারাই তিনি জন্ম-মৃত্যুর যন্ত্রণাময় প্রভাব বিবর্জিত ভগবানের পরম ধাম প্রাপ্ত হন। কালের গতি লঙ্ঘন করা অতি কঠিন। কিন্তু ভগবানের ধামে কাল নিষ্ক্রিয় হওয়ায় সেখানে কালের গতি নেই। সেই ধাম লাভের কামনায় যুগে যুগে বহু রাজা মহারাজাগণও রাজ-ঐশ্বর্য্য ত্যাগ করে তপস্যার নিমিত্ত অরণ্যে গমন করেছেন।

— দশম স্কন্ধ, অধ্যায় XC, শ্লোক ৫০[৮৩]

পরিশীলন

দশম স্কন্ধটি প্রায় চার হাজার শ্লোকসংবলিত বৃহত্তম স্কন্ধ যা ভাগবতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও অধিক চর্চিত অংশ। শ্রীমদ্ভাগবতের অন্যান্য স্কন্ধের চেয়ে দশম স্কন্ধটি প্রায়শই পৃথকভাবে বা ভাষ্যসহ প্রকাশিত হয়েছে ।[৮৪][৮৫] অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ বলেছেন, এই স্কন্ধটি অপর স্কন্ধের থেকে ভিন্ন। দশম স্কন্ধটি অধ্যয়নের পূর্বে এর পূর্ববর্তী নয়টি স্কন্ধ পাঠের বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত:

দশম স্কন্ধটি প্রথম নয়টি স্কন্ধ থেকে পৃথক কারণ তা সরাসরি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলার সাথে সম্পর্কিত। প্রথম নয়টি স্কন্ধটি পাঠ না করে কেউ দশম স্কন্ধের বিষয়গুলি অনুধাবন করতে অক্ষম হবে। ভাগবত দ্বাদশ স্কন্ধে সম্পূর্ণ, প্রত্যেক স্কন্ধই স্বতন্ত্র, কিন্তু সকলের জন্য একের পর এক সেগুলি পাঠ করা মঙ্গলজনক।

— স্কন্ধ ১, ভূমিকা[৮৬]

একাদশ স্কন্ধ

হংস

একত্রিশটি অধ্যায়সম্বলিত [৮৭]একাদশ স্কন্ধে শুকদেব- পরীক্ষিৎ সংবাদরূপে বিধিধ আধ্যাত্মিক তত্ত্বকথার উল্লেখ রয়েছে । শুক-পরীক্ষিৎ কথোপকথনে উল্লেখযোগ্য সংযুক্তি হলো নারদ- বাসুদেব সংবাদ ও কৃষ্ণ - উদ্ধব সংবাদ (পালাক্রমে, হংস অবতার ও ব্রহ্মার পরস্পর কথোপকথন। এই স্কন্ধের অন্তর্ভুক্ত বিষয়াবলী হচ্ছে:

  • পৃথিবীর ভার হ্রাসের উদ্দেশ্যে যদু রাজবংশের প্রতি ঋষিদের অভিশাপ ও পারস্পরিক কলহে নেশাগ্রস্ত যাদবগণের বিনাশ।
  • ব্রহ্মার পুত্রদের প্রশ্নের উত্তর প্রদানের লক্ষ্যে হংস অবতারের আবির্ভাব।
  • কৃষ্ণভক্তি সম্বন্ধে নারদ-বাসুদেব সংবাদে নিমির প্রতি 'নব যোগেন্দ্রের' উপদেশ বর্ণন।
  • দ্বারকায় উদ্ধবের প্রতি কৃষ্ণের চূড়ান্ত শিক্ষাপ্রদান (কথাপ্রসঙ্গে একজন যুবক ব্রাহ্মণ অবধূত দত্তাত্রেয় রাজা যদুকে তার চব্বিশজন গুরুর বর্ণনা করছেন)
  • শিকারী জরার দ্বারা পায়ে বাণ বিদ্ধ হয়ে কৃষ্ণের অন্তর্ধান।
  • দ্বারকায় প্লাবন ও ধ্বংস।


শ্রীমদ্ভাগবত, ১১/৭/৩৩-৩৫ :

পৃথিবীবায়ুরাকাশমাপোঽগ্নিশ্চন্দ্রমারবিঃ৷
কপোতোঽজগরঃসিন্ধুঃপতঙ্গোমধুকৃদ্‌ গজঃ॥৩৩॥
মধুহাহরিণোমীনঃপিঙ্গলাকুররোঽর্ভকঃ।
কুমারীশরকৃৎসর্পঊর্ণনাভিঃসুপেশকৃৎ ॥৩৪॥
এতে মে গুরবোরাজঞ্চতুর্বিংশতিরাশ্রিতাঃ।
শিক্ষাবৃত্তিভিরেতেষামন্বশিক্ষমিহাত্মনঃ৷৷৩৫৷৷

স্বামী প্রভুপাদের শিষ্যগণকৃত অনুবাদ:

হে মহারাজ, আমি চব্বিশজন গুরুর আশ্রয় গ্রহণ করেছি, তাঁরা হলেন—পৃথিবী,বাতাস, আকাশ, জল, আগুন, চাঁদ, সূর্য, পায়রা এবং অজগর সাপ; সমুদ্র, পতঙ্গ,মৌমাছি, হাতি এবং মধুচোর; হরিণ, মাছ, পিঙ্গলা বারনারী, কুরর পাখি এবং শিশু; এবং বালিকা, তীরন্দাজ, সাপ, মাকড়সা ও ভ্রমর। হে রাজা, তাদের কাজকর্ম লক্ষ্য করে আমি আত্মতত্ত্বজ্ঞান লাভ করেছি।

— [৮৮]

স্বামী অম্বিকানন্দ সরস্বতী অনুবাদ:

হে রাজা! নিজ বুদ্ধির দ্বরা বহু গুরুর কাছ থেকে
শিক্ষাগ্রহণ করেছি এবং
তার ফলে জগতে মুক্তভাবে
সচ্ছন্দে বিচরণ করতে আমি সক্ষম।
তোমাকে তাঁদের পরিচয় দেব ও তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার কথা বলব।

পৃথিবী,বায়ু,আকাশ, জল,
অগ্নি,চন্দ্র, সূর্য, কপোত,অজগর
সমুদ্র,পতঙ্গ, মৌমাছি, হাতি,
মধু সংগ্রাহক।

হরিণ, মাছ,পিঙ্গলা বেশ্যা,
কুহর পাখি, বালক, কুমারী কন্যা,
বাণ নির্মাতা,সর্প,
উর্ণনাভি ও কাঁচপোকা।

হে মহারাজ! এরা আমার চব্বিশ গুরু,
যাদের কার্যাবলী দর্শন করে
আমি শিক্ষা গ্রহণ করে
উপকৃত হয়েছি।।

— দ্বিতীয় সংলাপ, শ্লোক ৩৩-৩৫ [৮৯]

উদ্ধব বা হংস গীতা

একাদশ স্কন্ধের প্রধান আলোচ্য বিষয় 'উদ্ধব গীতা' বা 'হংস গীতা'। এখানে কৃষ্ণ সখা ও ভক্ত উদ্ধব কে তার অন্তিম শিক্ষা প্রদান করেছেন। দশম স্কন্ধ ও ভগবদ্‌গীতার মতোই এটিও পৃথকভাবে অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে।[৯০][৯১]'হংস' অর্থ 'হাঁস' বা 'আত্মা বা পরমাত্মা'। [৯২] হংস শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে । যেমন:

দ্বাদশ স্কন্ধ

কল্কি

ভাগবতের সর্বশেষ দ্বাদশ স্কন্ধে তেরোটি অধ্যায় আছে। [৯৪] গঙ্গা নদীর তীরে শুকদেব গোস্বামী ও পরীক্ষিৎ মহারাজের সংবাদরূপ কথোপকথন বর্ণনা করে সূত গোস্বামী শৌনকাদি ঋষিগণকে কলিযুগের ভবিষ্যদ্বাণী বলেছেন। স্কন্ধের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি হলো:

  • মিথ্যাবাদী ও লুণ্ঠনকারী রাজন্যবর্গের অধঃপতন, কলি যুগের লক্ষণ ( রাজপুরুষের ঘৃণ্য চরিত্র,রাজনৈতিক চক্রান্ত,নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদি)
  • বিশ্বের ভবিষ্যৎ রাজাদের বংশবর্ণন ও তাদের পতনের কথা।
  • পরীক্ষিতের প্রতি শুকদেব গোস্বামীর অন্তিম উপদেশ; ঋষিপুত্রের অভিশাপের কারণে ( তক্ষক নাগের দংশনে) মৃত্যু।
  • ঋষি মার্কণ্ডেয়ের নরনারায়ণ স্তব, ইন্দ্র কর্তৃক প্রেরিত কামদেব কে তপস্যা ভঙ্গের লক্ষ্যে প্রেরণ ও শিব- উমা কর্তৃক মাহাত্ম্য কীর্তন।
  • মহাপ্রলয়ের চারটি বিভাগ।
  • কলিযুগের অন্তে অশুভ ব্যক্তিগণের বিনাশের লক্ষ্যে কল্কি অবতারের আবির্ভাব।
  • গৌণ ও মুখ্য পুরাণ তথা আঠারোটি প্রধান পুরাণের বর্ণন।
  • মহাপুরুষ এর বর্ণন।
  • শ্রীমদ্ভাগবতের সারাংশ ও মাহাত্ম্য।

গুরুত্ব

কৃষ্ণ ও তৃণাবর্ত অসুরের যুদ্ধ।
মানাকু (শিল্পী) - ভাগবত পুরাণ পুথিচিত্র, ব্রুকলিন জাদুঘর।

দার্শনিক গুরুত্ব

টি.এস রুকমনির মতে, ভাগবতে ভক্তিযোগ, দ্বৈত বেদান্ত, সাংখ্য, যোগ, বেদান্তঅদ্বৈত বেদান্তের মতো বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৯৫]

সাংখ্য

কপিল মুনি

সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত ভাগবতে কপিল প্রণীত সেশ্বর সাংখ্য দর্শনকে ভাগবতের প্রধান দর্শন বলে বর্ণনা করেছেন । [৯৬]

শেরিডান উল্লেখ করেছেন, তৃতীয় স্কন্ধে কপিলকে তার মাতা দেবহুতির প্রতি আত্মোপলব্ধি ও মোক্ষজ্ঞান উপদেশ দেওয়ার লক্ষ্যে প্রজাপতি কর্দমের পুত্ররূপে জন্মগ্রহণকারী বিষ্ণুর অবতার বলে বর্ণনা করা হয়েছে; একাদশ স্কন্ধে, কৃষ্ণ উদ্ধবকে সাংখ্য উপদেশ প্রদান করেন। কৃষ্ণ সাংখ্যযোগ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, সাংখ্যের প্রধান লক্ষ্য স্বয়ং কৃষ্ণ।

শেরিডান আরও বলেছেন, ভাগবতের সাংখ্যে প্রকারান্তরে ভক্তিযোগকেই অবলম্বন করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। দাশগুপ্তের মতে , ভাগবতের সাংখ্য অন্যান্য শাস্ত্রীয় সাংখ্য গ্রন্থ থেকে কিছুটা ভিন্ন।

অদ্বৈত

শৃঙ্গেরি শারদা পীঠম হলো আদি শঙ্কর প্রতিষ্ঠিত হিন্দু অদ্বৈত বেদান্ত মঠ বা মঠগুলির অন্যতম ।

কুমার দাস ও শেরিডান বলেছেন, ভাগবত প্রায়শই স্বতন্ত্রভাবে শঙ্করের অদ্বৈত দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করে । [৯৭][৯৮] রুক্মনি বলেছেন, অদ্বৈত মতে মোক্ষের ধারণাটিকে একত্ব ও সাযুজ্য (অভিনিবেশ,অন্তরঙ্গ মিলন) বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেখানে ব্যক্তি ব্রহ্মে (স্বয়ং পরমাত্মা বা জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য ) সম্পূর্ণরূপে লীন হয়ে যান । রুকমনি বলেন, 'ব্রহ্মের নিকট স্বতন্ত্র আত্মার প্রত্যাবর্তন ও ব্রহ্মের সাথে মিলন নিঃসন্দেহে অদ্বৈতত্ত্বের পরিচায়ক। শেরিডানের মতে, ভাগবত পুরাণেও আদি শঙ্করের অদ্বৈতমতের সাদৃশ্য দেখা যায় । [৯৯] উদাহরণস্বরূপ:

ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি ও বিষয় ভোগ জীবের উদ্দেশ্য নয়। বিষয়ভোগ প্রয়োজন কেবলমাত্র জীবন নির্বাহের জন্য। জীবনের লক্ষ্য হল তত্ত্বজিজ্ঞাসা। নানারকম কর্মানুষ্ঠান করে স্বর্গলাভ করা মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য নয়।তত্ত্ববেত্তাগণ সেই অদ্বিতীয় সচ্চিদানন্দঘন জ্ঞানকেই তত্ত্ব বলে থাকেন। সেই অদ্বয় তত্ত্বকেই ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভগবান বলা হয়।

— সুত, ভাগবত পুরাণ ১.২.১০-১১, ড্যানিয়েল শেরিডান কৃত অনুবাদ [১০০]

পণ্ডিতরা উক্ত শ্লোককে ঔপনিষদিক অদ্বৈতবাদ ভিত্তিক দর্শন ও "অদ্বৈত ঈশ্বরবাদের" সমর্থক বলে অভিহিত করেন। [৯৯][১০১]

ব্রায়ান্ট বলেছেন, ভাগবত পুরাণের অদ্বৈতবাদ অবশ্যই বেদান্ত ভিত্তির উপর গঠিত , তবে আদি শঙ্করের অদ্বৈতবাদের মতো নয় । [১০২] ব্রায়ান্টের মতে, ভাগবত বলে যে, জগতের স্থুল ও সূক্ষ্ম উপাদান উভয়ই এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মের প্রকাশ যেমন তাপ ও কিরণ সূর্যের "প্রকৃত কিন্তু ভিন্ন" প্রকাশ। [১০২] ব্রায়ান্ট উল্লেখ করেছেন, ভাগবতের দশম স্কন্ধে বর্ণিত কৃষ্ণের রূপকে অদ্বৈতবাদী মঠ ও বিদ্যাপীঠের ন্যায় "নির্বিশেষ ব্রহ্মের মায়াকল্পিত দেহ" বলে উল্লেখ করে না। ব্রহ্মকে চূড়ান্তভাবে নিরাকার বলার পরিবর্তে, দশম স্কন্ধ ব্রহ্মকে "শাশ্বত আদি পুরুষ" বলে উল্লেখ করে।

বৈষ্ণবধর্ম

চৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৪ )

গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম

ভাগবত পুরাণ বাংলায় কৃষ্ণ-ভক্তি (গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম) শ্রী চৈতন্য (১৪৮৬-১৫৩৪) আন্দোলনের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। [১০৩]শাস্ত্রীয় বিশ্বাস অনুসারে, চৈতন্য মহাপ্রভু হলেন কৃষ্ণের অবতার যা নিম্নলিখিত শ্লোকে পাওয়া যায় (স্বামী প্রভুপাদের শিষ্যগণকৃত অনুবাদ):

কলিযুগে যেসব বুদ্ধিমান মানুষেরা ভগবৎ-আরাধনার উদ্দেশ্যে সঙ্কীর্তন যজ্ঞানুষ্ঠান করেন, তাঁরা অবিরাম শ্রীকৃষ্ণের নামগানের মাধ্যমে ভগবৎ-অবতারের আরাধনা করে থাকেন। যদিও তাঁর দেহ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তা হলেও তিনিই স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ।তাঁর সঙ্গে পার্ষদরূপে রয়েছেন তার অন্তরঙ্গ সঙ্গীরা সেবকগণ, অস্ত্র এবং সহযোগীবৃন্দ।

— স্কন্ধ ১১, অধ্যায় ৫, শ্লোক [১০৪]

চৈতন্যদেবকে সাধারণত 'গৌরাঙ্গ' বলা হয়। কারণ তার গাত্র ছিলে স্বর্ণবর্ণের ।তিনি হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ভাগবতে অন্যান্য অবতার যেমন, কল্কির ন্যায় স্পষ্টভাবে তার নাম বলা হয়নি( স্বামী প্রভুপাদকৃত অনুবাদ):

হে ভগবান্, এইভাবে আপনি নর, পশু, ঋষি, দেবতা, মৎস্য অথবা কূর্মরূপে অবতরণ করে সমগ্র জগৎ পালন করেন এবং অসুরদের সংহার করেন। হে ভগবান, আপনি যুগ অনুসারে ধর্মকে রক্ষা করেন। কিন্তু কলিযুগে আপনি আপনার ভগবত্তা প্রকাশ করেন না, তাই আপনাকে ত্রিযুগ বলা হয়।

— সপ্তম স্কন্ধ, অধ্যায় নয়, আটত্রিশ শ্লোক [১০৫]

কলিযুগে কৃষ্ণের অবতার সম্পর্কে এই শ্লোকের মূল শব্দটি হল 'ছন্ন',অর্থাৎ 'লুকানো', 'গোপন', বা 'ছদ্মবেশী'। [১০৬] গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মে, চৈতন্যকে কৃষ্ণের প্রচ্ছন্ন অবতার বলে বিশ্বাস করা হয় যিনি কলিযুগে ( মিথ্যা ও কপটতার যুগ) আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি কৃষ্ণের ভক্তরূপে আচরণ করে কৃষ্ণভাবনা অর্জনের সবচেয়ে সরল উপায় প্রদর্শন করে গিয়েছেন ৷ [১০৭]আধুনিক গৌড়ীয় আন্দোলন গৌড়ীয় মঠ ১৯২০ সালে ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া অন্যান্য ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর শিষ্যগণের দ্বারাও বিভিন্ন বৈষ্ণব সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ এ.সি. ভক্তিবেদান্ত প্রভুপাদ ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীচৈতন্য সারস্বত মঠ ভক্তি রক্ষক শ্রীধর ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের শিষ্যগণ পরম্পরানুক্রমে সরাসরি চৈতন্য মহাপ্রভুর নিকট থেকে আসেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

বিবিধ গুরুত্ব

ভাগবত পুরাণ সর্বাধিক পরিচিত । ভারতীয় ধর্মীয় সাহিত্যে ভাগবত পুরাণ একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছে। কারণ, ভক্তিবাদের উপর এই পুরাণ বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ভগবদ্গীতার তাত্ত্বিক ভক্তির তুলনায় ভাগবত পুরাণের ভক্তি অনেক বেশি ব্যবহারিক। ধর্মের সংজ্ঞা এই পুরাণে পুনরালোচিত হয়েছে এবং ঈশ্বরকে মানবরূপী বলে তার সেই স্বরূপের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।[৫] ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত কৃষ্ণের ছেলেবেলার নানান জনপ্রিয় কাহিনির উৎস এই পুরাণ।[৩] ভাগবত পুরাণ নিজেকে বেদান্তের সার বলে ঘোষণা করে থাকে:

"শ্রীমদ্ভাগবতম্‌ হল বেদান্ত সাহিত্যের যথার্থ সারমর্ম। যিনি এই গ্রন্থের রসামৃত পান করেন, তিনি অন্য কিছু কামনা করেন না।" (১২.১৩.১৫)[১০৮]

বৈষ্ণবরা বিষ্ণু পুরাণভগবদ্গীতাকে বিষ্ণুভক্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধান শাস্ত্রীয় উৎস মনে করেন। ভাগবত পুরাণের একটি বহু-উদ্ধৃত শ্লোক উদ্ধৃত করে কৃষ্ণ-উপাসক বৈষ্ণবরা কৃষ্ণকে "স্বয়ং ভগবান" বা সাক্ষাৎ ঈশ্বর হিসেবে দাবি করে থাকেন: "এঁরা [অন্যান্য অবতারগণ] অংশ, বা কলা, অংশাবতার, কিন্তু "কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম্‌", কৃষ্ণ নিজেই ভগবান"।(১.৩.২৮).[১০৯] কিন্তু কোনো কোনো বৈদিক পণ্ডিত বলে থাকেন, কৃষ্ণকে স্বয়ং ভগবান বলার কারণ, তিনি মহাবিষ্ণুর পূর্ণাবতার। বিষ্ণুপুরাণেও কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অবতার বলা হয়েছে। রাম প্রভৃতি বিষ্ণুর অন্যান্য অবতারগণকেও "ভগবান" বলা হয়ে থাকে।

শিশির কুমার দাস বলেছেন, ভাগবতে পার্থিব ফলপ্রসূ পরিণাম, অনাসক্তি দর্শন, বা স্বর্গসুখের পরিবর্তে কৃষ্ণের প্রতি অপ্রাকৃত প্রেমময় ভক্তি বা ব্যবহারিক ভক্তিযোগকে ব্যক্তির চূড়ান্ত মঙ্গলের উপায়রূপে প্রতিপালন করার লক্ষ্যে এক অনুপম ও বিশেষ উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ভক্তিযোগ অনুশীলন তথা বিষ্ণুর কৃষ্ণাবতারের প্রতি ভক্তিযোগ সাধন ও সেই ভক্তিকে ক্রমে গভীরতর করে তোলার কথা ভাগবতে উল্লেখিত হয়েছে। সুতীব্র ব্যক্তিগত আবেগপূর্ণ ভক্তির উপর জোর দেওয়ায় ভাগবত বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছে।[১১০]

ভক্তি

কাটলার বলেছেন, ভাগবত ভক্তিশাস্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। ভাগবতে ভগবদ্গীতা থেকে উদ্ভুত সম্পূর্ণ উন্নত বিকশিত শিক্ষা উপস্থাপন করা হয়েছে । [১১১] ব্রায়ান্ট বলেছেন, শাস্ত্রীয় যোগপ্রণালী অনুসরণের দ্বারা মন ও ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অপরদিকে, ভাগবত ভক্তিযোগের দ্বারা মনকে কৃষ্ণের চিন্তায় তল্লীন থাকতে উপদেশ দেয় । [১১২]

ম্যাটচেট বলেছেন, বিভিন্ন নীতিশিক্ষামূলক দার্শনিক অনুচ্ছেদের পাশাপাশি ভাগবতে মুক্তি (বা মোক্ষের) পথে চালিত করার লক্ষ্যে মনকে অনুপ্রেরণা প্রদানকারী ক্রিয়াসমূহের কথা বর্ণিত হয়েছে। ভাগবত পুরাণে প্রদত্ত অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলি শ্রবণ, তদনুযায়ী নিজ জীবনে আচরণ করার পাশাপাশি অপরজনদের কৃষ্ণভক্তি উপদেশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। [১১৩] ম্যাটচেট আরও বলেন, ভক্তির কথা পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। অদম্য আবেগপূর্ণ ভক্তির দ্বারা, আদর্শ জীবন গঠন করে মুক্তভাবে তা অনুশীলন করাই ভাগবতের বর্ণিত বিষয়। [১১৪]

১৫শ-১৬শ শতকে অসমে একেশ্বরবাদী একশরণ ধর্মের প্রবর্তক শঙ্করদেব ভাগবত পুরাণের একটি অসমীয়া অনুবাদ (শঙ্করদেবের ভাগবত) রচনা করেন। শঙ্করদেবমাধবদেব বলেছিলেন, তাদের ধর্মতাত্ত্বিক অবস্থানের মূল হলো ভাগবত পুরাণ[১১৫] শঙ্করদেবের দশম স্কন্ধের অনুবাদ দশম বিশেষ জনপ্রিয়।

হিন্দু উৎসব

ভাগবত পুরাণের কিংবদন্তী কাহিনীগুলি দোলদীপাবলির ন্যায় বার্ষিক উৎসবগুলিতে বৈষ্ণবধর্মে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে কথিত হয়ে আসছে । [১১৬][১১৭]

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্‌কন) ভারতে ও সারা বিশ্বে ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা (ভাদ্র পূর্ণিমা) তিথিতে শ্রীমদ্ভাগবতমের সেট বিতরণ করে দ্বাদশ স্কন্ধ, অধ্যায় তেরো, তেরোতম শ্লোকের প্রতিশ্রুতি উদযাপন করে।[১১৮] স্বামী প্রভুপাদের শিষ্যগণকৃত অনুবাদ:

যে ব্যক্তি ভাদ্র মাসে পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীমদ্ভাগবতকে সুবর্ণ সিংহাসনে সংস্থাপন করে উপহার হিসেবে দান করে তার পরমগতি লাভ হয়ে থাকে।

— ভাগবত পুরাণ, দ্বাদশ স্কন্ধ, অধ্যায় তেরো, শ্লোক তেরো[১১৯]

লক্ষ্য

ভাগবত পুরাণে হিন্দুধর্মের সকল ধর্মগ্রন্থ সহ ভাগবত পুরাণের লক্ষ্য বর্ণিত হয়েছে। এই পুরাণে বলা হয়েছে, পরমাত্মার সাথে জীবাত্মার প্রকৃত সম্পর্কের রহস্য ভাগবত পুরাণেই নিহিত আছে।

আদিমধ্যাবসানেষু বৈরাগ্যাখ্যানসংযুতম্ ।হরিলীলাকথাব্রাতামৃতানন্দিতসৎসুরম্।। সর্ববেদান্তসারং যদ ব্ৰহ্মাত্মৈকত্বলক্ষণম্ ৷বস্ত্বদ্বিতীয়ং তন্নিষ্ঠং কৈবল্যৈকপ্রয়োজনম্।। ″(ভাগবত পুরাণ, দ্বাদশ স্কন্ধ, ত্রয়োদশ অধ্যায়,একাদশ ও দ্বাদশ শ্লোক।)

″শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্রীমদ্ভাগবত সেই সমস্ত বর্ণনায় পরিপূর্ণ যা মানুষকে জড় জীবনে বৈরাগ্য লাভে উৎসাহিত করে এবং সেখানে বর্ণিত ভগবান শ্রীহরির অমৃতময় দিব্য লীলাসমূহ সাধু ভক্ত এবং দেবতাদের দিব্য আনন্দ দান করে।এই শ্রীমদ্ভাগবত হচ্ছে বেদান্ত দর্শনের সারাতিসার, কেননা এর আলোচ্য বিষয় হচ্ছে পরম সত্য যা একই সঙ্গে চিন্ময় আত্মা থেকে অভিন্ন, পরম বাস্তব এবং অদ্বিতীয়। এই গ্রন্থের লক্ষ্য হচ্ছে সেই পরম সত্যের প্রতি কেবলা ভক্তিমূলক সেবা লাভ করা" [১২০]

জনৈক সম্পাদকের অনুবাদ:

তুমি ইতোমধ্যেই জানো যে বেদান্তের সার হল আত্মাব্রহ্মের অদ্বৈত মিলন। কেবল এটিই হল ভাগবত পুরাণের আলোচ্য বিষয়। [এই পুরাণের] লক্ষ্য হল কেবলমাত্র কৈবল্য মোক্ষ।

— স্কন্ধ ১২,অধ্যায় ১৩,শ্লোক ১২ [১২১]

ভাষ্য ও অনুবাদ

ভাষ্য

ভাগবত পুরাণ ভারতীয় সাহিত্যকর্মে সবার্ধিক ভাষ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম। সংস্কৃতে একটি প্রবাদ আছে - বিদ্যা ভাগবতাব্ধি - ভাগবত হল ব্যক্তির জ্ঞান পরীক্ষার সর্বোচ্চ উপায় । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি কৃষ্ণ উপাসকদের সমস্ত সম্প্রদায়ে বহু ভাষ্যকারকে আকৃষ্ট করেছিল। আশিরও বেশি মধ্যযুগীয় ভাষ্য (পণ্ডিতগণের টীকা ও মন্তব্য) শুধুমাত্র সংস্কৃতে রচিত হয়েছিল। আরও প্রচুর ভাষ্য বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় বিদ্যমান। প্রাচীনতম পাঞ্চরাত্রিক দর্শনের ব্যাখ্যামূলক ভাগবতের ভাষ্য তন্ত্র-ভাগবত বর্তমানে বেশ প্রসিদ্ধ। ভাগবতের অন্যান্য ভাষ্যসমূহও সুধী সমাজে বহুল প্রশংসিত।যেমন  :

অদ্বৈত বেদান্ত ভাষ্য

অচিন্ত্য ভেদাভেদ ভাষ্য

  • চৈতন্যমত মঞ্জুষা - শ্রীনাথ চক্রবর্তী
  • বৃহদ্ বৈষ্ণব তোষিণী - সনাতন গোস্বামী
  • লঘু বৈষ্ণব তোষিণী - জীব গোস্বামী
  • ক্রম সন্দর্ভ - জীব গোস্বামী
  • বৃহৎ ক্রম সন্দর্ভ - জীব গোস্বামী (আরোপিত)
  • ষট্‌সন্দর্ভ জীব গোস্বামী (১৬ শতক ) [১২৫]
  • সারার্থ দর্শিনি - বিশ্বনাথ চক্রবর্তী (১৭ শতক) - বিস্তারিত ভাষ্য।
  • বৈষ্ণবানন্দিনী - বলদেব বিদ্যাভূষণ
  • দীপিকাদীপনি - রাধারমণ গোস্বামী
  • গৌড়ীয়ভাষ্য - ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী (২০ শতক) - বিশদ ভাষ্য।
  • ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য - অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ (২০ শতক) - বিস্তৃত ভাষ্য।

দ্বৈত ভাষ্য

  • ভাগবত তাৎপর্য নির্ণয়—মধ্বাচার্য (খ্রিস্টীয় ১৩ শতক)
  • বিজয়ধ্বজ তীর্থের পদরত্নাবলী (১৫ শতক খ্রিস্টাব্দ) - বিস্তারিত ভাষ্য
  • যদুপতি আচার্য কৃত ভাগবত তাৎপর্য নির্ণয় টিপ্পনি (১৬ শতক)
  • সত্যাভিনব তীর্থ রচিত দূর্ঘটভবদ্বীপ (১৭শ শতক)
  • অদ্বিজয়তীর্থাচার্য কৃত ভাগবত-সারোদ্ধার (১৮ শতক)
  • সত্যধর্ম তীর্থ রচিত শ্রীমদ্ভাগবত টিপ্পনি (১৮ শতক)

দ্বৈতাদ্বৈত টীকা

  • সিদ্ধান্ত প্রদীপিকা - শুকসুধী (১৯ শতকের প্রথমার্দ্ধে)

শুদ্ধাদ্বৈত টীকা

  • বল্লভাচার্য কৃত সুবোধিনী
  • বল্লভাচার্য কৃত ভাগবতার্থ প্রকরণ
  • দশমস্কন্ধ অনুক্রমণিকা-বল্লভাচার্য কৃত
  • টিপ্পনি - গোস্বামী বিঠলনাথ
  • সুবোধিনী প্রকাশ - গোস্বামী পুরুষোত্তম
  • বালপ্রবোধিনী - গোস্বামী গিরিধর্‌লাল
  • বিশুদ্ধ রাসদীপিকা - কিশোরী প্রসাদ

বিশিষ্টাদ্বৈত টীকা

  • শুকপক্ষীয় - সুদর্শন সূরি
  • ভাগবতচন্দ্রিকা - বীররাঘব (চতুর্দশ শতক) - বিস্তারিত ভাষ্য
  • ভক্তরঞ্জনী - ভাগবত প্রসাদ

অন্যান্য

  • হনুমৎ-ভাষ্য
  • বাসনা-ভাষ্য
  • সম্বন্ধোক্তি
  • বিদ্বৎ-কামধেনু
  • পরমহংসপ্রিয়া
  • শুকহৃদয়
  • বোপদেবের মুক্তাফলহরিলীলামৃত
  • বিষ্ণুপুরীর ভক্তি-রত্নাবলী
  • শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের ভক্তি-রত্নাকর
  • পৈঠানের সাধক একনাথ রচিত একনাথী ভাগবত (ষোড়শ শতাব্দীতে, ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের স্থানীয় ভাষায় একাদশ স্কন্ধের ভাষ্য)
  • নারায়ণীয়ম—কেরল-এর মেলপাথুর ভট্টথিরি কৃত। (১৫৮৬, একটি সংক্ষিপ্ত শ্রীমদ্ভাগবত অনুবাদ)
  • ভাবার্থদীপিকা প্রকাশ - বংশীধর
  • অন্বিতার্থ প্রকাশিকা - গঙ্গাসহায়
  • ভাগবত-পুরাণ — এস.এস. শূলবা (২০১৭, মূল সংস্কৃত); [১২৬] অন্যান্য সংস্কৃত পাণ্ডুলিপিও পাওয়া যায়।
  • ভাগবত পুরাণ বা গুপ্ত হিন্দুত্বের গবেষণা — পি.এন. সিনহা (১৯০১) [১২৭]

অনুবাদ

ভাগবত বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশি ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় চল্লিশটি অনুবাদসহ প্রায় প্রতিটি ভারতীয় ভাষায় এর সংস্করণ পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীর পর থেকে, ভাগবত পণ্ডিতদের আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠে। [১২৮] পরবর্তীতে ভাগবতের একটি ফরাসি অনুবাদ ও একটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ৷ নিম্নলিখিত অনুবাদগুলির একটি আংশিক তালিকা:

অসমীয়া

  • শঙ্করদেবের ভাগবত (১৪৪৯-১৫৬৮), ভারতের আসাম রাজ্যের মহাপুরুষ ধর্মের প্রাথমিক ধর্মতাত্ত্বিক উৎস) [১২৯][১৩০][১৩১]
  • ভট্টদেবের কথাভাগবত (গদ্যানুবাদ, ষোড়শ শতাব্দী)

বাংলা

  • মালাধর বসুর শ্রীকৃষ্ণবিজয়, দশম স্কন্ধের পদ্যাত্বক অনুবাদ।
  • শ্রীরঘুনাথ ভাগবতাচার্য (১৫ শতক খ্রি.) রচিত কৃষ্ণপ্রেম তরঙ্গিনী

হিন্দি

কন্নড়

তেলেগু

  • 'অন্ধ্র মহাভাগবত'— কবি পৈঠান (১৫ শতক)। একে "তেলেগু সাহিত্যের মুকুটরত্ন" রূপে বিবেচনা করা হয়।

ইংরেজি

  • শ্রীমদ্ভাগবতম্ -অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ (১৯৭০-৭৭ লিপ্যন্তর, প্রতিশব্দ ও তাৎপর্যসহ)। স্বামী প্রভুপাদ দেহত্যাগের পূর্বে প্রথম স্কন্ধ থেকে নবম স্কন্ধ ও ১০ম স্কন্ধের এর প্রথম দশটি অধ্যায় অনুবাদ সমাপ্ত করেছিলেন। তাঁর অপ্রকটের পর, তাঁর শিষ্যগণের একটি দল অনুবাদকর্ম সম্পন্ন করেছিল যা ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
  • "শ্রীমদ্ভগবতমের ইংরেজি গদ্য অনুবাদ" — এম.এন. দত্ত (১৮৯৫) [১৩৩]
  • মতিলাল বানারসিদাস পাবলিশার্স (১৯৫০, পূর্ণাঙ্গ) প্রকাশিত ''ভাগবত পুরাণ [১৩৪]
  • জে.এম সান্যাল রচিত দ্য শ্রীমদ্ ভাগবতম (১৯৭০, সংক্ষিপ্ত)
  • গণেশ বাসুদেও তাগারে রচিত ভাগবত পুরাণ (১৯৭৬, পূর্ণাঙ্গ)
  • স্বামী তপস্যানন্দ রচিত শ্রীমদ্ভাগবত (১৯৮০, পূর্ণাঙ্গ)
  • বি.পি যতি মহারাজকৃত অনুবাদ -মায়াপুর শ্রীচৈতন্য মঠ প্রকাশিত।
  • গণনাথ দাসের ভাগবতপাঠ (ওড়িয়া ভাগবতের ইংরেজী অনুবাদ)
  • ভাগবত মহাপুরাণ সি.এল. গোস্বামী ও এম.এ. শাস্ত্রী (২০০৬,পূর্ণাঙ্গ, গীতা প্রেস) [১৩৫]
  • স্বামী ভানু (২০১০) কৃত বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর সারার্থদর্শিনি ভাষ্য সহ শ্রীমদ্ভাগবতম
  • শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ—আনন্দ আধার (২০১২) [১৩৬]
  • দ্য ভাগবত পুরাণ—বিবেক দেবরায় (২০১৯, পূর্ণাঙ্গ)
  • স্বামী ভানু কৃত জীব গোস্বামীর ক্রমসন্দর্ভ ভাষ্য সহ ভাগবতম্ (২০১৯)
  • স্বামী ভানু (২০২২-২৩) কৃত বলদেব বিদ্যাভূষণের বৈষ্ণবানন্দিনী ভাষ্য সহ শ্রীমদ্ভাগবতম্।

ইংরেজি (আংশিক ভাবানুবাদ)

  • কৃষ্ণ: দ্য সুপ্রিম পার্সোনালিটি অব গডহেড অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ (সারানুবাদ, সংক্ষিপ্ত সংস্করণ: সারাংশ অধ্যয়ন ও দশম স্কন্ধের ভাবানুবাদ)
  • বল্লভচার্য : অন দ্য লাভ গেমস্ অব কৃষ্ণ— জেমস ডি রেডিংটন (রাস-পঞ্চ্যাধ্যায়ীর বল্লভকৃত ভাষ্যের ইংরেজি অনুবাদ)
  • ভাগবত পুরাণ—নন্দিনী নোপানি (book 10) এবং পি. লাল (১৯৯৭)
  • কৃষ্ণ : দ্য বিউটিফুল লেজেন্ড অফ গড: শ্রীমদ্ ভাগবত পুরাণ (book 10); এডউইন এফ ব্রায়ান্ট (২০০৪) [১৩৭]
  • স্বামী প্রভবানন্দ রচিত দ্য উইজডম অফ গড: শ্রীমদ্ভাগবতম (আংশিক অনুবাদ, আংশিক সারাংশ ও ভাবানুবাদ)
  • স্বামী অম্বিকানন্দ সরস্বতী রচিত উদ্ধব গীতা (২০০০, স্কন্ধ ১১-এর গদ্যানুবাদ)
  • রমেশ মেনন অনুবাদিত ভাগবত পুরাণ (২০০৭)
  • ভক্তি যোগ : স্টোরি এন্ড টিচিংস্ অফ ভাগবত পুরাণ  ; এডউইন. এফ. ব্রায়ান্টের (২০১৭, শ্লোক ও ভাষ্যচয়ণ)
  • স্বামী ভানু (২০২০) কৃত সনাতন গোস্বামীর বৃহদ্ বৈষ্ণব তোষণী (স্কন্ধ ১০)
  • স্বামী ভানু (২০২০) রচিত জীব গোস্বামীর লঘু বৈষ্ণব তোষনী (স্কন্ধ ১০)

ফরাসি

  • "বাগবদম ওউ ভাগবত পুরাণ (Bagavadam ou Bhagavata purana)" মারিদাস পল্লেঁ (১৭৬৯)
  • ইউজিন বার্নফের (১৮৪০) লি ভাগবত পুরাণ(Le Bhagavata purana)

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

অতিরিক্ত পাঠ

  • Mani, Vettam. Puranic Encyclopedia. 1st English ed. New Delhi: Motilal Banarsidass, ১৯৭৫.
  • Cheever Mackenzie Brown. The triumph of the goddess: the canonical models and theological visions of the Devī-Bhāgavata Purāṇa. SUNY Press, ১৯৯০. আইএসবিএন ০-৭৯১৪-০৩৬৩-৭. Excerpts

বহিঃসংযোগ

English
Sanskrit
For Children


🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন