মাইট

মাইট হল ছোট আকৃতির আরাকনিড (আট পায়ের আর্থ্রোপডা )। মাইটরা আরাকনিডের দুটি বৃহৎ ক্রমে বিস্তৃত, অ্যাকারিফর্ম এবং প্যারাসিটিফর্ম , যেগুলিকে ঐতিহাসিকভাবে অ্যাকারি উপশ্রেণীতে একত্রিত করা হয়েছিল, কিন্তু জেনেটিক বিশ্লেষণ এদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের স্পষ্ট প্রমাণ দেখায় না।

মাইট
Fossil range: প্রাক ডেভোনিয়ান–  বর্তমান, ৪১০ - বর্তমান
কা
পা
ক্রি
প্যা
ট্রমবিডিয়াম হোলোসেরিসিয়াম মাইট (আকারিফর্ম)
ট্রমবিডিয়াম হোলোসেরিসিয়াম মাইট (আকারিফর্ম)
ভ্যারোয়া ডিস্ট্রাকটর (প্যারাসিটিফর্ম)
ভ্যারোয়া ডিস্ট্রাকটর (প্যারাসিটিফর্ম)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
Kingdom:অ্যানিমেলিয়া
Phylum:আর্থ্রোপড
Subphylum:কোলিকেরেটা
Class:অ্যারাকনিডা
Included groups
  • অ্যাকারিফর্ম
  • প্যারাসিটিফর্ম

বেশিরভাগ মাইট ছোট, ১ মিমি (০.০৪ ইঞ্চি) এর কম মিমি (0.04 ইঞ্চি) দৈর্ঘ্য এবং একটি সরল, বিভাগবিহীন দেহ বিশিষ্ট ৷ বেশিরভাগ প্রজাতির ছোট আকারের জন্য তাদের সহজেই উপেক্ষিত করা হয়; কিছু প্রজাতি জলে বাস করে, অনেকগুলি মাটিতে বিয়োজক হিসাবে বাস করে, অন্যরা উদ্ভিদে বাস করে, কখনও কখনও পিত্ত তৈরি করে, আবার অন্যরা আবার শিকারী বা পরজীবী। এই শেষ ধরনের মাইট এর মধ্যে অন্যতম হল মৌমাছির বাণিজ্যিকভাবে ধ্বংসাত্মক ভারোয়া পরজীবী এবং মানুষের স্ক্যাবিস মাইট। বেশিরভাগ প্রজাতি মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়, তবে কয়েকটি অ্যালার্জি বা রোগ সংক্রমণ করতে পারে।

মাইট অধ্যয়নের জন্য নিবেদিত বিজ্ঞানকে অ্যাকারোলজি বলা হয়।

বিবর্তন এবং ট্যাক্সোনমি

মাইট কোনো একটি নির্দিষ্ট ট্যাক্সন নয়, বরং অ্যাকারিফর্ম এবং প্যারাসিটিফর্ম নামক দুটি অ্যারাকনিড গোষ্ঠীর মিলিত নামকরণ৷ এই দুই বর্গভুক্ত প্রাণীদের ফাইলোজেনি নিয়ে অতি অল্প পঠনপাঠন হাওয়ার এদের সম্পর্কীয় বেশীরভাগ তত্ত্ব জানা যায় এদের আনবিক বিন্যাস থেকে (বহুক্ষেত্রেই এদের রাইবোজোমাল DNA থেকে)৷ 18 S rRNA জিন থেকে এদের পর্ব এবং অধিপর্ব সম্পর্কে বিস্তৃত জ্ঞানার্জন করা যায়। অপরপক্ষে ITS2 এবং 18s ও 28s rRNA জিন থেকে আরও গভীর জ্ঞানাহোরণ করা যেতে পারে৷

ট্যাক্সোনমি

  • অধিবর্গ প্যারাসিটিফর্ম- এঁটুল এবং বেশ কিছু মাইট৷
    আনুবিক্ষণিক মাইট লরিয়া ফরমোসা
    • ওপিলিওয়াকারিডা- তুলানমূলক বৃহত্তর আকৃতি বিশিষ্ট মাইটদের বর্গ, যারা একটি কৃষককে (ওপিলিওয়ন) দর্শায়; তাই এমন নাম।[১][২]
    • হলোথাইরিডা- প্রাচীন গন্ডোয়ানা ভূমিতে বসবাসকারী শিকারী মাইটদের ক্ষুদ্র বর্গ৷
    • ইক্সোডিডা- এঁটুল।
    • মেসোস্টিগমাটা- শিকারী ও পরজীবি মাইট সম্বলিত বৃহদায়তন বর্গ৷
      • ট্রাইগাইনাস্পিডা- বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় উপবর্গ।
      • মনোগাইনাস্পিডা- পরজীবি এবং শিকারী মাইটদের বিচিত্র উপবর্গ৷
  • অধিবর্গ অ্যাকারিফর্ম- মাইটদের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় বর্গ৷
    • এন্ডেওস্টিগমাটা- সম্ভবত একটি প্যারাফাইলি৷
    • এরিওফিওয়িডি- পিও নির্মাণকারী মাইট ও তাদের আত্মীয়বর্গ৷
    • ট্রমবিডিফর্ম- উদ্ভিজ পরজীবি মাইট, তুন্ড মাইট, কিগার, চুল-গুটিকা মাইট, ভেলভেট মাইট, জলজ মাইট৷
      • স্ফ্যারোলিকিডা- দুটি গোত্র যুক্ত মাইটদের একটি ক্ষুদ্র বর্গ৷
      • প্রেস্টিগমাটা- চোষক মাইটদের বৃহদায়তন বর্গ।
    • সারকপ্টিফর্ম
      • ওরিব্যাটিডা- ওরব্যাটেড মাইট, বিটল মাইট, বর্মযুক্ত মাইট এবং ক্রিপ্টোস্টিগমাটা।
      • অ্যাস্টিগমাটা- সঞ্চিত দ্ৰব্য, লোম, পালক, মানবদেহের চুলকানি মাইট৷

জীবাশ্ম সংক্রান্ত তথ্য

মাইট, cf গ্ল্যাসাকারুস রম্বিয়াস ইওসিন যুগের বাল্টিক অ্যাম্বার-এ জমে রয়েছে

মাইটদের ক্ষুদ্র আকৃতি এবং নিম্ন সংরক্ষণ ক্ষমতার জন্য তাদের জিবাশ্ম অতি বিরল৷[৩] প্রাচীনতম অ্যাকারিফর্ম জীবাশ্ম হল স্কটল্যান্ডের রাইন চার্ট যা আজ থেকে ৪১০ মিলিয়ন বছর আগে ডেভোনিয়ান যুগের৷[৪][৩] আবার প্রাচীনতম প্যারাসিটিফর্ম জীবাশ্মগুলি অ্যাম্বার থেকে উদ্ধার করা এবং ১০০ মিলিয়ন বছর আগে মধ্য-ক্রিটেশিয়াস যুগীয়৷[৩][৫] অ্যারাকিডদের বেশীয়ভাগ জীবাশ্মই টার্সিয়ারি যুগের (৬৫ Mya বা তার পরের)৷[৬]

ফাইলোজেনি

মাইটরা মূলত ওপিলিওয়াফৰ্ম, অ্যাকারিফর্ম এবং প্যারাসিটিফৰ্ম (কিছু ক্ষেত্রে) অধিবর্গ/বর্গভুক্ত হয়৷[৭] কিন্তু বর্তমান জেনেটিক গবেষণায় নামকরণের নতুন পদ্ধতি পেশ করা হলে, এখনকার সম্পাদনাগুলিতে প্যারাসিটিফর্মদের ট্যাক্সোনমিকে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মধ্যে দিযে চালনা করা হয়েছে৷ বর্তমান গবেষণায় অ্যাকারি কে পলিফাইলোজেনিক বলে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে এঁটুলকে মাইটদের থেকে মাকড়সাদের নিকট আত্মীয় বলা হয়েছে৷[৮]নিম্নোক্ত ক্ল্যাডোগ্রামটি Dabert et al. 2010 অনুসারে প্রদর্শিত (আণবিক তথ্য অনুসারে)। এটি অনুসারে অ্যারাকিফর্মরা সলিফুগিদের এবং প্যারাসিটিফৰ্মরা সিউডোস্করপিয়নিডা র সিস্টার৷[৯]

আরাকনিড এর অংশবিশেষ
সিউডোস্করপিয়নিডা

ফলস স্করপিয়ন

প্যারাসিটিফর্ম

ইক্সোডিডা (এঁটুল)

পরজীবি মাইট, inc. ভারোয়া

অ্যাকারিফর্ম

ট্রমবিডিফর্ম (কিগার, ভেলভেট মাইট প্রভৃতি)  

সারকপ্টিফর্ম (ধূলা এবং লোম মাইট প্রভৃতি)

সলিফুগি

উট মাকড়সা

"অ্যাকারি"
(মাইট ও এঁটুল)

শরীরবিন্যাস

বাহ্যিক

মাইরা অ্যারাকনিড গোষ্ঠীর ক্ষুদ্রতম প্রাণী; যাদের বেশিরভাগের আকৃতিই ২৫০ থেকে ৭৫০ মাইমি (০.০১ থেকে ০.০৩ ইঞ্চি) হয়ে থাকে৷ এদের মধ্যে কেউ কেউ সামান্য বড় আকৃতির হয আবার কেউ পূর্ণাঙ্গ রূপেও মাত্র ১০০ মাইমি (০.০০৪ ইঞ্চি)-এর আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। এদের দেহ দুটি অংশে বিভক্ত। যথা-

খন্ডকায়ন প্রায় নেই বললেই চলে এবং প্রোসোমা ও উদর একে অপরের সাথে মিশে গেছে। একমাত্র অঙ্গপ্রতঙ্গের উপস্থিতি সাহায্যে খন্ডকায়ন বোঝা যায়।[১০]

১. কেলিসারি, ২.পাল্প, ৩.লালাগ্রন্থি, ৪.অন্ত্র, ৫. রেচন অঙ্গ(ম্যালপিজিয়ান নালিকা), ৬.পায়ু, ৭.ডিম্বাশয়/শুক্রাশয়, ৮.শ্বসন অঙ্গ(ট্রকিয়া), ৯.মধ্য গ্যাঙ্গলিয়ন, ১০.পা, ১১.হাইপোস্টোম [১১]

এদের দেহের অগ্রভাগে ন্যাথোসোমা বা ক্যাপিচুলুম অবস্থান করে। এটি মস্তক নয় কারণ এটি চক্ষু বা মস্তক ধারণ করে না, বরং এটি পশ্চাদপ্রসারণযোগ্য একটি অঙ্গ যা কেলিসেরি, পেডিপাল্প এবং মুখগহ্বর ধারণ করে। এটি একটি প্রসারিত ক্যারাপেস দ্বারা সুরক্ষিত এবং কিউটিকল নির্মিত নমনীয় অংশের সাহায্যে দেহের সাথে যুক্ত। মুখগহ্বরটি ট্যাক্সা বিশেষে এবং খাদ্যাভাসের পরিবর্তনে ভিন্ন হয়৷ কিছু জাতিগোষ্ঠীর অ্যাপেন্ডেজ গুলি দেখতে পায়ের মত হয়, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে তা সেলিসেরির মত দেখতে অঙ্গে বিবর্তিত হয়। মুখগহ্বরটি পিছনদিকে গলবিল-এর সাথে যুক্ত।[১০]

প্রায় প্রত্যেক মাইটেরই চারজোড়া পা বর্তমান (যা সাতার কাটার বা অন্য কোনো কার্য সম্পাদনা করার জন্য সামান্য বিবর্তিত হতে পারে)৷ দেহের উপরিস্থ অংশ শক্ত টার্জিটিস এবং নিম্নস্থ অংশ স্ক্লেরাইট দ্বারা আবৃত থাকে। গোনোফোর (লিঙ্গ জৃম্ভ) এদের দেহের নিম্নাংশে চতুর্থ পদ-জোড়ের মাঝে অবস্থান করে। কিছু প্রজাতির পাঁচটি মধ্য বা পার্শ্বীয় চক্ষু থাকলেও বেশিরভাগই অন্ধ; তাবে সকলের মধ্যেই স্লিট ও পিট জ্ঞানেন্দ্রেয় বর্তমান৷ দেহ ও প্রত্যঙ্গ উভয়েই সাধারণ, চ্যাপ্টা, ঘনকাকৃতি বা সংবেদী সিটি দেখতে পাওয়া যায়। মাইটরা সাধারণত হালকা খয়রি রঙের হয। তবে বহু প্রজাতিই লাল, কমলা, সবুজ আর উপরোক্ত তিনরঙ যুক্ত হয।[১০]

অভ্যন্তরীণ

মাইটদের পাচনতন্ত্রের লালাগ্রন্থি গুলি উদরের জায়গা মুখের আগের দিকে অবস্থান করে৷ বেশিরভাগ প্রজাতির দুটি থেকে ছ'টি লালাগ্রন্থি থাকে, যারা সাবকেলিসেরাল স্থানের বিভিন্ন জায়গা অবস্থান করে লালা নিঃসরণ করে। [১২] কিছু মাইটদের কোনো পায়ুছিদ্র থাকে না, কারণ তারা নিজেদের অতিক্ষুদ্র জীবনে কখনো মলত্যাগ করেই না।[১৩] এদের সংবহনতন্ত্র প্রকৃতপক্ষে সাইনাসের বান্ডিল, কিন্তু এই তন্ত্রে হৃদপিণ্ড অনুপস্থিত, বরং পেশির সংকোচনে দেহজ তরল প্রবাহিত হয়। গ্যাসের আদানপ্রদান মূলত ত্বক থেকে হলেও কিছু প্রজাতির শ্বাসঅঙ্গ হিসেবে এক থেকে চারজোড়া ট্রাকিয়া বর্তমান; সেক্ষেত্রে তাদের স্পিরাকল দেহের অগ্রজ অংশে অবস্থান করে। রেচন অঙ্গ হিসেবে একজোড়া নেফ্রিডিয়াম বা এক থেকে দুই জোড়া ম্যালপিজিয়ান নালিকা বর্তমান থাকে।[১০]

জনন এবং জীবনচক্র

হারভেস্ট মাইট-এর জীবনচক্র: লার্ভা ও নিম্ফ অনেক ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ মাইটের মত দেখতে, যদিও লার্ভার মাত্র ৬ টি পা আছে

মাইটদের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ ভিন্ন হয়৷

বেশিরভাগ মাইটরা পরোক্ষ ভাবে শুক্রাণুর স্থানান্তর করে। হয় পুরুষ মাইটরা ভূমির উপর স্পার্মাটোফোর ত্যাগ করে যা মহিলারা তুলে নেয় অথবা পুরুষরা তাদের সেলিসারি বা তৃতীয় পাদ জোড়ার মাধ্যমে তা মহিলা গোনোপোরে প্রবেশ করায়। কিছু অ্যাকারিফর্মদের মধ্যে বীর্যসেচন সরাসরি পুরুষ শিশ্নের মাধ্যমে হয়।[১০]

মাইটরা তাদের বাসস্থানকৃত কোনো অঞ্চল বা সাবস্ট্রাট-এর উপর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে ছ'সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পাড়ে (বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে প্রজাতির উপর নির্ভরশীল)৷ ডিম ফুটে বেড়ানো সদ্যজাত লার্ভার ছয়টি পা থাকে। তিন মাসের পর তা আটটি পা বিশিষ্ট নিম্ফে পরিণত হয়। এরপর আরও তিন মাস অতিবাহিত হলে তারা পুর্ণাঙ্গ মাইটে পরিণত হয়। এদের আয়ু প্রজাতির উপর নির্ভর করলেও অন্যান্য আরাকনিডদের তুলনায় তা খুব কম।[১০]

বাস্তুবিদ্যা

নিচ

অ্যাসেরিয়া অ্যানথোকপটেস, রাসেট মাইটদের আক্রমণাত্মক উদ্ভিদ কানাডা থ্রিস্টলের উপর দেখা যায়, তাই এদেরকে জৈব পরজীবিনাশক রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে।[১৪]

মাইটরা বিশিষ্ট বাস্তুতান্ত্রিক নিচ ৷ উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে ওরিবাটিডা মাইটরা বাস্তুতান্ত্রিক বিয়োজক রূপে কাজ করে। এরা জীবিত ও মৃত উদ্ভিদ, ছত্রাক, লাইকেন ও শবদেহকে খাদ্য রূপে গ্রহণ করে। অনেক মাইট শিকারী হলেও, ওরিবাটিড মাইটরা পরজীবি হয়৷[১৫] সকল আমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে মাইটরা সবচাইতে সফল ও বৈচিত্রময়। তাদের ক্ষুদ্র আকৃতির জন্য বৃহদায়তন প্রাণীদের অলক্ষেই এক বিশাল বৈচিত্র্যময় বাসস্থান- এ বিস্তার লাভ করেছে। এদের মিষ্ট ও নোনা জল, মাটি, জঙ্গল, চারণভূমি, শস্যক্ষেত্র, বাহারি উদ্ভিদ, উষ্মপ্রস্রাবন, গুহা প্রভৃতি জারগায় দেখা যায়। এমনকি জৈব ধ্বংসাবশেষ ও পচাগলা পাতার স্তূপেও এরা বসবাস করে। কেউ কেউ প্রাণী, উদ্ভিদ এবং ছত্রাককে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে আবার কেউ প্রাণী ও উভিদদেহে পরজীবী বসবাস করে।[১৬] এখনও পর্যন্ত মাইটদের মোট ৪৮,০০০টি প্রজাতিকে শনাক্ত করা গেছে,[১৭] কিন্তু কয়েক মিলিয়ন প্রজাতির শনাক্তকরণ বাকি রয়েছে।[১০] মাইটদের মধ্যে ট্রপিকাল সিরিজের আকেগোজেটেস লঙ্গিসেটোসাস পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণীগুলির মধ্যে একটি; কারণ এরা নিজ ভরের (১০০μg) ১,১৮২ গুণ ওজন চাড়তে পারে৷[১৮] আবার নিজের গতিবেগের জন্য প্যারাটারসোটোমাস ম্যাক্রোপালপিস পৃথিবীর দ্রুততম প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।[১৯]

পরজীবীতা

টিলিয়া x ইউরোপি উদ্ভিদের পাতায় ইউরোফিয়েস টিলি দ্বারা তৈরী লাইম নখ পিও

মাইটদের বহু গোষ্ঠীই পরজীবি প্রকৃতির হয়। মাইটদের একটি গোত্র পাইরোগ্লাইফিডি বা নেস্ট মাইটরা বিভিন্ন প্রাণীর বাসায় বসবাস করে। এই মাইটরা খাদ্যরূপে পোষক দেহ থেকে রক্ত, ত্বক, কেরাটিন কে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে। এদের থেকে বিবর্তিত ধূলা মাইটরা পোষক দেহ থেকে সরাসরি পুষ্টিরস গ্রহণের বদলে মানব দেহ থেকে পতিত মৃত চামড়া ও চুলকে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে।[২০] এঁটুলরা নিজের মুখপত্র দ্বারা মেরুদন্ডী প্রাণী, বিশেষত পাখী ও স্তন্যপায়ীদের রক্ত পান করে।[২১]

পরজীবী মাইটরা কখনো কখনো পতঙ্গ দেহে বাসা বাধে৷ ভ্যারোয়া ডিস্ট্রাকটর মাইটরা মৌমাছিদের দেহে এবং অ্যাকারিপিস উডি মাইটরা মৌমাছিদের শ্বাসনালিতে বসবাস করে। অন্যান্য মাছিদের দেহেও মাইটরা বসবাস করে, তবে তাদের ব্যাপারে বিস্তৃত জানা যায়নি৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে- ট্রিগোনা করভিনা মাছিদের পশ্চাদপদে মাইটদের বসবাস লক্ষ্য করা যায়।[২২] তাদের মধ্যে কিছু পরজীবী থাকলেও বেশিরভাগই উপকারী মিথোজীবী প্রকৃতির। কিছু মাইট পিঁপড়ে দেহে পরজীবী রূপে বাস করে, যেমন- একিটন বুরকেলি প্রজাতির পিঁপড়ে৷[২৩]

বৃক্ষ পরজীবির মধ্যে রয়েছে মাকড়সা মাইট (গোত্র: টেট্রানাইকিডি), সুতা-পা যুক্ত মাইট (গোত্র: টারসোনেমিডি), পিও নির্মাণকারী মাইট (গোত্র: এরিয়োফাইডি) ৷[২৪] প্রাণীদের পক্ষে ক্ষতিকারক (বা রোগ সৃষ্টি করে) একটি প্রজাতি হল সারকপটিক ম্যাঞ্জ (গোত্র: সারকপটিডি) মাইট যারা কুকুরের লোমের ভিতরে বাসা বাঁধে৷ ডেমোডেক্স মাইটরা (গোত্র: ডেমোডেকিডি) স্তন্যপায়ী প্রাণীদের চুলের ফলিকল-এ বসবাস করে।[২৫]

জনুক্রম বিস্তার

ফোরোটিক মাইটদের সাথে পুরুষ বাম্বাস হিপনোরাম, বতেভগ্রাড, বুলগেরিয়া

মাইটরা উড়তে পারে না, তাই এরা ভিন্ন পদ্ধতিতে জনুক্রমের বিস্তার করে। ছোটখাটো দুরত্ব অতিক্রম করতে এরা হাটাচলা করে থাকে। কিছু প্রজাতি কোনো স্থানে পৌঁছে একটি নির্দষ্ট ভঙ্গিতে এসে দাঁড়ায় ও বাতাস তাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়। অন্য প্রজাতি গুলি দেহ থেকে রেশম তন্তু নিঃসরণ করে তাকে বেলুনের মত ব্যবহার করে বাতাসের সাহায্যে উড়ে যায়।[২৬]

পরজীবী মাইটরা পোষক দেহকে জনুক্রম বিস্তারের মাধ্যম রূপে ব্যবহার করে এবং পোষক থেকে অন্য কোনো প্রাণীর দেহে বিস্তার লাভ করে৷ কিছু মাইট তাদের ক্লস্পার বা সাকার দ্বারা অন্য প্রাণীর দেহে আটকে থেকে এক জাযগা থেকে অন্য জায়গা বিস্তার করে (আরও জানতে দেখুন ফোরেসিস)৷ এই সময় ফোরেটিক মাইটরা কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। এইপ্রকার মাইটরা নতুন পরিবেশে সহজেই জনন ও বিস্তার লাভ করে।[২৬]

মানুষের সাথে সম্পর্ক

জনস্বাস্থ্য কর্মচারী স্তেফানিয়া ল্যানজিয়া স্ক্যাবিস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সারকপটিস স্কাবিই মাইটের পুতুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন৷

মাইটরা অতিক্ষুদ্র হয়, তাই অর্থনৈতিক দিক থেকে কার্যকর নয় এমন মাইট সম্পর্কে বেশি পঠনপাঠন হয়নি। বেশিরভাগই মানুষের জন্য উপরকারী এবং জল ও স্থলে বসবাস করে কার্বন চক্র-এর অংশ হিসেবে পচাগলা পদার্থ বিয়োজিত করে।[১৬]

চিকিৎসাবিজ্ঞানে

বেশিরভাগ মাইটরা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয় না। তবে কিছু মাইট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে রোগের বাহক রূপে বসবাস করে ও ক্ষতিকর রোগ বা অ্যালার্জির সংক্রমণ করে। মানব ত্বকে উপনিবেশ গঠনকারী এই মাইটরা বহু চুলকানি জাত রোগ বা র‍্যাস ছড়ায়, যেমন- গ্যামাসইডসিস,[২৭] রডেন্ট মাইট ডারম্যাটিস,[২৮] গ্রেইন ইচ,[২৯] গ্রোসারস ইচ,[২৯] স্ক্যাবিস প্রভৃতি। সারকোপটেস স্কাবিই দ্বারা সংক্রমিত এই স্ক্যাবিস রোগ।[৩০] ডেমোডেক্স মাইটরা কুকুর ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীদের দেহে ম্যাঞ্জ[২৫] এবং মানবদেহে রসাকি রোগের সংক্রমণ ঘটায়, যদিও কীভাবে এই রোগের সংক্রমণ হয় তা অস্পষ্ট৷[৩১] এঁটুলরাও লাইম রোগ[৩২] এবং রকি মাউন্টেন স্পটেড রোগ[৩৩]-এর মতন ব্যাধির সংক্রমণ ঘটায়৷

রবার্ট হুক দ্বারা অঙ্কিত মাইট ও তাদের ডিম, মাইক্রোগ্রাফিয়া, ১৬৬৫৷

কিগাররা অ্যাকারিয়াসিসে তাদের চুলকানি যুক্ত কামড়ের জন্য বহুল পরিচিত হলেও তারা স্ক্রাব টাইফাস নামক রোগের বাহক৷[৩৪] গৃহ ইদুর মাইটরা রিকেটসিয়াপ্লক্স রোগের একমাত্র বাহক৷[৩৫] গৃহ ধূলা মাইটরা খড় জ্বর, হাঁপানি, একজিমা রোগের সংক্রমণ করে এবং অ্যাটপিক ডারমাটিটিসকে তীব্রতর করে তোলে।[৩৬]

ভেড়াদের মধ্যে সোরোপটেস ওভিস মাইটরা বসবাস করলে ভেড়াদের বিষম অতিপ্রতিক্রিয়াপ্রদাহের মত সমস্যা দেখা যায়।[৩৭] খড় মাইটদের এক বিশেষ ধরনের প্রিয়নের ভান্ডার হিসেবে ধরা হয়, কারণ তারা ভেড়াদের মধ্যে স্ক্রাপি নামক প্রিয়ন ঘটিত রোগ ছড়ায়।[৩৮]

মৌমাছি পালনে

মৌমাছির উপরে ভ্যারোয়া ডিস্ট্রাকটর

ভ্যারোয়া ডিস্ট্রাকটর নামক একটি পরজীবী মাইট বানিজ্যিক মৌচাক গুলিতে কলোনি কোল্যাপ্স ডিসঅর্ডার-এর জন্য দায়ী৷ ভ্যারোযার মত বহিঃপরজীবীরা কেবল মাত্র মৌমাছির দেহেই বংশবিস্তার করতে পারে। এরা সরাসরি মৌমাছির দেহ থেকে ফ্যাটকে খাদ্য রূপে গ্রহণ করে এবং পোষক দেহে ডিফর্মড RNA ভাইরাস -এর মতন RNA ভাইরাস-এর সংক্রমণ ঘটায়৷ এর অতিরিক্ত সংক্রমণ পুরো মৌচক ধ্বংস করে দিতে পারে। এই মাইটগুলির জন্য ২০০০ সাল থেকে ১ কোটি মৌচাক নষ্ট হয়ে গেছে।[৩৯][৪০]

সংস্কৃতিতে

রবার্ট হুক

ইংরেজ বহুশাস্ত্রবিদ রবার্ট হুক তার আবিস্কৃত অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা সবার প্রথম মাইটদের নিরিক্ষণ করেন৷ ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে তার প্রকাশিত মাইক্রোগ্রাফিয়া তে তিনি মাইটদের সর্ম্পকে বলেন,"very prettily shap'd Insects".[৪১]

১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল একটি বাঙ্গাত্মক কবিতা "A Parable"-এর রচনা করেন৷ এখানে মাইট যে গোল চেদার চিজে বসবাস করত তার উৎপত্তি নিয়ে বচসা করছিল।[৪২] ১৯০৩পৃথিবীর প্রথম বৈজ্ঞানিক ডকুমেন্টরি চিজ মাইটদের উপরে হয়।[৪১]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ