সাঁতার-পুকুর

একটি সাঁতার-পুকুর, সাঁতারের জলাশয়, সাঁতারকুণ্ড বা ইংরেজি পরিভাষায় সুইমিং পুল এমন একটি অবকাঠামো যা সাঁতার, অন্যান্য জলক্রীড়া বা জলে অবসরমূলক কর্মকাণ্ডের আয়োজনের উদ্দেশ্যে জল ধরে রাখার জন্য নকশা ও নির্মাণ করা হয়। সাঁতার-পুকুরটি ভূগর্ভে (অভ্যন্তরীণ পুকুর) বা ভূমির উপরে (একটি স্বাধীনভাবে দণ্ডায়মান স্থাপনা হিসেবে বা কোনও ভবন বা অন্যান্য বৃহৎ কাঠামোর অংশ হিসাবে) নির্মিত হতে পারে এবং সমুদ্র-রেখা এবং ক্রুজ জাহাজের উপরেও সাঁতার-পুকুরের সুবিধা সুলভ। অভ্যন্তরীণ সাঁতার-পুকুরগুলি সাধারণত কংক্রিট, প্রাকৃতিক পাথর, ধাতু, প্লাস্টিক বা তন্তুকাচ জাতীয় উপকরণ দিয়ে নির্মিত হয়। এটি কৃত্রিম আকার-আকৃতির হতে পারে বা প্রমিত আকারে নির্মিত হতে পারে, যার মধ্যে বৃহত্তম ধরনটি হচ্ছে অলিম্পিক-আকারের সাঁতার-পুকুর।

বাড়ির পেছনের উঠানে সাঁতার-পুকুর
অলিম্পিক প্রতিযোগিতা আকারের সাঁতার-পুকুর এবং অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ২০০৬ সালের কমনওয়েলথ গেমস প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত ব্লক।

অনেক শরীরচর্চা কেন্দ্র এবং ব্যক্তিগত সংঘঘরে অনুশীলন বা বিনোদন করার জন্য সাঁতার-পুকুর থাকে। অনেক শহরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত সাঁতার-পুকুরের সুব্যবস্থা থাকে। অনেক বাণিজ্যিক রাত্রিনিবাস তথা হোটেলে অতিথিদের নিজস্ব অবসর সময়ে ব্যবহারের জন্য সাঁতার-পুকুর থাকে। উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মতো শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে কখনও কখনও শারীরিক শিক্ষার পাঠ, বিনোদনমূলক ক্রিয়াকলাপ, অবসর এবং সাঁতারের দলগুলির মতো প্রতিযোগিতার আয়োজনের জন্য সাঁতার-পুকুর থাকে। জলে ঝাঁপ, অন্যান্য বিশেষ জলক্রীড়া এবং দেহচর্চামূলক চিকিৎসার পাশাপাশি ডুবন্ত ব্যক্তিদের উদ্ধারকারী দক্ষ সাঁতারু (লাইফগার্ড) এবং নভোচারীদের প্রশিক্ষণের জন্যও বিশেষ সাঁতার-পুকুর ব্যবহার করা হয়। সাঁতার-পুকুরের পানি উষ্ণ বা উত্তপ্ত করা যেতে পারে।

ইতিহাস

আধুনিক পাকিস্তানে অবস্থিত প্রাচীন মহেঞ্জোদাড়ো নগরীতে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে খনন করা "মহাস্নানাগার"-টি সম্ভবত ইতিহাসের প্রথম সাঁতার-পুকুর ছিল। ১২ বাই ৭ মিটার (৩৯ বাই ২৩ ফুট) আয়তনের এই জলাশয়টি ইট দিয়ে আস্তরিত ও একটি আলকাতরা-ভিত্তিক জলনিরোধক (সিল্যান্ট) দিয়ে আবৃত ছিল। [১]

প্রাচীন গ্রিক এবং রোমানরা তাদের মল্লক্রীড়া বিদ্যালয় "পালাইস্ত্রা"-গুলিতে মল্লক্রীড়া প্রশিক্ষণের জন্য জলক্রীড়া এবং সামরিক অনুশীলনের জন্য কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করত। রোমান সম্রাটদের ব্যক্তিগত সাঁতার-পুকুর ছিল, যেগুলির মধ্যে মাছও রাখা হত, তাই স্নান বা সাঁতারের পুকুরের জন্য লাতিন শব্দটি ছিল পিসকিনা (যার অর্থ মাছের পুকুর)। রোমের এক ধনী অভিজাত ব্যক্তি গাইউস মায়েকেনাস সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৩৮ অব্দ থেকে ৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁর উদ্যানে একটি উষ্ণজলের সাঁতার-পুকুর তৈরি করেছিলেন।[২] গাইস ময়েসেনাস আউগুস্তুস ধনী সম্রাজ্যের উপদেষ্টা ছিলেন এবং চারুকলার প্রথম পৃষ্ঠপোষক হিসাবে বিবেচিত ছিলেন। [৩]

১৯শ শতক

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সাঁতার-পুকুর ব্রিটেনে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৮৩৭ সালের প্রথম দিকে ইংল্যান্ডের লন্ডন নগরীতে ঝাঁপমঞ্চসহ ছয়টি অভ্যন্তরীণ সাঁতার-পুকুর ছিল।[৪] কেন্টের মেইডস্টোন সুইমিং ক্লাবকে ব্রিটেনের প্রাচীনতম সাঁতারু সংঘ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৮৪৪ সালে মেডওয়ে নদীতে ডুবে যাওয়ার উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এটি গঠিত হয়েছিল। বিশেষত উদ্ধারকারীরা প্রায়শই ডুবে যেত, কারণ তারা নিজেরাই নিরাপদে সাঁতার কাটতে পারতনা। সংঘের সদস্যরা মেডওয়ে নদীতে সাঁতার কাটত এবং সাঁতারা প্রতিযোগিতা, জলে ঝাঁপদান প্রতিযোগিতা এবং ওয়াটার পোলো ম্যাচ করত। ১৮৪৪ সালের দক্ষিণ পূর্ব গেজেট প্রকাশনাতে জলজ নাস্তার পার্টির কথা জানানো হয়েছিল: নদীতে ভাসমান ভেলাতে কফি এবং বিস্কুট পরিবেশন করা হয়েছিল। কফি আগুনের উপরে গরম রাখা হয়েছিল; ক্লাব সদস্যদের একই সময়ে জল চলা এবং কফি পান করতে হয়েছিল। সর্বশেষ সাঁতারুরা এই ভেলাটি ১৫০জন দর্শকের মনমুগ্ধ করতে পেরেছিল। [৫]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ