হাতঘড়ি

ব‍্যক্তিগত সময় দেখার যন্ত্র

হাতঘড়ি হল একটি কালপরিমাপক যন্ত্র, যা সাধারণত হাতের কব্জিতে পরিধান করা হয়। হাতঘড়ি হাতের সাথে বেল্ট বা কোন প্রকার বন্ধনী দিয়ে সংযুক্ত থাকে। আধুনিক ঘড়িগুলোতে কেবল সময়ই দেখা যায় না, সাথে সাথে তারিখ, মাস এবং বছরও দেখা যায়। ইলেকট্রনিক ঘড়ি আরো অনেক রকম কাজ করতে পারে।

ম্যাগমা হাতঘড়ি

১৭ শতকে স্প্রিং-চালিত হাতঘড়িগুলি বিকশিত হয়, যা ১৪ শতকের প্রথম দিকে আবির্ভূত হয়েছিল। এগুলো ছিল একটি যান্ত্রিক যন্ত্র, যা ঘড়ির কাঁটা দ্বারা চালিত, একটি মূল স্প্রিং দ্বারা চালিত, এবং একটি দোদুল্যমান ভারসাম্য চাকা দিয়ে সময় ধরে রাখতো। এদেরকে যান্ত্রিক ঘড়ি বলা হয়। [১][২] ১৯৬০-এর দশকে ইলেকট্রনিক কোয়ার্টজ ঘড়ি উদ্ভাবিত হয়েছিল, যা একটি ব্যাটারি চালিত ছিল এবং একটি স্পন্দিত কোয়ার্টজ স্ফটিকের মাধ্যমে সময় রাখতো। ১৯৮০ সালের মধ্যে কোয়ার্টজ ঘড়ি যান্ত্রিক ঘড়ির বাজারের বেশিরভাগ দখল করে নেয়। ঐতিহাসিকভাবে, একে বলা হয় কোয়ার্টজ বিপ্লব (সুইজারল্যান্ডে কোয়ার্টজ সংকট নামেও পরিচিত)। [৩][৪] ২০১০-এর দশকের উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে স্মার্টওয়াচ, যা কব্জিতে পরার জন্য নকশা করা কম্পিউটারের মতো বিস্তৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস। সময় দেয়ার পাশাপাশি এতে আরো অনেক ফাংশন অন্তর্ভুক্ত।

বেশিরভাগ সস্তা ও মাঝারি দামের ঘড়ি মূলত সময় দেখার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এরা কোয়ার্তজের তৈরি ইলেকট্রনিক ঘড়ি। কেবল সময়রক্ষণ নয়, বরং ঘড়ির কারিগরী উৎকর্ষ এবং সৌন্দর্যই ঘড়ি সংগ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত। এ ধরনের ঘড়িতে সাধারণত যান্ত্রিক গতি থাকে এবং স্প্রিং দিয়ে দম দিতে হয়, যার ফলে এরা কোয়ার্তজ ঘড়ির মত সঠিক সময় দিতে পারে না।

২০শ শতাব্দীতে ঘড়ির আকার ছোট হয়ে আসবার আগে পকেট ঘড়ির সুপ্রচলিত ছিল, যা পকেটে নিয়ে ঘুড়ে বেড়ানো যেত এবং সাধারণত একটি চেইন দিয়ে আটকানো থাকত। হাতঘড়ির উদ্ভব হয় ১৬০০ সালে স্প্রিঙ এ দম দেয়া ঘড়ি থেকে, যার প্রচলন হয় ১৪০০ সালের দিকে।

ঘড়ির গতি

গতি হচ্ছে ঘড়ির একধরনের বিশেষ যন্ত্রকৌশল যা দ্বারা সময়ের পরিক্রমা এবং বর্তমান সময় জানা যায়। এছাড়াও তারিখ, মাস, দিন, এবং বছরও জানা যায়। ঘড়ির গতিকে এর কৌশলের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হয়। একটি ঘড়ি সম্পূর্ণভাবে যান্ত্রিক গতি নির্ভর হতে পারে। অথবা পুরোপুরি ইলেকট্রনিক গতি দিয়ে চলতে পারে। আবার যান্ত্রিক এবং ইলেকট্রনিক গতির সমন্বয়ে একটি ঘড়ি চলতে পারে।

যান্ত্রিক গতি

যান্ত্রিক গতি ইলেকট্রনিক গতির তুলনায় কম নির্ভুল। বিভিন্ন যন্ত্র কৌশলের উপর ভিত্তি করে এই গতি তৈরি করা হয়েছে। স্প্রিং দিয়ে দম দেয়ার মাধ্যমে এই ঘড়িকে শক্তি দেয়া হয়। স্প্রিং ঘোরানো হলে এই ঘূর্ণন শক্তি মেইনস্প্রিংগতিশক্তি হিসেবে জমা হয়। এরপর তা যান্ত্রিক চাকার মাধ্যমে এস্কেপমেন্ট নামক যন্ত্রে সঞ্চারিত হয়। এস্কেপমেন্ট এবং ভারসাম্য চাকা মিলে ঘড়ির সেকেন্ড, মিনিট, এবং ঘন্টার কাঁটা নিয়ন্ত্রণ এবং সঞ্চালন করে। যান্ত্রিক ঘড়িকে প্রায় প্রতিদিনই দম দিতে হয়। যান্ত্রিক গতি নির্মাণ ব্যয়বহুল এবং উচ্চ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। সুইস ব্রান্ড যেমন রোলেক্স, ওমেগা, প্যানেরাই, টুডর, ইত্যাদি যান্ত্রিক ঘড়ি নির্মাণের জন্য জগদ্বিখ্যাত।

স্বয়ংক্রিয় গতি

স্বয়ংক্রিয় গতি যান্ত্রিক গতির একটি প্রকারভেদ। এখানে ঘড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতিপ্রাপ্ত হয়। স্প্রিং ঘুরিয়ে দম দেয়ার প্রয়োজন হয় না। ব্যক্তি যখন হাঁটাহাঁটি বা দৌড়াদৌড়ি করে তখন ঘড়িতে একটি অর্ধবৃত্তাকার ভর পর্যায়বৃত্ত গতিতে আন্দোলিত হতে থাকে। এর ফলে মেইনস্প্রিং গতিশক্তি প্রাপ্ত হয় এবং ঘড়ির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ইলেকট্রনিক গতি

ইলেকট্রনিক গতি কোয়ার্জ গতি হিসেবেও সমধিক পরিচিত। এটি ব্যাটারিচালিত ঘড়ি এবং সবচাইতে নির্ভুলভাবে সময় জানাতে পারে। ব্যাটারি থেকে পাইজোইলেকট্রিক কোয়ার্টজ স্ফটিককে তড়িতায়িত করে উদ্দীপ্ত করা হয়। এই স্ফটিক সেকেন্ডে প্রায় ৩২,৭৬৮ বার কাঁপে এবং সূক্ষ ভাবে সময় নির্ধারণ করে। জাপানিজ 'সিকো' কোম্পানি সর্বপ্রথম কোয়ার্টজ চালিত ঘড়ি বাজারে আনে । এতে যান্ত্রিক গতির ব্যবসায় ধ্বস নামে। কোয়ার্টজ ঘড়ি অত্যন্ত স্বস্তা হলেও নিখুঁতভাবে সময়ের হালনাগাদ করতে পারে। বর্তমানে কোয়ার্টজ ঘড়ি সবচাইতে বেশি প্রচলিত।

কিনেটিক গতি

কিনেটিক গতি যান্ত্রিক ও ইলেকট্রনিক গতির সমন্বয়ে গঠিত। এই দুই গতির ভালো দিকগুলো নিয়েই কিনেটিক গতির উদ্ভব। এটি স্বয়ংক্রিয়-কোয়ার্টজ গতি নামেও পরিচিত। কোয়ার্টজ ঘড়ি ব্যাটারিচালিত হওয়ায় এর ব্যাটারি নির্দিষ্ট সময় পর‌পর পাল্টাতে হয়। অন্যদিকে কিনেটিক ঘড়ি কোয়ার্টজ স্ফটিক দিয়ে চালিত হলেও এর শক্তি আসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দম দেয়ার মাধ্যমে। ঘড়ি যখন গতিপ্রাপ্ত হয় তখন একটি ভর ঘড়ির ভিতরে পর্যায়বৃত্তভাবে আন্দোলিত হয়। এই গতিশক্তি একটি জেনারেটরের মাধ্যমে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তরিত হয় যা পাইজোইলেকট্রিক কোয়ার্টজ স্ফটিককে উদ্দীপ্ত করে। কোয়ার্টজ স্ফটিকটি সেকেন্ডে প্রায় ৩২,৭৬৮ বার কম্পিত হয় এবং সেকেন্ড, মিনিট, এবং ঘন্টার কাঁটাকে সূক্ষ ভাবে সঞ্চালন করে। জাপানের সিকো ব্র্যান্ড সর্বপ্রথম কিনেটিক ঘড়ি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে বাজারে আনে। এটি পরিবেশ বান্ধব ও তুলনামূলক স্বস্তা হওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ