হেরমান মিংকফ্‌স্কি

হেরমান মিংকফ্‌স্কি (জার্মান: [mɪŋˈkɔfski][১]; ২২ জুন ১৮৬৪ - ১২ জানুয়ারি ১৯০৯) একজন জার্মান গণিতবিদ, যিনি কনিসবার্গ, জুরিখগটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি সংখ্যার জ্যামিতি( জিওমেট্রি অফ নাম্বার্স) তৈরী ও এর বিকাশ ঘটিয়েছেন এবং সংখ্যাতত্ত্ব, গাণিতিক পদার্থবিদ্যাআপেক্ষিকতা তত্ত্বের সমস্যা সমাধানে জ্যামিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।

হেরমান মিংকফ্‌স্কি
জন্ম(১৮৬৪-০৬-২২)২২ জুন ১৮৬৪
আলেকসোটাস, সুয়ালকি প্রশাসনিক অঞ্চল, রুশ সাম্রাজ্য (বর্তমানে কাউনাস, লিথুয়ানিয়া)
মৃত্যু১২ জানুয়ারি ১৯০৯(1909-01-12) (বয়স ৪৪)
জাতীয়তাজার্মান
মাতৃশিক্ষায়তনকনিসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচিতির কারণসংখ্যার জ্যামিতি
মিংকফ্‌স্কি কন্টেন্ট
মিংকফ্‌স্কি ছক
মিংকফ্‌স্কির প্রশ্নবোধক চিহ্নের ফাংশন
মিংকফ্‌স্কি স্থাণ
ডাইওফ্যান্টাইন সমীকরণের ওপর কাজ
দাম্পত্য সঙ্গীঅগাস্ত অ্যাডলার
সন্তানলিলি (১৮৯৮-১৯৮৩), রুথ (১৯০২-২০০০)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রগণিত, পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন
প্রতিষ্ঠানসমূহইটিএইচ জুরিখ এবং গটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়
ডক্টরাল উপদেষ্টাফের্দিনান্দ ভন লিন্ডেমান
ডক্টরেট শিক্ষার্থীকন্সতান্তিন কারাতেওদোরি
লুইস কলরস
ডেনিস কোনিগ
স্বাক্ষর

মিংকফ্‌স্কি সম্ভবত আপেক্ষিকতার ক্ষেত্রে তাঁর কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ১৯০৭ সালে তিনি দেখিয়েছিলেন যে তাঁর প্রাক্তন ছাত্র আলবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব (১৯০৫) জ্যামিতিকভাবে চার-মাত্রিক স্থান-কালের তত্ত্ব হিসাবে দেখানো যায়, যা তখন থেকে "মিংকফ্‌স্কি স্থানকাল" নামে পরিচিত।

ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিবার

হেরমান মিংকফ্‌স্কি লিথুয়ানিয়ার রুশ সাম্রাজ্যের অংশ পোল্যান্ড রাজ্যের সুয়ালকি প্রশাসনিক অঞ্চলের অন্তর্গত আলেকসোটাস শহরে ইহুদি বংশোদ্ভূত[২] লেউইন বোরুচ মিংকফ্‌স্কি (যিনি কাউনাস শহরের প্রথম কোরাল সিনাগগ তৈরীতে অর্থায়ন করেন[৩][৪][৫]) ও র‍্যাচেল তাউবমানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। হেরমান, চিকিৎসা গবেষক অস্কার মিংকফ্‌স্কির (জন্ম ১৮৫৮) ছোট ভাই ছিলেন।[৬] বিভিন্ন সূত্রে মিংকফ্‌স্কির জার্মান[৭][৮], পোলিশ[৯][১০][১১], লিথুয়ানিয়ান-জার্মান[১২] অথবা রাশিয়ান[১৩] এরকম ভিন্ন ভিন্ন জাতীয়তা পাওয়া যায়।

রাশিয়ার ইহুদি নিপীড়ন থেকে বাঁচতে পরিবারটি ১৮৭২ সালে কনিসবার্গে চলে আসে[১৪], যেখানে তার পিতা প্রথমে ন্যাকড়া রপ্তানীর কাজে এবং পরবর্তীতে যান্ত্রিক ক্লকওয়ার্ক টিনের খেলনা উৎপাদনে জড়িয়ে যান। ( তিনি বড় ছেলে ম্যাক্সকে নিয়ে লেউইন মিংকফ্‌স্কি এন্ড সন প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন )[১৫]

মিংকফ্‌স্কি কনিসবার্গে পড়াশোনা করেন এবং বন ( ১৮৮৭-১৮৯৪), কনিসবার্গ (১৮৯৪-১৮৯৬), জুরিখ (১৮৯৬-১৯০২) ও পরিশেষে গটিঙেনে ১৯০২ থেকে ১৯০৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৮৯৭ সালে অগাস্ত অ্যাডলারকে বিয়ে করেন ও তাদের দুটি কন্যাসন্তান হয়।

মিংকফ্‌স্কি হঠাৎ অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে গটিঙেনে ১৯০৯ সালের ১২ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। ডাভিড হিলবের্টের রচিত মিংকফ্‌স্কির শোকবার্তায় এই দুই গণিতবিদের মধ্যকার নিবিড় বন্ধুত্ব ফুটে ওঠে:

আমার ছাত্রজীবন থেকেই মিংকফ্‌স্কি আমার সেরা, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু, যে তার সমস্ত গভীরতা এবং আনুগত্যের সাথে আমাকে সহায়তা করেছে, যা ছিলো তার স্বভাবসুলভ। আমাদের বিজ্ঞান, যা আমরা অন্য সবাকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবেসেছি, আমাদের একত্রিত করেছে; এটি আমাদের কাছে পুষ্পে পূর্ণ উদ্যানের মত। এতে লুকানো পথের সন্ধান করতে আমরা উপভোগ করেছি এবং অনেক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কার করেছি যা আমাদের সৌন্দর্য বোধকে আকর্ষণ করেছে এবং যখন আমরা একে অপরকে তা দেখিয়ে একসাথে বিস্মিত হতাম, তখন আমাদের আনন্দ পরিপূর্ণ হতো। সে ছিলো আমার জন্য স্বর্গের একটি বিরল উপহার এবং এতদিন ধরে এই উপহারটি ধারণ করতে পারার জন্য অবশ্যই আমার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। এখন মৃত্যু হঠাৎ তাকে আমাদের মধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। তবে, মৃত্যু যা গ্রহণ করতে পারে না তা হলো আমাদের অন্তরের ভেতরে তাঁর মহৎ চিত্র এবং এই জ্ঞান যে, তার আত্মা এখনো আমাদের মধ্যে সদা সক্রিয় রয়েছে।

মাক্স বর্ন গটিঙেনের গণিতের ছাত্রদের পক্ষে শোকবার্তাটি পাঠ করেন।[১৬]

মেইন-বেল্ট গ্রহাণু ১২৪৯৩ মিংকফ্‌স্কি ও এম-ম্যাট্রিক্স মিংকফ্‌স্কির সম্মানে নামকরণ করা হয়েছে।[১৭]

শিক্ষা এবং কর্মজীবন

মিংকফ্‌স্কি পূর্ব প্রাশিয়ায় অবস্থিত কনিসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আলবার্টিনায় শিক্ষালাভ করেন, যেখানে তিনি ফের্দিনান্দ ভন লিন্ডেমানের অধীনে ১৮৮৫ সালে ডক্টরেট অর্জন করেন। ১৮৮৩ সালে, কনিসবার্গের ছাত্র থাকাকালীন, দ্বিঘাত তত্ত্বের ওপর পুস্তক লিখে তিনি ফ্রেঞ্চ একাডেমি অফ সায়েন্সের পক্ষ থেকে গণিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি ডাভিড হিলবের্ট নামে আরেক নামী গণিতবিদের বন্ধুও ছিলেন। তার ভাই অস্কার মিংকফ্‌স্কি (১৮৫৮-১৯৩১) একজন সুপরিচিত পদার্থবিদ ও গবেষক ছিলেন।[১৪]

মিংকফ্‌স্কি বন, কনিসবার্গ, জুরিখগটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ইটিএইচ জুরিখে তিনি আইনস্টাইনের অন্যতম শিক্ষক ছিলেন।

মিংকফ্‌স্কি দ্বিঘাত সমিকরণ নিয়ে কাজ করেন, বিশেষত n চলক নিয়ে, এবং এ বিষয়ে গবেষণার ফলেই তিনি n মাত্রার কোনো স্থানের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। ১৮৯৬ সালে, তিনি সংখ্যার জ্যামিতি (জিওমেট্রি অফ নাম্বার্স) উপস্থাপণ করেন, যার মাধ্যমে জ্যামিতিক পদ্ধতিতে সংখ্যাতত্ত্বের সমস্যা সমাধান করা যায়। এছাড়াও তিনি বক্ররেখার জন্য মিংকফ্‌স্কি সসেজ ও মিংকফ্‌স্কি কভার সৃষ্টি করেছেন।[১৮]

১৮৮৩ সালে ফ্রেঞ্চ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের গণিত পুরস্কার প্রাপ্ত হওয়ার সময়ে মিংকফ্‌স্কি।

১৯০২ সালে তিনি গটিঙেনের গণিত বিভাগে যোগদান করেন এবং ডাভিড হিলবের্টের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী বনে যান, যার সাথে কনিসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়েই তার পরিচিতি হয়। এখানে কন্সতান্তিন কারাতেওদোরি তার একজন ছাত্র ছিলেন।

আপেক্ষিকতা নিয়ে কাজ

১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ অবধি মিংকফ্‌স্কি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার প্রাক্তন ছাত্র আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে লোরেন্‌ৎস এবং পোয়াঁকারের পূর্ববর্তী কাজের ওপর ভিত্তি করে যে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রকাশ করেন তা চার মাত্রার স্থানেই সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা সম্ভব, যা তখন থেকে "মিংকফ্‌স্কি স্থানকাল" নামে পরিচিত, যেখানে কাল এবং স্থান বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা নয় বরং এরা একত্রিত হয়ে চার-মাত্রিক স্থান-কাল তৈরী করে এবং যেখানে বিশেষ আপেক্ষিকতার লোরেন্‌ৎস জ্যামিতির প্রকাশ:

মিংকফ্‌স্কি স্থানের গাণিতিক ভিত্তি উনিশ শতকে ইতোমধ্যে পরিচিত পরাবৃত্তিক স্থানের পরাবৃত্তিক মডেলেই পাওয়া যায়, কারণ পরাবৃত্তিক স্থানের আইসোমেট্রিসমূহ (বা গতি) লোরেন্‌ৎস রূপান্তরের সাথে সম্পর্কিত, যাতে উইলহেম কিলিং (১৮৮০, ১৮৮৫), অঁরি পোয়াঁকারে ( ১৮৮১), হোমারশাম কক্স (১৮৮১), আলেক্সান্ডার ম্যাকফারলেন (১৮৯৪) এবং অন্যান্যদেরও ভূমিকা রয়েছে।

জার্মান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকদের ৮০ তম সমাবেশে (২১ সেপ্টেম্বর, ১৯০৮) প্রদানকৃত তার "স্থান এবং কাল" নামক ভাষণের প্রথম অংশ এখন বিখ্যাত:

স্থান এবং কাল সম্পর্কে আমি আপনাদের সামনে যে মতামতগুলো পেশ করতে চাই তা পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানকে ভিত্তি করেই উত্থিত এবং তন্মধ্যেই এর শক্তি নিহিত। এগুলো মৌলিক। এখন থেকে স্থান এবং কাল নিতান্তই ছায়ায় পরিণত হলো, এবং এদের উভয়ের মধ্যে এক ধরনের সম্মিলনই কেবল একটি স্বাধীন বাস্তবতা রক্ষা করতে সক্ষম হবে।

প্রকাশনা

আপেক্ষিকতা

ডায়োফ্যান্টাইন বিশ্লেষণ

গাণিতিক (মরণোত্তর)

  • Minkowski, Hermann (১৯১০)। "Geometrie der Zahlen"। Leipzig-Berlin: B. G. Teubner Verlag। এমআর 0249269। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২৮ 
  • Minkowski, Hermann (১৯১১)। Gesammelte Abhandlungen 2 vols। Leipzig-Berlin: R. G. Teubner। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-২৮ 

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ