হৈম-আগ্নেয়গিরি

হৈম-আগ্নেয়গিরি (ইংরেজি: Cryovolcano) হল এমন এক শ্রেণির আগ্নেয়গিরি যেখান থেকে গলিত পাথরের পরিবর্তে জল, অ্যামোনিয়া বা মিথেনের মতো উদ্বায়ী পদার্থ নির্গত হয়।[২] সম্মিলিতভাবে হৈম-ম্যাগমা (ইংরেজি: Cryomagma), হৈম-লাভা (ইংরেজি: Cryolava) বা হৈম-আগ্নেয় গলিত পদার্থ (ইংরেজি: Ice-volcanic melt) নামে পরিচিত[২] এই নিঃসৃত পদার্থ সচরাচর তরল আকারে থাকে এবং তা প্লিউম সৃষ্টি করতে পারে; কিন্তু তা বাষ্পের আকারেও থাকতে পারে। নির্গত হওয়ার পর পারিপার্শ্বিকের অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রার সংস্পর্শে এসে হৈম-ম্যাগমার জমে কঠিন আকার ধারণ করারই কথা। তুষারময় প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌরজগতের অতীতে যে সকল তুষার রেখায় (যেমন প্লুটো [৩]) জলের প্রাচুর্য ছিল এমন অন্যান্য বস্তুতে হৈম-আগ্নেয়গিরির অস্তিত্বের সম্ভাবনা থাকে। বামন গ্রহ প্লুটো ও সেরেস এবং শনির প্রাকৃতিক উপগ্রহ টাইটানের অনেক বৈশিষ্ট্যটিকে সম্ভাব্য হৈম আগ্নেয়গিরি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং বৃহস্পতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ ইউরোপার পৃষ্ঠভাগে এক শ্রেণির গম্বুজাকৃতি বৈশিষ্ট্যের উৎসও সম্ভবত হৈম-আগ্নেয় ক্রিয়াকলাপ।[৪][৫] এছাড়াও এনসেলাডাস ও সম্ভবত ট্রাইটনেও তুষার প্রস্রবণ দেখা যায়। যদিও সেগুলি আগ্নেয়গিরি গঠন করেছে কিনা তা জানা যায় না।

ডুম মনস, শনির উপগ্রহ টাইটানে অবস্থিত একটি হৈম-আগ্নেয়গিরি; এটি সর্বাধিক সুনিশ্চিতভাবে শনাক্তকৃত হৈম-আগ্নেয়গিরিগুলির অন্যতম।[১]

বরফ গলন ও হৈম-আগ্নেয়গিরির সৃষ্টির ক্ষেত্রে সৌরজগতের কোনও কোনও বস্তুর সম্ভাব্য শক্তির উৎসটি হল জোয়ার-সংক্রান্ত বিরোধ।[৬] হিমায়িত পদার্থের আলোকভেদ্য অথচ অস্বচ্ছ সঞ্চয় পৃষ্ঠভাগের ঠিক তলায় একটি গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে, যার থেকে প্রয়োজনীয় তাপ উৎপন্ন হয়।

কাইপার বেষ্টনীর বস্তু কুয়াওয়ারে অতীত উষ্ণায়নের চিহ্নগুলি[৭] দেখে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে এগুলি অতীতে হৈম-অগ্ন্যুৎপাতের ফলশ্রুতি। তেজষ্ক্রিয় ক্ষয় এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দিয়ে থাকতে পারে। কারণ, হৈম-আগ্নেয়গিরিগুলি অ্যামোনিয়া-মিশ্রিত জল উদ্গীরণে সক্ষম এবং অ্যামোনিয়া ১৮০ K (−৯৫ °সে) তাপমাত্রায় গলে চরম শীতল এক তরল সৃষ্টি করে যা আগ্নেয়গিরি থেকে নিঃসৃত হতে পারে।

পর্যবেক্ষণ

এনসেলাডাসের প্লিউমগুলি থেকে শনির ই বলয়টি পুষ্ট হয়। আপাতদৃষ্টিতে এই প্লিউমগুলির উৎসস্থল এনসেলাডাসের দক্ষিণ মেরুর নিকটস্থ "টাইগার স্ট্রাইপস" অঞ্চল।

২০০৫ সালের ২৭ নভেম্বর ক্যাসিনি মহাকাশযানটি এনসেলাডাসের দক্ষিণ মেরুতে কয়েকটি প্রস্রবণের আলোকচিত্র গ্রহণ করে।[৮] পরবর্তীকালে ইউরোপা, টাইটান, গ্যানিমিড ও মিরান্ডা সহ অন্য বেশ কয়েকটি তুষারময় প্রাকৃতিক উপগ্রহে হৈম-অগ্ন্যুৎপাতের পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়। ক্যাসিনি টাইটানে বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পায় যেগুলিকে হৈম-আগ্নেয়গিরি মনে করা হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডুম মনস এবং তার পার্শ্ববর্তী সোট্রা প্যাটেরা। শেষোক্ত বৈশিষ্ট্যটিকে মনে করা হয় "এখনও পর্যন্ত কোনও তুষারময় উপগ্রহে নথিভুক্ত শ্রেষ্ঠ আগ্নেয় ভূসংস্থানের প্রমাণ"।[৯] হৈম-অগ্ন্যুৎপাতই টাইটানের বায়ুমণ্ডলের প্রাপ্ত মিথেনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলে একটি তত্ত্ব বিজ্ঞানীরা খাড়া করেছেন।[১০]

২০০৭ সালে জেমিনি মানমন্দির থেকে কৃত পর্যবেক্ষণের ফলে প্লুটোর প্রাকৃতিক উপগ্রহ কেয়ারনের পৃষ্ঠভাগে অ্যামোনিয়া হাইড্রেট ও জলীয় স্ফটিকের ছোপ দেখা যায়। এই ধরনের ছোপ সক্রিয় হৈম-আগ্নেয়গিরি বা হৈম-প্রস্রবণের উপস্থিতি ইঙ্গিত করে।[১১][১২] এরপর ২০১৫ সালে নিউ হোরাইজনস-এর পর্যবেক্ষণের ফলে কেয়ারনের এক নবীন পৃষ্ঠভাগের সন্ধান পাওয়া যায়, যা প্রাগুক্ত ধারণাটিকেই সমর্থন করে।[১৩] প্লুটোর দু’টি বৈশিষ্ট্যকে সম্ভাব্য হৈম-আগ্নেয়গিরি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এই দু’টি বৈশিষ্ট্য হল দাঁতাল শৃঙ্গ-বিশিষ্ট দু’টি পর্বত।[১৪]

২০১৫ সালে ডন মহাকাশযান বামন গ্রহ সেরেসের একটি অভিঘাত খাদের ভিতরে দু’টি স্বতন্ত্র ঊজ্জ্বল বিন্দুর আলোকচিত্র গ্রহণ করে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, এই উজ্জ্বল বিন্দু দু’টির উৎস সম্ভবত হৈম-অগ্ন্যুৎপাত।[১৫] ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নাসা জেপিএল ও নাসা গোডার্ডের বিজ্ঞানীরা তাঁদের আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করে বলেন যে, সেরেসের আহুনা ডোম হল একটি বৃহদাকার "আগ্নেয় গম্বুজ, যা সৌরজগতের অন্যত্র প্রাপ্ত অনুরূপ গম্বুজগুলির মতো নয়। [বৃহৎ] পর্বতটি সম্ভবত আগ্নেয় প্রকৃতির। বিশেষ ভাবে বললে, এটি একটি হৈম-আগ্নেয়গিরি – যে আগ্নেয়গিরি থেকে সিলিকেটের পরবর্তে জলের ন্যায় উদ্বায়ী দ্বারা গঠিত তরল পদার্থ নির্গত হয়… [এটি] হৈম-আগ্নেয়গিরির একমাত্র জ্ঞাত উদাহরণ যা সম্ভবত নোনা কাদার মিশ্রণ হতে সৃষ্ট এবং সাম্প্রতিক অতীতে ভূতাত্ত্বিকভাবে গঠিত।"[১৬] এছাড়াও সেরেসের অন্তত কয়েকটি জ্ঞাত উজ্জ্বল বিন্দু (বিশেষত ওকাটর অভিঘাত খাদের উজ্জ্বল বিন্দুগুলি সহ) সম্ভবত হৈম-অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।[১৭][১৮] ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ওকাটরের সাম্প্রতিকতম প্রধান উদ্গীরণের ঘটনাটি ঘটেছিল প্রায় ৪০ লক্ষ বছর আগে এবং সেই কারণে সেরেস সম্ভবত এখনও ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয়।[১৯]

চিত্রকক্ষ

আরও দেখুন

  • পৃথিবী-বহিঃস্থ আগ্নেয়গিরিগুলির তালিকা
  • তুষার আগ্নেয়গিরি

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ