আইফেল টাওয়ার
আইফেল টাওয়ার (ফরাসি: La Tour Eiffel লা তুর্ ইফেল্) প্যারিস শহরে অবস্থিত সুউচ্চ একটি লৌহ কাঠামো যা ফ্রান্সের সর্বাধিক পরিচিত প্রতীক। গুস্তাভো আইফেল নির্মিত ৩২০ মিটার তথা ১০৫০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারটি ছিল ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরবর্তী ৪০ বছর যাবৎ পৃথিবীর উচ্চতম টাওয়ার। গুস্তাভো ইফেল রেলের জন্য সেতুর নকশা প্রণয়ন করতেন এবং টাওয়ারটি নির্মাণে তিনি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন। ১৮,০৩৮ খণ্ড লোহার তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছোট-বড় কাঠামো জোড়া দিয়ে এই টাওয়ার তৈরি করা হয়েছিল। ৩০০ শ্রমিক এই নির্মাণ যজ্ঞে অংশ নিয়েছিল।[১০] এটির উপর দুইবার অ্যান্টেনা স্থাপনের ফলে আইফেল টাওয়ারের বর্তমান উচ্চতা ৩৩০ মিটার (১০৮৩ ফুট)। [১১]
আইফেল টাওয়ার | |
---|---|
La Tour Eiffel | |
সাধারণ তথ্য | |
অবস্থান | প্যারিস, ফ্রান্স |
কার্যারম্ভ | ৩১ মার্চ, ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দ |
স্বত্বাধিকারী | প্যারিস শহর, ফ্রান্স (১০০%) |
ব্যবস্থাপনা | সোসাইতে দে এক্সপ্লোইসেসিও দে লা তুর ইফেল (Société d'Exploitation de la Tour Eiffel - SETE) |
উচ্চতা | |
শুঙ্গ বা শিখর পর্যন্ত | ৩২৪.০০ মি (১,০৬৩ ফু) |
ছাদ পর্যন্ত | ৩০০.৬৫ মি (৯৮৬ ফু) |
শীর্ষ তলা পর্যন্ত | ২৭৩.০০ মি (৮৯৬ ফু) |
কারিগরী বিবরণ | |
তলার সংখ্যা | ৩ |
উত্তোলক (লিফট) সংখ্যা | ৭ |
নকশা এবং নির্মাণ | |
স্থপতি | স্টিভেন সাভেস্টার |
প্রকৌশলী | মোরিস কোকলেন, এমিল নুগাইয়ার |
তথ্যসূত্র |
সময় পরিক্রমা
১০ সেপ্টেম্বর ১৮৮৯
টমাস এডিসন এই তোরণটি পরিদর্শন করেন। তিনি নিম্নলিখিত বার্তাটি লিখে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন, “শ্রদ্ধা জানাই সেই সাহসী প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকৌশলী এম আইফেলের প্রতি আধুনিক প্রকৌশলের নিদর্শনস্বরূপ এই বিশাল ও মৌলিক সৃষ্টির জন্য যিনি টমাস এডিসন, বন ডিউ এর মত বিশ্ববিখ্যাত প্রকৌশলীসহ সকল প্রকৌশলীদের জন্য গর্বের এবং মর্যাদার”।
১৯১০
ফাদার থিওডর উলফ টাওয়ারের পাদদেশ এবং চূড়ার বিকিরিত শক্তি পরিমাপ করেন যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ছিল এবং কসমিক রশ্মি(Cosmic Ray) তখনই প্রথম আবিষ্কার হয়।[১২]
৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১২
ফ্রাঞ্জ রেইচেল্ট নামক একজন ফরাসি দর্জি তার নিজের তৈরী প্যারাস্যুট নিয়ে আইফেল টাওয়ারের ৬০ মিটার উচ্চতা থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং মৃত্যু বরণ করেন।
১৯১৪
টাওয়ারে অবস্থিত একটি রেডিও ট্রান্সমিটার মার্নের প্রথম যুদ্ধের (The First War of Marne) সময় জার্মান বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
১৯২৫
ভিক্টর লাস্টিগ নামক একজন শিল্পী টুকরো ধাতব হিসেবে টাওয়ারটি বিক্রি করেন দু’টি ভিন্ন কিন্তু সম্পর্কিত সময়ে।[১৩]
১৯৩০
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে ক্রাইসলার ভবন তৈরী হবার পর আইফেল টাওয়ার পৃথিবীর সর্বোচ্চ কাঠামোর মর্যাদা হারায়।
১৯২৫-১৯৩৪
টাওয়ারের চারদিকের তিন দিকেই "সিত্রোয়াঁ"(Citroen)’’ মোটর গাড়ির জন্য আলোক সজ্জিত করা হয় যা সেই সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতায় স্থাপিত বিজ্ঞাপন চিত্র ছিল।
১৯৪০-১৯৪৪
প্যারিস জার্মানির অধীনস্থ থাকাকালীন ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ফরাসিরা টাওয়ারের লিফটের তার কেটে ফেলে। ফলস্বরূপ এডলফ হিটলারকে পদব্রজে চূড়ায় উঠতে হয়েছিল। তখন এমনটি বলাবলি হতো যে হিটলার ফ্রান্স বিজয় করলেও আইফেল টাওয়ার বিজয় করতে পারেন নি।
৩ জানুয়ারি ১৯৫৬
টাওয়ারের ঊর্ধভাগ আগুনে পুড়ে বিনষ্ট হয়।
১৯৫৭
বর্তমান রেডিও অ্যানটিনাটি টাওয়ারের শীর্ষে স্থাপন করা হয়।
১৯৮০
টাওয়ারের মধ্যবর্তী উচ্চতায় রেস্তোরাঁ এবং তা তৈরীতে দরকারি লৌহগুলো খুলে পৃথক করে রাখা হয়। নিউ অরলিনস, লুসিয়ানায় এসব পুণঃস্থাপন করা হয়।
৩১ মার্চ ১৯৮৪
রবার্ট মরিয়ার্টি টাওয়ারের বৃত্তাকার অংশ দিয়ে একটি ‘বিচক্রাফ্ট বনানজা’(‘’Beechcraft Bonanza’’) উড়ান।[১৪]
১৯৮৭
এ. জে. হ্যাকেট আইফেল টাওয়ারের শীর্ষ থেকে প্রথমবারের মত ‘বাঙ্গী লম্ফন’(‘’bungee jumps’’) করেন, ভূমিতে পৌছানোর পর তিনি প্যারিস পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন। [১৫]
২৭ অক্টোবর ১৯৯১
থিয়েরী ডিভক্স টাওয়ারের দ্বিতীয় স্তর অনেকগুলো বাঙ্গী লম্ফন করেন যা অননুমোদিত ছিল। প্রশাসনিক লোক পৌঁছানোর আগেই তিনি ছয়টি লম্ফন করেছিলেন।[১৬]
১৪ জুলাই ১৯৯৫
জিন মাইকেল জার ‘’Concert For Tolerance’’ নামক একটি কনসার্টের আয়োজন করেন ইউনেস্কোকে (UNESCO) সহায়তা করার জন্য। সেখানে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ উপস্থিত ছিল।
১৯৯৯
আইফেল টাওয়ারে প্যারিসের সহস্র বর্ষ উদযাপিত হয়। এই উপলক্ষে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ টাওয়ারটি আলোকোজ্জ্বল করা হয়।[১৭]
২৮ নভেম্বর ২০০২
টাওয়ারে ২০০,০০০,০০০ তম অতিথি আগমন করে।[১৮]
২২ জুলাই ২০০৩
টাওয়ারের সম্প্রচার কক্ষে আগুন ধরে যায়। ৪০ মিনিট পর সম্পূর্ণ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
২০০৪
টাওয়ারের প্রথম স্তরে স্কেটিং খেলার আয়োজন শুরু করা হয়।[১৯]
২০০৮
ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয়বারের মত সভাপতিত্ব পাওয়ায় ইফেল টাওয়ারে ১২টি দেশের পতাকা লাগানো হয় এবং নীল আলোয় সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেয়া হয়।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
সম্ভব্য বোমা হামলার আশঙ্কায় আইফেল টাওয়ার দর্শকদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। অণুসন্ধান চালিয়ে কোন বোমা পাওয়া না যাওয়ায় পরদিন আবারো তা খুলে দেয়া হয়। [২০][২১]
- টাওয়ারের ভিত্তি, ১৮৮৭
- টাওয়ারটির ধাতবকার্জের শুরু।
- ৭ ডিসেম্বর ১৮৮৭: টাওয়ারটির পাদদেশে গঠনকার্জ।
- ২০শে মার্চ ১৮৮৮: ১ম স্তরের সম্পূর্ণতা।
- ১৫ মে ১৮৮৮: ২য় পর্যায়ে নির্মানকার্জ শুরু।
- ২১শে আগস্ট ১৮৮৮: ২য় স্তরের সম্পূর্ণতা।
- ২৬শে ডিসেম্বর ১৮৮৮: উপরের নির্মানকার্জ
- ১৫ই মার্চ ১৮৮৯: শেষপর্যায়ের নির্মান
গ্যালারি
- সূর্যোদয়ের সময় আইফেল টাওয়ারের দৃশ্য।
- ২০১৩ সালে ফ্রান্সের জাতীয় উৎসবে
- আইফেল টাওয়ারের উপর বজ্রাপাতের দৃশ্য, ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে তোলা আলোকচিত্র।
- L'Arc de Triomphe এর শীর্ষ থেকে তোলা কোন এক মেঘময় বসন্তে
- সর্বোচ্চ প্লাটফর্ম থেকে
- নিচ থেকে তোলা আইফেল টাওয়ার।
- ২০০৫ সালের গ্রীষ্মে আইফেল টাওয়ার: যখন ফ্রান্স ২০১২ সালের অলিম্পিকের জন্য বিডিং করছিল
- ফ্রান্সের জাতীয় উৎসবের দিনে আইফেল টাওয়ার।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের পর আইফেল টাওয়ার তোলা ছবি, জুন ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- স্যাটেলাইট থেকে আইফেল টাওয়ারের দৃশ্য (গুগল ম্যাপ)
- আইফেল টাওয়ার সংলগ্ন রাস্তার মানচিত্র ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে (গ্লোবাল গাইড )
- আইফেল টাওয়ারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (ফরাসি)
- আইফেল টাওয়ারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (ইংরেজি)
- ৩৬০° আইফেল টাওয়ারের নিচের দৃশ্য
- যন্ত্রকৌশল সাময়িকি:আইফেল টাওয়ারের নির্মাণ
- Reconstructing the Eiffel Tower in CATIA ,3DXML file to download and CG Images
- 3D render of the Eiffel Tower for use in Google Earth ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে
- আইফেল টাওয়ারের প্রথম ট্রান্সমিটার
- আইফেল টাওয়ার:একটি ফরাসি সৌন্দর্যের প্রতীক - slideshow by Life magazine
- আইফেল টাওয়ার থেকে গোধূলি লগ্নে প্যারিসের ছবি - 360º panorama
- Gigapixel of the tower, Photography by Guillaume Roumestan