আদ্যনক্ষত্র

আদ্যনক্ষত্র, প্রাথমিক নক্ষত্র বা ইংরেজি পরিভাষায় প্রোটোস্টার হলো নক্ষত্র গঠনের একটি আদি দশা। মহাকর্ষীয় পতনের কারণে, আণবিক মেঘসমূহ ক্রমান্বয়ে জড়ো হয়ে গ্যাসপিণ্ডের আকার নিতে শুরু করার পর থেকে থেকে গ্যাসের জড়ো হওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই দশা চলতে থাকে। এসময় এটিকে প্রাক-প্রধান ধারা তারা বলে। মহাকর্ষের আকর্ষণে যতই সবকিছু কেন্দ্রের দিকে জমা হতে শুরু করে, এর ঘনত্ব, চাপ ও তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং একসময় এর কেন্দ্রে কার্যকরীভাবে হাইড্রোজেনের সংযোজন (ফিউশন) বিক্রিয়া শুরু হয় ও সেখান থেকে শক্তি বের হতে শুরু করে, অর্থাৎ একটি প্রধান-ধারা তারার জন্ম হয়। সূর্যের মত নক্ষত্রের ক্ষেত্রে এই দশাটি প্রায় ৫,০০,০০০ বছর চলতে থাকে।[১] তারার বিবর্তনের সবচেয়ে প্রথম দিকের একটি দশা হলো এই আদ্যনক্ষত্র।[২] তবে, যদি আদ্যনক্ষত্রে যথেষ্ট ভর না থাকে তাহলে সেটি ফিউশন বিক্রিয়া শুরু করার মত যথেষ্ট তাপমাত্রায় পৌছাতে পারে না। ফলে, এটি গ্যাসের পিন্ড হিসেবেই থাকে যায়।

শিল্পীর কল্পনায় আদ্যনক্ষত্র

বিবর্তন

উইচ হেড নীহারিকায় উৎপন্ন হচ্ছে নতুন তারা। ছবিটি নাসার স্পিটজার টেলিস্কোপ থেকে অবলোহিত আলোয় তোলা।
HOPS 383; একটি নতুন আদ্যনক্ষত্র

নীহারিকায়, অর্থার যেখানে নক্ষত্রের জন্ম হয়, বেশিরভাগ হাইড্রোজেনই আণবিক (H2) আকারে থাকে।[৩] তাই এই নীহারিকাগুলিকে আণবিক মেঘ বলা হয়। এই মেঘ স্থিতিশীল থাকে যতক্ষণ চাপ ও মহাকর্ষ বল সাম্যাবস্থায় থাকে। যদি এই মেঘ যথেষ্ট বড় হয় তাহলে, চাপের বিপরীতে মহাকর্ষ বল আর স্থিতিশীল থাকতে পারে না। ফলে, মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এরা ধীরে ধীরে জমাট বাঁধতে থাকে ও ঘূরতে শুরু করে। কিছুক্ষেত্রে (ট্রিগার্ড স্টার ফর্মেশন), সুপারনোভা বিস্ফোরণের শক ওয়েভ বা নীহারিকার তীব্র মহাকর্ষ সম্পন্ন স্থান অতিক্রম (যেমন: সর্পিল ছায়াপথের সর্পিল বাহু) মহাকর্ষীয় পতনের শুরু করে।[৪] কেন্দ্রের দিকে জমা হওয়া এই গ্যাস প্রথমে একটি নিম্ন ভরযুক্ত আদ্যনক্ষত্র তৈরী করে। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পরমাণুসমূহ যতই কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয় ততই কেন্দ্রের নিকটবর্তী অংশের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা উভয়ই অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।

কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণশীলতার সূত্র অনুযায়ী, আকার ছোট হলে বস্তুর ঘূর্ণন বৃদ্ধি পায়। ফলে, আদ্যনক্ষত্র যতই ছোট হতে থাকে, ততই এর ঘূর্ণন বৃদ্ধি পায়। এমতাবস্থায়, বস্তুর জন্য আদ্যনক্ষত্রের বিষুবরেখা বরাবর প্রবেশ করার চেয়ে থেকে মেরু বরাবর প্রবেশ করা সহজ হয়। ফলে, বিষুবরেখা বরাবর একটি ডিস্কের সৃষ্টি হয়। এই ডিস্কই পরবর্তীতে গ্রহের জন্ম দেয়।

যেহেতু,আদ্যনক্ষত্রগুলি ঘূর্ণায়মান তাই এটি একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপন্ন করে যা বহির্মুখী গ্যাসের প্রবাহ সৃষ্টি করে। অনেক আদ্যনক্ষত্র উচ্চ গতিসম্পন্ন গ্যাসের জেট ও উৎপন্ন করে। এই জেট আদ্যনক্ষত্রের আশেপাশের অতিরিক্ত গ্যাসকে সরিয়ে দেয় এবং আদ্যনক্ষত্রকে দৃষ্টিগোচর করে।

নাসার স্পিটজার টেলিস্কোপ থেকে অবলোহিত আলোয় ধারণকৃত ৬০০ আলোক বর্ষ দূরে BRH 71 নামক মহাজাগতিক মেঘের ছবি। এখানে শক্তিশালী জেট ধূলি মেঘগুলিকে ধ্বংস করছে।
HH 46/47 এর আণবিক নিঃসরণ
CARMA-7 আদ্যনক্ষত্রের শক্তিশালী গ্যাসের জেট

সাধারণ তারায়, নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন হলেও, আদ্যনক্ষত্রের ক্ষেত্রে এর মাঝে পতনশীল গ্যাসের সংঘর্ষের কারণে শক্তি উৎপন্ন হয় যা আবার পতনশীল গ্যাস কর্তৃক শোষিত হয়ে অবলোহিত বিকিরণ হিসেবে নির্গত হয়। ফলে, ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ এদের দেখতে পারে। এসময় একটি আদ্যনক্ষত্রের তাপমাত্রা ২০০০ থেকে ৩০০০ কেলভিন পর্যন্ত হতে পারে। সংকোচনের ফলে এর তাপমাত্রা আরো বাড়তে থাকে। এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা থাকে সাধারণ নক্ষত্রের চেয়ে কম। তখনো এর কেন্দ্রে হাইড্রোজেন-১ এর নিজের সাথে ফিউশন শুরু হয় না। তত্ত্বানুযায়ী, এসময় ডিউটেরিয়াম হাইড্রোজেন-১ এর সাথে ফিউশন বিক্রিয়া করে হিলিয়াম-৩ উৎপন্ন করে। এই বিক্রিয়ার ফলে যে তাপ সৃষ্টি হয় তা একে স্ফীত করার প্রবণতা দেখায় এবং সবচেয়ে নতুন পর্যবেক্ষিত প্রাক-প্রধান ধারার তারা সমূহের আকার নির্ণয়ে সাহায্য করে।[৫]

যখন এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা ১০ মিলিয়ন কেলভিন হয়ে যায় (কার্যকরী ভাবে হাইড্রোজেনেনের ফিউশনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা) তখন আদ্যনক্ষত্রটি প্রধান ধারার তারায় পরিণত হয়।[৬]

সূর্যের মত নক্ষত্রের ক্ষেত্রে এই দশাটি প্রায় ৫,০০,০০০ বছর চলতে থাকে। খুব বেশি ভরসম্পন্ন তারার ক্ষেত্রে যা চলে কয়েক মিলিয়ন বছর। ছোট ছোট নক্ষত্রের ক্ষেত্রে ইহা কয়েকশ মিলিন বছরও চলতে পারে।[৬]

যদি কোনো আদ্যনক্ষত্রের ভর ০.০৮ সৌর ভরেরও কম হয় তাহলে তা কখনওই ১০ মিলিয়ন কেলভিন তাপমাত্রায় পৌছাতে পারে না। তখন তা একটি বাদামি বামন হিসেবে থাকে যায়।[৬]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ