আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ () হল ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলবঙ্গোপসাগরআন্দামান সাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জ ৫৭২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যেগুলির মধ্যে মাত্র ৩৮টি জনবসতিপূর্ণ।[৫] অঞ্চলটি ইন্দোনেশিয়ার আচেহ থেকে ১৫০ কিমি (৯৩ মা) উত্তরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ আন্দামান সাগর দ্বারা থাইল্যান্ডমায়ানমারের থেকে বিচ্ছিন্ন। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি দু'টি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। এগুলি হল: আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ (অংশত) ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। ১৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত তিন ডিগ্রি চ্যানেল (১০° উত্তর অক্ষরেখার সঙ্গে সমান্তরাল) এই দুই দ্বীপপুঞ্জকে পৃথক করেছে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ এই অক্ষরেখার উত্তরে এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দক্ষিণে (বা ১৭৯ কিলোমিটার দক্ষিণে) অবস্থিত। আন্দামান সাগর উভয় দ্বীপপুঞ্জেরই পূর্ব দিকে এবং বঙ্গোপসাগর পশ্চিম দিকে অবস্থিত।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
(উপরে থেকে ঘড়ির কাঁটার ক্রমে) ব্যারেন দ্বীপ, রস ও স্মিথ দ্বীপের সমুদ্রতীর; আন্দামান দ্বীপে সূর্যাস্ত; আন্দামানের জলের ডোবা
ভারতের মানচিত্ৰে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান
ভারতের মানচিত্ৰে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান
স্থানাঙ্ক (পোর্ট ব্লেয়ার): ১১°৪১′ উত্তর ৯২°৪৬′ পূর্ব / ১১.৬৮° উত্তর ৯২.৭৭° পূর্ব / 11.68; 92.77
দেশ ভারত
স্থাপন১ নভেম্বর ১৯৫৬
রাজধানী এবং বৃহত্তম শহরপোর্ট ব্লেয়ার
জেলা
সরকার
 • লেফটেন্যান্ট গভর্নরনৌসেনাপতি (অবসরপ্রাপ্ত) দেবেন্দ্র কুমার যোশী
 • প্রধান সচিবচেতন ভূষণ সংঘী, আইএএস
 • লোকসভা কেন্দ্র
আয়তন[১]
 • মোট৮,২৫০ বর্গকিমি (৩,১৯০ বর্গমাইল)
এলাকার ক্রম২৮তম
জনসংখ্যা (২০১২)[২]
 • মোট৩,৮০,৫২০
 • জনঘনত্ব৪৬/বর্গকিমি (১২০/বর্গমাইল)
ভাষা[৩]
 • সরকারীহিন্দি, ইংরেজি[৩]
 • মৌখিক ভাষাবাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, তেলুগু, তামিল, নিকোবরি, মালয়ালম, কুরুখ, মুন্ডা, খারিয়া[৪]
সময় অঞ্চলIST (ইউটিসি+05:30)
আইএসও ৩১৬৬ কোডIN-AN
এইচ ডি আই (২০১৮)বৃদ্ধি0.739 (উচ্চ) •৬ষ্ঠ
ওয়েবসাইটwww.andaman.gov.in
প্রতীকসমূহ of আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
Emblemআন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রতীক
Mottoসত্যমেব জয়তে
(সত্যেরই জয় হয়)
Mammalডুগং
Birdআন্দামান বনকপোত
Flowerজারুল
Tree
আন্দামান পাদাউক
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ

এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার। সমগ্র আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের স্থলভাগের আয়তন প্রায় ৮,২৪৯ কিমি (৩,১৮৫ মা)। অঞ্চলটি তিনটি জেলায় বিভক্ত: নিকোবর জেলা (সদর কার নিকোবর), দক্ষিণ আন্দামান জেলা (সদর পোর্ট ব্লেয়ার) ও উত্তর ও মধ্য আন্দামান জেলা (সদর মায়াবন্দর)।

ভারতীয় সামরিক বাহিনীর একমাত্র ত্রি-পরিষেবামূলক ভৌগোলিক কম্যান্ড আন্দামান ও নিকোবর কম্যান্ডের ঘাঁটি এই দ্বীপপুঞ্জ।[৬]

২০০১ সালের ভারতের জনগণনা অনুসারে, এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫৬,১৫২। এই অঞ্চলের স্থলভাগের সামগ্রিক আয়তন ৬,৪৯৬ বর্গকিলোমিটার। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি কলকাতা হাইকোর্টের অধিকারক্ষেত্রের অন্তর্গত।

ব্যারেন দ্বীপ

আন্দামান নিকোবরের ব্যারেন দ্বীপ হল দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি[৭][৮][৯][১০]

সেন্টিনেলি নামে একটি বিচ্ছিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বাস করে। এই জনগোষ্ঠীই সম্ভবত একমাত্র জনগোষ্ঠী যারা প্রাচীন প্রস্তরযুগীয় স্তরের প্রযুক্তির পরবর্তী কোনও স্তরে উন্নীত হতে পারেনি।[১১] যদিও এই মতটি বিতর্কিত। কারণ তাদের দ্বীপে ধাতব শিল্পকর্মের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।[১২]

ভাষাসমূহ

২০১১ অনুযায়ী আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ভাষাসমূহ [১৩].[১৪]

  বাংলা (২৮.৪৯%)
  তামিল (১৫.২০%)
  হিন্দি (১৩.৪৭%)
  তেলুগু (১৩.২৪%)
  নিকোবরী (৭.৬০%)
  মালয়ালম (৭.২২%)
  নাগপুরি-সাদরি (৫.৫৩%)
  কুরুখ/ওরাওঁ (৩.৯৬%)
  মুন্ডারি (১.২২%)
  খারিয়া (১.০৭%)
  অন্যান্য (৩.০০%)

বাংলা ভাষাই হলো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ–এর সর্বাধিক ব্যবহৃত কথ্য ভাষা। প্রায় এক তৃতীয়াংশ (২৮.৪৯%) অধিবাসী এই ভাষায় কথা বলে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলা থেকে যে বিপুলসংখ্যক বিপ্লবীদের এই দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয় তথা সেলুলার জেলে কারাবন্দী করা হয়, তাদের অনেকেই স্থায়ী ভাবে এখানে রয়ে যান। সেকারণেই এই দ্বীপে বাঙালির সংখ্যা বেশি।

ইতিহাস

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। ১৭৭৭ সালে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে একটি নৃতাত্ত্বিক সমীক্ষা চালিয়েছিল। এই সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, বহিরাগতদের আগমনের আগে কয়েক শতাব্দীকাল এই দুই দ্বীপপুঞ্জ নেগ্রিটো ও মঙ্গোলয়েড জাতিগোষ্ঠীর অধিকারে ছিল।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাসকে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়: ব্রিটিশ অধিকার প্রতিষ্ঠা, ব্রিটিশ রাজত্ব, জাপানি রাজত্ব ও স্বাধীনোত্তর যুগের ইতিহাস। ১৭৮৮ সালে দুই নৌ-আধিকারিকের সুপারিশক্রমে ১৭৮৯ সালে তদনীন্তন গভর্নর-জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ পোর্ট কর্নওয়ালিশের কাছে চাটহাম দ্বীপে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপন করেন। এই বছরই লেফটানেন্ট রেজিনল্ড ব্লেয়ার এই অঞ্চলে একটি সমীক্ষার কাজ চালান। তার নামানুসারে পোর্ট কর্নওয়ালিশের নাম হয় পোর্ট ব্লেয়ার।

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার এখানে একটি বন্দীনিবাস স্থাপনের পরিকল্পনা করে। ১৮৫৮ সালে ভাইপার দ্বীপে তৈরি হয় একটি কারাগার, একটি গ্যালো ও একটি জনবসতি। ২০০ জন বন্দীকে এই কারাগারে এনে রাখা হয়। এঁদের অধিকাংশই ছিলেন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিদ্রোহী সৈনিক। ১৯০৬ সালে পোর্ট ব্লেয়ারে সেলুলার জেল তৈরি হলে আগের কারাগারটি পরিত্যক্ত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চলাকালে ১৯৪২ সালের ২১ মার্চ জাপানিরা আন্দামান দখল করে নেয়। জাপানি সেনাবাহিনীর হাতে এই অঞ্চলের বহু নিরপরাধ মানুষও নিহত হন। পরে জাপানিরা এই দ্বীপপুঞ্জ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে তুলে দেয়। ১৯৪৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর সুভাষচন্দ্র পোর্ট ব্লেয়ারে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চল ব্রিটিশদের অধিকারমুক্ত ছিল। এই সময় আন্দামান খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে। ১৯৪৫ সালের ৮ অক্টোবর জাপানি সেনাবাহিনীর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া কম্যান্ড পোর্ট ব্লেয়ারে আত্মসমর্পণ করলে ব্রিটিশরা এই দ্বীপপুঞ্জের অধিকার আবার ফিরে পায়।

১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ একত্রে স্বাধীন ভারতের অঙ্গীভূত হয়।

পাদটীকা

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ