আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্র

আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্র (দারি: جمهوری افغانستان‎, Jǝmhūri Afġānistān; পশতু: د افغانستان جمهوریت, Dǝ Afġānistān Jumhūriyat) প্রথম আফগান প্রজাতন্ত্র ছিল। ১৯৭৩ সালে মুহাম্মদ দাউদ খান রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের বাদশাহ মুহাম্মদ জহির শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এই প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। দাউদ খান প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আফগানিস্তানকে আধুনিক করতে চেয়েছিলেন।[১]

আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্র

  • جمهوری افغانستان
  • Jomhūrī-ye Afġānestān
  • د افغانستان جمهوریت
  • Dǝ Afġānistān Jumhūriyat
১৯৭৩–১৯৭৮
আফগানিস্তানের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় সঙ্গীত: মিল্লি সুরুদ
ملی سرود
আফগান জাতীয় সঙ্গীত
আফগানিস্তানের অবস্থান
রাজধানীকাবুল
প্রচলিত ভাষাপশতু
ফার্সি
ধর্ম
ইসলাম (সুন্নি)
সরকারএকদলীয় রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র
• ১৯৭৩–১৯৭৮
মুহাম্মদ দাউদ খান
আইন-সভালয়া জিরগা
ঐতিহাসিক যুগস্নায়ু যুদ্ধ
১৭ জুলাই ১৯৭৩
৩০ এপ্রিল ১৯৭৮
আয়তন
১৯৭৮৬,৪৭,৫০০ বর্গকিলোমিটার (২,৫০,০০০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা
• ১৯৭৮
13199600
মুদ্রাআফগানি
আইএসও ৩১৬৬ কোডAF
পূর্বসূরী
আফগানিস্তান রাজতন্ত্র

১৯৭৮ সালে কমিউনিস্টদের প্ররোচনায় সাওর বিপ্লব সংঘটিত হয়। দাউদ খান ও তার পরিবারের সদস্যরা এতে নিহত হন। এর ফলে রাজতন্ত্র পরবর্তী প্রজাতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে সোভিয়েতপন্থি আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।[২]

ইতিহাস

প্রতিষ্ঠা

১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে মুহাম্মদ জহির শাহ চিকিৎসার জন্য ইতালি যান। এসময় তার চাচাত ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ দাউদ খান অভ্যুত্থান সংঘটিত করে প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এক দশক পূর্বে দাউদ খান প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।[৩] অভ্যুত্থানের এক মাস পর গৃহযুদ্ধের ঝুকি না নিয়ে বাদশাহ সিংহাসন ত্যাগ করেন।[৩]

রাজনৈতিক সংস্কার

একই বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ হাশিম মাইওয়ান্দওয়াল অভ্যুত্থান পরিকল্পনার জন্য অভিযুক্ত হন। তবে এই পরিকল্পনা নতুন প্রজাতান্ত্রিক সরকার নাকি বিলুপ্ত রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। মাইওয়ান্দওয়াল গ্রেপ্তার হন। বিচার শুরু হওয়ার পূর্বে তিনি কারাগারে আত্মহত্যা করেছেন এমন বলা হয়ে থাকে, তবে তিনি নির্যাতনের কারণে মারা যান এমন বিশ্বাস প্রচলিত।[২]

ক্ষমতাদখলের পর রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ দাউদ খান নিজের রাজনৈতিক দল হিসেবে ন্যাশনাল রেভলুশনারি পার্টি গঠন করেন। এই দল রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র কেন্দ্র হয়ে উঠে। ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে লয়া জিরগা রাষ্ট্রপতিশাসিত একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে একটি নতুন সংবিধান অণুমোদন দেয়। রাজনৈতিক বিরোধীদের উপর এসময় নির্যাতন চালানো হয়।[২]

কমিউনিজমের উত্থান

দাউদের শাসনামলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আফগানিস্তানের সম্পর্ক অবনতি হয়। তিনি পাশ্চাত্যের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন যা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য হয়। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে কিউবার সদস্যপদের বিরোধিতা এবং দেশ থেকে সোভিয়েত সামরিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের বের করে দেয়ার ঘটনা এক্ষেত্রে প্রভাব রাখে। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের ফলে সোভিয়েত সমর্থনপুষ্ট এবং ১৯৭৩ সালের অভ্যুত্থানের সময় তার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি তার বিপক্ষে চলে যায়।[২]

১৯৭৬ সালে তিনি সাত বছরে মেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হাতে নেন। তিনি ভারতের সাথে সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেন এবং ইরানের সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য অন্যান্যদের পাশাপাশি তিনি মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ রাষ্ট্র যেমন সৌদি আরব, ইরাককুয়েতের দিকে তার মনোযোগ প্রদান করেছিলেন।[২]

তবে দাউদ খান তার লক্ষ্য বেশি অর্জন করতে পারেননি। আফগানিস্তানের অর্থনীতি এবং আফগানদের জীবন মানের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এছাড়াও ১৯৭৭ সালে প্রণীত একদলীয় সংবিধানের কারণে তিনি সমালোচিত হন। এর ফলে তিনি তার রাজনৈতিক সমর্থকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। পূর্বে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব্বে নিয়োজিত পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান দুইটি অংশ এই সময় নাগাদ সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেয়। সেনা কর্মকর্তারাও এসময় সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছিল। হাফিজউল্লাহ আমিনের মতে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি অভ্যুত্থান সংঘটনের দুই বছর পূর্বে ১৯৭৬ সাল থেকে পরিকল্পনা শুরু করে।[২]

সাওর বিপ্লব

সাওর বিপ্লবের পরের দিন কাবুলের দৃশ্য।

১৯৭৮ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতা দখল করে। এই বিপ্লব সাওর বিপ্লব নামে পরিচিত।[৪] ২৭ এপ্রিল কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামরিক ঘাঁটি থেকে সেনারা রাজধানীর কেন্দ্রের দিকে গমন করে। ক্ষমতা সংহত করতে ২৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে বিমান অভিযান চালানো হয় এবং সৈনিকরা দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়। পরের দিন দাউদ ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়।[৫]

পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব নূর মুহাম্মদ তারাকি বিপ্লবী কাউন্সিলের প্রেসিডিয়ামের চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয় এবং তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দাউদের উত্তরসুরি হন। একই সাথে তিনি নবগঠিত আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সরকার প্রধানও হন।[৫]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ