উপনিবেশ স্থাপন

উপনিবেশ স্থাপন বা উপনিবেশায়ন হচ্ছে একটি কেন্দ্রিভূত ক্ষমতা প্রক্রিয়া যা আশেপাশের অঞ্চল ও সেগুলি সম্পর্কিত উপাদানগুলির উপর নিজের কর্তৃত্ত স্থাপন করে। উপনিবেশ স্থাপন নির্দিষ্টভাবে দেশান্তর গমনকে উল্লেখ করে; উদাহরণ স্বরূপ অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকায় অন্য জায়গা থেকে গিয়ে বসতি স্থাপনকারীদের কথা বলা যায়, ব্যবসা কেন্দ্র এবং আবাদকে বোঝানো হয়; কিন্তু উপনিবেশবাদ শুধুমাত্র অধিকৃত অঞ্চলের বসবাসকারী আদিবাসী জনগণ সম্বন্ধীয় বিষয়কেই বোঝানো হয়। উপনিবেশ স্থাপনের বিষয়টি পশ্চিম ইউরোপ থেকে কয়েক লক্ষ মানুষের সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে যুক্ত। এইরকম অনেক উপনিবেশে পশ্চিম ইউরোপ থেকে যাওয়া ঔপনিবেশিকরা সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে ওঠে সেখানকার আদিবাসী জনগণকে হয় মেরে নাহলে তাড়িয়ে। উদাহরণস্বরূপ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এর মতো উপনিবেশগুলির কথা বলা যায়। কদাচিৎ এই উপনিবেশগুলিকে "নব্য-ইউরোপ"ও বলা হত। অন্যান্য জায়গাগুলিতে পশ্চিম ইউরোপীয়রা সংখ্যালঘু দলে থাকত এবং তাদের উপনিবেশে স্থানীয় বসবাসকারী মানুষদের উন্নততর অস্ত্রের দ্বারা দমিয়ে রাখত। [১]

যখন ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং অন্যান্য ছোট ছোট দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন আরম্ভ করল, তারা সেই অঞ্চলগুলোকে টেরা নুলিয়াস যা ল্যাটিন ভাষায় "খালি ভূমি" বোঝায়, বলে প্রায়শই উল্লেখ করত। [২] সেখানে ইউরোপীয় চাষাবাদ পদ্ধতি প্রচলিত না থাকায় ওই অঞ্চলগুলিকে সেখানকার আদিবাসী জনজাতি থাকা সত্ত্বেও ধরে নেওয়া হত অবিকৃত ও বসতিহীন। ১৯শ শতাব্দিতে,মেক্সিকোর জেনারেল কলোনাইজেশান ল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানিফেস্ট ডেস্টিনি ইত্যাদি বিভিন্ন ধারণা ও আইন আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনে আবারও উৎসাহিত করে যা ১৫শ শতাব্দিতেই শুরু হয়েছিল।

শব্দ বিজ্ঞান

কলোনাইজেশান শব্দটি ল্যাটিন শব্দ কোলিয়ার ("চাষ করা, কর্ষণ করা"[৩]), কলোনিয়া ("ভূসম্পত্তি", "খামার"), কলোনাস ("কর্ষণকারী", "কৃষক")[৪],ইত্যাদি শব্দ থেকে উদ্ভূত যা পরে সম্প্রসারিত হয় "বসবাস করা" অর্থে।[৫] যে ব্যক্তি উপনিবেশ স্থাপনের সঙ্গে যুক্ত অর্থাৎ যে স্থাপন করছে, তাকে বলা হয় কলোনাইজার, আর যে ব্যক্তি ঔপনিবেশিত হচ্ছে অর্থাৎ উপনিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, তাকে বলা হয় কলোনাইজি,[৬] বাকলোনাইজড.</ref> Freeman, Luke. "Lesley A. Sharp. The Sacrificed Generation: Youth, History, and the Colonized Mind in Madagascar. Berkeley: University of California Press, 2002. xvii+ 377 pp. Photographs. Maps. Appendixes. Glossary. Notes. Bibliography. Index. $65.00. Cloth. $27.50. Paper." African Studies Review 46.2 (2003): 106-108.

ঐতিহাসিক উপনিবেশ স্থাপন

সর্বোত্তম সময়

প্রাচীনকালে সমুদ্র উপকূলবর্তী জনজাতিরা, যেমন গ্রিস বা ফিনিশিয়ার মতো নগর-রাষ্ট্রগুলি প্রায়শই যে জায়গাগুলিকে তারা বসতিহীণ বলে মনে করত সেখানে চাষাবাদের জন্য উপনিবেশ স্থাপন করত। যে জায়গাগুলি চাষাবাদযোগ্য ছিল সেগুলি আবার 'গ্রীক নয় এমন যাযাবর উপজাতিরা, যারা সাধারণত শিকারী এবং সংগ্রাহক ছিল, তারা দখল করে থাকত। গ্রীক ও ফিনিশীয়রা ধরে নিত এই জায়গাগুলি বসতহীন। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যাইহোক, ঔপনিবেশিক ও স্থানীয়দের মধ্যে দ্বন্দ্বও হত। গ্রীক ও ফিনিশীয়রা বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রসার ও নিয়ন্ত্রণের অভিপ্রায়ে সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্যে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।

প্রাচীনকালে আর একটি উপনিবেশ স্থাপন শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের সময়ে। রোমান সাম্রাজ্য পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকাপশ্চিম এশিয়ার বৃহৎ অংশ জয় করে নেয়। উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার সেই অঞ্চলগুলি তারা জয় করে যেখানে,তাদের মতে, সভ্য মানুষেরা বাস করত। যত তারা ইউরোপের ঊত্তরাংশে রাজত্ব বিস্তার করতে লাগল, সেখানে তারা গ্রামীণ জনজাতি ও উপজাতিদের পেল যারা নগর সভ্যতাতে খুবই কম অগ্রসর হতে পেরেছে। এইসব জায়গাগুলিতে রোমান উপনিবেশ স্থাপন পরবর্তীতে রোমান সাম্রাজ্যভুক্তিতে পর্যবসিত হয়েছে। ইদানিং কালের ইউরোপের বহু শহরের পত্তন হয় রোমান কলোনি হিসাবে; যেমন জার্মানির কোলন, রোমানরা যাকে বলতকোলোনিয়া ক্লডিয়া আরা অ্যাগ্রিপিনেনসিয়াম, এবং ব্রিটিশ রাজধানী লন্ডন, যাকে রোমানরা লন্ডিনিয়াম নামে স্থাপন করেছিল।

মধ্যযুগ

বিশ্ব সাম্রাজ্য ও উপনিবেশ ১৫৫০
বিশ্ব সাম্রাজ্য ও উপনিবেশ ১৮০০

পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ায় ব্যাপক মাত্রায় মানুষের চলে যাওয়া রোমান সাম্রাজ্যের পতনের আংশিক কারণ। এটি শুরু হয়েছিল বিশেষত এশিয়ার ঘোড়সওয়ার যাযাবর জাতিদের হুন জাতির) পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত সমৃদ্ধ চারণভূমি দখল করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে আরও পশ্চিমে ক্রমশ ঠেলে দেওয়া যার ফলে জার্মান গথেরা বাধ্য হয় রোমান সাম্রাজ্যে ঢুকতে বাধ্য হয় এবং রোমানদের সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত থাকে এবং যা পরবর্তীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ হয়। এই সময়ে এক ব্যাপক দেশান্তর গমন ঘটে এবং সারা পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে নতুন অনেক কলোনী গড়ে ওঠে। এই সময়ে এই রকম ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে ইউরোপের আধুনিক জাতিগুলি তৈরী হয়; যেমন ফ্রান্স ও জার্মানির ফ্রাঙ্ক জাতি বা ইংল্যান্ডের অ্যাংলো-স্যাক্সন জাতি।

পশ্চিম এশিয়ায় সাসানীয় সাম্রাজ্য কালীন সময়ে, ইয়েমেনওমানে কিছু পারসিক উপনিবেশ স্থাপন করে। আরবীয়রাও উত্তর আফ্রিকা, মেসোপটেমিয়া, ও লেভ্যান্ট ইত্যাদি জায়গায় উপনিবেশ স্থাপন করে, যারা আজ পর্যন্ত সেই সব দেশগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ।[৭][৮][৯][১০][১১]

স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ভাইকিংরাও বহুল পরিমাণে উপনিবেশের প্রসার করে। ভাইকিংরা মূলত হানাদার ছিল, যারা তাদের স্বদেশ ডেনমার্ক, দক্ষিণ নরওয়ে ও দক্ষিণ সুইডেন বেরিয়ে উত্তর ইউরোপের উপকূলীয় তটরেখা বরাবর লুঠতরাজ চালাত। সময়ের সঙ্গে, এই ভাইকিংরাও বাণিজ্য ও উপ্বনিবেশ বসতি স্থাপন শুরু করে। ভাইকিংরা গ্রিনল্যান্ডে স্বল্প সময়ের জন্য উপনিবেশ স্থাপন করে কিন্তু সেখানে জাওয়ার আগে তারা আইসল্যান্ড আবিষ্কার করে। অধুনা কানাডার পূর্ব তটবর্তী অঞ্চল, ল্যান্স ও মেডস, নিউফাউন্ডল্যান্ড ও লাব্রাডর ইত্যাদি অঞ্চলে, ভাইকিংরা উপনিবেশ স্থাপনের চেষ্টা করেছিল, যাকে তারা ভিনল্যান্ড নামে অভিহিত করত, তা সফল হয় নি।

ঔপনিবেশবাদের নব্য "ঔপনিবেশ যুগ"

"উপনিবেশবাদ" বলতে সাধারণত পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলিতে উপনিবেশ স্থাপনের বিষয়টিকেই বোঝায়। স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, কিংডম অফ ইংল্যান্ড (যা পরবর্তীতে গ্রেট ব্রিটেন), নেদারল্যান্ডস, কিংডম অফ প্রুশিয়া (অধুনা জার্মানি) ইত্যাদি ইউরোপীয় দেশগুলি এবং ১৮শ শতকের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এই ধরনের উপনিবেশ স্থাপনের প্রচলন করেছিল। এই সব দেশগুলি মোটামুটি ১৫০০ শতক থেকে ১৮০০ শতক অবধি বিভিন্ন পর্যায়ে বিশ্ব বাণিজ্যে মহা শক্তিধর হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে। ১৯ শতকের শুরুতে জাপান সাম্রাজ্য হোক্কাইদোকোরিয়াতে উপনিবেশ স্থাপন করে।

কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী তিব্বতে চীনের কার্যকলাপ ঔপনিবেশিক ধরনের।[১২][১৩]

যখন বেশিরভাগ ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক পরিকল্পনা ছিল স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক শোষণের ওপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা ( উদাহরণ স্বরূপ নিউফাউন্ডল্যান্ড, সাইবেরিয়া) অথবা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধন করা (ম্যাসাচুসেট্‌স বা নিউ সাউথ ওয়েল্স); তখন একটা দীর্ঘ মেয়াদি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা যা উভয় তরফকেই লাভবান করে, বিশেষত উপনিবেশ স্থাপনকারী দেশ সেক্ষেত্রে বেশি লাভবান হবে, প্রবণতাও ছিল, যা গড়ে উঠেছিল বিস্তারিত তত্ত্বের ওপর (বিঃদ্রঃ জেমস ওগলেথর্পের ১৭৩০ এর দশকে লেখা কলোনি অফ জর্জিয়া এবং এডওয়ার্ড গিবন ওয়েকফিল্ডের ১৮৪০ এর দশকে লেখা নিউজিল্যান্ড ).[১৪]

আধুনিক উপনিবেশ স্থাপন

বিশ্ব সাম্রাজ্য ও কলোনি ১৯৩৬

উপনিবেশ স্থাপনের ধারণাটি সেই প্রক্রিয়াটিকে নির্দেশ করে, যেখানে সাম্রাজ্যবাদী দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে অপর দেশের মানুষের সংস্কৃতিকে অভিজোজন ও অঙ্গীভূত করা হয় এবং সেই দেশের অবশিষ্ট সংস্কৃতি, যা পরবর্তীতে ভীতির কারণ হওয়ার সম্ভাবনার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিনষ্ট করা হয়।

রাশিয়া

রুশ সাম্রাজ্য কালীন সময়ে, রুশীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে রাশিয়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিজিত মানুষদের ওপর রুশী ভাষা ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়। রুশ সাম্রাজ্যের লক্ষ্য ছিল এইভাবে বিদেশী সংস্কৃতি মুছে দিয়ে ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করা। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]. তার এলাকার মধ্যে বিদেশী ভাষার ব্যবহার ও বিদেশী ধর্মাচরণ নিষিদ্ধ ছিল।

১৯২০ এর দশকে সোভিয়েত সরকার অ-রুশীয়দের জাতিগত সংস্কৃতিকে উৎসাহ দিয়ে অনেকগুলি বিশেষত্ব যুক্ত শাসনতান্ত্রিক জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করে। [১৫] অথচ যেসব অ-রুশীয় জনজাতি নিজেরাই রুশী সংস্কৃতির অঙ্গীভূত হতে চাইত, প্রাচীন সোভিয়েত সাম্রাজ্য তাদের প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন হয়ে রুশীয় জনজাতির অঙ্গীভূত হওয়াতে বাধা দিত। [১৬] যে সব অভিবাবক ও ছাত্রছাত্রী তাদের জাতীয় ভাষা প্রচারে উৎসাহ দেখাত না, তাদের "অস্বাভাবিক আচরণকারী"র তকমা দেওয়া হত। কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছিল, যেসব সংখ্যালঘু জাতি তাদের নিজস্ব জাতিসত্তা সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকবে, তাদের বেলারুশাইসেশান, ইদ্দিশাইসেশান, পোলোনাইসেশান করা হবে। [১৭]

১৯৩০ এর দশকের প্রথম ভাগে, এই বহুসংস্কৃতিক নীতি অকার্যকর বলে প্রমাণিত হল এবং রুশ সাম্রাজ্য রাজনৈতিক কারণে সীমিতভাবে রুশীকরণের নীতির প্রচলন করল;[১৮] এবং স্বেচ্ছাকৃত আত্তীকরণে, যা তখন খুবই জনপ্রিয় দাবী ছিল, অনুমতি দিল। [১৯] ছোটো জনজাতিগুলি যাতে বড় জনজাতির সাথে মিশে যায়, সেই ব্যাপারে উৎসাহ দেখানোর ফলে, ১৯২৭ খৃষ্টাব্দের ১৭২ টি জাতির পরিবর্তে ১৯৩৯ খৃষ্টাব্দে ৯৮ টি জাতিতে কমে এল। [২০] উদাহরণস্বরূপ, আবখাজিয়া জর্জিয়ার সাথে মিশে যায় এবং হাজার হাজার স্থানীয় জর্জিয়াবাসীকে আবখাজিয়াতে পাঠানো হয়। [২১] আবখাজ বর্ণমালা জর্জিয় ভিত্তিতে প্রতিস্থাপন করা হয়, আবখাজিয় স্কুলগুলি বন্ধ করে তার জায়গায় জর্জিয় স্কুল স্থাপন করা হয়, আবখাজ ভাষাকেও নিষিদ্ধ করা হয়।[২২] শাসক কর্তৃপক্ষ ছিল শুদ্ধিকৃত স্থানীয় আবখাজ এবং ১৯৫২ সালের মধ্যে আবখাজিয়ার ২২৮ টি শীর্ষ পার্টির ৮০% ও সরকারি আধিকারিক, বিভিন্ন উদ্যোগের ম্যানেজাররা জর্জিয় নিযুক্ত হল ( এইসব পদে শুধুমাত্র ৩৪ জন আবখাজ, ৭ জন রুশ ও ৩ জন আর্মেনীয় এইসব পদে থাকল)। [২৩]

রুশরা তখন সোভিয়েত ইউনিয়নে সব থেকে প্রগতিশীল ও নূন্যতম উগ্র জাতীয়তাবাদী হিসাবে উপস্থাপিত হল।[১৮]

রুশদের পাঠানো হল লাতভিয়াএস্তোনিয়া ইত্যাদি বিজিত অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য [তথ্যসূত্র প্রয়োজন], এবং সেখানকার স্থানীয় ভাষা, ধর্ম বা লোকাচার দাবিয়ে রাখা হল অথবা নিষিদ্ধ করা হল। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সোভিয়েত ইউনিয়ানে জনসমষ্টি স্থানান্তর নীতিটি দুটি কারণে ব্যবহার করা হয়েছিল; প্রথমত, সামরিক কৌশল হিসেবে, যা সোভিয়েতের সম্প্রসারণের বিরোধীকে নির্মূল করা; দ্বিতীয়ত, রুশীকরণ নীতির অঙ্গ হিসেবে, সংখ্যালঘুদের রুশী সংস্কৃতিতে মিলিয়ে নেওয়া অবং তা না সম্ভব হলে তাদের সাইবেরিয়ার মতো দূরতম অঞ্চলে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের মূলধারা থকে বিচ্ছিন্ন করা। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন], [তথ্যসূত্র প্রয়োজন],[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ইহুদি ওব্লাস্ট

জে.এ.ও. সরকারী সদর দপ্তরে স্বাক্ষর

১৯৩৪ সালে, সোভিয়েত সরকার, ইহুদি জনগণের আপন বাসস্থান সোভিয়েতের পূর্বপ্রান্তে স্থাপনের জন্য ইহুদি স্বায়ত্বশাষিত ওব্লাস্ট তৈরী করে। এটি তৈরী করার আরেকটি উদ্দেশ্য হল, সোভিয়েতের পূর্ব সীমান্তকে নিজের উপস্থিতির দ্বারা সুরক্ষিত করা। এই অঞ্চলে প্রায়শই চীনারা অনুপ্রবেশ করত; ১৯২৭ সালে, যখন চিয়াং-কাই-শেকের সঙ্গে চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির সহযোগিতা শেষ হয়ে গেল, এই অনুপ্রবেশ আরও বেশি হতে আরম্ভ করেছিল। ফ্যাসিবাদী জাপানও তখন পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলগুলিকে সোভিয়েত থকে বিচ্ছিন্ন করতে তৎপর হয়ে উঠেছিল।[২৪] এই অনুন্নত ও অনাকর্ষক এলাকাগুলিকে আকর্ষণীয় করার জন্য সরকার জমির ওপর ব্যক্তিগত মালিকানার নীতি চালু করেছিল। এরফলে বহু অ-ইহুদি মানুষ নিখরচায় খামার পাওয়ার আশায় ওব্লাস্টে বসবাস করতে আরম্ভ করল।[২৫]

১৯৩০ সালের মধ্যে, এক সর্বাত্মক প্রচার দ্বারা ইহুদিদের সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করা হল। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, সরকার দ্বারা নির্মিত ইদ্দিশ সিনেমা সিকারস অফ হ্যাপিনেসএ একটি ইহুদি পরিবারের গল্প বলা হয়েছে, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহা মন্দাকে উপেক্ষা করে নতুন জীবন পেরেছিল বিরোবিদঝ্যানে এসে। প্রায় ১২০০ জন অ-সোভিয়েত ইহুদি বিরোবিদঝ্যানে বসতি স্থাপন করেছিল। [২৬] ১৯৪৮ সালে ইহুদি জনসংখ্যা প্রায় ৩০,০০০ হয়েছিল, যা সেখানকার জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। ২০১০ সালের রাশিয়ার জনগণনা ব্যূরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানে ১৬২৮ জন ইহুদি বাস করে, যা সেখানকার জনসংখ্যার মাত্র ১%, আর রুশি জনসংখ্যা জে.এ.ও. র জনসংখ্যার ৯২.৭%। [২৭] জে.এ.ও. হল রাশিয়ার একমাত্র স্বায়ত্তশাষিত ওব্লাস্ট,[২৮] এবং ইসরায়েলকে বাদ দিয়ে, পৃথিবীর একমাত্র সরকারী মর্যাদাপ্রাপ্ত ইহুদি অধ্যুষিত অঞ্চল। [২৯]

চীন

ইন্দোনেশিয়া

দেশান্তরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইন্দোনেশীয় সরকার ঘন বসতিপূর্ণ জাভা থেকে, সীমিত পরিমাণে বালি এবং মাদুরা থেকে ভূমিহীন মানুষদের, অপেক্ষাকৃত কম বসতিপূর্ণ পাপুয়া, কালিমান্তান, সুমাত্রা, এবংসুলাওসি ইত্যাদি অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়।[৩০]

পাপুয়া নিউ গিনি

১৮৮৪ সালে ব্রিটেন, দক্ষিণ পূর্ব নিউ গিনির ওপরে প্রতিরক্ষামূলক আদেশ জারি করে যা পরবর্তী সময়ে, ১৮৮৮ সালে তাদের কলোনি বলে সরকারীভাবে ঘোষিত হয়।

এর দক্ষিণ অংশ জার্মানির কব্জাভূত হয়। জার্মানির এই দখলের পর সম্পূর্ণ অঞ্চলটির দক্ষিণভাগ "ব্রিটিশ নিউ গিনি" এবং উত্তরভাগ "পাপুয়া" নামে পরিচিত হয়। [৩১]

ফিলিপিন্স

বার বার পুনর্বাসনের কারণে প্রান্তিকীকরণের সমস্যার সৃষ্টি হয়, যার ফলে, ১৯৬৯ সালের মধ্যে নানা রাজনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হতে শুরু হয়, যা শেষে ফিলিপিন্স সরকার এবং মোরো মুসলিম মিন্ডানাওয়ের বিদ্রোহী দলগুলির মধ্যে খোলাখুলি শত্রুতা তৈরি হয়। [৩২]

মায়ানমার

প্রবাসী উপনিবেশ

চৈনিক অভিবাসন বা ব্রিটিশ অভিবাসন অথবা জার্মান অভিবাসনের মতো ব্যাপক বিদেশে অভিগমন পরবরতীকালে বিভিন্ন জায়গায় উপনিবেশ গড়ে ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে, দেশত্যাগী জনগোষ্ঠীর কাছে বিশেষ লক্ষ্যের দেশটি হয় "ধর্ম ও সংস্কৃতির" প্রসারের উদ্দেশ্যের মোড়কে স্থায়ী বাসস্থান। সাধারণত এই ধরনের দেশত্যাগ ও বিদেশে বসতি স্থাপন(বিশেষত এই ধরনের বসতি যেখানে সহজাতভাবে পুঞ্জীভূত রূপে গড়ে ওঠে নি) করা জনসমষ্টি নিজেদের দেশীয় সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর চেষ্টা না করে, আর্থিক উদ্দেশ্যে সেই দেশের সভ্যতা সংস্কৃতির সাথে বরং একীভূত হওয়ায় উৎসুক থাকে। স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ আর নির্বাসন সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় এবং ক্ষীণতম যোগাযোগ বিষয় দুটির মধ্যে। কোনো বড় যুদ্ধ বা রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বা উপনিবেশের কারণে অভিবাসন বা জনসমষ্টির উৎপাটন থেকে অনেক বেশি নির্বাসন প্রায়শই ঘটে, যেখানে মানুষ নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নেয়।

বিষয় মানুষ

বহু ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিকরা দাসের জন্য উপনিবেশগুলিতে আসত ও কলোনিতে ব্যবহার করত যাদের সেখানে থাকার বা না থাকার বিষয়ে আইনত কোনো সুরক্ষা ছিল না। এইভাবে উপনিবেশগুলির দেশীয় মানুষেরা নিজের দেশেই দাসত্বের শিকার হয়েছিল।কানাডার কানাডিয়ান ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল সিস্টেম, ট্রুথ এন্ড রিকন্সিলিয়েশান কমিশান ( কানাডা ) দ্বারা স্বীকৃত এমন একটি ঔপনিবেশিক পদ্ধতি যাতে, স্থানীয় ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের ভাষা এবং সংস্কৃতি থেকে বিচ্যুত হয়।[৩৩]

বিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে নাতসিদের দ্বারা এক নাটকীয় এবং ধ্বংসাত্মক উপনিবেশবাদের প্রচেষ্টা সংঘটিত হয়।[৩৪] হিটলার ও হেনরিক হিমলার এবং তাদের সহযোগীরা বিপুল পরিমাণ জার্মান নাগরিককে কিছু জার্মান ঔপনিবেশিকের নেতৃত্বে, যারা স্থানীয় মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করবে,পূর্ব ইউরোপে পাঠিয়ে দেওয়ার ছক তৈরী করেছিল। [৩৪] These indigenous people were planned to be reduced to slaves or wholly annihilated.[৩৪]

বহু আধুনিক উন্নত দেশ বিপুল পরিমাণে পরিযায়ী বা অতিথি শ্রমজীবী/অস্থায়ী শ্রমজীবী ভিসা ধারক এনে ফসল কাটার মতো মরশুমি কাজ ও অন্যান্য কম পারিশ্রমিকের কায়িক শ্রমের কাজ করিয়ে নেয়। এইসব অতিথি শ্রমজীবীদের বা ঠিকাদাররা অন্যান্য ভিসা ধারক শ্রমজীবীদের থেকে নিম্ন স্থিতি সম্পন্ন হওয়ার জন্য সহজেই সেই দেশ থেকে বহিষ্কৃত করা যায় যেকোনো কারণ ও যেকোনো সময়ে।

আভ্যন্তরীণ উপনিবেশিকতা

ঔপনিবেশিকতা অনেক ক্ষেত্রে গার্হস্থ কৌশল হয়ে দাঁড়ায় যখন জাতির ভিতরে ব্যাপক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ভীতিদায়ক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় এবং অস্ত্র দেশের অভ্যন্তরে উদ্যত হয়, যেমন পল ভিরিলিও ব্যাখ্যা করেছেন:

নিরাপত্তা বিষয়ে বদ্ধসংস্কার মানসিকতা থেকে "আভ্যন্তরীণ উপনিবেশিকতা" কোনো সমাজে তৈরী হতে পারে। : ক্রমাগত শক্তিশালী ও সর্বব্যাপী সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রযুক্তি আপন জনজাতির প্রতি ব্যবহার করা, যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বায়নের আওতাভুক্ত সমাজকে অগোছালো করে দেওয়া...সন্দেহ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে ক্রমাগত সাধারণ মানুষের জীবনের ওপর আধিপত্য বিস্তার করাই হচ্ছে এর বিশেষত্ব...[৩৫]

আভ্যন্তরীণ উপনিবেশিকতা'র বোঝা এই উদাহরণগুলিতে দেখা যায়:

সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে লাতিন আমেরিকায় এবং আশির দশকের গোড়ায় পূর্ব ইউরোপে সামরিক-আমলাতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছিল। আশির দশকের শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অসঙ্গতির যে উদ্ভব হয়েছিল, তার জন্য এই আভ্যন্ত্রীণ উপনিবেশিক সামরিকতন্ত্রই দায়ী ছিল।[৩৬]

আরও দেখুন

Notes and references

Bibliography

  • Jared Diamond, Guns, germs and steel. A short history of everybody for the last 13'000 years, 1997.
  • Ankerl Guy, Coexisting Contemporary Civilizations: Arabo-Muslim, Bharati, Chinese, and Western, INUPress, Geneva, 2000. আইএসবিএন ২-৮৮১৫৫-০০৪-৫.
  • Cotterell, Arthur. Western Power in Asia: Its Slow Rise and Swift Fall, 1415 - 1999 (2009) popular history; excerpt

টেমপ্লেট:Colonization

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ