ঋতু

পৃথিবীর কক্ষপথ ও অক্ষীয় ঢালের ভিত্তিতে বছরের একটি খণ্ডবিশেষ

ঋতু বা মৌসুম বছরের একটি খণ্ডবিশেষ যা নির্দিষ্ট সার্বজনীন কোন সূত্রের ভিত্তিতে স্থির করা হয়। সচরাচর স্থানীয় আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে বৎসরের ঋতু বিভাজন করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বসন্ত, গ্রীষ্ম, হেমন্ত ও শীত- এই চারটি প্রধান ঋতু দেখা যায়। কিছু দেশের জনগণ ঋতুকে আরো কয়েকভাগে বিভক্ত করেছেন। তন্মধ্যে বাংলাদেশ,ভারতঅস্ট্রেলিয়ার সহ উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যে ৬টি ঋতু বিদ্যমান। সাধারণত পৃৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তিত হয়।

গ্রীষ্মে দেখা যায় সোনালু ফুল, রমনা পার্ক

জীববৈচিত্র্য

আবহাওয়াজীববৈচিত্র্যের পরিবর্তন এবং দিনের আলোর মাধ্যমে ঋতু চিহ্নিত হয়ে থাকে। এছাড়াও, সূর্যের চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর বার্ষিক পরিক্রমণও ঋতু পরিবর্তনের সাথে জড়িত। জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে ঋতু ব্যাপক ভূমিকা ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষ করে বসন্ত ঋতুতে ফুল ফোটে; শজারু শীতকালে ঘুমিয়ে থাকে। এর মাধ্যমেই আমরা উপলদ্ধি করি যে ঋতু পরিবর্তিত হয়েছে।

অঞ্চলভেদে

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় দুইটি ঋতু থাকে-

  • বর্ষাকাল
  • শুষ্ককাল

আবার, শীতপ্রধান এলাকায় দুইটি মাত্র ঋতু থাকে-

  • পোলার ডে (বসন্ত ও গ্রীষ্ম)
  • পোলার নাইট (শরৎ ও শীত)

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী ৬টি ঋতু রয়েছে।প্রতি দুই মাসে একটি ঋতুর আর্বিভাব ঘটে। নিচে তার বিবরণ ছক আকারে দেয়া হলোঃ-

ঋতুর নামশুরুশেষবাংলা মাসের নাম
গ্রীষ্মমধ্য-এপ্রিলমধ্য-জুনবৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ
বর্ষামধ্য-জুনমধ্য-আগস্টআষাঢ়, শ্রাবণ
শরৎমধ্য-আগস্টমধ্য-অক্টোবরভাদ্র, আশ্বিন
হেমন্তমধ্য-অক্টোবরমধ্য-ডিসেম্বরকার্তিক, অগ্রহায়ণ
শীতমধ্য-ডিসেম্বরমধ্য-ফেব্রুয়ারিপৌষ, মাঘ
বসন্তমধ্য-ফেব্রুয়ারিমধ্য-এপ্রিলফাল্গুন, চৈত্র

বাংলাদেশ

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে ৬টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীতবসন্ত। প্রতিটি ঋতুর কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আছে। সকল ঋতুর বিরাজকাল সমান না-হলেও হিসাবের সুবিধার্থে পঞ্জিকা বৎসরকে সমমেয়াদী কয়েকটি ঋতুতে বিভাজন করা হয়। যেমনঃ বাংলাদেশে ছয়টি ঋতুর প্রতিটির মেয়াদ দুই মাস ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। এখানকার আবহাওয়াতে নিরক্ষীয় প্রভাব দেখা যায়। নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত হালকা শীত অনুভূত হয়। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল চলে। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ - যেমনঃ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছাস ইত্যাদি প্রতিবছরই আঘাত হানে ও নিত্য সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

ভারত

এক বিশাল ভৌগোলিক ক্ষেত্রে অবস্থানের দরুন ভারতে বৈচিত্র্যপূর্ণ আবহাওয়া লক্ষ্য করা যায়। কোপেন আবহাওয়া বর্গীকরণ অনুসারে ভারতে ছয়টি প্রধান আবহাওয়া সংক্রান্ত উপ-বর্গ দেখা যায়। যথা: পশ্চিমে মরুভূমি, উত্তরে আল্পীয় তুন্দ্রা ও হিমবাহ থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ও দ্বীপাঞ্চলের ক্রান্তীয় আর্দ্র বর্ষণারণ্য। কোনো কোনো অঞ্চলে আবার পৃথক স্থানীয় জলবায়ুরও দেখা মেলে। দেশে মোট চারটি প্রধান ঋতু বিরাজমান। তন্মধ্যে - শীত (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি), গ্রীষ্ম (মার্চ থেকে মে), বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) ও শরৎ-হেমন্ত (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর)।

গণনা

আবহাওয়াজনিত কারণে ঋতুগুলোকে তাপমাত্রার মাধ্যমে নিরূপণ করা হয়। এখানে গ্রীষ্মকালকে ত্রৈমাসিকভিত্তিতে বছরের সবচেয়ে গরম এবং শীতকালকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বছরের সবচেয়ে ঠাণ্ডা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ গণনা অনুসারে রোমান বর্ষপঞ্জী শুরু হয়েছে এবং বসন্ত ঋতুকে ১লা মার্চ থেকে ধরা হয়েছে। এছাড়াও, প্রতিটি ঋতুই ৩টি মাস নিয়ে গঠিত হয়েছে।

১৭৮০ সালে সোসাইটাজ মেটেওরোলোজিকা প্যাল্যাটিনা নামীয় প্রাচীন আবহাওয়া বিষয়ক সংগঠন তিনটি পুরো মাসকে ঋতু হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এরপর থেকেই পেশাজীবি আবহাওয়াবিদগণ বিশ্বের সর্বত্র এ সংজ্ঞাকে আদর্শ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।[১]

ঋতু বিবরণ

গ্রীষ্মকাল

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরের প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মিলে গ্রীষ্মকাল। এই সময় সূর্যের প্রচন্ড তাপে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভূমি, জল শুকিয়ে যায়, অনেক নদীই তার স্বাভাবিক নাব্যতা হারায়, জলশূণ্য মাটিতে ধরে ফাটল। গাছে গাছে বিভিন্ন মৌসুমী ফল দেখা যায়, যেমন: আম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি।

বর্ষাকাল

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী গ্রীষ্মের পরের ঋতুটিই হলো বর্ষাকাল। সেসময় প্রচন্ড ও মুষলধারে বৃষ্টিপাত গ্রীষ্মকালের সব তপ্ততা মিটিয়ে দেয়। রাস্তা-ঘাট বেশ কর্দমাক্ত থাকে। নদী-নালা বেশ ভরাট হয়ে প্রকৃতিতে নতুন মাত্রা জাগিয়ে তোলে আকাশে কালো মেঘ উঠে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস মিলে বর্ষাকাল গঠিত। এ সময় নদী নালা, খাল-বিল জলে পূর্ণ হয়।

শরৎকাল

ভাদ্র ও আশ্বিন মাস মিলে শরৎকাল। এটি ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু হিসেবে বিবেচিত। এ সময় কাঁশফুল পদ্ম,শালুক প্রভৃতি ফুল ফোটে। আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়।এ সময় বায়ুর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।রাতে সবুজ ঘাসে হালকা জলের কণা দেখা যায়।

হেমন্তকাল

কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুই মাস হেমন্তকাল। এটি ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু। এ ঋতুতে কৃষকের মধ্যে ফসল কাটার ব্যস্ততা দেখা দেয়। ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব।

শীতকাল

পৌষ ও মাঘ - এই দুই মাস মিলে শীতকাল গঠিত। শীতের সময় খেজুরের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পায়েস খাওয়া হয়। বনভোজনের আদর্শ ও উপযুক্ত সময় হিসেবে শীতকাল বিবেচিত হয়ে আসছে। এই সময় কুল ফল খাওয়া হয়।

বসন্তকাল

বাতাসে বহিছে প্রেমনয়নে লাগিল নেশাকারা যেন ডাকিল পিছেবসন্ত এসে গেছে।।

ফাল্গুন ও চৈত্র এই দুই মাস মিলে বসন্ত কাল। বাংলা পঞ্জিকাবর্ষে বসন্ত সর্বশেষ ঋতু হিসেবে স্বীকৃত। এ ঋতুতে গাছে নতুন পাতা গজায় ও ফুল ফোটে। আবহাওয়ার পরিবর্তন, প্রকৃতিতে নতুন মাত্রা যোগের কারণে বসন্ত ঋতু ঋতুরাজ বসন্ত নামে পরিচিত। নানা স্থানে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।[২]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ