কম্পিউটার প্রকৌশল
কম্পিউটার প্রকৌশল (Computer Engineering: সংক্ষিপ্তরূপ: CoE or CpE) একটি এমন একটি ফলিতবিদ্যা যাতে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের উপাদানগুলো সু-সমন্বয় রয়েছে। [১] কম্পিউটার প্রকৌশলীদের ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল সফটওয়ার ডিজাইন ও হার্ডওয়ার-সফটওয়ার একত্রীকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ শিক্ষা ও দক্ষতা আছে। কম্পিউটার প্রকৌশলী কম্পিউটিং এর মাইক্রোপ্রসেসর, পার্সোনাল কম্পিউটার, এবং সুপারকম্পিউটার ডিজাইন থেকে শুরু করে সার্কিট ডিজাইন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। এই প্রকৌশলবিদ্যা ডিভাইস ও যন্ত্রে বিভিন্ন এমবেডেড সিস্টেমকে ( উদাহরণস্বরুপ, কিছু এমবেডেড কম্পিউটার সিস্টেম মোটরযানের বিভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত হয়) ব্যবহারে ভূমিকা রাখে।[২] কম্পিউটার প্রকৌশলীর সাধারণ কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে সাধারণ ও বিশেষ কম্পিউটারের জন্য সফটওয়ার তৈরি করা, এমবেডেড মাইক্রোকন্ট্রোলারের জন্য ফার্মওয়ার লিখা, বিভিন্ন ভিএলএসআই চিপ ডিজাইন, বিভিন্ন এনালগ সেন্সর ডিজাইন, বিভিন্ন সার্কিট বোর্ড ডিজাইন এবং অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন প্রভৃতি। কম্পিউটার প্রকৌশলীরা রোবোটিক্স গবেষণার জন্য উপযুক্ত, যা বিভিন্ন তড়িৎ সিস্টেম যেমন মোটর, যোগাযোগব্যবস্থা, সেন্সর প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল সিস্টেমের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
ইতিহাস
১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম কম্পিউটার প্রকৌশল ডিগ্রি চালু করে। ২০০৪ সালের অক্টোবর অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৭০টি এবিইটি স্বীকৃত কম্পিউটার প্রকৌশল কর্মসূচি রয়েছে।[৩]ইউরোপে কম্পিউটার প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করে বিভিন্ন সংস্থা যেগুলো ইকিউএএনআইই এর অংশ হিসেবে কাজ করে।প্রকৌশলীদের পেশার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী বৃদ্ধির কারণে, যারা একই সাথে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ফার্মওয়্যার ডিজাইন এবং কম্পিউটার প্রযুক্তির সব ধরনের কাজ পরিচালনা করতে পারে, তাদের জন্য বিশ্বের কিছু প্রতিষ্ঠান স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করে থাকে। কম্পিউটার প্রকৌশল এবং তড়িৎ প্রকৌশল উভয় কর্মসূচির পাঠ্যক্রমেই অ্যানালগ এবং ডিজিটাল সার্কিট ডিজাইন রয়েছে। অধিকাংশ প্রকৌশলের নিয়ম অনুসারে, কম্পিউটার প্রকৌশলীদের জন্য সামান্য গণিত এবং বিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
কাজ
কম্পিউটার প্রকৌশলে দুইটি প্রধান বিভাগ রয়েছে: সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার।
কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রকৌশল
কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা সফটওয়্যার ডেভলপ, ডিজাইন এবং পরীক্ষার কাজ করেন। কিছু সফটওয়্যার প্রকৌশলী বিভিন্ন কোম্পানির জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম ডিজাইন, নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। আবার কেউ নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ করেন, উদাহরণস্বরূপ, "ইন্ট্রানেট"।
শিক্ষায়তনিক বিদ্যা হিসেবে কম্পিউটার প্রকৌশল
কম্পিউটার প্রকৌশল সর্বপ্রথম শিক্ষায়তনিক বিদ্যা হিসেবে ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো শুরু হয়; অক্টোবর ২০০৪ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৭০টি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এই বিভাগ পড়ানো হচ্ছে। [৪]
চাকরির বাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটার সিস্টেম ডিজাইন ও ব্যবস্থাপনা করতে পারার যোগ্যতাসম্পন্ন প্রকৌশলীর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন কম্পিউটার প্রকৌশল নামে ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রদান করছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কম্পিউটার প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক প্রকৌশল উভয় বিভাগেই তাদের কারিকুলামে এনালগ ও ডিজিটাল সার্কিট ডিজাইন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অন্যান্য সকল প্রকৌশলবিদ্যার মত গণিতে শক্ত ভিত্তি থাকা যেকোন কম্পিউটার প্রকৌশলীর জন্য অপরিহার্য।
আইইইই/এসিএম যৌথভাবে কারিকুলাম গাইডলাইনস ফর আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি প্রোগ্রামস ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি সহায়িকা প্রণয়ন করেছে যাতে কম্পিউটার প্রকৌশলের মূল ক্ষেত্র বর্ণনা করা হয়েছে এভাবেঃ[৫]
- অ্যালগোরিদম
- কম্পিউটার আর্কিটেকচার ও ব্যবস্থাপনা (অর্গানাইজেশন)
- কম্পিউটার সিস্টেম প্রকৌশল
- সার্কিট ও সঙ্কেত
- ডাটাবেজ সিস্টেম
- ডিজিটাল লজিক
- ডিজিটাল সঙ্কেত প্রক্রিয়াকরণ
- ইলেকট্রনিক্স
- এমবেডেড সিস্টেম
- মানব-কম্পিউটার মিথস্ক্রিয়া
- অপারেটিং সিস্টেম
- প্রোগ্রামিংয়ের মূল জ্ঞান
- সামাজিক ও পেশাদারী ইস্যু
- সফটওয়্যার প্রকৌশল
- ভিএলএসআই ডিজাইন ও ফেব্রিকেশন
কম্পিউটার প্রকৌশলের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের কোন সীমা নেই। উপর্যুক্ত বিষয় ছাড়াও প্রকৌশলের অন্তর্ভুক্ত যে কোন বিষয় এতে যুক্ত করা যায়।
আরো দেখুন
- তড়িৎ প্রকৌশল
- প্রকৌশলী
- কম্পিউটার
- কম্পিউটার বিজ্ঞান
- কম্পিউটার-সহায়িত সফটওয়ার প্রকৌশল