কামরাঙা
কামরাঙা (ইংরেজি: Carambola, এছাড়াও Starfruit নামেও পরিচিত), ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা অঞ্চলের একধরনের স্থানীয় প্রজাতির উদ্ভিদের ফল। এই ফল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-প্রশান্ত এবং পূর্ব-এশিয়া অংশে জনপ্রিয়।
উৎপত্তি এবং বন্টন
কামরাঙার মূল পরিসীমা অজানা। এটি শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া থেকে উদ্ভূত হতে পারে বলে মনে করা হয়; কিন্তু বিগত শত শত বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলসমূহে এর চাষ করা হয়েছে। কামরাঙা ঐ এলাকায় স্থানীয় পছন্দের তালিকায় থাকলেও সম্প্রতি পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড অংশে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের বিশেষ করে তাহিতি, নিউ ক্যালিডোনিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, হাওয়াই, এবং গুয়াম অঞ্চলেও এর ব্যাপক প্রসার লাভ করে। ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, তাইওয়ান এবং ফ্লোরিডায় বাণিজ্যিকভাবে কামরাঙার চাষ করা হয়। মূলত এই ফল অধিক হারে নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা, পানামা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, ব্রাজিল, জ্যামাইকা, হাইতি, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, পুয়ের্তো রিকো, ত্রিনিদাদ, মেক্সিকো, গায়ানা এবং আফ্রিকা অংশে জন্মায়।[১] তবে অন্যন্য এলাকায় কামরাঙার চাষ এবং উৎপাদন ব্যায়সাধ্য হয়ে থাকে।[১]
বিবরণ
এই ফল দৈর্ঘ্য প্রায় ২ থেকে ৬ ইঞ্চি (৫.১ থেকে ১৫.২ সেমি) এবং উপবৃত্তাকার আকৃতির হয়। এর সাধারণত পাঁচটি বিশিষ্ট অনুদৈর্ঘ্য ঢাল থাকে, কিন্তু বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে কখনো ৪টি অথবা ৮টি বা তারচেয়ে বেশি ঢাল থাকতে পারে। ক্রুশ আকৃতির বিভক্তি বা ভাগের কারণে এটি দেখতে তারকাসাদৃশ। কামরাঙার ত্বক পাতলা, মসৃণ, ও মোমের মতো হয় এবং পরিপক্ব অবস্থায় অন্ধকার হলুদাভ হালকা বর্ণ ধারণ করে। ভেতরের মাংসল স্থান পরিষ্কার এবং এবং হালকা হলুদ বর্ণের। প্রতিটি ফলের ১০ থেকে ১২টি সমতল হালকা বাদামী বীজ থাকতে পারে যা প্রস্থে ০.২৫ থেকে ০.৫ ইঞ্চি (০.৬৪ থেকে ১.২৭ সেমি) এবং নরম ও আঠাল ছিলকে আবদ্ধ।l একবার ফল থেকে অপসারণ করা হয়ে কয়েকদিনের মধ্যে কার্যকরতা হারায়।[২][৩][৪]
পাকানোর সুযোগ দেয়া হলে চুকা বৈচিত্র্যের 'গোল্ডেন স্টার', ফলও মিষ্টি হতে পারে।[১][২][৩]
উত্তম পানভোজনবিদ্যা
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ১২৮ কিজু (৩১ kcal) |
৬.৭৩ g | |
চিনি | ৩.৯৮ g |
খাদ্য আঁশ | ২.৮ g |
০.৩৩ g | |
১.০৪ g | |
ভিটামিন | পরিমাণ দৈপ%† |
ভিটামিন এ সমতুল্য লুটিন জিয়াক্সানথিন | ৬৬ μg |
থায়ামিন (বি১) | ১% ০.০১৪ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ১% ০.০১৬ মিগ্রা |
নায়াসিন (বি৩) | ২% ০.৩৬৭ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ৮% ০.৩৯১ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ | ১% ০.০১৭ মিগ্রা |
ফোলেট (বি৯) | ৩% ১২ μg |
কোলিন | ২% ৭.৬ মিগ্রা |
ভিটামিন সি | ৪১% ৩৪.৪ মিগ্রা |
ভিটামিন ই | ১% ০.১৫ মিগ্রা |
খনিজ | পরিমাণ দৈপ%† |
ক্যালসিয়াম | ০% ৩ মিগ্রা |
লৌহ | ১% ০.০৮ মিগ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩% ১০ মিগ্রা |
ম্যাঙ্গানিজ | ২% ০.০৩৭ মিগ্রা |
ফসফরাস | ২% ১২ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ৩% ১৩৩ মিগ্রা |
সোডিয়াম | ০% ২ মিগ্রা |
জিংক | ১% ০.১২ মিগ্রা |
| |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
স্বাস্থ্য
উপকারিতা
কামরাঙায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ও ভিটামিন রয়েছে, যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এই ফল খাওয়ার পাশিপাশি নিয়মিত এর রস ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখবে এবং ত্বক দাগমুক্ত রাখবে।
বোল্ডস্কাই ওয়েবসাইটের জীবনধারা বিভাগে কামরাঙার কার্যকারিতা ও ব্যবহারের উপায় সম্বন্ধে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এক নজরে চোখ বুলিয়ে নিন।
ব্রণ দূর করে
কামরাঙা ব্রণ দূর করতে বেশ কার্যকর। সমান পরিমাণ কামরাঙার রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এবার একটি তুলার বলে এই মিশ্রণ লাগিয়ে ব্রণের ওপর লাগান। ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, ধীরে ধীরে ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
চোখের নিচের ফোলাভাব দূর করে
কামরাঙার স্লাইস চোখের নিচে লাগিয়ে ১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন। এবার পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এটি আপনার চোখের চারপাশের ফোলাভাব দূর করবে এবং টানটান রাখবে।
ত্বক পরিষ্কার করে
নিয়মিত বাসায় ফিরে কামরাঙার রস ত্বকে লাগিয়ে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই রস আপনার ত্বকের ময়লা জীবাণু সহজেই পরিষ্কার করে ত্বক সতেজ করতে সাহায্য করবে।
বয়সের ছাপ দূর করবে
যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদানের সঙ্গে কামরাঙার রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান। এটি আপনার ত্বকের বলিরেখা দূর করবে এবং ত্বক টানটান করবে। এর ফলে চেহারার বয়সের ছাপ দূর হবে।
ঝুঁকি
কামরাঙা ক্যারামবক্সিন[৫] এবং অক্সালিক অ্যাসিড ধারণ করে থাকে। উভয় পদার্থই কিডনি ফেইলুর, কিডনি পাথর বা এদের অধীনে কিডনি ডায়ালিসিস চিকিত্সারত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর সংমিশ্রণে কিডনি ব্যর্থতা হেঁচকি তৈরী করতে পারা, বমি, বমি-বমি ভাব, মানসিক বিভ্রান্তি, এবং কখনও কখনও মৃত্যু ঘটাতে পারে।[৬][৭][৮][৯][১০][১১] সাম্প্রতিক গবেষণা ক্যারামবক্সিনকে একটি নিউরোটক্সিনহিসাবে চিহ্নিত করে, যা আদর্শগতভাবে ফেনীলালানাইন এর অনুরূপ, এবং একটি গ্লুটামেটার্জিক এগনিস্ট।[৫] কিডনি রোগ ব্যক্তিদের জন্য বিষাক্ততা সত্ত্বেও, কামরাঙার মধ্যে অক্সালিক অ্যাসিড এবং ক্যারামবক্সিনের মাত্রা সাধারণ লোকের জন্য যথেষ্ট কম নিরাপদে হলেও পাচক হয়, যাদের কাছে এটা একটা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর উভয় ধরনের খাদ্য।[চিকিৎসাবিদ্যার তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ঔষধ মিথস্ক্রিয়া
মুলত চাষ হয়ঃ ধান পাট ভুট্টা মরিচ আলু সারিষা বেগুন
অন্যান্য ব্যবহারসমূহ
কাপড়ে লোহার দাগ লাগলে, কামরাঙা ফল কেটে টুকরো করে দাগের উপর ঘষতে হবে, দাগ উঠে যাবে।
প্রচলিত নামসমূহ
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- উইকিপ্রজাতিতেকামরাঙা সম্পর্কিত তথ্য।