কুব্বাতুস সাখরা

জেরুজালেমের ইসলামী পবিত্র স্থান

কুব্বাতুস সাখরা (আরবি: قبة الصخرة, হিব্রু ভাষায়: כיפת הסלע‎) (অর্থাৎ শিলার গম্বুজ) হলো জেরুসালেমের পুরনো শহরের টেম্পল মাউন্টের উপর অবস্থিত একটি গম্বুজউমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের আদেশে ৬৯১ সালে এর নির্মাণ সমাপ্ত হয়। বর্তমানে এটি ইসলামী স্থাপত্যের সর্বপ্রাচীন নমুনা।[১] এটিকে "জেরুসালেমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থান" ও "সমগ্র ফিলিস্তিনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থান" বলে উল্লেখ করা হয়।[২][৩] গম্বুজের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কাঠামো চার্চ অব দ্য হলি সেপালকারের মত।[৪] উমাইয়া স্থাপত্যে বাইজেন্টাইন প্রভাবের উদাহরণ এ থেকে পাওয়া যায়।

কুব্বাতুস সাখরা
শিলার গম্বুজ
স্থানাঙ্ক: ৩১°৪৬′৪১″ উত্তর ৩৫°১৪′০৭″ পূর্ব / ৩১.৭৭৮০° উত্তর ৩৫.২৩৫৪° পূর্ব / 31.7780; 35.2354
অবস্থানজেরুসালেম
প্রতিষ্ঠিতনির্মাণ ৬৮৫-৬৯১
স্থাপত্য তথ্য
ধরনউমাইয়া
গম্বুজ
মিনার
মাউন্ট অলিভস থেকে কুব্বাতুস সাখরার দৃশ্য। পুরনো শহরের দেয়ালও দেখা যাচ্ছে।
অস্ট্রিয়ান ধর্মশালার দিক থেকে প্রাপ্ত রাতের দৃশ্য।

এখানে অবস্থিত সাখরা নামক পাথরের কারণে স্থানটি ধর্মীয় দিক দিয়ে গুরুত্ববহ।

স্থান

টেম্পল মাউন্ট বা আল-হারাম আল-কুদসি আশ-শরিফ বলে পরিচিত স্থানের উপরে এটি অবস্থিত। ইহুদিদের দ্বিতীয় মন্দির এখানে অবস্থিত ছিল বলে বিশ্বাস করা হয় যা ৭০ সালে রোমানদের জেরুসালেম অবরোধের সময় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী ইসরা ও মেরাজের সাথে এই স্থানটি সম্পর্কিত।

ইতিহাস

ইসলামপূর্ব যুগ

গম্বুজটি টেম্পল মাউন্টের উপরে অবস্থিত। এখানে দ্বিতীয় মন্দির নামে পরিচিত ইহুদি উপাসনালয় ছিল। ৭০ সালে রোমানরা এটি ধ্বংস করে দেয় ও এর স্থলে দেবতা জুপিটারের মন্দির গড়ে তোলে। বাইজেন্টাইন আমলে জেরুসালেম খ্রিষ্টান অধ্যুষিত ছিল। ১০ হাজারের মত তীর্থযাত্রী যিশুর পদচারণার স্থান পরিদর্শন করতে আসে।[৫]

নির্মাণ ও আকার

কুব্বাতুস সাখরা উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের আদেশে ৬৮৯ থেকে ৬৯১ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। চতুর্থ শতাব্দীতে ইহুদিদের বিদ্রোহের পর থেকে এই টেম্পল মাউন্ট উন্নয়নের বাইরে থেকে গিয়েছিল।

এর স্থাপত্য ও মোজাইক বাইজেন্টাইন চার্চ ও প্রাসাদের আদলে গড়ে তোলা হয়েছিল। এর দায়িত্বে দুজন প্রকৌশলী ছিলেন। একজন হলেন মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক বাইসানের বাসিন্দা রাজা ইবনে হায়ওয়াহ ও অপরজন হলেন খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের খ্রিষ্টান দাস জেরুসালেমের ইয়াজিদ ইবনে সালাম।[৬]

১৮৮৭ সালে মুদ্রিত। স্থপতি ফ্রেডেরিক কেথারউড গম্বুজের বিস্তারিত চিত্র অংকনকারী প্রথম পশ্চিমা ব্যক্তি বলে পরিচিত। ১৮৩৩ সালে ছয় সপ্তাহে তিনি তা সম্পন্ন করেন।[৭]

হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের শেলোমো ডোভ গোয়েটেইনের মতে কুব্বাতুস সাখরা অন্যান্য আরও কিছু স্থাপত্যের সাথে সমাপ্ত করার জন্য তৈরী হয়েছিল। এ. সি. ক্রেসওয়েল তার বই অরিজিন অব দ্য প্লেন অব দ্য ডোম অব দ্য রক এ উল্লেখ করেন যে স্থাপনাটি তৈরী করার সময় চার্চ অব দ্য হলি সেপালকারের মাপঝোক ব্যবহার করা হয়েছিল। এর গম্বুজের ব্যাস ২০.২০ মি. ও উচ্চতা ২০.৪৮ মি, অন্যদিকে চার্চ অব দ্য হলি সেপালকারের গম্বুজের ব্যাস ২০.৯০ মি ও উচ্চতা ২১.০৫ মি।

ক্রুসেডার

১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুসালেম অধিকার করে নেয়। কুব্বাতুস সাখরা অগাস্টিনিয়ানদের দিয়ে দেয়া হয়। তারা এটিকে গির্জায় রূপান্তর করে এবং আল-আকসা মসজিদকে রাজকীয় প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। নাইটস টেম্পলাররা কুব্বাতুস সাখরার স্থানটিকে সুলায়মান (আঃ) কর্তৃক নির্মিত উপাসনালয়ের স্থান বলে বিশ্বাস করত। পরবর্তীতে তারা পার্শ্ববর্তী আল আকসা মসজিদে সদরদপ্তর স্থাপন করে।

আইয়ুবীয় ও মামলুক

১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর সুলতান সালাউদ্দিন জেরুসালেম জয় করেন। কুব্বাতুস সাখরাকে পুনরায় মুসলিম স্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এর চূড়ায় স্থাপিত ক্রুশকে সরিয়ে সেখানে ইসলামী চাঁদ স্থাপন করা হয়। নিচে পাথরের চারপাশে কাঠের আবরণ দেয়া হয়। সালাউদ্দিনের ভাতিজা আল মালিক আল মুয়াজ্জাম ঈসা ভবনের পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালন করেন।

মামলুক শাসনের সময় কুব্বাতুস সাখরা গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদায় আসীন ছিল। মামলুকরা ১২৫০ থেকে ১৫১৭ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল।

উসমানীয় সাম্রাজ্য (১৫১৭-১৯১৭)

টাইলস আচ্ছাদিত বহির্ভাগ

প্রথম সুলাইমানের শাসনামলে কুব্বাতুস সাখরার বহির্ভাগ টাইলস দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। এ কাজের জন্য সাত বছর সময় লাগে।

কুব্বাতুস সাখরার ভেতরের দৃশ্য, ১৯১৪

অভ্যন্তরভাগ মোজাইক, ফাইয়েন্স ও মার্বেল দ্বারা সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। এর অধিকাংশই নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার কয়েকশত বছর পরে করা। এতে কুরআনের আয়াত লেখা রয়েছে। সূরা ইয়াসিন ও বনী ইসরাইল এতে খোদিত রয়েছে। সুলতান প্রথম সুলাইমানের সময় তা সম্পন্ন হয়।

১৬২০ সালে কুব্বাতুস সাখরার পাশে উসমানীয়রা কুব্বাত আন নবী নামক আরেকটি স্থাপনা নির্মাণ করে। ১৮১৭ সালে দ্বিতীয় মাহমুদের আমলে বড় ধরনের সংস্কার সম্পন্ন হয়।

ব্রিটিশ মেন্ডেট থেকে বর্তমান

মুহাম্মদ আমিন আল হুসাইনি ১৯১৭ সালে ফিলিস্তিন মেন্ডেটের গ্র্যান্ড মুফতি নিযুক্ত হন। তিনি কুব্বাতুস সাখরা ও আল আকসা মসজিদের সংস্কার করেন।

কুব্বাতুস সাখরার ভেতরের দৃশ্য, ১৯১৫

১৯২৭ সালের ১১ জুলাই ফিলিস্তিনে সংঘটিত ভূমিকম্পে কুব্বাতুস সাখরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতিপূর্বে সম্পাদিত সংস্কারগুলো এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৯৫৫ সালে জর্ডান সরকার সম্প্রসারণমূলক পুনর্গঠন কাজ শুরু করে। আরব সরকারগুলো ও তুরস্ক এতে অর্থ সহায়তা দেয়। সুলতান সুলাইমানের সময় স্থাপিত বেশ কিছু টাইলস এসময় প্রতিস্থাপিত করা হয়। অতিবৃষ্টির ফলে এগুলো স্থানচ্যুত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে এই সংস্কারের অংশ হিসেবে গম্বুজটি এলুমিনিয়াম ব্রোঞ্জ মিশ্রণ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।[৮] ১৯৬৪ সালের আগস্টে সংস্কারকার্য সমাপ্ত হয়।

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের সময় কুব্বাতুস সাখরার উপর ইসরায়েলি পতাকা উত্তোলনের কয়েক ঘণ্টা পর মোশে দায়ানের নির্দেশে তা নিচু করা হয় এবং শান্তি রক্ষার স্বার্থে টেম্পল মাউন্টের তত্ত্বাবধানের জন্য মুসলিম ওয়াকফে দায়িত্ব দেয়া হয়।[৯]

১৯৯৩ সালে গম্বুজের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য জর্ডানের রাজা হুসাইন ৮.২ মিলিয়ন ডলার দান করেন। তিনি তার লন্ডনের বাড়ি বিক্রি করেছিলেন। এর দ্বারা ৮০ কেজি স্বর্ণ অর্জিত হয়।

ইরানের ১০০০ রিয়াল নোটে কুব্বাতুস সাখরার ছবি রয়েছে।[১০]এছাড়াও সৌদি ৫০ রিয়ালের নোটেও কুব্বাতুস সাখরার ছবি রয়েছে।

প্রবেশাধিকার

টেম্পল মাউন্টে দর্শনার্থীদের প্রবেশপথের লেখা।

জর্ডানের আওকাফ মন্ত্রণালয় স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণ করে।[১১]

২০ শতকের মধ্য ভাগ পর্যন্ত অমুসলিমরা এখানে প্রবেশ করতে পারত না। ১৯৬৭ সালের পর অমুসলিমরা সীমিত আকারে প্রবেশাধিকার পায় তবে অমুসলিমদের এতে প্রার্থনা বা কোনো ধর্মীয় চিহ্ন বা হিব্রু অক্ষর নিয়ে আসার অনুমতি নেই। ইসরায়েলি পুলিশ এই নিয়ম কার্যকর করে।[১২] শুধুমাত্র মুসলিম ছুটির দিনেই পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা প্রবেশ করতে পারে। ৩৫ বছরের বেশি বয়সের পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরাই প্রবেশ করতে পারে।[১৩] ইসরায়েলি রেসিডেন্সি কার্ডধারী জেরুসালেমের বাসিন্দা ও ইসরায়েলি নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

২০০৬ সালে গ্রীষ্মের সময় সকাল ৭:৩০ থেকে ১১:৩০ ও দুপুর ১:৩০ থেকে ২:৩০ এবং শীতের সময় সকাল ৭:৩০ থেকে ১১:৩০ ও দুপুর ১:৩০ থেকে ২:৩০ এর জন্য অমুসলিমদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। ২:৩০ এর পর থেকে অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ এবং শুক্রবার, শনিবার বা মুসলিম ছুটির দিনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পশ্চিম দেয়ালের প্রবেশ পথের পরে একটি কাঠের হাটাপথ দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। অমুসলিমদের মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা ও তুলার বাজারের মধ্য দিয়ে প্রবেশে নিষেধ আছে। দর্শনার্থীদের কঠোর নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলতে হয় এবং ইহুদি প্রার্থনার বই এখানে নিষেধ।

অনেক অর্থোডক্স রেবাই এখানে প্রবেশকে ইহুদি আইনের বিরোধী মনে করেন। তাদের বিশ্বাস মোতাবেক ৭০ সালে জেরুসালেম অবরোধ হওয়ার পর থেকে এ স্থানের সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান যাতে শুধু প্রধান পুরোহিত প্রবেশ করতে পারতেন তা অজ্ঞাত হয়ে পড়ে। তাই তাদের মত হল পুরো এলাকায় প্রবেশে নিষেধ। তবে কিছু রেবাইদের মতে আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক ও অন্যান্য প্রমাণ তাদেরকে স্থানটি চিহ্নিত করতে পারে যাতে ইহুদি আইন লঙ্ঘন না করে তাতে প্রবেশ করা যায়। তবে তারাও ইহুদিদেরকে কুব্বাতুস সাখরায় প্রবেশে নিষেধ করে।[১৪]

গম্বুজের উপরিভাগ থেকে সাখরা পাথর।

স্থাপত্য গুরুত্ব

চিত্রশালা

মাউন্ট অলিভস থেকে টেম্পল মাউন্টের প্যানারোমা।

স্থাপত্য শ্রদ্ধাঞ্জলি

দ্যা ডোম অফ দ্যা রক বেশ কয়েকটি ভবনের স্থাপত্যকে অনুপ্রাণিত করেছে।এর মধ্যে রয়েছে ইতালির সেন্ট গিয়াকোমোর অষ্টভুজাকার চার্চ, ইস্তাম্বুলের সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের সমাধি, বুদাপেস্টের অষ্টভুজাকার মুরিশ রিভাইভাল স্টাইলের রুম্বাচ স্ট্রিট সিনাগগ এবং জার্মানির বার্লিনের নিউ সিনাগগ ।খ্রিস্টানরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করত যে ডোম অফ দ্য রক জেরুসালেমের মন্দিরের স্থাপত্যের প্রতিধ্বনি করে, যেমনটি রাফায়েলের দ্য ম্যারেজ অফ দ্য ভার্জিন এবং পেরুগিনোর ম্যারেজ অফ দ্য ভার্জিন-এ দেখা যায়। [১৫]

অলিভ পর্বত থেকে মন্দির পর্বত এর প্যানোরামা, আল-আকসা মসজিদ এবং ডোম অফ দ্য রক সহ

ধর্মীয় তাৎপর্য

জেরুসালেমের মন্দিরটি মার্কো আন্তোনিও গিস্তিনিয়ানি, ভেনিসের প্রিন্টারের চিহ্নে পাথরের গম্বুজ হিসাবে চিত্রিত হয়েছে ১৫৪৫-৫২ সালের মধ্যে।

কুব্বাত আস-সাখরার অবস্থানটি অনেক মুসলমানদের দ্বারা বিশ্বাস করা হয় যেটি কোরানের ১৭ তম সূরা এ উল্লিখিত স্থান, যা ইসরা এবং মি'রাজের গল্প বলে, মহান মসজিদ থেকে নবী মুহাম্মদ(স:)-এর অলৌকিক রাতের যাত্রা। মক্কার আল-আকসা মসজিদে ('"প্রার্থনার দূরতম স্থান") যেখানে তিনি প্রার্থনা করেছিলেন, এবং তারপর সপ্তাকাশ যান যেখানে তিনি প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহর সাথে কথা বলেন।যদিও কোরআনে জেরুসালেম শহরের কোনো নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে হাদিসে এটিকে মুহাম্মদের রাতের যাত্রার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। [১৬]

যদিও প্রাথমিক মুসলিম উত্স দ্বারা বিচার করলে, এটি এখনও ৮ম শতাব্দীতে গম্বুজ নির্মাণের সময় মুসলমানদের দ্বারা ভাগ করা বিশ্বাসের সম্পূর্ণরূপে প্রণয়িত অংশ ছিল বলে মনে হয় না এবং গম্বুজের ভিতরের শিলালিপিগুলি খলিফাকে ভবনটিকে দায়ী করে। ৬৯১/৬৯২ সালে আবদ আল-মালিক রাত্রি যাত্রার কথা মোটেও উল্লেখ করেন না, বরং নবী ঈসা (যীশু) এর প্রকৃতি সম্পর্কে শুধুমাত্র কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করেন। [১৭]শিলালিপিটি একটি মোজাইক ফ্রিজে রয়েছে যাতে খ্রিস্টের দেবত্বের একটি স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান রয়েছে:

৩৩. "সুতরাং আমার উপর শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমি মারা যাব এবং যেদিন আমি জীবিত হয়ে উঠব!" ৩৪. তিনি হলেন মরিয়মের পুত্র ঈসা। এটি সত্যের একটি বিবৃতি, যা সম্পর্কে তারা সন্দেহ করে। ৩৫. আল্লাহর (মহিমা) যোগ্য নয় যে তিনি নিজেকে সন্তান গ্রহণ করবেন। তিনি পবিত্র! যখন তিনি কোন বিষয় নির্ধারণ করেন, তখন তিনি শুধু বলেন, "হও" এবং তা হয়ে যায়।

— ১৯:৩৩-৩৫

গোয়েটাইনের মতে, অভ্যন্তরীণ সজ্জিত শিলালিপিগুলি স্পষ্টভাবে খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে বিতর্কের মনোভাব প্রদর্শন করে, একই সাথে কোরানের মতবাদের উপর জোর দেয় যে ঈসা আলাইহিস সালাম একজন সত্যিকারের নবী ছিলেন।সূত্র লা শারিকা লাহু ("ঈশ্বরের কোন সঙ্গী নেই") পাঁচবার পুনরাবৃত্তি হয়; সূরা মরিয়ম ১৯:৩৫-৩৭ এর আয়াতগুলিতে, যা দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরের কাছে যীশুর নবুওয়াতকে পুনঃনিশ্চিত করে, প্রার্থনার সাথে একত্রে উদ্ধৃত করা হয়েছে: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা রাসুলিকা ওয়া'আব্দিকা 'ঈসা বিন মরিয়ম - "হে প্রভু তোমার নবী ও দাস ঈসা ইবনে মরিয়মের প্রতি তোমার বরকত পাঠাও।"।"তিনি বিশ্বাস করেন যে এটি দেখায় যে খ্রিস্টান ধর্মের সাথে শত্রুতা, খ্রিস্টানদের প্রতি মুসলিম মিশনের চেতনার সাথে, নির্মাণের সময় কাজ করছিল। [১৮]

৮ম শতাব্দীর শুরুতে, ইবনে ইসহাক জেরুসালেম রক সম্পর্কিত প্রাচীনতম আরবি উত্সকে সংহিতাবদ্ধ করেছিলেন, তার সিরাত আল- নবির অংশ হিসাবে, ইসলামী নবী মুহাম্মদের জীবনী, এই ধারণাটি প্রবর্তন করেছিলেন যে মক্কা থেকে নবীর রাতের যাত্রার ঠিক পরে। জেরুসালেমে ( ইসরা' ), তিনি অবিলম্বে এবং বিশেষভাবে রক ইন তার অ্যাসেনশন ( মি'রাজ ) থেকে স্বর্গে যাত্রা করেন, যেখানে আল্লাহ তাকে ইসলাম ধর্মের মতবাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। [১৭]

আজ, অনেক মুসলমান বিশ্বাস করে যে গম্বুজটি নবীর স্বর্গারোহণের স্মরণে কাজ করে, [১৭] কিছু ইসলামী পণ্ডিতদের মতামত অনুসারে, শিলাটি প্রকৃতপক্ষে সেই স্থান [১৯] যেখান থেকে মুহাম্মাদ(স:) স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন দেবদূত জিবরাঈল (আ:) এর সাথে। আরও, মুহাম্মাদকে এখানে আব্রাহাম, মূসা এবং যীশুর সাথে প্রার্থনা করার জন্য জিবরাঈল এখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। [২০]অন্যান্য ইসলামী পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে নবী আল-আকসা মসজিদ থেকে স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন[সন্দেহপূর্ণ ][২১] [২২]

গম্বুজ থেকে ভিত্তি পাথর দেখা যায়।আশেপাশের লোহার গ্রিল অপসারণের আগে ১৯০০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে ছবি তোলা হয়েছিল।

ফাউন্ডেশন স্টোন এবং এর আশেপাশের এলাকা যা গম্বুজের কেন্দ্রে অবস্থিত, ইহুদি ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।ইহুদিরা ঐতিহ্যগতভাবে পাথরের অবস্থানটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচনা করে, প্রথম এবং দ্বিতীয় মন্দিরের পবিত্র স্থান ।প্রথাগত ইহুদি উত্সগুলিতে, এটি সেই স্থান বলে বিশ্বাস করা হয় যেখান থেকে বিশ্বের সৃষ্টি শুরু হয়েছিল। [২৩]তদুপরি, পাথরটি সেই স্থান যেখানে ইব্রাহিম (আ:) তার পুত্র ইসমাইল (আ:)কে বলি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।

যদিও মুসলমানরা এখন মক্কায় কাবার দিকে প্রার্থনা করে, তারা একবার ইহুদিদের মতো টেম্পল মাউন্টের মুখোমুখি হয়েছিল; ইসলামিক ঐতিহ্য বলে যে মুহাম্মদ(স:) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ১৬ বা ১৭ মাস পর্যন্ত জেরুসালেমের দিকে নামাজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে মক্কার কাবার দিকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। [২৪]

টেম্পল ইনস্টিটিউট গম্বুজটিকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে চায় এবং এটিকে একটি তৃতীয় মন্দির দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে চায়। অনেক ইসরায়েলি আন্দোলনের ইচ্ছা সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত।

কিছু ধর্মীয় ইহুদি, র্যাবিনিক শিক্ষা অনুসরণ করে, বিশ্বাস করে যে মন্দিরটি শুধুমাত্র মেসিয়নিক যুগে পুনর্নির্মাণ করা উচিত, এবং ঈশ্বরের হাতকে জোর করা মানুষের জন্য অহংকার হবে।যাইহোক, কিছু ইভানজেলিকাল খ্রিস্টান মন্দিরের পুনর্নির্মাণকে আরমাগেডন এবং দ্বিতীয় আগমনের পূর্বশর্ত বলে মনে করেন। [২৫]জেরেমি গিম্পেল, ২০১৩ সালের ইসরায়েলি নির্বাচনে দ্য ইহুদি হোম রাজনৈতিক দলের একজন মার্কিন-জন্মত প্রার্থী, একটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন, যখন তিনি ২০১১ সালে ফ্লোরিডার একটি ফেলোশিপ চার্চ ইভানজেলিকাল গ্রুপকে ডোম হওয়ার জন্য অনুসরণ করা অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার কল্পনা করার জন্য রেকর্ড করা হয়েছিল যে ধ্বংস এবং তৃতীয় মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করতে।সমস্ত ধর্মপ্রচারকরা অবিলম্বে ইস্রায়েলে যাওয়ার জন্য ছুটে যাবে, তিনি মতামত দিয়েছিলেন। [২৬]

বর্ণনা

মৌলিক কাঠামো

গম্বুজের আড়াআড়ি অংশ (১৮৮৭ থেকে মুদ্রণ, গম্বুজের প্রথম বিশদ অঙ্কনের পরে, ১৮৩৩ সালে ফ্রেডেরিক ক্যাথারউড দ্বারা তৈরি)।

গঠনটি মূলত অষ্টভুজাকার।এটি তার কেন্দ্রে একটি গম্বুজ দ্বারা আবদ্ধ, প্রায় ২০ মি (৬৬ ফু) ব্যাস, ১৬টি সমর্থনে (৪টি স্তর এবং ১২টি কলাম) দাঁড়িয়ে থাকা একটি উঁচু বৃত্তাকার ড্রামের উপর মাউন্ট করা হয়েছে। [২৭]

এই বৃত্তের চারপাশে ২৪টি স্তম্ভ এবং কলামের একটি অষ্টভুজাকার তোরণ রয়েছে। অষ্টভুজাকার তোরণ এবং ভিতরের বৃত্তাকার ড্রাম একটি অভ্যন্তরীণ অ্যাম্বুলেটরিয়াম তৈরি করে যা পবিত্র শিলাকে ঘিরে রেখেছে।

বাইরের দেয়ালগুলোও অষ্টভুজাকৃতির।তারা প্রতিটির পরিমাপ প্রায় ১৮ মি (৬০ ফু) প্রশস্ত এবং ১১ মি (৩৬ ফু) উঁচু। [২৭]বাইরের এবং ভিতরের অষ্টভুজ একটি দ্বিতীয়, বাইরের অ্যাম্বুলেটরিয়াম তৈরি করে যা ভিতরেরটিকে ঘিরে থাকে।

বৃত্তাকার ড্রাম এবং বাইরের দেয়াল উভয়েরই অনেকগুলি জানালা রয়েছে। [২৭]

ভিতরের সজ্জা

গম্বুজের অভ্যন্তরীণ অংশটি মোজাইক, ফাইয়েন্স এবং মার্বেল দিয়ে সজ্জিত, যার বেশিরভাগই নির্মাণকাজ সমাপ্তির কয়েক শতাব্দী পরে যুক্ত করা হয়েছিল।এতে কোরআনের শিলালিপিও রয়েছে।এগুলি আজকের আদর্শ পাঠ্য থেকে পরিবর্তিত হয় (প্রধানত প্রথম থেকে তৃতীয় ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হয়) এবং পবিত্র শিলালিপির সাথে মিশ্রিত করা হয়েছে যা কুরআনে নেই।

গম্বুজটির চারপাশে স্থাপিত কুফিক লিপিতে উৎসর্গীকৃত শিলালিপিতে গম্বুজটি প্রথম সমাপ্ত হওয়ার বছর বলে মনে করা হয়, এএইচ ৭২ (৬৯১/২ সিই), যেখানে সংশ্লিষ্ট খলিফা এবং গম্বুজটির নির্মাতা আল-মালিকের নাম, মুছে ফেলা হয়েছিল এবং আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন ( ৮১৩-৮৩৩) এর নাম দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল যার শাসনামলে সংস্কার করা হয়েছিল।

বাহ্যিক প্রসাধন

বাইরের দেয়ালের অলঙ্করণ দুটি প্রধান পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে: প্রাথমিক উমাইয়া পরিকল্পনায় মার্বেল এবং মোজাইক ছিল, অনেকটা অভ্যন্তরীণ দেয়ালের মতো। [২৮] ১৬ শতকের অটোমান সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট এটিকে তুর্কি ফ্যায়েন্স টাইলস দিয়ে প্রতিস্থাপন করেন। [২৮]১৯৬০-এর দশকে ইতালিতে উত্পাদিত বিশ্বস্ত কপি দিয়ে অটোমান টাইল সজ্জা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।

সূরা ইয়া সিন ('কোরানের হৃদয়') টালির কাজের শীর্ষে খোদাই করা হয়েছে এবং ১৬ শতকে সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট দ্বারা কমিশন করা হয়েছিল। কোরআনের ১৭ তম সূরা আল-ইসরা,এটির উপরে খোদাই করা হয়েছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  • Creswell, K. A. C., The Origin of the Plan of the Dome of the Rock (Jerusalem, British School of Archaeology in Jerusalem, 1924).
  • Peterson, Andrew (1994). Dictionary of Islamic Architecture. London: Routledge. আইএসবিএন ০-৪১৫-০৬০৮৪-২
  • Braswell, G. (1996). Islam – Its Prophets, People, Politics and Power. Nashville, TN: Broadman and Holman Publishers.
  • Ali, A. (1946). The Holy Qur’an – Translation and Commentary. Bronx, NY: Islamic Propagation Centre International.
  • Islam, M. Anwarul; Al-Hamad, Zaid, "The Dome of the Rock: Origin of its Octagonal Plan", Palestine Exploration Quarterly, 139,2 (2007), pp. 109–28.
  • Christoph Luxenberg: Neudeutung der arabischen Inschrift im Felsendom zu Jerusalem. In: Karl-Heinz Ohlig / Gerd-R. Puin (Hg.): Die dunklen Anfänge. Neue Forschungen zur Entstehung und frühen Geschichte des Islam, Berlin (Verlag Hans Schiler) 2005, S. 124-147. English version: "A New Interpretation of the Arabic Inscription in Jerusalem's Dome of the Rock". In: Karl-Heinz Ohlig / Gerd-R. Puin (eds.): The Hidden Origins of Islam: New Research into Its Early History, Amherst, N.Y. (Prometheus Books) 2010

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ