গোয়াংজু অভ্যুত্থান

''গোয়াংজু অভ্যুত্থান'', যা ইউনেস্কো কর্তৃক প্রায়শঃই মে ১৮ গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান হিসেবে বলা হয় এবং গোয়াংজু গণতান্ত্রীকরণ আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। (Hangul: 광주 민주화 운동; hanja: 光州民主化運動; RR: Gwangju Minjuhwa Undong) ১৯৮০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে ১৮ থেকে ১৭শে মে হয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষের অভ্যত্থানকেই মূলতঃ গোয়াংজু অভ্যুত্থান বলা হয়ে থাকে। ধারণা করা হয় প্রায় ৬০৬ জন মানুষ এই আন্দোলনে মৃত্যুবরণ করেন। চুন দু-হোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় চন্নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে তাদের উপর সরকারি বাহিনী কর্তৃক গুলি বর্ষিত হয়। সরকারের বাহিনীর হাতে কিছু শিক্ষার্থীর নির্যাতন এবং গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় গোয়াংজুর সাধারণ জনতা স্থানীয় অস্ত্রাগার এবং পুলিশ স্টেশন লুট করে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়।[৩][৪] ২৭শে মে সাধারণ জনতার পরাজয়ের মাধ্যমে এই অভ্যুত্থান শেষ হয়। অভ্যুত্থান শুরুর তারিখানুসারে একে 5·18 (মে ১৮; Hangul: 오일팔; hanja: 五一八; RR: Oilpal) বলা হয়। কিছু সমালোচকের মতে চুন দু-হোয়ান সরকারিভাবে দায়িত্ব শুরুর আগেই এই ঘটনার শুরু হয়। তাই এটি তার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বলে চালিয়ে দেয়া উচিত নয়। যাইহোক,  চুন দু-হোয়ান  পরবর্তীতে দক্ষিণ কোরিয়ার  স্বঘোষিত নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।[৫][৬]

গোয়াংজু অভ্যুত্থান
মিনজাং ম্যুভমেন্ট-এর অংশ
মে ১৮ মেমোরিয়াল স্মৃতিস্তম্ভ
মে ১৮ই মিনজাং মেমোরিয়াল টাওয়ার
তারিখমে ১৮-২৭। ১৯৮০
অবস্থান
কারণ১৭ই মে সংঘটিত ঘটনায় পার্ক চুং-হী'র আততায়ীর হাতে মৃত্যু ঘটলে ১২ই ডিসেম্বর চুন দু-হোয়ান কর্তৃক দেশের ক্ষমতা দখল। প্রাদেশিক বৈষম্যতা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে জল্লা প্রদেশের বিচ্ছিন্নতা।
লক্ষ্যসমূহগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
প্রক্রিয়াসমূহপ্রতিবাদ মিছিল, অসহযোগ আন্দোলন এবং পরবর্তীতে সামরিক অভ্যুত্থান
ফলাফলসাধারণ জনগণ এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষতি
নাগরিক সংঘাতের দলসমূহ
গোয়াংজুর অধিবাসীরা
  • হানাহো
  • কোরিয়া প্রজাতন্ত্র সেনাবাহিনী
    • কোরিয়া প্রজাতন্ত্র সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়েলফেয়ার কমান্ড
নেতৃত্ব দানকারীগণ
নেতৃত্বের অপসারণ, পরবর্তীতে নিশপত্তি সমিতি গঠন
চুন দো- হোয়ান
জং হো-ইয়ং
ঈ হী-সং
হোয়াং ইয়োং-সি
জু ইয়োং-বক[১]
ক্ষয়ক্ষতি
১৬৫ জন মৃত, ৭৬ জন নিখোঁজ, ৩,৫১৫ জন আহত
১৩ জন মৃত (৯ জন সৈন্য, ৪ জন পুলিশ)[২]
২,০০০ এরও বেশি; আরও দেখুন হতাহত

চুন দু-হোয়ান রাষ্ট্রপতি থাকা কালীন অবস্থায় সমগ্র ঘটনাটি কম্যুনিস্টদের বিদ্রোহ বলে মিডিয়াতে প্রকাশ করা হয়।[৭] ১৯৯৭ সালে একটি জাতীয় সমাধিস্থান এবং একদিনের (১৮ই মে) শোক দিবস পালনের ঘোষণার মাধ্যমে অভ্যুত্থানে শহীদ ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।[৮]  


২০১১ সালে,  ১৯৮০ সালে গোয়াংজু সিটি হলে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানকে ইউনেস্কো বিশ্ব স্মৃতি নিবন্ধনের অংশ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। 

ইতিহাস

আঠারোো বছর শাসনের পর রাষ্ট্রপতি পার্ক চুং-হি ১৯৭৯ সালের ২৬শে অক্টোবর আততায়ীর হাতে নিহত হন। এতে দক্ষিণ কোরীয় রাজনীতিতে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয়। সম্পূর্ণ দেশের উপর নতুন রাষ্ট্রপতি চয় গিউ-হাহ এবং তার মন্ত্রীসভার নিয়ন্ত্রণ খুব কমই ছিল। ফলে দ্রুত ক্ষমতা বিস্তার করতে থাকা কোরিয়ান সামরিক বাহিনীর জেনারেল চুন দু-হোয়ান ১৯৭৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর দেশটির শাসনভার দখল করেন। পার্কের শাসনামলে নিরুদ্ধকৃৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১৯৮০ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সেমিস্টার সূচনার সাথে প্রাণ ফিরে পায়। এই সেমিস্টারে পূর্বে আন্দোলনে অংশ নেয়া বহিস্কৃত অধ্যাপক এবং শিক্ষার্থীদের পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং স্টুডেন্ট ইউনিয়ন গঠন করেন। এই ইউনিয়নই দেশ জুড়ে গণতন্ত্রের চেতনা ছড়িয়ে দেয় এবং সামরিক আইনের পতন ঘটায়। এছাড়াও ন্যুনতম বেতন স্কেল এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল তাদের আন্দোলেররই অংশ। [৯] এই সব কার্যাবলিরই প্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালের ১৫ই মে সওউল স্টেশনে প্রায় এক লাখ ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সামরিক আইন বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠে।

এর প্রতিক্রিয়ায় চুন দু-হোয়ান বেশ কিছু দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৭ই মে, চুন দু-হোয়ান মন্ত্রীসভাকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের উপর সামরিক আইন বলবৎ করেন। এর আগে, জেজু দ্বীপ সামরিক আইনের বাইরে ছিল। বর্ধিত সামরিক আইনে সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকালাপ নিষিদ্ধ এবং গণমাধ্যমকে কব্জা করা হয়। সামরিক আইনকে কার্যকর করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সৈন্য পাঠানো হয়। একই দিনে ৫৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ছাত্রনেতারা ১৫ইমে গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে তা নিয়ে বৈঠক করার সময় নিরাপত্তা কমান্ড ধ্বংসমূলক কার্যকালাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২৬ জন রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে দক্ষিণ জল্লা প্রদেশের কিম দে-জুংও ছিলেন।

রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিক বিবিধ কারণে দক্ষিণ জল্লা প্রদেশের,বিশেষ করে প্রদেশটির রাজধানী গোয়াংজুর খন্ডযুদ্ধ আসন্ন ছিল। জল্লা বা হোনামকে বলা হয় কোরিয়ার শস্যাগার। প্রতুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই এলাকা দেশী ও বিদেশী শক্তির প্রধান লক্ষ্য ছিল। [১০]ঐতিহাসিকভাবেই বিভিন্ন সময় এই প্রদেশ থেকেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে উঠে। দোংহাক চাষী অভ্যুত্থান, গোয়াংজু শিক্ষার্থী আন্দোলন, ইয়োসু-সুনচন বিদ্রোহ, কোরিয়াতে জাপানীদের আক্রমণ (১৫৯২-৯৮) এবং আরো অনেক আন্দোলেনের সূচনা এই জল্লা প্রদেশ থেকেই হয়। সাম্প্রতিক তৃতীয় দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং চতুর্থ দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র আমলে ঘটে যাওয়া আন্দোলনের হেতু হিসেবে নিচের তিনটি কারণ উল্লেখ করা যায়।

পার্ক চুং-হির আমলে দক্ষিণাঞ্চলে বিবিধ উন্নতি সাধিত হয় তার নিজ এলাকা , গিয়ংসাং অঞ্চলে। আর এই উন্নতি সাধনের খরচ আসে মূলতঃ জল্লা প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে। ফলে একনায়কতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনের সূচনা মূলতঃ এই অঞ্চল থেকেই শুরু হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৮০ সালের মে মাসে গোয়াংজু শহরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ ঘটে। এই গণজাগরণ ছিল প্রধানত জেনারেল চুন দু-হোয়ানের বিরুদ্ধে। চুন দু-হোয়ান গোয়াংজুর সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। [১১]

সামরিক আইন বলবৎ হওয়ার পর গোয়াংজু শহর ছিল সামরিক বাহিনীর অত্যাচার নিপীড়নের প্রধান স্থল। গোয়াংজুবাসীর আন্দোলের ফলেই গণতন্ত্র বিরোধী চুন দু-হোয়ানের গণতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমের বিপক্ষে সমগ্র কোরিয়াবাসী সচেতন হয়। তাই এই শহরের উপর তৎকালীন সামরিক শাসকের যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল। [১২]

সরকারের প্ররোচনায় গোয়াংজু অভ্যুত্থানকে সমাজতন্ত্রবাদীদের আন্দোলন বলে গণমাধ্যমসমূহে প্রচার করা হলেও সাধারণ জনগণের ভাষ্যমতে, গোয়াংজু অভ্যুত্থান ছিল গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার আন্দোলন। এই সৎ আন্দোলন কোন বিদ্রোহী কিংবা সমাজতন্ত্রবাদীদের আন্দোলন নয় বরং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী জন্নামের সাধারণ মানুষের নিজ গণতান্ত্রিক অধিকারের আন্দোলন ছিল। [১৩]

সময়প্রবাহ

মে ১৮-২১

দক্ষিণ জল্লা প্রদেশের পুরনো প্রাদৈশিক ভবন

১৮ই মে'র সকালে চন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গেইটে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে জমায়েত হয়। সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর আগমন ঘটে। প্রায় ৩০ জন সৈন্য তাদের বাধা দিলে একটি সংঘর্ষ হয়। সৈন্যরা শিক্ষার্থীদের উপর লাঠি চার্জ করলে তারা সৈন্যদের দিকে পাথর ছুড়ে। এরপর আন্দোলন ডাউনটাউনে, গিয়নামনো(জল্লানাম-দো প্রাদেশিক অফিসগামী সড়ক)এর দিকে সরে যায়। বিকাল নাগাদ প্রায় ২০০০ অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে সংঘাত তীব্র রূপ নেয়। প্রথম দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে আসলেও বিকাল ৪টার দিকে পরিস্থিতি নিজ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে কোরিয়ান সেনাবাহিনী সৈন্য বাহিনী পাঠায়। ৭ম এয়ারবর্ন ব্রিগেডের ৩৩তম ও ৩৫তম ব্যাটালিয়ন থেকে ৬৮৬ জন সৈন্য ঘটনাস্থলে এসে দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়ে অত্যচারের অভূতপূর্ব উদাহরণ তৈরি করে। [১৪]

নিষ্পত্তি সমিতি

ইতিমধ্যে গোয়াংজুর 'স্বাধীন' শহরে নাগরিকেরা "নিষ্পত্তি সমিতি ও শিক্ষার্থী" গঠন করে।প্রথমে প্রায় বিশ জন অধ্যাপক, প্রচারকারী এবং আইনজীবীর সমন্বয়ে তা গঠিত হয়েছিল। তারা সামরিক বাহিনীর সাথে গ্রেফতারকৃত নাগরিকদের মুক্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং সামরিক বাহিনীর অস্ত্র কেড়ে নেয়ার মত থেকে বিরত থাকার মত মধ্যস্থতা করে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা শেষকৃত্য, জনগণের মাঝে প্রচারণা, ট্রাফিক কন্ট্রোল, অস্ত্র সংগ্রহ এবং চিকিৎসার কাজ করে। শহরের সবকিছু ঠিকভাবে চললেও সামরিক বাহিনী তাৎক্ষনিকভাবে মিলিশিয়াদেরকে অস্ত্র জমা দিতে বললে মধ্যস্থতা পন্ড হয়। এতে নিষ্পত্তি সমিতিতে ভাঙ্গন ধরে। এক দল দ্রুত আত্মসমর্পণের রাজি থাকলেও অন্য দল দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র জমা দিতে রাজি হয় না। উত্তপ্ত বিতর্কের পর যারা শুরু থেকেই বাধা দিয়েছিল তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

অন্যান্য অঞ্চলে প্রতিবাদ

সরকারি বাহিনীর কঠোর দমনমূলক পদক্ষেপের কথা ছড়িয়ে পড়লে নিকটবর্তী প্রদেশ হোয়াসান, নাজু, হেনাম, মোকপো, ইয়ংআম, গাংজিন এবং মুয়ান অঞ্চলেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ প্রদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হলেও হেনাম এলাকায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী ও সশস্ত্র আন্দোলনকারীদের মাঝে বন্দুকযুদ্ধ হয়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২৪শে মে নাগাদ সব ধরনের আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ে শুধুমাত্র মোকপোতে ২৮শে মে পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকে।

২৬শে মে

২৬শে মে'র দিকে সামরিক বাহিনী পুনরায় শহরে প্রবেশের জন্য তৈরি হয়। নিষ্পত্তিকরণ কমিটির সদস্য নাগরিকেরা রাস্তায় শুয়ে তা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। খবর ছড়িয়ে পড়লে অস্ত্র হাতে সাধারণ জনগনের বাহিনী প্রাদেশিক দপ্তরের সামনে জড়ো হয়।

২৭ শে মে

বিকাল চারটার দিকে পাঁচ দলে বিভক্ত সৈন্যদল ডাউনটাউনে অবস্থান নেয় ৯০ মিনিটের মধ্যে সশস্ত্র জনগনের গড়া মিলিশিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে।

হতাহত

মংঅল-দোং সেমেট্রিতে গোয়াংজু অভ্যুত্থান এ নিহতদের সমাহিত করা হয়েছে।

১৯৮০ সালের গণঅভ্যুত্থানে কোন সর্বজনীন নিহত সংখ্যা পাওয়া যায় না। সামরিক আইন বহাল থাকা অবস্থায় সরকারিভাবে বলা হয় ১৪৪জন সাধারণ নাগরিক, ২২ জন সৈন্য, ৪ জন পুলিশ নিহত এবং ১২৭ জন সাধারণ নাগরিক, ১০৯ জন সৈন্য ও ১৪৪ জন পুলিশ জখম হয়েছিল। এছাড়াও "ভুয়া গুজব" ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কিছু সংখ্যাক গ্রেফতার হয়েছিল। [১৫]

মে ১৮ গভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এসোসিয়েশোনের মতে, অন্তত ১৬৫ জন মানুষ ১৮ থেকে ২৭ শে মে'র মাঝে মৃত্যুবরণ করে। এছাড়াও নিখোঁজ ৭৬জনকেও মৃত বলেই ধারণা করা হয়। ২৩ জন সৈন্য এবং চারজন পুলিশ বাহিনীর সদস্য অভ্যুত্থানে নিহত হয়। এর মাঝে ১৩ জন সৈন্য সংআম-দোং বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারায়। বিদ্রোহীদের গণপিটুনিতে পুলিশ বাহিনীর আরো কিছু সংখ্যক সদস্য গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।[১৬]

ফলাফল

সরকার অভ্যুত্থানটিকে কিম দে জুং এবং তার অনুসারী বিদ্রোহীদের অভিসন্ধিমূলকা কার্যক্রম বলে চিহ্নিত করে। কিমকে এই কারণে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়, যদিও তার শাস্তি পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে কমানো অহয়। সর্বমোট ১,৩৯৪ জনকে গোয়াংজু অভ্যুথানে সরাসরি জড়িত থাকার কারণে গ্রেফতার এবং ৪২৭ জনকে সাজা দেয়া হয়। এদের মাঝে ৭ জন মৃত্যুদন্ড এবং ১২ জন যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করেন। গোয়াংজু অভ্যুত্থান কোরিয়ার রাজনীতি এবং ইতিহাসে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে। চুন দু-হোয়ান সামরিক শক্তিবলে ক্ষমতা দখল করার কারণে ইতোমধ্যেই তার জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল। তবে সাধারণ জনগণের উপর বিশেষ ফোর্সের মাধ্যমে দমনমূলক ক্ষমতা প্রদর্শনের ফলে তার জনপ্রিয়তা তলানীতে গিয়ে ঠেকে। ১৯৮০ সালের এই আন্দোলন পরবর্তীকালে দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতন্ত্রের সূচনা করতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। গোয়াংজু অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষদের শোষণের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠে। ২০০০ সালের শুরুতে, ১৮ই মে মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন মানবাধিকার রক্ষার্থে সচেতন নাগরিকদের জন্য একটি বাৎসরিক পুরস্কার, গোয়াংজু মানবাধিকার পদক দেয়া শুরু করে। [১৭]

পূনর্মূল্যায়ন

গোয়াংজু মাংঅল- দোং গোরস্থানে ঘটনায় নিহতদের কবর দেয়া হয়। যারা বেঁচে ফিরেছিল এবং নিহতদের পরিবারের ১৯৮৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১৮ই মে বার্ষিক স্মরণসভার আয়োজন করে। ১৯৮০ সাল থেকে অনেকেই অভ্যুত্থানটির সঠিক ইতিহাস সবার কাছে তুলে ধরা এবং দোষীদেরকে শাস্তির আওতায় আনার জন্য দাবী করে আসছিল।

১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর থেকেই সরকারিভাবে অভ্যুত্থানটির পূনর্মূল্যানয়ন শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে কোরিয়ার পার্লামেন্টে গোয়াংজু অভ্যুথান বিষয়টি উঠে আসে এবং সরকারীভাবে অভ্যুত্থানটিকে "গোয়াংজু অভ্যুত্থান" নামকরণ করা হয়। ১৯৮৭ সালে নামকরণ করার সময় ইংরেজিতে অনুবাদ করার ক্ষেত্রে "গোয়াংজু গণুভ্যুত্থান" নামটিও গ্রহণযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

১৯৯৫ সালে জনগণে চাপে কোরিয়ার পার্লামেন্ট ১৮ই মে গণতন্ত্রীকরণ আন্দোলনের জন্য বিশেষ আইন পাশ করে। এই আইনাবলে "১২ই ডিসেম্বর ক্যুঁ দেঁতাত" এবং "গোয়াংজু অভ্যুত্থান" এর জন্য দায়ীদের শাস্তির বিধান করা হয়। ৮ জন রাজনীতিবিদকে ১৯৯৬ সালের হত্যাকান্ডের দায়ে অভিযুক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হয়। ১৯৯৭ সালে বিচারের রায় প্রকাশ হলে শুরুতেই চুন দু-হোয়ানের মৃত্যুদন্ড দেয়া হলেও পরে তা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে পরিবর্তন করা হয়। "১২ই ডিসেম্বর ক্যুঁ দেঁতাত" এর পিছনে চুন দু হোয়ানের সহযোগী,প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রো তে ঊকেও আজীবন কারাবাসের নির্দেশ দেয়া হয়। তবে ২২শে ডিসেম্বর কিম দে জুং এর উপদেশ রাষ্ট্রপতি কিম ইয়ংসাম সকল সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে ক্ষমা ঘোষণা করেন। ১৯৯৭ সালে, ১৮ই মে সরকারি ভাবে স্মরণীয় দিন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০২ সালে, একটি আইনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য বিশেষ সুবিধা এবং মাংঅল-দোং সিমেট্রিকে জাতীয় সিমেট্রি ঘোষণা দেয়া হয়।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ