১৯২২ চৌরী-চৌরা ঘটনা
চৌরী-চৌরা ঘটনা ঘটেছিল ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনামলে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে। ৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে ব্রিটিশ ভারতের উত্তর প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত গোরক্ষপুর জেলায় অবস্থিত চৌরী-চৌরাতে অসহযোগ আন্দোলন-এ অংশগ্রহণকারী বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ নির্যাতন শুরু করলে আন্দোলনকারীরা পুলিশকর্মীদের তাড়া করে ও পুলিশকর্মীরা থানায় আশ্রয় গ্রহণ করে।এই অবস্থায় বিক্ষোভকারীরা এক হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়ে পড়ে: তারা একটি পুলিশ থানায় আগুন দেয় এবং প্রত্যুত্তরে পুলিশ গুলি চালায়। এই ঘটনায় ৩ জন নাগরিক এবং ২৩ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়। আন্দোলনে হিংসার অনুপ্রবেশের জন্য গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করে দেয়। সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধীজির এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে একে "Himalayan Blunder" বলে অভিহিত করেছেন ।
পটভূমি
১৯২০ সালের প্রথম দিকে, ভারতীয়রা, গান্ধীজীর নেতৃত্বে, অহিংসার আন্দোলন-এ যুক্ত ছিল যা পরে অসহযোগ আন্দোলন নামে ভূষিত হয়। সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত এক অহিংসার আন্দোলনের মাধ্যমে, বিক্ষোভ সাজানো হয়েছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর নেতৃত্বে, অত্যাচারী সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করবার জন্য যার নাম ছিল রাওলাট আইন।
ঘটনা
এই ঘটনাটির দুদিন আগে অর্থাৎ ২রা ফেব্রুয়ারি, ১৯২২ সালে, স্বেচ্ছাসেবকেরা বাজারে মাংসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে এক অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করে। এখানে কিছু মানুষদের স্থানীয় পুলিশেরা মারে এবং দলের নেতাদের জেলে পুরে দেয়। যা করেছিল চৌরী-চৌরা পুলিশ স্টেশনের পুলিশেরা। প্রত্যুত্তরে ৪ই ফেব্রুয়ারি পুলিশের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদের আয়োজন করা হয় লোকাল বাজার এলাকায়।[১]
৪ই ফেব্রুয়ারি, প্রায় ২০০০-২৫০০ জড়ো হয়েছিল এবং চৌরী চৌরা বাজারের দিকে মিছিল করে যেতে শুরু করে। তারা বাজারে জায়গায় একটি মদের দোকান প্রহরী করতে জড়ো হয়। একজন নেতা গ্রেফতার হয়। কিছু জন লোকাল পুলিশ স্টেশনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে তাদের নেতাকে ছাড়াবার জন্য। ভিড় বাজারের দিকে বাড়তে শুরু করে এবং সশস্ত্র পুলিশ ওই ভিড়কে সামলাবার জন্য প্রেষিত হয়। ওই ভিড়কে ভয় দেখাবার জন্য এবং সামলাবার জন্য পুলিশেরা খোলা হাওয়াতে ওপরের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। এই সময়ই প্রতিবাদীরা উত্তেজিত হয়ে পরে এবং পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়তে শুরু করে।[২][৩][৪]
পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে বেরিয়ে যায় তখন ভারতের সাব-ইন্সপেক্টর গুলি চালাতে বলে। তার ফল হিসেবে মারা যায় ৩ জন সাধারণ মানুষ, এবং আরও অনেক মানুষ আহত হয়। এত ভিড়ের মধ্যে পুলিশ সামাল দিতে পারেনি। আর গুলি চালানোর ঘটনা প্রতিবাদীদের আরও ক্ষুদ্ধ করে তোলে এবং প্রতিবাদীরা পুলিশ চৌকির ভিতরে ঢুকে পরে এবং পুলিশ চৌকি জ্বালিয়ে দেয়। যেখানে ২৩ জন ভারতীয় পুলিশ ভিতরে আটক অবস্থায় মারা যায়।[২][৩][৪] বেশিরভাগ পুলিশদেরই পুড়িয়ে মেরে দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে এখনও অবধি চর্চা চলে যে ২২ না ২৩ জন পুলিশ মারা গেছিল, আসলে এই দ্বিধাটি রয়েছে কারণ ঘটনার পরে একজন আহত পুলিশ মারা গেছিলেন বলে।[২][৩][৪]
আরও পড়ুন
- Shahid Amin, Event, Metaphor, Memory: Chauri Chaura, 1922–1992. Berkeley, CA: University of California Press, 1995.
- Nishant Batsha, "Gandhi and Chauri Chaura" Intersections, vol. 10, no. 3 (Autumn 2009), pp. 28–41.