জর্জ ওয়াশিংটন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি

জর্জ ওয়াশিংটন (ফেব্রুয়ারি ২২, ১৭৩২[ক]ডিসেম্বর ১৪, ১৭৯৯) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি।[১] তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ-এ কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনের প্রধান বলে উল্লেখ করা হয় এবং তিনি তার জীবদ্দশায় এবং এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত।[২]

জর্জ ওয়াশিংটন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১ম রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
৩০ এপ্রিল, ১৭৮৯ [nb] – ৪ মার, ১৭৯৭
উপরাষ্ট্রপতিজন অ্যাডামস
পূর্বসূরীপদ প্রতিষ্ঠা
উত্তরসূরীজন অ্যাডামস
সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
কাজের মেয়াদ
১৩ জুলাই, ১৭৯৮ – ১৪ ডিসেম্বর, ১৭৯৯
নিয়োগদাতাজন অ্যাডামস
পূর্বসূরীজেমস উইলকিনসন
উত্তরসূরীআলেকজান্ডার হ্যামিলটন
কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়ক
কাজের মেয়াদ
১৫ জুন, ১৭৭৫ – ২৩ ডিসেম্বর, ১৭৮৩
নিয়োগদাতাকন্টিনেন্টাল কংগ্রেস
পূর্বসূরীপদ প্রতিষ্ঠা
উত্তরসূরীহেনরি নক্স (সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা)
ভার্জিনিয়া থেকে ২য় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস-এর দূত
কাজের মেয়াদ
১০ মে, ১৭৭৫ – ১৫ জুন, ১৭৭৫
পূর্বসূরীপদ প্রতিষ্ঠা
উত্তরসূরীথমাস জেফারসন
ভার্জিনিয়া থেকে ১ম কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস-এর দূত
কাজের মেয়াদ
৫ সেপ্টেম্বর, ১৭৭৪ – ২৬ অক্টোবর, ১৭৭৪
পূর্বসূরীপ্রতিষ্ঠাকালীন দূত
উত্তরসূরীপদ বাতিল
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৭৩২-০২-২২)২২ ফেব্রুয়ারি ১৭৩২
ওয়েস্টমোরল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, ব্রিটিশ আমেরিকা
মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর ১৭৯৯(1799-12-14) (বয়স ৬৭)
মাউন্ট ভারনন, ভার্জিনিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সমাধিস্থলওয়াশিংটন পারিবারিক কবরস্থান
মাউন্ট ভারনন, ভার্জিনিয়া
দাম্পত্য সঙ্গীমার্থা ড্যান্ড্রিজ কাস্টিস
ধর্মশ্বরবাদ
এপিসকোপাল
পুরস্কারকংগ্রেসনাল স্বর্ণ পদক
কংগ্রেসের ধন্যবাদ
স্বাক্ষরCursive signature in ink
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্যগ্রেট ব্রিটেনের রাজত্ব যুক্তরাজ্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
শাখাভার্জিনিয়ার প্রাদেশিক মিলিশিয়া
কন্টিনেন্টাল আর্মি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী
কাজের মেয়াদমিলিশিয়া: ১৭৫২–১৭৫৮
কন্টিনেন্টাল আর্মি: ১৭৭৫-১৭৮৩
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী: ১৭৯৮-১৭৯৯
পদসেনাপ্রধান (মরণোত্তর পদোন্নতি: ১৯৭৬)
কমান্ডভার্জিনিয়া উপনিবেশের সেনাবাহিনী
কন্টিনেন্টাল আর্মি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী
যুদ্ধফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ
 • জুমনভিয়া গ্লেনের যুদ্ধ
 • ফোর্ট নেসেসিটির যুদ্ধ
 • ব্রাডক অভিযান
 • মনঙ্গাহেলার যুদ্ধ
 • ফোর্বস অভিযান
আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ
 • বোস্টন অভিযান
 • নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সি অভিযান
 • ফিলাডেলফিয়া অভিযান
 • ইয়র্কটাউন অভিযান
^ March 4 is the official start of the first presidential term. April 6 is when Congress counted the votes of the Electoral College and certified a president. April 30 is when Washington was sworn in.

ওয়াশিংটন উপনিবেশিক ভার্জিনিয়ার এক ধনাট্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার তামাক চাষ এবং দাস ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিল। তিনি পরবর্তীতে উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করেন। তার যৌবনে তিনি উপনিবেশিক মিলিশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। ১৭৭৫ সালে দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস মার্কিন বিপ্লবের সময় তাকে কন্টিনেন্টাল আর্মির সর্বাধিনায়ক পদে পদোন্নতি প্রদান করেন। ওয়াশিংটন ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশদের বোস্টন থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য করে, কিন্তু পরের বছর তিনি ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হন এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় ধরা পড়ে যান। শীতকালের মাঝামাঝিতে ডিলাওয়্যার নদী পাড় হয়ে তিনি ট্রেন্টন এবং প্রিন্সটনের যুদ্ধে ব্রিটিশদের পরাজিত করেন এবং নিউ জার্সি পুনঃদখল করেন। তার কৌশলে কন্টিনেন্টাল সৈন্যদল ১৭৭৭ সালে সারাটোগায় এবং ১৭৮১ সালে ইয়র্কটাউনে দুটি প্রধান ব্রিটিশ সৈন্যদলকে বন্দী করতে সমর্থ হয়। ইতিহাসবেত্তাগণ ওয়াশিংটনকে তার জেনারেল নির্বাচন এবং তত্ত্বাবধান; সেনাদের নির্দেশ প্রদান; কংগ্রেস, রাজ্য সরকার ও তাদের মিলিশিয়ার সাথে সমন্বয়; এবং যুদ্ধের রসদ, সরঞ্জামাদি ও প্রশিক্ষণের জন্য তার উচ্চ-প্রশংসা করেন। যুদ্ধে ওয়াশিংটন

১৭৮৩ সালে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর, ওয়াশিংটন ক্ষমতা দখল না করে সর্বাধিনায়ক পদ থেকে অব্যহতি নেন, যা মার্কিন গনপ্রজাতন্ত্র প্রণয়নে তার অঙ্গীকারের প্রমাণ।[৩] ১৭৮৭ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত সাংবিধানিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এই সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। ওয়াশিংটন তার নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য প্রশংসিত ছিলেন এবং ইলেকটোরাল কলেজের প্রথম দুটি নির্বাচনে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।[৪] ১৭৮৯ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তিনি বিদ্রোহী অংশসমূহ একত্রিত করার কাজ করেন। তিনি সকল ফেডারেল এবং রাজ্যের সকল ঋণ পরিশোধের জন্য আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের অনুষ্ঠানের সমর্থন দেন, সরকারের একটি স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠা করেন, একটি কার্যকর করব্যবস্থা চালু করেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি থাকার পর তিনি অবসরে যান। দুই মেয়াদে এই অবসরের রীতি ১৯৪০ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চলে।

তার মৃত্যুর পর ভার্জিনিয়ার তৃতীয় হেনরি লি ওয়াশিংটনের প্রশংসা করে বলেন, "যুদ্ধে প্রথম, শান্তিতে প্রথম এবং তার জনগণের হৃদয়ে প্রথম।"[৬] তিনি জীবিত অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরও পরম পূজনীয়। সমালোচকদের এবং জনগণের উপর করা জরিপে ফলাফলে তিনি সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সেরা তিন রাষ্ট্রপতির একজন হিসেবে স্থান অধিকার করেছেন।

প্রারম্ভিক জীবন

জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মস্থান

জন্ম ও শিক্ষা (১৭৩২–১৭৫৩)

জর্জ ওয়াশিংটন পোপ্‌স ক্রিক এস্টেট ওয়েস্টমোরল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, ব্রিটিশ আমেরিকায় (বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অগাস্টিন ওয়াশিংটন (১৬৯৪-১৭৪৩) ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী ম্যারি বল ওয়াশিংটন-এর প্রথম সন্তান। জুলীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে তার জন্ম তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৭৩১ খ্রিষ্টাব্দ এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দ।[৭]

ওয়াশিংটন মূলত ইংরেজ ভদ্র সম্প্রদায় বংশোদ্ভূত। তার পূর্বপুরুষগণ ইংল্যান্ডের সালগ্রেভ থেকে আমেরিকায় যান। তার প্র-পিতামহ জন ওয়াশিংটন ১৬৫৬ সালে ভার্জিনিয়া গমন করেন এবং জমি ও ক্রীতদাসদের একত্রিত করেন। একই কাজ করেন তার পুত্র লরেন্স ওয়াশিংটন এবং তার নাতী, জর্জের পিতা অগাস্টিন ওয়াশিংটন। অগাস্টিন ছিলেন একজন তামাক চাষী এবং তিনি তার জমিতে লোহা উৎপাদনে বিনিয়োগ করেন।[৮] জর্জের বাল্যকালে অগাস্টিন ভার্জিনিয়ার ভদ্র সম্প্রদায়ের মধ্যবিত্ত সদস্য ছিলেন।[৯]

জর্জ ওয়াশিংটনের ছয়জন ভাইবোন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছিল, যাদের মধ্যে লরেন্স ও অগাস্টিন জুনিয়র - এই দুইজন ছিল তার পিতার প্রথম পক্ষের স্ত্রী জেন বাটলার ওয়াশিংটনের গর্ভের। তার বাকি চার ভাইবোনরা হল স্যামুয়েল, বেটি এলিজাবেথ, জন অগাস্টিন, ও চার্লস। তার তিনজন ভাইবোন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে মারা গিয়েছিল। তাদের মধ্যে তার বোন মিলড্রেড এক বছর বয়সে মারা যায়, তার সৎভাই বাটলার শিশুকালে মারা যায় এবং সৎবোন জেন বার বছর বয়সে মারা যায়, তখন জর্জের বয়স ছিল দুই। তার পিতা ১৭৪৩ সালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান। তখন তার বয়স এগার।[১০][১১]

ভূমি জরিপকার্য

ওয়াশিংটনের জরিপকার্যে অংশগ্রহণ শুরু হয় তার জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে স্কুলে চর্চার মাধ্যমে। এই চর্চার মাধ্যমে তিনি ভূমি জরিপ পেশার মূল বিষয়ের শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তার প্রথম জরিপ কাজের অভিজ্ঞতা হয় মাউন্ট ভার্ননের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। জরিপকার্যের তার প্রথম সুযোগ আসে ১৭৪৮ সালে যখন তার প্রতিবেশী এবং বন্ধু জর্জ ফেয়ারফ্যাক্সের নেতৃত্বে একটি জরিপ দলের সাথে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ পান। ফেয়ারফ্যাক্স পশ্চিম ভার্জিনিয়া সীমান্ত বরাবর ভূখণ্ডের বিশাল ভূভাগের জরিপের জন্য একটি পেশাদারী জরিপ সংস্থা গঠন করে। সেখানে তরুণ ওয়াশিংটন অমূল্য অভিজ্ঞতা লাভ করে।

ওয়াশিংটন ১৭৪৯ সালে ১৭ বছর বয়সে একজন পেশাদারী আমিন হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে। তিনি পরবর্তীতে উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি কলেজ থেকে কমিশন লাভ করেন[খ] এবং আমিনের লাইসেন্স পান এবং নব্য প্রতিষ্ঠিত কুলপিপার কাউন্টির সরকারি আমিন হন। তার ভাই লরেন্সের বিশিষ্ট ফেয়ারফ্যাক্স পরিবারের সাথে তার যোগাযোগের কারণে তিনি ভালো বেতনের এই সরকারি পদে চাকরি পান। তিনি তার প্রথম জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। এই সময়ে তিনি ৪০০ একর জমির ভূগর্ভস্থ অংশের নকশা তৈরি করেন এবং একটি প্রতিশ্রুতিশীল কর্মজীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে তার অনেক জমি অধিগ্রহণ করেন এবং এই কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে অধিগ্রহণকৃত শেনানডোহ উপত্যকায় জমি ক্রয় করেন।

পরের চার বছর ধরে ওয়াশিংটন পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় এবং ভার্জিনিয়া বিনিয়োগকারীদের দ্বারা পরিচালিত ভূমি বিনিয়োগ সংস্থা ওহাইও কোম্পানির জন্য ভূমি জরিপের কাজ করেন। তিনি ভার্জিনিয়া মিলিশিয়া কমান্ডার হিসেবে লরেন্সের অবস্থানের কারণে ভার্জিনিয়ার নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ররবার্ট ডিনউইডির নজরে আসেন। তিনি নজরে না আসার কোন কারণ ছিল না। তিনি ছিলেন ছয় ফুটের অধিক লম্বা,[গ] এবং তার সমসাময়িক অধিকাংশের তুলনায় লম্বা ছিলেন।[১৪] ১৭৫০ সালের অক্টোবর মাসে ওয়াশিংটন সরকারি আমিন পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যদিও তিনি তার নতুন পেশায় পরবর্তী তিন বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। তিনি দক্ষিণ ভার্জিনিয়া জন্য সেনা বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা হিসাবে সামরিক লাভের পূর্ব পর্যন্ত আরো দুই বছর পেশাগতভাবে তার জরিপকার্য অব্যাহত রাখেন এবং তাকে বেশিরভাগই ফ্রেডেরিক কাউন্টিতে কাজ করতে দেখা যায়। ১৭২৫ সাল নাগাদ ওয়াশিংটন প্রায় ২০০টি জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন এবং ৬০ হাজার একরের বেশি ভূমির জরিপ করেন। তিনি ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত তার জীবনের বিভিন্ন সময়ে জরিপের কাজ চালিয়ে যান।[১৪]

ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ

ওয়াশিংটনের মানচিত্র, তার ওহাইওর দিনলিপি (১৭৫৩–১৭৫৪) থেকে।

ওয়াশিংটন ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধে[ঘ] ভার্জিনিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশের মিলিশিয়ার মেজর হিসেবে সেনাবাহিনীতে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৭৫৩ সালে তাকে ব্রিটিশ রাজের দূত হিসেবে দুর-উত্তরে বর্তমান পেনসিলভানিয়ার এরিতে ফরাসি ও ভারতীয় অফিসালদের নিকট পাঠানো হয়। ওহাইও কোম্পানি ছিল ওহাইও উপত্যকায় ব্যবসায় সম্প্রসারণের জন্য ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের অন্যতম মাধ্যম, যার মাধ্যমে ভারতীয় বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।[১৫] ১৭৫৩ সালে ফরাসিরা ওহাইও কাউন্টিতে তাদের সেনা মোতায়ন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভানিয়ার ব্রিটিশ উপনিবেশ ওহাইওকে তাদের নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দাবী করে। এ থেকে দুই অঞ্চলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, যা পরে ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ (১৭৫৪-১৭৬২) নামে পরিচিতি লাভ করে এবং এ থেকেই বিশ্বব্যাপী সাত বছরের যুদ্ধ (১৭৫৬-৬৩) শুরু হয়। ওয়াশিংটন শুরু থেকেই এই যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়েন।

যুদ্ধের শুরু

উপনিবেশিক ভার্জিনিয়ার ডেপুটি গভর্নর রবার্ট ডিনউইডিকে ব্রিটিশ সরকার নির্দেশ দেয় ওহাইও নদী অববাহিকাসহ ব্রিটিশ অঞ্চলসমূহ দাবী করছে এমন প্রতিপক্ষকে পাহারা দিতে। ১৭৫৩ সালের শেষের দিকে ডিনউইডি ওয়াশিংটনকে ফরাসিদের ওহাইও উপত্যকা ছাড়ার চিঠি পাঠাতে নির্দেশ দেন।[১৫] এর এক বছর পূর্বে মিলিশিয়ার নতুন জেনারেল হিসেবে দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর ওয়াশিংটন নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। এই সফরে ওয়াশিংটন মিলিশিয়ার সাথে ফরাসিদের আসন্ন সংঘর্ষে তাদেরকে সমর্থন দেওয়ার জন্য লগ্‌সটাউনে তানাচারিসন ("হাফ-কিং" নামেও পরিচিত ছিল) এবং ইংল্যান্ডের সাথে সন্ধিকৃত অন্যান্য ইরোকোইস প্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি চিঠিটি স্থানীয় ফরাসি কমান্ডার জাক লেগার্দিয়ো দে সেন্ট-পিঁয়েরের কাছে পাঠান। জাক ভদ্রভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন।[১৬] ওয়াশিংটন এই সময়ে একটি দিনলিপি রাখতেন যা ডিনিউডির আদেশে উইলিয়াম হান্টার প্রকাশ করেন এবং এই দিনলিপি তাকে ভার্জিনিয়ার বিখ্যাত করে তুলে।[১৭] তার এই জনপ্রিয়তা তাকে কমিশন পেতে এবং তার সামরিক জীবন শুরু করতে সাহায্য করে।[১৮]

ফোর্ট নেসিসিটিতে জর্জ ওয়াশিংটনের ইভেনিং কাউন্সিল।

ডিনউইডি ওয়াশিংটনকে ওহাইও কাউন্টিতে প্রেরণ করে বর্তমান পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গে অবস্থিত ওহাইও কোম্পানির নির্মাণাধীন দুর্গ পাহারা দেওয়ার জন্য। তার সেখানে পৌঁছানোর পূর্বে একটি ফরাসি সেনাদল সেখানকার উপনিবেশিক বাণিজ্যকর্মীদের বিতাড়িত করে ডুকোয়েন্স দুর্গ নির্মাণ শুরু করে। ফরাসি সৈন্যদের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ পরিচালনা করেন জোসেপ কোলোঁ দে জুমনভিয়া। তাদের খোঁজ করেন তানাচারিসন এবং বর্তমান পেনসিলভানিয়ার ইউনিয়নটাউনের কয়েকজন সৈন্য। ১৭৫৪ সালের ২৮ মে ওয়াশিংটন এবং তার কয়েকটি মিলিশিয়া ইউনিট এবং তাদের মিঙ্গো সহযোগীদের সহায়তায় ফরাসিদের অতর্কিত আক্রমণ করে, যা জুমনভিয়া গ্লেনের যুদ্ধ নামে পরিচিতি লাভ করে। যুদ্ধে বা যুদ্ধের পরে আসলে কি হয়েছিল এই বিষয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কিন্তু কিছু প্রাথমিক সূত্র এই বিষয়ে একমত হয়েছে যে এই যুদ্ধ ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। জুমনভিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তার দলের লোকজনকে হয় মেরে ফেলা হয়েছিল বা বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে জুমনভিয়া তানাচারিসনের হাতে খুন হয়েছিল, বা ওয়াশিংটনের সাথে যখন বসেছিল তখন কেউ বন্দুক দিয়ে গুলি করে হত্যা করে, নাকি অন্য কোন উপায়ে হত্যা করা হয়েছিল এই বিষয় স্পষ্ট নয়।[১৯][২০] এই যুদ্ধের পর তানাচারিসন ওয়াশিংটনকে 'শহর ধ্বংসকারী' আখ্যা প্রদান করেন।[২১]

ফরাসিরা এই আক্রমণের প্রতিবাদে ১৭৫৪ সালের জুলাইয়ে ফোর্ট নেসেসিটিতে আক্রমণ করে এবং ওয়াশিংটনকে বন্দী করে নিয়ে যায়।[২২] তারা পরে তাকে ভার্জিনিয়ায় তার দলের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়। ইতিহাসবিদ জোসেফ এলিসের ভাষ্য হল এই সময় ওয়াশিংটনের সাহসিকতা, নতুন পরিকল্পনা, অনভিজ্ঞতা, এবং প্রচন্ডতা লক্ষ্য করা যায়।[২৩] ভার্জিনিয়ায় ফিরে ওয়াশিংটন ক্যাপ্টেন হিসেবে তার পদ অবনতি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার কমিশন থেকে অব্যহতি নেন।[২৪] ওয়াশিংটনের ওহাইও কাউন্টিতে আক্রমণের আন্তর্জাতিক প্রভাব দেখা যায়। ফরাসিরা ওয়াশিংটনকে জুমনভিয়াকে গুপ্তহত্যার জন্য অভিযুক্ত করে। তারা জুমনভিয়াকে কূটনৈতিক মিশনের অংশ ছিল বলে দাবী করে।[২৩] ফ্রান্স এবং ব্রিটেন উভয়ই এই অঞ্চলের সমন্বয় ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং উভয় দেশ ১৭৫৫ সালে উত্তর আমেরিকায় সৈন্য পাঠায়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭৫৬ সালে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।[২৫]

ব্রাডক অভিযান ১৭৫৫

১৭৫৫ সালে ওয়াশিংটন দুর্ভাগ্যজনক ব্রাডক অভিযানে ব্রিটিশ জেনারেল এডওয়ার্ড ব্রাডকের ঊর্ধ্বতন মার্কিন সাহায্য প্রদানকারী হন। ইহা ছিল উপনিবেশসমূহে ব্রিতিশদের সবচেয়ে বড় অভিযান এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ফরাসিদের ওহাইও কাউন্টি থেকে বিতাড়িত করা ও প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ডিউকোয়েন্স দুর্গ দখল করা।[২৬] ওয়াশিংটন প্রথমে ব্রাডকের কাছ থেকে মেজর হিসেবে নিয়োগ চান, কিন্তু যখন বলা হয় যে লন্ডন থেকে না দেওয়া হলে ক্যাপ্টেনের উপর কোন পদ দেওয়া হবে না তখন তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন। অভিযানে যাত্রাপথে ওয়াশিংটন মাথা ব্যথা এবং জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তা সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধযাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং যখন সৈন্যদল ধীরগতিতে চলতে থাকে তিনি ব্রাডককে সৈন্যদলকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করতে পরামর্শ দেন। প্রাথমিক ও তুলনামূলক হালকা অস্ত্রসজ্জিত সৈন্যরা দ্রুত গতিতে চলতে পারে তাই তাদের সামনে রাখতে এবং তাদের পিছনে ভারী অস্ত্রসজ্জিত সৈন্যদের রাখতে বলেন। ব্রাডক তার পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং সামনের ভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[২৭][২৮]

মনঙ্গাহেলার যুদ্ধে ফরাসি এবং তাদের মিত্র ভারতীয়রা ব্রাডকের স্বল্প সৈন্যদলে গুপ্ত আক্রমণ চালায় এবং জেনারেল ব্রাডক মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। বিপর্যস্ত ও হতাহতের ঘটনার পর ব্রিটিশরা ভয়ার্ত ও ছত্রভঙ্গ হয়ে যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে আসে। ওয়াশিংটন যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরে যায় এবং ব্রিটিশ ও ভার্জিনীয় বিশৃঙ্খল সৈন্যদলকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এই কাজে তিনি তার অসুস্থতা সত্ত্বেও সাহসিকতা ও শক্তির পরিচয় দেন। তার দুটি ঘোড়া গুলিবিদ্ধ হয় এবং তার মাথার টুপি ও কোটে বেশ কয়েকটি গুলি এসে লাগে। যুদ্ধে ৯৭৬ জনের ব্রিটিশ সৈন্যদলের দুই তৃতীয়াংশ মারা যায় এবং আহত হয়। ফোর্ট নেসেসিটির যুদ্ধে ওয়াশিংটনের নির্দেশনার যারা সমালোচনা করেছিলেন তারা এই যুদ্ধে তার কাজের জন্য তাকে পুনরায় বাহবা দেন।[২৯]

ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের কমান্ডার

লে. গভর্নর ডিনউইডি ১৭৫৫ সালে ওয়াশিংটনকে "ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের কর্নেল এবং সমস্ত বাহিনীর সর্বাধিনায়ক" হিসেবে কমিশন প্রদান করেন এবং তাকে ভার্জিনিয়ের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব প্রদান করেন। ভার্জিনিয়া রেজিমেন্ট উপনিবেশসমূহের মধ্যে প্রথম পূর্ণকালীন মার্কিন সামরিক ইউনিট ছিল, যা পার্ট টাইম মিলিশিয়া এবং ব্রিটিশ নিয়মিত ইউনিটের বিপরীত ছিল। ওয়াশিংটনকে "রক্ষনাত্মক বা আক্রমনাত্মক", যেটা তিনি ভাল মনে করেন সেভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।[৩০] তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন গ্রহণ করেন, কিন্তু অফিসার পদে পদোন্নতির লাল কোট (এবং বেতন) তাকে এড়িয়ে যেতে থাকে। ব্রিটিশ সেনাদের ভার্জিনিয়া রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ডিনউইডিও ব্যর্থ হয়েছিলেন।[৩১]

হাজার সৈন্যের নির্দেশ প্রদানে ওয়াশিংটন একজন কড়াশাসক ছিলেন এবং তিনি প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমে ভারতীয়দের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; তার রেজিমেন্ট ১০ মাসে ২০টি যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং তার এক তৃতীয়াংশ মানুষ হারায়। ওয়াশিংটনের জোরালো প্রচেষ্টায় ভার্জিনিয়ার সীমান্ত জনগণ অন্যান্য উপনিবেশ থেকে কম পীড়িত হয়। ইতিহাসবেত্তা এলিস এই প্রসঙ্গে বলেন যে এই যুদ্ধে "এটি ছিল তার একমাত্র অযোগ্য সাফল্য"।[৩২][৩৩]

১৭৫৮ সালে ওয়াশিংটনে ডিউকোয়েন্স দুর্গ দখল করার জন্য ফোর্বস অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ গোলা-বারুদ প্রদর্শনীতে বিব্রত হন। তার দল এবং অন্য ব্রিটিশ সৈন্যদল মনে করে তাদের ফরাসি শত্রুরা এই প্রদর্শনী সংগঠিত করেছে। এতে তারাও পাল্টা গোলা-বারুদ নিক্ষেপ করে এবং এই দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়। ওয়াশিংটন এই অভিযানের অন্য কোনও আক্রমণের সাথে জড়িত ছিলেন না। ব্রিটিশরা এতে কৌশলগত জয়লাভ করে এবং ফরাসিরা দুর্গের ত্যাগ করলে তারা ওহাইও উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। অভিযানের পর তিনি ১৭৫৮ সালের ডিসেম্বরে ভার্জিনিয়া রেজিমেন্ট কমিশন থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৭৭৫ সালে বিপ্লব শুরু না হওয়া পর্যন্ত তিনি সামরিক জীবনে ফিরে আসেননি।[৩৪]

যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়: মাউন্ট ভারনন (১৭৫৯-৭৪)

১৭৫৭ সালে জন ওলাস্টন কর্তৃক অঙ্কিত মার্থা ওয়াশিংটনের মেজোতিন্ত।

ওয়াশিংটন ১৭৫৯ সালের ৬ জানুয়ারি ধনী বিধবা মার্থা ডানড্রিজ কাস্টিসকে বিয়ে করেন। তখন মার্থার বয়স ছিল ২৮। ওয়াশিংটনের প্রাপ্ত চিঠিসমূহ থেকে বলা যায় যে তার বন্ধুের স্ত্রী স্যালি ফেয়ারফ্যাক্সের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে। তবুও জর্জ এবং মার্থার বিবাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, কারণ মার্থা বুদ্ধিমান, করুণাময় এবং প্লান্ট এস্টেট পরিচালনায় অভিজ্ঞ ছিলেন।[৩৫]

একসাথে তারা মার্থার আগের পক্ষের সন্তান, জন পারেক কাস্টিস এবং মার্থা পার্ক (প্যাস্টি) কাস্টিসকে প্রতিপালন করেন। পরে তারা মার্থার নাতি-নাতনী এলিনর পার্ক কাস্টিস এবং জর্জ ওয়াশিংটন পার্ক কাস্টিসকে প্রতিপালন করেছিল। জর্জ এবং মার্থা দম্পতির কোন সন্তানই ছিল না; ১৭৫১ সালে গুটিবসন্ত রোগ তাকে বন্ধ্যা করে দেয়।[৩৬][৩৭][ঙ] নব-দম্পতি আলেকজান্দ্রিয়ার কাছাকাছি মাউন্ট ভারননে চলে যান, এবং সেখানে তিনি আবাদকারী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবন গ্রহণ করেন।

ওয়াশিংটন তার বিয়ের পর মাউন্ট ভারননে তার এস্টেট বর্ধিত করেন।

মার্থার সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিবাহের ফলে তার সম্পত্তি এবং সামাজিক অবস্থান উন্নততর হয় এবং তিনি ভার্জিনিয়ার অন্যতম ধনীদের একজন হয়ে ওঠেন। তিনি তার বিয়ের ফলে ১৮,০০০-একর (৭৩ কিমি) কাস্টস এস্টেটের এক-তৃতীয়াংশের মালিক হন, যার মূল্য ছিল প্রায় ১০০,০০০ মার্কিন ডলার, এবং মার্থার সন্তানদের প্রতি যত্নবান ছিলেন এবং তাদের পক্ষে বাকি সম্পত্তির দেখাশুনা করেন।[৩৮]

১৭৫৪ সালে রবার্ট ডিনউইডি প্রতিজ্ঞা করেন, যে সকল সেনা এবং কর্মকর্তা ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জমি দান করা হবে।[৩৯] ওয়াশিংটন নতুন গভর্নর লর্ড বোটেটোর্টের কাছ থেকে জমি দখল করে নেন এবং ১৭৬৯-৭০ সালে ডিনউইডির প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন।[৩৯][৪০] পাশাপাশি ওয়াশিংটন বর্তমান ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে ২৩,২০০ একর (৯৪ কিমি) জমির মালিকানা লাভ করেন, যে স্থানে কানাওহা নদী প্রবাহিত হয়ে ওহাইও নদীতে পতিত হয়েছে।[৪১] পরে তিনি তার নিজের নামে আরও জমি ক্রয় করেছিলেন। ১৭৭৫ সাল নাগাদ ওয়াশিংটন মাউন্ট ভারননের সীমানা দ্বিগুণ করে ৬,৫০০ একর (২৬ কিমি) পর্যন্ত নিয়ে যান, এবং এর ক্রীতদাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১০০ জনের অধিকে নিয়ে যান।[৪২]

সম্মানিত সামরিক বীর ও বৃহৎ জমিদার হিসেবে তিনি স্থানীয় অফিস স্থাপন করেন এবং ভার্জিনিয়ার প্রাদেশিক আইন পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৭৫৮ সাল থেকে শুরু ক্রএ সাত বছর হাউজ অব বুরগেসের পক্ষে ফ্রেডেরিক কাউন্টির প্রতিনিধিত্ব করেন।[৪২] ১৭৫৮ সালের নির্বাচনে তিনি ভোটারদের ১৭০ গ্যালন চালের গুঁড়ো, বিয়ার, মদ, হার্ড সিডার এবং ব্র্যান্ডি নিয়ে যান, যদিও ফোর্বস অভিযানে তিনি বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত ছিলেন।[৪৩] বেশ কয়েকজন স্থানীয় অভিজাতদের সহায়তায় ওয়াশিংটন আসনটিতে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে বাকি তিনজন প্রার্থীকে পরাজিত করে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।[৪৪] আইন পরিষদে তার কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়াশিংটন খুব কম কথা বলতেন, কিন্তু ১৭৬০-এর দশকে তিনি ব্রিটেনের কর ও বাণিজ্য নীতির উল্লেখযোগ্য সমালোচক হয়ে ওঠেন।[৪৫]

মার্কিন বিপ্লব (১৯৭৫-৮৩)

ওয়াশিংটন আমেরিকান বিপ্লবে নেতৃস্থানীয় সামরিক এবং রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করে। ১৭৬৭ সালে যখন তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিভিন্ন কর্মের বিরুদ্ধে প্রথম রাজনৈতিক অবস্থান নেন তখন থেকেই এই বিপ্লবে তার সম্পৃক্ততা শুরু হয়। তিনি উপনিবেশসমূহের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত প্রথম কর আইন ১৭৬৫ সালের স্ট্যাম্প অ্যাক্টের বিরোধিতা করেন। এই অ্যাক্টে উপনিবেশ থেকে কোন প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি ১৭৬৭ সালে প্রণীত টাউনশিড অ্যাক্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তিনি ক্রমবর্ধমান ঔপনিবেশিক প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। তিনি ১৭৬৯ সালের মে মাসে এই অ্যাক্ট বাতিল করা না হলে ভার্জিনিয়ায় ইংরেজদের পণ্য বর্জন করার প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবটি নথিবদ্ধ করেন তার বন্ধু জর্জ ম্যাসন।[৪৬]

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৭৭০ সালে টাউনশেড অ্যাক্ট বাতিল করে। ১৭৭৪ সালে ওয়াশিংটন ইনটলারেবল অ্যাক্টে এই আইনকে "আমাদের অধিকার ও স্বাধিকারের আগ্রাসন" হিসেবে উল্লেখ করেন।[৪৭] তিনি বন্ধু ব্রায়ান ফেয়ারফ্যাক্সকে বলেন, "আমার মনে হয় গ্রেট ব্রিটেনের পার্লামেন্টের আমার অনুমতি ছাড়া আমার পকেটে হাত দেওয়ার অধিকার নেই।" তিনি আরও বলেন যে আমেরিকানরা কোন প্রকার অত্যাচারের নিকট মাথা নত করবে না।[৪৮]

১৭৭৪ সালের জুলাই মাসে তিনি একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন, যেখানে "ফেয়ারফ্যাক্স রিসলভস" গৃহীত হয়েছিল। এই রিসলভটিতে অন্যান্য বিষয়াবলির সাথে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের আহ্বান জানানো হয়। আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন প্রথম ভার্জিনিয়া কনভেনশনে যোগ দেন, যেখানে তিনি প্রথম কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন।[৪৯][৫০]

সর্বাধিনায়ক

চার্লস উইলসন পিল কর্তৃক তৈল রঙে অঙ্কিত জর্জ ওয়াশিংটন, জুলাই ১৭৭৬, ব্রুকলিন জাদুঘর।

১৭৭৫ সালের এপ্রিল মাসে বোস্টনের নিকটবর্তী সংগঠিত লেক্সিংটন ও কনকর্ডের যুদ্ধের পরে উপনিবেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ওয়াশিংটন দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে সামরিক উর্দিতে হাজির হন, যা তার যুদ্ধের প্রস্তুতি নির্দেশ করে।[৫১] তার সম্মান, সামরিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ছিল এবং তিনি মিলিটারি প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনী পরিচালক এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভার্জিনিয়া সর্ববৃহৎ উপনিবেশ ছিল এবং স্বীকৃতি লাভের যোগ্য ছিল। নিউ ইংল্যান্ডে প্রথম যুদ্ধ শুরু হয় এবং তার উপলব্ধি করে যে তাদের দক্ষিণের সমর্থন প্রয়োজন। ওয়াশিংটন সর্বাধিনায়কের দপ্তর লাভের আশা করেনি এবং তিনি মনে করতেন তিনি এই পদের যোগ্য নন,[৫২][৫৩] কিন্তু তাতে কোন গুরুতর প্রতিযোগিতা ছিল না।[৫৪] কংগ্রেস ১৭৭৫ সালের ১৪ জুন কন্টিনেন্টাল আর্মি গড়ে তুলে।[৫৫] ম্যাসাচুসেটসের জন অ্যাডামস ওয়াশিংটনকে মনোনীত করেন, এবং পরে তাকে কন্টিনেন্টাল আর্মির পূর্ণ জেনারেল এবং সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।[৫২][৫৬][৫৭] ওয়াশিংটনের বেতন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান, যার ফলে তিনি "মহৎ এবং উদার" কমান্ডিং অফিসার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।[৫৮]

ব্রিটিশরা তখন ওয়াশিংটন এবং তার সেনাবাহিনীর দ্বারা সংগঠিত হতে যাওয়া আসন্ন বিপদ অনুধাবন করে। ১৭৭৫ সালের ২৩ আগস্ট ব্রিটেন মার্কিন দেশপ্রেমিককে রাজদ্রোহী হিসেবে অভিযুক্ত করে রাজকীয় ফরমান জারি করে। যদি তারা বলপ্রয়োগ করে, তবে তাদের সম্পত্তি জব্দ করা হবে এবং তাদের নেতাদের ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হবে।[৫৯]

জেনারেল ওয়াশিংটন যুদ্ধে তিনটি ভূমিকা পালন করেন। প্রথমত, তিনি ১৭৭৫-৭৭ সালে এবং পুনরায় ১৯৮১ সালে প্রধান ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বিপক্ষে সৈন্যদের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি অনেকগুলো যুদ্ধে পরাজিত হন, কিন্তু তিনি যুদ্ধে তার সেনাবাহিনী নিয়ে আত্মসমার্পণ করেন নি। তিনি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অক্লান্তভাবে যুদ্ধ করেন। তিনি কংগ্রেসের সহযোগিতায় যুদ্ধের সামগ্রিক কৌশলের নকশা করেন।[৬০]

জন ট্রামবুল অঙ্কিত জেনারেল জর্জ ওয়াশিংটন অ্যাট ট্রেন্টন, ইয়েল ইউনিভার্সিটি আর্ট গ্যালারি (১৭৯২)।

দ্বিতীয়ত, তিনি সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করতেন এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। তিনি নিয়মিত সৈনিক নিয়োগ করেন এবং অভিজ্ঞ প্রুশীয় সৈনিক ব্যারন ফন স্টেউবেনকে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নিয়োগ দেন। যুদ্ধের প্রচেষ্টা এবং সেনা সরবরাহ কংগ্রেসের আওতায় ছিল,[৬১] কিন্তু ওয়াশিংটন কংগ্রেসকে অপরিহার্য উপাদানসমূহ প্রদান করার জন্য চাপ প্রদান করতেন।[৬২] ১৭৭৬ সালের জুন মাসে কংগ্রেসের প্রথম প্রচেষ্টার পাশাপাশি "যুদ্ধ ও অর্ডিন্যান্স বোর্ড" কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৭৭ সালের জুলাই মাসে তা বোর্ড অব ওয়ারের আওতায় চলে যায়, এই কমিটিতে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৬১] সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের কাঠামো ছিল জগাখিচুড়ি ধরনের ছিল, যার তদারকি করত কংগ্রেসনাল নিয়োগকর্তারা (এবং কংগ্রেস মাঝে মাঝে ওয়াশিংটনের মতামত ব্যতীতই নিয়োগ প্রদান করত)।[৬০]

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ