দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, জর্ডানের রাজা

দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন (আরবি: عبد الله الثاني بن الحسين, ʿআবদুল্লাহ আল-সানি বিন আল-হুসাইন; জন্ম ৩০ জানুয়ারি ১৯৬২) জর্ডানের বর্তমান বাদশাহ। পিতা হুসাইন বিন তালাল মারা যাওয়ার পর ১৯৯৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি ক্ষমতা লাভ করেন। তিনি হাশিমি রাজপরিবারের সদস্য। এই পরিবার ১৯২১ সাল থেকে জর্ডান শাসন করে আসছে। তাদের মুহাম্মদ (সা.) এর বংশধর বলা হয়।[২]

দ্বিতীয় আবদুল্লাহ
জর্ডানের বাদশাহ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ
জর্ডানের বাদশাহ
রাজত্ব৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ – বর্তমান
অভিষেক৯ জুন ১৯৯৯
পূর্বসূরিহুসাইন বিন তালাল
উত্তরাধিকারীহুসাইন বিন আবদুল্লাহ
প্রধানমন্ত্রী
তালিকা দেখুন
  • ফায়েজ আল-তারাওনিহ
    আবদেলরাওফ আল-রাওয়াবদিহ
    আলি আবু আল-রাগিব
    ফয়সাল আল-ফায়েজ
    আদনান বাদরান
    মারুফ আল-বাখিত
    নাদের আল-দাহাবি
    সামির রিফাই
    মারুফ আল-বাখিত
    আওন শওকত আল-খাসাওনিহ
    ফায়েজ আল-তারাওনিহ
    আবদুল্লাহ এনসুর
জন্ম (1962-01-30) ৩০ জানুয়ারি ১৯৬২ (বয়স ৬২)[১]
আম্মান, জর্ডান
দাম্পত্য সঙ্গীরানিয়া আল-আবদুল্লাহ
বংশধর
বিস্তারিত
যুবরাজ হুসাইন বিন আবদুল্লাহ
প্রিন্সেস ইমান বিনতে আবদুল্লাহ
প্রিন্সেস সালমা বিনতে আবদুল্লাহ
প্রিন্স হাশিম বিন আল আবদুল্লাহ
পূর্ণ নাম
আবদুল্লাহ বিন হুসাইন বিন তালাল বিন আবদুল্লাহ বিন হুসাইন বিন আলি
রাজবংশআল-হাশিম
পিতাহুসাইন বিন তালাল
মাতামুনা আল-হুসাইন
ধর্মইসলাম (সুন্নি)

আবদুল্লাহ ছিলেন বাদশাহ হুসাইন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মুনা আল-হুসাইনের সন্তান। জন্মের অল্পকাল পরে তাকে যুবরাজ ঘোষণা করা হয়। বাদশাহ হুসাইন ১৯৬৫ সালে এই উপাধি তার ভাই হাসানকে সমর্পণ করেছিলেন। তবে ১৯৯৯ সালে তা আবদুল্লাহকে অর্পণ করা হয়। আবদুল্লাহ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রানিয়া আল-আবদুল্লাহকে বিয়ে করেছেন। ১৯৯৩ সালে তিনি জর্ডানের স্পেশাল ফোর্সের কমান্ড গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৮ সালের মে মাসে মেজর জেনারেল হন।[১][৩] দুবাইয়ের আমির মুহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুমের স্ত্রী হায়া বিনতে হুসাইন আবদুল্লাহর বোন।

প্রারম্ভিক জীবন

আবদুল্লাহ আম্মানে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন হুসাইনের জ্যেষ্ঠ পুত্র।[১] তাই ১৯৫২ সালের সংবিধান অনুযায়ী তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন। তবে ১৯৬০ এর দশকের অস্থিতিশীল অবস্থার সময় হুসাইন তার ভাই হাসান বিন তালালকে যুবরাজ নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।[১][৪]

আবদুল্লাহ আম্মানের ইসলামিক এডুকেশনাল কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি ইংল্যান্ডের সেইন্ট এডমন্ড স্কুলে ভর্তি হন। এখানে পড়াশোনার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইগলব্রুক স্কুল ও ডিয়ারফিল্ড একাডেমিতে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৮০ সালে তিনি ব্রিটেনের রয়েল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্টে ভর্তি হন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন পান এবং এক বছর ১৩ম/১৮ম রয়েল হুসার্স দলের ট্রুপ কমান্ডার হিসেবে কাজ করেন।[১][৫] ১৯৮২ সালে তিনি অক্সফোর্ডের পেমব্রুক কলেজে ভর্তি হয়। এখানে তিনি মধ্যপ্রাচ্য বিষয়াদির উপর এক বছর মেয়াদি বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন। দেশে ফেরার পর তিনি জর্ডানের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনীতে তিনি ৪০ম আর্মর্ড ব্রিগেডের অফিসার হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন এবং প্যারাশ্যুটিং ও ফ্রিফল কোর্সে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ফোর্ট নক্সে আর্মর্ড অফিসারদের এডভান্সড কোর্সে অংশ নেন এবং ১৯৮৬ সালে জর্ডানের ৩য় আর্মর্ড ডিভিশনের একটি ট্যাঙ্ক কোম্পানির কমান্ডার হন। এখানে তিনি ক্যাপ্টেন পদ লাভ করেছিলেন।[৬] তিনি জর্ডানের বিমানবাহিনীর ট্যাঙ্কবিধ্বংসী উইঙে কাজ করেছেন। এখানে তিনি বেল এএইচ-১ কোবরা হেলিকপ্টার চালানোর প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন।[৭]

১৯৮৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমন্ড এ. ওয়ালশ স্কুল অফ ফরেন সার্ভিসে অধ্যয়ন করেন।[৮]

১৯৯৩ সালে তিনি জর্ডানের স্পেশাল ফোর্সেসের কমান্ড লাভ করেন এবং ১৯৯৮ সালের মে মাসে মেজর জেনারেল হন।

১৯৬০ এর দশকে তৎকালীন বাদশাহ হুসাইন বিন তালাল প্রথমে তার ভাই ও পরে তার পুত্র আলি হিন হুসাইনকে উত্তরসুরি হিসেবে নিয়োগের চিন্তা করেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত বদলান। নিজের ভ্রাতুষ্পুত্রদের একজনকে উত্তরসুরি নিয়োগের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে ১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি তিনি তার পুত্র আবদুল্লাহকে উত্তরসুরি মনোনীত করে যান।[৯]

জর্ডানের বাদশাহ

পিতা হুসাইন বিন তালালের মৃত্যুর পর ১৯৯৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আবদুল্লাহ বাদশাহ হন। ইতঃপূর্বে তাকে যুবরাজ মনোনীত করেছিলেন। এর আগে হুসাইনের ভাই হাসান বিন তালাল প্রায় ৩৪ বছর যুবরাজ পদে ছিলেন।

হুসাইনের মৃত্যুর সংবাদ প্রচারিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর আবদুল্লাহ জর্ডানের সংসদের জরুরি অধিবেশনে উপস্থিত হন। এসময় তার পরনে ছিল লাল ও সাদা কেফিয়াহ। হুসাইনের দুই ভাই হাসান বিন তালাল ও মুহাম্মদ বিন তালালও এসময় তার সাথে ছিলেন। এখানে তিনি আরবিতে শপথ গ্রহণ করেন; "আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে শপথ করছি যে আমি সংবিধান সমুন্নত রাখব এবং জাতির প্রতি বিশ্বস্ত থাকব"। স্পিকার জাইদ আল-রিফাই সূরা ফাতিহা পাঠের মধ্য দিয়ে অধিবেশন শুরু করেন।[১০]

রাজনীতি

বাম থেকে ডানে, জন কেরি, বাদশাহ আবদুল্লাহ ও যুবরাজ হুসাইন

আবদুল্লাহ দেশের সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রধান। বাদশাহর হাতে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা রয়েছে। ২০১০ সালে তিনি বিশ্বের চতুর্থ প্রভাবশালী মুসলিম হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।[১১]

আবদুল্লাহর ক্ষমতাগ্রহণের পর জর্ডানের অর্থনীতির উন্নয়ন হয়েছে। এসময় বিদেশি বিনিয়োগ, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব বৃদ্ধি, আকাবায় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। তিনি কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছেন।[১২] পাশ্চাত্য ও উপসাগরীয় দেশসমূহ থেকে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।[১৩] তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তৃতীয় এবং আরব দেশসমূহের জন্য প্রথম মুক্তবাণিজ্য চুক্তি।[১৪]

২০০৭ সালের ২ মার্চ তিনি জর্ডানের পৌর নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এর পূর্বে ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর সংসদে দেয়া বক্তৃতায় তিনি সংসদের প্রতি সংবাদমাধ্যম ও প্রকাশনা আইনের উপর কাজ করতে বলেন।[১৫]

আবদুল্লাহ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় কাজ করেছেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের সাথে তিনি কয়েকবার বৈঠক করেছেন। ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পশ্চিম তীর সফর করেছেন।[১৬]

ওয়াশিংটন ডিসিতে আবদুল্লাহ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সাক্ষাত, ২১ এপ্রিল ২০০৯

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর হোমফ্রন্ট কমান্ডের জিওসি মেজর জেনারেল ইয়াইর নাভেহ সাংবাদিকদের বলেছেন যে আবদুল্লাহর পতন হতে পারে এবং তিনি জর্ডানের শেষ বাদশাহ এমন হতে পারে। এই বক্তব্যের ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরী হয়। পরে নাভেহ তার বক্তব্য ফিরিয়ে নেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেন।[১৭] পরে প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট‌ এ ব্যাপারে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন এবং বলেন যে এটি নাভেহর ব্যক্তিমত মত।[১৮][১৯]

উত্তরাধিকার

দেখুন জর্ডানে সিংহাসনের উত্তরাধিকার ধারা.

১৯৯৯ সালের ৭ জানুয়ারি আবদুল্লাহর সৎভাই হামজা বিন হুসাইন যুবরাজ নিযুক্ত হয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর হামজাকে যুবরাজ পদ থেকে অপসারণ করা হয়[২০] এসময় কোনো নতুন যুবরাজের নাম ঘোষণা করা হয়নি। ২০০৯ সালের ২ জুলাই আবদুল্লাহর পুত্র হুসাইন বিন আবদুল্লাহ যুবরাজ নিযুক্ত হন।[২১]

জর্ডানে গণতন্ত্র

২০০৫ সালে বিবিসি ইন্টারন্যাশনাল "Jordan edging towards democracy" শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। এতে আবদুল্লাহ জর্ডানকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এই নিবন্ধ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ. বুশ আবদুল্লাহকে গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।[২২] তবে গণতান্ত্রিক অগ্রগতি সীমিত হয়ে পড়ে এবং রাজতন্ত্র অধিকাংশ ক্ষমতা ধারণ করে রয়েছে।

২০১০ সালের নভেম্বরে জর্ডানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালের আরব বসন্তের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১১ সালের জুন মাসে আবদুল্লাহ ব্রিটিশ ধাচের ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা করলেও তা বিতর্কিত বিষয় হিসেবে রয়েছে। ২০১৫ সালে এক ভোট নীতি প্রবর্তিত হয়। জর্ডান সরকারের মতে জর্ডানে রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় জীবন ফিরিয়ে আনার জন্য এই পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়।[২৩]

অর্থনৈতিক উদারকরণ

Jordanian Royal Family

HM The King
HM The Queen

  • HRH The Crown Prince
  • HRH Princess Iman
  • HRH Princess Salma
  • HRH Prince Hashem

HM Queen Noor

আবদুল্লাহ জর্ডানে অর্থনৈতিক উদারকরণ করেছেন। ২০০৪ সালে জর্ডানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮% হয়। তিনি টেলিযোগাযোগ খাতকে উদারকরণ করেন। এসময় শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে জর্ডানের টেলিযোগাযোগ এই অঞ্চলে সবচেয়ে প্রতিযোগীতামূলক হয়। তিনি ইন্টারনেটের মূল্য হ্রাসের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি পর্যটন বৃদ্ধির জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। আবদুল্লাহ বিমান পরিবহন খাতে উদারকরণ করেছেন। জর্ডানে ছয়টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এগুলো হল, আকাবা, মাআন, মাফরাক, ইরবিদ, মৃতসাগর ও আজলাওন।

পরমাণু পরিকল্পনা

২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি বাদশাহ আবদুল্লাহ হারেতজ পত্রিকাকে জানান যে জর্ডান বিদ্যুতের জন্য পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এর কারণ এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মত জর্ডানের প্রায় কোনো তেলসম্পদ নেই।[২৪] এই অঞ্চলে জর্ডান অন্যতম তেল উতপাদনহীন দেশ। তেলের জন্য জর্ডান প্রতিবেশী ইরাকের উপর নির্ভরশীল। তবে ইরাকের অস্থিতিশীল অবস্থার জন্য জর্ডানের এই তেল সরবরাহ এবং নিরাপত্তা সমস্যাগ্রস্ত হয়। জর্ডানের প্রথম পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র ২০১৬ সালে নির্মি‌তব্য বলা হয়েছে। এছাড়াও ২০২২ সাল নাগাদ আরো দুইটি পরমাণু রিয়েক্টর নির্মাণের কথা রয়েছে। অন্যদিকে পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র পানিকে লবণমুক্ত করে তা দেশের উত্তরাঞ্চলে সরবরাহ করবে (জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কোঅর্ডি‌নেশন অফ হিউম্যানেটেরিয়ান এফেয়ার্স‌ের মতে পানিসম্পদের দিক থেকে জর্ডানের অন্যতম দরিদ্র দেশ[২৫])

আন্তবিশ্বাস কার্যক্রম

২০১০ সালে আবদুল্লাহ শান্তির সংস্কৃতিকে তুলে ধরা, ধর্মীয় ও বিশ্বাসগত কারণে সকল ধরনের অসহিষ্ণুতা ও বৈষম্য দূর করা, আন্তধর্ম‌ সংলাপের জন্য জাতিসংঘে বিশ্ব আন্তবিশ্বাস সম্প্রীতি সপ্তাহের প্রস্তাব করেন।[১]

আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা

২০১৪ সালের ২৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাতের সময় সিরিয়া ও ইরাকের অস্থিতিশীলতা নিয়ে মন্তব্য করার সময় আবদুল্লাহ বলেন যে তার আশঙ্কা ইরাকের অস্থিতিশীলতা পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি মত প্রকাশ করেন যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকের যেকোনো সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে ইরাকের সকল স্তরের জনগণকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আবদুল্লাহর এই মন্তব্য ইসরায়েলের মতের বিপরীত ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইরাকের উত্তরাঞ্চলের কুর্দি অঞ্চলের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতার আহ্বান করেছিলেন।[২৬]

সেই মাসে জর্ডানে আইসিসের কার্যক্রম দেখা যায়। মাআন শহরে আইসিসের প্রতীক সংবলিত পতাকা হাতে কিছু প্রতিবাদকারী দুইটি মিছিল করে এবং আবদুল্লাহর পতন কামনা করে স্লোগান দেয়।[২৭] তবে জর্ডানে আইসিস সমর্থক খুবই কম। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইসিসের হাতে জর্ডানের পাইলট মুয়াস আল-কাসাসবিহ নিহত হওয়ার পর সমর্থকদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় পৌছেছে হতে পারে।[২৮][২৯]

বর্ধিত ক্ষমতা

২০১৪ সালের আগস্টে জর্ডান সরকার ঘোষণা করে যে সরকারের তরফ থেকে সংসদকে দুইটি সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য আবেদন করা হবে যাতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান নিয়োগের পূর্ণ ক্ষমতা বাদশাহর হাতে অর্পিত হয়। প্রায় তিন বছর পূর্বে ২০১১ সালের অক্টোবরে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতিবাদের কারণে আবদুল্লাহ কিছু সাংবিধানিক সংস্কার করেছিলেন। এর মাধ্যমে তার কিছু ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং সাংবিধানিক আদালত ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়।[৩০]

পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবন

আবদুল্লাহর স্ত্রী রানিয়া আল-আবদুল্লাহ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত[১]তাদের চার সন্তান রয়েছে:

  • যুবরাজ হুসাইন বিন আবদুল্লাহ (জন্ম ২৮ জুন ১৯৯৪)
  • ইমান বিনতে আবদুল্লাহ (জন্ম ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬)
  • সালমা বিনতে আবদুল্লাহ (জন্ম ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০০
  • হাশিম বিন আবদুল্লাহ (জন্ম ৩০ জানুয়ারি ২০০৫)

স্কাই ডাইভিং, রেলি রেসিং, স্কুবা ডাইভিং, ফুটবল ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আবদুল্লাহর পছন্দ ও শখের বিষয়। তিনি জর্ডানে পর্যটনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। "জর্ডান: দ্য রয়েল টুর" নামক অনুষ্ঠানে আবদুল্লাহ ডিসকভারি চ্যানেলের পিটার গ্রিনবার্গ‌ের ভ্রমণ গাইড হয়েছিলেন।[৩১] এতে তিনি বলেছেন যে ক্ষমতা লাভের পর থেকে তিনি স্কাই ডাইভের অনুমতি পাননি। তিনি এছাড়াও মোটরসাইকেল পছন্দ করেন। ২০১০ সালের জুলাই মাসে তিনি হার্লে‌-ডেভিডসনে চড়ে তিনি উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণ করেছেন।[৩২]

আবদুল্লাহর ভাই এবং জর্ডান ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আলি বিন আল হুসাইন বলেছেন যে আবদুল্লাহ জর্ডান জাতীয় ফুটবল দলের ভক্ত। ক্ষমতাগ্রহণের পূর্বে আবদুল্লাহ নিজে ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

তরুণ বয়সে আবদুল্লাহ ডিয়ারফিল্ড একাডেমিতে অধ্যয়ন করেছেন। পরে তিনি জর্ডানে অনুরূপ প্রতিষ্ঠান (কিংস একাডেমি) প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ডিয়ারফিল্ডের প্রধানশিক্ষক এরিক উইডমারকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও ডিয়ারফিল্ডের আরো অনেকে এতে যোগ দেন। ডিয়ারফিল্ডের পূর্বে আবদুল্লাহ ঈগলব্রুক স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের লাইট ড্রাগন্স রেজিমেন্টের কর্নেল-ইন-চীফ ছিলেন।[৩৩] ১৩ম/১৮ম রয়েল হুসার্স‌ে তিনি ট্রুপ লিডার হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।

আবদুল্লাহ সায়েন্স ফিকশন সিরিজ স্টার ট্র্যাকের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে তাকে স্ট্রার ট্র্যাক: ভয়েজারে একটি সংক্ষিপ্ত ভূমিকায় দেখা গেছে।[৩৪] ২০২০ সালে দ্য রেড সি এস্ট্রারিয়াম প্রকল্পের আওতায় একটি স্টার ট্র্যাক থিম পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।[৩৫][৩৬]

উপাধি, সম্মাননা ও পুরস্কার

উপাধি

দ্বিতীয় আবদুল্লাহ
এর রীতি
উদ্ধৃতিকরণের রীতিমহামান্য
বিকল্প রীতিস্যার
  • ৩০ জানুয়ারি ১৯৬২ – ১ মার্চ ১৯৬৫: মহামান্য (His Royal Highness) জর্ডানের যুবরাজ
  • ১ মার্চ ১৯৬৫ – ২৪ জানুয়ারি ১৯৯৯: মহামান্য (His Royal Highness) প্রিন্স আবদুল্লাহ
  • ২৪ জানুয়ারি ১৯৯৯ – ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯: মহামান্য (His Royal Highness) জর্ডানের যুবরাজ
  • ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ – বর্তমান: মহামান্য (His Majesty) জর্ডানের বাদশাহ

সম্মাননা

জর্ডানের জাতীয় সম্মাননা

  •  জর্ডান :
    • গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্য অর্ডার অফ আল-হুসাইন বিন আলি
    • গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্য সুপ্রিম অর্ডার অফ দ্য রেনেসা
    • গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ জর্ডান
    • গ্র্যান্ড মাস্টার অফ দ্য অর্ডার অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স

অন্যান্য সম্মাননা

  •  অস্ট্রিয়া:
    • গ্র্যান্ড স্টার অফ দ্য ডেকোরেশন অফ অনার ফর সার্ভিসেস টু দ্য রিপাবলিক অফ অস্ট্রিয়া (২০০১)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
  •  বাহরাইন:
    • কলার অফ দ্য অর্ডার অফ আল-খলিফা অফ বাহরাইন (৪ নভেম্বর ১৯৯৯)[৩৭]
  •  ব্রুনাই:
    • কলার অফ দ্য রয়েল ফ্যামিলি অর্ডার অফ দ্য ক্রাউন অফ ব্রুনাই (ডিকেএমবি, ১৩ মে ২০০৮)[৩৭]
  •  চেক প্রজাতন্ত্র:
    • অর্ডার অফ দ্য হোয়াইট লায়ন, প্রথম শ্রেণী (১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)
  •  জার্মানি:
    • গ্র্যান্ড ক্রস স্পেশাল ক্লাস অফ দ্য অর্ডার অফ মেরিট অফ দ্য ফেডারেল রিপাবলিক (১০ অক্টোবর ২০০২)[৩৭]
  •  ইতালি:
    • নাইট গ্র্যান্ড ক্রস উইথ গ্র্যান্ড কর্ডন অফ দ্য অর্ডার অফ মেরিট অফ দ্য ইতালীয় রিপাবলিক[৩৭][৩৮]
  •  জাপান:
    • গ্র্যান্ড কর্ডন দেন কলার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ক্রিসেন্থেমাম[৩৭]
  •  কাজাখস্তান:
  •  লেবানন:
    • এক্সট্রাঅর্ডিনারি গ্রেড অফ দ্য অর্ডার অফ মেরিট অফ লেবানন (১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯)[৩৭]
  •  লিবিয়া:
    • অর্ডার অফ দ্য গ্র্যান্ড কনকোয়ারার, প্রথম শ্রেণী (১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯)[৩৭]
  •  নেদারল্যান্ডস:
    • গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য নেদারল্যান্ডস লায়ন[৩৭][৩৯]
    • গ্র্যান্ড ক্রস অফ অর্ডার অফ দ্য হাউস অফ অরেঞ্জ (৭ ডিসেম্বর ১৯৯৪)[৩৭]
  •  নরওয়ে:
    • গ্র্যান্ড ক্রস উইথ কলার অফ দ্য রয়েল নরওয়েজিয়ান অর্ডার অফ সেইন্ট ওলাভ]] (৪ এপ্রিল ২০০০)[৩৭]
  •  পোল্যান্ড:
    • গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য হোয়াইট ঈগল (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯)[৩৭]
  •  পর্তুগাল:
    • গ্র্যান্ড কলার অফ দ্য অর্ডার অফ প্রিন্স হেনরি (৫ মার্চ ২০০৮)[৪০]
    • গ্র্যান্ড কলার অফ দ্য অর্ডার অফ সেইন্ট জেমস অফ দ্য সোর্ড (১৬ মার্চ ২০০৯)[৪০]
  •  রোমানিয়া:
    • কলার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ রোমানিয়া (২০ ডিসেম্বর ২০০৫)[৩৭]
  •  দক্ষিণ কোরিয়া:
    • নাইট অফ গ্র্যান্ড অর্ডার অফ মুগুংওয়া (৪ ডিসেম্বর ১৯৯৯)[৩৭]
  •  স্পেন:
    • গ্র্যান্ড ক্রস উইথ কলার অফ দ্য অর্ডার অফ চার্লস ৩ (২১ এপ্রিল ২০০৬)[৩৭]
    • গ্র্যান্ড ক্রস উইথ কলার অফ দ্য অর্ডার অফ ইসাবেল দ্য ক্যাথলিক (১৮ অক্টোবর ১৯৯৯)[৩৭]
    • গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ নেভাল মেরিট (১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫)[৩৭]
    • গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ এরোনটিকাল মেরিট (২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৯)[৪১]
  •  সুইডেন:
    • নাইট অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য সেরাফিম (৭ অক্টোবর ২০০৩)[৩৭]
  •  ইউক্রেন :
    • অর্ডার অফ মেরিট, প্রথম শ্রেণী (২২ জুন ২০১১)[৪২]
    • অর্ডার অফ প্রিন্স ইয়ারুস্লাভ দ্য ওয়াইজ, প্রথম শ্রেণী (২৩ এপ্রিল ২০০২)[৪৩]
  •  যুক্তরাজ্য:
    • গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য বাথ, সামরিক শ্রেণী (৬ নভেম্বর ২০০১)[৩৭]
    • গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ সেইন্ট মাইকেল এন্ড সেইন্ট জর্জ]] (১২ মে ১৯৯৯)[৩৭]
  • অন্যান্য
    • অনারারি নাইট কমান্ডার অফ দ্য রয়েল ভিক্টোরিয়ান অর্ডার (২৬ মার্চ ১৯৮৪)[৩৭]

বংশলতিকা

দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, জর্ডানের রাজার পরিবার
16. হুসাইন বিন আলি, মক্কার শরিফ
8. প্রথম আবদুল্লাহ
17. আবদিয়া বিনতে আবদুল্লাহ
4. তালাল বিন আবদুল্লাহ
18. আমির নাসের পাশা, মক্কার শরিফ
9. মুসবাহ বিনতে নাসের
19. দিলবার খানুম
2. হুসাইন বিন তালাল
20. আমির নাসের পাশা, মক্কার শরিফ (= ১৮)
10. জামাল আলি বিন নাসের, মক্কার শরিফ, হাওরানের গভর্নর
21. দিলবার খানুম (= ১৯)
5. জাইন আল-শারাফ
22. শাকির পাশা, সাইপ্রাসের গভর্নর
11. উয়িজদান শাকির পাশা
1. দ্বিতীয় আবদুল্লাহ
24. জন গার্ডিনার
12. আর্থার গার্ডিনার
25. এসথার স্কারফ
6. ওয়াল্টার পারসি গার্ডিনার
26. ড্যানিয়েল টোভেল
13. মাবেল জেন টোভেল
27. এডা আলবার্টা কিং
3. এন্টোইনেট আভরিল গার্ডিনার
28. জোসিয়াহ সাটন
14. আর্থার সাটন
29. এলিজাবেথ এবল
7. ডরিস এলিজাবেথ সাটন
30. অগাস্টাস আল্ডারটন
15. ডোরা এলিজাবেথ আল্ডারটন
31. গেরট্রুড রুথ গ্রিন

প্রকাশিত রচনাকর্ম

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Articles
দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, জর্ডানের রাজা
হাশিমি
জন্ম: ৩০ জানুয়ারি ১৯৬২
রাজত্বকাল শিরোনাম
পূর্বসূরী
হুসাইন
জর্ডানের বাদশাহ
১৯৯৯–বর্তমান
নির্ধারিত হয়নি
যুবরাজ:
হুসাইন বিন আবদুল্লাহ
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ