নিরাপদ খাদ্য
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ বা খাদ্য সুরক্ষা (ইংরেজি: Food safety) বলতে খাদ্যবাহিত অসুস্থতা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে খাদ্য ব্যবহার, প্রস্তুতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বা বিদ্যাকে বোঝায়। কোনও সাধারণ খাদ্য গ্রহণের পরে দুই বা তার অধিক ব্যক্তি একই ধরনের অসুস্থতায় পতিত হলে সেই ঘটনাটিকে খাদ্যবাহিত অসুস্থতার প্রাদুর্ভাব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১]
স্বাস্থ্যের জন্য সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা আবশ্যক। খাদ্য প্রতিরক্ষা (food defense) আরেকটি সংশ্লিষ্ট ধারণা, যেখানে খাদ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটানো কিংবা ভেজাল মেশানো প্রতিরোধ করা হয়। খাদ্য সুরক্ষা (নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ) ও খাদ্য প্রতিরক্ষা একত্রে ভোক্তাদের ক্ষতি প্রতিরোধ করা। খাদ্য সুরক্ষাকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল শিল্পকারখানা থেকে বাজার পর্যন্ত সুরক্ষা। অপরটি হল বাজার থেকে ক্রেতা বা ভোক্তা পর্যন্ত সুরক্ষা। শিল্পকারখানা থেকে বাজার পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষার মধ্যে খাদ্যের উৎস, খাদ্যের মোড়কের উপর তথ্য ছাপানো, খাদ্যের স্বাস্থ্যবিধি, খাদ্য রুচিস্বাদবর্ধকের ব্যবহার, খাদ্যে কীটনাশকের অবশিষ্ট, জৈবপ্রযুক্তি দ্বারা উৎপন্ন খাদ্য সংক্রান্ত নীতি, আমদানিকৃত ও রপ্তানিকৃত খাদ্য সরকারের পর্যবেক্ষণ এবং খাদ্য প্রত্যয়ন ব্যবস্থা, ইত্যাদি বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ। বাজার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষার রীতিনীতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হল যে খাদ্যকে বাজারে অবশ্যই সুরক্ষিত থাকতে হবে এবং ভোক্তার কাছে নিরাপদে খাদ্য সরবরাহ করা বা ভোক্তার জন্য নিরাপদে খাদ্য প্রস্তুত করা একটি উদ্বেগের বিষয়।
খাদ্যের মাধ্যমে রোগজীবাণু পরিবাহিত হয়ে কোনও ব্যক্তি বা পশুর অসুস্থতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। প্রধান প্রধান রোগজীবাণুগুলি হল ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছাতা ও ছত্রাক। এছাড়া খাদ্য রোগজীবাণুগুলির জন্য বৃদ্ধি ও প্রজননের উর্বর মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। উন্নত দেশগুলিতে খাদ্য প্রস্তুতকরণের উপরে সূক্ষ্ম মান রয়েছে, এবং এর বিপরীতে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলিতে মানের সংখ্যা কম এবং ঐসব মান বলপূর্বক প্রয়োগও করা হয় কম। আরেকটি সমস্যা হল পর্যাপ্ত সুপেয় পানি বা পানীয় জলের অভাব, যা রোগ ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[২] তাত্ত্বিকভাবে খাদ্যের বিষক্রিয়া শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যক্তির সংখ্যাধিক্যের কারণে এবং সমস্ত সাবধানতা অবলম্বনের পরেও রোগজীবাণু খাদ্যে প্রবেশের ঝুঁকি থাকে বলে এইরূপ প্রতিরোধ অর্জন করা দুরূহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী খাদ্য সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির পাঁচটি মূলনীতি নিম্নরূপ:[৩]
- মানুষ, গৃহপালিত প্রাণী ও কীটপতঙ্গ থেকে রোগজীবাণু খাদ্যে সংক্রমণ হওয়া প্রতিরোধ করা।
- কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা করে রাখা যাতে রান্না করা খাবারে জীবাণুর সংক্রমণ না হতে পারে।
- পর্যাপ্ত দৈর্ঘ্যের সময় ধরে ও যথাযথ তাপমাত্রায় খাদ্য রান্না করা যাতে খাদ্যের রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।
- সঠিক তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ করা।
- নিরাপদ পানি বা জল ও নিরাপদ কাঁচামাল ব্যবহার করা।