পম্পাস


পম্পাস (অর্থ "প্লেইন" বা সমভূমি) হ'ল দক্ষিণ আমেরিকার উর্বর নিম্নভূমি। ১২,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪,৬০,০০০ মা) এরও বেশি আচ্ছাদিত এই অংশের অন্তর্গত আর্জেন্টিনা-র বুয়েনস আইরেস-এর প্রদেশসমূহ, লা পম্পা, সান্তা ফে, এন্ট্রে রিওস, এবং কর্ডোবা; সমস্ত উরুগুয়ে; এবং ব্রাজিলের দক্ষিণতম রাজ্য, রিও গ্র্যান্ডে ড সুল। বিস্তৃত সমভূমিটি একটি প্রাকৃতিক অঞ্চল। সারা অঞ্চলটির মাঝে একমাত্র বাধা রয়েছে বাহিয়া ব্লাঙ্কা এবং তান্ডিল (আর্জেন্টিনা) এর নিকটবর্তী অংশে নীচু ভেন্তানা এবং তান্ডিল পাহাড়। তাদের উচ্চতা যথাক্রমে ১,৩০০ মি (৪,২৬৫ ফু) এবং ৫০০ মি (১,৬৪০ ফু)।

পম্পাস
প্রাকৃতিক অঞ্চল
চোখের দৃশ্য পর্যায়ে পম্পাসের ল্যান্ডস্কেপ, ব্রাজিল।
চোখের দৃশ্য পর্যায়ে পম্পাসের ল্যান্ডস্কেপ, ব্রাজিল।
আটলান্টিক মহাসাগরের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে ঘিরে থাকা পম্পাসের আনুমানিক অবস্থান এবং সীমানা
আটলান্টিক মহাসাগরের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে ঘিরে থাকা পম্পাসের আনুমানিক অবস্থান এবং সীমানা
দেশসমূহ Argentina
 Brazil
 Uruguay
উচ্চতা১৬০ মিটার (৫২০ ফুট)
জনসংখ্যা
 • মোট৪,২০,০০,০০০

জলবায়ু নাতিশীতোঞ্চ, বৃষ্টিপাত সারা বছর কম-বেশি সমান ৬০০ থেকে ১,২০০ মিমি (২৩.৬ থেকে ৪৭.২ ইঞ্চি)। ফলে জমি সর্বদা কৃষির উপযোগী থাকে। স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক ভূগোল প্রদেশসমূহের মধ্যে অন্যতম, বৃহত্তর প্যারানা-প্যারাগুয়ে সমতল বিভাগটি এখানেই রয়েছে।

জলবায়ু

পম্পাসের জলবায়ু সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ, ধীরে ধীরে আরও উত্তরে উপক্রান্তীয় জলবায়ু এবং পশ্চিম প্রান্তে একটি অর্ধশুষ্ক জলবায়ু (যেমন সান লুইস প্রদেশ এবং পশ্চিম লা পম্পা প্রদেশ) দেখা যায়। শীতের তাপমাত্রার চেয়ে গ্রীষ্মের তাপমাত্রা, বেশি অভিন্ন থাকে। দিনের বেলায় সাধারণত ২৮ থেকে ৩৩ °সে (৮২ থেকে ৯১ °ফা) পর্যন্ত থাকে। তবে পম্পাসের বেশিরভাগ শহরে মাঝেমধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা দেখা যায়। সেটি হতে পারে ৩৮ °সে (১০০ °ফা), যখন দক্ষিণ ব্রাজিল-এর দিক থেকে উত্তরের দিকে উত্তপ্ত, শুকনো বাতাস প্রবাহিত হয়। শরৎ ধীরে ধীরে এসে পৌঁছোয় মার্চে এবং শীর্ষে পৌঁছোয় এপ্রিল - মে মাসে। এপ্রিলে, সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ থেকে ২৫ °সে (৬৮ থেকে ৭৭ °ফা) এবং সর্ব্বোনিম্ন ৯ থেকে ১৩ °সে (৪৮ থেকে ৫৫ °ফা)। তুষারপাত প্রথম দেখা দেয় দক্ষিণে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এবং উত্তরে, মে মাসের শেষ থেকে জুনের শুরুতে।

শীতকাল সাধারণত মৃদু হয়, শৈত্য প্রবাহ প্রায়ই দেখা দেয়। তখন দিনের বেলা তাপমাত্রা সাধারণত ১২ থেকে ১৯ °সে (৫৪ থেকে ৬৬ °ফা) এবং রাতে থাকে ১ থেকে ৬ °সে (৩৪ থেকে ৪৩ °ফা)। জোরালো উত্তুরে হাওয়ার সময়ে, দিনের প্রায় সর্বত্র রেকর্ড থাকে ২৫ °সে (৭৭ °ফা) এর উপর এবং শৈত্য প্রবাহের সময় সেটিই হতে পারে মাত্র ৬ °সে (৪৩ °ফা)। পম্পাসে সর্বত্র হিম দেখা যায়, তবে পারানা এবং উরুগুয়ে নদীর তীরের চেয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে অনেক বেশি ঘটতে দেখা যায়। সে সময়ের তাপমাত্রা সর্বত্রই −৫ °সে (২৩ °ফা) এর নীচে হতে পারে, তবে −১০ °সে (১৪ °ফা) বা তার নিচে তাপমান দক্ষিণ এবং পশ্চিমেই সীমাবদ্ধ থাকে। তুষার কখনই উত্তরের তৃতীয়াংশে পড়ে না এবং পড়লেও সেটি বিরল। ব্যতিক্রমী ঘটনা বাদে তুষারের গভীরতা হতে পারে ৩০ সেমি (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত।

কক্সিলহাস (তৃণভূমিতে আচ্ছাদিত পাহাড়), রিও গ্র্যান্ড ডো সুল রাজ্যে মোর রেডোনডো, ব্রাজিল

বসন্ত খুবই পরিবর্তনশীল। এটি বেশিরভাগ অঞ্চলে উষ্ণতর (বিশেষত পশ্চিমে) হলেও আটলান্টিক জুড়ে উল্লেখযোগ্যভাবে শীতলতর অনুভূতি থাকে। প্রলয়ংকর ঝড় খুবই সাধারণ ঘটনা, আর সেই সঙ্গে তাপমাত্রার বিভিন্নতাও দেখা যায়: দিনের বেলা ৩৫ °সে (৯৫ °ফা), রাতের দিকে ৫ °সে (৪১ °ফা) এর নীচে। এমন কি কোনও কোনও দিন তুষার পড়তেও দেখা যায়।

বৃষ্টিপাত উত্তর-পূর্ব দিকে ১,২০০ মিমি (৪৭ ইঞ্চি) থেকে দক্ষিণ এবং পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ৫০০ মিমি (২০ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে দেখা যায়। পশ্চিমে এটি অত্যন্ত মরশুম নির্ভর। কিছু জায়গাগুলি গ্রীষ্মে মাসিক গড়ে ১২০ মিমি (৪.৭ ইঞ্চি) এবং শীতকালে মাসে ২০ মিলিমিটার (০.৮ ইঞ্চি) হওয়ার রেকর্ডও আছে। পূর্ব দিকের অঞ্চলে ছোট ছোট পাহাড় রয়েছে। সে সব স্থানে প্রপাত এবং ঝরনা আছে। তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিসহ গ্রীষ্ম এবং সামান্য শুষ্ক শীতকাল সেখানে দেখা যায়। তবে, গ্রীষ্মে বৃষ্টিপাত যেখানে সংক্ষিপ্ত, ভারী ঝড়, শীতকালীন বৃষ্টিপাত বেশিরভাগই ঠান্ডা ঝিরঝিরে হওয়ায়, এ অঞ্চলে তাই বর্ষণ-দিনের পরিমাণ মোটামুটি স্থিরই থাকে। বসন্ত এবং গ্রীষ্মে বজ্রবিদ্যুৎ সহ খুব তীব্র ঝড়-বৃষ্টি খুবই সাধারণ ঘটনা। এটি বিশ্বের সর্বাধিক ঘন ঘন বজ্রপাত এবং পরিচলনক্ষম মেঘ-শীর্ষের অন্যতম স্থান। [১][২] তীব্র বজ্রপাতসহ শিলাবৃষ্টি, বন্যা এবং আকস্মিক বন্যা, উভয়ই ঘটে এবং কেন্দ্রীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার বাইরে ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় টর্নেডো অঞ্চল এটিই। [৩]

বন্যজীবন

মানুষের ক্রিয়াকলাপের কারণে পম্পাসের বন্যজীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষত কৃষিকাজ-এর বিস্তার এবং পশুখামার প্রতিপালনের কারণে পুমা, রিয়া, এবং পম্পাস হরিণ-এর মতো প্রজাতিগুলি তাদের আবাসস্থল হারিয়েছে।[৪]

পম্পাসের তৃণভোজী প্রাণীরা হ'ল পম্পাস হরিণ, ধূসর ব্রকেট, সমভূমির ভিসাচাচা, ব্রাজিলিয়ান গিনিপিগ, দক্ষিণী পার্বত্য কেভি এবং কাইপু। এই অঞ্চলের বৃহত্তম শিকারী প্রাণীরা হল পুমা, ম্যানড নেকড়ে, পম্পাস শিয়াল, জিওফ্রয়েজ বিড়াল, লেসার গ্রিসন আর তার পাশাপাশি হোয়াইট-ইয়ারড ওপোসাম ও মোলিনাস হগ-নোজড স্কঙ্ক।

পম্পাসে পাখি প্রজাতিগুলির মধ্যে রয়েছে রুডি-হেডেড গুজ, পম্পাস মেডোলার্ক, হাডসোনিয়ান গডউইট, মাগুয়ারী সারস, হোয়াইট-ফেসড আইবিস, হোয়াইট-উইংড কোট, সাদার্ন স্ক্র্যিমার, ডট-উইংড ক্র্যাক, কার্ভ-বিলড রিডহান্টার, পেঁচা এবং রিয়া। [৫][৬][৭][৮][৯]

আক্রমণাত্মক (ইনভেসিভ) প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ইউরোপিান হের, ওয়াইল্ড বোর এবং ঘরোয়া চড়ুই।

তথ্যসূত্র

উৎস

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ