প্রভ্রূণ
প্রভ্রূণ বা ইংরেজি পরিভাষায় ফিটাস (Fetus বা Foetus) হলো প্রাণীর জন্ম না নেওয়া অপত্য বংশধর যেটি মাতৃদেহে ভ্রূণ (ইংরেজি: embryo) থেকে বিকাশ লাভ করে। ভ্রূণের বিকাশের পরপরই প্রভ্রূণের বিকাশ ঘটে। মানুষের ক্ষেত্রে প্রসবের পূর্বে ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণের নয় সপ্তাহ পরে প্রভ্রূণের বিকাশ শুরু হয় (গর্ভকালের একাদশ সপ্তাহ থেকে) এবং জন্ম অবধি তা অব্যাহত থাকে।[১] জন্মের পূর্বে প্রভ্রূণের বিকাশের সময় ভ্রূণ থেকে একটি প্রভ্রূণকে আলাদা করার কোনও সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই। একটি প্রভ্রূণকে শরীরের সমস্ত প্রধান অঙ্গগুলোর উপস্থিতি দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। যদিও প্রভ্রূণাবস্থায় প্রভ্রূণের অঙ্গগুলি পুরোপুরি বিকশিত এবং কার্যক্ষম থাকে না এবং চূড়ান্ত শারীরবৃত্তীয় অবস্থানে পৌছায় না।
ব্যুৎপত্তি
ইংরেজি
ইংরেজি ফিটাস (বহুবচন ফিটাসগুলো বা ফেটি ) শব্দটি লাতিন ফিটাস ("বংশধর", "জন্মদান") [২][৩][৪] এবং গ্রীকভাষার "φυτώ" শব্দের সাথে সম্পর্কিত। গ্রীকভাষায় " φυτώ" শব্দটি উদ্ভিদ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ১৫৯৪ সাল থেকে ইংরেজি: foetus শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। [৫] কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে fetus শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এমনকি চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাময়িকীতেও fetus শব্দটি এখন বিশ্বজুড়ে আদর্শ ইংরেজি বানান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। [৬][৭]
বিকাশ
সংবহনতন্ত্র
জন্মের পূর্বে
মানব-প্রভ্রূণের বিকাশের সময় হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালী তুলনামূলকভাবে তাড়াতাড়ি গঠিত হয়। একটি কার্যকরী সংবহনতন্ত্র প্রভ্রূণের জৈবিক প্রয়োজন। কারণ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহকলা সক্রিয় রক্ত সরবরাহ ছাড়া কয়েকটি কোষের স্তরের বেশি বৃদ্ধি করতে পারে না। প্রভ্রূণের ক্ষেত্রে প্রসবপূর্বকালীন রক্ত সংবহন প্রসবোত্তর রক্ত সংবহন থেকে আলাদা। কারণ প্রসবপূর্বকালীন সময়ে ফুসফুসের কোনো ব্যবহার নেই। প্রভ্রূণ অমরা থেকে নাভিনাড়ীর (আম্বিলিকাল কর্ড) মাধ্যমে মায়ের কাছ থেকে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সংগ্রহ করে।[৮]
নাভির শিরা দ্বারা রক্ত অমরা থেকে প্রভ্রূণে সঞ্চালিত হয়। প্রভ্রূণে প্রবেশকৃত মোট রক্তের প্রায় অর্ধেক ডাক্টাস ভেনোসাসে প্রবেশ করে এবং নিম্নতর ভেনা ক্যাভাতে যায়। বাকি অর্ধেক রক্ত যকৃতের নিম্ন সীমানা নিয়ে যকৃতে প্রবেশ করে। যকৃতের ডান লোবে সরবরাহকারী নাভির শিরার শাখাটি পোর্টাল শিরার সাথে যোগ দেয়। রক্ত তখন হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দে প্রবেশ করে। মানব-প্রভ্রূণে ডান এবং বাম অলিন্দের মাঝে একটি ফাঁকা জায়গা আছে (ফোরমেন ওভালি নামে) এবং অধিকাংশ রক্ত পালমোনারি সংবহনের বাইপাসের মাধ্যমে ডান থেকে বাম অলিন্দে প্রবাহিত হয়। প্রভ্রূণের সংবহনতন্ত্রের অধিকাংশ রক্ত বাম নিলয়ে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে মহাধমনী দিয়ে সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। কিছু রক্ত মহাধমনী থেকে অভ্যন্তরীণ ইলিয়াক ধমনীর মাধ্যমে নাভির ধমনীতে প্রবেশ করে এবং পুনরায় অমরায় প্রবেশ করে। অমরায় প্রভ্রূণ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ রক্তের মাধ্যমে মাতৃদেহের সংবহনতন্ত্রে প্রবেশ করে।[৮]
- ৩-ইঞ্চি (৭৬ মিমি) দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট্য এবং ৩+১⁄২ মাস বয়সী ভ্রূণের ত্রিমাত্রিক আল্ট্রাসাউন্ড
- ৪+১⁄৪ মাস বয়সী একটি ভ্রূণ
- পাঁচ মাস বয়সী একটি ভ্রূণ
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা
জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে অমরা মাতৃ-প্রভ্রূণের জন্য বাধা হিসাবে কাজ করে। অমরা সুগঠিত না হলে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ মা-থেকে-বাচ্চাতে সংক্রমিত হতে পারে।
মাতৃদেহের IgG অ্যান্টিবডিগুলো অমরা অতিক্রম করে প্রভ্রূণে প্রবেশ করে এবং প্রভ্রূণকে সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়। মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডিগুলো প্রায়ক্ষেত্রে গর্ভকালের পঞ্চম মাসে মা থেকে প্রভ্রূণে স্থানান্তর শুরু হয়। ক্ষেত্রবিশেষে পঞ্চম মাসেও অ্যান্টিবডির স্থানান্তর শুরু না হলে অবশ্যই ষষ্ঠ মাসের মধ্যে স্থানান্তর শুরু হয়। [৯]
বিকাশকালীন সমস্যা
প্রভ্রূণের ব্যাথা
আইনি এবং সামাজিক সমস্যা
বেশিরভাগ দেশে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের আইনি বৈধতা রয়েছে। কিন্তু বিলম্বিত গর্ভপাতকে নিষিদ্ধ করা হয়। [১০]
অন্যান্য প্রাণী
ভিভিপারাস জীবের প্রসবপূর্ব বিকাশের একটি পর্যায় হলো প্রভ্রূণীয় পর্যায়। ভ্রূণীয় পর্যায়টি এমব্রায়োজেনেসিস এবং জন্ম এইদুটি পর্যায়ের মধ্যবর্তী পর্যায়।[১১] স্তন্যপায়ী থেকে শুরু করে অনেক মাছের জীবনদশায় প্রভ্রূণীয় পর্যায় রয়েছে। আসলে বেশিরভাগ মেরুদণ্ডী প্রাণীরই জীবনদশায় প্রভ্রূণীয় পর্যায় রয়েছে।
অমরাযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের গর্ভধারণের সময়কাল জাম্পিং ইঁদুরে ১৮ দিন থেকে হাতির ক্ষেত্রে ২৩ মাসে পরিবর্তিত হয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে, ভূমির বৃহত্তর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রভ্রূণের গর্ভধারণকালও দীর্ঘতর।[১২]
আরও দেখুন
- ভ্রূণ
- অধিনিষেচন (সুপারফেটেশন)
- নারী অধিকার
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- ওয়েবসাইটে মানুষের জন্মের পূর্বকালীন বিকাশের বিভিন্ন ছবি, মানব প্রভ্রূণের চলাচলের অসংখ্য গতির চিত্র সমন্বিত।
- "মায়ের গর্ভে প্রভ্রূণ" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে (ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ভিডিও)।
- প্রভ্রূণের বিকাশ : মেডলাইনপ্লাস মেডিকেল এনসাইক্লোপিডিয়া