বৈদিক দেবতা

বেদে উল্লেখিত দেবতা

বৈদিক দেবতা হচ্ছে বৈদিক যুগে রচিত হিন্দুধর্মশাস্ত্র বেদে বর্ণিত দেবতা সমূহ। বেদে বহুদেবতার উদ্দেশ্যে স্তুতি দৃষ্ট হয়। বৈদিক সাহিত্যে প্রধানত দুইটি গ্রন্থে- আচার্য শৌনক রচিত ‘বৃহদ্দেবতা’ ও যাস্ক বিরচিত ‘নিরুক্ত’-তে বেদের দেবতাতত্ত্বের আলোচনা করা হয়েছে। যাস্ক বলেছেন, বেদে দেবতাগণ এক সর্বব্যাপী পরমাত্মার বহুরূপ অর্থাৎ বহুদেবতা রূপে কীর্তিত হয়েছে। বেদের প্রতি মন্ত্র এক এক দেবতার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত। ঋগ্বেদ হল বিভিন্ন দেবতার স্তোত্রের সংকলন।

বৈদিক দেবতা অগ্নির বৈদিক মূর্তি
ঊষা (দেবী) হল ভোরের বৈদিক মূর্তি

অন্যান্য দেবতারা হলেন বিষ্ণু, রুদ্র (পরবর্তীকালে শিবের সমার্থক), প্রজাপতি (পরবর্তীতে ব্রহ্মা) প্রভৃতি।[১] বৈদিক দেবীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এঁদের মধ্যে ঊষা, পৃথিবী, অদিতি, সরস্বতী, সাবিত্রী, বাক, রাত্রি, অরণ্যনী ইত্যাদি ঋগ্বেদে বর্ণিত।[২] শ্রী বা লক্ষ্মীও পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে আছেন।[৩] প্রকৃতপক্ষে, বেদে প্রত্যেক দেবতা এক একটি বিশেষ জ্ঞান বা পার্থিব প্রাকৃতিক শক্তির প্রকাশক।[৪][৫] বৈদিক দেবমণ্ডলীতে দেবঅসুর নামে দুটি শ্রেণীর উল্লেখ পাওয়া যায়।

দেবতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্তুত দেবতারা হলেন ইন্দ্র, অগ্নি এবং সোম[৬][৭][৮] ইন্দ্রকে শাকরাও বলা হয়, তিনি দেবতাদের অধিপতি। দেবতার মধ্যে অগ্নি অগ্রণী। জলদেবতা বরুণবিশ্বদেব নামে এক দেবমণ্ডলীও প্রধান ছিলেন।[৯] ইন্দ্র-অগ্নি, মিত্র-বরুণ, সোম-রুদ্রের মতো জোড়া দেবতাদের কিছু উৎসর্গ এখানে দ্বিগুণ গণনা করা হয়েছে। বিশ্বদেব-কে ঋগ্বেদে ৭০ বার উল্লেখ করা হয়েছে। আবার একই দেবতা ভিন্ন নামেও পরিচিত হয়।

শ্রেণী

বৈদিক দেবতা সূর্যের উপাসনা

বৈদিক দেবতাদের ত্রিলোকের ভিত্তিতে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে:

  1. পৃথিবী বা ভূলোকের দেবতা: অগ্নি, অপ্ (জল), পৃথিবী, সোম প্রভৃতি।
  2. অন্তরীক্ষলোকের দেবতা: ইন্দ্র, বায়ু, রুদ্র, মরুৎ প্রভৃতি।
  3. দ্যুলোকের দেবতা: সূর্য, মিত্র, বরুণ, দ্যুঃ, পূষা প্রভৃতি।[১০]

এই দেবতাগণের নিবাসস্থল ‘ভূ’, ‘ভুব’ ও ‘স্বঃ’ এই তিন ব্যাহৃতিরূপে বর্ণিত হয়েছে। ত্রিলোকে একাদশ দেবতা করে মোট তেত্রিশ দেবতাকে প্রধান হিসেবে ধরা হয়। এরা হলেন একাদশ দেবতা বা দ্বাদশ আদিত্য, একাদশ রুদ্র, অষ্টবসু এবং বেদের ব্রাহ্মণ অংশে অশ্বিনীকুমারদ্বয়। আবার ঋগ্বেদের দুটি মন্ত্রে দেবতার সংখ্যা তিনহাজার তিনশত উনচল্লিশ (৩৩৩৯) জন বলা হয়েছে।

ভূলোকের দেবতার মধ্যে অগ্নি, অন্তরীক্ষের দেবতার মাঝে বায়ু ও দ্যুলোকের দেবতার মাঝে সূর্যই মুখ্য দেবতা। অগ্নি দেবতা হচ্ছে সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী এবং সূর্য সর্বাপেক্ষা দূরবর্তী দেবতা। অন্যান্য দেবতা এই দুই দেবতার অন্তর্ভুক্ত। অগ্নি, বায়ু ও সূর্য এই ত্রিদেবই মূল দেবতা যারা ভিন্ন ভিন্ন কর্মে ও বিশেষণে ত্রিলোকে অবস্থান করেন। যেমন,

  • অগ্নি: বৈশ্বানর, জাতবেদা, নারাশংস, সুসমিদ্ধ ও তনূনপাৎ প্রভৃতি।
  • বায়ু: মাতরিশ্বা, রুদ্র, ইন্দ্র, অপাং নপাৎ, মরুৎ প্রভৃতি।
  • সূর্য: আদিত্য, বিষ্ণু, মিত্র, বরুণ, পূষা, ভগ, ঊষা, অশ্মিযুগল, সবিতা প্রভৃতি।

অগ্নিদেবকে সমগ্র মানবজাতির মিত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যাস্কের মতে ত্রিলোকের সকল দেবতার মূলরূপ হচ্ছে অগ্নি। পার্থিব অগ্নির তেজই অন্তরীক্ষে ইন্দ্ররূপ, বিদ্যুৎরূপ এবং দ্যুলোকে সূর্যরূপে প্রকটিত। আবার দ্যুলোকের বিভিন্ন দেবতা সূর্যের বিভিন্ন রূপ এবং অন্তরীক্ষের বিভিন্ন দেবতা ইন্দ্রের বিভিন্ন রূপের প্রকাশ। কাত্যায়নের মতে সকল দেবতা সূর্য বা আদিত্যের মূলরূপ। কারণ সকল দেবতার ধারণার উৎপত্তির মূল বীজ সূর্যের লক্ষণে এবং বর্ণনায় পাওয়া যায়।

বৈদিক দেবতাগণ

বৈদিক দেবতাদের তালিকা
ক্রমিক নংদেবদেবীউৎস
ইন্দ্রঋগ্বেদেের ২৫ মন্ত্রে, যেমন ১.৩২.২, ১.১৬৪.৪৬, ৮.১২.২৮, ১.১০৩.২ ও ১.৩২.১ ঋকের টিকা
অগ্নিঋগ্বেদে ২০০ মন্ত্রে
সোমঋগ্বেদের ১২৩ মন্ত্রে
অশ্বিনগণঋগ্বেদের ৫৬ মন্ত্রে
বরুণঋগ্বেদের ৪৬ মন্ত্রে
মরুতঋগ্বেদে ৩৮ মন্ত্রে
মিত্রঋগ্বেদের ২৮ মন্ত্রে[১১]
ঊষা (ভার)ঋগ্বেদের ২১ মন্ত্রে
বায়ুঋগ্বেদের ১২ মন্ত্রে
১০সবিত্রঋগ্বেদের ১১ মন্ত্রে
১১ঋভুঋগ্বেদের ১১ মন্ত্রে
১২পূষা বা পূশনঋগ্বেদের ১০ মন্ত্রে
১৩অপ্রীঋগ্বেদের ৯ মন্ত্রে
১৪বৃহস্পতিঋগ্বেদের ৮ মন্ত্রে
১৫সূর্যঋগ্বেদের ৮ মন্ত্রে
১৬দ্যৌষপিতৃ (স্বর্গ)ঋগ্বেদের ৬ মন্ত্রে
১৭পৃথ্বী মাতা (পৃথিবী)ঋগ্বেদের ৬ মন্ত্রে
১৮অপ (জল)ঋগ্বেদের ৬ মন্ত্রে
১৯আদিত্যগণঋগ্বেদের ৬ মন্ত্রে
২০বিষ্ণুঋগ্বেদের ৪ মন্ত্রে
২১ব্রহ্মস্পতিঋগ্বেদের ৬ মন্ত্রে
২২রুদ্রঋগ্বেদের ৪ মন্ত্রে
২৩দধিকরঋগ্বেদের ৪ মন্ত্রে
২৪যম (মৃত্যু)ঋগ্বেদের ৪ মন্ত্রে
২৫সরস্বতী নদী/সরস্বতীঋগ্বেদের ৩ মন্ত্রে
২৬পর্জন্য (বৃষ্টি)ঋগ্বেদ ৫.৮৩ ও ৭.১০১ এবং অথর্ববেদ ৪.১৫
২৭বাক (বক্তৃতা)ঋগ্বেদের ২ শ্লোক, যেমন ১০.১২৫
২৮বাস্তুস্পতিঋগ্বেদ ৭.৫৫
২৯বিশ্বকর্মাঋগ্বেদের ২ মন্ত্রে
৩০মন্যুঋগ্বেদের ২ মন্ত্রে
৩১কপিন্জল (ইন্দ্রের রূপ)ঋগ্বেদের ২ মন্ত্রে
৩২রাত্রি
৩৩মন (চিন্তাধারা), বিশিষ্ট ধারণাঋগ্বেদের ১০.৫৮ স্তোত্রে দেব
৩৩পুরুষপুরুষ সূক্তের মহাজাগতিক মানুষ (ঋগ্বেদ ১০.৯০)
৩৪অদিতিঋগ্বেদ ১০.৬৩.৩
৩৫ইন্দ্রাণী (শচী)
৩৬ভগ
৩৭বসুক্র
৩৮অত্রি
৩৯অপাং নপাত
৪০ক্ষেত্রপতি
৪১ঘ্রত
৪২নিরীতিঋগ্বেদ ১০.৫৯
৪৩অসংতি
৪৪ঊর্বশীঋগ্বেদ ১০.৯৫.১৮
৪৫পুরুর্বসঋগ্বেদ ১০.৯৫.১৮
৪৬বেনঋগ্বেদ ১০.১২৩
৪৭অরণ্যনীঋগ্বেদ ১০.১৪৬
৪৮মায়াভেদ (অবিদ্যা লঙ্ঘন)ঋগ্বেদ ১০.১৭৭
৪৯তর্কস্যঋগ্বেদ ১.৮৯.৬; ১০.১৭৮.১; ৫.৫১
৫০ত্বষ্টা
৫১শরণ্যু (সঞ্জনা)
৫২ত্রিতাঋগ্বেদে ৪১ বার
৫৩বিশ্বদেবঋগ্বেদ ৩.৫৪.১৭

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

উৎস

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ