ব্যাকট্রিয়া

মধ্য এশিয়ার একটি ঐতিহাসিক স্থান

ব্যাকট্রিয়া (/ˈbæktriə/; ব্যাকট্রিয়া: βαχλο, বাখ়লো), বা ব্যাকট্রিয়ানা ছিলো মধ্য এশিয়ার একটি প্রাচীন অঞ্চল।[১] ব্যাকট্রিয়ার সঠিক অবস্থান ছিল হিন্দুকুশ পর্বতমালার উত্তরে এবং আমু দরিয়া নদীর দক্ষিণে, যা আধুনিক-আফগানিস্তানের উত্তরাংশ, তাজিকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাংশ এবং উজবেকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো।[২] আরও বৃহত্তরভাবে ব্যাকট্রিয়া ছিল হিন্দু কুশের উত্তরে, পামিরের পশ্চিমে এবং তিয়ানশির দক্ষিণে, আমু দরিয়া মাঝখান দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছিল।

ব্যাকট্রিয়া
বাল্খ
হাখমানেশি সাম্রাজ্য, সিলিউসিড সাম্রাজ্য, গ্রিকো-ব্যাকট্রীয় রাজ্য এবং ইন্দো-গ্রীক রাজ্য প্রদেশ
২৫০০/২০০০ খ্রিস্টপূর্ব–৯০০/১০০০ খ্রিস্টাব্দ
ব্যাকট্রিয়া পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া -এ অবস্থিত
ব্যাকট্রিয়া
মানচিত্রে ব্যাকট্রিয়া অঞ্চলের অনুমিত অবস্থান

ব্যাকট্রিয়ার প্রাচীন শহরসমূহ

রাজধানীব্যাকট্রা
ঐতিহাসিক যুগAntiquity
• প্রতিষ্ঠিত
২৫০০/২০০০ খ্রিস্টপূর্ব
• বিলুপ্ত
৯০০/১০০০ খ্রিস্টাব্দ

আবেস্তায় অঞ্চলটিকে "অনিন্দ্য ব্যাকট্রিয়া, পতাকাসমেত মুকুটপরিহিত" এবং সর্বোচ্চ দেবতা আহুরা মাজদা যে ষোলটি নিখুঁত ইরানি ভূমি তৈরি করেছিলেন সেগুলির মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি জরাথুস্ট্রবাদের প্রাথমিক কেন্দ্রগুলির একটি এবং ইরানের কিংবদন্তি কায়ানীয় রাজত্বের রাজধানী। ব্যাকট্রিয়াকে মহান দারিয়াস-এর বেহিসতুন শিলালিপিতে হাখমানেশি সাম্রাজ্যের অন্যতম সত্রপ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে; এটি ছিলো একটি বিশেষ সত্রপ যা রাজমুকুটপ্রাপ্ত অধিপতি বা অভিপ্রেত উত্তরাধিকারীদের দ্বারা শাসিত হতো। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে হাখমানেশি সাম্রাজ্যের পতনের পরে ম্যাসেডোনিয়ার আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরোধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ব্যাকট্রিয়া, তবে শেষ পর্যন্ত গ্রেট আলেকজান্ডারের পতন ঘটে। ম্যাসেডোনীয় বিজয়ীর মৃত্যুর পরে, ব্যাকট্রিয়া তার সেনাপতি প্রথম সিলিউকাস দ্বারা অধিকৃত হয়।

তা সত্ত্বেও, ব্যাকট্রিয়ার সত্রপ ডায়োডোটাস প্রথম কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণার পরে অঞ্চলটি হারিয়েছিলেন সেনাপতি সেলুসিড; এভাবে গ্রিকো-ব্যাকট্রিয়ান এবং পরবর্তীকালে ইন্দো-গ্রীক রাজ্যের ইতিহাস শুরু হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর মধ্যে ইরানি পার্থিয়ান সাম্রাজ্য দ্বারা দখলকৃত হয় ব্যাকট্রিয়া এবং ১ম শতাব্দীর গোড়ার দিকে ব্যাকট্রিয়া অঞ্চলগুলোতে ইউয়েজি কর্তৃক কুষাণ সাম্রাজ্য দ্বারা গঠিত হয়েছিল। ইরানের রাজাদের মধ্যে দ্বিতীয় সাসানীয় মহারাজা শাপুর প্রথম তৃতীয় শতাব্দীতে কুষাণ সাম্রাজ্যের পশ্চিম অংশগুলি জয় করেছিলেন এবং কুষাণ-সাসানিয়ান রাজ্য গঠিত হয়েছিল। ৪র্থ শতাব্দীতে সাসানিয়ানরা ব্যাকট্রিয়ার দখল হারায়, তবে ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে পুনরায় দখল করেছিল। ৭ম শতকে ইরানের মুসলিম বিজয়ের সাথে সাথে ব্যাকট্রিয়ার ইসলামীকরণ শুরু হয়।

৮ম এবং ৯ম শতাব্দীতে ব্যাকট্রিয়া ছিলো একটি ইরানি রেনেসাঁ বা নবজাগরণের কেন্দ্র [৩]এবং অঞ্চলটিতে একটি স্বতন্ত্র সাহিত্যিক ভাষা হিসাবে নতুন ফারসি ভাষার আবির্ভাব ঘটে এই সময়ে। ব্যাকট্রিয়ার পূর্ব ইরানে পারস্যের সামান খুদার বংশধরদের দ্বারা গঠিত হয়েছিল সামানি সাম্রাজ্য; ফলশ্রুতিতে এই অঞ্চলে ফার্সি ভাষার বিস্তার এবং ব্যাকট্রিয়ান ভাষার অবনতি শুরু হয়।

প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় সময়ে ব্যাকট্রিয়া ছিলো ব্যাকট্রিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর সাধারণ ও প্রচলিত ভাষা। ইসলাম ধর্মের উত্থানের পূর্বে জরাথ্রুস্টবাদ এবং বৌদ্ধধর্মই ছিল বেশিরভাগ ব্যাকট্রিয়ানের ধর্ম।

নাম

হিন্দু কুশ (দক্ষিণ), তিয়ানশির দক্ষিণ অংশ (উত্তর) এবং পামির (পূর্ব) এর মধ্যে ব্যাকট্রিয়ার অবস্থান।
উত্তরে ফেরগানা উপত্যকা; পূর্ব দিকে "পশ্চিম তারিম" অববাহিকা।

ইংরেজি নাম ব্যাকট্রিয়া শব্দটি এসেছে প্রাচীন গ্রিক Βακτριανή ( Baktriani/ব্যাকট্রিয়ানি) হতে, যা ব্যাকট্রিয়ান শব্দ βαχλο (ব্যাকলো)-এর গ্রিক সংস্করণ। সাদৃশ্যযুক্ত নামগুলির মধ্যে রয়েছে আবেস্তা বাখ্দি, আদিফার্সি বাখ্ত্রিস ,[৪] মধ্যফার্সি বাল্খ, আধুনিক ফার্সি بلخ ( বাল্খ), চীনা 大夏 (পিনিয়িন: Dàxià), লাতিন ব্যাকট্রিয়ানা এবং সংস্কৃত बाह्लीक (বাহ্লীক)।

ভৌগোলিক বিবরণ

ব্যাকট্রিয়া মধ্য এশিয়ায় এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত ছিলো যেখানে আধুনিক সময়ে রয়েছে আফগানিস্তান এবং উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের বেশিরভাগ অংশ। দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে এটি হিন্দু কুশ পর্বতমালার সাথে সীমানাযুক্ত ছিল। পশ্চিমে এই অঞ্চলটি বৃহত্তর কারম্যানিয়ান মরুভূমির সাথে সীমাবদ্ধ ছিল এবং উত্তরে এটি অক্সাস নদী দ্বারা আবদ্ধ ছিল। বেশিরভাগ প্রাচীন গ্রিক কৃষিজ পণ্য উৎপাদন করার ক্ষমতা ও উর্বতার জন্য উল্লেখযোগ্য ছিলো ব্যাকট্রিয়া[৫]

পিয়েরে লেরিচের মতে:

ব্যাকট্রিয়া, ব্যাকট্রা[বাল্‌খ] ছিলো যে অঞ্চলটির রাজধানী, এটি মূলত আমু দারিয়ার দক্ষিণে অঞ্চল নিয়ে গঠিত যেখানে মরুদ্যানে কৃষিকার্য বাল্খ (ব্যাকট্রা) [Balkh], তাশকুরগান [Tashkurgan], কুন্দুজ [Kunduz], সর-ই পোল [Sar-e Pol] এবং শিরিন তাগাও [Šīrīn Tagāō] নদী [শিরিন তাগাব] থেকে নেওয়া জলের উপর নির্ভরশীল। এই অঞ্চলটি মধ্য এশীয় ইতিহাসে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাকট্রিয়ার রাজনৈতিক সীমা ব্যাকট্রিয়ান সমভূমির ভৌগোলিক পরিধি ছাড়িয়ে অনেকটা প্রসারিত হয়েছিল।[৬]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

  • জিওফ্রে স্টোরি রচিত ঐতিহাসিক কথাসাহিত্য উপন্যাস "অ্যানাবাসিস: আ নোভেল অভ হেলেনেস্টিক আফগানিস্তান অ্যান্ড ইন্ডিয়া"র একটি আখ্যান স্থান হলো "দিমিত্রিয়াস প্রথম" যুগের গ্রিকো-ব্যাকট্রিয়ান রাজ্য।[৭]
  • ছয় অংশের প্রামাণ্যচিত্র "আলেকজান্ডার লস্ট ওয়ার্ল্ড"-এ ব্যাকট্রিয়ান শহরগুলির সম্ভাব্য অবস্থানগুলো অনুসন্ধান করে যেহেতু ইতিহাসবিদরা মনে করেন যে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট অক্সাসের আলেকজান্দ্রিয়াসহ অক্সিজেনিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধারাবাহিকটি পূর্ব-বিদ্যমান অক্সাস সভ্যতারও অন্বেষণ করেছিলো।[৮]
  • সাইটটি ২০০৪ সালে "আলেকজান্ডার" চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছিল যেখানে "দারিয়াস তৃতীয়" মারা গিয়েছিলো।

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ