ব্যাটম্যান

ডি সি কমিক্সের চরিত্র

ব্যাটম্যান (ইংরেজি: Batman) যুক্তরাষ্ট্রের ডিসি কমিকস হতে প্রকাশিত কমিক বইয়ের একটি কাল্পনিক সুপারহিরো চরিত্র। এ চরিত্রটির স্রষ্টা শিল্পী বব কেন ও লেখক বিল ফিঙ্গার।[৫][৬] এ চরিত্রটির আবির্ভাব হয় ডিটেকটিভ কমিকস #২৭ (মে ১৯৩৯) সংখ্যায়। প্রথমে চরিত্রটির নাম ছিল "ব্যাট-ম্যান"। এ চরিত্রটি আরও কিছু নামে পরিচিত যেমন "দ্য কেপড ক্রুসেডার", "দ্য ডার্ক নাইট", "ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট ডিটেকটিভ" ইত্যাদি।[৭]

ব্যাটম্যান
প্রোমোশনাল আর্ট, ব্যাটম্যান #৬০৮ (অক্টোবর ২০০২, দ্বিতীয় মুদ্রণ)
পেনসিল ছবি: জিম লি
রং: স্কট উইলিয়ামস
প্রকাশনার তথ্য
প্রকাশকডিসি কমিকস
প্রথম আবির্ভাবডিটেকটিভ কমিকস #২৭
মে ১৯৩৯; ৮৪ বছর আগে (May 1939)
নির্মাতাবব কেন (ধারণা)
বিল ফিঙ্গার[১] (ডেভেলপার)
কাহিনীর তথ্য
ব্রুস ওয়েন
দলের অন্তর্ভুক্তিব্যাটম্যান পরিবার
জাস্টিস লিগ
ওয়েন এন্টারপ্রাইজেস
ব্যাটমেন অব অল নেশনস
ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড
আউটসাইডার্স
সহযোগীরবিন
ব্যাটগার্ল
সুপারম্যান
জেমস গর্ডন
নাইটউইং
ক্যাটওম্যান
হান্ট্রেস
গ্রিন অ্যারো
ওয়ান্ডার ওম্যান
জাতানা
ব্লুবার্ড
উল্লেখযোগ্য ছদ্মনাম
  • ম্যাচেস ম্যালন[২]
  • স্যার হ্যামিংফোর্ড গ্রে
  • মর্ডেকাই ওয়েন
  • লেফটি নক্স[৩]
  • দ্য ইনসাইডার
  • মিনিটম্যান[৪]
  • ডার্ক নাইট
  • দ্য কেপড ক্রুসেডার
ক্ষমতা
  • চৌকস পর্যায়ের বুদ্ধিমত্তা
  • শক্তি
  • ক্ষিপ্রতা
  • শারীরিক কসরৎ দেখানোর ক্ষমতা
  • মার্শাল আর্টিস্ট
  • দড়াবাজিকর
  • ক্রীড়াবিদ
  • ধূর্ত পলায়নবিশারদ
  • তীক্ষ্ণ গোয়েন্দা
  • তীরন্দাজ
  • খালি হাতে লড়াই করার ক্ষমতা
  • অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার
  • গোপনে ও চুপিচুপি ঢোকার ক্ষমতা
  • অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা
  • প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান
  • আশ্চর্য পর্যবেক্ষণী শক্তি
  • বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা/অপরাধ সমস্যার সমাধানকারীর মর্যাদা
  • রণকৌশল রচনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ দক্ষতা
  • বিপুল সম্পত্তি ও অপরাধীর ব্যাপারে তথ্যের সংরক্ষক
  • অসাধারণ স্মৃতিশক্তি
  • প্রশিক্ষিত কম্পিউটার হ্যাকার
  • সুদক্ষ ছদ্মবেশধারী

ব্যাটম্যানের গোপন পরিচয় হলো ব্রুস ওয়েন, যিনি একজন মার্কিন বিলিয়নেয়ার, শিল্পপতি এবং ওয়েন এন্টারপ্রাইজের মালিক। ছোটবেলায় তার বাবা থমাস ওয়েন ও মা মার্থা ওয়েনকে আততায়ীর হাতে নিহত হতে দেখার পর তিনি অপরাধীদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ গ্রহণ করেন। তিনি নিজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ও শারীরিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন। অপরাধ নির্মূল করার জন্য তিনি বাদুড় থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তার রূপ সৃষ্টি করেন।[৮] ব্যাটম্যান কাজ করেন কাল্পনিক গথাম সিটিতে। তার সাহায্যকারী হিসেবে কিছু চরিত্র বিদ্যমান; যেমন তার গৃহপরিচারক আলফ্রেড পেনিওর্থ, পুলিশ কমিশনার জেমস গর্ডন এবং ব্যাটম্যানের সঙ্গী রবিন। বেশিরভাগ সুপারহিরোর মত ব্যাটম্যানের কোনও অতিমানবীয় ক্ষমতা বা সুপারপাওয়ার নেই। তার বদলে তিনি তার বুদ্ধি, শারীরিক শক্তি, মার্শাল আর্টের দক্ষতা, অনুসন্ধানী ক্ষমতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিপুল ধন, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অপরাধ জগতে তার প্রচলিত ভীতি কাজে লাগিয়ে লড়াই করেন। ব্যাটম্যানের শত্রুতালিকায় অনেক পরিচিত নাম বিদ্যমান, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাটম্যানের চিরশত্রু জোকার

১৯৩৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হবার পরপরই ব্যাটম্যান বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তার পরের বছর ব্যাটম্যান নামে তার নিজের কমিক বই প্রকাশিত হয়। পরের দশকগুলোতে চরিত্রটিকে নানাভাবে উপস্থাপন করা হয়। ১৯৬০ এর দশকে তৈরি ব্যাটম্যান টেলিভিশন সিরিজের জনপ্রিয়তা ব্যাটম্যান চরিত্রটির ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে। অনেক লেখক চরিত্রটিকে তার অন্ধকার মূলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, যার শুরু হয়েছিল ১৯৮৬ সালে ফ্র্যাংক মিলারের দ্য ডার্ক নাইট রিটার্নস প্রকাশের মধ্য দিয়ে। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ব্যাটম্যান লাইভ-অ্যাকশন ফিল্মগুলোর সাফল্য সাধারণ মানুষের মধ্যে চরিত্রটির জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে।[৯]

একজন সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে ব্যাটম্যান চরিত্রটি রেডিও হতে টেলিভিশন ও ফিল্ম পর্যন্ত নানা মাধ্যমে এবং নানান ধরনের খেলনা ও ভিডিও গেমে এসেছে। এ চরিত্রটি মনোবিদদের নজরেও এসেছে, যাঁদের অনেকেই চরিত্রটির মনস্তত্ব বোঝার চেষ্টা করেছেন। ২০১৫ সালে ফ্যানসাইডেড ব্যাটম্যানকে তাদের "কমিক বইয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ৫০ সুপারহিরো" তালিকায় এক নম্বরে স্থান দিয়েছে[১০] এবং ব্যাটম্যান র‍্যাংকার-এর "সর্বকালের সেরা কমিক বইয়ের সুপারহিরো" তালিকায় প্রথম হয়েছে।[১১] ২০১১ সালে ব্যাটম্যান আইজিএন-এর "সর্বকালের সেরা ১০০ কমিক বুক হিরো" তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে।[১২] কেভিন কনরয়, ব্রুস গ্রিনউড, পিটার ওয়েলার, অ্যান্থনি রুইভিভার, জেসন ও'মারা ও উইল আরনেট প্রমুখ বিভিন্ন অ্যানিমেটেড অ্যাডাপশনে চরিত্রটির কণ্ঠ দিয়েছেন। টেলিভিশন ও ফিল্মে ব্যাটম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লুইস উইলসন, রবার্ট লোয়ারি, অ্যাডাম ওয়েস্ট, মাইকেল কিটন, ভ্যাল কিলমার, জর্জ ক্লুনি, ক্রিশ্চিয়ান বেল এবং বেন অ্যাফ্লেক

প্রকাশনা ইতিহাস

সৃষ্টি

১৯৩৯ সালের শুরুর দিকে, অ্যাকশন কমিকস-এ সুপারম্যানের সাফল্য ন্যাশনাল কমিকস পাবলিকেশনস (পরবর্তীতে ডিসি কমিকস)-এর সম্পাদকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল তাদের বইগুলোতে আরো সুপারহিরো চরিত্র আনতে। সে কারণে বব কেন সৃষ্টি করেছিলেন "দ্য ব্যাট-ম্যান"।[১৩] তার সহযোগী বিল ফিঙ্গার বলেছেন যে "Kane had an idea for a character called 'Batman,' and he'd like me to see the drawings. I went over to Kane's, and he had drawn a character who looked very much like Superman with kind of ... reddish tights, I believe, with boots ... no gloves, no gauntlets ... with a small domino mask, swinging on a rope. He had two stiff wings that were sticking out, looking like bat wings. And under it was a big sign ... BATMAN".[১৪] বাদুড়ের ডানার মতো কেপটির ধারণা দিয়েছিলেন বব কেন, যিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তার ছোটবেলায় দেখা লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা অর্নিথপ্টারের ছবি থেকে।[১৫]

ফিঙ্গার চেয়েছিলেন চরিত্রটিকে একটি সাধারণ ডমিনো মাস্কের পরিবর্তে একটি কাউল দিতে, তার সাথে ডানার বদলে কেপ এবং গ্লাভস; তিনি আরো সুপারিশ করেছিলেন আসল কস্টিউম থেকে লাল অংশগুলি বাদ দিতে।[১৬][১৭][১৮][১৯] ফিঙ্গার বলেছেন যে তিনি চরিত্রটির গোপন পরিচয় হিসেবে ব্রুস ওয়েন নামটি তৈরি করেছিলেন: "Bruce Wayne's first name came from Robert Bruce, the Scottish patriot. Wayne, being a playboy, was a man of gentry. I searched for a name that would suggest colonialism. I tried Adams, Hancock ... then I thought of Mad Anthony Wayne."[২০] তিনি পরবর্তীতে বলেছেন যে তার সাজেশনগুলো লি ফকের জনপ্রিয় কমিক স্ট্রিপ চরিত্র দ্য ফ্যান্টম দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, যে চরিত্রটির সাথে কেনও পরিচিত ছিলেন।[২১]

কেন এবং ফিঙ্গার ব্যাট-ম্যানের চেহারা, ব্যক্তিত্ব, পদ্ধতি এবং অস্ত্রসম্পর্কিত বেশিরভাগ বিষয়ের জন্য প্রেরণা পেয়েছিলন ১৯৩০-এর দশকের তৎকালীন সংস্কৃতি থেকে।[২২] দ্বৈত পরিচয়ের সম্ভ্রান্ত একজন হিরো হিসেবে ব্যাটম্যানের পূর্বসূরি পাওয়া যায় দ্য স্কারলেট পিম্পারনেল (ব্যারনেস এমুস্কা ওর্চি, ১৯০৩) এবং জরো (জনস্টন ম্যাককালি, ১৯১৯)-তে। তাদের মতোই, তিনি তার বীরত্বপূর্ণ কাজ করতেন গোপনে, সন্দেহ এড়ানোর জন্য সাধারণ মানুষের অভিনয় করতেন এবং তার কাজ চিহ্নিত করে রাখতেন একটি বিশেষ মার্কা দিয়ে। কেন বলেছেন যে চরিত্রটির ওপর দ্য মার্ক অব জরো (১৯২০) এবং দ্য ব্যাট হুইসপার্স (১৯৩০)-এর মতো ফিল্মের প্রভাব ছিল। ফিঙ্গার ডক স্যাভেজ, দ্য শ্যাডো, ডিক ট্রেসি এবং শার্লক হোমস-এর মতো কিছু চরিত্র থেকে প্রেরণা পেয়ে তার চরিত্রটিকে একজন অভিজ্ঞ অনুসন্ধানকারী বানিয়েছিলেন।[২৩][২৪]

তার ১৯৮৯ সালের আত্মজীবনীতে, কেন ব্যাটম্যানের সৃষ্টিতে ফিঙ্গারের অবদান সম্পর্কে বলেছেন:

One day I called Bill and said, 'I have a new character called the Bat-Man and I've made some crude, elementary sketches I'd like you to look at.' He came over and I showed him the drawings. At the time, I only had a small domino mask, like the one Robin later wore, on Batman's face. Bill said, 'Why not make him look more like a bat and put a hood on him, and take the eyeballs out and just put slits for eyes to make him look more mysterious?' At this point, the Bat-Man wore a red union suit; the wings, trunks, and mask were black. I thought that red and black would be a good combination. Bill said that the costume was too bright: 'Color it dark grey to make it look more ominous.' The cape looked like two stiff bat wings attached to his arms. As Bill and I talked, we realized that these wings would get cumbersome when Bat-Man was in action, and changed them into a cape, scalloped to look like bat wings when he was fighting or swinging down on a rope. Also, he didn't have any gloves on, and we added them so that he wouldn't leave fingerprints.[২১]

স্বর্ণযুগ

পরবর্তী সৃষ্টির কৃতিত্ব

কেন চরিত্রটির মালিকানা দিয়ে দিয়েছিলেন, যার বদলে তিনি পেয়েছিলেন সব ব্যাটম্যান কমিকে একটি বাধ্যতামূলক বাইলাইন। এ বাইলাইনে প্রথমে "Batman created by Bob Kane" লেখা থাকত না; শুধু প্রতিটি গল্পের প্রথম পৃষ্ঠায় তার নাম লেখা থাকত। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে কমিক বইয়ে তার নাম আসা বন্ধ হয়ে যায়, তার বদলে প্রতিটি গল্পের লেখক এবং শিল্পীদের নাম ছাপা হতে থাকে। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে, যখন জেরি সিগেল এবং জো শুস্টার সুপারম্যান তৈরির জন্য তাদের নামের সাথে "created by" শিরোনাম পেতে শুরু করেন, আর উইলিয়াম মোল্টন মার্সটনও ওয়ান্ডার ওম্যান চরিত্রটির জন্য বাইলাইন লাভ করেন, ব্যাটম্যানের কাহিনীগুলোতে অন্যান্য নামের সাথে "Created by Bob Kane" কথাটি যোগ হয়।

ফিঙ্গার একইরকম স্বীকৃতি পাননি। যদিও ১৯৪০-এর দশক থেকে তিনি ডিসির অন্যান্য কাজের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন, ১৯৬০-এর দশকে তিনি ব্যাটম্যান লেখার জন্য নামমাত্র স্বীকৃতি পাওয়া শুরু করেন; উদাহরণস্বরূপ, ব্যাটম্যান #১৬৯ (ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫)-এর চিঠিপত্র পাতায় সম্পাদক জুলিয়াস শোয়ার্টজ তার নাম দেন রিডলারের স্রষ্টা হিসেবে, যে ব্যাটম্যানের নিয়মিত শত্রুদের একজন। কিন্তু ফিঙ্গারের চুক্তির কারণে তার কাছে শুধু তার রাইটিং পেজ রেট থাকে, কোনও বাইলাইন নয়। কেন লিখেছেন, "Bill was disheartened by the lack of major accomplishments in his career. He felt that he had not used his creative potential to its fullest and that success had passed him by."[২০] ১৯৭৪ সালে ফিঙ্গারের মৃত্যুর সময় পর্যন্তও ডিসি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিঙ্গারকে ব্যাটম্যানের সহস্রষ্টা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

জেরি রবিনসন, যিনি সে সময় ফিঙ্গার এবং কেনের সাখে স্ট্রিপটিতে কাজ করেছিলেন, স্বীকৃতি ভাগ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য কেনের সমালোচনা করেন। ২০০৫ সালে দ্য কমিকস জার্নাল-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ফিঙ্গার তার অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না:

Bob made him more insecure, because while he slaved working on Batman, he wasn't sharing in any of the glory or the money that Bob began to make, which is why ... [he was] going to leave [Kane's employ]. ... [Kane] should have credited Bill as co-creator, because I know; I was there. ... That was one thing I would never forgive Bob for, was not to take care of Bill or recognize his vital role in the creation of Batman. As with Siegel and Shuster, it should have been the same, the same co-creator credit in the strip, writer, and artist.[২৫]

যদিও কেন প্রথমে চরিত্রটি সৃষ্টির পেছনে ফিঙ্গারের অবদান অস্বীকার করেছিলেন, ১৯৬৫ সালে ভক্তদের কাছে লেখা একটি খোলা চিঠিতে তিনি বলেন যে "it seemed to me that Bill Finger has given out the impression that he and not myself created the ''Batman, t' [সিক] as well as Robin and all the other leading villains and characters. This statement is fraudulent and entirely untrue." কেন নিজেও ফিঙ্গারের স্বীকৃতি না পাওয়ার ব্যাপারে মন্তব্য করেন। "The trouble with being a 'ghost' writer or artist is that you must remain rather anonymously without 'credit'. However, if one wants the 'credit', then one has to cease being a 'ghost' or follower and become a leader or innovator."[২৬]

১৯৮৯ সালে, কেন একটি সাক্ষাৎকারে ফিঙ্গারের অবস্থার কথা স্মরণ করেন:

In those days it was like, one artist and he had his name over it [the comic strip] — the policy of DC in the comic books was, if you can't write it, obtain other writers, but their names would never appear on the comic book in the finished version. So Bill never asked me for it [the byline] and I never volunteered — I guess my ego at that time. And I felt badly, really, when he [Finger] died.[২৭]

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ডিসি এন্টারটেইনমেন্ট ঘোষণা দেয় যে ফিঙ্গার পরিবার এবং ডিসির মধ্যে সমঝোতা হওয়ার পর ২০১৬ সালের সুপারহিরো ফিল্ম ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস এবং গথাম টিভি শো-এর দ্বিতীয় মৌসুমে ব্যাটম্যানের সৃষ্টিতে তার অবদানের জন্য ফিঙ্গার স্বীকৃতি লাভ করবেন।[৫] ব্যাটম্যানের স্রষ্টা হিসেবে ফিঙ্গার কমিক বইয়ে প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি পান ২০১৫ সালের অক্টোবরে ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন এটারনাল #৩ এবং ব্যাটম্যান: আর্কহ্যাম নাইট জেনেসিস #৩-এর মধ্য দিয়ে। কমিকে তার এ স্বীকৃতি লেখা আসে "Batman created by Bob Kane with Bill Finger" হিসেবে।[৬]

শুরুর সময়

ব্যাটম্যানের প্রথম আবির্ভাব, ডিটেকটিভ কমিকস #২৭ (মে ১৯৩৯); প্রচ্ছদশিল্পী বব কেন

ব্যাটম্যানের প্রথম গল্প, "দ্য কেস অব দ্য কেমিক্যাল সিন্ডিকেট", প্রকাশিত হয়েছিল ডিটেকটিভ কমিকস #২৭ (মে ১৯৩৯)-এ। ফিঙ্গার বলেছেন, "ব্যাটম্যান প্রথমে লেখা হয়েছিল পাল্প স্টাইলে",[২৮] আর এ প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায় শত্রুদের খুন বা জখম করার পর ব্যাটম্যানের অনুশোচনা প্রদর্শনে। ব্যাটম্যান একটি সফল চরিত্র হিসেবে প্রমাণিত হন, এবং ১৯৪০ সালে তিনি তার নিজের নামের কমিক লাভ করেন। এছাড়া তিনি ডিটেকটিভ কমিকস-এও নিয়মিত আসা শুরু করেন। সেসময় ডিটেকটিভ কমিকস ছিল সর্বাধিক বিক্রীত এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রকাশনা সংস্থা; ব্যাটম্যান এবং কোম্পানিটির অন্য বড় হিরো, সুপারম্যান, ছিল এ সাফল্যের মূল কারণ।[২৯] এ দু'টি চরিত্রকে পাশাপাশি দেখা গিয়েছিল ওয়ার্ল্ড'স ফাইনেস্ট কমিকস-এর প্রধান আকর্ষণ হিসেবে, যেটির নাম প্রথমে ছিল ওয়ার্ল্ড'স বেস্ট কমিকস যখন এটি ১৯৪০ সালে প্রথম বের হয়েছিল। জেরি রবিনসন এবং ডিক স্প্র্যাংসহ আরও কয়েকজন স্রষ্টা এ সময়ে স্ট্রিপে কাজ করেছিলেন।

প্রথম কিছু ব্যাটম্যান স্ট্রিপের সময়ে চরিত্রটিতে কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয় এবং ব্যাটম্যানের শৈল্পিক বর্ণনা বিবর্তিত হয়। কেন বলেছেন যে ছয়টির ইস্যুর মধ্যেই তিনি চরিত্রটির চোয়াল আরও দৃঢ় এবং চরিত্রটির পোশাকের কানগুলো আরও লম্বা করে এঁকেছিলেন। "About a year later he was almost the full figure, my mature Batman", কেন বলেন।[৩০] ব্যাটম্যানের ইউটিলিটি বেল্ট প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল ডিটেকটিভ কমিকস #২৯ (জুলাই ১৯৩৯)-এ। তার পরেই #৩১ (সেপ্টেম্বর ১৯৩৯)-এ এসেছিল বুমেরাং-এর মতো ব্যাটারাং এবং প্রথম বাদুড়ের মতো দেখতে যান, ব্যাটপ্লেন। চরিত্রটির শুরুর কাহিনী প্রকাশিত হয় #৩৩ (নভেম্বর ১৯৩৯)-এ একটি দু'পৃষ্ঠার গল্পে, যেটি ব্যাটম্যানের চিন্তাশীল রূপটিকে প্রতিষ্ঠিত করে, যে চরিত্রটি তার বাবা-মার মৃত্যু দ্বারা চালিত হন। ফিঙ্গারের লেখা এ গল্পে একজন কমবয়সী ব্রুস ওয়েন ছিনতাইকারীর হাতে তার বাবা-মার মৃত্যু হতে দেখেন। কয়েকদিন পর, তাদের কবরে, তিনি শপথ করেন যে "by the spirits of my parents [I will] avenge their deaths by spending the rest of my life warring on all criminals"।[৩১][৩২][৩৩]

প্রথম দিকের ব্যাটম্যানের পাল্প-অনুপ্রাণিত উপস্থাপনা শিথিল হতে শুরু করে ডিটেকটিভ কমিকস #৩৮ (এপ্রিল ১৯৪০) থেকে যখন ব্যাটম্যানের সঙ্গী রবিনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।[৩৪] ফিঙ্গারের পরামর্শে রবিনকে আনা হয়, কারণ ব্যাটম্যানের একজন "ওয়াটসন" দরকার ছিল যার সাথে তিনি কথা বলতে পারতেন।[৩৫] কেনের একাকী ব্যাটম্যান পছন্দ হলেও এ চরিত্রটির কারণে বিক্রি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়, এবং এতে "ছোট সাইডকিক" সৃষ্টির আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।[৩৬] একক স্পিন-অফ সিরিজ ব্যাটম্যান-এর প্রথম ইস্যুটি উল্লেখযোগ্য ছিল কারণ এতে ব্যাটম্যানের প্রধান দু'জন শত্রু জোকার এবং ক্যাটওম্যান-এর আবির্ভাব ঘটেছিল। এতে এমন একটি গল্পও ছিল যেখানে ব্যাটম্যান কিছু দৈত্যকে গুলি করে হত্যা করেন। সে গল্পটির কারণেই সম্পাদক হুইটনি এলসওর্থ নিয়ম করেন যে চরিত্রটি আর কখনও খুন করবে না বা কোনও প্রকারের বন্দুক ব্যবহার করবে না।[৩৭]

১৯৪২ সালের মধ্যেই ব্যাটম্যান কমিকের লেখক ও শিল্পীরা ব্যাটম্যানের কাহিনীর প্রধান বিষয়গুলোর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন।[৩৮] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বছরগুলোতে, ডিসি কমিকস "adopted a postwar editorial direction that increasingly de-emphasized social commentary in favor of lighthearted juvenile fantasy"। এই পরিবর্তনটি স্পষ্ট দেখা যায় যুদ্ধের পরবর্তী ব্যাটম্যান কমিকগুলোতে; ১৯৪০ সালের প্রথম দিকের স্ট্রিপগুলোর "নিরানন্দ এবং ভয়ংকর জগত" থেকে বের হয়ে ব্যাটম্যান একজন সম্মানী নাগরিক হিসেবে আবির্ভূত হন যিনি একটি "উজ্জ্বল এবং রঙিন" পরিবেশে বাস করতেন।[৩৯]

রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ যুগ

১৯৫০-এর দশক এবং ১৯৬০-এর দশকের শুরু

ব্যাটম্যান ছিল অল্প কিছু সুপারহিরো চরিত্রের একজন যাদেরকে নিয়ে গল্প ১৯৫০-এর দশকে এ ধরনটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমে আসার পরও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছিল। সুপারম্যান #৭৬ (জুন ১৯৫২)-এর "দ্য মাইটিয়েস্ট টিম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড" গল্পে ব্যাটম্যান প্রথমবারের মতো সুপারম্যানের সঙ্গে দলবদ্ধ হন এবং তারা একে অপরের গোপন পরিচয় আবিষ্কার করেন।[৪০] এ গল্পটির সাফল্যের পর ওয়ার্ল্ড'স ফাইনেস্ট কমিকসকে নতুন করে সাজানো হয় যাতে এর আগ পর্যন্ত চলতে থাকা ব্যাটম্যান এবং সুপারম্যানের আলাদা গল্পগুলোর বদলে এতে উভয় চরিত্রকে একসাথে বিষয় করে গল্প থাকে।[৪১] এ চরিত্রগুলোর দলবদ্ধ হওয়া ছিল "a financial success in an era when those were few and far between"।[৪২] ১৯৮৬ সালে বইটি বাতিল হওয়া পর্যন্ত এ সিরিজটি চলতে থাকে।১৯৫৪ সালে মনোবিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ওয়ার্থামের সিডাকশান অব দি ইনোসেন্ট বইটি প্রকাশের পরে কমিক বই শিল্প নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। তখন যেসব বইয়ের সমালোচনা করা হয়েছিল ব্যাটম্যান কমিকগুলো তার মধ্যে অন্যতম। ওয়ার্থামের বক্তব্য ছিলো যে কমিকে দেখানো অপরাধগুলো বাচ্চারা অনুকরণ করার চেষ্টা করে, এবং এসব কাজ আগামী প্রজন্মের নৈতিকতা নষ্ট করে। ওয়ার্থাম ব্যাটম্যান কমিকগুলোর সমালোচনা করেন সেগুলোর সমকামী চরিত্রের জন্য এবং বলেন যে ব্যাটম্যান এবং রবিনকে প্রেমিকযুগল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।[৪৩] ওয়ার্থামের সমালোচনার কারণে ১৯৫০-এর দশকে জনগণের মধ্যে শোরগোল সৃষ্টি হয়, যার কারণে পরবর্তীতে কমিকস কোড অথরিটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যে কোডটির বর্তমানে আর ব্যবহার নেই। যুদ্ধ-পরবর্তী বছরগুলোতে একজন "উজ্জ্বলতর ব্যাটম্যান" বানানোর প্রবণতা কমিকস কোড সৃষ্টির পর আরও বৃদ্ধি পায়।[৪৪] বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে ব্যাটম্যান এবং রবিন সমকামী- এ ধারণা খণ্ডন করার জন্য ১৯৫৬ সালে ব্যাটওম্যান এবং ১৯৬১ সালে বারবারা গর্ডন-এর আগের ব্যাট-গার্ল-কে সৃষ্টি করা হয়। এর পর থেকে কাহিনীগুলোর ধরন আরও অতিরঞ্জিত এবং হালকা হয়।[৪৫]

১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে, ব্যাটম্যানের কাহিনীগুলো ধীরে ধীরে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীভিত্তিক হতে থাকে, যেটি এ ঘরানার অন্যান্য ডিসি চরিত্রের সাফল্য অনুকরণ করার জন্য করা হয়েছিল।[৪৬] ব্যাটওম্যান, এস দ্য ব্যাট-হাউন্ড এবং ব্যাট-মাইট-এর মত কিছু নতুন চরিত্র তখন সৃষ্টি করা হয় । ব্যাটম্যানের কাহিনীতে তখন প্রায়শই অদ্ভুত রূপান্তর বা আজব মহাকাশের প্রাণী আবির্ভূত হত। ১৯৬০ সালে দ্য ব্রেভ অ্যান্ড দ্য বোল্ড #২৮ (ফেব্রুয়ারি ১৯৬০)-এ ব্যাটম্যান জাস্টিস লিগ অব আমেরিকার একজন সদস্য হন এবং সে বছর শুরু হওয়া বেশ কয়েকটি জাস্টিস লিগ কমিক সিরিজে আবির্ভূত হন।

"নিউ লুক" ব্যাটম্যান এবং ক্যাম্প

১৯৬৪ সালের মধ্যেই ব্যাটম্যানের কাহিনীর বিক্রি বিস্ময়করভাবে কমে যায়। বব কেন বলেছেন, এ ঘটনার ফলে ডিসি ব্যাটম্যানকে একেবারে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছিল।[৪৭] এর প্রেক্ষিতে সম্পাদক জুলিয়াস শোয়ার্টজকে ব্যাটম্যানের কাহিনীর দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বেশ কিছু বিষয় পরিবর্তন করেন, যার শুরু হয় ১৯৬৪ সালের ডিটেকটিভ কমিকস #৩২৭ (মে ১৯৬৪)-এর মধ্য দিয়ে, যেটিকে বলা হচ্ছিল একটি "নিউ লুক"। শোয়ার্টজ পরিবর্তনগুলো আনেন ব্যাটম্যানকে আরও সামসময়িক করার জন্য, এবং গল্পগুলোকে আরও গোয়েন্দাভিত্তিক করার জন্য। তিনি চরিত্রটিকে উন্নত করার জন্য শিল্পী কারমাইন ইনফান্তিনোকে ডেকে আনেন। ব্যাটমোবিলকে নতুন রূপ দেয়া হয়, এবং ব্যাটম্যানের পোশাক পরিবর্তন করা হয় যাতে বাদুড়ের চিহ্নের পেছনে একটি হলুদ বৃত্তাকার ক্ষেত্র থাকে। মহাকাশের প্রাণী, সময় পরিভ্রমণ এবং ১৯৫০-এর দশকের চরিত্র যেমন ব্যাটওম্যান, এস এবং ব্যাট-মাইটকে সরিয়ে ফেলা হয়। ব্রুস ওয়েনের গৃহপরিচারক আলফ্রেডকে মেরে ফেলা হয় (যদিও তার মৃত্যু দ্রুতই বাতিল করা হয়) এবং ওয়েন পরিবারের একজন আত্মীয় আন্ট হ্যারিয়েটকে আনা হয় ব্রুস ওয়েন এবং ডিক গ্রেসন-এর সাথে বাস করার জন্য।[৪৮]

১৯৬৬ সালে শুরু হওয়া ব্যাটম্যান টেলিভিশন সিরিজ চরিত্রটির ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিল। এ সিরিজটির সাফল্য কমিক বইয়ের বিক্রি বৃদ্ধি করে, এবং ব্যাটম্যান-এর প্রায় ৯ লক্ষ কপি বিক্রি হয়ে যায়।[৪৯] সিরিজের কিছু বিষয় যেমন ব্যাটগার্ল চরিত্রটি এবং সিরিজটির ক্যাম্প ধরন কমিকে নিয়ে আসা হয়। সিরিজটির কারণে আলফ্রেড চরিত্রটিও ফিরে আসে। যদিও কমিকস এবং টিভি শো উভয়ই কিছু সময়ের জন্য সাফল্য লাভ করেছিল, ক্যাম্প ধরনটি একসময় অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং ১৯৬৮ সালে শোটি বাতিল করে দেয়া হয়। এরপর ব্যাটম্যান কমিকগুলো আবার জনপ্রিয়তা হারায়। জুলিয়াস শোয়ার্টজ বলেছেন, "When the television show was a success, I was asked to be campy, and of course when the show faded, so did the comic books."[৫০]

১৯৬৯ সাল থেকে লেখক ডেনিস ও'নিল এবং শিল্পী নিল অ্যাডামস চেষ্টা করেন ব্যাটম্যানকে টিভি সিরিজের ক্যাম্প ধরন থেকে চরিত্রটির অন্ধকার মূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার।[৫১] ও'নিল বলেছেন যে তার ইচ্ছে ছিল "simply to take it back to where it started. I went to the DC library and read some of the early stories. I tried to get a sense of what Kane and Finger were after."[৫২]

ও'নিল এবং অ্যাডামস একসাথে প্রথম কাজ করেন "দ্য সিক্রেট অব দ্য ওয়েটিং গ্রেভস" গল্পে (ডিটেকটিভ কমিকস #৩৯৫, জানুয়ারি ১৯৭০)। খুব অল্প কাহিনীতেই ও'নিল, অ্যাডামস, শোয়ার্টজ এবং ইংকার ডিক জিওর্ডানো একত্রে কাজ করেছিলেন, প্রকৃতপক্ষে সত্তরের দশকে এঁদের অন্যান্য স্রষ্টাদের সাথে আলাদা আলাদাভাবে কাজ করানো হয়েছিল; কিন্তু তারপরও তাদের কাজের প্রভাব ছিল "ট্রিমেন্ডাস"।[৫৩] জিওর্ডানো বলেন: "We went back to a grimmer, darker Batman, and I think that's why these stories did so well ..."[৫৪] যদিও ও'নিল এবং অ্যাডামসের কাজ ভক্তদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিল, তাতে পড়তে থাকা বিক্রির পরিমাণ বেশি বৃদ্ধি পায়নি; একইরকম ঘটনা ঘটেছিল লেখক স্টিভ ইঙ্গলহার্ট এবং পেন্সিলার মার্শাল রজার্স-এর ডিটেকটিভ কমিকস #৪৭১-৩৭৬ (আগস্ট ১৯৭৭ – এপ্রিল ১৯৭৮)-এর ক্ষেত্রেও, যে কাহিনীগুলোর প্রভাব ছিল ১৯৮৯ সালের ছবি ব্যাটম্যান-এর ওপর এবং যা থেকে ব্যাটম্যান: দি অ্যানিমেটেড সিরিজ বানানো হয়েছিল, যেটি শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে।[৫৫] এর পরও সত্তর এবং আশির দশকের মধ্যে বিক্রি কমতে থাকে, এবং ১৯৮৫ সালে তা ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়।[৫৬]

আধুনিক যুগ

দ্য ডার্ক নাইট রিটার্নস

ফ্র্যাংক মিলার-এর সিরিজ দ্য ডার্ক নাইট রিটার্নস (ফেব্রুয়ারি–জুন ১৯৮৬) চরিত্রটিকে তার অন্ধকার মূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, পরিবেশ এবং টোন উভয় দিক দিয়েই। এই বইয়ে একজন ৫৫ বছর বয়সী ব্যাটম্যানের কথা বলা হয় যিনি একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যতে অবসর থেকে ফিরে আসেন। দ্য ডার্ক নাইট রিটার্নস অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করে এবং এরপর থেকে চরিত্রটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাহিনীগুলোর মধ্যেও অন্যতম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।[৫৭] এই সিরিজটি চরিত্রটির জনপ্রিয়তা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।[৫৮]

সে বছর ডেনিস ও'নিল ব্যাটম্যানের কমিকের সম্পাদকের দায়িত্ব পান এবং ডিসির কাহিনী পরিবর্তনকারী মিনিসিরিজ ক্রাইসিস অন ইনফিনিট আর্থস-এর পর ব্যাটম্যানকে উপস্থাপনের ভিত্তি গড়ে তোলেন। ও'নিল কাজ করছিলেন এই ভেবে যে তাকে নেওয়া হয়েছিল চরিত্রটিকে ঢেলে সাজানোর জন্য এবং তার কারণে তিনি এর আগ পর্যন্ত চলে আসা টোনের বদলে বইগুলোতে এক ভিন্ন মাত্র আনার চেষ্টা করেন।[৫৯] তার এ চেষ্টার একটি ফল ছিল ব্যাটম্যান #৪০৪–৪০৭ (ফেব্রুয়ারি–মে ১৯৮৭)-এর ইয়ার ওয়ান কাহিনী, যাতে ফ্র্যাংক মিলার এবং শিল্পী ডেভিড মাজুকেলি চরিত্রটির শুরুর কাহিনী নতুনভাবে উপস্থাপন করেন। ১৯৮৮ সালের ৪৮ পৃষ্ঠার একক কমিক ব্যাটম্যান: দ্য কিলিং জোক এর মাধ্যমে লেখক অ্যালান মুর এবং শিল্পী ব্রায়ান বোল্যান্ড এ উপস্থাপনাটি চালিয়ে যান, যে গল্পে জোকার কমিশনার গর্ডন-এর মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য গর্ডনের মেয়ে বারবারাকে পঙ্গু করে দেয়, এবং তার পরে কমিশনারকে অপহরণ এবং অত্যাচার করে, শারীরিক ও মানসিক দু'ভাবেই।

ব্যাটম্যান কমিক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ১৯৮৮ সালে যখন ডিসি কমিকস একটি নম্বর তৈরি করে যাতে পাঠকরা কল করে দ্বিতীয় রবিন জেসন টড-এর জীবিত বা মৃত থাকা বিষয়ে ভোট দিতে পারত। মাত্র ২৮টি ভোটের ব্যবধানে ভোটাররা জেসনের মৃত্যু হওয়া নির্ধারণ করে।[৬০]

নাইটফল

১৯৯৩ সালের নাইটফল কাহিনীটি একজন নতুন শত্রু বেনকে পরিচয় করিয়ে দেয়, যে ব্যাটম্যানকে তার সহ্যের সীমায় নিয়ে গিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে চোটগ্রস্ত করে। জ্যাঁ-পল ভ্যালি, যে আজরাইল নামেও পরিচিত, ব্রুস ওয়েন সেরে ওঠার সময় ব্যাটম্যানের দায়িত্ব পালন করে। লেখক ডগ মোয়েঞ্চ, চাক ডিক্সন এবং অ্যালান গ্র্যান্ট নাইটফল-এর সময় ব্যাটম্যানের গল্পগুলোতে কাজ করেছিলেন, এবং নব্বইয়ের দশকজুড়ে অন্যান্য ব্যাটম্যান ক্রসওভারগুলোতেও অবদান রেখেছিলেন। ১৯৯৮-এর ক্যাটাক্লিজম কাহিনীটি ১৯৯৯ সালের নো ম্যান'স ল্যান্ড-এর আগের কাহিনী হিসেবে কাজ করে। নো ম্যান'স ল্যান্ড এক বছর ধরে ব্যাটম্যানের গল্পগুলোতে চলেছিল, যাতে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি গথাম সিটির কাহিনী বলা হয়েছিল। নো ম্যান'স ল্যান্ড শেষ হওয়ার পর ও'নিল সম্পাদকের থেকে সরে দাঁড়ান এবং তার জায়গা নেন বব শ্রেক

আরেকজন লেখক যিনি ব্যাটম্যান কমিক সিরিজের মধ্য দিয়ে খ্যাতি লাভ করেন, হলেন জেফ লোব। তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী টিম সেলের সাথে তিনি দু'টি মিনিসিরিজ লিখেছিলেন (দ্য লং হ্যালোউইন এবং ডার্ক ভিক্টরি) যেগুলো ব্যাটম্যানের প্রথম দিকের একটি সংস্করণকে উপস্থাপন করেছিল যিনি তার সকল শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছিলেন (বিশেষ করে টু-ফেস, যার পেছনের কাহিনী লোব নতুন করে লিখেছিলেন) এবং একই সাথে হলিডে এবং হ্যাংম্যানের মত সিরিয়াল কিলারদের রহস্য উদ্ঘাটন করছিলেন। ২০০৩ সালে লোব শিল্পী জিম লির সাথে প্রধান ব্যাটম্যান বইয়ের জন্য ব্যাটম্যান: হাশ নামে আরেকটি রহস্যগল্পের ওপর কাজ করেছিলেন। বারোটি ইস্যুর গল্পটিতে ব্যাটম্যান এবং ক্যাটওম্যান দলবদ্ধ হয়ে ব্যাটম্যানের পুরো শত্রুদলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তাদের সাথে থাকে আপাত পুনর্জীবিত জেসন টড, এবং তারা রহস্যময় সুপারভিলেন হাশ-এর পরিচয় বের করার চেষ্টা করে। যদিও হাশ চরিত্রটি পাঠকদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়, কাহিনীটি ডিসির জন্য সাফল্য বয়ে আনে। যেহেতু কাহিনীটি ছিল প্রায় এক দশকের মধ্যে জিম লি-এর প্রথম নিয়মিত কমিক বইয়ে কাজ, কাহিনীটি ব্যাটম্যান #৫০০ (অক্টোবর ১৯৯৩)-এর পর প্রথমবারের মতো ডায়মন্ড কমিক ডিস্ট্রিবিউটরস-এর বিক্রির তালিকায় এক নম্বর স্থানে উঠে আসে এবং জেসন টডের উপস্থিতি লেখক জুড উইনিককে সুযোগ করে দেয় ব্যাটম্যান-এ লেখক হিসেবে নিয়মিত কাজ করার। এরপরই বের হয়েছিল আরেকটি একাধিক ইস্যু নিয়ে কাহিনী আন্ডার দ্য হুড, যেটি চলেছিল ব্যাটম্যান #৬৩৭ থেকে #৬৫০ পর্যন্ত।

অল-স্টার ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন

২০০৫ সালে ডিসি প্রকাশ করে অল-স্টার ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন যেটি ছিল ডিসি ইউনিভার্সের বাইরের কাহিনী নিয়ে একটি একক কমিক সিরিজ। ফ্র্যাংক মিলারের লেখা ও জিম লির আঁকা সিরিজটি ডিসি কমিকসের জন্য বাণিজ্যিক সাফল্য বয়ে আনে,[৬১][৬২] যদিও এর লেখা ও নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের জন্য এটি সমালোচকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল।[৬৩][৬৪]

২০০৬ সাল থেকে ব্যাটম্যান এবং ডিটেকটিভ কমিকস-এর নিয়মিত লেখক হন গ্র্যান্ট মরিসন এবং পল ডিনি। গ্র্যান্ট মরিসন ব্যাটম্যানের কাহিনীর কিছু বিতর্কিত বিষয় আবার চরিত্রটির মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। মরিসনের কাজ উৎকর্ষে পৌঁছায় "ব্যাটম্যান R.I.P."-এর মধ্য দিয়ে, যাতে ব্যাটম্যান ভয়ংকর "ব্ল্যাক গ্লাভ" সংস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেন, যে সংস্থাটি ব্যাটম্যানকে পাগল করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করত। "ব্যাটম্যান R.I.P." থেকে জন্ম হয় ফাইনাল ক্রাইসিস-এর (যেটিও মরিসনের লেখা), যাতে ডার্কসাইড-এর হাতে ব্যাটম্যানের দৃশ্যত মৃত্যু হয়। ২০০৯ সালের মিনিসিরিজ ব্যাটম্যান: ব্যাটল ফর দ্য কাউল-এ ওয়েনের প্রাক্তন শিষ্য ডিক গ্রেসন নতুন ব্যাটম্যান হয়, এবং ওয়েনের ছেলে ডেমিয়েন নতুন রবিন হয়।[৬৫][৬৬] ২০০৯ সালের জুনে জুড উইনিক ব্যাটম্যান লেখার কাজে ফিরে আসেন, এবং গ্র্যান্ট মরিসনকে তার নিজের সিরিজ দেওয়া হয়, যার নাম ছিল ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন[৬৭]

২০১০ সালের কাহিনী ব্যাটম্যান: দ্য রিটার্ন অব ব্রুস ওয়েন-এ ব্রুসকে দেখা যায় ইতিহাসের মধ্য দিয়ে পরিভ্রমণ করে বর্তমান সময়ে ফিরে আসতে। যদিও তিনি আবার ব্যাটম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তিনি গ্রেসনকেও ব্যাটম্যান থাকার অনুমতি দেন। ব্রুস তার অপরাধের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে বৈশ্বিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যেটি ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড-এর মূল কাহিনী। ডিসি কমিকস পরবর্তীতে ঘোষণা দেয় যে ব্যাটম্যান, ডিটেকটিভ কমিকস এবং ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন-এর প্রধান চরিত্র হবে গ্রেসন, অন্যদিকে ব্রুস প্রধান চরিত্র হিসেবে থাকবেন ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড-এ। এছাড়াও, ব্রুস চলমান অন্য একটি সিরিজ, ব্যাটম্যান: দ্য ডার্ক নাইট-এও উপস্থিত হন।

দ্য নিউ ৫২

২০১১ সালের সেপ্টেম্বেরে নিউ ৫২ রিবুটের অংশ হিসেবে ব্যাটম্যানসহ ডিসি কমিকসের সব সুপারহিরো বই বাতিল করে দেওয়া হয় এবং #১ ইস্যু দিয়ে নতুন করে শুরু করা হয়। ব্রুস ওয়েন এখানে একমাত্র ব্যাটম্যান এবং তিনি উপস্থিত হন ব্যাটম্যান, ডিটেকটিভ কমিকস, ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন এবং ব্যাটম্যান: দ্য ডার্ক নাইট গল্পগুলোতে। ডিক গ্রেসন আবার নাইটউইং-এর কাজে ফিরে যায় এবং নিজের নামে চলমান সিরিজে উপস্থিত হয়। নতুন পাঠকদের আকৃষ্ট করার জন্য অনেক চরিত্রের ইতিহাস উল্লেখযোগ্যভাবে বদলে দেয়া হলেও ব্যাটম্যানের ইতিহাস প্রায় একইরকম থাকে। "লেভিয়াথান" কাহিনীটি সম্পূর্ণ করার জন্য ২০১২–২০১৩ সালে ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড আবার শুরু করা হয়।নিউ ৫২-এর শুরু থেকেই স্কট স্নাইডার ব্যাটম্যানের গল্পের লেখক হিসেবে কাজ করে এসেছেন। তার প্রথম বড় গল্প ছিল "নাইট অব দি আউলস", যেখানে ব্যাটম্যান মুখোমুখি হয় কোর্ট অব আউলস-এর, একটি গোপন সংস্থা যেটি গথামকে অনেক বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। দ্বিতীয় কাহিনীটি ছিল "ডেথ অব দ্য ফ্যামিলি", যেখানে জোকার গথাম শহরে ফেরত আসে এবং একইসাথে ব্যাটম্যান পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ওপর আক্রমণ করে। তৃতীয় কাহিনীটি ছিল "ব্যাটম্যান: জিরো ইয়ার", যেটিতে নিউ ৫২-এর ব্যাটম্যানের শুরুর কাহিনী নতুন করে দেখানো হয়। এর পরই বের হয় ব্যাটম্যান #০ (জুন ২০১২), যেটিতে চরিত্রটির প্রথম বছরগুলোতে আলোকপাত করা হয়। ২০১৫ সালের কনভারজেন্স ইভেন্টের আগে শেষ কাহিনীটি ছিল এন্ডগেম, যেখানে জোকার গথাম সিটিতে এন্ডগেম ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার পর ব্যাটম্যান ও জোকারের মধ্যে শেষ যুদ্ধ দেখানো হয়। কাহিনীটি শেষ হয় ব্যাটম্যান এবং জোকারের আপাত মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

ইস্যু #৪১ থেকে কমিশনার জেমস গর্ডন ব্রুসের জায়গা নেন নতুন এক মেকা-ব্যাটম্যান হিসেবে, যেটি প্রথম আসে ফ্রি কমিক বই দিবসের বিশেষ কমিক ডাইভারজেন্স-এ। কিন্তু দ্রুতই আবিষ্কৃত হয় যে ব্রুস ওয়েন জীবিত আছেন। তবে তিনি তার ব্যাটম্যান হিসেবে জীবনের প্রায় সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন এবং আলফ্রেডের কাছ থেকে জানার পর তার শুধু তার ব্রুস ওয়েন হিসেবে জীবনের কথাই মনে থাকে। ব্রুস ওয়েন জীবনে আনন্দ খুঁজে পান এবং তার গার্লফ্রেন্ড জুলিকে প্রপোজ করেন, কিন্তু মি. ব্লুম জেমস গর্ডনকে চোটগ্রস্ত করে গথাম সিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন এবং একটি পার্টিকেল রিঅ্যাক্টরকে শক্তি দিয়ে একটি "অদ্ভুত তারা" সৃষ্টি করে শহর ধ্বংস করে ফেলার হুমকি দেন। ব্রুস ওয়েন একসময় তার ব্যাটম্যান হওয়ার সত্য আবিষ্কার করেন। সবসময় হাসতে থাকা একজন অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলার পর তিনি আলফ্রেডকে জোর করেন তার মাথায় ব্যাটম্যানের স্মৃতি প্রবেশ করানোর জন্য, কিন্তু এতে তার ব্রুস ওয়েন থাকার স্মৃতি হারিয়ে যায়। তিনি ফিরে আসেন এবং জেমস গর্ডনকে সাহায্য করেন মি. ব্লুমকে হারাতে ও রিঅ্যাক্টরটি বন্ধ করে দিতে। গর্ডন তার কমিশনারের চাকরি ফিরে পান, এবং সরকারের ব্যাটম্যান প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়।[৬৮]

২০১৫ সালে ডিসি কমিকস প্রকাশ করে দ্য ডার্ক নাইট III: দ্য মাস্টার রেস, যেটি ফ্র্যাংক মিলারের দ্য ডার্ক নাইট এবং দ্য ডার্ক নাইট স্ট্রাইকস অ্যাগেইন-এর সিক্যুয়েল।.[৬৯]

ডিসি রিবার্থ

২০১৬ সালের জুনে ডিসি রিবার্থ দ্বারা ডিসি কমিকসের সব কমিক বই নতুন করে শুরু করা হয়। ব্যাটম্যান রিবুট করে ফেলা হয় একটি একক ইস্যু দিয়ে এবং তা প্রতি দুই মাস অন্তর বের হতে থাকে, যা শুরু হয় ব্যাটম্যান ভলিউম ৩, #১ (জুন ২০১৬) দিয়ে। সিরিজটির লেখক ছিলেন টম কিং, এবং ছবি এঁকেছিলেন ডেভিড ফিঞ্চ এবং মিকেল জেনিন। ব্যাটম্যান সিরিজটিতে নতুন দু'জন ভিজিল্যান্টিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, গথাম এবং গথাম গার্ল। ডিটেকটিভ কমিকস তার আসল নম্বরের ধারা পুনরায় শুরু করে জুন ২০১৬-এর #৯৩৪ দিয়ে, এবং সিরিজটির নিউ ৫২-এর ভলিউম ২ ভলিউম ১-এ যোগ করে দেয়া হয়।[৭০] লেখক চতুর্থ জেমন টাইনিয়ন এবং শিল্পী এডি ব্যারোস এবং আলভারো মার্তিনেজ কাজ করেছেন ডিটেকটিভ কমিকস #৯৩৪-এ, এবং সিরিজটিতে প্রথমে টিম ড্রেক, স্টেফানি ব্রাউন, ক্যাসান্দ্রা কেইনক্লেফেস-কে নিয়ে একটি দল আবির্ভূত হয়, যার নেতৃত্বে ছিল ব্যাটম্যান ও ব্যাটওম্যান

চরিত্রায়ন

ব্রুস ওয়েন

ব্যাটম্যানের গোপন পরিচয় হলো ব্রুস ওয়েন, একজন ধনী মার্কিন শিল্পপতি। ছোটবেলায় ব্রুস তার বাবা থমাস ওয়েন ও মা মার্থা ওয়েনের হত্যাকাণ্ড স্বচক্ষে দেখেছিলেন, যা থেকেই তার মনে অপরাধীদের প্রতি বিদ্বেষ জেগে ওঠে এবং তিনি তার ব্যাটম্যান রূপটি সৃষ্টি করেন। তিনি বাস করেন তার নিজের বাড়ি ওয়েন ম্যানরে, যেটি গথাম সিটির বাইরের অংশে অবস্থিত। ওয়েন মানুষের সন্দেহ এড়ানোর জন্য একজন ধনীর বখে যাওয়া সন্তানের অভিনয় করেন।[৭১][৭২] তিনি তার অলাভজনক ওয়েন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নানারকম জনহিতকর কাজে সহযোগিতা করেন।[৭৩] সাধারণত উচ্চবংশের মহিলাদের সাহচর্যে তাকে দেখা যায়, যা নিয়ে পত্রিকায় অনেক আলোচনা হয়। যদিও ব্রুস ওয়েনের রোমান্টিক জীবনযাপনই বেশিরভাগের দৃষ্টিগোচর হয়, তিনি বেশিরভাগ সময় অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকেন।[৭৪]

ব্যাটম্যান ও সুপারম্যানের লেখকগণ এ দু'টি চরিত্রের মধ্যে অনেক সময়েই তুলনা ও পার্থক্য করেছেন। এ উপস্থাপনা নির্ভর করেছে লেখক, কাহিনী ও সময়ের ওপর। গ্র্যান্ট মরিসন[৭৫] বলেছেন যে দু'জন হিরোই "একই ধরনের বিষয়ে বিশ্বাস করে" যদিও তাদের বীরত্বের প্রদর্শনীর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তার মতে এ দু'জনের আসল পরিচয়ের মধ্যেও একই রকম বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। ব্রুস ওয়েন এবং ক্লার্ক কেন্টের অবস্থান ভিন্ন সামাজিক শ্রেণীতে: "ব্রুসের চাকর আছে, ক্লার্কের আছে বস।" টি. জেমস মাসলারের বই আনলিশিং দ্য সুপারহিরো ইন আস অল ব্রুস ওয়েনের জীবনে ও অপরাধের সাথে যুদ্ধে তার বিপুল সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে।[৭৬]

আধুনিক গল্পগুলো ব্রুস ওয়েনের উড়নচণ্ডী ও ফুর্তিবাজ রূপটিকে বাহ্যিক রূপ হিসেবে দেখায়[৭৭] (পোস্ট-ক্রাইসিস সুপারম্যানের বিপরীত, যার ক্লার্ক কেন্ট পরিচয়টি তার প্রকৃত পরিচয়, এবং সুপারম্যান পরিচয়টি বাহ্যিক)।[৭৮][৭৯] ব্যাটম্যানের মনস্তত্ব সম্পর্কিত ব্যাটম্যান আনমাস্কড নামের এক টেলিভিশন তথ্যচিত্রে আচরণ বিষয়ক বিজ্ঞানী বেনজামিন কার্নি বলেছেন যে ব্যাটম্যানের ব্যক্তিত্ব পরিচালিত হয় ব্যাটম্যানের মধ্যে থাকা মনুষ্যত্ব দ্বারা, যে "Batman, for all its benefits and for all of the time Bruce Wayne devotes to it, is ultimately a tool for Bruce Wayne's efforts to make the world better"।

উইল ব্রোকার তার বই ব্যাটম্যান আনমাস্কড-এ বলেছেন, "the confirmation of the Batman's identity lies with the young audience ... he doesn't have to be Bruce Wayne; he just needs the suit and gadgets, the abilities, and most importantly the morality, the humanity. There's just a sense about him: 'they trust him ... and they're never wrong."[৮০]

চরিত্রটি সৃষ্টির সময় কিছু বিশেষ কারণে "ব্রুস ওয়েন" নামটি পছন্দ করা হয়। স্রষ্টা বিল ফিঙ্গারের মতে, "Bruce Wayne's first name came from Robert Bruce, the Scottish patriot. Wayne, being a playboy, was a man of gentry. I searched for a name that would suggest colonialism. I tried Adams, Hancock ... then I thought of Mad Anthony Wayne."[৮১]

ব্যক্তিত্ব

ব্যাটম্যানের চরিত্রের প্রধান দিকগুলো হলো "ধন; শারীরিক শক্তি; অনুসন্ধানী দক্ষতা এবং অবসেশন"[৮২] ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়েটিভ টিম কাজ করার কারণে সময়ের সাথে ব্যাটম্যান কমিক বইয়ের কাহিনীর ধরন পাল্টেছে। ডেনিস ও'নিল বলেছেন যে সম্পাদনার প্রথম দিকে চরিত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না: "Julie Schwartz did a Batman in Batman and Detective and Murray Boltinoff did a Batman in the Brave and the Bold and apart from the costume they bore very little resemblance to each other. Julie and Murray did not want to coordinate their efforts, nor were they asked to do so. Continuity was not important in those days."[৮৩]

ব্রুস ওয়েনের চরিত্রের চালক হিসেবে কাজ করে তার বাবা-মায়ের মৃত্যু ও তাদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা। বব কেন এবং বিল ফিঙ্গার ব্যাটম্যানের পেছনের কাহিনী নিয়ে আলোচনা করেন এবং ঠিক করেন যে "নিজের চোখের সামনে বাবা-মাকে খুন হতে দেখার চেয়ে দুঃসহ কিছুই নেই"।[৮৪] তার ট্রমা সত্ত্বেও তিনি ব্যাটম্যান হিসেবে গথাম সিটিতে অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিজ্ঞানী হতে [৮৫][৮৬] এবং নিজেকে শারীরিক গঠন নিখুঁত করতে মনস্থির করেন,[৮৫][৮৬] যে আইডিয়াটি আসে অপরাধীদের মন সম্পর্কে তার ধারণা হতে।[৮৫][৮৬]

ব্যাটম্যানের চরিত্রের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো তার ভিজিল্যান্টির রূপ; তার মা-বাবার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যে অরাজকতা শুরু হয়েছিল, তা থামাতে তাকে নিজেকেই অনেক সময় আইন ভাঙতে হয়। যদিও ভিন্ন ভিন্ন লেখক চরিত্রটিকে ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন, ব্যাটম্যানের উৎপত্তির কাহিনীর মূল বিষয়গুলো কমিকগুলোতে কখনওই পরিবর্তিত হয় নি।[৮৭] চরিত্রটির মূল কাহিনী থেকেই চরিত্রটির বৈশিষ্ট্যসমূহের সৃষ্টি, যেসব বৈশিষ্ট্য চরিত্রটির অনেক কাহিনীতেই পরিলক্ষিত হয়।[৮২]

ব্যাটম্যানের গল্পগুলোতে অনেক সময়ই ব্যাটম্যান অন্যান্য চরিত্রসমূহ দ্বারা একজন ভিজিল্যান্টি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ফ্র্যাংক মিলার চরিত্রটিকে বলেছেন "একটি ডায়োনাইজিয়ান অবয়ব, অরাজকতার বিরুদ্ধ একটি শক্তি যে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আইন মানে"।[৮৮] লড়াইয়ে সহায়তা পাবার জন্য ব্যাটম্যান বাদুড়ের পোশাক পরিধান করে স্বেচ্ছায় একটি ভীতিকর পরিচয় সৃষ্টি করেন,[৮৯] যে ভয় অপরাধীদের নিজেদের অপরাধবোধ থেকেই আসে।[৯০] মিলারকে প্রায়শই বলা হয় ব্যাটম্যানের চরিত্রে অ্যান্টিহিরোইক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনার কারিগর,[৯১] যেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে নৃশংসতা, অত্যাচারের বাসনা এবং চরমভাবাপন্ন আচরণ। পঞ্চাশের দশকে ব্যাটম্যানের মূল চরিত্রে পরিবর্তন আনা হয়, যখন বর্তমানে বিলুপ্ত কমিক বুক নীতির প্রচলন হয়; এবং ডিসির সম্পাদক হুইটনি এলসওর্থ প্রচলন করেন এক নতুন ব্যাটম্যান যাঁর মধ্যে ছিল নৈতিকতা যা তাকে খুন করা থেকে দূরে রাখে।[৯১] মিলারের ব্যাটম্যান আসল স্বর্ণযুগের চরিত্রটির অনেক কাছাকাছি গিয়েছিল, যিনি প্রয়োজনে খুন করতে পারতেন।[৯২]

অন্যান্য

প্রাক্তন রবিন ডিক গ্রেসন দু'বার ব্যাটম্যানের ভূমিকা পালন করেছে। সে ব্যাটম্যান ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য যখন ওয়েন ১৯৯৩ সালের নাইটফল কাহিনীতে বেনের দেওয়া মেরুদণ্ডের চোট থেকে সেরে উঠছিলেন। সে আবার ব্যাটম্যান হয় ২০০৯ সালের একটি কমিক বইয়ে যখন ওয়েনকে মৃত বলে সবাই ধরে নিয়েছিল। ২০১০ সালে ওয়েন ফিরে আসার পরও সে দ্বিতীয় ব্যাটম্যান হিসেবে কাজ চালিয়ে গিয়েছিল। ডিসির ২০১১ সালের কাহিনী রিবুটের অংশ হিসেবে ফ্ল্যাশপয়েন্ট ক্রসওভার ইভেন্টের পর গ্রেসন নাইটউইংয়ের কাজে ফিরে যায়।

আইজিএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মরিসন বলেছেন যে ডিক গ্রেসনকে ব্যাটম্যান এবং ডেমিয়েন ওয়েনকে রবিন হিসেবে দেখানোটা ছিল ব্যাটম্যান ও রবিনের মধ্যকার সাধারণ সম্পর্কের "রিভার্স", যাতে ছিল "a more light-hearted and spontaneous Batman and a scowling, badass Robin"। মরিসন ব্যাটম্যানের নতুন চরিত্রায়নের পেছনের কারণ বলতে গিয়ে বলেন: "Dick Grayson is kind of this consummate superhero. The guy has been Batman's partner since he was a kid, he's led the Teen Titans, and he's trained with everybody in the DC Universe. So he's a very different kind of Batman. He's a lot easier; He's a lot looser and more relaxed."[৬৫]

সময়ের সাথে আরও অনেকেই ব্যাটম্যানের দায়িত্ব নিয়েছে, অথবা ব্রুসের অনুপস্থিতির সময় কাজ করেছে। জ্যাঁ-পল ভ্যালি, যে আজরাইল নামেও পরিচিত, নাইটফল কাহিনীর পর ব্যাটম্যানের ভূমিকা পালন করে। ব্যাটম্যান: এন্ডগেম-এর কাহিনীর পর জেমস গর্ডন একটি যান্ত্রিক পোশাক পরিধান করেন এবং ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ব্যাটম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও, ব্রুস ওয়েনের নিজের ভিজিল্যান্টিজম অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টার ফল ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড দলের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন শহরে আনুষ্ঠানিক ব্যাটম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। অন্যান্য মহাবিশ্ব এবং সম্ভাব্য কিছু ভবিষ্যতের কাহিনীতে অন্য অনেকেই ব্যাটম্যানের ভূমিকা নিয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই ব্রুস ওয়েনের প্রাক্তন শিষ্য।

ক্ষমতা

দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণ

ব্যাটম্যানের কোনও অতিমানবীয় ক্ষমতা নেই। তিনি "তাঁর নিজের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, অনুসন্ধানী ক্ষমতা এবং অ্যাথলেটিক দক্ষতা"র ওপর নির্ভর করেন।[৩৪] কাহিনীগুলোতে ব্যাটম্যানকে বলা হয় বিশ্বের সেরা গোয়েন্দাদের একজন এবং বিশ্বের সেরা অপরাধ দমনকারী।[৯৩] ব্যাটম্যানের বুদ্ধিমত্তা চৌকস পর্যায়ের, এবং তিনি ডিসি ইউনিভার্সের সেরা মার্শাল আর্টিস্টদের একজন। তিনি শারীরিকভাবেও পুরোপুরি সক্ষম।[৯৪] তিনি একজন বহুবিদ্যাবিশারদ, এবং ডিসি ইউনিভার্সের খুব কম চরিত্রই তাঁর মতো অগণিত বিষয়ে জ্ঞান রাখে।[৯৫] অপরাধের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধে সাহায্য করার মতো দক্ষতা অর্জন করতে তিনি সারা বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন। সুপারম্যান: ডুমড কাহিনীতে সুপারম্যান ব্যাটম্যানকে গ্রহের সেরা বুদ্ধিজীবীদের একজন বলে আখ্যায়িত করেন।[৯৬] ব্যাটম্যানের অফুরন্ত সম্পদ তাঁকে উন্নত প্রযুক্তি পেতে সাহায্য করে, এবং একজন দক্ষ বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি তাঁর সুবিধেমতো এসব প্রযুক্তি পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যাটম্যান নানা ধরনের মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যার মধ্যে ছিল ১২৭টিরও বেশি ধরনের মার্শাল আর্ট; যা তাঁকে ডিসি ইউনিভার্সের খালি হাতে লড়াইয়ে সেরাদের একজন করেছে। সুপারম্যানের মতে ব্যাটম্যান হলেন "the most dangerous man on Earth", যিনি গ্র্যান্ট মরিসনের JLA-এর প্রথম কাহিনীতে তার আটক সতীর্থদের বাঁচাতে একা অতিমানবীয় ক্ষমতা সম্পন্ন ভিনগ্রহের প্রাণীদের পুরো একটি দলকে হারিয়েছিলেন।

ব্যাটম্যান প্রচণ্ড শারীরিক ব্যথা নিয়েও কাজ করতে পারেন। তার ওপর টেলিপ্যাথি এবং মাইন্ড কন্ট্রোল-এরও কোনও প্রভাব পড়ে না। তিনি সুনিপুণ ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারেন, কয়েকটি ভাষা জানেন এবং গুপ্তচরগিরিতেও তিনি দক্ষ। তিনি অনেক সময় ম্যাচেস ম্যালন নামের এক দুর্ধর্ষ মাস্তানের পরিচয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি একজন পলায়নবিশারদ, যে বিদ্যার সাহায্যে তিনি অনেক শক্ত ফাঁদ থেকেও সহজেই বের হয়ে আসতে পারেন।

ব্যাটম্যান একজন জিজ্ঞাসাবাদ বিশেষজ্ঞ এবং তিনি প্রায়ই অপরাধীদের মুখ থেকে তথ্য বের করার জন্য চরম পদ্ধতি অবলম্বন করেন, যেমন দালানের ছাদ থেকে নিচের দিকে কাউকে ঝুলিয়ে রাখা। অনেক সময় তার ভয়-ধরানো বাহ্যিক রূপই সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে তথ্য বের করার জন্য যথেষ্ট হয়। তার শত্রুদের আঘাত করার সুযোগ থাকলেও তিনি ন্যায়বিচারের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন এবং কোনও পরিস্থিতিতেই কারও জীবন নেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন না। এটিই ব্যাটম্যানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তার এ নৈতিকতার জন্য তিনি ডিসি ইউনিভার্সের অনেক হিরোর কাছ থেকে শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছেন, যে হিরোদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারম্যানওয়ান্ডার ওম্যান

শারীরিক এবং লড়াই করার দক্ষতার মধ্যে তিনি অন্যান্য বিষয়েও বেশ পারদর্শী। তিনি একজন লাইসেন্সধারী পাইলট (যা ব্যাটপ্লেন চালানোর সময় কাজে লাগে), এবং তিনি অন্য অনেক যন্ত্রপাতিও চালাতে পারেন। কয়েকটি প্রকাশনায় তিনি জাদুবিদ্যায়ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

প্রযুক্তি

ব্যক্তিগত বর্ম

অপরাধীদের মনে ভয় ধরানোর জন্য ব্যাটম্যানের বর্মযুক্ত পোশাকে বাদুড়ের অবয়ব যুক্ত করা হয়েছে।[৯৭] ব্যাটম্যানের পোশাকের খুঁটিনাটি বিষয় বিভিন্ন সময়, গল্প, মাধ্যম ও শিল্পীভেদে পরিবর্তিত হয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো সবসময় একই থেকেছে: একটি কেপ, প্রায় সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা একটি কেপ, বাদুড়ের মতো একজোড়া কান, বুকে একটি বাদুড়ের চিহ্ন এবং কোমরে ইউটিলিটি বেল্ট। ফিঙ্গার এবং কেন প্রথমে ব্যাটম্যানকে একটি কালো কেপ, কালো কাউল ও ধূসর রঙের পোশাক দিয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে রং করার সময় কালোর সাথে নীল রঙের হাইলাইট দেওয়ার প্রয়োজন হয়।[৯৭] তাই কমিকে পোশাকের রং দেওয়া হয়েছে গাঢ় নীল ও ধূসর;[৯৭] এবং সেই সাথে কালো ও ধূসর। টিম বার্টনের ব্যাটম্যান এবং ব্যাটম্যান রিটার্নস ফিল্মগুলোতে ব্যাটম্যানের পোশাক ছিল সম্পূর্ণ কালো রঙের এবং তার মাঝখানে ছিল একটি হলুদ বৃত্তের ওপর একটি বাদুড়ের চিহ্ন। ক্রিস্টোফার নোলান-এর দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজিতে ব্যাটম্যানের একটি কালো রঙের আধুনিক পোশাক ছিল যার মাঝখানে ছিল একটি কালো রঙের বাদুড়। ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সে বেন অ্যাফ্লেক-এর ব্যাটম্যানের পরিধানকৃত পোশাকের সাথে কমিক বইয়ের পোশাকের অনেক মিল রয়েছে, যাতে প্রধান পোশাকটি ধূসর রঙের, আর তার সাথে থাকে কালো রঙের কাউল, কেপ ও বাদুড়ের চিহ্ন।

ব্যাটম্যানের ব্যাটস্যুট তাকে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এ স্যুটে কেভলার এবং নোমেক্স উভয়েরই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি তাকে বন্দুকের গুলি এবং অন্যান্য সংঘর্ষের হাত থেকে বাঁচায়। তার গ্লাভস অর্থাৎ হাতমোজা দু'টির মধ্যে তিনটি করে স্ক্যালপ থাকে, যদিও প্রথম দিকে তার গ্লাভসে কোনও স্ক্যালপ ছিল না।[৯৮] চরিত্রটির বাহ্যিক চেহারা, বিশেষ করে কাউলের কান এবং কেপের দৈর্ঘ্য, সবসময়ই শিল্পীর ওপর নির্ভর করে। ডেনিস ও'নিল বলেছেন, "We now say that Batman has two hundred suits hanging in the Batcave so they don't have to look the same ... Everybody loves to draw Batman, and everybody wants to put their own spin on it."[৯৯]

ব্যাটমোবিল

ব্যাটম্যানের প্রধান যান হলো ব্যাটমোবিল, যেটিকে দেখানো হয় একটি আকর্ষণীয় কালো গাড়ি হিসেবে। এ গাড়িতে অনেক সময় বাদুড়ের ডানার মত টেইলফিনও থাকে। ব্যাটম্যানের ব্যাটপ্লেন (পরবর্তীতে "ব্যাটউইং") নামে একটি উড়োজাহাজও আছে। এছাড়াও আরও কিছু যানবাহন তার কাছে আছে। প্রকৃতপক্ষে নামের প্রথমে যুক্ত হওয়া "ব্যাট" কথাটি (যেমন ব্যাটমোবিল বা ব্যাটারাং) ব্যাটম্যান নিজে খুব কম ব্যবহার করেন যখন তিনি তার যন্ত্রপাতির কথা বলেন। এটি ঘটেছিল বিশেষ করে তখন, যখন ব্যাটম্যানের কিছু উপস্থাপনা (প্রধানত ষাটের দশকের ব্যাটম্যান টিভি সিরিজ এবং সুপার ফ্রেন্ডস অ্যানিমেটেড সিরিজ) বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে ফেলেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ষাটের দশকের টিভি সিরিজটিতে ছিল অন্য অনেক বাদুড়ভিত্তিক যানের মধ্যে ব্যাটবোট, ব্যাট-সাব এবং ব্যাটসাইকেল। টিভি সিরিজটিতে ব্যাটম্যানের কাছে "ব্যাট-" নামযুক্ত আরও অনেক জিনিস ছিল যেমন ব্যাট-কম্পিউটার, ব্যাট-স্ক্যানার, ব্যাট-রাডার, ব্যাট-কাফস, ব্যাট-পন্টুনস, ব্যাট-ড্রিংকিং ওয়াটার ডিসপেন্সার, পোলারাইজড ব্যাট-ফিল্টারযুক্ত ব্যাট-ক্যামেরা, ব্যাট-শার্ক রিপেলেন্ট ব্যাট-স্প্রে এবং ব্যাট-রোপ। "আ ডেথ ইন দ্য ফ্যামিলি" কাহিনীতে বলা হয় যে ব্যাটম্যানের চরিত্রের কারণে "ব্যাট" কথাটি তার নিজের গ্রহণ করার সম্ভাবনা কম। দ্য ডার্ক নাইট রিটার্নস-এ ব্যাটম্যান ক্যারি কেলিকে বলেন যে প্রথম রবিন তার ছোটবেলায় "ব্যাটমোবিল" নামটি প্রথম বলেছিল, কারণ একজন শিশু ব্যাটম্যানের গাড়িকে সেটাই বলত। ২০১১ সালে ডিসি কমিকস তাদের সব কমিক নতুন করে শুরু করার সময় ব্যাটমোবিলকে একটি নতুন রূপ দেওয়া হয় এবং তাতে ভারী বর্ম যোগ করা হয়।

ইউটিলিটি বেল্ট

ব্যাটম্যান তার বেশিরভাগ অস্ত্র তার ইউটিলিটি বেল্টের মধ্যে রাখেন। এ বেল্টের মধ্যে নানা ধরনের অস্ত্র ও অনুসন্ধানকাজের জন্য নানা রকমের উপকরণ থাকে। বিভিন্ন সংস্করণে বেল্টটিতে এসব বস্তু রাখা হত আলাদা আলাদা অংশে, অনেক সময়ই ছোট থলে বা চোঙার মধ্যে যেগুলো বেল্টটির চারদিকে সমানভাবে লাগানো থাকত। ব্যাটম্যান অনেক সময়ই একটি যন্ত্র বহন করেন যা থেকে একটি কেবলযুক্ত গ্র্যাপলিং হুক বের হয়ে আসে। এটি তাকে দূরবর্তী বস্তুর কাছে যেতে, নিজেকে আকাশে উঠিয়ে নিতে এবং গথাম সিটির এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে সহজে যেতে সাহায্য করে। ব্যাটম্যানের অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম হলো বন্দুক, যেটি তিনি ব্যবহার করতে রাজি হন না, যেহেতু তার বাবা-মার হত্যাকাণ্ডে একটি বন্দুক ব্যবহৃত হয়েছিল।

ব্যাট-সিগনাল

যখন ব্যাটম্যানকে প্রয়োজন হয়, গথাম সিটির পুলিশেরা একটি বিশেষ সার্চলাইট জ্বালান। এ সার্চলাইটটির লেন্সের ওপরে একটি বাদুড় আকৃতির চিহ্ন থাকে। এ আলোটির নাম ব্যাট-সিগনাল। এটি রাতের আকাশে থাকা মেঘের ওপর একটি বাদুড়ের চিহ্ন তৈরি করে, যা গথামের যেকোনও স্থান থেকে দেখা যায়। এ সংকেতটির উৎস কাহিনী এবং মাধ্যমভেদে অনেকবার পরিবর্তিত হয়েছে।

বেশ কিছু উপস্থাপনায়, বিশেষ করে ষাটের দশকের ব্যাটম্যান টিভি সিরিজে, কমিশনার গর্ডনের কাছে একটি বিশেষ ফোন লাইন থাকে। এটির নাম ব্যাট-ফোন। এ লাইনটি একটি উজ্জ্বল লাল রঙের টেলিফোন সেটের সাথে যুক্ত থাকে (টিভি সিরিজে), যেটি একটি কাঠের পাটাতনের ওপর রাখা থাকে এবং একটি স্বচ্ছ কেকের ঢাকনা দিয়ে ঢাকা থাকে। এটি দিয়ে সরাসরি ব্যাটম্যানের বাসস্থান ওয়েন ম্যানরে যোগাযোগ করা যায়। এ লাইনটি ব্রুস ওয়েনের পড়ার ঘরে একইরকম একটি ফোন এবং ব্যাটকেভে অবস্থিত এক্সটেনশন ফোন উভয়ের সাথেই সংযুক্ত।

ব্যাটকেভ

ব্যাটকেভ হলো ব্যাটম্যানের গোপন কর্মস্থল, যেটি তার বাসস্থান ওয়েন ম্যানরের নিচে অবস্থিত কয়েকটি সংযুক্ত গুহা নিয়ে গঠিত। এখানে বসে তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলমান ঘটনার প্রতি লক্ষ্য রাখেন। এখানে তার যানবাহন এবং যুদ্ধের অস্ত্রসমূহও সংরক্ষিত থাকে। কমিক ব্যাটম্যান: শ্যাডো অব দ্য ব্যাট (ইস্যু #৪৫) এবং ২০০৫ সালের ফিল্ম ব্যাটম্যান বিগিনস-এ বলা হয়েছে যে গুহাটি আগে একটি পাতাল রেলপথের অংশ ছিল।

অন্যান্য যন্ত্রপাতি

ব্যাটম্যান লড়াই করার কাজে অনেক ধরনের বিশেষায়িত আধুনিক প্রযুক্তির যানবাহন এবং যন্ত্র ব্যবহার করেন, যেগুলো প্রায়ই বাদুড়ের রূপকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। ব্যাটম্যান ঐতিহাসিক লেস ড্যানিয়েলস ব্যাটম্যানের অস্ত্রসম্ভার সৃষ্টি করার জন্য গার্ডনার ফক্সকে কৃতিত্ব দেন, যার শুরু হয়েছিল ডিটেকটিভ কমিকস #২৯ (জুলাই ১৯৩৯)-এ ইউটিলিটি বেল্ট এবং ডিটেকটিভ কমিকস #৩১ ও #৩২ (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ১৯৩৯)-এ প্রথম বাদুড়ভিত্তিক অস্ত্র ব্যাটারাং ও "ব্যাটজাইরো" দিয়ে।[৩০]

সহযোগী চরিত্র

শত্রু ও মিত্রদের সাথে ব্যাটম্যানের মিথস্ক্রিয়া সময়ের সাথে অসংখ্য সহযোগী চরিত্র সৃষ্টি করেছে।[৮২]

শত্রু

ব্যাটম্যান নানা ধরনের শত্রুর সঙ্গে লড়াই করেন, যাদের মধ্যে আছে সাধারণ অপরাধী থেকে শুরু করে নিষ্ঠুর সুপারভিলেন। তাদের অনেকের সাথেই ব্যাটম্যানের চরিত্রের মিল রয়েছে। তাদের অনেকের জীবনেই এক কঠিন সময় এসেছে যা তাদেরকে অপরাধজগতের দিকে চালিত করেছে।[১০০] এসব প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে সাধারণত ব্যাটম্যানের "রোগ্‌স গ্যালারি" বলে অভিহিত করা হয়। ব্যাটম্যানের "সবচেয়ে নির্দয় শত্রু" হলো জোকার, একজন নরহত্যাকারী যে ভাঁড়ের মতো সেজে থাকে। সমালোচকদের মতে জোকার হলো ব্যাটম্যানের সবচেয়ে উপযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী, যেহেতু সে বাহ্যিক এবং ব্যক্তিত্ব উভয় দিক দিয়েই ব্যাটম্যানের বিপরীত; জোকার পাগল মনোভাবসম্পন্ন একজন রঙিন ব্যক্তি, অন্যদিকে ব্যাটম্যান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাবসম্পন্ন একজন অন্ধকারাচ্ছন্ন ব্যক্তি। "অযৌক্তিক বিষয়ের প্রকাশ" হিসেবে জোকার ব্যাটম্যানের বিরুদ্ধ সব বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।[৩৮] ব্যাটম্যানের রোগ্‌স গ্যালারিতে থাকা অন্যান্য নিয়মিত শত্রুরা হলো ক্যাটওম্যান (অ্যান্টিহিরোইন, মাঝেমধ্যে ব্যাটম্যানের প্রেমিকা), পেঙ্গুইন, রা'স আল গুল, টু-ফেস, রিডলার, স্কেয়ারক্রো, মি. ফ্রিজ, পয়জন আইভি, হারলি কুইন, বেন, ক্লেফেস, কিলার ক্রক ইত্যাদি।

সাহায্যকারী

আলফ্রেড

ব্যাটম্যানের গৃহপরিচারক, আলফ্রেড পেনিওর্থ, প্রথম আবির্ভূত হয় ব্যাটম্যান #১৬ (১৯৪৩)-তে। সে ব্রুসের অনুগত ভৃত্য এবং অল্প কিছু মানুষের একজন যারা ব্যাটম্যানের আসল পরিচয় জানে। ব্রুসের বাবা-মার মৃত্যুর পর আলফ্রেডই তাকে লালনপালন করে এবং তাকে খুব ব্যক্তিগতভাবেই চেনে। মাঝেমাঝে তাকে দেখানো হয় ব্যাটম্যানের সাইডকিক এবং ব্রুস ছাড়া ওয়েন ম্যানরের একমাত্র বাসিন্দা হিসেবে। চরিত্রটি ব্যাটম্যান এবং তার সাইডকিকের প্রতি "[lends] a homely touch to Batman's environs and [is] ever ready to provide a steadying and reassuring hand"।[১০০]

"ব্যাটম্যান পরিবার"

"ব্যাটম্যান পরিবার" কথাটি দিয়ে এমন কিছু চরিত্রকে বোঝানো হয় যারা ব্যাটম্যানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তারা সাধারণত মুখোশধারী ভিজিল্যান্টি যারা ব্যাটম্যানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছে অথবা যারা ব্যাটম্যানের অনুমতিতে গথাম সিটিকে কাজ চালায়। এদের মধ্যে আছে বারবারা গর্ডন, কমিশনার গর্ডনের কন্যা, যে ব্যাটগার্ল পরিচয়ে অপরাধ দমনের কাজ করে। একসময় যখন সে জোকারের গুলিতে আহত হয়ে হুইলচেয়ারে আবদ্ধ হয়েছিল, তখন সে ওরাকল নামের এক কম্পিউটার হ্যাকারের পরিচয়ে কাজ করেছিল। এছাড়াও আছে হেলেনা বার্টিনেলি, একটি মব পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য যে ভিজিল্যান্টি হয়ে বেশ কয়েকবার ব্যাটম্যানের সাথে কাজ করেছে, প্রধানত হান্ট্রেস পরিচয়ে এবং কিছু সময়ের জন্য ব্যাটগার্ল হয়ে; এবং ক্যাসান্দ্রা কেইন, পেশাদার খুনি ডেভিড কেইন এবং লেডি শিভার কন্যা, যে বার্টিনেলির পরে ব্যাটগার্ল হয়েছিল।

সাধারণ মানুষ

লুসিয়াস ফক্স হলেন একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং ব্রুস ওয়েনের ম্যানেজার যিনি তার ক্লায়েন্টের গোপন কাজ সম্পর্কে জানেন। ড. লেসলি থম্পকিনস হলেন ব্রুস ওয়েনের একজন পারিবারিক বন্ধু এবং তার বাবা-মার মৃত্যুর পর তিনি তার পিতৃতুল্য হয়ে ওঠেন। তিনিও ব্রুস ওয়েনের গোপন পরিচয় জানেন। ভিকি ভেল হল একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক যে গথাম গ্যাজেট পত্রিকায় ব্যাটম্যানের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন লেখে। এস দ্য ব্যাট-হাউন্ড হলো ব্যাটম্যানের সারমেয় সঙ্গী যে বিশেষ করে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কাজ করেছিল।[১০১] এছাড়াও আছে ব্যাট-মাইট, একজন এক্সট্রাডাইমেনশনাল ইম্প যে ব্যাটম্যানকে তার আদর্শ মনে করে।[১০১]

জিসিপিডি

গথাম সিটি পুলিশে ব্যাটম্যানের একজন সাহায্যকারী হিসেবে কমিশনার জেমস "জিম" গর্ডন প্রথম আবির্ভূত হন ব্যাটম্যানের সাথেই ডিটেকটিভ কমিকস #২৭-এ এবং এরপর থেকেই তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে ওঠেন। তার ভূমিকা অনেকটা শার্লক হোমস-এর গল্পে ওয়াটসন-এর মতো। তিনি ব্যাটম্যানকে সবসময় সাহায্য করার চেষ্টা করেন।

জাস্টিস লিগ

ব্যাটম্যান মাঝে মাঝে কিছু সুপারহিরো দল যেমন জাস্টিস লিগ অব আমেরিকা এবং আউটাইডার্স-এর সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ব্যাটম্যান অনেক সময়ই তার জাস্টিস লিগের সতীর্থ সুপারম্যানের সাথে একজোট হয়ে কাজ করেছেন, বিশেষ করে ওয়ার্ল্ডস ফাইনেস্ট এবং সুপারম্যান/ব্যাটম্যান সিরিজগুলোতে। প্রি-ক্রাইসিস কাহিনীতে দু'জনকে দেখানো হয়েছে ভালো বন্ধু হিসেবে; কিন্তু বর্তমানে তাদের মধ্যে একটি পরস্পর সদ্ভাবপূর্ণ কিন্তু অস্বস্তিকর সম্পর্ক বিদ্যমান, যার প্রধান কারণ অপরাধজগত ও ন্যায়বিচার সম্পর্কে দু'জনের মতের ভিন্নতা। সুপারম্যান/ব্যাটম্যান #৩ (ডিসেম্বর ২০০৩)-এ, সুপারম্যান বলেন, "Sometimes, I admit, I think of Bruce as a man in a costume. Then, with some gadget from his utility belt, he reminds me that he has an extraordinarily inventive mind. And how lucky I am to be able to call on him."[১০২]

রবিন

ব্যাটম্যানের ভিজিল্যান্টি সঙ্গী রবিন অনেক বছর ধরেই একজন ব্যাপকভাবে স্বীকৃত সহযোগী চরিত্র।[১০৩] বিল ফিঙ্গার বলেছেন যে তিনি রবিনকে আনতে চাইছিলেন কারণ "Batman didn't have anyone to talk to, and it got a little tiresome always having him thinking."[১০৪] প্রথম রবিন ডিক গ্রেসন প্রথম আসে ১৯৪০ সালে। সত্তরের দশকে সে বড় হয়ে কলেজে পড়া শুরু করে এবং নাইটউইং নামের হিরো হিসেবে কাজ করা শুরু করে। দ্বিতীয় রবিন জেসন টড আসে আশির দশকে। কাহিনীতে শেষ পর্যন্ত সে মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং জোকারের ঘটানো একটি বিস্ফোরণে মারা যায়, কিন্তু পরবর্তীতে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। সে জোকারের পুরাতন পরিচয় রেড হুড নামের একজন অ্যান্টিহিরো হয় যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করে না। ব্যাটম্যানের কাহিনীতে আসা প্রথম মেয়ে রবিন ক্যারি কেলি ছিল ফ্র্যাংক মিলারের গ্রাফিক নভেল দ্য ডার্ক নাইট রিটার্নস এবং দ্য ডার্ক নাইট স্ট্রাইকস অ্যাগেইন-এর কাহিনীর ধারায় আসা শেষ রবিন, যে প্রধান কাহিনীধারার বাইরের কাহিনীগুলোতে একজন বর্ষীয়ান ব্যাটম্যানের সাথে লড়াই করেছিল।

প্রধান ধারার কমিকের তৃতীয় রবিন হল টিম ড্রেক, যে প্রথম এসেছিল ১৯৮৯ সালে। সে পরবর্তীতে তার নিজের কমিক সিরিজ লাভ করে। তার বর্তমান পরিচয় রেড রবিন, যা প্রচলিত রবিন পরিচয়ের একটি ভিন্ন রূপ। নতুন সহস্রাব্দের প্রথম দশকে স্টেফানি ব্রাউন কাজ করে মূল কাহিনীর চতুর্থ রবিন হিসেবে, তার নিজের সৃষ্টিকৃত ভিজিল্যান্টি পরিচয় স্পয়লার এবং পরবর্তীতে ব্যাটগার্ল পরিচয়ে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে।[১০৫] স্টেফানি ব্রাউনের আপাত মৃত্যুর পরে ড্রেক কিছু সময়ের জন্য রবিন হিসেবে কাজ চালিয়ে যায়। ২০০০-এর দশকের শেষ দিকে দায়িত্বটি পায় ডেমিয়েন ওয়েন, যে ব্রুস ওয়েন এবং তালিয়া আল গুল-এর দশ বছর বয়সী পুত্র।[১০৬] ডেমিয়েনের রবিন হিসেবে স্বল্প সময়ের দায়িত্ব শেষ হয় যখন ২০১৩ সালের ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড-এর কাহিনীতে চরিত্রটিকে মেরে ফেলা হয়।[১০৭] ব্যাটম্যানের পরের সঙ্গী হল হারপার রো, একজন কমবয়সী মেয়ে যে রবিন নামটি পরিহার করলেও পাখি-সম্পর্কিত নামের ধারাই অনুসরণ করেছিল। ২০১৪ সালে সে ব্লুবার্ড নামে আবির্ভূত হয়। রবিনদের ও তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো তার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি আছে, যদিও তা প্রাণঘাতী হতে পারবে না। তার পছন্দের অস্ত্র হলো একটি রাইফেল যা থেকে টেজার বের হয়ে আসে।[১০৮] ২০১৫ সালে উই আর রবিন নামে একটি নতুন সিরিজ শুরু হয় যা রবিন পরিচয়ে গথাম সিটিতে অপরাধ নির্মূল করতে লড়াই করা কয়েকজন কিশোরকে নিয়ে আবর্তিত।

ওয়েন পরিবার

হেলেনা ওয়েন হলো ষাটের দশকের প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠিত মাল্টিভার্সের একটি ভিন্ন মহাবিশ্বে (যেখানে স্বর্ণযুগের ঘটনাগুলো ঘটেছিল) ব্রুস ওয়েন এবং সেলিনা কাইল-এর কন্যা।

ডেমিয়েন ওয়েন হল ব্রুস ওয়েন এবং তালিয়া আল গুল-এর পুত্র,[৬৫][১০৯][১১০] এবং সে সূত্রে ব্যাটম্যানের শত্রু রা'স আল গুল-এর পৌত্র।

টেরি ম্যাকগিনিস হলো ডিসি অ্যানিমেটেড ইউনিভার্সে ব্রুস ওয়েনের নিজ সন্তান। ব্রুসের বয়সকালে সে ব্রুসের কাছ থেকে ব্যাটম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করে।

আবেগপ্রবণ সম্পর্ক

সময়ের সাথে লেখকেরা ব্রুস ওয়েনের "ফুর্তিবাজ" রূপটিকে নানাভাবে তুলে ধরেছেন। কিছু লেখক তার এ দিকটিকে তুলে ধরেছেন ব্যাটম্যান পরিচয়টিকে লুকানোর জন্য, আবার অন্যরা ব্রুস ওয়েনকে "গথামের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাচেলর" হওয়ার সুবিধা নিতে দেখিয়েছেন। বিভিন্ন প্রকাশনায় ব্রুস ওয়েনকে দেখানো হয়েছে নানা মহিলার সাথে রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক ছিল সেলিনা কাইল[১১১] এবং তালিয়া আল গুল-এর সাথে, যেহেতু এ দু'জনই তার সন্তানের জন্ম দিয়েছিল, যারা যথাক্রমে হেলেনা ওয়েন এবং ডেমিয়েন ওয়েন।

ব্যাটম্যানের কিছু রোমান্টিক সম্পর্ক হয়েছিল সমাজের সম্ভ্রান্ত নারী যেমন জুলি ম্যাডিসন, ভিকি ভেল এবং সিলভার সেইন্ট ক্লাউড-এর সাথে। এছাড়াও ব্যাটম্যানের সম্পর্ক ক্যাথি কেন, সাশা বোর্দো ও ওয়ান্ডার ওম্যান-এর মত সহযোগী এবং ক্যাটওম্যান, জেজেবেল জেট এবং তালিয়া আল গুল-এর মত শত্রুদের সাথেও ছিল।

ক্যাটওম্যান

ব্যাটম্যানের বেশিরভাগ রোমান্টিক সম্পর্ক স্বল্পস্থায়ী হলেও ব্যাটম্যান এবং ক্যাটওম্যান-এর মধ্যকার আকর্ষণ প্রায় প্রতিটি সংস্করণ ও মাধ্যমেই বিদ্যমান। যদিও ক্যাটওম্যানকে বরাবরই একজন সুপারভিলেন হিসেবে দেখানো হয়েছে, ব্যাটম্যান এবং ক্যাটওম্যান একই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একসাথে কাজ করেছে এবং এ দু'জনের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্কও দেখানো হয়েছে।

ষাটের দশকে ডিসি কমিকসের মাল্টিভার্সের ধারণা আসার পর ডিসি স্বর্ণযুগের কাহিনীর ব্যাটম্যান চরিত্রটিকে আর্থ-টু ব্যাটম্যান নামক ভিন্ন জগতের একটি চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ব্যাটম্যানের এ সংস্করণ আর্থ-টু ক্যাটওম্যান সেলিনা কাইলকে বিবাহ করেন (যেমনটি দেখানো হয় সুপারম্যান ফ্যামিলি #২১১-এ)। তাদের হেলেনা ওয়েন নামে একজন কন্যাসন্তান আছে যে হান্ট্রেস পরিচয়ে (আর্থ-টু রবিন ডিক গ্রেসনের সাথে) গথাম শহরকে রক্ষা করে যখন ওয়েন পুলিশ কমিশনার হওয়ার জন্য ব্যাটম্যান পদ থেকে অবসর নেন, যে পদে তিনি থাকেন ব্যাটম্যান হিসেবে একটি শেষ অভিযানে মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত।

আশির দশকের শুরুর দিকের একটি কাহিনীতে সেলিনা ও ব্রুসের মধ্যে একটি সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, যে গল্পটির শেষ অংশে সেলিনাকে ব্যাটম্যানকে "ব্রুস" বলে সম্বোধন করতে দেখা যায়। কিন্তু সম্পাদক পরিবর্তনের কারণে সে কাহিনীটি দ্রুত শেষ হয়ে যায়, সে সাথে সে কাহিনীতে ঘটা সমস্ত ঘটনাও। ব্রুস ওয়েন ও সেলিনা কাইল (পোশাকের বাইরে) একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে দ্য লং হ্যালোউইন-এ। এ কাহিনীতে সেলিনা ব্রুসকে পয়জন আইভির হাত থেকে বাঁচায়। কিন্তু সম্পর্কটির ইতি ঘটে যখন ব্রুস সেলিনাকে দু'বার মানা করে দেন; একবার ব্রুস হিসেবে ও একবার ব্যাটম্যান হিসেবে। ব্যাটম্যান: ডার্ক ভিক্টরি-তে ব্রুস সেলিনার সঙ্গে দু'টি ছুটি কাটান, যার কারণে সেলিনা তাকে ও গথাম সিটি ছেড়ে কিছুদিনের জন্য চলে যায়। "হাশ" নামের বারো-ইস্যুর একটি কাহিনীতে অনেক বছর পর একটি অপেরায় দু'জনের দেখা হয়। তখন ব্রুস মন্তব্য করেন যে তাদের মধ্যে ব্রুস ও সেলিনা হিসেবে কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু, "হাশ"-এ ব্যাটম্যান ও ক্যাটওম্যানকে দেখা যায় ব্যাটম্যানের পুরো রোগ্‌স গ্যালারির বিরুদ্ধে একসাথে লড়তে এবং আগের রোমান্টিক সম্পর্ক আবার ফিরিয়ে আনতে। "হাশ"-এ ব্যাটম্যান ক্যাটওম্যানকে তার আসল পরিচয় জানিয়ে দেন।

চরিত্রের কাল্পনিক জীবনী

ব্যাটম্যানের ইতিহাসের ছোটবড় নানা রকমের পরিবর্তন এসেছে, তবে কিছু বিষয় সবসময় একই থেকেছে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে উইলিয়াম উরিকিও এবং রবার্তা ই. পিয়ারসন বলেন, "Unlike some fictional characters, the Batman has no primary urtext set in a specific period, but has rather existed in a plethora of equally valid texts constantly appearing over more than five decades."[১১২]

বিংশ শতাব্দী

উৎপত্তি

ব্যাটম্যানের গল্পগুলোর কেন্দ্রীয় বিষয়টি হলো চরিত্রটির উৎপত্তির কাহিনী[৮২] ছোটবেলায় ব্রুস ওয়েন তার বাবা-মা ডা. থমাস ওয়েনমার্থা ওয়েনকে ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হতে দেখে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন। তার বাবা-মার হত্যাকাণ্ডে একটি বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিল- এ কারণে ব্যাটম্যান কোনও ধরনের বন্দুক ব্যবহার করতে রাজি হন না। এই ঘটনাটি তাকে উদ্বুদ্ধ করে নিজেকে তৈরি করতে এবং ব্যাটম্যান হিসেবে গথাম শহরে অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।

স্বর্ণযুগ

ডিটেকটিভ কমিকস #২৭-এ ব্যাটম্যানের প্রথম প্রকাশের সময় দেখানো হয় যে তিনি সে সময়ই একজন অপরাধ দমনকারী হিসেবে কাজ করছেন।[১১৩] ব্যাটম্যানের শুরুর কাহিনী প্রথম দেখানো হয় ডিটেকটিভ কমিকস #৩৩ (নভেম্বর ১৯৩৯)-এ এবং পরবর্তীতে ব্যাটম্যান #৪৭-এ সেটি আরও বিশদভাবে উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, ব্রুস ওয়েন ডা. থমাস ওয়েন ও তার স্ত্রী মার্থা ওয়েনের নিজ সন্তান, যাঁরা গথাম সিটির দু'জন ধনাঢ্য ব্যক্তি। ব্রুস বাস করেন ওয়েন ম্যানরে। তিনি সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু তার আট বছর বয়সে একটি থিয়েটার থেকে বাড়িতে ফেরার সময় জো চিল নামের এক দুষ্কৃতিকারীর হাতে তার বাবা-মা নিহত হন। সে রাতে ব্রুস ওয়েন তার জীবনকে অপরাধ দমনে উৎসর্গ করার শপথ গ্রহণ করেন। তিনি নিজেকে এ কাজের উপযোগী হিসেবে তৈরি করার জন্য কঠোর অনুশীলন করা শুরু করেন; কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন যে শুধু এসব দক্ষতা থাকলেই তার লক্ষ্য অর্জিত হবে না। "Criminals are a superstitious cowardly lot", ওয়েন বলেন, "so my disguise must be able to strike terror into their hearts. I must be a creature of the night, black, terrible ..." ঠিক তখনই একটি বাদুড় জানালা দিয়ে উড়ে আসে, যা দেখে ব্রুস ব্যাটম্যান পরিচয়টি তৈরি করতে অনুপ্রাণিত হন।[১১৪]

প্রথম দিকের স্ট্রিপগুলোতে ব্যাটম্যানের ভিজিল্যান্টি হিসেবে কাজ তাকে পুলিশের চক্ষুশূল করে তোলে। এ সময় ব্যাটম্যানের জুলি ম্যাডিসন নামে একজন বাগদত্তা ছিল।[১১৫] ডিটেকটিভ কমিকস #৩৮-এ ওয়েন ডিক গ্রেসন নামের একজন অনাথ সার্কাস অ্যাক্রোব্যাটকে আশ্রয় দেন, যে পরবর্তীতে তার ভিজিল্যান্টি সঙ্গী রবিন হয়। ব্যাটম্যান জাস্টিস সোসাইটি অব আমেরিকার একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন,[১১৬] যদিও তিনি সুপারম্যানের মত একজন সম্মানসূচক সদস্য ছিলেন,[১১৭] এবং সে কারণে তিনি শুধু কদাচিৎ দলটির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। নিরাপত্তারক্ষী কাহিনীর সঙ্গে ব্যাটম্যানর সম্পর্ক দ্রুতই উষ্ণ হয়ে যায়, এবং তাকে গথাম সিটির পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সম্মানসূচক সদস্যপদ দেয়া হয়।[১১৮] এ সময় আলফ্রেড পেনিওর্থ ওয়েন ম্যানরে আসেন, এবং ডাইনামিক ডুয়োর গোপন পরিচয় আবিষ্কার করার পর তাদের গৃহপরিচারক হিসেবে তাদের সেবায় নিযুক্ত হন।[১১৯]

রৌপ্যযুগ

ডিসি কমিকসে রৌপ্যযুগ শুরু হয় ১৯৫৬ সালে যখন তারা ব্যারি অ্যালেনকে ফ্ল্যাশের নতুন সংস্করণ হিসেবে উপস্থাপন করে। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক পর্যন্ত আর্থ-ওয়ানের ব্যাটম্যানের মধ্যে বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি। স্বর্ণ ও রৌপ্যযুগের মধ্যের সময়ের কাহিনীগুলোতে ব্যাটম্যানের হালকা ধরন পঞ্চাশের দশকের শেষ ও ষাটের দশকের শুরুর দিকের কাহিনীগুলোর সূচনা করে যেগুলোতে নানারকম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বিষয় ছিল। অন্যান্য চরিত্রদের মতো পরিবর্তন ব্যাটম্যান চরিত্রতে আনা হয়নি। কিন্তু ডিটেকটিভ কমিকস #৩২৭ (মে ১৯৬৪) থেকে শুরু কাহিনীগুলোতে ব্যাটম্যান আবার তার গোয়েন্দার কাজে ফিরে যান, এবং সিরিজ থেকে বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর বিষয় বাদ দিয়ে দেয়া হয়।

ষাটের দশকে ডিসি কমিকস মাল্টিভার্সের সূচনা করার পর স্বর্ণযুগের কাহিনীর ব্যাটম্যান চরিত্রটিকে সমান্তরাল জগতের অন্য একটি চরিত্র আর্থ-টু ব্যাটম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। ব্যাটম্যানের এই সংস্করণ আর্থ-টু ক্যাটওম্যান সেলিনা কাইলকে বিবাহ করেন (যেমন দেখানো হয় সুপারম্যান ফ্যামিলি #২১১-তে)। তাদের হেলেনা ওয়েন নামে একজন কন্যাসন্তান আছে, যে হান্ট্রেস নামে (আর্থ-টু রবিন ডিক গ্রেসনের সাথে) গথামকে রক্ষার দায়িত্ব নেয় যখন ওয়েন ব্যাটম্যানের দায়িত্ব থেকে অবসর নেন পুলিশ কমিশনার হওয়ার জন্য, যে পদটিতে তিনি থাকেন ব্যাটম্যান হিসেবে তার শেষ অভিযানে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত। ব্যাটম্যানের গল্পগুলোতে অবশ্য অনেক সময়ই যুগ পরিবর্তনের আগের ও পরের ব্যাটম্যানের মধ্যে পার্থক্য উপেক্ষা করা হয়েছে (কারণ দ্য ফ্ল্যাশ বা গ্রিন ল্যান্টার্নের মতো পঞ্চাশের দশকজুড়ে ব্যাটম্যানের কাহিনীগুলো প্রকাশের সময় হঠাৎ বাধাগ্রস্ত হয়নি) এবং মাঝে মাঝেই স্বর্ণযুগের কাহিনীগুলোর প্রসঙ্গ আনা হয়েছে।[১২০] তা সত্ত্বেও ব্যাটম্যানের ইতিহাসের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সময়ের সাথে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়েছে। যুক্ত হওয়া বিষয়ের মধ্যে আছে যৌবনকালে ভবিষ্যৎ সুপারম্যানের সাথে দেখা হওয়া, তার বাবা-মার মৃত্যুর পরে তার পিতৃব্য ফিলিপ ওয়েনের দ্বারা লালিতপালিত হওয়া (যা প্রথম দেখানো হয় ব্যাটম্যান #২০৮, জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯-এ), এবং তার বাবা ও তার যথাক্রমে ব্যাটম্যান ও রবিনের মৌলিক সংস্করণ হিসেবে আবির্ভূত হওয়া।[১২১][১২২] ১৯৮০ সালে তৎকালীন সম্পাদক পল লেভিটজ ব্যাটম্যানের উৎপত্তি ও ইতিহাস ধারাবাহিকভাবে বিবৃত করার জন্য আনটোল্ড লিজেন্ড অব দ্য ব্যাটম্যান সিরিজটি চালু করেন।

রৌপ্যযুগে ব্যাটম্যান নিয়মিত অন্যান্য হিরোদের সাথে দেখা করেন ও একসাথে কাজ করেন, বিশেষ করে সুপারম্যানের সাথে, যাঁর সাথে তিনি ওয়ার্ল্ডস ফাইনেস্ট কমিকস-এ নিয়মিতভাবেই কাজ করেছেন, যা শুরু হয়েছিল ১৯৫৪ সালে এবং যা চলতে থাকে ১৯৮৬ সালে সিরিজটি বাতিল হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। ব্যাটম্যান ও সুপারম্যানকে সাধারণত অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে দেখানো হয়েছে। জাস্টিস লিগ অব আমেরিকা-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ব্যাটম্যান ষাটের দশকে এর প্রথম গল্প ব্রেভ অ্যান্ড দ্য বোল্ড #২৮-এ উপস্থিত হন। সত্তর ও আশির দশকে ব্রেভ অ্যান্ড দ্য বোল্ড ব্যাটম্যানের গল্পে পরিণত হয়, যাতে ব্যাটম্যান প্রতি মাসে ভিন্ন ভিন্ন ডিসি ইউনিভার্সের হিরোর সাথে দলবদ্ধ হতেন।

ব্রোঞ্জ যুগ

১৯৬৯ সালে ডিসি কমিকস ব্যাটম্যানের কমিককে পরিমার্জন করার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে সে সময় ডিক গ্রেসন কলেজে পড়া শুরু করে। এছাড়াও ব্যাটম্যান তার বাড়ি ওয়েন ম্যানর ছেড়ে গথাম সিটির মধ্যে ওয়েন ফাউন্ডেশন বিল্ডিং-এর ওপরে একটি পেন্টহাউজ অ্যাপার্টমেন্টে বাস করা শুরু করেন, যাতে তিনি গথাম সিটির অপরাধের কাছাকাছি থাকতে পারেন। সত্তরের দশকে ও আশির দশকের শুরুর দিকে ব্যাটম্যান সাধারণত একা কাজ করতেন এবং মাঝে মাঝে রবিন বা ব্যাটগার্লের সাথে দলবদ্ধ হতেন। এ সময় ব্যাটম্যানের কাহিনীগুলো আরো অন্ধকার ও ভয়ংকর হয়ে ওঠে, যাতে থাকে ক্রমবর্ধমান নৃশংস অপরাধ। এসব গল্পে থাকে স্বর্ণযুগের পর প্রথমবারের মতো জোকারকে মানসিক ভারসাম্যহীন নরহত্যাকারী হিসেবে উপস্থাপন, এবং শতবর্ষী সন্ত্রাসী রা'স আল গুল-এর আবির্ভাব, যিনি ব্যাটম্যানের গোপন পরিচয় জানেন। আশির দশকে ডিক গ্রেসন নাইটউইং নামে কাজ করা শুরু করে।[৮]

১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ব্রেভ অ্যান্ড দ্য বোল্ড-এর শেষ সংখ্যায় ব্যাটম্যান জাস্টিস লিগ থেকে বের হয়ে আউটসাইডার্স নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। তিনি দলটির দলনেতা হিসেবে কাজ করেন ব্যাটম্যান অ্যান্ড দ্য আউটসাইডার্স #৩২ (১৯৮৬) পর্যন্ত যে সংখ্যাটির পরে কমিকটির নাম পাল্টে ফেলা হয়।

ডিটেকটিভ কমিকস #৪৩৯ (১৯৭৪)-এ ব্রুস ওয়েনকে দেখানো হয় ইয়েল ল স্কুল-এর স্নাতক হিসেবে। সংখ্যাটির শেষ পৃষ্ঠায় ব্রুস ওয়েনের অফিসে ইয়েল ল স্কুলের একটি ডিপ্লোমা টাঙানো অবস্থায় দেখা যায়।[১২৩]

আধুনিক যুগ

১২ সংখ্যার লিমিটেড সিরিজ ক্রাইসিস অন ইনফিনিট আর্থস প্রকাশের পরে ডিসি কমিকস তাদের চরিত্রগুলোকে সামসময়িক পাঠকদের জন্য আরও উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে প্রধান কিছু চরিত্রের ইতিহাস নতুনভাবে উপস্থাপন করে। ব্যাটম্যান #৪০৪-৪০৭-এর "ইয়ার ওয়ান" কাহিনীতে ফ্র্যাংক মিলার ব্যাটম্যানের উৎপত্তির কাহিনী নতুনভাবে বর্ণনা করেন, যেটি চরিত্রটির তুলনামূলক নৃশংস দিকের ওপর আলোকপাত করে।[১২৪] আর্থ-টু ব্যাটম্যানকে ইতিহাস থেকে বাতিল করা হলেও পোস্ট-ক্রাইসিস ইউনিভার্সে ব্যাটম্যানের রৌপ্যযুগ বা আর্থ-ওয়ানের কার্যকলাপের অনেক গল্প (সাথে স্বর্ণযুগের কিছু গল্প) মূল কাহিনীর ধারার মধ্যেই অবস্থান করে, যাতে তার উৎপত্তির কাহিনীর পরিবর্তন সত্ত্বেও মূলভাব একই থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গথামের বেশিরভাগ পুলিশ পথভ্রষ্ট, যাতে ব্যাটম্যান থাকার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। পালনকর্তা ফিলিপ ওয়েনকে বাদ দেয়া হয়, যাতে ব্রুস ওয়েন আলফ্রেড পেনিওর্থের কাছে বড় হতে পারে। এছাড়াও ব্যাটম্যান জাস্টিস লিগ অব আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য থাকেন না, যদিও তিনি ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হওয়া দলটির নতুন সংস্করণের দলনেতা হিসেবে কিছু সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন। ক্রাইসিস-এর পর তৈরি ব্যাটম্যানের নতুন কাহিনীকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ডিসি ১৯৮৯ সালে লিজেন্ডস অব দ্য ডার্ক নাইট নামে নতুন একটি গল্প প্রকাশ করে। এরপর থেকে ডিসি "ইয়ার ওয়ান"-এর প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু মিনিসিরিজ এবং একক গল্প প্রকাশ করেছে।

পরবর্তীতে ব্যাটম্যান তার লড়াইয়ে আরও বেপরোয়া ভাব প্রদর্শন করতে শুরু করেন, যার কারণ ছিলো জেসন টডকে হারানোর দুঃখ। সেই দশকের শেষ পর্যন্ত ব্যাটম্যান একা কাজ করতে থাকেন, যখন টিম ড্রেক নতুন রবিন হয়।[১২৫]

নব্বইয়ের দশকের পর প্রকাশিত ব্যাটম্যানের প্রধান কাহিনীগুলোর বেশিরভাগই একাধিক সংখ্যার ক্রসওভার। ১৯৯৩ সালে ডিসি "নাইটফল" প্রকাশ করে। কাহিনীটির প্রথম ভাগে নতুন শত্রু বেন ব্যাটম্যানকে গুরুতর আহত করে, যার ফলে ওয়েন তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আজরাইলকে অনুরোধ করেন। "নাইটফল" শেষ হওয়ার পর কাহিনীটি দু'টি ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, যার একটি ছিল ব্যাটম্যান হিসেবে আজরাইলের কাজ নিয়ে, আর অপরটি ছিল ব্রুস ওয়েনের আবার ব্যাটম্যান হওয়ার চেষ্টা নিয়ে। এ দু'টি কাহিনী "নাইটসএন্ড"-এ আবার একত্র হয়, যখন আজরাইল অতিরিক্ত নৃশংস হয়ে ওঠে। ব্রুস ওয়েন সেরে উঠে আজরাইলকে পরাজিত করেন। এরপর ওয়েন ব্যাটম্যানের দায়িত্ব তৎকালীন নাইটউইং ডিক গ্রেসনের ওপর অর্পণ করেন, এবং তিনি তার কাজে ফিরে যাবার জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন।[১২৬]

১৯৯৪ সালের ক্রসওভার কাহিনী "জিরো আওয়ার" ডিসির মূল কাহিনীর বিষয়গুলো আবার পরিবর্তন করে, যার মধ্যে ব্যাটম্যানের কাহিনীও ছিল। এসব পরিবর্তনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাধারণ মানুষ এবং অপরাধীরা এখন ব্যাটম্যানকে পরিচিত চরিত্রের পরিবর্তে প্রচলিত কিংবদন্তি হিসেবে বিবেচনা করে।

১৯৯৬ সালে গ্র্যান্ট মরিসনের JLA নামের রিলঞ্চে ব্যাটম্যান আবার জাস্টিস লিগের একজন সদস্য হন। এ সময় দশকের শেষ ক্রসওভার কাহিনীতে গথাম সিটি দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। ১৯৯৮ সালের "ক্যাটাক্লিজম" কাহিনীতে গথাম সিটি একটি ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রযুক্তিগত সম্পদের বেশিরভাগই না থাকায় ব্যাটম্যান অপরাধীদের দলের কাছ থেকে শহর পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালান ১৯৯৯ সালের "নো ম্যান'স ল্যান্ড" কাহিনীতে।

এসময় "ব্যাটম্যান: অফিসার ডাউন" এবং "ব্যাটম্যান ওয়ার গেমস/ওয়ার ক্রাইমস"-এ গথাম সিটির পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সাথে ব্যাটম্যানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে; "অফিসার ডাউন"-এ পুলিশ বাহিনীতে ব্যাটম্যানের পুরোনো সহযোগী কমিশনার গর্ডন এবং হার্ভি বুলককে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়, এবং "ওয়ার গেমস" ও "ওয়ার ক্রাইমস"-এ ব্যাটম্যান একজন অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হন যখন গথাম সিটির অপরাধীদের দমন করার জন্য তার পরিকল্পনা দুর্ঘটনাক্রমে ফাঁস হয়ে যায়, যার কারণে অপরাধীদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, যেটি শেষ হয় যখন ধর্ষকামী ব্ল্যাক মাস্ক শহরের সব অপরাধী দলের অবিসংবাদিত নেতা হয় দাঁড়ায়। "ব্রুস ওয়েন: মার্ডারার?" এবং "ব্রুস ওয়েন: ফিউজিটিভ" কাহিনীগুলোতে লেক্স লুথর ব্যাটম্যানের অনিয়মিত সঙ্গিনী ভেসপারকে হত্যা করার ব্যবস্থা করেন। যদিও ব্যাটম্যান নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হন, তিনি তার নতুন দেহরক্ষী সাশাকেও হারিয়ে ফেলেন, যে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় "চেকমেট" নামের সংস্থায় যোগ দেয়। যদিও তিনি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন যে ভেসপারকে হত্যার জন্য লুথরই দায়ী, সুপারম্যান/ব্যাটম্যান #১-৬-এ ব্যাটম্যান তালিয়া আল গুলের সহযোগিতায় তার প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হন।

একবিংশ শতাব্দী

ডিসি কমিকসের ২০০৫ সালের সিরিজ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস-এ বলা হয় যে জেএলএ-এর সদস্য জাতানা ব্যাটম্যানের স্মৃতি পরিবর্তন করে দিয়েছিল যাতে তিনি সু ডিবনিকে যৌন অত্যাচার করার পর ড. লাইটের মস্তিষ্কে ছেদন করতে যাওয়া জাস্টিস লিগকে থামাতে না পারেন। পরবর্তীতে অন্যান্য হিরোদের ওপর নজর রাখার জন্য এবং প্রয়োজন হলে খুন করার জন্য ব্যাটম্যান ব্রাদার আই স্যাটেলাইট সিস্টেম তৈরি করেন। ব্যাটম্যানের এই সৃষ্টি এবং ব্লু বিটলের মৃত্যুর পেছনে গোপনে ব্যাটম্যানের হাত থাকার ঘটনা উন্মোচিত হয়ে যাওয়া সাহায্য করে ইনফিনিট ক্রাইসিস মিনিসিরিজের কাহিনী শুরুতে, যেটি ডিসির কাহিনীর কাঠামোকে আবার ঢেলে সাজায়। ব্যাটম্যান এবং সুপারহিরোদের একটি দল ব্রাদার আই এবং ওম্যাক সিস্টেমকে ধ্বংস করে দেয়, কিন্তু একদম শেষ মুহূর্তে ব্যাটম্যানের সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায় যখন আলেক্সান্ডার লুথর জুনিয়র নাইটউইংকে মারাত্মকভাবে জখম করে। ব্যাটম্যানের তার প্রাক্তন সঙ্গীকে হারানোর দুঃখে হাতে বন্দুক তুলে নেন এবং লুথরকে প্রায় গুলি করে বসেন, কিন্তু ওয়ান্ডার ওম্যান তাকে নিরস্ত করেন।

ইনফিনিট ক্রাইসিস-এর পরে ব্রুস ওয়েন, চোট থেকে সেরে ওঠা ডিক গ্রেসন এবং টিম ড্রেক ব্যাটম্যানকে "পুনর্গঠন" করার উদ্দেশ্যে পূর্বে গথাম সিটি ছেড়ে যাওয়া ব্রুসের পদচিহ্ন অনুসরণ করে।[১২৭] ফেস দ্য ফেস কাহিনীতে ব্যাটম্যান এবং রবিন এক বছর পর গথাম সিটিতে ফিরে আসে। তাদের এ অনুপস্থিতির একটি অংশ ৫২ সিরিজের ৩০ নম্বর সপ্তাহে বিবৃত হয়, যেখানে ব্যাটম্যান তার ভেতরের অশুভ শক্তির সঙ্গে লড়াই করেন।[১২৮] পরবর্তীতে ৫২-এ ব্যাটম্যান নন্দা পর্বতে ধ্যান করেন। নিয়মিত ব্যাটম্যান কাহিনীতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে, যে কাহিনীতে ব্যাটম্যান তার ধ্যানের ফলে তার মনের ভয়কে "শিকার করে ভক্ষণ করে" আরও কার্যকরী যোদ্ধা হয়ে ওঠেন।[১২৯][১৩০] ফেস দ্য ফেস কাহিনীর শেষে ব্রুস আনুষ্ঠানিকভাবে টিমকে (যে বিভিন্ন সময়ে তার বাবা-মা দু'জনকে হারিয়েছিল) তার সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন।[১৩১] ব্যাটম্যান-এর পরের কাহিনী ব্যাটম্যান অ্যান্ড সন-এ আবির্ভাব ঘটে ডেমিয়েন ওয়েনের, যে ব্যাটম্যান ও তালিয়া আল গুল-এর সন্তান।

ব্যাটম্যান সুপারম্যান ও ওয়ান্ডার ওম্যানের সঙ্গে নতুন জাস্টিস লিগ অব আমেরিকা সিরিজে জাস্টিস লিগ নতুনভাবে গঠন করেন[১৩২] এবং আউটসাইডার্স-এর নতুন দলকে নেতৃত্ব প্রদান করেন।[১৩৩]

গ্র্যান্ট মরিসনের ২০০৮ সালের কাহিনী "ব্যাটম্যান R.I.P."-তে রহস্যাবৃত ভিলেন ডক্টর হার্ট ব্যাটম্যানকে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল করে দেন। এই গল্পটি সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কারণ এটির পূর্ববর্তী প্রচারে ব্যাটম্যানের মৃত্যুর আভাস দেওয়া হয়েছিল।[১৩৪][১৩৫] যদিও ব্যাটম্যান কাহিনীটির শেষে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন, দুই সংখ্যার কাহিনী "লাস্ট রাইটস"-এ দেখানো হয় যে ব্যাটম্যান তার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরতে সক্ষম হন এবং ব্যাটকেভে ফিরে আসেন। কিন্তু জাস্টিস লিগ তাকে নিউ গড ওরায়নের মৃত্যুরহস্যের তদন্ত করার জন্য হল অব জাস্টিসে ডেকে আনে। কাহিনীটি শেষ হয় যখন ব্যাটম্যান ওরায়নের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গড-কিলিং বুলেট হস্তগত করেন, যার ব্যবহার পরবর্তীতে ফাইনাল ক্রাইসিস-এ দেখা যায়।[১৩৬] ফাইনাল ক্রাইসিস-এ ব্যাটম্যান পোড়া কঙ্কালে পরিণত হন।[১৩৭] ফাইনাল ক্রাইসিস #৭-এ ওয়েন প্রথম মানুষ অ্যান্থ্রোর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেন।[১৩৮][১৩৯] ওয়েনের আপাত মৃত্যুর কারণে তিন সংখ্যার মিনিসিরিজ ব্যাটল ফর দ্য কাউল শুরু হয়, যেখানে ওয়েনের প্রাক্তন শিষ্যরা ব্যাটম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ডিক গ্রেসন ব্যাটম্যান হয়[১৪০] এবং টিম ড্রেক রেড রবিনের পরিচয় গ্রহণ করে।[১৪১] ডিক এবং ডেমিয়েন ব্যাটম্যান এবং রবিন হিসেবে কাজ চালিয়ে যায়, এবং ক্রসওভার কাহিনী "ব্ল্যাকেস্ট নাইট"-এ ব্রুসের আপাত মৃতদেহ ব্ল্যাক ল্যান্টার্ন জম্বি হিসেবে পুনর্জীবিত হয়।[১৪২] কিন্তু পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হয় যে ব্রুসের মৃতদেহটি প্রকৃতপক্ষে ডার্কসাইডের একটি বাতিল ব্যাটম্যান ক্লোন। ডিক এবং ব্যাটম্যানের অন্যান্য বন্ধুরা উপলব্ধি করতে পারে যে ব্রুস আসলে জীবিত।[১৪৩][১৪৪]

ব্রুস পরবর্তীতে মরিসনের মিনিসিরিজ ব্যাটম্যান: দ্য রিটার্ন অব ব্রুস ওয়েন-এ ফিরে আসেন, যেখানে তিনি সময়-ভ্রমণ করে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বর্তমান কালের গথামে উপস্থিত হন।[১৪৫][১৪৬][১৪৭] ব্রুসের ফিরে আসার কারণে ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড সিরিজটি শুরু হয়, যার কাহিনীতে ওয়েন তার ব্যাটম্যান পরিচয়টি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন, যাতে ডিক ও ডেমিয়েন গথাম সিটিতে ব্যাটম্যান ও রবিন হিসেবে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। ব্রুস জনসমক্ষে ঘোষণা করেন যে ওয়েন এন্টারপ্রাইজ ব্যাটম্যানকে তার কাজে সাহায্য করবে, যার নাম হবে "ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড"। কিন্তু ২০১১ সালে ডিসি কমিকসের নিউ ৫২ উদ্যোগের কারণে সব কমিক বই নতুন করে শুরু করা হয়, যার কারণে ডিক গ্রেসন পুনরায় নাইটউইং হয়ে যায় এবং ওয়েন আবার একক ব্যাটম্যান হয়ে যান। এই উদ্যোগের কারণে ব্যাটম্যান ইনকর্পোরেটেড-এর প্রকাশও বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১২-২০১৩ সালে কিছু পরিবর্তনসহ কাহিনীটি আবার শুরু করা হয়।

ক্রাইসিস অন ইনফিনিট আর্থস

যুদ্ধবিরতির সময় ব্রেইনিয়াকের অধীনে সব শত্রুরা একত্র হয়, যারা আর্থ-টু-এর অ্যালেক্সেই লুথরকে হত্যা করে এবং বাকি সব পৃথিবী দখল করার জন্য আর্থ-ওয়ান-এর লেক্স লুথরকে নিজেদের দলে নেয়। অ্যান্টি-মনিটর একটি অ্যান্টিম্যাটার কামান ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া বিশ্ব খুঁজে বের করার ও আংশিক সংযুক্ত পাঁচটি পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করে। এই চেষ্টা থামাতে গিয়ে ফ্ল্যাশ (ব্যারি অ্যালেন) মৃত্যুবরণ করে। রাগান্বিত অ্যান্টি-মনিটর সময়ে পেছনে ফিরে গিয়ে মাল্টিভার্স সৃষ্টি না হতে দেয়ার শপথ গ্রহণ করে। স্পেক্টার সব হিরো এবং ভিলেনদেরকে অ্যান্টি-মনিটরের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তাদেরকে একত্র করে। হিরোরা সময়ে পেছনে ফিরে যায় অ্যান্টি-মনিটরকে থামানোর জন্য, এবং ভিলেনরা প্রাচীন গ্রহ ওআতে যায় বিদ্রোহী বিজ্ঞানী ক্রোনাকে অ্যান্টি-মনিটরের পরিকল্পনা সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি তৈরি করা থেকে থামানোর জন্য। ভিলেনরা ব্যর্থ হয়, এবং ক্রোনা তার গবেষণা চালিয়ে যায়। অ্যান্টি-মনিটর হিরোদের বন্দি করে অপেক্ষা করতে থাকে যাতে অ্যালেক্স লুথর পজিটিভ এবং অ্যান্টিম্যাটার বিশ্বের মধ্যকার পোর্টাল খুলে দিতে পারে, কিন্তু স্পেক্টার জাদুশক্তির সাহায্যে এনার্জি ওভারলোড তৈরি করে যাতে স্পেস-টাইম ধ্বংস হয়ে যায়। পাঁচটি পৃথিবী একত্র হয়ে একক বিশ্বে পরিণত হয়, এবং সুপারহিরোরা বর্তমানে ফিরে আসে।

সাংস্কৃতিক প্রভাব

ব্যাটম্যান সারা বিশ্বে একজন সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে পরিচিত। চরিত্রটি কমিক বইয়ের বাইরে বিভিন্ন মাধ্যমে উপস্থিত হয়েছে। বলা হয়, ১৯৮৯ সালের ব্যাটম্যান চলচ্চিত্রটি ব্যাটম্যান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহকে জনসাধারণের নজরে আনে।[১৪৮] চরিত্রটির ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, "Batman is a figure blurred by the endless reinvention that is modern mass culture. He is at once an icon and a commodity: the perfect cultural artefact for the 21st century."[১৪৯]

অন্যান্য মাধ্যমে

১৯৬৬ সালের ব্যাটম্যান টিভি সিরিজে ব্যাটম্যান ও রবিন চরিত্রে অ্যাডাম ওয়েস্ট এবং বার্ট ওয়ার্ড

ব্যাটম্যান চরিত্রটি কমিক বই ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে উপস্থিত হয়েছে, যার মধ্যে আছে পত্রিকার কমিক স্ট্রিপ, বই, রেডিও নাটক, টেলিভিশন, একটি স্টেজ শো এবং বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র। ব্যাটম্যানের প্রথম অ্যাডাপ্টেশন ছিল একটি দৈনিক পত্রিকার কমিক স্ট্রিপ যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ সালের ২৫ অক্টোবর।[১৫০] একই বছরে চরিত্রটি ১৫ অধ্যায়ের সিরিয়াল ছবি ব্যাটম্যান-এ উপস্থিত হয়। এ সিরিয়ালটির মাধ্যমে লুইস উইলসন পর্দায় ব্যাটম্যানকে রূপদান করা প্রথম অভিনেতা হন। ব্যাটম্যানের নিজের কোনও রেডিও সিরিজ না থাকলেও ১৯৪৫ সাল থেকে তিনি অতিথি হিসেবে দি অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারম্যান-এ উপস্থিত হয়েছেন। তিনি সেসব সময়ে থাকতেন যখন সুপারম্যানের কণ্ঠদাতা বাড কলিয়ারের বিশ্রাম প্রয়োজন হত।[১৫১] ১৯৪৯ সালে ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন নামে দ্বিতীয় আরেকটি সিরিয়াল ছবি মুক্তি পায়, যেখানে ব্যাটম্যানের চরিত্রে অভিনয় করেন রবার্ট লোয়ারি। চল্লিশের দশকে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাটম্যানের এসব উপস্থিতি কমিক পড়েননি এমন অসংখ্য মানুষের কাছে ব্যাটম্যানকে জনপ্রিয় করে তোলে।[১৫১]

টেলিভিশন

অ্যাডাম ওয়েস্ট অভিনীত ব্যাটম্যান টেলিভিশন সিরিজটি প্রথম প্রচারিত হয় ১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে এবিসি চ্যানেলে। ক্যাম্প হাস্যরসের কারণে শোটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ওয়েস্ট তার আত্মজীবনী ব্যাক টু দ্য ব্যাটকেভ-এ বলেছেন যে 'ক্যাম্প'-এর চেয়ে শোটিকে তিনি প্যারোডি বলতেই বেশি পছন্দ করেন। সিরিজটিতে মোট ১২০টি পর্ব ছিল। শোটির প্রচার ১৯৬৮ সালে শেষ হয়। ব্যাটম্যান-এর প্রথম ও দ্বিতীয় মৌসুমের মাঝে সিরিজটির অভিনয়শিল্পী এবং কলাকুশলীরা ব্যাটম্যান (১৯৬৬) নামক চলচ্চিত্রটি তৈরি করেন।

ব্যাটম্যান টিভি সিরিজের জনপ্রিয়তার কারণে দ্য ব্যাটম্যান/সুপারম্যান আওয়ার-এর মধ্য দিয়ে ব্যাটম্যানকে অ্যানিমেশনে আনা হয়।[১৫২] সিরিজটির ব্যাটম্যানের অংশগুলোর নাম দেওয়া হয়েছিল দি অ্যাডভেঞ্চারস অব ব্যাটম্যান এবং ব্যাটম্যান উইথ রবিন দ্য বয় ওয়ান্ডার, যাতে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত মোট ৩৩টি পর্ব প্রচারিত হয়েছিল। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত ব্যাটম্যান এবিসির সুপার ফ্রেন্ডস সিরিজে একটি প্রধান চরিত্র ছিলেন, যে সিরিজটি হানা-বারবারা কর্তৃক তৈরি হয়েছিল। এসব শোতে ব্যাটম্যানের কণ্ঠ দিয়েছিলেন ওলান সুল, কিন্তু সুপার ফ্রেন্ডস-এ তার পরিবর্তে তার জায়গা নেন অ্যাডাম ওয়েস্ট, যিনি ফিল্মেশন-এর ১৯৭৭ সালের সিরিজ দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অব ব্যাটম্যান-এও চরিত্রটির কণ্ঠ দিয়েছিলেন।

১৯৯২ সালে ফক্স টেলিভিশন নেটওয়ার্কে ব্যাটম্যান: দি অ্যানিমেটেড সিরিজ প্রথম প্রচারিত হয়। ওয়ার্নার ব্রাদার্স অ্যানিমেশন প্রযোজিত এ শোতে ব্যাটম্যানের কণ্ঠ দিয়েছিলেন কেভিন কনরয়। অন্ধকার ধাঁচ, লেখনী এবং অলঙ্করণের কারণে সিরিজটি প্রশংসিত হয়[১৫৩][১৫৪] এবং বেশ কয়েকটি এমি পুরস্কার অর্জন করে।[১৫৫] সিরিজটির সাফল্যের কারণে ব্যাটম্যান: মাস্ক অব দ্য ফ্যান্টাজম (১৯৯৩) চলচ্চিত্রটি তৈরি হয়।[১৫৬] এছাড়াও কিছু স্পিন-অফ টিভি সিরিজ নির্মিত হয়, যার মধ্যে আছে সুপারম্যান: দি অ্যানিমেটেড সিরিজ, দ্য নিউ ব্যাটম্যান অ্যাডভেঞ্চারস, জাস্টিস লিগ এবং জাস্টিস লিগ আনলিমিটেড, যার প্রতিটিতেই ব্যাটম্যানের কণ্ঠ দিয়েছিলেন কনরয়। ভবিষ্যতের কাহিনী নিয়ে নির্মিত সিরিজ ব্যাটম্যান বিয়ন্ড-ও একই কাহিনীধারায় অবস্থিত, যাতে একজন নতুন ও কমবয়সী একজন ব্যাটম্যানকে উপস্থাপন করা হয়, যার কণ্ঠদাতা ছিলেন উইল ফ্রিডল। এ চরিত্রটির শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয় একজন বয়স্ক ব্রুস ওয়েনকে (যার কণ্ঠ দিয়েছিলেন কনরয়)।

২০০৪ সালে দ্য ব্যাটম্যান নামে একটি একক টিভি সিরিজ শুরু হয়, যাতে প্রধান চরিত্রে কণ্ঠ প্রদান করেন রিনো রোমানো। ২০০৮ সালে শোটিকে প্রতিস্থাপন করে ব্যাটম্যান: দ্য ব্রেভ অ্যান্ড দ্য বোল্ড নামে একটি নতুন শো, যাতে ডিয়েড্রিক বেডার ব্যাটম্যানের চরিত্রে কণ্ঠ দেন।

২০১৩ সালে বিওয়েয়ার দ্য ব্যাটম্যান নামে একটি নতুন সিজিআই-অ্যানিমেটেড সিরিজ শুরু হয়, যাতে ব্যাটম্যানের কণ্ঠ হিসেবে ছিলেন অ্যান্থনি রুইভিভার[১৫৭] ২০১৪ সালে ফক্স নেটওয়ার্কে গথাম নামে একটি লাইভ-অ্যাকশন সিরিজের প্রচার শুরু হয়, যাতে ১২ বছর বয়সী ব্রুস ওয়েনের চরিত্রে অভিনয় করে ডেভিড মাজুজ

চরিত্রটির ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ওয়ার্নার ব্রাদার্স ব্যাটম্যান: স্ট্রেঞ্জ ডেজ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রচার করে, যেটি ডিসির ইউটিউব চ্যানেলেও পোস্ট করা হয়।

চলচ্চিত্র

১৯৮৯ সালে ওয়ার্নার ব্রাদার্স লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র ব্যাটম্যান নির্মাণ করে; যার পরিচালক ছিলেন টিম বার্টন এবং প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মাইকেল কিটন। চলচ্চিত্রটি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি ছিল সে বছরের সবচেয়ে বেশি আয় করা চলচ্চিত্র এবং ইতিহাসে আয়ের দিক দিয়ে তৎকালীন পঞ্চম সেরা চলচ্চিত্র।[১৫৮] চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশনার জন্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারও লাভ করে।[১৫৯] চলচ্চিত্রটির সাফল্যের কারণে এর তিনটি সিক্যুয়েল নির্মিত হয়: ব্যাটম্যান রিটার্নস (১৯৯২), ব্যাটম্যান ফরএভার (১৯৯৫) এবং ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন (১৯৯৭); যার শেষ দু'টিতে বার্টনের পরিবর্তে পরিচালনা করেছিলেন জোয়েল শুমাখার, এবং কিটনের পরিবর্তে ব্যাটম্যানের অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে ভ্যাল কিলমার এবং জর্জ ক্লুনি। শুমাখারের দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটি এর আগের চলচ্চিত্রগুলোর তুলনায় বেশি আয় করতে ব্যর্থ হয়, যার কারণে ওয়ার্নার ব্রাদার্স তাদের পরিকল্পিত চতুর্থ সিক্যুয়েল ব্যাটম্যান আনচেইনড-এর কাজ বাতিল করে দেয়[১৬০] এবং ফিল্ম সিরিজটির ইতি টানে।

২০০৫ সালে ওয়ার্নার ব্রাদার্স সিরিজের রিবুট হিসেবে ব্যাটম্যান বিগিনস নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি দেয়, যার পরিচালক ছিলেন ক্রিস্টোফার নোলান এবং ব্যাটম্যান চরিত্রে ছিলেন ক্রিশ্চিয়ান বেল। এর সিক্যুয়েল দ্য ডার্ক নাইট (২০০৮) যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তির প্রথম সপ্তাহে প্রায় ১৫৮ মিলিয়ন ডলার আয় করে সবচেয়ে বেশি আয়ের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে।[১৬১] মুক্তির অষ্টাদশ দিনে চলচ্চিত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় করা দ্রুততম চলচ্চিত্রের খেতাব অর্জন করে।[১৬২] দেশের অভ্যন্তরে তৎকালীন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করা চলচ্চিত্র দ্য ডার্ক নাইট ৫৩৩ মিলিয়ন ডলার আয় করে। সেসময় এর চেয়ে বেশি আয় করতে সমর্থ হয়েছিল শুধুমাত্র টাইটানিক[১৬৩] চলচ্চিত্রটি দু'টি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে, যার মধ্যে ছিল শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার, যেটি লাভ করেছিলেন হিথ লেজার[১৬৪] দ্য ডার্ক নাইট-এর পরে মুক্তি পায় দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস (২০১২), যেটির দ্বারা নোলানের ফিল্ম সিরিজ শেষ করা হয়।

ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সে ব্যাটম্যান চরিত্রে বেন অ্যাফ্লেক

২০০৮ সাল হতে ব্যাটম্যান ডিসি ইউনিভার্স অ্যানিমেটেড অরিজিনাল মুভিজ ব্যানারের অধীনে বেশ কিছু ডাইরেক্ট-টু-ভিডিও চলচ্চিত্রে উপস্থিত হয়েছেন। এদের কয়েকটিতে ব্যাটম্যান চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন কেভিন কনরয়। অন্য চলচ্চিত্রসমূহে বেশ কিছু তারকা কণ্ঠাভিনেতা চরিত্রটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন; যাঁদের মধ্যে আছেন জেরেমি সিস্টো, উইলিয়াম বল্ডউইন, ব্রুস গ্রিনউড, বেন ম্যাককেনজি এবং পিটার ওয়েলার[১৬৫] ব্যাটম্যানের একটি লেগো সংস্করণ দ্য লেগো মুভি (২০১৪)-এর একটি মূল চরিত্র, যে চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছিলেন উইল আরনেট[১৬৬] আরনেট পুনরায় চরিত্রটির কণ্ঠ দেন দ্য লেগো ব্যাটম্যান মুভি (২০১৭) স্পিন-অফ চলচ্চিত্রটিতে।[১৬৭]

২০১৬ সালে জ্যাক স্নাইডার পরিচালিত ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বেন অ্যাফ্লেক ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সে ব্যাটম্যান চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন।[১৬৮] অ্যাফ্লেক ডেভিড অ্যায়ার-এর চলচ্চিত্র সুইসাইড স্কোয়াড (২০১৬)-এ ব্যাটম্যান হিসেবে একটি ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেন।[১৬৯] অ্যাফ্লেক ২০১৭ সালের চলচ্চিত্র জাস্টিস লিগ-এ চরিত্রটিতে পুনরায় অভিনয় করবেন[১৭০] এবং পরবর্তীতে একটি ব্যাটম্যান চলচ্চিত্রেও অভিনয় করবেন,[১৭১] যেটিও ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের অংশ হবে।[১৭২][১৭৩][১৭৪]

ভিডিও গেমস

১৯৮৬ সাল হতে ব্যাটম্যান একাধিক ভিডিও গেমে উপস্থিত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই চরিত্রটির বিভিন্ন চলচ্চিত্র বা অ্যানিমেটেড সংস্করণের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। সবচেয়ে সফল গেমগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাটম্যান: আর্কহ্যাম সিরিজ। সিরিজের প্রথম গেম, ব্যাটম্যান: আর্কহ্যাম অ্যাসাইলাম (২০০৯), নির্মাণ করেছিল রকস্টেডি স্টুডিওস। গেমটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল, মেটাক্রিটিক-এর প্রতিবেদন অনুসারে গেমটি ৯২% ইতিবাচক রিভিউ লাভ করেছিল।[১৭৫] ২০১১ সালে ব্যাটম্যান: আর্কহ্যাম সিটি নামে গেমটির একটি সিক্যুয়েল নির্মিত হয়। এ গেমটিও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং মেটাক্রিটিকে ৯৪% রেটিং লাভ করে।[১৭৬] ব্যাটম্যান: আর্কহ্যাম অরিজিনস (২০১৩) নামে একটি প্রিক্যুয়েল গেম মুক্তি দেয় ডব্লিউবি গেমস মন্ট্রিয়ল[১৭৭] রকস্টেডি ব্যাটম্যান: আর্কহ্যাম নাইট (২০১৫) নামে চতুর্থ আরেকটি গেমও নির্মাণ করে।[১৭৮] বেশিরভাগ ব্যাটম্যান অ্যানিমেটেড প্রযোজনার মত কেভিন কনরয় এসব গেমে ব্যাটম্যানের কণ্ঠ দিয়েছেন; আর্কহ্যাম অরিজিনস-এ কমবয়সী ব্যাটম্যানের কণ্ঠ দিয়েছেন রজার ক্রেইগ স্মিথ। ২০১৬ সালে টেলটেল গেমস ব্যাটম্যান: দ্য টেলটেল সিরিজ নামে একটি অ্যাডভেঞ্চার গেম মুক্তি দেয়, যেটিতে ব্যাটম্যানের কাহিনীতে প্রতিষ্ঠিত ওয়েন পরিবারের ইতিহাস পাল্টে ফেলা হয়।[১৭৯]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ