রকেটের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

প্রথম রকেটগুলো, তীর চালানোর জন্য প্রবল চালকশক্তি পদ্ধতি হিসেবে প্রথম ব্যবহার করা হয় এবং সম্ভবত দশম শতকের প্রথম দিকে চীনে সং রাজবংশ কর্তৃক এই ধরনের রকেট ব্যবহৃত হয়। তবে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত এর খুব বেশি দৃঢ় প্রমাণ পাওয়া যায় নি। সম্ভবত ত্রয়োদশ শতকের মাঝামাঝি মঙ্গোল আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তিটি ইউরেশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিক রকেটের পূর্বকালীন সময়ে অস্ত্র হিসেবে রকেটের ব্যবহার চীন, কোরিয়া, ভারত এবং ইউরোপ-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। সর্বপ্রথম রেকর্ডকৃত রকেট লঞ্চারগুলোর মধ্যে একটি হলো ১৩৮০ সালে মিং রাজবংশ দ্বারা নির্মিত "ওয়াস্প নেস্ট" ফায়ার অ্যারো লঞ্চার। প্রায় একই বছর, ইউরোপের চিওয়াগা যুদ্ধে প্রথম রকেট ব্যবহৃত হয়। ১৪৫১ সালের দিকে কোরিয়ায় জোসেন রাজ্য "মানজং ওয়াচা" নামে পরিচিত এক ধরণের স্থানান্তরযোগ্য বহুমুখী রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে। ১৫দশ শতকের মধ্যে রকেটের ব্যবহার পুরানো হয়ে যায়। যুদ্ধে রকেটে ব্যবহার পুনরুজ্জীবিত করা হয় ১৮শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে[১] লৌহ নির্মিত রকেট ব্যবহারের মাধ্যমে যা মহীশূর রাজ্য (মহীশূরের রকেট) কর্তৃক এবং মারাঠাগণ কর্তৃক ব্যবহৃত হয়।[২] পরবর্তীতে, নবায়ন করে ব্রিটিশরা ব্যবহার করে। পরবর্তীতে মডেল এবং উন্নয়নকৃত রকেট - কনগ্রিভ রকেট নামে পরিচিত হয় এবং নেপোলিয়নীয় যুদ্ধে এগুলো ব্যবহৃত হয়।

রকেট
হুওলংজিং থেকে রকেট তীরের চিত্র। বাম তীরটি 'ফায়ার অ্যারো' (হুও জিয়ান), মাঝখানে একটি 'ড্রাগন আকৃতির তীর ফ্রেম' (লং জিং জিয়ান জিয়া) এবং বামটি একটি 'সম্পূর্ণ ফায়ার অ্যারো' (হিও জিয়ান কোয়ান শি)।
হুওলংজিং থেকে 'ডিভাইন ফায়ার অ্যারো স্ক্রিন'। একটি স্থির তীর লঞ্চার যা একশত অগ্নি তীর বহন করে। এটি একটি ফাঁদ-সদৃশ প্রক্রিয়া দ্বারা সক্রিয় করা হয়, সম্ভবত হুইললক ডিজাইনের।
একটি "মৌমাছির বাসা" (yi wo feng 一窩蜂) তীর রকেট লঞ্চার যেমন উবেই শিতে চিত্রিত হয়েছে। ষড়ভুজাকার মৌচাকের আকৃতির কারণে এটিকে তাই বলা হয়।
গুকিও ওরিয়ে সেওরি থেকে একটি ওয়াচা ম্যানুয়াল (১৪৭৪)

উৎপত্তি: চীনদেশে

রকেট আবিস্কারের সময়কাল বা বারুদ চালিত আগুনের তীর নামে পরিচিত রকেট আবিস্কারের সময়কাল নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতাপার্থক্য আছে। দ্যা হিস্ট্রি অফ সং বইটি দুইজন ভিন্ন ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আবিস্কার করেছেন বলে জানা যায়, ফেং ঝিশেং ৯৬৯ সালে এবং ত্যাং ফু ১০০০ সালে। যাইহোক, জোসেফ নিডহ্যাম যুক্তি দেন যে, দ্বাদশ শতকের আগে রকেটের অস্তিত্ব থাকতে পারে না, যেহেতু উজিং জংইয়াওতে তালিকাভুক্ত বারুদের সূত্রগুলো রকেট প্রপেলান্ট হিসেবে উপযুক্ত নয়।[৩]

সম্ভবত ১২৩২ সালের প্রথম দিকে রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল, লিপিবদ্ধ বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, অগ্নি তীর এবং 'লোহার পাত্র' যখন বিস্ফোরিত হত তার শব্দ ৫ লিগ (২৫ কিমি বা ১৫ মাইল) পর্যন্ত শোনা যেতো, যাতে দৃশ্যত শ্রাপনেলের কারণে ৬০০ মিটার (২০০০ ফুট) ব্যাসার্ধের ধ্বংসকাণ্ড ঘটত।[৪] আরো উল্লেখিত হয়েছে, জিন রাজবংশ (১১১৫-১২৩৪) ফ্লায়িং ফায়ার ল্যান্স ব্যবহার করত যার পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যারল ছিল।[৫] ১২৪৫ সালের দিকে, সং নৌবাহিনী কর্তৃক সামরিক মহড়ায় রকেট ব্যবহার করা হতো এমন লিপিবদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায়। ১২৬৪ সালের একটি রেকর্ডে অভ্যন্তরীণ-দহন রকেট প্রপালশনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এটি সম্রাজ্ঞী-মাদার গংশেং-এর সম্মানে তাঁর পুত্র সম্রাট লিজং কর্তৃক একটি ভোজসভায় 'গ্রাউন্ড র‍্যাট', এক প্রকার আতশবাজি প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং এটি সম্রাজ্ঞীকে চমকিত করেছিল।[৬]

পরবর্তীতে উন্নয়ন

পরবর্তীকালে, ১৪দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে চীনা সামরিক অফিসার জিয়াও ইউ দ্বারা লিখিত সামরিক গ্রন্থ হুওলংজিং-এ রকেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেটি ফায়ার ড্রেক ম্যানুয়াল নামেও পরিচিত। এই বইয়ে বর্তমানে পরিচিত মাল্টিস্টেজ রকেটের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করা হয়েছে, 'পানি থেকে ফায়ার-ড্রাগন ইস্যুয়িং বা উৎক্ষেপন' (হুও লং শু শুই), যা চীনা নৌবাহিনী ব্যবহার করেছিল বলে মনে করা হয়।[৭]

১৩৮০ সালে "ওয়াস্প নেস্ট" নামে পরিচিত রকেট লঞ্চারগুলো মিং সেনাবাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৪০০ সালে, মিং অনুগত বা মন্ত্রী লি জিংলং, ঝু ডাই (ইয়ংগল সম্রাট) এর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে।[৮]

উবেই ঝি (১৭ শতকে) অঙ্কিত ফায়ার অ্যারো লঞ্চারের একটি চিত্র। লঞ্চারটি ঝুড়ি ব্যবহার করে তৈরি করা হতো।
একটি "দীর্ঘ সারপেন্ট এনিমি ব্রেকিং" ফায়ার অ্যারো লঞ্চার যেমন উবেই ঝি (১৭ শতকে) চিত্রিত হয়েছে। এটি ৩২টি মাঝারি আকারের স্বল্প বিষাক্ত রকেট বহন করত এবং এটিকে পিছনে বহন করার জন্য এতে একটি স্লিং লাগানো থাকত।
উবেই ঝি (১৭ শতকের) থেকে 'কনভোকেশন অফ ঈগল চ্যাজিং হেয়ার' রকেট লঞ্চার। এটি একটি ডাবল-এন্ডেড রকেট পড যা মোট ৬০টি রকেটের সমন্বয়, প্রতিটি প্রান্তে ৩০টি করে ছোট বিষযুক্ত রকেট বহন করত। এটি পরিবহনের জন্য একটি স্লিং ব্যবহৃত হতো।
উবেই ঝি (১৭ শতক) প্রাপ্ত রকেট কার্টস বা গাড়ি।

রকেট প্রযুক্তি বিস্তার

আমেরিকান ইতিহাসবিদ ফ্রাঙ্ক এইচ. উইন্টার, ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি অফ অ্যাস্ট্রোনটিক্সের দ্য প্রসিডিংস অফ দ্য টোয়েন্টিথ অ্যান্ড টোয়েন্টি-ফার্স্ট হিস্ট্রি সিম্পোজিয়া-তে প্রস্তাব করেন যে, দক্ষিণ চীন এবং লাওতিয়ান সম্প্রদায়ের রকেট উৎসবগুলো প্রাচ্য অঞ্চলে রকেটের পরবর্তী প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।[৯]

মঙ্গোলীয়

উত্তর চীনের মঙ্গোলরা চীনা অগ্নি তীর গ্রহণ করে। এরা মঙ্গোল সেনাবাহিনীতে ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে চীনা রকেট বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেয়। মনে করা হয়, ১৩দশ শতকের মধ্যকালীন সময়ে, মঙ্গোলদের আক্রমণাভিযানের কারণে ইউরেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে রকেটের বিস্তার লাভ করে।[১০]

জানা যায়, ১২৪১ সালের মোহির যুদ্ধে রকেটের মতো অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছিল।[১১]

মধ্যপ্রাচ্যে

১২৭০ থেকে ১২৮০ সালের মধ্যে, হাসান আল-রামাহ তার আল-ফুরুসিয়াহ ওয়া আল-মানসিব আল-হারবিয়া (সামরিক সেনাধ্য়ক্ষ ও বুদ্ধিমান যুদ্ধ-যন্ত্রের বই) লিখেন, যাতে ১০৭টি গানপাউডার বা বারুদ তৈরির রেসিপি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যার মধ্যে ২২টি রকেট তৈরির পদ্ধতি।[১২] আহমদ ওয়াই হাসানের মতে, আল-রামাহ রেসিপিগুলো সেই সময়ে চীনে ব্যবহৃত রকেটের চেয়ে বেশি বিস্ফোরণমূলক ও শক্তিশালী ছিল।[১৩][১৪] আল-রামাহ যে পরিভাষা ব্যবহার করেছেন তা রকেট এবং ফায়ার ল্যান্সের মতো বারুদনির্মিত অস্ত্রের চীনা উৎস নির্দেশ করে।[১৫] ইবন আল-বাইতার, স্পেনের একজন আরব যিনি মিশরে অভিবাসন করেন, তিনি সল্টপিটারকে "চীনের তুষার" (আরবি: ثلج الصين থালজ আল-সাইন) হিসেবে বর্ণনা করেন। আল-বাইতার ১২৪৮ সালে মৃত্য়ুবরণ করে।[১৬] পূর্ববর্তী আরব ঐতিহাসিকগণ সল্টপিটারকে "চীনা তুষার" এবং "চীনা লবণ" বলে অভিহিত করেন।[১৭] আরবরা আতশবাজিকে "চীনা ফুল" বলত। সল্টপিটারকে আরবরা "চীনা তুষার" নামে অভিহিত করলেও ইরানীরা[১৮] এটিকে "চীনা লবণ" (ফার্সি: نمک چینی নমক-ই-চীনী) বলতো, বা "লবণ" চীনা জলাভূমি থেকে" (নামক শুরা চিনি ফার্সি: نمک شوره تناسب)।[১৯]

ভারতে

ভারতীয় যুদ্ধের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, নিয়োগকৃত ভাড়াটে সৈন্যরা ১৩০০ সালের দিকে হাতে ছোঁড়া যায় এমন রকেট ব্যবহার করতো।[২০] ১৪দশ শতকের মাঝামাঝি ভারতীয়রাও যুদ্ধে রকেট ব্যবহার করত।[২১]

ভারতীয় মহীশূরের রকেট

১৮শ শতকে অ্যাংলো-মহীশূর যুদ্ধের সময় মহীশূর রাজ্যের সৈন্যরা রকেট ব্যবহার করতো।

১৭৯২ সালে, অ্যাংলো-মহীশূর যুদ্ধের সময় বৃহত্তর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসক টিপু সুলতান সফলভাবে লোহা নির্মিত রকেট ব্যবহার করে।[২৩] ব্রিটিশরা তখন এই প্রযুক্তিকে সক্রিয়ভাবে গ্রহণ করে এবং ১৯শ শতকে এটিকে আরও উন্নত করে। প্রপেল্যান্ট ধারণ করার জন্য লোহার টিউবের ব্যবহার ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য উচ্চতর থ্রাস্ট এবং দীর্ঘ পাল্লা (২ কিলোমিটার পর্যন্ত) প্রদান করতে সক্ষম করে।

চতুর্থ অ্যাংলো-মহীশূর যুদ্ধে টিপুর পরাজয় এবং মহীশূর লোহার তৈরি রকেট দখলের পর, ব্রিটিশ রকেট উন্নয়নে এগুলো প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে, যা কংগ্রিভ রকেট তৈরিতে অনুপ্রাণিত করে। কংগ্রিভ রকেট শীঘ্রই নেপোলিয়নীয় যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল।[২৪]

পরবর্তী ব্যবহার

জেমস ফোর্বসের মতে, মারাঠারাও তাদের যুদ্ধে লোহায় আবৃত রকেট ব্যবহার করে।[২৫]

কোরিয়ায়

কোরিয় জোসেন রাজ্য ১৩৭৪ সালে বারুদ/গানপাউডার উৎপাদন শুরু করে[২৬] এবং ১৩৭৭ সাল নাগাদ কামান ও রকেট তৈরি করে।[২৭] তবে, "মানজং হাওয়াচা" নামে পরিচিত একাধিক রকেট লঞ্চিং গাড়ি ১৪৫১ সাল পর্যন্ত দেখা যায় নি।[২৮]

ইউরোপে

ইউরোপে, ১২৬৭ সালে, রজার বেকন তাঁর অপাস মাজুসে গানপাউডারের কথা উল্লেখ করেন।[২৯]

তবে ১৩৮০ সালের চিওজা যুদ্ধ পর্যন্ত ইউরোপীয় যুদ্ধে রকেটের ব্যবহার ছিল না।[৩০] ১৮ শতকের ইতিহাসবিদ লুডোভিকো আন্তোনিও মুরাতোরি-এর মতে, ১৩৮০ সালে চিওজাতে জেনোয়া প্রজাতন্ত্র এবং ভেনিসের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধে রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল। মুরাতোরি তাঁর ব্যাখ্যায় সঠিক ছিল কিনা তা অনিশ্চিত, কারণ রেফারেন্সটি বোমাবর্ষণ সংক্রান্তও হতে পারে, তবে, ১৩৮০ সালের ইউরোপীয়দের যুদ্ধে রকেট আর্টিলারি ব্যবহারের প্রথম নথিভুক্ত উৎসের ভিত্তি হলো মুরাতোরি।[৩১]

জীন ফ্ররোইসার্ট (১৩৩৭ - ১৪০৫ সাধারণাব্দ) টিউবের মাধ্যমে রকেট উৎক্ষেপণের ধারণা প্রদান করেন, যাতে রকেটগুলো আরো সঠিকভাবে ফ্লাইট/উড্ডয়ন করতে পারে। ফ্রইসার্টের এই ধারণা আধুনিক রকেট চালিত গ্রেনেড-এর অগ্রদূত।[৩২]

১৪০৫ সালের দিকে কনরাড কাইসার তাঁর বিখ্যাত সামরিক গ্রন্থ বেলেফোর্টিস-এ রকেটের বর্ণনা দেন। কাইসার তিন ধরনের রকেট উল্লেখ করেন—সাঁতারকারী, মুক্ত উড্ডয়নকারী এবং আবদ্ধ।[৩৩]

জোনস ডি ফন্টানা তাঁর বেলিকোরাম ইন্সট্রুমেন্টোরাম লাইবার (১৪২০ সাধারণাব্দ) গ্রন্থে বর্ণনা করেন— ঘুঘুর আকারের উড়ন্ত রকেট, খরগোশের আকারের চলন্ত রকেট এবং তিনটি রকেট দ্বারা চালিত একটি বড় গাড়ি এবং একটি সাগর দানবের মাথা বিশিষ্ট একটি বড় রকেট টর্পেডো।

পরবর্তী উন্নয়ন

ষোড়শ শতকের দিকে কনরাড হাস একটি বই লিখেছিলেন যাতে রকেট প্রযুক্তির বর্ণনা ছিল এবং এতে আতশবাজি এবং অস্ত্র প্রযুক্তি বিষয়ও একত্রে উল্লেখ ছিল। এই পাণ্ডুলিপিটি ১৯৬১ সালে সিবিউ পাবলিক রেকর্ড (সিবিউ পাবলিক রেকর্ডস ভ্যারিয়া টু ৩৭৪) থেকে আবিষ্কৃত হয়। তিনি এই বইয়ে বহু-পর্যায়ের রকেটের গতি তত্ত্ব, তরল জ্বালানী ব্যবহার করে বিভিন্ন জ্বালানী মিশ্রণ, এবং ডেল্টা-আকৃতির পাখনা এবং বেল-আকৃতির নজলের বর্ণনা দেন।[৩৪]

রকেট শব্দটি এসেছে ইতালীয় রচেটা থেকে, যার অর্থ "সূতা জড়াইবার নলি" বা "ছোট তাকু",[৩৫] এটি মূলত স্পিনিং হুইলে সুতা বা থ্রেড ধরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো। এর আকৃতির সাথে মিল থাকার কারণে এই নাম রাখা হয়। এই ইতালীয় শব্দটি ১৬শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জার্মান ভাষায় গৃহীত হয়, লিওনহার্ড ফ্রনস্পারগার ১৫৫৭ সালে রকেট আর্টিলারির উপর লিখিত একটি বইতে রজেট শব্দটি ব্যবহার করেন এবং কনরাড হাস কর্তৃক র্যাকেট হিসেবে গৃহীত হয়; ১৬১০ সালে এটি ইংরেজি ভাষায় গৃহীত হয় রকেট নামে।[৩৬] মনে করা হয়, ১৫৯০ সালে, ইয়োহান শ্মিডল্য়াপ নামে একজন জার্মান আতশবাজি প্রস্তুতকারক রকেট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

লেগ্যারি হাসান সেলেবি নামের একজন কিংবদন্তি অটোমান অ্যাভিয়েটর, একটি সফল মানব চালিত রকেট উড্ডয়ন করেছিলেন, যা এভলিয়া সেলেভি নামের আরেকে অটোম্যান লেখকের বর্ণনায় পাওয়া যায়। এভলিয়া সেলেভি বর্ণনা করেন যে, ১৬৩৩ সালে লেগ্যারি সারাইব্রুনুর ৫০ ওক্কা (৬৩.৫ কেজি, or ১৪০ পাউন্ড) বারুদ ব্যবহার করে ৭ পাখাওয়ালা একটি রকেট ইস্তাম্বুলের তোপকাপি প্যালেসের নিকটবর্তী স্থান থেকে উৎক্ষেপণ করেন।

"আর্টিস ম্য়াগনেই আর্টিলারেই পারস প্রিমা" ("গ্রেট আর্ট অফ আর্টিলারি, দ্য ফার্স্ট পার্ট", "দ্য কমপ্লিট আর্ট অফ আর্টিলারি" নামেও পরিচিত), ১৬৫০ সালে আমস্টারডামে প্রথম মুদ্রিত হয়েছিল, ‍১৬৫১ সালে ফরাসি, ১৬৭৬ সালে জার্মান, ইংরেজিতে ও ডাচ ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল যথাক্রমে ১৭২৯ সালে এবং ১৭৯২ সালে ও পোলিশ ভাষায় ১৯৬৩ সালে। দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি কাজিমিয়ের্জ সিমিয়েনোভিজ এর এই বইটি ইউরোপে একটি মৌলিক আর্টিলারি ম্যানুয়াল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বইটি রকেট, ফায়ারবল এবং অন্যান্য পাইরোটেকনিক ডিভাইস তৈরির জন্য আদর্শ নকশা প্রদান করে। এতে বহু-পর্যায়ের রকেট, রকেটের ব্যাটারি এবং ডেল্টা উইং স্টেবিলাইজার (সাধারণ গাইডিং রডের পরিবর্তে) সহ রকেট, রকেটের ক্যালিবার, নির্মাণ, উৎপাদন এবং বৈশিষ্ট্যের বর্ণনার (সামরিক এবং বেসামরিক উভয় উদ্দেশ্যে) একটি বড় অধ্যায় রয়েছে।[৩৭]

রবার্ট অ্য়ান্ডারসন রকেটের কেসিংয়ে ধাতু ব্য়বহার করার পরামর্শ দেন।

১৬৯৬ সালের তাঁর লিখিত বইয় 'দ্যা মেকিং অফ রকেটস' এ দুটি ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগে ন্যূনতম ব্যয়ে রকেট নির্মাণের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই বইয়ের অন্য ভাগে রবার্ট অ্যান্ডারসন প্রস্তাব করেন যে, ১০০০ পাউন্ড বা তার বেশি ওজনের রকেট তৈরির জন্য "বন্দুকের ব্যারেল" ব্যবহার করা সুবিধাজনক, কারণ ধাতুর তৈরি রকেটের কেসিং পেস্টবোর্ড বা কাঠের কেসিংএর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।[৩৮][৩৯]

উনবিংশ শতাব্দীতে

কনগ্রিভ রকেট

উইলিয়াম কনগ্রিভ (১৭৭২-১৮২৮), কম্পট্রলার অফ রয়্যাল আর্সেনাল, উলউইচ, লন্ডনের পুত্র, রকেট উন্নয়নের ক্ষেত্রে একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ১৮০১ সাল থেকে কনগ্রিভ, মহীশূর রকেটের মূল নকশা নিয়ে গবেষণা করে এবং আর্সেনালের গবেষণাগারে রকেট তৈরির জন্য ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করেন।[৪০] কনগ্রিভ নতুন প্রোপেলান্ট মিশ্রণ প্রস্তুত করেন এবং শঙ্কযুক্ত নজল বিশিষ্ট শক্তিশালী লোহার টিউবের একটি রকেট মোটর নির্মাণ করেন। প্রথমদিকের কনগ্রিভ রকেটের ওজন ছিল প্রায় ৩২ পাউন্ড (১৪.৫ কিলোগ্রাম)। ১৮০৫ সালে রয়্যাল আর্সেনাল কর্তৃক কঠিন-জ্বালানি রকেটের প্রথম প্রদর্শনী হয়। এই রকেটগুলো নেপোলিয়নীয় যুদ্ধ এবং ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়। কনগ্রিভ রকেটের উপর তিনটি বই প্রকাশ করেন।[৪১]

পরবর্তীকালে, পশ্চিমা বিশ্বে সামরিক রকেটের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। ১৮১৪ সালের বাল্টিমোরের যুদ্ধে, রকেট যান এইচএমএস এরেবাস কর্তৃক ফোর্ট ম্যাকহেনরিতে রকেট ছোড়া হয়। ফ্রান্সিস স্কট কী রকেটের লাল আলোর ঝলকানি দেখে বর্ণনা করেন যে, রকেটগুলো যেন দ্যা স্টার-স্প্যানগলড ব্যানার[৪২] ১৮১৫ সালের ওয়াটারলুর যুদ্ধেও রকেট ব্যবহার করা হয়।[৪৩]

প্রথম দিকের রকেটগুলো খুবই অদক্ষ ছিল। ঘূর্ণন বা কোনো নিয়ন্ত্রণকারী ফিডব্যাক-লুপ ব্যবহার ছাড়াই, এদের উদ্দেশ্যমূলক পথ থেকে তীব্রভাবে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা ছিল। প্রথম দিকের মহীশূরের রকেট এবং তাদের উত্তরসূরি ব্রিটিশ কংগ্রিভ রকেটের (আধুনিক বোতল রকেটের মতো) শেষ দিকে একটি লম্বা লাঠি সংযুক্ত করা হতো ভীরকে কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হতো যাতে রকেটটি গতিপথ পরিবর্তন করতে না পারে।[৪৪] বৃহত্তম কনগ্রিভ রকেটের ছিল ৩২ পাউন্ড (১৪.৫ কেজি) কারকেস এবং এর ১৫ ফুট (৪.৬ মিটার) লম্বা একটি লোহার কাঠি রকেটের পিছনে সংযুক্ত ছিল। মূলত, লাঠিগুলো পাশে মাউন্ট করা হতো, কিন্তু পরে লাঠিকে, রকেটের কেন্দ্রে মাউন্ট করার জন্য পরিবর্তিত করা হয়, ড্র্যাগ হ্রাসকরণ এবং রকেটটিকে পাইপের একটি অংশ থেকে আরও নিখুঁতভাবে ছোড়া হতো যাতে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

১৮১৫ সালে আলেকজান্ডার দিমিত্রিভিচ জাসিয়াদকো (১৭৭৯-১৮৩৭) মিলিটারি গানপাউডার-রকেট তৈরির কাজ শুরু করেন। তিনি রকেট-লঞ্চিং প্ল্যাটফর্ম (যেটি সালভোসে রকেট চালানোর সুবিধা দেয় - একত্রে ৬টি রকেট) এবং বন্দুক রাখার ডিভাইস তৈরি করেন। জাসিয়াদকো সামরিক ক্ষেত্রে রকেট অস্ত্রের কৌশল বিশদভাবে বর্ণনা করেন। ১৮২০ সালে জাসিয়াদকো পিটার্সবার্গ অস্ত্রাগার, ওখটেনস্কি পাউডার ফ্যাক্টরি, পাইরোটেকনিক ল্যাবরেটরি এবং রাশিয়ার প্রথম সর্বোচ্চ আর্টিলারি স্কুলের প্রধান নিযুক্ত হন। তিনি একটি বিশেষ রকেট ওয়ার্কশপে রকেট উৎপাদন সংগঠিত করেন এবং ইম্পেরিয়াল রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে প্রথম রকেট উপ-ইউনিট স্থাপন করেন।[৪৫]

পোল্যান্ড কিংডম এর আর্টিলারি ক্যাপ্টেন জোজেফ বেম (১৭৯৪-১৮৫০) রকেট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন যা তৎকালীন পোলিশ রাকা কংগ্রেউস্কা নামে পরিচিত। ১৮১৯ সালে তিনি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তবে এই গবেষণাটি ওয়ারশ আর্সেনালে হয়েছিল, যেখানে অধিনায়ক জোজেফ কোসিনস্কি অশ্ব আর্টিলারি গান ক্য়ারিজ থেকে অভিযোজিত একাধিক রকেট লঞ্চারও তৈরি করেন। ১৮২২ সালে গঠিত হয় প্রথম রকেটিয়া কর্পস; এটি ১৮৩০-৩১ সালের পোলিশ-রাশিয়ান যুদ্ধের সময় প্রথম যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে।[৪৬]

১৮৪৪ সালে যখন উইলিয়াম হেল রকেটের নকশা পরিবর্তন করেন তখন রকেটের নিখুঁততায় ব্যাপক উন্নতি হয়। তিনি রকেটের থ্রাস্টকে কিছুটা ভেক্টর করেন হয়, যার ফলে রকেটটি বুলেটের মতো তার অ্যাক্সিস-অফ-ট্রাভেল বরাবর ঘুরতে থাকে।[৪৭] হেল রকেট, রকেট স্টিকের প্রয়োজনীয়তা দূর করে, বায়ু-প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাসের কারণে আরও রকেট দূরে নিক্ষেপ করা যেতো এবং এটি অনেক বেশি সঠিকভাবে আঘাত হানতে পারত।

১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ কর্নেল এডওয়ার্ড মুনিয়ার বক্সার একটি টিউবে দুটি রকেট রেখে একটি অন্যটির পিছনে রেখে কংগ্রিভ রকেটের একটি উন্নত সংস্করণ তৈরি করেন।[৪৮]

বিংশ শতকের প্রারম্ভিক অগ্রগামী রকেট নির্মাতাগণ

২০ শতকের প্রারম্ভে, জুলস ভার্ন এবং এইচ জি ওয়েলস-এর মতো কথাসাহিত্যিকদের সৃজনশীলতা এবং সেইসাথে রাশিয়ান কসমিজমের মতো দার্শনিক আন্দোলনের মাধ্যমে আন্তঃগ্রহ ভ্রমণের বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিস্ফোরণ ঘটে।[৪৯] বিজ্ঞানীরা রকেটকে এমন একটি প্রযুক্তি হিসেবে ধরেন যা বাস্তব জীবনে এটি অর্জন করতে সক্ষম করতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা প্রথম ১৮৬১ সালে উইলিয়াম লিচ প্রথম ব্যক্ত করেন।[৫০]

১৯০৩ সালে, রাশিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক কনস্ট্যান্টিন সোলকোভস্কি (Konstantin Tsiolkovsky) (১৮৫৭-১৯৩৫), ভার্ন এবং কসমিজম দর্শন কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে প্রকাশ করেন দ্যা ইক্সপ্লোরেশন অফ কসমিক স্পেস বাই মিনস্ অফ রিয়েকশন ডিভাইসেস[৫১] নামক বই প্রকাশ করেন, এটি ছিল মহাশূন্যে ভ্রমন সম্পর্কিত প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বই। সোলকোভস্কি রকেট ইকুয়েশন-যে নীতিটি রকেট প্রপালশনকে নিয়ন্ত্রণ করে—তাঁর সম্মানে নামকরণ করা হয়েছে (যদিও এটি আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল, রকেটগুলো মহাকাশ ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় গতি অর্জন করতে পারে কী না সেই প্রশ্নে এটি প্রয়োগ করার জন্য সোলকোভস্কি নামে নামকরণ করে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছে)।[৫২] তিনি প্রপেলান্টের জন্য তরল হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন, তাদের ম্যাক্সিমাম ইগজস্ট ভেলোসিটি গণনা করেন। তার কাজ মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে অজানা ছিল, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে এটি আরও গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ১৯২৪ সালে সোসাইটি ফর স্টাডিজ অফ ইন্টারপ্ল্যানেটারি ট্রাভেল গঠনে অনুপ্রাণিত করে।

রবার্ট এসনল্ট পালটেরি (১৯০৯)।

১৯১২ সালে, রবার্ট এসনাল্ট-পাল্টেরি রকেট তত্ত্ব এবং আন্তঃগ্রহ ভ্রমণের উপর একটি বক্তৃতা প্রকাশ করেন।[৫৩] তিনি স্বাধীনভাবে সোলকোভস্কির রকেট সমীকরণ তৈরি করেন, চাঁদ এবং গ্রহগুলোতে রাউন্ড ট্রিপ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সম্পর্কে প্রাথমিক গণনা করেন এবং তিনি জেট ড্রাইভকে শক্তি দেওয়ার জন্য পারমাণবিক শক্তি (অর্থাৎ রেডিয়াম) ব্যবহারের প্রস্তাব করেন।

রবার্ট গোডার্ড

১৯১২ সালে রবার্ট গডার্ড, ছোটবেলা থেকে এইচ জি ওয়েলস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এবং বিজ্ঞানে তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহের জন্য, রকেটের একটি গুরুতর বিশ্লেষণ শুরু করেন, এই উপসংহারে বলেন যে, প্রচলিত কঠিন-জ্বালানি রকেটগুলোকে তিনটি উপায়ে উন্নত করা দরকার। প্রথমত, উচ্চ চাপ সহ্য করার জন্য সম্পূর্ণ প্রপেলান্ট কন্টেইনার তৈরি করার পরিবর্তে একটি ছোট দহন চেম্বারে জ্বালানী পোড়ানো উচিত। দ্বিতীয়ত, রকেটগুলো পর্যায়ক্রমে সাজানো যেতে পারে। অবশেষে, ডি লাভাল নজল ব্যবহার করে নিষ্কাশন গতি (এবং এইভাবে কার্যকারিতা) শব্দের গতির চেয়েও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তিনি ১৯১৪ সালে এই ধারণাগুলো পেটেন্ট করেন।[৫৪] তিনি স্বাধীনভাবে রকেট উড্ডয়নের গণিতও তৈরি করেন। গডার্ড ১৯১৪ সাল থেকে সলিড-প্রপেলান্ট রকেট তৈরিতে কাজ করেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হওয়ার জন্য যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের মাত্র পাঁচ দিন আগে ইউএস আর্মি সিগন্যাল কর্পসের কাছে একটি হালকা যুদ্ধ রকেট প্রদর্শন করেন। তিনি ১৯২১ সালে তরল-চালিত রকেটের বিকাশও শুরু করেন, তবুও জনসাধারণ তা গুরুত্বের সাথে নেয়নি। তা সত্ত্বেও, গডার্ড একাকীভাবে একটি ছোট তরল-জ্বালানিযুক্ত রকেট তৈরি করেন এবং উড়ান। তিনি ২১৪টি পেটেন্টের জন্য প্রযুক্তি তৈরি করেন, যার মধ্যে ২১২টি তাঁর স্ত্রী তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশ করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি নৌবাহিনীর অফিসার ইয়েভেস লে প্রিউর (যিনি পরবর্তীতে একটি অগ্রগামী স্কুবা-ডাইভিং যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেন), বায়ু-থেকে-বায়ুতে কঠিন জ্বালানী লে প্রিউর রকেট তৈরি করেন - আবদ্ধ পর্যবেক্ষণ বেলুনগুলোকে ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়েছিল (যাকে বলা হয় সসিস - "সসেজ") এটি জার্মান আর্টিলারি-স্পটার কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। রুজিরি ফার্ম কর্তৃক নির্মিত অশোধিত কালো পাউডার, স্টিল-টিপড ইনসেনডিয়ারি রকেটগুলো প্রথমে একটি ভয়সিন এয়ারক্র্যাপট থেকে পরীক্ষা করা হয়, পরে একটি দ্রুত পিকার্ড পিকটেট স্পোর্টস-কারে উইং-বোল্ট করা হয় এবং তারপর ১৯১‍৬ সালের মে মাস থেকে বাস্তবে বিমানে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।[৫৫] একটি সাধারণ বিন্যাসে আটটি বৈদ্যুতিকভাবে চালিত লে প্রিউর রকেট একটি নিউপোর্ট বিমানের আন্তঃপ্লেন স্ট্রাটে লাগানো হয়। পর্যাপ্ত স্বল্প দূরত্ব থেকে গুলি চালানো হলে, লে প্রিউর রকেটের একটি বিস্তার বেশ মারাত্মক আঘাত করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়। বেলজিয়ান ‌এইচ ‌‌উইলি কোপেনস দাবি করেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কয়েক ডজন ড্রাচেন হত্যা করেন এই ধরনের রকেট দিয়ে।[৫৬]

১৯২০ সালে, গডার্ড তাঁর ধারণা এবং পরীক্ষণ আ মেথড অফ রিচিং ইক্সট্রিম অলটিউড বইয়ে প্রকাশ করেন।[৫৭] তাঁর কাজের মধ্যে চাঁদে একটি কঠিন-জ্বালানির রকেট পাঠানোর বিষয়ে মন্তব্য অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল এবং প্রশংসিত এবং উপহাসকৃত উভয়ই হয়েছিল। ১৯২৩ সালে, হের্মান ওবের্ট (Hermann Oberth) (১৮৯৪-১৯৮৯), মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এটি প্রত্যাখ্যান করার পরে, তাঁর ডক্টরেট থিসিসের একটি সংস্করণ ডাই রাকেটে জু ডেন প্ল্যানেটেনরামেন ("দ্য রকেট ইন প্ল্যানেটারি স্পেস") প্রকাশ করেন।

১৯২৪ সালে, সোলকোভস্কি 'কসমিক রকেট ট্রেন'- বইয়ে বহু-পর্যায়ের রকেট সম্পর্কেও লিখেন।[৫৮]

আধুনিক রকেটবিদ্যা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বকালীন

রবার্ট গোডার্ড এবং প্রথম তরল-জ্বালানি ব্যবহৃত রকেট।

আধুনিক রকেটের উৎপত্তি হয় আমেরিকায় যখন রবার্ট গডার্ড তরল জ্বালানির রকেট ইঞ্জিনের দহন চেম্বারে একটি সুপারসনিক (দ্যা লাভাল) নজল সংযুক্ত করেন। এটি গরম দহন চেম্বার গ্যাসকে একটি শীতল, উচ্চ নির্দেশিত হাইপারসনিক গ্যাসে পরিণত করে, যা থ্রাস্টকে দ্বিগুণ করে এবং ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ২% থেকে ৬৪% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।[৫৯][৬০] ১৯২৬ সালের ১৬ মার্চ, গডার্ড ম্যাসাচুসেটসের অবার্নে বিশ্বের প্রথম তরল-জ্বালানিযুক্ত রকেট উড্ডয়ন করেন।

১৯২০ এর দশকে, বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি রকেট গবেষণা সংস্থা আবির্ভূত হয। সোভিয়েত ইউনিয়নে রকেট্রি ১৯২১ সালে গ্যাস ডায়নামিক্স ল্যাবরেটরিতে (GDL) ব্যাপক কাজের সাথে শুরু হয়। এখানে, ১৯২৮ সালের মার্চ মাসে একটি কঠিন জ্বালানী রকেটের প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়, যা প্রায় ১৩০০ মিটার পর্যন্ত উড়েছিল।[৬১] ১৯৩১ সালে এয়ারক্র্য়াফট উড্ডয়নে সহায়তা করার জন্য বিশ্বের প্রথম সফল রকেট ব্যবহার একটি U-1-এ সম্পাদিত হয়, এর সোভিয়েত ডেজিগনেশন হলো অ্যাভ্র ৫০৪ প্রশিক্ষক, যা প্রায় একশটি সফল সহায়তামূলক টেকঅফ-এ সহায়তা করে।[৬২] ১৯৩০ দশকের গোড়ার দিকে, রকেটের আরও উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে বিমান এবং ভূমি থেকে রকেট নিক্ষেপ করা। ১৯৩২ সালে ছয়টি লঞ্চারে সজ্জিত একটি টুপোলেভ(Tupolev I-4) বিমান থেকে আরএস (RS-82) ক্ষেপণাস্ত্রের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষামূলক ফায়ারিং সফলভাবে করা হয়।[৬৩] ১৯৩১ সালের সেপ্টেম্বরে, গ্রুপ ফর দ্য স্টাডি অফ রিঅ্যাকটিভ মোশন (GIRD) গঠিত হয় এবং ১৭ আগস্ট, ১৯৩৩-এ প্রথম সোভিয়েত তরল নির্ভর রকেট GIRD-9 উৎক্ষেপণ সম্পাদন করে, যা ৪০০ মিটার (১,৩০০ ফু) উচ্চতায় পৌঁছে।[৬৪]

১৯৩৩ সালে GDL এবং GIRD একত্রিত হয়ে রিয়েকটিভ সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিউট (RNII) গঠন করা হয়[৬৫] এবং রকেট উন্নয়ন অব্যাহত রাখা হয়, যার মধ্যে রয়েছে- ভূমি-থেকে-আকাশে, ভূমি-থেকে-ভূমিতে, আকাশ-থেকে-ভূমিতে এবং আকাশ-থেকে-আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য বিভিন্ন বিচিত্র ডিজাইনের কমব্য়াট। আরএস(RS-82) রকেট পোলিকারপভ I-15, I-16 এবং I-153 ফাইটার প্লেন বহন করত, পোলিকারপভ R-5 রিকনইস্যান্স প্লেন এবং ইলিউশিন Il-2 ক্লোজ এয়ার সাপোর্ট প্লেন দ্বারা বহন করত। অন্যদিকে, ভারী RS-132 রকেটগুলো বোমারু বিমান দ্বারা বহন করা হতো।[৬৬] সোভিয়েত নৌবাহিনীর অনেক ছোট জাহাজে RS-82 রকেট সংযুক্ত করা হতো, যার মধ্যে MO-শ্রেণির ছোট গার্ড জাহাজও ছিল।[৬৭] ১৯৩৯ সালের অগাস্টে, কালখিন গল যুদ্ধে‌, সোভিয়েত এয়ারফোর্স কর্তৃক বিমান-চালিত আনগাইডেড এন্টি-এয়ারক্রাফ্ট রকেট বাতাসের চেয়ে ভারী বিমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল‌।[৬৮] ক্যাপ্টেন এন. জোনারেভ( Captain N. Zvonarev)-এর নেতৃত্বে পোলিকারপভ I-16 যোদ্ধাদের একটি দল জাপানি বিমানের বিরুদ্ধে RS-82 রকেট ব্যবহার করেছিল, মোট ১৬ জন যোদ্ধা এবং ৩টি বোমারু বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। ছয়টি টুপোলেভ এসবি বোমারু বিমানও শীতকালীন যুদ্ধের সময় স্থল আক্রমণের জন্য আর(RS)-132 ব্যবহার করা হয়েছিল।[৬৯] ভ্যালেনটিন গ্লাশকোর নির্দেশনায় আরএনআইআই(RNII) ১০০ টিরও বেশি পরীক্ষামূলক রকেট ইঞ্জিন তৈরি করে। রিজেনেরেটিভ কুলিং, হায়পারগোলিক প্রোপেলান্ট ইগনিশন, সোর্লিং এবং বাই-প্রোপালান্ট মিক্সিং ফুয়েল ইনজেকটর প্রভৃতি ডিজাইন এসব রকেটে ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে, ১৯৩৮ সালে স্তালিনের গ্রেট পার্জের সময় গ্লাশকোর গ্রেপ্তার এই রকেট উন্নয়ন কার্যক্রম হ্রাস করে।

ওপেল র্যাক(Opel RAK.1)- ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ সালে মানুষ চালিত প্রথম রকেট প্লেনের ফ্লাইট।

১৯২৭ সালে, ফ্রিটজ ভন ওপলের নেতৃত্বে জার্মান গাড়ি প্রস্তুতকারক ওপেল, ম্যাক্স ভ্যালিয়ার এবং কঠিন-জ্বালানী রকেট নির্মাতা ফ্রেডরিখ উইলহেলম স্যান্ডারের সাথে রকেট যানের প্রকাশ্য প্রদর্শন শুরু করে, এটি Opel-RAK নামে পরিচিত।[৭০][৭১] ১৯২৮ সালে, ফ্রিটজ ভন ওপেল জার্মানির রাসেলশাইমে ওপেল রেসওয়েতে একটি রকেট গাড়ি Opel RAK.1 চালান এবং পরে বার্লিনের AVUS স্পিডওয়েতে উন্নততর RAK 2 রকেট গাড়ি চালান। ১৯২৮ সালে, ওপেল, ভ্যালিয়ার এবং স্য়ানডার, লিপিশ্যা এন্টে গ্লাইডার, রকেট শক্তি দিয়ে সজ্জিত করেন এবং মানবযুক্ত গ্লাইডার চালু করেন। এটি ওপেল কিনে নেয়। "এন্টে" তার দ্বিতীয় ফ্লাইটে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ফলত, গ্লাইডারে অগ্রগামী জুলিয়াস হ্যাট্রি-কে তার রকেট প্রোগ্রামের জন্য একটি ডেডিকেটেড গ্লাইডার, পুন Opel-RAK.1 নামে নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৯ সালে, ভন ওপেল নিজেই RAK.1-এর পাইলট হন, ফ্রাঙ্কফুর্ট-রেবস্টক বিমানবন্দর থেকে বিশ্বের প্রথম মানব চালিত রকেট ফ্লাইট উড্ডয়ন করান, কিন্তু তিনি দ্রুত ও জটিল অবতরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। ওপেল-র্যাক প্রোগ্রাম এবং জনসাধারণকে ভূমি থেকে আকাশে রকেটের উড্ডয়ন প্রদর্শন বিপুল জনতাকে আকর্ষণ করে এবং এতে জার্মানির জনসাধারণের মধ্যে ব্য়াপক উদ্দীপনার সৃষ্টি করে যা "রকেট রম্বল" নামে পরিচিত।[৭২] একটি অপেশাদার রকেট গ্রুপ, ভিএফআর, ম্যাক্স ভ্যালিয়ের সহ প্রতিষ্ঠিত হয়, পরে ওয়ের্নহার ভন ব্রাউন এতে অন্তর্ভুক্ত হয়, যিনি নাৎসিদের জন্য V-2 রকেট অস্ত্র ডিজাইনকারী সেনা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান হয়েছিলেন। ১৯৩৫ সালে জার্মানিতে যখন প্রাইভেট রকেট-ইঞ্জিনিয়ারিং নিষিদ্ধ করা হয়, তখন স্যান্ডারকে গেস্টাপো বাহিনী গ্রেফতার করে, রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে, ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয় এবং তাকে তার কোম্পানি বিক্রি করতে বাধ্য করে। তিনি ১৯৩৮ সালে মারা যান।

ভার্সাই চুক্তি নিষেধাজ্ঞার আলোকে, জার্মান সেনাবাহিনীর ব্যালিস্টিক এবং যুদ্ধাস্ত্র শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল কার্ল এমিল বেকার, ওয়াল্টার ডর্নবার্গার এবং লিও জানসেন সহ প্রকৌশলীদের একটি ছোট দলকে নিযুক্ত করা হয়, কীভাবে রকেটগুলোকে দূরপাল্লার আর্টিলারি হিসাবে ব্যবহার করতে হয় তা বোঝার জন্য এবং দূরপাল্লার কামানের গবেষণা ও উন্নয়নে কাজ করা যায়।[৭৩] ভের্নার ফন ব্রাউন, একজন তরুণ প্রকৌশলী যিনি একজন আঠারো বছর বয়সী ছাত্র হিসেবে হের্মান ওবের্টকে তার তরল রকেট ইঞ্জিন তৈরি করতে সাহায্য করেন[৭৪], বেকার এবং ডর্নবার্গারকে ১৯৩২ সালে কামারসডর্ফ-ওয়েস্টে তাদের গোপন সেনা প্রোগ্রামে যোগদানের জন্য নিয়োগ করেন।[৭৫] ভন ব্রাউন রকেট দিয়ে মহাকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখেন এবং প্রাথমিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে সামরিক মূল্য অনুধাবন করেননি।[৭৬]

১৯২৭ সালে ওপেল আরএকে-র ম্যাক্স ভ্যালিয়ার সহ জার্মান রকেট ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল ভেরিন ফার রামশিফাহর্ট (সোসাইটি ফর স্পেস ট্টাভল, বা ভিএফআর) গঠন করে এবং ১৯৩১ সালে একটি তরল প্রোপেলান্ট রকেট (অক্সিজেন এবং গ্য়াসোলিন ব্যবহার করে) চালু করে।[৭৭]

অনুরূপ কাজ ১৯৩২ সাল থেকে অস্ট্রিয়ান অধ্যাপক ইউজেন স্যানার করেন, যিনি ১৯৩৬ সালে জার্মানিতে চলে আসেন এবং সিলবারভোগেল (কখনও কখনও "অ্যান্টিপোডাল" বোমারু নামে পরিচিত) এর মতো রকেট-চালিত মহাকাশযান তৈরিতে কাজ করেন।[৭৮]

১২ নভেম্বর, ১৯৩২ সালে, স্টকটন এনজে-র একটি খামারে, আমেরিকান ইন্টারপ্ল্যানেটারি সোসাইটি তাদের প্রথম রকেট (জার্মান রকেট সোসাইটির নকশার উপর ভিত্তি করে) স্ট্যাটিক-ফায়ারের প্রচেষ্টা চালায় এবং আগুন লাগার কারণে তা ব্যর্থ হয়।[৭৯]১৯৩৬ সালে, ডক্টর অ্যালউইন ক্রো-এর নির্দেশনায় কেন্টের 'ফোর্ট হাস্টেডে অবস্থিত একটি ব্রিটিশ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা হয়। গবেষণার বিষয় ছিল- একটি আনগাইডেড কঠিন-জ্বালানি সিরিজের রকেট তৈরি করা যা অ্যান্টি-এয়ারক্র্য়াফট উইপেন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৯৩৯ সালে, জ্যামাইকার ব্রিটিশ উপনিবেশে একটি বিশেষভাবে নির্মিত পরিসরে বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক ফায়ারিং চালানো হয়।[৮০]

১৯৩০-এর দশকে, জার্মান রাইখসওয়ের (যা ১৯৩৫5 সালে ওয়েহরমাখ্ট হয়ে ওঠে) রকেটের প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। ১৯১৯ সালের ভার্সাই চুক্তির দ্বারা আরোপিত আর্টিলারি নিষেধাজ্ঞাগুলো জার্মানির লং-ডিসট্যান্স উইপনরি অ্যাক্সেসকে সীমিত করেছিল। দূরপাল্লার আর্টিলারি ফায়ার হিসাবে রকেট ব্যবহার করার সম্ভাবনা দেখে, ওয়েহরমাখ্ট প্রাথমিকভাবে ভিএফআর দলকে অর্থায়ন করেছিল, কিন্তু যেহেতু তাদের মনোযোগ কঠোরভাবে বিজ্ঞানভিত্তি, তাই তারা নিজস্ব গবেষণা দল তৈরি করেছিল। সামরিক নেতাদের নির্দেশে, ওয়ার্নহার ভন ব্রাউন, সেই সময়ে একজন তরুণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী রকেট বিজ্ঞানী, সেনাবাহিনীতে যোগ দেন (দুইজন প্রাক্তন ভিএফআর সদস্য সহ) এবং নাৎসি জার্মানি কর্তৃক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহারের জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র তৈরি করেন।[৮১]

জুন, ১৯৩৮ সালে, সোভিয়েত রিয়েকটিভ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (RNII) RS-132 রকেটের উপর ভিত্তি করে একাধিক রকেট লঞ্চার তৈরি করতে শুরু করে।[৮২] আগস্ট, ১৯৩৯ সালে, সম্পূর্ণ রকেট BM-13 রকেট লঞ্চার M-13 রকেটের জন্য 'কমব্যাট ভেহিকল' তৈরি করা হয়। ১৯৩৮ সালের শেষের দিকে রকেট লঞ্চারগুলোর প্রথম উল্লেখযোগ্য বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা করা হয়েছিল, এতে বিভিন্ন ধরণের ২৩৩টি রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল। রকেটের একটি সালভো ৫,৫০০ মিটার (৩.৪ মা)পরিসরে লক্ষ্যবস্তুতে সম্পূর্ণভাবে আঘাত হানতে পারে। ১৯৪০ সালের মধ্যে বিভিন্ন রকেট পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং ষোলটি রকেটের জন্য লঞ্চ রেল সহ BM-13-16 উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪১ সালের জুনে, জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করার আগে মাত্র চল্লিশটি লঞ্চার তৈরি করা হয়েছিল।[৮৩]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

১৯৪২ সালের ৬ অক্টোবর, স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে ব্যবহৃত কাতিউশা লঞ্চারের একটি ব্য়াটারি
ম্যায়লারওয়াগেন-এ একটি জার্মান V-2 রকেট।
V-2 রকেটের লেআউট.

যুদ্ধের শুরুতে, ব্রিটিশরা তাদের যুদ্ধজাহাজগুলোকে ‌আনরোটেড প্রজেক্টাইল আনগাইডেড অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট রকেট দিয়ে সজ্জিত করেছিল এবং ১৯৪০ সালের মধ্যে, জার্মানরা একটি সারফেস-টু-সার্ফেস মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, নেবেলওয়ারফার তৈরি করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর, প্রতিযোগী রাশিয়া, ব্রিটিশ এবং মার্কিন সামরিক ও বৈজ্ঞানিক ক্রুরা পেনিমুন্ডে অবস্থিত জার্মান রকেট প্রোগ্রাম থেকে প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত কর্মীদের সংগ্রহ করার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে। রাশিয়া ও ব্রিটেন কিছুটা সাফল্য পেলেও সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভন ব্রাউন সহ বিপুল সংখ্যক জার্মান রকেট বিজ্ঞানীকে হস্তগত করে এবং অপারেশন পেপারক্লিপের অংশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসে।[৮৪] আমেরিকাতে, ব্রিটেনে বৃষ্টিপাতের জন্য ডিজাইন করা একই রকেটগুলো বিজ্ঞানীরা নতুন প্রযুক্তির অধিকতর বিকাশের জন্য গবেষণার বাহন হিসেবে ব্যবহার করেন। ভি-টু(V-2) রকেটকে আমেরিকান রেডস্টোন রকেটে রূপান্তরিত করা হয়, যা প্রারম্ভিক মহাকাশ প্রোগ্রামে ব্যবহৃত হয়।[৮৫]

বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে, রকেট অতি-উচ্চতার অবস্থা অধ্যয়ন, বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা এবং চাপের রেডিও টেলিমেট্রি, মহাজাগতিক রশ্মি সনাক্তকরণ এবং অন্যান্য উচ্চতর গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয়; বিশেষ করে বেল এক্স-১, শব্দের বাধা অতিক্রমকারী প্রথম মনুষ্যবাহী যান। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভন ব্রাউন এবং অন্যান্যদের অধীনে অব্যাহত ছিল, যারা মার্কিন বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের অংশে পরিণত হয়।


স্বাধীনভাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ কর্মসূচি প্রধান ডিজাইনার সার্গেই কোরোলেভের নেতৃত্বে গবেষণা অব্যাহত থাকে।[৮৬] জার্মান প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায়, V-2 রকেটকে R-1 ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে অনুকরণ করা হয় এবং উড্ডয়ন করা হয়। ১৯৪০ এর দশকের শেষ দিকে জার্মান নকশা পরিত্যক্ত হয় এবং বিদেশী কর্মীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।[৮৭] গ্লাশকো কর্তৃক নির্মিত এবং আলেক্সি মিহাইলোভিচ ইসেভের উদ্ভাবনের ভিত্তিতে নতুন সিরিজের রকেট ইঞ্জিন প্রথম আইসিবিএম, আর-7 এর ভিত্তি তৈরি করে।[৮৮] R-7 রকেট প্রথম মানব নির্মিত স্যাটেলাইট, স্পুটনিক ১, এবং পরে মহাকাশে প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন এবং প্রথম চান্দ্র ও গ্রহের প্রোব উৎক্ষেপণ করে। এই রকেটটি বর্তমানেও ব্যবহার হচ্ছে। এই মর্যাদাপূর্ণ ঘটনাগুলো অধিকতর গবেষণার জন্য অতিরিক্ত তহবিলের পাশাপাশি শীর্ষ রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণও করে।

একটি সমস্যা যার তখনো সমাধান করা হয়নি তা হলো বায়ুমণ্ডলীয় পুনঃপ্রবেশ। গবেষণায় দেখা যায় যে, কক্ষপথে ঘূর্ণরত একট অরবিটাল যানের গতিশক্তি সহজেই এটিকে বাষ্পীভূত করে ফেলতে পারে, এবং আরো জানা যায় যে, উল্কাপিণ্ড এটিকে মাটিতে নামিয়ে দিতে পারে। ১৯৫১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ফর অ্যারোনটিক্স (NACA) এর দুই বিজ্ঞানী এইচ. জুলিয়ান অ্যালেন এবং এ. জে. এগারস জুনিয়র পরস্পর স্ববিরোধী আবিষ্কার করেন যে, ব্লান্ট শেইপের মহাকাশযান সর্বোচ্চ তাপপ্রতিরোধী। এই ধরনের আকৃতির কারণে, প্রায় ৯৯% তাপশক্তি মহাকাশযানের পরিবর্তে বাতাসে চলে যায় এবং এটি অরবিটাল যানকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।[৮৯]

অ্যালেন এবং এগারের এই উদ্ভাবন, প্রাথমিকভাবে একটি সামরিক গোপনীয় বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়, অবশেষে ১৯৫৮ সালে এটি প্রকাশিত হয়।[৯০] ব্লান্ট বডি তত্ত্ব মার্কারি, জেমিনি‌‌, অ্যাপোলো এবং সয়ুজ স্পেস ক্যাপসুলগুলোতে মূর্ত হওয়া তাপ প্রতিরোধী নকশাগুলোকে সম্ভব করেছে, যা নভোচারী এবং মহাকাশচারীদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশে জ্বলন্ত আগুনের থেকে বাঁচতে সহায়তা করে। কিছু মহাকাশযান যেমন- স্পেস শাটলে একই তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়। যে সময়ে এসটিএসের ধারণা করা হচ্ছিল, ম্যাক্সিম ফাজে, ম্যানড স্পেসক্রাফ্ট সেন্টারের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর, সম্পূর্ণরূপে লিফ্টিং-রিএন্ট্রি‌‌ পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না (যেমন- বাতিলকৃত X-20 "ডাইনা-সোর" এর জন্য যা প্রস্তাবিত ছিল)।[৯১] তিনি একটি স্পেস শাটল ডিজাইন করেন যা অত্যন্ত উচ্চমাত্রার ৪০° এঙ্গেল অফ অ্যাটাক তৈরি করে[৯২] বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে একটি ব্লান্ট বডি হিসেবে কাজ করে এবং রকেটের নিচের দিকটি ফ্লাইটের দিকে মুখ করে থাকে। ফলে, একটি বড় শক ওয়েভ তৈরি করে যা চারপাশের বেশিরভাগ তাপকে রকেটের ভিতরে প্রবেশ করার পরিবর্তে বাইরের দিকে ছড়িয়ে দেয়।[৯৩] স্পেস শাটল ব্যালিস্টিক এন্ট্রি (ব্লান্ট বডি থিওরি) এবং এরোডাইনামিক রি-এন্ট্রির সংমিশ্রণে চালিত হয়; প্রায় ১,২২,০০০ মি (৪,০০,০০০ ফু) উচ্চতায়, বায়ুমণ্ডল বায়ুগতিগত পুনঃপ্রবেশ পর্ব শুরু করার জন্য যথেষ্ট ঘন হয়ে ওঠে। পুনঃপ্রবেশের সময়, শাটলটি লিফটের দিক পরিবর্তন করার জন্য একটি নির্ধারিত উপায়ে ঘূর্ণায়মান হয়, সর্বোচ্চ মন্দন ২ জিএসা(gs)-এর নিচে পৌঁছায়। এই রোল ম্যানুভারগুলো শাটলকে রানওয়ের দিকে যাওয়ার জন্য তার লিফট ব্যবহার করতে সহায়তা করে।[৯৪]

স্নায়ু যুদ্ধের সময়কালীন

ফ্রেঞ্চ ডিয়ামান্ট রকেট, দ্বিতীয় ফরাসি রকেট প্রোগ্রাম, ১৯৬১ সাল থেকে বিকশিত হয়[৯৫]

রকেট আধুনিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBMs) হিসেবে সামরিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন এটি উপলব্ধি করা হয় যে রকেট যানে বহন করা পারমাণবিক অস্ত্রগুলো একবার চালু হলে তা বন্ধ করা বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে অপরিহার্যভাবে অসম্ভব। এসব অস্ত্রের জন্য আর-7, অ্যাটলাস এবং টাইটান উৎক্ষেপণকারী বাহক হিসেবে ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে।

১৯৬১ সালে ভন ব্রাউনের রকেট টীম

আংশিকভাবে স্নায়ু যুদ্ধের কারণে উদ্দীপিত, ১৯৬০-এর দশক বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নে রকেট প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের দশকে পরিণত হয়। তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের উল্লেখযোগ্য রকেট হলো- ভস্তক, সয়ুজ, প্রোটন[৯৬] এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য রকেট হলো- এক্স- 15 এবং এক্স-20 ডায়না-সোর এয়ারক্রাফট।[৯৭] অন্যান্য দেশেও উল্লেখযোগ্য গবেষণা হয়, যেমন-ফ্রান্স, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি, এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য রকেটের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার, চাঁদের দূরের পৃষ্ঠদেশের ছবি সংগ্রহ এবং মঙ্গল গ্রহে অনুসন্ধানের জন্য রকেট ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হয়।আমেরিকায়, নভোচারী স্পেসফ্লাইট প্রোগ্রাম- প্রজেক্ট মার্কারি, প্রজেক্ট জেমিনি‌‌‌ এবং পরবর্তীতে অ্যাপোলো প্রোগ্রাম, ১৯৬৯ সালে স্যাটার্ন ফাইভ ব্যবহার করে চাঁদে প্রথম নভোচারীদের অবতরণের মাধ্যমে শেষ হয়। এসব নিউ ইর্য়ক টাইমস সংবাদপত্রে সম্পাদকীয় ছাপানো হয়।

১৯৭০ এর দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরো ৫টি রকেট বা নভোযান চাঁদে পাঠায়, ১৯৭৫ সালে অ্যাপোলো প্রোগ্রাম বাতিল করার পূর্ব পর্যন্ত। প্রতিস্থাপন যান, আংশিকভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্পেস শাটল, সস্তা হওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়,[৯৮] কিন্তু খরচে তেমন কোনো বড় ধরনের হ্রাস পাওয়া যায়নি। ১৯৭৩ সালে, ব্যয়যোগ্য আরিয়ান প্রোগ্রাম শুরু হয়, ইতোমধ্য়ে, একটি লঞ্চার ২০০০ সাল নাগাদ জিওস্যাট বাজারের অধিকাংশ বাজার শেয়ার দখল করে।[৯৯]

মার্কেটে প্রতিযোগিতা

২০১০ এর দশকের গোড়ার দিকে, মহাকাশযান পরিষেবা প্রাপ্তির জন্য নতুন ব্যক্তিগত পরিষেবা আবির্ভূত হয়েছে, যা বিদ্যমান লঞ্চ পরিষেবা প্রদানকারী ব্যবসায়ে যথেষ্ট বাজার প্রতিযোগিতা এনেছে। প্রারম্ভিকভাবে, এই বাজার শক্তিগুলো বিভিন্ন মূল্যে পেলোড পরিবহন ক্ষমতার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক গতিশীলতার মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়েছে যা উৎপাদনকারী দেশ বা বিশেষ জাতীয় সত্তার প্রথাগত রাজনৈতিক বিবেচনার তুলনায় রকেট উৎক্ষেপণ ক্রয়ের উপর বেশি প্রভাব ফেলে, লঞ্চ পরিষেবা ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণ বা লাইসেন্স প্রদান করে।[১০০][১০১][১০২] ১৯৫০ দশকের শেষের দিকে মহাকাশযান প্রযুক্তির আবির্ভাবের পর, মহাকাশ উৎক্ষেপণ পরিষেবাগুলো একচেটিয়াভাবে জাতীয় কর্মসূচি হিসেবে অস্তিত্ব লাভ করে। পরবর্তীতে, ২০শ শতকে বাণিজ্যিক অপারেটররা লঞ্চ প্রদানকারীর উল্লেখযোগ্য গ্রাহক হয়ে ওঠে। রকেট লঞ্চ মার্কেটের কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট পেলোড সাবসেটের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ক্রমবর্ধমানভাবে বাণিজ্যিক বিবেচনায় প্রভাবিত হয়। যাহোক, এই সময়ের মধ্যেও, বাণিজ্যিক এবং সরকারী-সত্তা উভয়ে কমস্য়াট লঞ্চিং করে, এই পেলোডগুলোর জন্য লঞ্চ পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক নির্দিষ্টকরণের জন্য তৈরিকৃত রকেটলঞ্চিং যানবাহন ব্যবহার করত, এবং একচেটিয়াভাবে রাষ্ট্র-প্রদত্ত উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করেই তা করত। ২০১০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ব্যক্তিগতভাবে উন্নত লঞ্চিং ভেহিকল সিস্টেম এবং স্পেস লঞ্চিং পরিষেবা অফারিংগুলো আবির্ভূত হয়। বর্তমানে, কোম্পানিগুলো প্রধানত, আগের দশকের প্রাপ্ত রাজনৈতিক প্রণোদনার পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রণোদনা লাভ করে। মহাকাশ উৎক্ষেপণ ব্যবসা সম্পূর্ণ নতুন ক্ষমতা যোগ করার সাথে সাথে প্রতি-ইউনিট মূল্যের নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ার অভিজ্ঞতা পেয়েছে, যা মহাকাশ উৎক্ষেপণ বাজারে প্রতিযোগিতার একটি নতুন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।[১০৩][১০৪][১০৫]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ