ভের্নার ফন ব্রাউন

ভের্নার ফন ব্রাউন (জার্মান: Wernher von Braun; জন্ম: ২৩ মার্চ, ১৯১২ - মৃত্যু: ১৬ জুন, ১৯৭৭[১]) বিখ্যাত জার্মান-মার্কিন প্রকৌশলী ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তিনি তরল-জ্বালানী ব্যবহার উপযোগী রকেটের উন্নয়নে কাজ করেছেন। তাকে মহাকাশ অনুসন্ধানের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে গণ্য করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি নাজি জার্মানি’র জন্যে ভি-২ গাইড মিসাইল এবং বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে মার্কিনীদের পরিচালনায় নাসা’র অ্যাপোলো প্রকল্পে স্যাটার্ন ভি রকেট বুস্টার উদ্ভাবন করে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। এরফলে মানুষের পক্ষে চাঁদে গমন সহজতর হয়।

ভের্নার ফন ব্রাউন
১৯৬৪ সালে আলাবামা’র মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের নিজ কার্যালয়ে ফন ব্রাউন
জন্ম
ভের্নার ম্যাগনাস ম্যাক্সিমিলান, ফ্রেইরার ফন ব্রাউন

(১৯১২-০৩-২৩)২৩ মার্চ ১৯১২
উইরসিতজ, প্রভিঞ্জ পোজেন, জার্মান সাম্রাজ্য
(বর্তমানে উইরসিতজ, পিলা কাউন্টি, পোল্যান্ড)
মৃত্যু১৬ জুন ১৯৭৭(1977-06-16) (বয়স ৬৫)
আলেকজান্দ্রিয়া, ভার্জিনিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুর কারণমলাশয়ের ক্যান্সার
সমাধিআলেকজান্দ্রিয়া, ভার্জিনিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তাজার্মান, আমেরিকান
মাতৃশিক্ষায়তনবার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইটিএইচ জুরিখ
পেশারকেট ইঞ্জিনিয়ার ও নকশাকার
দাম্পত্য সঙ্গীমারিয়া লুইজ ফন কুইস্টোর্প (বি. ১৯৪৭–১৯৭৭)
সন্তানআইরিস কারেন ফন ব্রাউন
মারগ্রিট ফন ব্রাউন
পিটার কনস্ট্যান্টাইন ফন ব্রাউন
পিতা-মাতাম্যাগনাস ফন ব্রাউন (১৮৭৭-১৯৭২)
এমি ফন কুইস্টোর্প (১৮৮৬-১৯৫৯)
সামরিক কর্মজীবন
আনুগত্যনাজি জার্মানি
সেবা/শাখাএসএস
কার্যকাল১৯৩৭-১৯৪৫
পদমর্যাদাস্টার্মব্যানফুরার, এসএস
যুদ্ধ/সংগ্রামদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
পুরস্কারনাইটস ক্রস অব দি ওয়ার মেরিট ক্রস (১৯৪৪)
ওয়ার মেরিট ক্রস, তরবারী সহযোগে প্রথম শ্রেণী (১৯৪৩)
অন্য কাজরকেট প্রকৌশলী, নাসা, মনুষ্যবাহিত স্যাটার্ন ভি রকেট নির্মাণে চাঁদে প্রেরণ

১৯৩০-এর দশক থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত রকেটের নকশা প্রণয়ন ও মানোন্নয়নে কাজ করে গেছেন।[২] তাকে রকেট বিজ্ঞানের জনক নামে অভিহিত করা হয়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বিংশ শতকের রকেট প্রকৌশলী হিসেবে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।[৩]

প্রারম্ভিক জীবন

পোজেনের উইরসিৎজ এলাকার (বর্তমান - পোজনান, পোল্যান্ড) সংখ্যালঘু অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফন ব্রাউন। শৈশবকালেই মহাকাশযান নিয়ে ব্যাপকভাবে আগ্রহী ছিলেন তিনি। ১৯২৯ সালে জার্মান রকেট সমিতি ভেরেই ফার রাউমসিফারতে (মহাকাশ ভ্রমণ সমিতি) যোগদান করেন। পরের বছরই বার্লিনের প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

কর্মজীবন

১৯২০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত ফন ব্রাউন ছিলেন জার্মানির রকেট উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান চরিত্র। অসম্ভব মেধাবী জার্মান বিজ্ঞানী বার্নার ফন ব্রাউন সর্বপ্রথম তরল-জ্বালানী ব্যবহার উপযোগী রকেট আবিষ্কার করেন। ১৯৩২ সালে ফন ব্রাউন জার্মান গোলন্দাজ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ও শক্তিশালী রকেট তৈরীতে মনোনিবেশ ঘটান। ১৯৩৪ সালের মধ্যেই তার বিভাগটি সাফল্যজনকভাবে ম্যাক্স ও মরিৎজ নামের দুইটি রকেট উৎপাদনে সক্ষম হয়। একই বছরে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহাকাশ প্রকৌশলে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে জার্মানির পক্ষে কাজ করেন। ১৯৩৭ সালে ফন ব্রাউন ও তার দলকে বাল্টিক উপকূলের পিনিমান্ডের গোপন এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়। ভি-২ রকেটের নকশা প্রণয়ন ও প্রভাব বিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।[৪] লন্ডন শহরে ভি-২ ব্যালেস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়। এ বছরেই তিনি নাজি পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৪৩ সালে মিত্র বাহিনীর বোমারু বিমান পিনিমান্ডে এলাকায় আঘাত হানলে ভি-২ মিসাইলের উৎপাদন ও পরীক্ষণ কার্যক্রম জার্মানির মধ্যাঞ্চল হিসেবে পরিচিত নর্দহসেনের কাছাকাছি মিতেলবাউ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। মাটির নিচে কারখানা স্থাপিত হয় ও দাস শ্রমিকদের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে ইউরোপকে লক্ষ্য করে প্রথমবারের মতো ভি-২ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। হাজারো হাজারো নিরীহ সাধারণ নাগরিক ভি-২ আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়। এছাড়াও, রকেট কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত হাজারো কয়েদী রকেট উৎপাদনে নিহত হয়েছিলেন।

যুদ্ধ পরবর্তীকালে তিনিসহ কিছুসংখ্যক নির্বাচিত রকেট উন্নয়ন দলের সদস্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয় ও তাকে অত্যন্ত গোপণীয় অপারেশন পেপারক্লিপের সদস্য করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর আইআরবিএম প্রকল্পে কাজ করেন। এ প্রকল্পটি নাসা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিল। নাসার নিয়ন্ত্রণে থেকে নতুন প্রতিষ্ঠিত মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের পরিচালক পদে আসীন হন ও স্যাটার্ন-৫ এর প্রধান রূপকার ছিলেন। এর মাধ্যমে অ্যাপোলো ১১ মহাকাশযানকে চাঁদে প্রেরণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।[৫]

নাসা’র একটি সূত্র অনুযায়ী বলা হয়, কোন সন্দেহ নেই যে তিনি (ফন ব্রাউন) রকেট বিজ্ঞানের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী।[৬] তার এ অসম্ভব রাজকীয় প্রচেষ্টার ফলে স্যাটার্ন-৫ বুস্টার রকেটের সাহায্যে ভূমি থেকে চাঁদে প্রথম নভোচারী প্রেরণে সহায়তা করেছিল ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে।[১][৭]

মর্যাদা

১৯৫৫ সালে দশ বছর বসবাসের পর তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালে জাতীয় বিজ্ঞান পদক লাভ করেন।

তথ্যসূত্র

পাদটীকা

Piszkiewicz, Dennis. Wernher Von Braun: The Man Who Sold the Moon. Westport, CT: Praeger, 1998. Print.

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

– Photos of Wernher von Braun's gravesite

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ