রোবের্তো মানচিনি
রোবের্তো মানচিনি (ইতালীয়: Roberto Mancini, ইতালীয় উচ্চারণ: [roˈbɛrto manˈtʃiːni]; জন্ম: ২৭ নভেম্বর ১৯৬৪) হলেন একজন ইতালীয় সাবেক পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার। তিনি বর্তমানে ইতালি জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। মানচিনি তার খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকাংশ সময় সাম্পদোরিয়া এবং লাৎসিয়োর হয়ে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন। তিনি মূলত দ্বিতীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেললেও মাঝেমধ্যে আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | |||
---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | রোবের্তো মানচিনি[১] | ||
জন্ম | [২] | ২৭ নভেম্বর ১৯৬৪||
জন্ম স্থান | ইয়েসি, ইতালি | ||
উচ্চতা | ১.৭৯ মিটার (৫ ফুট ১০+১⁄২ ইঞ্চি)[৩] | ||
মাঠে অবস্থান | আক্রমণভাগের খেলোয়াড় | ||
ক্লাবের তথ্য | |||
বর্তমান দল | ইতালি (ম্যানেজার) | ||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | |||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) |
১৯৮১–১৯৮২ | বোলোনিয়া | ৩০ | (৯) |
১৯৮২–১৯৯৭ | সাম্পদোরিয়া | ৪২৪ | (১৩২) |
১৯৯৭–২০০১ | লাৎসিয়ো | ৮৭ | (১৫) |
২০০১ | → লেস্টার সিটি (ধার) | ৪ | (০) |
মোট | ৫৪৫ | (১৫৬) | |
জাতীয় দল | |||
১৯৮২–১৯৮৬ | ইতালি অনূর্ধ্ব-২১ | ২৬ | (৯) |
১৯৮৪–১৯৯৪ | ইতালি | ৩৬ | (৪) |
পরিচালিত দল | |||
২০০১–২০০২ | ফিওরেন্তিনা | ||
২০০২–২০০৪ | লাৎসিয়ো | ||
২০০৪–২০০৮ | ইন্টার মিলান | ||
২০০৯–২০১৩ | ম্যানচেস্টার সিটি | ||
২০১৩–২০১৪ | গালাতাসারায় | ||
২০১৪–২০১৬ | ইন্টার মিলান | ||
২০১৭–২০১৮ | জিনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ | ||
২০১৮– | ইতালি | ||
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে |
১৯৮১–৮২ মৌসুমে, ইতালীয় ক্লাব বোলোনিয়ার হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন, যেখানে তিনি মাত্র ১ মৌসুম অতিবাহিত করেছিলেন; বোলোনিয়ার হয়ে তিনি ৩০ ম্যাচে ৯টি গোল করেছিলেন। অতঃপর ১৯৮২–৮৩ মৌসুমে তিনি সাম্পদোরিয়ায় যোগদান করেছিলেন, সাম্পদোরিয়া হয়ে তিনি ভুয়াদিন বশকভের অধীনে ১৯৯০–৯১ সেরিয়ে আ-এর শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন। সাম্পদোরিয়ায় ১৫ মৌসুম অতিবাহিত করার পর লাৎসিয়োর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে তিনি সকল প্রতিযোগিতায় ১৩৬ ম্যাচে ২৫টি গোল করেছিলেন। সর্বশেষ ২০০০–০১ মৌসুমে, তিনি ধারে লাৎসিয়ো হতে ইংরেজ ক্লাব লেস্টার সিটিতে যোগদান করেছিলেন; লেস্টার সিটির হয়ে মাত্র ১ মৌসুম খেলার পর তিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
১৯৮২ সালে, মানচিনি ইতালি অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে ইতালির বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন। ইতালির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলার পর, তিনি ১৯৮৪ সালে ইতালির হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন; ইতালির জার্সি গায়ে তিনি সর্বমোট ৩৬ ম্যাচে ৪টি গোল করেছিলেন। তিনি ইতালির হয়ে সর্বমোট ১টি ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৯০) এবং ১টি উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে (১৯৮৮) অংশগ্রহণ করেছিলেন, যার মধ্যে ১৯৯০ সালে আজেলিয়ো ভিচিনির অধীনে ফিফা বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন।
খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর ২০০১ সালে, মানচিনি ইতালীয় ফুটবল ক্লাব ফিওরেন্তিনার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে ম্যানেজার হিসেবে ফুটবল জগতে অভিষেক করেন। ফিওরেন্তিনার হয়ে প্রায় ২ মৌসুম ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি সেরিয়ে আ-এর ক্লাব লাৎসিয়োয় ম্যানেজার হিসেবে পুনরায় যোগদান করেন; লাৎসিয়োর হয়ে তিনি ১টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন। ২০০৪–০৫ মৌসুমে, তিনি ইন্টার মিলানের ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন; যেখানে তিনি ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘ সময় (প্রায় ৪ মৌসুম) অতিবাহিত করেছেন। অতঃপর তিনি প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি গালাতাসারায়, ইন্টার মিলান এবং জিনিত সেন্ট পিটার্সবার্গের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালের ১৫ই মে তারিখে লুইজি দি বিয়াজো বরখাস্ত হওয়ার পর, তিনি ইতালি জাতীয় দলের ম্যানেজারের পদে নিযুক্ত হয়েছেন।[৪][৫][৬]
ব্যক্তিগতভাবে, মানচিনি বেশ কিছু পুরস্কার জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ২ মৌসুম গুয়েরিন দরো এবং ২০১৭ সালে ফুটবল কিংবদন্তি হিসেবে গোল্ডেন ফুট অর্জন অন্যতম। দলগতভাবে, খেলোয়াড় হিসেবে মানচিনি সর্বমোট ১৩টি শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন, যার মধ্যে ৭টি সাম্পদোরিয়ার হয়ে এবং ৬টি লাৎসিয়োর হয়ে জয়লাভ করেছিলেন। অন্যদিকে, ম্যানেজার হিসেবে, এপর্যন্ত ১৩টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে শুধুমাত্র ইন্টার মিলানের হয়েই ৭টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
রোবের্তো মানচিনি ১৯৬৪ সালের ২৭শে নভেম্বর তারিখে ইতালির ইয়েসিতে জন্মগ্রহণ করেছেন,[৭] তবে তিনি শৈশবেই রোক্কাদাস্পিদেতে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন এবং আলদো ও মারিয়ান্না মানচিনির কাছে তার শৈশব অতিবাহিত করেছেন। তার স্তেফানি নামে একজন ছোট বোন রয়েছে। তিনি যৌবনে বেদী বালক হিসেবে কাজ করেছিলেন।[৮]
আন্তর্জাতিক ফুটবল
মানচিনি ইতালি অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে ইতালির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৮২ সালের ৬ই অক্টোবর তারিখে তিনি অস্ট্রিয়া অনূর্ধ্ব-২১ দলের বিরুদ্ধে ম্যাচে ইতালি অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন।[৯] ইতালি অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে তিনি ১৯৮৪ উয়েফা ইউরোপীয় অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তবে তার দল উক্ত প্রতিযোগিতায় সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিল; উক্ত প্রতিযোগিতায় তিনি ৪ ম্যাচে ১টি গোল করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি একই দলের হয়ে ১৯৮৬ উয়েফা ইউরোপীয় অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছেছিলেন, ফাইনালে তার দল স্পেন অনূর্ধ্ব-২১ দলের কাছে পরাজিত হয়েছিল।[১০] ইতালির বয়সভিত্তিক দলের হয়ে তিনি প্রায় ৪ বছরে ২৬ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ৯টি গোল করেছিলেন।
১৯৮৪ সালের ২৬শে মে তারিখে, মাত্র ১৯ বছর ৫ মাস ২৯ দিন বয়সে, ডান পায়ে ফুটবল খেলায় পারদর্শী মানচিনি কানাডার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইতালির হয়ে অভিষেক করেছিলেন।[১১] ম্যাচটি ইতালি ২–০ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। ইতালির হয়ে অভিষেকের বছরে মানচিনি সর্বমোট ২ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের ৪ বছর ১৫ দিন পর, ইতালির জার্সি গায়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন; ১৯৮৮ সালের ১০ই জুন তারিখে, জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম গোলটি করার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রথম গোলটি করেছিলেন।[১২][১৩]
মানচিনি ইতালিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য আজেলিয়ো ভিচিনির অধীনে ঘোষিত ইতালি দলে স্থান পাওয়ার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।[১৪][১৫] তিনি উক্ত বিশ্বকাপের ইতালি দলে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও একটি ম্যাচেও অংশগ্রহণ করেননি।[১৬]
১৯৯৪ সালের ২২শে মার্চ তারিখে মানচিনি ২৯ বছর বয়সে ইতালির হয়ে তার সর্বশেষ ম্যাচটি খেলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। জার্মানির স্টুটগার্টের মার্সিডিজ বেঞ্জ এরিনায় অনুষ্ঠিত জার্মানির বিরুদ্ধে উক্ত ম্যাচে ইতালি ২–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল, ম্যাচটিতে তিনি ৪৫ মিনিট খেলেছিলেন।[১৭][১৮] আন্তর্জাতিক ফুটবলে, তার ১০ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি সর্বমোট ৩৬ ম্যাচে ৪টি গোল করেছিলেন।
পরিসংখ্যান
আন্তর্জাতিক
দল | সাল | ম্যাচ | গোল |
---|---|---|---|
ইতালি | ১৯৮৪ | ২ | ০ |
১৯৮৬ | ১ | ০ | |
১৯৮৭ | ৬ | ০ | |
১৯৮৮ | ৯ | ১ | |
১৯৮৯ | ১ | ০ | |
১৯৯০ | ৩ | ০ | |
১৯৯১ | ৬ | ০ | |
১৯৯২ | ১ | ০ | |
১৯৯৩ | ৬ | ৩ | |
১৯৯৪ | ১ | ০ | |
সর্বমোট | ৩৬ | ৪ |
আন্তর্জাতিক গোল
গোল | তারিখ | মাঠ | প্রতিপক্ষ | স্কোর | ফলাফল | প্রতিযোগিতা | সূত্র |
---|---|---|---|---|---|---|---|
১ | ১২ জুন ১৯৮৮ | রাইনস্টাডিয়ন, ডুসেলডর্ফ, পশ্চিম জার্মানি | জার্মানি | ১–০ | ১–১ | উয়েফা ইউরো ১৯৮৮ | [১৯] |
২ | ২৪ মার্চ ১৯৯৩ | রেনৎসো বারবেরা স্টেডিয়াম, পালেরমো, ইতালি | মাল্টা | ৪–০ | ৬–১ | ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব | [২০] |
৩ | ৬–১ | ||||||
৪ | ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ | কাদ্রিওরু স্টেডিয়াম, তাল্লিন, এস্তোনিয়া | এস্তোনিয়া | ২–০ | ৩–০ | [২১] |
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- রোবের্তো মানচিনি – ফিফা প্রতিযোগিতার রেকর্ড (ইংরেজি)
- রোবের্তো মানচিনি – উয়েফা প্রতিযোগিতার রেকর্ড (আর্কাইভ) (ইংরেজি)
- সকারবেসে রোবের্তো মানচিনি (ইংরেজি)
- বিডিফুটবলে রোবের্তো মানচিনি (ইংরেজি)
- ট্রান্সফারমার্কেটে রোবের্তো মানচিনি (ইংরেজি)
- ওয়ার্ল্ডফুটবল.নেটে রোবের্তো মানচিনি (ইংরেজি)
- ন্যাশনাল-ফুটবল-টিমস.কমে রোবের্তো মানচিনি (ইংরেজি)