লিওন ত্রোত্‌স্কি

লিওন ত্রোৎস্কি (রুশ: Лев Давидович Троцкий, ইউক্রেনীয় ভাষায়: Лев Давидович Троцький; ৭ই নভেম্বর ১৮৭৯ – ২১শে আগস্ট ১৯৪০) ছিলেন একজন মার্কসবাদী বিপ্লবী, তাত্ত্বিক, রাজনীতিবিদ এবং রুশ বিপ্লবের অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি লেনিনের ভাবশিষ্য ছিলেন। লাল ফৌজ গঠনে তার উদ্যোগ ছিল স্মরণীয়। জোসেফ স্তালিনের সাথে মতবিরোধের কারণে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পালিয়ে লাতিন আমেরিকায় অভিবাসন গ্রহণ করেন এবং সেখানেই ৬০ বৎসর বয়সে তার মৃত্যু হয়।

লিওন ত্রোৎস্কি
Лев Давидович Троцкий
Лев Давидович Троцький
সামরিক জনআধিকারিক
কাজের মেয়াদ
13 March 1918 – 15 January 1925
ডেপুটিEphraim Sklyansky
পূর্বসূরীNikolai Podvoisky
উত্তরসূরীMikhail Frunze
বৈদেশিক জনাধিকারিক
কাজের মেয়াদ
8 November 1917 – 13 March 1918
ডেপুটিGeorgy Chicherin
পূর্বসূরীMikhail Tereshchenko
উত্তরসূরীGeorgy Chicherin
President of the Petrograd Soviet
কাজের মেয়াদ
8 October 1917 – 8 November 1917
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মলেভ দাভিদোভিচ ত্রোৎস্কি
(১৮৭৯-১১-০৭)৭ নভেম্বর ১৮৭৯
Kherson, রুশ সাম্রাজ্য
মৃত্যু২১ আগস্ট ১৯৪০(1940-08-21) (বয়স ৬০)
Coyoacán, DF, México
নাগরিকত্বসোভিয়েত ইউনিয়ন
রাজনৈতিক দলRSDLP, SDPS, Communist Party of the Soviet Union, Left Opposition, IV International
দাম্পত্য সঙ্গীAleksandra Sokolovskaya, Natalia Sedova
জীবিকাStatesman, editor
ধর্মনেই
স্বাক্ষর

রুশ সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (আরএসএফএসআর) এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম দিনগুলিতে, তিনি প্রথমে পিপলস কমিশনার ফর ফরেন্স এ্যাফারেন্স এবং পরে লাল ফৌজ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপরে সামরিক ও নৌ বিষয়ক কমিশনার হন। তিনি রাশিয়ান গৃহযুদ্ধের সময় (১৯১–১৯২২) বলশেভিক পার্টির হয়ে যুদ্ধ করেন ও প্রধান নেতৃত্বের ভুমিকা রাখেন।[১]

জীবনী

ত্রোত্‌স্কির জন্ম ১৮৭৯ সালের ৭ নভেম্বর (মতান্তরে ২৬ অক্টোবর)। জন্মের সময় নাম ছিল লিয়েভ দাভিদেভিচ ব্রোনষ্টেইন। বাবার নাম দাভিদ ব্রোনষ্টাইন; মায়ের নাম আন্না ব্রোনষ্টাইন। ট্রটস্কির বাবা পোলটাভাতে (Poltava) বাস করতেন এবং পরে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকেরা হওয়ায় পরে বেরেসলাভকায় (Bereslavka) চলে যান।সেই অঞ্চলে বাস করত বিশাল ইহুদি সম্প্রদায়।[২][৩]

১৮৮৭ সালে ওডেসা হাই স্কুলে পড়েন। ১৮৯৬ সালে নিকোলায়েভের স্কুলে যান। এইসময় ১৮৯৭ সালে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন।[৪] সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে যাওয়ার পথে আলেক্সান্দ্রা সেকোল্ভস্কায়া নামে এক সহযাত্রী যুবতীকে।[৫]এই দম্পতির দুই কন্যাসন্তান হয়। দু বছর নির্বাসনে থাকার পর তিনি পালাতে সক্ষম হন এবং ১৯০২ সালে লন্ডন গমন করেন।[৬] এইসময় ত্রোত্‌স্কি নাম ধারণ করেন। রুশ মজুর গণতন্ত্রী দলের সদস্য হন। এই সময় লেনিনের সাথে পরিচিত হন। ইস্ক্রা পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯০৩ সালে নাতালিয়া সেডোভা নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন। এই দাম্পত্য জীবনে লেভ ও সেরগেই নামে দুই পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। ১৯০৫ সালে আবার রাশিয়ায় ফিরে আসেন। ১৯০৫ সালের সশস্ত্র অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের অপরাধে পুনরায় গ্রেফতার ও কারাবাস। ১৯০৭ সালের বিচারে সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দণ্ড। নির্বাসন থেকে পালিয়ে তিনি ভিয়েনায় গমন করেন। ১৯১২-১৩ সাল অবধি বল্কান যুদ্ধে সাংবাদিকতা করেন। ১৯১৭ সালে সাফল্য আসে রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। কিন্তু গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। জারমানীর সাথে বিশ্বযুদ্ধকালীন সন্ধি করেন। ১৯১৯ সালে পলিটব্যুরোর সদস্য হন। ১৯২০ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হলেও স্ট্যালিনের সাথে বিরোধ শুরু হয়। ১৯২১ সালে বিবাদ বেড়ে যায়। ১৯২২ সালে লেনিন অসুস্থ হলে ত্রোত্‌স্কি বিপাকে পড়েন। জিনোভিয়েভ ও লেভ কামিনেভ অন্যদিকে বিরোধিতা করেন। ১৯২৩ সালে লেনিন মারা যান। স্ট্যালিন বিদ্রোহের অভিযোগ আনেন। ১৯২৮ সালে সমস্ত ত্রোত্‌স্কিপন্থীরা বহিস্কৃত হন। ত্রোত্‌স্কিও তুরস্কে আশ্রয় নেন। ১৯৩৩ সালে ফ্রান্সে যান। ১৯৩৫ সালে নরওয়েতে যান কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হন।[৭] এরপর মেক্সিকোতে আশ্রয় নেন। ত্রোত্‌স্কি ১৯৪০ সালের ২০ আগস্ট রামো্ন মারকাডার নামে এক আততায়ীর হাতে নিহত হন।[৮]

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড

তিনি রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের গোড়ার দিকে মেনশেভিক পার্টি করতেন; প্রতিক্রিয়া ও নতুন বিপ্লবী জোয়ারের সময় 'নির্দলীয়তার' ভেক নেন। যদিও আসলে লিকুইডেটরদের মতাবলম্বন করেন। ১৯১২ সালে পার্টি বিরোধী 'আগস্ট জোটের' সংগঠক ছিলেন।১৯১৭ সালে রুশ সোশ্যাল-ডেমোক্রাটিস শ্রমিক পার্টির ৬ষ্ঠ কংগ্রেসে বলশেভিক পার্টিতে গৃহীত হন।[৯]

অক্টোবর বিপ্লবের পর একাধিক দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত থাকেন তিনি। কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব্যুরো ও কমিণ্টার্ণের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। লিওন ত্রোত্‌স্কি লেনিনবাদের বিরুদ্ধে গোপনে ও প্রকাশ্য লড়াই চালান। ১৯১৮ সালে ব্রেস্ত শান্তি চুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ান। ১৯২০ থেকে ১৯২১ সালে ট্রড ইউনিয়ন বিতর্কের সময় বিরোধী দলের নেতৃত্ব করেন। ১৯২২ সালের শেষের দিকে লেনিনবাদের বিরুদ্ধে জোট বাঁধেন।[১০]

১৯২৩ সাল থেকে পার্টির সাধারণ নীতি ও সমাজতন্ত্র নির্মানের উপদলীয় সংগ্রাম চালান। কমিউনিস্ট পার্টির পেটি বুর্জোয়া বিচ্যুতি হিসাবে ত্রোত্‌স্কিপন্থার মুখোশ ফাঁস হয়। ১৯২৭ সালে তিনি পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯২৯ সালে সোভিয়েত বিরোধী ক্রিয়াকলাপের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে নির্বাসিত হন। ১৯৩২ সালে সোভিয়েত নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। লেনিনবাদের প্রচন্ড শত্রু হিসাবে বিদেশ থেকে সোভিয়েত রাষ্ট্র ও কমিউনিস্ট পার্টি ও আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যান।[১১]

নির্বাসন

১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রোত্‌স্কিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে তুরস্কে নির্বাসনে দেওয়া হয়। তুরস্কে প্রথম দুই মাসের ট্রটস্কি সেখানে তাঁর স্ত্রী এবং বড় ছেলের সাথে থাকতেন; প্রথমে ইস্তাম্বুলে সোভিয়েত ইউনিয়ন কনসুলেট এবং তারপরে শহরের কাছের একটি হোটেলে।১৯২৯ সালের এপ্রিলে ট্রটস্কি, তাঁর স্ত্রী এবং পুত্রকে তুর্কি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বায়কাদা (Büyükada) দ্বীপে স্থানান্তরিত করা হয়। তাদের ইয়ানারোস মেনশন নামে একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল,যেখানে ট্রটস্কি এবং তাঁর স্ত্রী ১৯৩৩ সালের জুলাই পর্যন্ত ছিলেন।[১২] তুরস্কে নির্বাসনের সময় ট্রটস্কি মোস্তফা কামাল পাশার তুর্কি পুলিশ বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন।[১৩]

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ