সংকেতবিজ্ঞান

সঙ্কেত, প্রতীক, চিহ্ন ও এগুলির উৎপাদন, ব্যবস্থা ও অর্থ অনুধাবন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞান

সংকেতবিজ্ঞান (ইংরেজি: Semiotics) হল সংকেত সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্র। সংকেতবিজ্ঞানে সংকেতের বাহ্যিক রূপ ও অন্তর্নিহিত অর্থের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়, বিশেষ করে ভাষাবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে। একটি সংকেত দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত – বাহ্যিক রূপ বা দ্যোতক (signifier) ও অন্তর্নিহিত অর্থ বা দ্যোতিত (signified)। যেমন ভাষাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দ্যোতক হল কোন ধ্বনিসমষ্টি বা চিত্র, যেমন “কুকুর” একটি ধ্বনিত শব্দ বা লিখিত শব্দ। অন্যদিকে দ্যোতিত হল কুকুরের ধারণা, অর্থাৎ একটি বিশেষ ধরনের চারপেয়ে প্রভুভক্ত রক্ষক প্রাণী। এই দুইটি উপাদান একত্রে মিলে সংকেত তৈরি করেছে।

পাশ্চাত্য দর্শনে সংকেতের উপর চিন্তাভাবনার ইতিহাস দীর্ঘ। তবে ২০শ শতকে এসে এ সংক্রান্ত গবেষণা বিকাশ লাভ করে, যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয় সংকেতবিজ্ঞান। সংকেতবিজ্ঞানের ইংরেজি পরিভাষা হল সেমিওটিক্‌স; মার্কিন দার্শনিক চার্লস স্যান্ডার্স পিয়ার্স পরিভাষাটি সর্বপ্রথম প্রয়োগ করেন। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডীয় ভাষাবিজ্ঞানী ফের্দিনঁ দ্য সোস্যুর “সেমিওলজি” নামের সমার্থক একটি পরিভাষা ব্যবহার করেন। পিয়ার্স ও সোস্যুরকে সংকেতবিজ্ঞানের দুই প্রধান প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়।

সংকেতবিজ্ঞানে পিয়ার্সের গবেষণা ছিল যুক্তিবিজ্ঞান ও প্রয়োগবাদভিত্তিক। পিয়ার্স মনে করতেন যে সংকেতবিজ্ঞান হল স্বয়ং যুক্তিবিজ্ঞানের ভিত্তি। তিনি যুক্তিবিজ্ঞানকে “সংকেতসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ বিধিসমূহের বিজ্ঞান” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন। পিয়ার্সের দ্যোতক, দ্যোতিত ও বাস্তব বিশ্বে নির্দেশিত বস্তুর মধ্যকার সম্পর্কগুলির প্রকৃতি অনুযায়ী সমস্ত সংকেত শ্রেণীবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালান। সংকেতবিজ্ঞানে পিয়ার্সের দুইটি প্রধান অবদান আছে। প্রথম অবদানটি হল সংকেতের শ্রেণীবদ্ধকরণ। পিয়ার্স সমস্ত সংকেতকে তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করেন। এগুলি হল ১) প্রতিমূর্তি (আইকন), যা নির্দেশিত বস্তুর সদৃশ হয় অর্থাৎ তার মত দেখতে হয়। ২) সূচক (ইনডেক্স), যা নির্দেশিত বস্তুর সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়। এবং ৩) প্রতীক (সিম্বল), যা নির্দেশিত বস্তুর সাথে কেবল প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সম্পর্কযুক্ত হয়, যেমন কোনও ভাষার শব্দসমূহ। অবশ্য ধ্বন্যাত্মক/নামসর্জী শব্দগুলি (onomatopoeic words) এবং চীনা ভাষার ভাবচিত্রাক্ষরগুলি/ভাবলিপি (ideogram) এর ব্যতিক্রম। পিয়ার্সের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান এই যে তিনি প্রমাণ করেন যে একটি সংকেতের কখনোই সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকতে পারে না, কেননা অর্থকে অবিরাম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

সোস্যুর মূলত ভাষাবিজ্ঞানে আগ্রহী ছিলেন, তাই তিনি শুধুমাত্র ভাষিক সংকেত নিয়ে কাজ করেন। তিনি ভাষার বিভিন্ন দিককে পৃথককারী একটি শ্রেণীকরণমূলক তন্ত্র বা ব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টা চালান। সোস্যুরকে সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হল ‘’কুর দ্য লাঁগ্যুইস্তিক জেনেরাল’’ (১৯১৬ Cours de linguistique générale; "সাধারণ ভাষাবিজ্ঞানের পাঠ")। সোস্যুরের সাঙ্কেততাত্ত্বিক বিশ্লেষণগুলিতে বিপরীত জোড় নিয়ে কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়। প্রথমত, ভাষাবৈজ্ঞানিক গবেষণা কালান্তরী বা ঐতিহাসিক ও এককালিক – এই দুই ধরনের হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভাষাকে হয় লগস/বাগ্(logos) বা পারল/কথা(parole), এই দুইয়ের যেকোনও একটি হিসেবে গণ্য করা যায়। বাগ্/logos হল কোনও একটি ভাষার আর্থিক ও বাক্যতাত্ত্বিক নিয়ম বা সূত্রগুলির সাধারণ সমষ্টি। আর কথা/পারল হল বাস্তবজীবনে ব্যক্তিবিশেষের ব্যবহৃত ভাষা। তৃতীয়ত ভাষিক সংকেত দ্যোতক ও দ্যোতিত – এই দুইয়ের সমন্বয়ে গঠিত; এদের মধ্যকার সম্পর্ক যাদৃচ্ছিক।

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ