সমকামী মহিলা

মানব যৌনাচার

সমকামী মহিলা বা লেসবিয়ান মূলত একজন ব্যক্তিকে বোঝায়, যে অন্য নারীর প্রতি ভালবাসা অথবা যৌন আকর্ষণ অনুভব করে।[৩][৪] এটি মানব যৌনাচারের একটি যৌন অভিমুখিতা। মহিলা সমকামী অথবা সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তির বিশেষণ হিসেবে লেসবিয়ান শব্দটি ব্যবহার করা হয়।[৪][৫] নারী সমকামী সাহিত্য পশ্চিমা সাহিত্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা।

"লেসবিয়ান" শব্দটি সাধারণত সেই সব নারীর পরিচয় প্রকাশ করে যারা অন্য আরেকটি নারীর প্রতি আসক্ত, অন্য নারীর প্রতি যৌন আকর্ষণ অথবা ভালোবাসা অনুভব করে , যৌন কর্মকাণ্ড করে। (সাইমন সলোমনের আঁকা মিটিলিনে একটি বাগানে স্যাপ্পো ও এরিন্না)
সমকামী নারীর প্রতীক হিসাবে ভেনাস চিহ্ন ব্যবহার করা হয়ে থাকে[১][২]

বিশ শতকে নারীদের যৌন অভিমুখিতা পর্যালোচনা করার সময় লেসবিয়ান বা মহিলা সমকামের ধারণা পাওয়া যায়। ইতিহাস জুড়ে দেখা যায়, নারীদের পুরুষদের মতো একই তালে সমকামী সম্পর্ক রাখার স্বাধীনতা ছিল না। কিন্তু তাদেরকে পুরুষদের মতো নির্মম শাস্তিও ভোগ করতে হত না। সমকামে লিপ্ত নারী যদি তৎকালীন সমাজে পুরুষের মত সুযোগসুবিধা দাবী না করতো তাহলে বরং নারীর সমকামকে খুব একটা দোষ দেওয়া হত না। সেজন্য, নারীর সমকামিতা নিয়ে স্পষ্টভাবে খুব কম তথ্য ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যখন যৌন বিশেষজ্ঞরা সমকামীসুলভ ব্যবহারগুলিকে বিষয় অনুযায়ী ভাগ ক'রে বর্ণনা দিতে শুরু করলেন, তারা মহিলা সমকামীদের সাধারণ নারীদের থেকে আলাদা ধরনের দেখালেন। তারা জানালেন যে মহিলা সমকামীরা নারীসুলভ আচরণ করে না, নারীর ভূমিকাও পালন করে না। তারা মহিলা সমকামীদের মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে প্রতিপন্ন করলেন এবং এই ধারণার বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বেব্যাপী বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিবর্তন ঘটে।

ইউরোপ এবং আমেরিকার সমকামী মহিলারা এই বিভেদের কারণে নিজেদের পরিচয় ও ব্যক্তিগত জীবন লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেন অথবা সমাজচ্যুত হিসেবে নিজেদের একটা আলাদা সত্তা নিয়েই বাঁচতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে অর্থাৎ অবদমিত সামাজিক অবস্থায় যখন সরকার প্রত্যক্ষভাবে সমকামীদের ওপর নির্যাতন চালায় তখন তৎকালীন নারীরা যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের দ্বারা নিজেদের উন্নতি ও শিক্ষার জন্য একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। এই অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতাই তাদের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী পরিবার গড়ে তোলার ও সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। নারীবাদের দ্বিতীয় উত্থান এবং "নারীর ইতিহাস ও যৌনতা" বিষয়ে পড়াশোনা ও বৃত্তির হার বৃদ্ধির সঙ্গেই 'লেসবিয়ান' তথা 'মহিলা সমকামী'-র বর্ণনা ক্রমাগত উন্মুক্ত হয়ে ওঠে এমনকি শব্দটি ব্যবহারের যুক্তিতে তর্কের সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে লিসা.এম.ডায়মন্ডের (Lisa M. Diamond) গবেষণা মহিলা সমকামীদের মূল বর্ণনা হিসেবে তাদের যৌন আকর্ষণকেই প্রাধান্য দেয়।[৬] যেসব মহিলারা সমকামে লিপ্ত তাদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের সমকামী বা উভকামী হিসেবে পরিচয় দেয় না। আবার বাকিদের সমকামী হিসেবে নিজের পরিচয় তাদের যৌন আচারের সাথে শ্রেণীবদ্ধ না-ও হতে পারে। অর্থাৎ সমকামিতার প্রতি ঘৃণা বহন করে চলা সমাজে নিজের সত্তাকে প্রকাশ করার ভয় থেকেই কারোর যৌন পরিচয় ও তার যৌনতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বা যৌন আচারের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকতে পারে।

প্রচারমাধ্যম অনুযায়ী মহিলা সমকামীদের বর্ণনায় এটাই বোধগম্য যে সমাজের বেশিরভাগই সেসব মহিলাদের প্রতি একটা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে যারা নারীত্বের প্রতি, নারীর সামাজিক সহজাত ভূমিকার প্রতি উল্টোধারার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আবার দুই নারীর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ঘিরে এরা হতবাক ও মুগ্ধ হয়। যেসব মহিলারা নিজেদের সমকামী পরিচয়কে আপন করে নিয়েছে তারা এমনকিছু অভিজ্ঞতা ভাগ করেছে যেখানে তাদের সমকামিতার প্রতি ঘৃণার কারণে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং বাকিদের থেকে বৈষম্য ও নানাবিধ কার্যক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। মহিলা হিসেবে তারা বহু উদ্বেগ ও চিন্তার মুখোমুখি হয়েছে যা পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা। বৈষম্য, পক্ষপাত ও সংখ্যালঘু হওয়ার জন্য মহিলা সমকামীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চিন্তা ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন জায়গার রাজনৈতিক অবস্থা এবং সমাজের ধারণা তথা ব্যবহারও মহিলা সমকামীদের খোলামেলা সম্পর্কস্থাপন ও তাদের পরিবার গঠনকে ব্যাপকভাবে প্ররোচিত করে।

শব্দটির উৎপত্তি এবং পরিবর্তন

লেসবসের কবি সাপ্পো। ছবিটি এঁকেছেন জন উইলিয়াম গডওয়ার্ড ১৯০৪ সালে। মূলত এখান থেকেই লেসবিয়ান শব্দটির উৎপত্তি।

সমকামী মহিলার ইংরেজি পরিভাষা লেসবিয়ান। এই শব্দটি এসেছে একটি গ্রীক দ্বীপ থেকে। সেই দ্বীপটির নাম ছিল লেসবস। এখানে খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ সনে বসবাস করতেন একজন কবি যার নাম ছিল সাপ্পো।[৩] বহু লেখনী থেকে ঐতিহাসিকরা জানতে পেরেছিলেন যে, কবি সাপ্পোর কাছে কিছু মেয়ে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন স্বার্থে বা শিক্ষার কারণে কিছুদিন অবস্থান করেছিল। [৭] কবি সাপ্পোর খুব একটা লেখা খুঁজে পাওয়া যায় নি। তবুও যা পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে তিনি সবসময় মহিলাদের দৈনন্দিন জীবন, তাদের সম্পর্ক, অভ্যাস, আচার ইত্যাদি নিয়ে লিখেছিলেন। তিনি মূলত একজন নারীর সৌন্দর্য নিয়ে লিখতেন এবং বালিকাদের প্রতি ভালোবাসাও ছিল তার সাহিত্যকর্মের বিষয়বস্তু।[৮] উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত লেসবিয়ান শব্দটি দ্বারা এই লেসবস দ্বীপ সম্পর্কিত কিছু বোঝানো হতো, আবার এক বিশেষ ধরনের ওয়াইনের নামও ছিল লেসবস।[ক]

১৮৬৬ সালে, আলজেরনন চার্লস সোয়াইনবার্নের লেখা 'সাপফিক্স' নামের একটি কবিতাতে 'লেসবিয়ান' শব্দটি দুইবার ব্যবহার করা হয়েছিল এবং তা লেসবস দ্বীপটির নাম দুইবার ব্যবহার করার পরেই। অর্থাৎ তিনি মূলত এই লেসবিয়ান শব্দটি দ্বারা বোঝাতে চেয়েছিলেন "লেসবস দ্বীপ থেকে"।[১০] ১৮৭৫ সালে, জর্জ সেইন্টবুরি তাঁর বডেলেয়ারস্ কবিতাসমগ্রে দুটি কবিতা উল্লেখ করেছিলেন। একটি কবিতার নাম ছিল "দ্যা প্যাশন অব ডেলফিন" যেটিতে তিনি দুটি নারীর মধ্যে ভালোবাসাকেই ফুটিয়ে তুলেছিলেন এবং এটিতে লেসবস দ্বীপ সম্পর্কিত কোন তথ্য ছিল না। আরেকটি কবিতার নাম ছিল "লেসবস" যেখানে তিনি দ্বীপের উল্লেখ করেছেন। [১১] ১৮৭০ সালে প্রথম 'লেসবিয়ানিজম' শব্দটি দ্বারা একজন নারীর প্রতি আরেক নারীর যৌনাকাঙ্খার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল।[১২] ১৮৯০ সালে 'লেসবিয়ান' শব্দটি মহিলাদের মধ্যে ভালোবাসার সমার্থে বিশেষণ হিসেবে ডাক্তারি অভিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীকালে বিংশ শতাব্দীতে সাপফিস্ট, সাপফিজম এই শব্দগুলোর পরিবর্তে লেসবিয়ান, ইনভার্ট এবং হোমোসেক্সুয়াল এই শব্দগুলোর প্রচলন শুরু হল।[১২] ১৯২৫ সালে মেডিকেলের একটি টার্ম হিসেবে এই শব্দটি স্পষ্টভাবেই ব্যবহৃত হতে থাকে, এটাকে 'সডোমাইট' অর্থাৎ পায়ুকামী শব্দটির বিশেষ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।[১২][১৩]

মেডিকেলের সংজ্ঞায় যখন থেকে লেসবিয়ান শব্দটি ব্যবহার হওয়া শুরু হল তখন থেকে এটি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মেডিকেল বা চিকিৎসাবিষয়ক লেখকরা সমকামিতার ব্যাপারটি নিয়ে মূলত পুরুষের সমকামিতার বিষয়ে আরেকটু গভীরভাবে লিখতে চেয়েছিলেন এবং একটি যথার্থ শব্দ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এই ব্যাপারটি বহু পশ্চিমা দেশগুলিতে সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করেছিল এবং তারা এই যৌনতা নিয়ে লেখালেখিকে সাধারণভাবে মেনে নিতে চায়নি। জার্মান যৌন বিশেষজ্ঞ ম্যাগনাস হার্স্ফিল্ড এই সমকামিতার ব্যাপারটাকে "বিপরীতমুখিতা" বলে অভিহিত করেছিলেন। আর তিনি একজন স্বাভাবিক নারী বা পুরুষের যৌনতার ব্যাপারটিকে "একজন স্বাভাবিক যৌনাকাঙ্খী পুরুষ" এবং "স্বাভাবিক যৌনাকাঙ্খী নারী" বলে উল্লেখ করেছিলেন।[১৪]

নারীর সমকামীতা নিয়ে শিল্প-সাহিত্যে বেশি নিদর্শন পাওয়া যায়। অন্যদিকে পুরুষের সমকামিতার ব্যাপারটি খুব একটা দেখা যায় নি যেহেতু সমকামিতাকে মেডিক্যাল জগতে খুব একটা সমস্যা বলে ধরা হয়নি। তবে এই সমকামীতা নিয়ে কিছু যৌন বিশেষজ্ঞরা নিজেদের মত প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যে জার্মানির রিচার্ড ভন ক্রাফট এবিং ও ব্রিটেনের হেভলক এলিস প্রথমদিকে মহিলাদের সমকামীতা নিয়ে নিজেদের মত ব্যক্ত করেছিলেন। এলিস বলেছিলেন সমকামিতা হচ্ছে এক ধরনের রোগ বা অসুখ যদিও বর্তমানে সমকামিতাকে রোগ হিসেবে ধরা হয় না।[১৫] অন্যদিকে ক্রাফট-এবিং বলেছিলেন সমকামিতা হচ্ছে এক ধরনের মানসিক সমস্যা। অন্যদিকে এলিস যিনি কিনা ক্রাফট-এবিংয়ের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন সমকামিতা সারা জীবন স্থায়ী অবস্থা নয়। এলিসের মতে, বহু নারীর অন্য নারীর প্রতি ভালোবাসা শেষ হয়ে যাবে যদি তারা পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং স্বাভাবিক জীবনমুখী হন।[১৬]

তবে এলিস এটিও বিশ্বাস করতেন, কিছু কিছু নারী সত্যিকার অর্থে 'ইনভার্ট' অর্থাৎ এরা জীবনভর অন্য নারীর যৌন সংশয়ে কাটিয়ে দেয়। এদেরকে তিনি তৃতীয় লিঙ্গের সাথে তুলনা করেছিলেন যারা নিজেদের নারীসুলভ ভূমিকা অগ্রাহ্য করে।[১৭] 'ইনভার্ট' বলতে বিপরীত লিঙ্গের ভূমিকা বোঝায় এবং শব্দটি পুরুষের পরিবর্তে নারীর প্রতি আকর্ষণের সাথেও যুক্ত। যেহেতু ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকেই মনে করা হত নারীরা রতিক্রিয়া শুরু করতে অপারগ তাই যেসমস্ত নারীরা অন্য নারীর সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতো তাদের মধ্যে পুরুষালি কামোত্তেজনা আছে বলেই বিশ্বাস করা হত।[১৮]

ক্রাফট এবং এলিসের লেখাগুলো বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হওয়ার পর এবং চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার পর মানুষ এই ব্যাপারটি নিয়ে সচেতন হতে শুরু করে।[খ] এরপর বিশ্বের যৌন বিশেষজ্ঞরা দাবী করে সমকামীরা আসলে কারো দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সমকামী হয় না, এটা আসলে তাদের মধ্যে জন্মগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য। এটা কোন অপরাধ হিসেবেও দেখা উচিত না। নিজদের অনুভূতি প্রকাশ করার যথার্থ উপায় না থাকায়, সমকামীরা বাকিদের থেকে আলাদা হিসেবে নিজেদের স্বীকার করে নেয় এবং নিজেদের বেআইনি পরিচয়ের কারণে প্যারিস ও বার্লিনে নিজেদের সমকামী সমাজ গড়ে তোলে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সমকামী সমাজ গড়ে ওঠে এবং মহিলা সমকামীরা সমাজের মূলস্রোত থেকে আলাদা একটা দল হিসেবে পরিচিতি পায়। [২১]

পশ্চিমা দেশগুলোতে সমকামী নারীরা নিজেদেরকে সমকামী হিসেবে বলতেই পছন্দ করেন এবং তাদের বিভিন্ন ক্লাব বা সংঘ থাকে যেখানে সবাই একই নীতি বা একই ধারণায় বিশ্বাসী।[২২] ইতিহাস অনুযায়ী বিভিন্ন সভ্যতায় নারীরা একে অপরের সাথে এই ধরনের সম্পর্কে জড়িয়েছিল কিন্তু কখনোই যৌন আকাঙ্ক্ষাকে ভিত্তি ক'রে তাদের আলাদা কোন পরিচয় ছিল না বা তারা নিজেদেরকে স্বাধীনভাবে সমকামী বলতে পারতেন না। যেহেতু পশ্চিমা সভ্যতায় মহিলাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংখ্যালঘু হিসেবে ধরা হত সেহেতু মেডিক্যাল জগতে সমকামের অবস্থানই সমকামীদের সমাজের ভিন্নধারার পরিচয়টিকে ক্ষেত্রব্যাপী করে তুলেছিল।[২৩]

যৌনতা এবং সমকামী নারীর পরিচয়

সমকামী নারীদের প্রতীক। এখানে দেখা যাচ্ছে দুটো মুখওয়ালা একটি কুড়াল। পেছনে কালো রঙ এর ত্রিভুজ। আর সবার পেছনে বেগুনি রঙ। এই কুড়ালটি দ্বারা সমকামী নারীদের শক্তিকে বোঝানো হয়।[২৪]
২০১০ সালের লিপস্টিক লেসবিয়ান পতাকাকে কিছুটা পরিবর্তন করে এই পতাকা বানানো হয়েছে[২৫][২৬]
২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমকামী নারীদের প্রকাশ করা পতাকা বা চিহ্ন। এখানে কমলা রঙ এর লম্বা দাগটি দ্বারা লিঙ্গ বৈচিত্র্যতাকে প্রকাশ করা হয়েছে।[২৭][২৮]

দুটো নারীর মধ্যে যৌন সম্পর্ক থাকলেই তাকে সমকামিতা বা তাদের সমকামী হিসেবে পরিচয় দেওয়া যথার্থ কিনা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। নারীবাদী লেখিকা নাওমি মাইকেল করমিক মনে করেন, একজন নারীর যৌনতা নির্ধারণ করে দেয় পুরুষরা যার প্রাথমিক কারণ হলো পুরুষদের মতোই একজন সমকামী নারী আরেকজন নারীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়। আবার একইরকমভাবে পুরুষের প্রতি আকর্ষিত নারীকে তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করার প্রয়োজন হয় না। তবে, করমিক মনে করেন দুইজন নারীর মাঝে সহবাস বা যৌনাঙ্গের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল তাদের দুজনের মনের মিলন, দৃষ্টিভঙ্গির মিল ও মানসিক টান।[২৯] একজন সমকারী নারীর যৌনাকাঙ্খা আছে নাকি নেই এটা নিয়ে নারীবাদীদের মধ্যেই দুটো দল হয়ে যায় যেখানে প্রাচীনপন্থী নারীবাদীরা সমকামী মহিলাদের দৈহিক কামনাকে অস্বীকার করে। ১৯৮০ এর দশকে এই বিতর্ক প্রকট আকার ধারণ করে। এই বিতর্ককে সংজ্ঞায়িত করা হয় নারীবাদী যৌন যুদ্ধ (feminist sex wars) নামে।[৩০] এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে বাচ ও ফেমি নিয়ম নিয়ে আসা হয় যদিও ১৯৫০ এর দশকের মতো কড়াভাবে নয়। ১৯৯০ এর দশকে এটা যৌনাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করার ঐচ্ছিক মাধ্যম হয়ে ওঠে। পুনরায় বলা ভালো যে, সমকামী নারীরা নিজেদের যৌনকাঙ্খা আছে বলে দাবী করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে থাকে এবং যৌনতার ক্ষেত্রে পরিবর্তনও ক্রমেই গ্রহণযোগ্যতা পায়।[৩১]

সমকামী নারীদের যৌনতা নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল সেটা আরো বড় আকার ধারণ করে যৌন বিশেষজ্ঞ পেপার শোয়ার্টজের ১৯৮৩ সালের একটি বিশেষ সংজ্ঞায়। সেখানে তিনি বলেন, বহুদিন ধরে সম্পর্কে আবদ্ধ সমকামী নারীরা সাধারণ নারী-পুরুষ বা সমকামী পুরুষদের তুলনায় কম সহবাস করেন অর্থাৎ সমকামী নারীরা কম সহবাসে লিপ্ত হন এবং এটাকে তিনি 'লেসবিয়ান বেড ডেথ' বলেন অর্থাৎ সমকামী নারীদের সহবাসের অচলাবস্থা। তবে সমকামী নারীরা এই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা বলে দুজন নারী যখন একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয় তখন তাদের মধ্যে মনের মিলটাই মুখ্য হয়ে ওঠে যেখানে শারীরিক আকর্ষণ ততটা গুরুত্ব পায় না। তারা আরও জানায় যে, নারীদের মধ্যে অতিরিক্ত যৌন অস্থিরতাই তাদের সাধারণ বিপরীতকামী থেকে উভকামী এবং ক্রমে সমকামীতে পরিণত করে অথবা যৌনাকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পরিচয়ের এই বিভেদকে অগ্রাহ্য করতে বাধ্য করে। পরবর্তীকালে আরও গবেষণার দ্বারা অনুমান করা যায় যে পেপারের সংজ্ঞা এবং তথ্যটিতে ভুল আছে এবং সেটিতে সমকামী নারীদের যৌন সম্পর্ককে ভুলভাবে প্রকাশ দেখানো হয়েছে অথবা হয়ত ১৯৮৩ এর পর থেকেই সমকামী নারীদের মধ্যে সহবাস আগের থেকে তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে (যেহেতু তারা নিজেদের যৌনতাকে মুক্তভাবে মেলে ধরতে শুরু করে)।[৩২]

লিঙ্গ এবং যৌনতা ঘিরে তৈরি হওয়া পরিচয়ের ওপর অধিকমাত্রায় আলোচনার প্রভাব পড়ে সেসব মহিলাদের সংখ্যার ওপর যারা নিজস্ব সত্তাকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ও যৌনাকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিজেকে একটি দলে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতী। পশ্চিমা সভ্যতায় বেশিরভাগ মানুষকেই এই শিক্ষা দেওয়া হয় যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণই সকল মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। যখন একজন মহিলা অপর আরেক মহিলার প্রতি যৌনতা ও ভালোবাসার আকর্ষণ অনুভব করে তখন তার মনে নিজের পরিচয় ঘিরে অস্তিত্ব সংকটের দেখা দেয়। অনেকেই যারা এই সমস্যার সম্মুখীন হয় তারা ক্রমেই সমকামী মহিলার পরিচয়কে আপন করে নেয়। সমকামীদের প্রতি সমাজের বিরূপ চিন্তাধারাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা সমকামীদের ভিন্নধারার জগতে চলার পথে অগ্রসর হয়।[৩৩] পশ্চিমা সমাজের সমকামী মহিলারা এমন এক পরিচয় বহন করে যা অনেকাংশে একটি জাতিগত পরিচয়ের মতো। দুই ক্ষেত্রেই একইরকম ইতিহাস ও সমাজ থেকে ভিন্ন ভাবধারা কাজ করে এবং দুই ক্ষেত্রেই ভেদাভেদের স্পষ্ট অভিজ্ঞতা দেখা যায়। এর ফলে বহু সমকামী মহিলারা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ মূলক ভাবধারা ও নৈতিকতাকে প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। তাদের এই পরিচয় সমকামী পুরুষ ও বিপরীতকামী মহিলাদের থেকে আলাদা এবং এই পরিচয় উভকামী মহিলাদেরও উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।[২২] সমকামী মহিলা যারা পুরুষের সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে এবং যারা কোনদিন পুরুষের সাথে সহবাস করেনি, ওই দুইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও পার্থক্য হলো বিতর্কের অন্যতম বিষয়বস্তু যেক্ষেত্রে দ্বিতীয় দলের নারীদের "গোল্ডস্টার লেসবিয়ান" বলা হয়। যারা বহু পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে তারা অন্য সমকামী নারীদের কটাক্ষের সম্মুখীন হতে পারে অথবা তাদের 'সমকামী' পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের উত্থান হতে পারে। [৩৪]

সমাজবিজ্ঞানী সহ আরো গবেষকরা বলেন যে, প্রায়শই ব্যবহার ও পরিচয় মেলে না: মহিলারা তাদের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট বলে দাবী করতে পারে কিন্তু নারীর সাথে যৌন সম্পর্কও রাখতে পারে আবার নিজের কাছে 'সমকামী' পরিচয় দেওয়া মহিলারা পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে অথবা এমনও হতে পারে যে কোন মহিলা নিজেকে সমকামী ভেবেছিল কিন্তু তা সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। [৫][৩৫] লিসা এম. ডায়মন্ডের গবেষণায় জানা যায় যে, "সমকামী ও যৌনতা অভিমুখী মহিলারা যৌন আচারের ক্ষেত্রে উভকামী মহিলাদের তুলনায় অধিক স্বতন্ত্র ছিল" এবং এটাও বলা হয় যে, "সমকামী মহিলারা নির্দিষ্টভাবে একই লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে"। এতে প্রমাণ হয় যে সমকামী মহিলারাই সমকামকে সুচারুভাবে ফুটিয়ে তোলে।

২০০১ সালের এক সংজ্ঞায় ডাক্তারি পড়াশোনা ও পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য মহিলা সমকামীদের তিনটি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি ক'রে চিহ্নিত করা হয়। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য হলো তাদের পরিচয়, তাদের ব্যবহার এবং পরিচয় ও ব্যবহার উভয় একসাথে। অবশ্য এই সংজ্ঞাটিতে তাদের যৌন আকর্ষণের বিষয়টি যোগ করা হয়নি যেহেতু স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে তার কোন বিশেষ যোগসাজশ নেই।[৩৬]ভবিষ্যতে আরও গবেষণায় বলা হয়েছে যে, 'লেসবিয়ান' শব্দটির কোন যথার্থ সংজ্ঞা নেই কারণ এই শব্দটি দিয়ে তিন ধরনের নারীদের বোঝানো হয়। প্রথমত যারা অন্য নারীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়ত নির্দিষ্টভাবেই অথবা পুরুষের সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, দ্বিতীয়ত যারা নিজেদের 'লেসবিয়ান' অর্থাৎ সমকামী মহিলা বলে দাবী করে এবং তৃতীয়ত যে মহিলারা যৌনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেয়। 'লেসবিয়ান' শব্দের এই যথার্থ সংজ্ঞার অভাব ও সমাজের বহু প্রশ্ন থাকার ফলেই সমকামী মহিলাদের সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে কোথায় এবং কীভাবে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে সেটাও এই সম্বন্ধীয় গবেষণাগুলির ওপর যথেষ্ট প্রভাব রাখে। [৫]

পশ্চিমা সমাজে নারীর পরিচয়বিহীন সমকামিতা

সাধারণ বিষয়

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে 'লেসবিয়ান' শব্দটির নানবিধ অর্থ ছিল। ফলে কিছু ঐতিহাসিক শব্দটি উত্থানের ও তার সাথে যৌনতা জুড়ে দেওয়ার প্রাক্কালে মহিলাদের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল তা পুনরায় ঘেঁটে দেখতে বাধ্য হন। ঐতিহাসিকদের আলোচনার ফলে নারীর কোন সম্পর্ককে সমকামের আখ্যা দেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। নারীবাদী মহিলা সমকামীদের মতে, যদি কেউ প্রথম থেকেই নারীসঙ্গে থাকে তবে তাকে মহিলা সমকামী হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য যৌনতার দৃষ্টিভঙ্গি আবশ্যিক নয়। ইতিহাসে এমন সম্পর্কগুলোকে নিয়ে গবেষণা ও আলোচনার ফলে জানা যায়, এমন সময়ও ছিল যখন ভালোবাসা ও যৌনতাকে আলাদা করা হত এবং দুটি ভিন্ন বিষয় হিসেবে পরিচিত ছিল।[৩৭] ১৮৮৯ সালে "লেসবিয়ান হিস্ট্রি গ্রুপ" থেকে লেখা হয়,

"যেহেতু সমাজ মহিলা সমকামীদের সরাসরিভাবে মান্যতা দেয় না সেহেতু ঐতিহাসিক বা জীবনীবিদদের 'সমকামী' শব্দটি ব্যবহারের পূর্বে পারিপার্শ্বিক নিশ্চয়তা ও সম্মতির প্রয়োজন। যদি অন্যধারার কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া :যায় তবে তা যথেষ্ট হবে না। যে নারী কোনদিন বিয়ে করেনি, যে নারী অন্য নারীর সাথে থেকেছে, যার বেশিরভাগ বন্ধুই নারী বা যে সমকামী বলে পরিচিত দলে ভিড়েছে সে হয়ত নিজেও সমকামী। তবে এই ধরনের সাক্ষ্যকে :প্রমাণ বলে ধরে নেওয়া যাবে না। আমাদের সমালোচকরা মহিলাদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত যৌনতার প্রমাণ পেতে চায়, যেটা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।"[৩৮]

নানান লেখার মধ্যে মহিলাদের যৌনতাকে যথেচ্ছভাবে বর্ণনা করা হয় না। বর্তমান সময়ের আগে পর্যন্ত মহিলাদের যৌনতা সম্বন্ধীয় যত লেখা আছে তা বেশিরভাগই পুরুষদের লেখা। খুব স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তা লেখা হয়েছে যার মধ্যে পুরুষের স্ত্রী, কন্যা, মা, ইত্যাদি নারীর পরিচয়গুলো স্পষ্ট ছাপ রেখেছে।[৩৯] যেমন প্রায়ই শিল্পকলায় নারীর যৌনতা-প্রকাশ স্বাধীন ও বৃহত্তর চিন্তার পরিচয় দেয় বলেই ঐতিহাসিকরা মনে করেন। এর থেকে জানা যায় মহিলাদের সমকামিতা ক্ষেত্রব্যাপী ছিল ও তাকে মান্যতাও দেওয়া হত।

প্রাচীন গ্রীস ও রোম

প্রাচীন গ্রীসে মহিলাদের প্রত্যেককে বিচ্ছিন্নভাবে ধরা হত এবং পুরুষদেরও একইরকমভাবে আলাদা করা হত। এইরকম সমকামী পরিবেশে, পুরুষদের মধ্যে প্রেমের ও যৌনতার সম্পর্ক খুবই সাধারণ ছিল এবং সাহিত্য, শিল্পকলা ও দর্শনেও সেভাবেই তার পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে গ্রীক মহিলাদের মধ্যে সমকামিতার খুব বেশি নজির পাওয়া যায়নি। মহিলা তথা মেয়েদের মধ্যে এমন সম্পর্ক ছিল বলেই বহুমত প্রচলিত আছে। এল্কম্যান নামক কবি একদা 'এটিস' (aitis) শব্দটি ব্যবহার করেন যা 'এটেস' (aites) শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। এই 'এটেস' শব্দটি মূলত একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাথে কমবয়সী একটি ছেলের সম্পর্ককে বোঝায়।[৪০] প্লেটোর "সিম্পোসিয়াম"-এ এরিস্টোফেনস্ বলেন যে, নারীরা আরেক নারীর প্রতি প্রেমাসক্ত হয়েও 'এরোস' (eros) শব্দের পরিবর্তে 'ট্রেপেস্থাই' (trepesthai) শব্দটি ব্যবহার করে। এই 'ট্রেপেস্থাই' (trepesthai) শব্দটি মূলত পুরুষের সাথে আরেক পুরুষ বা নারীর সম্পর্ককে বোঝাত।[৪১]

ঐতিহাসিক ন্যান্সি রাবিনোউইজ বলেন যে, প্রাচীন গ্রীসের 'রেড ভাস' ছবিগুলিকে (যেটায় দেখা যায় এক মহিলার কোমর আরেক মহিলার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ বা তাদের কাঁধে ঝুঁকে পড়েছে) প্রেমের আকর্ষণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।[৪২] প্রাচীন গ্রীসে মহিলাদের দৈনন্দিন জীবনের বেশিরভাগই অজানা এবং মূলত তাদের যৌনতার বহিঃপ্রকাশ। পুরুষরা অন্য পুরুষের সাথে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে আবদ্ধ হত কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকাকালীন এমন ঘটনা নজিরবিহীন বলা চলে। গ্রীক মৃৎশিল্পে মহিলাদের মূলত ভালোবাসার নজরে দেখানো হয়েছে এবং যেসব ক্ষেত্রে নারীদের শুধুমাত্র অন্য নারীর সাথে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তাকে কিঞ্চিৎ যৌনতার আকার দেওয়া হয়েছে যেমন তাদের স্নানের ছবি, একে অপরকে স্পর্শের ছবি, যৌন খেলনাযুক্ত (ডিলডো) ছবি, ইত্যাদি। মাঝেমাঝে বিপরীতকামী বিয়ে অথবা পুরুষের সমকামও এধরনের চিত্রণে ফুটে ওঠে। শিল্পে যৌনতার এই উপস্থিতি দর্শকের জন্য নাকি সেটা বাস্তব জীবনের চিত্রায়ণ, তা জানা যায়নি।[৪৩][৪৪] রাবিনোউইজ লেখেন, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঐতিহাসিক তথা গ্রীক স্টাডিজ বিশেষজ্ঞরা মহিলাদের সামাজিক অবস্থানের কারণেই তাদের দৈনন্দিন জীবনে যৌনতা সম্পর্কে কোনরকম আগ্রহ রাখেননি।[৪৫]

প্রাচীন রোমেও মহিলাদের যৌনতাকে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিচার করা হয়। আধুনিক যুগের বিজ্ঞানীরা জানান যে, পুরুষেরা নারীর সমকামিতাকে বিরোধী হিসেবেই দেখত। তারা ভাবত যে মহিলারা অন্য মহিলাদের সাথে যৌন সম্পর্কে আবদ্ধ হয় তারা জৈবিক অর্থে একে অপরের পরিপূরক হয় না। ফলে নারীর যোনি যেন কখনো মহিলা ও কখনো পুরুষকে দৈত্যাকার ধারণ করে গিলতে চায়।[৪৬] বিদ্বান জেমস্ বুট্রিকার মতে, নারীর সমকামিতা রোমান পুরুষদের নিজেদের একমাত্র 'যৌনাকাঙ্ক্ষা প্রশমনকারী' হিসেবে ভাবনার অবসান ঘটায় এবং রোমের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সাধারণ একটি ভিত্তির ওপর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। যদিও রোমের ইতিহাসে নারীর যৌনসঙ্গী হিসেবে অন্য নারীর উপস্থিতি লেখ্যাকারে পাওয়া যায়নি।[৪৭]

প্রথমদিকের আধুনিক ইউরোপ

১৬৯০ সালের খোদাইয়ে পাওয়া এই নিদর্শনের মতোই, রেঁনেসার সময়ে লেসবিয়ানিজম এবং হার্মাপ্রোডাইটিজমকে একই ধরনের ব্যাপার মনে করা হতো।

ইতিহাস জুড়ে দেখা যায় যে, পুরুষের সমকামিতা ধর্মীয় ও অসামাজিক বিভিন্ন দলের নেতিবাচক কটাক্ষের শিকার হয়েছিল কিন্তু নারীর সমকামিতা সেই ধরনের চূড়ান্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। ইংল্যান্ডে পুরুষের সমকামিতা বা পুরুষ-পুরুষ অথবা পুরুষ-মহিলার মধ্যে পায়ুকাম এবং পুরুষ ও পশুদের মধ্যে রতিক্রিয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। মহিলাদের মধ্যে যৌনসংসর্গের প্রমাণ মেডিক্যাল বা আইনি কোনরকম পুঁথিতে পাওয়া যায়নি। মহিলাদের সমকামিতা-বিরোধী প্রথম আইন ১২৭০ সালে ফ্রান্সে উপস্থাপন করা হয়।[৪৮] স্পেন, ইতালি এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে মহিলাদের মধ্যে পায়ুকামকে অদ্ভুত এবং অপ্রাকৃতিক মনে করা হত। এর শাস্তি হিসেবে পুড়িয়ে মেরে ফেলার বিধান ছিল যদিও এইধরনের ঘটনার দৃষ্টান্ত খুবই কম।[৪৯]

এই ঘটনা সংক্রান্ত প্রথম মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ১৪৭৭ সালে জার্মানির স্পিয়ারে। দুই সন্ন্যাসিনী (নান) যারা একে অপরের সাথে যৌনক্রিয়া করেছিল ও একে অপরের স্তন ছুঁয়েছিল তাদের ৪০ দিনের দণ্ডভোগ দাবী করা হয়। বেনেডেটা কার্লিনি নামক এক ইতালিয়ান সন্ন্যাসিনী 'স্প্লেনডিটেলো' নামের আধ্যাত্মিক আখ্যা পাওয়ার পর থেকে তার বোনেদের অনেককে তার সাথে যৌনতায় প্রলুব্ধ করেছিলেন, এমন লিখিত তথ্য পাওয়া যায়। অন্যান্য মহিলাদের সাথে তার সম্পর্ক শেষ করার জন্য তাকে একা জীবনের শেষ ৪০ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হয়। যদিও মহিলাদের সমকামিতার যৌনাকাঙ্ক্ষা ইংরেজি সাহিত্যে ও থিয়েটারে খুবই সাধারণ বিষয় ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, রেনেসাঁসকালীন এই বিষয়টির ভালোই চল ছিল।[৫০]

নারীর যৌনতার ধারণাকে তার দেহতত্ত্বের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। যোনিকে অন্তর্মুখী পুরুষ লিঙ্গের মতো ধরে নেওয়া হত যেখানে প্রকৃতি পরিপূর্ণভাবে নারীর মধ্যে এক পুরুষকেই সৃষ্টি করেছে এবং হয়ত নারীর যোনিকে পুরুষের লিঙ্গের ন্যায় বৈশিষ্ট্য দান করেছে।[৫১] লিঙ্গের এই পরিবর্তনগুলিকে পরবর্তীকালে উভলিঙ্গের পর্যায়ে ধরে নেওয়া হয় এবং নারীর সমকাম উভলিঙ্গের সমার্থ হয়ে যায়। মেডিক্যাল অনুযায়ী, উভলিঙ্গ হওয়া নির্ভর করতো যোনির দু'পাশে থাকা 'ক্লিটোরিস'-এর দৈর্ঘ্যের ওপর এবং তা স্ফীত হলে সেটার দ্বারা অন্য নারীর যোনিতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে যৌনাকাঙ্ক্ষা প্রশমন করা হত বলে মনে করা হত। যৌনতার ক্ষেত্রে যোনিপথে অনুপ্রবেশকেই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবা হত। স্ফীত 'ক্লিটোরিস' থাকার কারণে যে মহিলার যৌনাকাঙ্ক্ষা মাত্রাতিরিক্ত তাকে 'ট্রিবেড' বলা হত অর্থাৎ যে হস্তমৈথুন করে। অস্বাভাবিকভাবে স্ফীত 'ক্লিটোরিস' থেকে শুধু যে হস্তমৈথুন করার মতো অতিরিক্ত কামোত্তেজনার সৃষ্টি হত, এই ভাবনা শুধু ভাবনা হিসেবে সীমিত থাকেনি। বিভিন্ন কাগজ ও ক্ষুদ্র পুস্তিকায় জানানো হয় যে হস্তমৈথুন করলে যৌনাঙ্গের আকার বৃদ্ধি পাবে এবং এটাকে রীতিমত সাবধান বাণী হিসেবে লেখা হত। কিছুকাল যাবৎ হস্তমৈথুন ও সমকামী নারীদের মিলন একই অর্থ বহন করতো।[৫২]

নারীদের উভলিঙ্গ-বৈশিষ্ট্য ধীরে ধীরে শ্রেণী অনুযায়ী তাদের পার্থক্য করে। 'ট্রিবেড'দের নীচু শ্রেণী বলে ভাবা হত যারা পবিত্র নারীদের নষ্ট করে এবং এদের উচ্চশ্রেণীর নিয়ম ও নৈতিকতা নষ্টের প্রতীক বলে ধরা হত। ব্যঙ্গাত্মক অর্থে বহু লেখক বলেন যে, রাজনৈতিকভাবে বিরোধীরা (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তির স্ত্রীরা) তাদের সম্মানহানির জন্য 'ট্রিবাডিসম্'-এ যুক্ত হন। কুইন অ্যানির সাথে মার্লবোরোর ডিউক-পত্নী সারাহ্ চার্চিলের (তার সবচেয়ে কাছের উপদেষ্টা) গভীর সম্পর্ক বহুচর্চিত ছিল। যখন চার্চিলকে বহিষ্কার করা হল তখন তিনি ইচ্ছে করেই রানির সাথে তার শয্যাগারের মহিলাদের সম্পর্কের নিন্দা ছড়ান।[৫৩] ১৭৯৫ থেকে ১৭৯৬ এর মাঝে কিছু মাস জুড়ে মেরি অ্যান্টোনেটও এমন সব নিন্দার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন।[৫৪]

মহিলা স্বামী

লিঙ্গভিত্তিক নকল সাজ ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতকে অনেক জনপ্রিয় ছিলো, যেমনটি দেখা যাচ্ছে ফ্রেডরিখ পিকার্সগিলের (১৮৫৯ ) টুয়েলফথ নাইটের ভায়োলা ও অলিভিয়ার এই দৃশ্যে।

মেডিক্যাল জগতের সাহিত্যে "উভলিঙ্গ"-র উল্লেখ হয় যা সাধারণ জ্ঞান হলেও এই ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্ত খুবই কম ছিল। সমকামযুক্ত বস্তুর উল্লেখ সাহিত্যে বিস্তৃত ছিল। অসন্দিগ্ধ কোন মহিলাকে বোকা বানিয়ে যৌনতায় উত্তেজিত করার জন্য একটি লিঙ্গের বিপরীত লিঙ্গের মতো আচরণই ছিল এক্ষেত্রে মূল বিষয়বস্তু। এরকম চিত্রনাট্য শেকসপিয়ারের 'টুয়েলভথ নাইট', এডমান্ড স্পেনসারের 'দ্য ফেয়ারি কুইন' (১৫৯০) এবং জেমস্ শের্লির 'দ্য বার্ড ইন আ কেজ'-এ ব্যবহৃত হয়েছে।[৫৫] যখন মহিলাদের পুরুষালি ব্যক্তিত্ব গ্রহণ করার একটা নবজাগরণ এসেছিল এবং সেই অজানা ব্যক্তিত্ব অসন্দিগ্ধভাবে বছরের পর বছর অজানা অবস্থায় ছিল তখনকার ঘটনাগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়। যদিও এই ঘটনাগুলিকে সমকামী মহিলাদের মতানুযায়ী 'ট্রান্সভেস্টিসম' (রূপান্তরকাম)[৫৬][৫৭] বলা হবে নাকি চলিত সমাজবিদ্যা অনুসারে তৃতীয় লিঙ্গের আখ্যা দেওয়া হবে, তা নিয়ে তর্ক ও মতান্তর থেকেই যায় এবং সেটি অনেকাংশে নির্ভর করে প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্যের ওপর।

যদি এই ঘটনাগুলির জানাজানি হত তাহলে তার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বা কোঠরিতে নির্বাসন বা জীবনে আর কোনদিন পুরুষের মতো পোশাক না পরার বিধান দেওয়া হত। হেনরি ফিল্ডিং ১৭৪৬ সালে 'দ্য ফিমেল হাজবেন্ড' নামে একটি ছোট বই লেখেন যা মেরি হ্যামিলটনের জীবনের ওপর লেখা হয়েছিল। এই মেরি হ্যামিলটনকে পুরুষের বেশে একটি নারীর সাথে বিবাহ করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে ছয়মাসের হাজতবাস সহ জনগণের সম্মুখে চাবুক দিয়ে পেটানোর শাস্তি দেওয়া হয়। একই ধরনের ঘটনার উদাহরণ ১৭১৭ সালে প্রাসিয়ার ক্যাথারিন লিঙ্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়। সুইজারল্যান্ডের অ্যানি গ্র‍্যান্ডজিন (মহিলা) তার স্ত্রী লিওনস্-এর সাথে বিবাহ করেন ও বাসস্থান পরিবর্তন করেন কিন্তু তার সাথে পূর্বে সম্পর্কে জড়িত এক মহিলা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেন। ফলস্বরূপ, অ্যানিকে কারারুদ্ধ হতে হয়।[৫৮]

স্যুইডেনের রানি কুইন ক্রিস্টিনা পুরুষের মতো সাজের প্রবণতা তার সময়ে সর্বজনখ্যাত ছিল কিন্তু তার উচ্চবংশে জন্মের কারণে এটাকে অগ্রাহ্য করা হয়। তাকে পুরুষ হিসেবেই বড়ো ক'রে তোলা হয় এবং তিনি যে উভলিঙ্গ (পুরুষাঙ্গ ও যোনি দুটোর যার বর্তমান), এমন বহুমত ছিল। যদিও বিবাহ করার ইচ্ছে ছিল না বলে ১৬৫৪ সালে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন, পরবর্তীকালে তার নারীদের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সকলেই অবগত ছিল।[৫৯]

কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, মহিলাদের পুরুষদের মতো সাজ অনেকক্ষেত্রেই ক্ষমতা ভোগের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয় কারণ তা মহিলাদের পোশাকে সম্ভবপর ছিল না অথবা তারা যে নারীর প্রতি আসক্ত তা বোঝানোর জন্যই এটা করা হত। লিলিয়ান ফেডেরম্যানের মতে, মহিলাদের এই লিঙ্গভিত্তিক দায় এড়ানোর ফলে পশ্চিমা সমাজের ভিত্তি যথেষ্ট ভীত হয়ে ওঠে। ক্যাথারিন লিঙ্ক ও আরো অনেক মহিলা যাদের ওপর 'ডিলডো' (যৌন-ইচ্ছা প্রশমনকারী খেলনা) ব্যবহারের আরোপ ছিল যেমন ষোড়শ শতাব্দীর দুই সন্ন্যাসিনী (যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়)[৬০][৬১], তাদেরকে অন্যান্যদের তুলনায় আরও নির্মমভাবে শাস্তি দেওয়া হত। ইংল্যান্ডের চেসারে মহিলাদের মধ্যে বিবাহের দুটি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। প্রথমটি ১৭০৭ সালে হানা রাইট ও অ্যানি গাস্কিলের মধ্যে এবং দ্বিতীয়টি ১৭০৮ সালে অ্যানে নর্টন ও অ্যালিস পিকফোর্ডের মধ্যে।[৬২][৬৩] যে পুরুষ যাজকরা এই বিয়ে দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সেভাবে গোঁড়া নৈতিকতা বা নিয়ম মেনে চলার প্রবণতা ছিল না। শুধু বিবাহের একতরফের প্রতি তাদের সন্দেহ নথিভুক্ত হয়, যে নথির আবির্ভাব পরবর্তী শতাব্দীতে হয়।

ইউরোপের বাইরে মহিলারা পুরুষের মতো পোশাক পরতে পারতো ও চেনার ভয়ও ছিল না। ডেবোরা স্যাম্পসন নামক এক মহিলা আমেরিকান নবজাগরণে রবার্ট শার্টলিফ নামে অংশগ্রহণ করে ও লড়াই চালায়। ইতিমধ্যে ইনি মহিলাদের সাথে সম্পর্কও চালিয়ে গেছেন।[৬৪] এডওয়ার্ড ডি লেসি ইভান্স নামে এক মহিলা আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন কিন্তু অস্ট্রেলীয়ায় যাত্রাকালীন পুরুষের নাম গ্রহণ করেন। ২৩ বছর ধরে তিনি ভিক্টোরিয়ায় পুরুষের জীবন কাটান এবং তিনবার বিবাহ করেন। পার্সি রেডউড ১৯০৯ সালে নিউজিল্যান্ডে একটি নিন্দনীয় কাণ্ড ঘটান। ইনি এমি বক নামের পরিচয়ে পোর্ট মলিনক্সের এক মহিলাকে বিয়ে করেন, খবরের কাগজে তর্ক হয় যে এই ঘটনা পাগলামির পরিচয় নাকি চারিত্রিক ত্রুটি।[৬৫]

আবেগপ্রবণ বন্ধুত্বের পুনঃ পর্যালোচনা

নারীদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতাকে সপ্তদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর সময়ে রূচিশীল মনে করা হতো, যদিও জনসমক্ষে যৌনতার বহিঃপ্রকাশ ছিলো বিরল।

সপ্তদশ শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এক নারীর অন্য নারীর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বেশ চলনসই ছিল ও তাকে মান্যতা দিয়ে উৎসাহও দেওয়া হত।[৬৬] এই সম্পর্কগুলোকে আবেগপ্রবণ বন্ধুত্ব, 'বোস্টন ম্যারেজ' (মানসিক বিবাহ), ইত্যাদির নাম দেওয়া হয়েছিল এবং এগুলো আমেরিকা, ইউরোপ ও মূলত ইংল্যান্ডে সাধারণ ব্যাপার ছিল। মহিলাদের মধ্যে চিঠির আদানপ্রদান থেকেই এই ঘটনাগুলি নথিভুক্ত করা সম্ভব। এই সম্পর্কগুলোয় যৌনাঙ্গের উল্লেখ ও ব্যবহার হলেও তাতে সমাজের বিশেষ মাথাব্যথা ছিল না। উল্টে এটা থেকে মহিলাদের মধ্যেকার গভীর ও বিশেষ টানের পরিচয় পাওয়া যায় এবং এই মহিলাদের পবিত্র ও নিষ্পাপ বলেই মনে করা হত। কিন্তু পুরুষের সাথে একই সম্পর্ক কিন্তু মহিলাটির মানসম্মানে আঘাত হানতো। মহিলাদের মধ্যে এই সম্পর্কগুলোর প্রচার ইতিবাচকভাবেই করা হত কারণ এর ফলে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বিবাহ ব্যতীত অন্য একটা পথ হিসেবে এটাকে দেখা হত।[৬৭]

এমনই এক সম্পর্ক ছিল লেডি মেরি ওয়র্টলি মন্টাগুর সাথে তার প্রেমিকা অ্যানি ওয়র্টলির যাকে তিনি লিখেছিলেন : "কেউ পুরোপুরিভাবে বিশ্বাসযোগ্যতার সহিত তোমার হতে পারেনি... আমি তোমার প্রেমিকদের মধ্যেই বাস করি তাই আমি এমনটা কোনদিন সম্ভব হতে দিইনি যে কোন পুরুষ আমার মতোই তোমার প্রতি দায়িত্ববান হোক।" একইরকমভাবে, ইংরেজ কবি অ্যানা সিউয়ার্ড তার ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব সমর্পণ করেছেন এক নারী হনোরা স্নেডের প্রতি যে সিউয়ার্ডের বহু সনেট ও কবিতার বিষয়। যখন সিউয়ার্ডের বিরোধ সত্ত্বেও স্নেড বিয়ে করেন তারপর থেকে সিউয়ার্ডের কবিতাগুলি রাগান্বিত হয়ে ওঠে। যাই হোক, স্নেডকে নিয়ে তার মৃত্যুর পরও সিউয়ার্ড কবিতা লিখে চলেন যার বিষয়বস্তু মূলত স্নেডের সৌন্দর্য, তার প্রতি ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব।[৬৮] একজন যুবতী নারী হিসেবে লেখিকা ও দার্শনিক মেরি ওলস্টোনক্রাফট আরেক মহিলা ফ্যানি ব্লাডের সাথে অন্তরঙ্গ ছিলেন। অন্য আরেক মহিলা যে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার প্রতি ওলস্টোনক্রাফট লেখেন, "ফুল সেইদিন ফুটবে যেদিন বুকে শান্তি আসবে এবং ফ্যানির সাথে দিন কাটানোর ধারণা থেকেই সেই আনন্দ আমি পাই:-তুমি জান না আমি তাকে কতটা ভালোবাসি।"[৬৯]

এই দুই নারীর সম্পর্ককে নিবেদিত এবং মহৎ হিসেবে তারিফ করা হতো; তারা পালিয়ে গিয়ে ওয়েলস ৫১ বছর বসবাস করেছেন।

হয়ত এই প্রেমের বন্ধুত্বগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল এলিনর বাটলার এবং সারা পনসোনবির মধ্যেকার সম্পর্ক যাদের 'লেডিজ অফ লাঙ্গোলেন' নামে ডাকা হত। বাটলার ও পনসোনবি ১৭৭৮ সালে পনসোনবির পরিবার (যারা মূলত তার একটা পুরুষের সাথে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিল)[৭০] থেকে মুক্তি পেতে পালিয়ে যায় এবং ওয়েলসে ৫১ বছর ধরে বাস করে যাদের সবাই অদ্ভুত ভাবতো। তাদের গল্পটাকে পবিত্র প্রেমের বন্ধুত্বের সর্বোচ্চ মাত্রা দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের জীবনীই অ্যানা সিউয়ার্ড ও হেনরি ওয়ার্ডসওয়ার্থ লংফেলোর কবিতাগুলিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।[৭১] বাটলার ও পনসোনবির থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ডায়রিলেখিকা অ্যানি লিস্টার তার সাথে ১৮১৭ থেকে ১৮৪০ অবধি বিভিন্ন মহিলার সম্পর্কের কথা লিপিবদ্ধ করেন। এদের মধ্যে কিছু গুপ্ত কোডে লেখা ছিল যেখানে মারিয়ানা বেলকম্ব ও মারিয়া বার্লোর সাথে তার যৌনসম্পর্কের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য দেওয়া আছে।[৭২] লিস্টার ও এলিনর বাটলার, দুজনকেই প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী পুরুষালি বলে ধরা হয়। যদিও তাদের সম্পর্ক নারীর সমকামিতার সম্পর্ক কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল, তাদেরকে সাহিত্যে সেভাবে প্রশংসিত করা হয়েছে।[৭৩][৭৪]

প্রেমের এই বন্ধুত্বগুলো আমেরিকাতেও খুব জনপ্রিয় ছিল। প্রভাবশালী কবি এমিলি ডিকিনশন ৩০০-র বেশি চিঠি ও কবিতা লেখেন সুজান গিলবার্টকে যে পরবর্তীকালে তার সম্পর্কে বৌদি হয় এবং কেট স্কট অ্যান্থনের সাথে ডিকিনশন আরেক সম্পর্কে জড়ান। অ্যান্থন সেই মাসে এই সম্পর্ক ভাঙে যে মাসে ডিকিনশন নিজেই একাকীত্বের মধ্যে থাকতে শুরু করেন।[৭৫] কানেক্টিকাটের হার্টফোর্ডের কাছে আফ্রিকান-আমেরিকান দুই মহিলা এডি ব্রাউন ও রেবেকা প্রাইমাস তাদের চিঠিতে তাদের প্রেমের স্পষ্ট ছাপ রাখেন: "তোমার মতো চুম্বন আর কোনটাই নয়"।[৭৬] জর্জিয়াতে অ্যালিস বাল্ডি ১৮৭০ সালে জোসি ভার্নারকে লেখেন, "তুমি কি জান যখন তুমি আমাকে স্পর্শ করো বা আমার সাথে কথা বলো তখন আমার শরীরে এমন কোন স্নায়ু নেই যা আনন্দ ও রোমাঞ্চে জেগে ওঠে না?"[৭৭]

বিংশ শতাব্দীর দিকে, উচ্চশিক্ষার উন্নতি ও প্রসার মহিলাদের সুযোগ বৃদ্ধি করে। চারিদিকে মহিলাদের পরিবেশে, প্রেমের একটা দিক মহিলা কলেজগুলিতে বেশ চলতি হয়ে ওঠে। প্রবীণ পড়ুয়ারা নবীনদের পথ দেখাত, তাদের সামাজিকতায় আমন্ত্রণ জানাত, শুধু মহিলাদের নাচগুলি যেখানে হত সেখানে নিয়ে যেত এবং তাদের ফুল, কার্ড ও কবিতা পাঠাত যার মাধ্যমে তারা একে অপরের প্রতি অগাধ ভালোবাসা প্রকাশ করতো।[৭৮] এগুলোকে 'স্ম্যাশেস' বা 'স্পুনস' বলা হত এবং এর ব্যাপারে গল্পগুলো কলেজে উঠতি মেয়েদের জন্য 'লেডিজ হোম জার্নাল' এর মতো প্রকাশনীতে স্পষ্ট লেখা থাকতো। 'সেন্ট নিকোলাস' নামের শিশুদের ম্যাগাজিন এবং 'কালেকশন অফ স্মিথ কলেজ স্টোরিজ'-এও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া এগুলো লেখা হত। এই গল্পগুলোর মূল বিষয় ছিল বিশ্বাস, ভালোবাসা ও ভক্তি এবং চুম্বন ব্যতীত কোনরকম যৌন আচারের উল্লেখ ছিল না।[৭৯]

যেসব মহিলাদের শুধু বিবাহের পরিবর্তে জীবিকা বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল তারা নিজেদের নতুন নারী বলে আখ্যা দিয়েছিল এবং এই সুযোগগুলো খুবই গম্ভীরভাবে ধার্য করেছিল। ফ্যাডারম্যান এই সময়টাকে "দ্য লাস্ট ব্রিদ অফ ইনোসেন্স" অর্থাৎ "নিষ্পাপতার শেষ শ্বাস" বলেন ১৯২০ সালের আগে যখন মহিলাদের প্রেমকে যৌনতার সাথে জুড়ে দেওয়া হত, সমকামী বলে চিহ্নিত করা হত ও সবার থেকে আলাদা একটা দল হিসেবে ভাবা হত।[৮০] মূলত ফ্যাডারম্যান নারীদের এই উত্থান ও স্বাধীনতার শুরুকে ভিক্টোরিয়ান যুগে ধার্য করে দেওয়া লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ব থেকে শুরু করে সমকামকে বিজ্ঞানেও অস্বাভাবিক যৌনক্রিয়া বলে ভাবনাকে অস্বীকার করার সমার্থক হিসেবে দেখেন।[৮১]

পশ্চিমা সমাজে মহিলা সমকামীর পরিচয় এবং লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা

মহিলা সমকামীরর পরিচয় গঠন

১৯২০ এর দশকে বার্লিনের অগ্রগামী লেসবিয়াস কমিউনিটি ডাই ফ্রেউন্ডিন নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত করে ১৯২৪ থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত।

কিছু মহিলা সমকামকে অস্বীকার করে কারণ তারা ভাবে যে যদি তারা এইধরনের যৌনাচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের মহিলা সমকামী বলে মূল সমাজ থেকে আলাদা করে দেখা হবে। যেমন মাউণ্ট হোলিয়ক কলেজে প্রফেসর জেনেট আগস্টাস মার্ক্স যিনি কলেজের প্রেসিডেন্ট মেরি উওলির সাথে ৩৬ বছর ধরে থাকতেন। কিন্তু মার্ক্স যুবতী মেয়েদের অস্বাভাবিক বন্ধুত্বের প্রতি অনুৎসাহিত করেছেন এবং বারবার বলেছেন যে, সুখ শুধুমাত্র পুরুষের সাথে থেকেই পাওয়া সম্ভব।[৮২] যদিও বাকি মহিলারা নিজেদের আলাদা সত্তাকে আপন করে নিয়েছে এবং নিজেদের বিপরীতকামী মহিলা বা সমকামী পুরুষদের থেকে আলাদা বলে গর্ব করেছে।

১৮৯০ এর দশক থেকে ১৯৩০ এর দশক পর্যন্ত, আমেরিকান বংশোদ্ভূত নাটালি ক্লিফোর্ড বার্নি প্যারিসে একটা সাপ্তাহিক বক্তৃতার ব্যবস্থা করেছিলেন যেখানে প্রচুর বিখ্যাত শিল্পীদের আমন্ত্রণ করা হত এবং মূল বিষয়বস্তু ছিল মহিলা সমকামীরা। ফ্রান্সের যৌনাচারের সাথে গ্রীক প্রভাব যুক্ত করে উনি সেই কক্ষে 'লেসবস' এর নতুন ও সংশোধিত রূপের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাঁর সমসাময়িক শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন রোমেন ব্রুকস্ (যিনি এই দলের বাকিদের ছাপিয়ে গেছিলেন), লেখক কোলেট, লেখক জুনা বার্নেস, সমাজকল্যাণে যুক্ত গার্ট্রুড স্টেইন এবং ঔপন্যাসিক র‍্যাডক্লিফ হল্।

হারলেমের বাসিন্দা গ্র্যাডিস বেন্টলি নারীর প্রণয়সংক্রান্ত ব্লুজ গানের জন্য পরিচিত ছিলেন।

১৯২০ এর দশকে বার্লিনের সমাজে একটা রঙিন সমকামিতার চর্চা ছিল এবং প্রায় ৫০টি ক্লাব ছিল মূলত যা মহিলা সমকামীদের জন্যই। 'ডাই ফ্রেন্ডিন' (দ্য গার্লফ্রেন্ড) ম্যাগাজিন যা ১৯২৪ থেকে ১৯৩৩ এর মাঝে প্রকাশিত হত মূলত মহিলা সমকামীদের দিকেই ইঙ্গিত করেছিল। 'গার্কোনে' বা 'ফ্রয়েনলিব' (উইমেন লাভ) আবার মহিলা সমকামী ও পুরুষ রূপান্তরকামীদের নিয়ে চর্চা করে। এই প্রকাশনীগুলো পুরুষদের দ্বারা চালিত হত কারণ এগুলোর মালিক, প্রকাশক এবং লেখক সবাই পুরুষ ছিল। ১৯২৬ এর কাছাকাছি সেলি ইংলার 'ডাই বিফ - ব্লাটার আইডিয়ালার ফ্রয়েনফ্রেন্ডসস্যাফেন' (দ্য বিফ - পেপার্স অন আইডিয়াল উইমেন ফ্রেন্ডশিপস্) নামে প্রকাশনী চালু করেন যা প্রথম মহিলা সমকামী দ্বারা পরিচালিত, প্রকাশিত ও লিখিত প্রকাশনী ছিল। ১৯২৮ সালে সমকামীদের পানশালা ও নাইটক্লাবের গাইড হিসেবে রুথ মার্গারিট রোউলিগের 'বার্লিনস্ লেসবিস ফ্রয়েন' (দ্য লেসবিয়ানস অফ বার্লিন) জার্মানিকে মহিলা সমকামিতার রাজধানী বলে বিখ্যাত করে তোলে।[৮৩] ক্লাবগুলির মধ্যে বড়ো প্রতিষ্ঠানও ছিল যা পরে পর্যটকদের আকর্ষণ হয়ে ওঠে আবার ছোট ক্যাফেও ছিল যেখানে এক মহিলা অন্য মহিলার সাথে দেখা করতে যেত। 'দাস লিলা লায়েড' (দ্য ল্যাভেন্ডার সং) নামক ক্যাবারে গানটি বার্লিনের মহিলা সমকামীদের জাতীয় সংগীত হয়ে ওঠে। যদিও মাঝেমধ্যে সমকামকে সহ্য করা হত, তবুও এটা জার্মানিতে বেআইনি ছিল। কড়া আইনের ফলে কিছু মঞ্জুরিপ্রাপ্ত গণ অবস্থানের মধ্যে থেকে মহিলা সমকামীদের নাম নথিভুক্ত করা সহজ হত যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।[৮৪] ম্যাগনাস হার্সফেল্ডের 'সায়েন্টিফিক হিউম্যানিটারিয়ান কমিটি' জার্মানিতে সমকামীদের প্রতি সহিষ্ণুতার প্রচার করেছিল, মহিলা সমকামীদের যোগদানকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং সমকামিতাকে বিষয়বস্তু ক'রে বহু লেখা এই সময়ে স্পষ্টতর হয়।[৮৫]

১৯২৮ সালে র‍্যাডক্লিফ হল 'দ্য ওয়েল অফ লোনলিনেস' নামের একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন। উপন্যাসটির চিত্রনাট্য মূলত স্টিফেন গর্ডন নামক এক মহিলাকে ঘিরে ছিল যে ক্র‍্যাফট-এবিংয়ের 'সাইকোপ্যাথিয়া সেক্সুয়ালিস' পড়ার পর থেকে নিজেকে সমকামী বলে পরিচয় দেয় এবং প্যারিসের সমকামী পরিবেশে থাকে। এই উপন্যাসটিতে হ্যাভলক এলিসের লেখা ভূমিকা ছিল যা মূলত সমকামীদের অসুবিধাগুলিকে উল্লেখ করে তাদের প্রতি সহিষ্ণুতার প্রচার করে। হল এই দুটি অর্থাৎ এলিস এবং ক্রাফট-এবিংয়ের মতবাদ সমর্থন করেন ও ফ্রয়েডের তত্ত্বকে গ্রহণযোগ্যতা দেন না যেখানে সমকামিতাকে ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া কোন মানসিক দুর্ঘটনার সাথে তুলনা করা হয় ও সারার যোগ্য রোগ বলে বর্ণিত করা হয়। হলের এই উপন্যাসটি আশাতীতভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে কারণ এই উপন্যাসটিকে লন্ডনে নিষিদ্ধের আওতায় আনা হয়। এটিকে প্রফেসর লরা ডোয়ান নিন্দনীয় অর্থে "আধুনিক সমকামী সমাজ গঠনের ঝাঁ চকচকে উদ্যোগ" বলেন।

বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় স্পষ্ট লেখা হয় যে বইটিতে সমকামী নারীদের মধ্যে যৌনতা ও সহবাস সম্বন্ধে লেখা আছে এবং ছয় মাসের মধ্যেই হলের ছবির সাথে সর্বত্র প্রায়ই সমকামী নারীদের বিবরণ জুড়ে দেওয়া হয়। হল ১৯২০ এর দশকে পুরুষালি নারীর প্রতিফলন হয়ে ওঠেন: ছোট করে ছাঁটা চুল, দর্জি দিয়ে বানানো স্যুটপ্যান্ট ও একচোখের চশমা মহিলা সমকামীদের পোশাক হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন যখন ব্রিটিশ মহিলারা যুদ্ধকে সমর্থন করে তখন তারা পুরুষের পোশাকের সাথে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। সেই সময় মহিলাদের পুরুষের মতো ইউনিফর্ম ও প্যান্ট পরাকে দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মহিলাদের পোশাককে পুরুষের মতো হওয়াকে সমকামিতার সাথে সম্পর্কিত করা হত।

১৯২০ এর দশকের সময়টা আমেরিকাতে সমাজ ও সহবাসের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আসে। এটা মূলত সিগমান্ড ফ্রয়েডের লেখনীর ফলে ঘটে যিনি এই তত্ত্ব দেন যে যৌনতার উদ্রেক মানুষের অবচেতন মনে ঘটে এবং মানুষ তা ইচ্ছে থাকলেও এড়িয়ে যেতে পারে না। ফ্রয়েডের তত্ত্ব আমেরিকায় যতটা গ্রহণযোগ্য ছিল ইউরোপে ততটা ছিল না। খ্যাতনামা প্রকাশনীগুলির দ্বারা এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ে যে সমকামিতার সম্পর্কগুলির অন্যতম অংশ ছিল যৌনাচার। যে বড় শহরগুলিতে রাতের আলাদা জীবন ছিল সেগুলি ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং মহিলারা রোমাঞ্চকর যৌনতার কামনা করতে শুরু করে। আমেরিকার প্রথম সমকামী সমাজগুলিতে উভকাম খুব চটকদার হয়ে ওঠে।

সমকামী নৈশজীবনের ক্ষেত্রে অন্য যেকোন জায়গার থেকে এগিয়ে ছিল নিউ ইয়র্কের আফ্রিকান-আমেরিকান মানুষদের অঞ্চল তথা হার্লেম। শ্বেতাঙ্গরা জ্যাজ, নাইটক্লাব ও আরও বহু জিনিসের দ্বারা নিজের ইচ্ছেমত মনোরঞ্জন করতো। ব্লুজ্ (মিউজিকের এক ধারা) গায়িকারা যেমন মা রেইনি, বেসি স্মিথ, ইথেল ওয়াটার্স ও গ্ল্যাডিস বেন্টলি মহিলাদের প্রেম নিয়ে অতিথিদের উদ্দেশ্যে গান পরিবেশন করেন এবং সেই অতিথিদের মধ্যে ছিলেন তালুলা ব্যাঙ্কহেড, বেট্রিশ লিলি এবং জোন ক্রাফোর্ড। সমকামীরা নিজেদের সংখ্যালঘিষ্ঠতাকে আফ্রিকান-আমেরিকানদের সাথে তুলনা করতে শুরু করলো। হার্লেমের আফ্রিকান-আমেরিকান মানুষদের মধ্যে মহিলা সমকামীদের সম্পর্ক সাধারণ ছিল ও তার প্রতি সহিষ্ণুতা বজায় ছিল তবে খুব বেশি মান্যতা দেওয়া হয়নি। কিছু মহিলা ধুমধাম ক'রে অন্য মহিলার সাথে বিবাহ করে এবং নিউ ইয়র্কে পুরুষের নাম ব্যবহার করার লাইসেন্সের জন্য আপিলও করে। যদিও বেশিরভাগ মহিলারা পুরুষের সাথেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিল কিন্তু তারা সমকামেও লিপ্ত ছিল। মহিলাদের সমকামিতার থেকে উভকামকে অধিক মান্যতা দেওয়া হয়।

গ্রিনিচ ভিলেজেও এই সময় সমকামী সমাজ গড়ে ওঠে এবং গ্রিনিচ ও হার্লেমে এই সময় একা পুরুষ ও একা মহিলাকেও ঘর ভাড়া দেওয়া হয় যা সমকামী সমাজের উন্নতির প্রথম ধাপ ছিল। যদিও গ্রিনিচ ভিলেজের ও হার্লেমের ভাড়ার পরিমাণে যথেষ্ট পার্থক্য ছিল। বোহেমিয়ান বুদ্ধিজীবী যারা ভিক্টোরিয়ান যুগের আদর্শগুলিকে অস্বীকার করেছিলেন তারা গ্রিনিচ ভিলেজে ভিড় জমাতে শুরু করেন। সমকামী সমাজে প্রাথমিকভাবে পুরুষই বেশি ছিল যদিও পরবর্তীতে কবি এডনা সেন্ট ভিনসেন্ট মিলে এবং সমাজকল্যাণে যুক্ত ম্যাবেল ডজ নামক মহিলারা তাদের অন্য মহিলাদের সাথে সম্পর্কের জন্য ও সমকামকে প্রচার করার জন্য সর্বজনখ্যাত ছিলেন। আমেরিকার যে মহিলারা হার্লেমে যেতে পারতো না বা গ্রিনিচ ভিলেজে থাকতে পারতো না তারা ১৯২০ এর দশকে প্রথম বেশ্যাদের দ্বারা পরিচালিত সেলুনে পরিষেবা নিতে শুরু করে। যে পানশালাগুলিতে মহিলারা মেলামেশা করতে পারতো সেগুলি বেশ্যাদেরও পরিষেবা দিত এবং ঐতিহাসিক লিলিয়ান ফ্যাডারম্যানের মতে "এই ব্যাপারটা বহু দশক ধরে চলা অন্য আরেক সমাজের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে"।

দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন

মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই সমকামিতাকে প্রক্যাশ্যে উৎসাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভিত্তি ছিল কিন্তু ১৯৩০ এর দশকে তা 'দ্য গ্রেট ডিপ্রেসন'-এর সময় ক্রমে উধাও হয়ে যায়। বেশিরভাগ মহিলাই এক্ষেত্রে সমকামী পুরুষদের বিয়ে করার পথ বেছে নিল যাতে দুজনেই সমকামী সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে। ১৯৩০ এর দশকে স্বাধীন মহিলাদের মূলত এমন জীবিকা বেছে নিতে হয়েছিল যা সাধারণত পুরুষের কাজ।

বড় বড় শহরে সমাজ ছোট দলে বিভক্ত হয়ে যায় যারা পানশালায় মেলামেশা করতে শুরু করে এবং মহিলাদের একঘরে করে রাখা হয়। সমকামিতার কথা উল্লেখ করা সমাজে নিষিদ্ধ ছিল এবং মহিলারা নিজেদের মধ্যেও এই ব্যাপারে আলোচনা করতো না বললেই চলে। তারা সমকামী পুরুষদের 'ইন দ্য লাইফ' বলে উল্লেখ করতেন। ফ্রয়েডের এই মনস্তত্ত্ব ডাক্তারদেরকেও ভাবতে শেখায় যে, মহিলাদের মধ্যে সমকামিতা অপরিপক্ব মহিলাদের মধ্যে স্নায়ুগত মানসিক সমস্যা। ১৯৩৩ সালে নাৎসিবাদের উত্থানের সাথে সাথেই জার্মানিতে সমকামিতার পরিবেশ লুপ্তপ্রায় হয়ে গেল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে কর্মজগতে এবং সামরিক বাহিনীতে নারীদের অভিজ্ঞতা তাদেরকে লেসবিয়ান উপ-সংস্কৃতি তৈরীর ব্যাপারে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সুযোগ করে দিয়েছে।
যেসব নারী নাৎসি আদর্শ পালন করেন নি তাদেরকে অসামাজিক বলে বিবেচিত করা হতো, জেলে পাঠানো হতো এবং কালো ত্রিভূজ দিয়ে তাদের বিশেষায়িত করা হতো। লেসবিয়ানদেরকেও অসামাজিক হিসেবে গণ্য করা হতো।
অনেক লেসবিয়ান গোলাপী ত্রিভূজের চিহ্নটিকে পুনরুজ্জীবিত করে, যদিও নাৎসিরা কেবল সমকামী পুরুষদের বেলায়েই এটির প্রচলন করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে বহু মানুষের জীবনে প্রভাব পড়ে কারণ লক্ষাধিক মানুষ মিলিটারির সাথে যুক্ত ছিল। আমেরিকার 'উইমেন'স আর্মি কর্পস' এবং নেভির 'উইমেন অ্যাক্সেপ্টেড ফর ভলান্টিয়ার এমার্জেন্সি সার্ভিস'-এ মহিলারাও যোগদান করতে পারতেন। আমেরিকান মিলিটারি গঠনের সময় থেকেই সমকামী পুরুষদের চিহ্নিত করার পদ্ধতি ছিল কিন্তু সমকামী নারীদের চিহ্নিত করার কোন উপায় ছিল না তাই তাদেরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভিন্ন স্থানে কাজ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৩০ এর দশকে নারীদের লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা যাই থাকুক না কেন, স্বাধীনচেতা ও পুরুষালি মহিলাদের ১৯৪০ এর দশকে সরাসরিভাবে সামরিক বাহিনীতে যোগদানের জন্য আহ্বান করা হয় এবং দুর্বলতাকে নিন্দা করা হয়।

কিছু মহিলা পুরুষের বেশে যোগদান করতে আসতো, মহিলাদের সাথে সম্পর্কে থাকার কথা অস্বীকার করতো এবং তাদের সহজেই গ্রহণ করা হয়েছিল। যদিও কোনরকম যৌনাচার নিষিদ্ধ ছিল এবং কোন মহিলাকে যদি সমকামী বলে চিহ্নিত করা হত তৎক্ষণাৎ তাকে বহিষ্কার করা হত (একে ব্লু ডিসচার্জ বলে)। মহিলারা যখন একে অপরের সান্নিধ্য পেল তারা ভালোভাবেই সংঘবদ্ধ হল। তারা সার্ভিস ক্লাবগুলিতে মেলামেশা শুরু করলো ও গুপ্ত কোডের মাধ্যমে কথোপকথন চালাতে শুরু করলো। ঐতিহাসিক অ্যালান বেরুব লেখেন যে, সামরিক বাহিনীতে থাকা সমকামীরা সচেতনভাবে বা অবচেতনেই নিজেদের সমকামী বলে অস্বীকার করতো এবং কখনোই একে অপরের যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কথা বলতো না।

সবচেয়ে পুরুষালি মহিলারা খুব একটা সাধারণ ছিল না, যদিও তারা নিজেদের স্পষ্ট করতো যাতে অন্যান্য মহিলা সমকামীরা তাদের চিহ্নিত করতে পারে। তারা অন্য মহিলার প্রতি তাদের আকর্ষণের বিষয়টি নিয়ে খুব সাবধানতার সাথে কথা বলতো এবং মাঝেমাঝে পছন্দের মহিলাকে তা জানানোর জন্য আগে বহুদিন সময় নিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা গভীর বোঝাপড়ার সম্পর্ক স্থাপন করতো। যেসব মহিলারা সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেনি তাদের শিল্পক্ষেত্রে চাকরি নিতে উৎসাহ দেওয়া হত যাতে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মহিলাদের সার্বিক উন্নতি, স্বাধীনতা ও সম্মান বহু মহিলার ক্ষেত্রেই বিয়ে না ক'রে থাকাটা সম্ভব করেছিল। এটা অন্যরকম অর্থনৈতিক অবস্থায় সম্ভব ছিল না, এর ফলে সমকামীদের যোগাযোগ ও উন্নত পরিবেশ গঠন করাও সম্ভবপর হয়।

জার্মানির একটি আইনে (প্যারাগ্রাফ ১৭৫) মহিলাদের সমকাম সম্বন্ধে কোন উল্লেখ ছিল না, এই আইনে পুরুষদের সমকামকে অপরাধের আওতায় আনা হয়। দ্য ইউনাইটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম থেকে জানানো হয় যে এটার কারণ হলো মহিলাদের পুরুষের সমকক্ষ বলে ধরা হয় না এবং নাৎসিবাদ মহিলা সমকামীদের থেকে বেশি পুরুষ সমকামীদেরই ভয় পেত। যাই হোক, এই সংস্থা আরও দাবী করে যে বহু মহিলাকে অসামাজিক ব্যবহারের জন্য গ্রেপ্তার করা হয় ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই মহিলারা নাৎসিবাদ অনুযায়ী নারীর যে চিত্রায়ন করা হয় তার থেকে আলাদা ছিল তাই এই ব্যবস্থা অর্থাৎ রান্না করা, ঘর পরিষ্কার, সন্তান লালনপালন করা, ইত্যাদিকেই এরা জীবন বলে মেনে নেয়নি। এই মহিলাদের একটি কালো ত্রিভুজ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিছু মহিলা সমকামীদের মতে এটা তাদের চিহ্ন ছিল কারণ গোলাপি ত্রিভুজের দ্বারা সমকামী পুরুষদের বোঝানো হত আবার অন্য মহিলা সমকামীদের মতে গোলাপি ত্রিভুজ দিয়ে তাদেরও বোঝানো হত।

যুদ্ধোত্তর সময়কাল

১৯৫৭ সালে প্রকাশিত ম্যাগাজিন দ্য ল্যাডার এর প্রথম সংস্করণ, যা ডাকযোগ পাঠানো হয়েছিলো সান ফ্রান্সিসকোর শত শত নারীকে, যেন তারা তাদের মুখোশ উন্মোচিত করে।

দ্বিতীয় যদ্ধের পরবর্তীকালে আমেরিকা জুড়ে যুদ্ধ-পূর্ববর্তী অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হয়। যখন কমিউনিজম নিয়ে একটা পাগলামির শুরু হয়েছিল তখন ও সিগমান্ড ফ্রয়েডের তত্ত্বকে মেডিক্যাল জগতেও সেভাবে মেনে নেওয়া হয়নি তখন অর্থাৎ ১৯৫০ এর আমেরিকায় কর্মী হিসেবে বহু সংস্থায় সমকামীদের কেউই চায়নি। সমকামীদের খুব সহজের আক্রমণ করা যায় এবং তাই সরকার যখন কর্মচারীর ক্ষেত্রে সমকামীদের পদগুলিকে শুদ্ধিকরণ করার চেষ্টা করে তখন তা কর্মচারীদের ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজ রাখা হিসেবে প্রতিপন্ন হয়। রাজ্য এবং আঞ্চলিক স্তরের সরকার পানশালা ও পার্কে এধরনের মানুষদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে এবং ক্রমেই মহিলা ও পুরুষদের বিপরীত লিঙ্গের মতো পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

আমেরিকার সামরিক বাহিনী ও সরকার প্রচুর খোঁজখবর করতে শুরু করে এবং মহিলাদের প্রশ্ন করা হয় তারা কোনদিন অন্য মহিলার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে কিনা। এক্ষেত্রে কারোর অন্তত একবারও অভিজ্ঞতা থাকলে তাকে অপরাধী হিসেবে দেখা হয়। ১৯৫২ সালে 'আমেরিকান সায়কায়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন'-এর 'ডায়াগনোস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল'-এ সমকামকে মানসিক বিকৃতি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। সমকামিতা যে সারানো যায় এমনই একটা রোগ, এই দৃষ্টিভঙ্গি মেডিক্যাল সমাজ, সাধারণ মানুষ এমনকি বহু মহিলা সমকামী নিজেও বিশ্বাস করতে শুরু করে।

অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে সমকাম থেকে বেরিয়ে আসার পদ্ধতিও সাধারণ মানুষের কাছে পরিসেবা হিসেবে উন্মুক্ত করা হয়। মহিলাদের মধ্যে অশ্লীলতার বিরুদ্ধে 'ইউনাইটেড কিংডম হাউজ অফ কমনস'-এ ১৯২১ সালে একটি বিল আনা হয়। কিন্তু এই বিলটি 'হাউজ অফ লর্ডস' খারিজ করে দেয় কারণ তারা মনে করেছিল বিল প্রয়োগ ক'রে সমকামিতাকে অতিরিক্ত মাত্রায় গুরুত্ব দিলেও আখেরে তার প্রচারই হবে।

ভূগর্ভস্থ সামাজিকতা

বিপরীতকামী পুরুষদের জন্য বাজারজাত করা হলেও লেসবিয়ান পাল্প ফিকশনগুলো ১৯৫০ এর দশকের একঘরে হওয়া নারীদেরকে পরিচয় দিয়েছিল।

মেডিক্যাল ও মনস্তাত্ত্বিক নথিপত্র ছাড়া সমকাম সম্বন্ধে খুব কম তথ্যই পাওয়া গেছে। সামাজিকতা ও সাধারণ মেলামেশার যেসমস্ত জায়গায় পানশালা ছিল সেখানে প্রায়ই অর্থাৎ গড়ে মাসে একবার পুলিশ আসতো এবং যাদের গ্রেপ্তার করা হত তাদের সম্বন্ধে পত্রিকায় খোলসা করা হত। ইতিমধ্যে ১৯৫৫ সালে সানফ্রানসিসকোর আটজন মহিলা নিজেদের মধ্যে মেলামেশা করার জন্য নিভৃতে নিজের বাড়ির বৈঠকখানায় দেখা করতো যাতে তারা শান্তিতে নাচগান করতে পারে। যখন তাদের এই মেলামেশা প্রায়ই নিয়মমাফিক হতে শুরু করলো তখন তারা আমেরিকার প্রথম মহিলা সমকামী সংস্থা হিসেবে পরিচিত হলো। এদের 'ডটার্স অফ বিলিটিস' বা 'ডি.ও.বি' বলা হত। এরা ১৯৫৬ সালে 'দ্য ল্যাডার' নামে ম্যাগাজিন প্রকাশ করে। প্রতিটা প্রধান খবরের ভেতরে তাদের একটা করে উদ্দেশ্য লেখা থাকতো যার প্রথমটা ছিল "এডুকেশন অফ দ্য ভ্যারিয়েন্ট" অর্থাৎ ভিন্নধর্মী শিক্ষা। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের সমকাম সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া-মূলত ইতিহাসের বিখ্যাত মহিলা সমকামীদের সম্বন্ধে। তবে ১৯৫৬ সালে 'লেসবিয়ান' শব্দটি এত নেতিবাচক একটা অর্থ বহন করতো যে ডি.ও.বি এই শব্দটিকে বর্ণিত না ক'রে ভিন্নধর্মী শব্দটির ব্যবহার করে।

ডি.ও.বি রীতিমত শিকাগো, নিউ ইয়র্ক ও লজ এঞ্জেলসে ছড়িয়ে পড়ে এবং 'দ্য ল্যাডার' শতাধিক ও ক্রমেই হাজার হাজার ডি.ও.বি মেম্বারদের পাঠাতে হয়। এই ম্যাগাজিনে সমকামের ধরন নিয়ে আলোচনা হত, সমকামকে রোগ ভাবার ধারণাটিকে প্রশ্ন ছোঁড়া হত এবং পাঠিকাদের কাছে জানতে চাওয়া হত তারা কেন সমকামী হয়েছে বা কখনো তাদের প্রতিকূল অবস্থার সাথে লড়াই করার উপায় জানিয়ে উত্তরও দেওয়া হত। এদিকে ব্রিটিশ মহিলা সমকামীরা 'অ্যারেনা থ্রি'-র প্রকাশনার জন্য অপেক্ষা করে থাকতো যেটি ১৯৬৪-তে একইধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল।

বাচ এবং ফেমি দ্বিবিভাজন

সরকার ও সমাজের দ্বারা যৌন আকাঙ্ক্ষার ধরন যেহেতু খুব স্পষ্টভাবে ভাগ করা হয়েছিল তাই মহিলা সমকামী সমাজ নারীদের লিঙ্গভিত্তিক বৈশিষ্ট্যকে চূড়ান্ত কঠিন মাত্রা দিয়েছিল। এটা মূলত আমেরিকা ও কানাডার জীবিকা নির্বাহকারী মহিলা শ্রেণীর মধ্যে বেশি প্রচলিত ছিল। যদিও মিউনিসিপালিটিগুলি বিপরীত লিঙ্গের মতো পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তবুও কিছু কিছু মহিলা পানশালাগুলিতে পুরুষের বেশে মেলামেশা করতো এবং চিরাচরিত পুরুষালি আচরণ করতো, এদের বাচ বলা হতো। বাকিরা চিরাচরিত মহিলাদের মতো পোশাক পরতো এবং আচরণে নারীত্ব ফুটিয়ে তুলতো, এদের ফেমি বলা হত। মহিলা সমকামী সমাজে বাচ এবং ফেমি দ্বিভাজন এতই প্রচলিত হয়ে গেল যে যারা এই দুটোর মধ্যে যেকোনো একটা বেছে নিত না তাদের সমকামী হিসেবে বাকিরা এড়িয়ে চলতো। একজন বাচ মহিলার অন্য বাচ মহিলার সাথে বা একজন ফেমির অন্য ফেমির সাথে মেলামেশা গ্রহণযোগ্য ছিল না।

১৯৫০ এর দশকে বাচ মহিলারা এমনকিছু নতুনত্বের বিষয় ছিল না, এমনকি হার্লেম ও গ্রিনিচ ভিলেজে ১৯২০ এর দশকের কিছু মহিলা এমন ব্যক্তিত্বকেই নিজের সত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। যাই হোক, এদের বৈশিষ্ট্য ও দায়গুলি বিস্তৃত ছিল, শুধুই নর্থ আমেরিকার মধ্যে সীমিত না: ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ অবধি, পানশালাগুলির বাচ/ফেমি-এর চল ব্রিটেনে ব্যাপ্ত হয় যদিও সেখানে কম শ্রেণিবিভাজন ছিল। সেখানে ছোট আলাদা সমাজ বা দলগুলির মানুষদের চিহ্নিত করা হত। যেসব মহিলাদের সাধারণ সমাজ অস্বীকার করতো তারা ভাবতো যে এই আলাদা দল বা সমাজগুলি নিশ্চয়ই অধিক জ্ঞানপ্রাপ্ত। এই সময়ে বাচ ও ফেমিকে উচ্চশ্রেণীর মহিলা সমকামীরা অসভ্যতা মনে করতো। বহু উচ্চবিত্ত মহিলারা তাদের পরিবারের অসম্মতির জন্য বিয়ে করে নেয় এবং বাকিরা ইউরোপে পালিয়ে নির্বাসন নেয়।

মহিলা সমকামী সম্বন্ধীয় কল্পকাহিনী

পুঁথিপত্রের মধ্যে মহিলাদের সমকাম সম্বন্ধে যথেষ্ট তথ্যের অভাব থাকায়, এ বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য আলাদা ফোরাম গড়ে ওঠে। ১৯৫০ সালে 'উইমেনস ব্যারাকস' নামক একটি বই প্রকাশিত হয় যাতে 'ফ্রি ফ্রেঞ্চ ফোর্সেস'-এ একটি মহিলার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করা হয়। লেখকের দেখা একটি মহিলা সমকামিতার সম্পর্কের ব্যাপারে এটায় লেখা আছে। ৪৫ লক্ষ কপি বিক্রি হওয়ার পর এই বইটিকে ১৯৫২ সালে 'দ্য হাউজ সিলেক্ট কমিটি অন কারেন্ট পর্নোগ্রাফিক মেটেরিয়ালস'-এ উল্লেখ করা হয়। এটির প্রকাশক 'গোল্ড মেডেল বুকস' এর পরের বই ১৯৫২ সালের 'স্প্রিং ফায়ার'-এর ১৫ লক্ষ কপি বিক্রি করে। গোল্ড মেডেল বুকস প্রচুর মহিলাদের থেকে বিষয়বস্তুর ব্যাপারে চিঠি পায় ও অভিভূত হয়। যার ফলে পরবর্তীকালে আরও বই প্রকাশিত হয় এবং সেগুলি 'লেসবিয়ান পাল্প ফিকশন' নামক জ্যর-এর জন্ম দেয়।

১৯৫৫ থেকে ১৯৬৯ অবধি দুই হাজারেরও বেশি বই মহিলা সমকামীদের বিষয়বস্তু ক'রে প্রকাশিত হয়। সেগুলিকে গোটা আমেরিকা ও কানাডার ওষুধের দোকান, রেলস্টেশন, বাসস্টপ ও নিউজস্ট্যান্ডে বিক্রি করা হয়। বেশিরভাগ বইয়ের লেখক ও পাঠক ছিল বিপরীতকামী পুরুষ। কোড ব্যবহৃত ভাষা ও ছবি প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। 'লেসবিয়ান' শব্দটি ব্যবহার না করে 'স্ট্রেঞ্জ', 'টোয়ালাইট', 'কুইর' ও 'তৃতীয় লিঙ্গ'-এর মতো শব্দ শিরোনামে ব্যবহার করা হয় এবং প্রচ্ছদের শিল্পকলায় ভীষণ কামোত্তেজক চিত্র ব্যবহৃত হয়। লেসবিয়ান পাল্প ফিকশনের অনেক লেখিকাই সাধারণ মহিলা ছিলেন যারা মহিলা সমকামীদের জন্য লিখতেন যেমন অ্যান ব্যানন, ভ্যালারি টেলর, পাওলা ক্রিশ্চিয়ান এবং ভিন প্যাকার (অ্যান অ্যালড্রিচ)। ব্যানন যিনি লেসবিয়ান পাল্প ফিকশনের পাঠিকাও ছিলেন, পরবর্তীতে বলেছিলেন মহিলারা প্রচ্ছদের চিত্র থেকেই বিষয়বস্তু আন্দাজ করতে পারেন। অনেক বই সাংস্কৃতিক তথ্যসূত্রের ব্যবহার করেছিল: জায়গার নাম, শব্দ, পোশাকের বর্ণনা ও একঘরে থাকা মহিলাদের জন্য ব্যবহৃত আলাদা কোড ও শব্দ। এর ফলে পাল্প ফিকশন খুব সহজেই মহিলা সমকামীর পরিচয়কে তাদের মাঝে ও বিপরীতকামী পুরুষদের কাছেও তুলে ধরতে পারতো।

নারীবাদের দ্বিতীয় উত্থান

১৯৫০ এর দশক থেকে ১৯৬০ এর দশকের প্রথমাংশ অবধি সমাজের গোঁড়ামি তৎকালীন আফ্রিকান-আমেরিকান, গরীব মানুষ, মহিলা ও পুরুষ সমকামীর উন্নতির অন্তরায় হয়ে উঠেছিল। শেষের দুটো অর্থাৎ পুরুষ সমকামীদের আন্দোলন ও নারীবাদী আন্দোলন একটি ঘটনার পর এক হয়ে যায়। এই ঘটনাটি ঘটে হলো ১৯৬৯ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ঘটা সহিংস 'স্টোনওয়াল রায়টস' বা স্টোনওয়ালের দাঙ্গার পরে। এর ফলে এমন এক আন্দোলনের শুরু হয় যা পুরুষ সমকামিতার সক্রিয়তা ও নারীবাদের সচেতনতার মেলবন্ধন অর্থাৎ এর থেকেই মহিলা সমকামীর বর্ণনাও নতুন রূপ পায়।

১৯৭০ এর দশকের যৌনতার নবজাগরণ একটি নতুন ধারণার জন্ম দেয় যাতে মহিলাদের পরিচয় ও যৌনাকাঙ্ক্ষার মধ্যে পার্থক্য করা হয়। অনেক মহিলাই তাদের এই নতুন সামাজিক স্বাধীনতার সুবাদে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের চেষ্টা করে। যে মহিলাদের প্রাথমিকভাবে বিপরীতকামী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল তারা অন্য মহিলাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলো, যদিও অনেকেই তাদের বিপরীতকামী পরিচয়কে অব্যাহত রেখেছিল। নারীবাদের দ্বিতীয় উত্থানের সাথে সাথেই মহিলা সমকামীদের একটা রাজনৈতিক পরিচয় বৃদ্ধি পায় ও তারা মহিলাদের মধ্যে যৌনাকাঙ্ক্ষা ব্যতিরেকে সামাজিক দর্শনকে বর্ণিত করতে শুরু করে। 'র‍্যাডিকালেসবিয়ানস' নামে একটি নারীবাদী সংস্থা ১৯৭০ সালে একটি ইস্তেহার ঘোষণা করে যার নাম ছিল 'ওম্যান-আইডেন্টিফায়েড ওম্যান' এবং এতে বলা হয়েছিল "একজন মহিলা সমকামী হলো সব মহিলাদের বহুদিন ধরে জমে থাকা রাগের বহিঃপ্রকাশ"।নারীবাদিরা তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল এবং লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যকে শেষ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে মহিলা সমকামিতার উল্লেখ করেছিলেন কারণ এতে যৌনাকাঙ্ক্ষা প্রশমন করার ক্ষেত্রেও পুরুষের প্রয়োজন ছিল না। যে মহিলারা এই দর্শনকে সমর্থন করতো তারা নিজেদের 'লেসবিয়ান-ফেমিনিস্ট' বলতো যেখানে লেসবিয়ান শব্দটি এমন কোন মহিলার জন্য ব্যবহার করা যেত যে মহিলাদের সার্বিক উন্নতির জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে কাজ করতো। যৌনাকাঙ্ক্ষা এই লেসবিয়ান-ফেমিনিস্টদের কোনোরকম বৈশিষ্ট্য ছিল না কিন্তু তার রাজনৈতিক চিন্তাধারা এই পরিচয়ের ভিত্তি ছিল। পুরুষদের থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়াই লেসবিয়ান-ফেমিনিস্টদের মূল লক্ষ্য ছিল এবং এই ধারণায় বিশ্বাসী বহু মহিলাই পুরুষশাসিত সমাজ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে এসেছিল। লেসবিয়ান নেশন নামক তাদের স্বপ্নের দেশে মহিলা ও মহিলা সমকামীকে তারা সমার্থক ভাবতো।

লেসবিয়ান-ফেমিনিজম খুবই স্পষ্ট এক ধারণা ছিল কিন্তু সব মহিলা সমকামীরা এর সাথে একমত ছিল না। লেসবিয়ান-ফেমিনিজম যুবসমাজ কেন্দ্রিক একটা আন্দোলন এবং এর সদস্যারা মূলত কলেজ পাশ ছিল। অনেক বয়স্কা মহিলা সমকামীরা মনে করেছিল সমকাম-বিরোধী সমাজের সাথে লড়াই করার ক্ষেত্রে তাদের পুরাতন উপায় অধিক উপযুক্ত ছিল। ১৯৭০ সালে দ্য ডটার্স অফ বিলিটিস (ডি.ও.বি) কোন বিষয়ের ওপর নজর দেবে বুঝে উঠতে পারেনি: নারীবাদ নাকি পুরুষ সমকামীদের অধিকার।

লেসবিয়ান-ফেমিনিস্টদের ক্ষেত্রে গুণমান খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল তাই পুরুষ ও নারীর লিঙ্গভিত্তিক দায় বা বাচ ও ফেমির ধারণা তাদের কাছে পুরুষতান্ত্রিক বলে ঠেকে। লেসবিয়ান-ফেমিনিস্টরা লিঙ্গভিত্তিক বৈশিষ্ট্য ও সেই অনুযায়ী পোশাক ও সাজগোজ এড়িয়ে চলতো এমনকি সমকামী পুরুষদের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের মনোভাব দেখে তারা ক্রমেই পুরুষ সমকামীদের সাথে কাজ করতেও অস্বীকার করলো। যাই হোক, মহিলা সমকামীদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ধারণা ছিল যে তাদের জন্মই হয়েছে সমকামী হিসেবে এবং তারা 'লেসবিয়ান' শব্দটিকে যৌনাকাঙ্ক্ষা বোঝাতেই ব্যবহার করতো। তাই তারা লেসবিয়ান-ফেমিনিস্টদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও রাগান্বিত মতবাদকে এবং পুরুষ সমকামীদের অধিকারের ক্ষেত্রে এদের উদাসীনতাও পছন্দ করতো না।

১৯৮০ সালে কবি ও লেখিকা এড্রেইন রিচ তার রচনা 'কম্পালসারি হেটেরোসেক্সুয়ালিটি অ্যান্ড লেসবিয়ান এগজিস্টেনস'-এ লেসবিয়ান শব্দের অর্থ বিস্তৃত করেন। রিচ বলেন মহিলাদের সবরকম সম্পর্কেই কিছুটা সমকাম মিশে আছে তাতে তারা নিজেদের সমকামী ব্যক্তিত্ব স্বীকার করুক বা না করুক: মা ও মেয়ে, একইসাথে কর্মরত মহিলারা ও যে মহিলারা একে অপরের সেবা করে তাদের সবাই এর উদাহরণ। মহিলাদের প্রতি এইরকম দৃষ্টিভঙ্গী সবরকম সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং রিচ আরও বলেন যে, বিপরীতকাম মহিলাদের ওপর পুরুষদের দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া একটা ধারণা মাত্র। এর বেশ কয়েকবছর আগে ডি.ও.বি-র স্রষ্টারা তথা ডেল মার্টিন ও ফিলিস লায়ন একইভাবে মহিলা সমকামী হওয়ার ক্ষেত্রে যৌনাচারের ভূমিকায় কম গুরুত্ব দেন। ওনারা একটা সংজ্ঞা দেন: "এক মহিলা যে প্রাথমিকভাবে যৌনাকাঙ্ক্ষা, মানসিক চাহিদা ও মেলামেশা করার সঙ্গী হিসেবে নিজের সম লিঙ্গের কাউকেই চায় (সেই চাহিদা অতিমাত্রায় প্রকাশ না পেলেও)"।

পশ্চিমা সমাজ বহির্ভূত সংস্কৃতি

মধ্যপ্রাচ্য

আরবি ভাষার ইতিহাসে মহিলাদের মধ্যে যৌনাচারকে বহুভাবে বর্ণিত করা হয়েছে।[৮৬] এর মধ্যে খুব সাধারণ একটি হল 'শাহক' যা মূলত হস্তমৈথুনকে বোঝায়। ঐতিহাসিক নথি থেকে সমকামীদের পরিচয় ও যৌনাচারের কোনরকম তথ্য পাওয়া যায়নি। আজকের আরবে মহিলা সমকামী ও পুরুষ সমার্থক তাই সমসাময়িক লেখনীতে এই দুইয়ের পার্থক্য খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। কলোনিয়াল যুগের পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক আঙ্গিকে মহিলা সমকাম সম্বন্ধীয় পড়াশোনা সার্বিকভাবে জটিল। এমনকি কিছু বিদ্বান একে 'সমকামী-জাতীয়তাবাদ' বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে রাজনৈতিকভাবে যৌনতার শ্রেণিবিভাগ করা হয়।প্রতিটি সংস্কৃতিতেই হয়তো মহিলাদের সমকামিতার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় যদিও শুধুমাত্র মহিলাদের সাথেই যৌনাচারে লিপ্ত এমন নারীর ধারণা উপস্থিত ছিল না। প্রতিটি সংস্কৃতির যৌনতাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ও মহিলাদের লিঙ্গভিত্তিক দায়ের ওপর মহিলা সমকামের প্রতি সমাজের ধারণা নির্ভরশীল ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে মহিলাদের পুরুষদের থেকে বরাবর আলাদা হিসেবে ধরা হত। সপ্ত ও অষ্ট শতকে কিছু মহিলা পুরুষের মতো পোশাক পরতো এবং তখন প্রতিটি লিঙ্গের আলাদা আলাদা দায়িত্ব এত কড়াভাবে ছিল না। কিন্তু ইউরোপিয়ান মহিলাদের যৌনতার ক্ষেত্রে যে দায়িত্ব ছিল তা ইসলামিক মহিলাদের সাথে সম্পর্কিত ছিল না। বাঘদাদের ক্যালিফাল কোর্টে মহিলাদের পুরুষের পোশাক পরিয়ে, নকল গোঁফদাড়ি লাগিয়ে দর্শনীয় করা হত কিন্তু এরা পুরুষের গুরুত্ব পাওয়ার জন্য অন্য মহিলাদের সাথেই প্রতিযোগিতা করতো।

শরিফ আল-ইদ্রিশির দ্বাদশ শতকের কিছু লেখনী অনুযায়ী, অতিরিক্ত বুদ্ধিমতী মহিলারাই মহিলা সমকামী হত এবং তাদের বুদ্ধিমত্তাই তাদেরকে পুরুষের সাথে একই আসনে বা তার চেয়েও ওপরে স্থান দেয়। যেসব মহিলারা হারেমে থাকতো তারা তুর্কিশ স্নানাগারগুলিতে মহিলাদের সাথে যৌনাচার ও ঘনিষ্ঠতার ভয় পেত এবং এই ভাব বহু পুরুষের লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে। মহিলারা তুলনামূলকভাবে চুপ ছিলেন এবং পুরুষরাও মহিলাদের সমকাম নিয়ে খুব কমই লেখেন। সাহিত্যে যে ক'টা মহিলা সমকামের ঘটনা লেখা আছে তা আদৌ সত্য নাকি পুরুষদের ফ্যান্টাসি আকারে লেখা তা ঐতিহাসিকদের কাছে স্পষ্ট নয়। ১৯৭৮ সালে ইরানের এক নিপীড়নের ঘটনা জানা যায় যে, মহিলারা পুরোপুরি নীরব ছিল: "ইরানের সামগ্রিক ইতিহাসে, কোন মহিলার এধরনের কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলার অধিকার ছিল না... মহিলাদের সমকামী যৌনাকাঙ্ক্ষা থাকলে তাকে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হত।"

যদিও 'ইসলামিক হোমোসেক্সুয়ালিটিজ' এর লেখকরা এবিষয়ে মতান্তর রেখেছেন ও বলেছেন, এটা থেকে এমনটা বলা যায় না যে মহিলারা এমন সম্পর্কে লিপ্ত ছিল না। ১৯৯১ সালে একজন মানববিদ্ মহিলা সমকামী ইয়েমেনে যান ও পরে তথ্য দেন যে, সেখানকার মহিলারা অন্য মহিলার প্রতি এমন ভালোবাসার সম্পর্কগুলিকে বুঝে উঠতে পারতো না। পাকিস্তানের মহিলাদের ক্ষেত্রে তারা কোন পুরুষকেই বিবাহ করবে, এমনটা আশা করা হয় এবং যারা এই নিয়ম মানে না তাদের একঘরে করে দেওয়া হয়। তবুও বলা যায়, মহিলাদের হয়তো অন্য মহিলার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে যতক্ষণ তারা তাদের স্ত্রী হওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো গোপন রাখা হয় এবং যে মহিলার সাথে তারা সম্পর্কে জড়িত থাকে তারা হয়তো পরিবারেরই কেউ বা মানসিকভাবে খুব কাছের।[৮৭]

যাদের এই অঞ্চলে মহিলা সমকামী বলে চিহ্নিত করা গেছে তারা পরিবারের সহিংসতা বা সামাজিক শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে, একে সাধারণভাবে 'অনার কিলিংস' (অর্থাৎ পরিবারের সম্মান বাঁচাতে হত্যা) বলে। এক্ষেত্রে অপরাধের কারণ হিসেবে অপরাধী মূলত অনৈতিক যৌনতা বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে সতীত্বনাশ করাকেই তুলে ধরে এবং প্রাথমিকভাবে মহিলাটিকেই দায়ী করে।[৮৮]

আমেরিকা

আমেরিকার কিছু মানুষ মহিলাদের জন্য একটা তৃতীয় লিঙ্গকে কল্পনা করতো যার দ্বারা মহিলারা মূলত নিজেদের সমাজে পুরুষের ঘাটতি পূরণ করতো, এরা পুরুষদের মতো পোশাক পরতো ও তাদের দায়দায়িত্ব পালন করতো।[৮৯][৯০] অন্যান্য ক্ষেত্রে বলা যায় যে, তারা লিঙ্গকে মূলত একটি ধারা হিসেবে দেখতো এবং পুরুষালী নারী ও নারীর মতো নারীর জন্য এরা নানারকম শব্দের ব্যবহার করতো। যাই হোক, এগুলো মূলত প্রতিটা মানুষের নিজস্ব জাতি ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভরশীল ছিল অর্থাৎ সমকামী পুরুষ ও একইসাথে ভারতীয় হলে এটা কারোর মধ্যে দ্বৈত সত্তা গঠন করবে না। বিদেশীদের কাছে ও তাদের লিঙ্গভিত্তিক দায়দায়িত্বের কাছে কারোর (অন্য সংস্কৃতির) গুরুজনকর্তৃক ঠিক করে দেওয়া সামাজিক দায়বদ্ধতার কোন মানে থাকে না। তার চেয়ে বরং তাদের বোঝে উচিত যে সামাজিক, লিঙ্গভিত্তিক এই দায়গুলি প্রতিটা মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে।

ল্যাটিন আমেরিকাতে ১৯৭০ সালে মহিলা সমকামীদের প্রতি সচেতনতা ও তাদের এসোসিয়েশনের আবির্ভাব হয়। ফলে বহু দেশ তাদের গণতান্ত্রিক সরকার গড়ে তোলে। যেসব দেশে সমকামিতা বৈধ সেখানেও অত্যাচার ও অন্যায় প্রায়ই দেখা যায়। শিশু দুর্নীতি, অনৈতিকতার বিরুদ্ধে তৈরি আইনগুলোর দ্বারা প্রায়ই সমকামীদের নির্যাতন করা হয়। স্পেনীয় ধারণামতে, নারীবাদীদের সমকাম-বিদ্বেষ ও সমকামী পুরুষদের নারীবিদ্বেষের ফলে মহিলা সমকামীদের সমাজ ও দলগুলিকে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

আর্জেন্টিনা প্রথম ল্যাটিন আমেরিকান দেশ যেখানে ১৯৬৯ সালে প্রথম পুরুষ সমকামীদের দল "নুস্ট্রো মুন্ডো" (এন.এম বা আওয়ার ওয়ার্ল্ড) গড়ে ওঠে। আরও ছয়টি মূলত গুপ্ত সমিতির খোঁজ পাওয়া যায় যারা পুরুষ ও মহিলা সমকামীদের সমস্যা ও সমাধানের প্রতি নজর রাখতো। তবুও সমকামীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব ও অত্যাচার অব্যাহত ছিল এবং এটা বেড়ে যায় ১৯৭৬ সালে জর্জ রাফায়েল ভিদেলার একনায়কতন্ত্রের ফলে। তখন সমস্ত দলগুলি 'ডার্টি ওয়ার' অর্থাৎ নোংরা যুদ্ধে মত্ত ছিল। মহিলা সমকামীদের দলগুলি ১৯৮৬ সাল থেকে তৈরি হয় এবং এদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিপরীতকামী ও সমকামী মহিলাদের মধ্যে দর্শনগত পার্থক্যগুলিকে দূর করা।মেক্সিকোতে ল্যাটিন আমেরিকান লেসবিয়ান আন্দোলন সবথেকে উদ্যোগী আন্দোলন ছিল কিন্তু কার্যকারিতা এবং সামঞ্জম্যের ক্ষেত্রে একই ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছিল। যখন বিভিন্ন দলগুলি সমকামিতার প্রচার করছিল তখন তাদের সমকামী পুরুষদের নারীবিদ্বেষ ও বিপরীতকামী মহিলাদের সমকাম-বিদ্বেষের মুখে পড়তে হয়। ১৯৭৭ সালে মেক্সিকোতে প্রথম 'লেসবস' নামে একটি মহিলা সমকামী সংস্থার গঠন হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সমকাম প্রচারের ক্ষেত্রে কার্যক্ষেত্রে বহুল পরিবর্তন আসে। ১৯৯৭ সালে মেক্সিকোতে ১৩টি মহিলা সমকামীদের দল উদ্যোগী ছিল। যাই হোক, মহিলা সমকামীদের এই সংস্থাগুলির সমকামীদের আন্দোলন ও নারীবাদী আন্দোলনে খুব একটা অবদান ছিল না।

চিলিতে অগস্টো পিনোশেটের একনায়কতন্ত্র তথা রাজত্বের সময় ১৯৮৪ সাল অবধি মহিলা সমকামীদের দলগঠন নিষিদ্ধ ছিল। যখন মাপুচের 'আয়ুকিলেন' (জয় অফ বিয়িং) গঠন করা হয়, তখন জনসমক্ষে এর একটি মহিলাকে পিটিয়ে মারার চেষ্টা হয় ও হামলাকারীরা তার মাঝে মাঝেই 'শালা শয়তান লেসবিয়ান' বলে গালি দেয়। চিলিতে মহিলা সমকামীদের আন্দোলন নারীবাদী আন্দোলনের সাথে খুব ভালোভাবে যুক্ত ছিল। আয়ুকিলেন দলটি 'ইন্টারন্যাশনাল লেসবিয়ান ইনফরমেশন সার্ভিস', 'দ্য ইন্টারন্যাশনাল গে, লেসবিয়ান, ট্রান্স ও ইন্টারসেক্স অ্যাসোসিয়েশন' এবং চিলির পুরুষ সমকামীদের অধিকার সুরক্ষিত করা দল 'মুভমেন্ট টু ইন্টিগ্রেট অ্যান্ড লিবারেট হোমোসেক্সুয়াল' এর সাথে চিলির 'সডোমি ল' তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করে।

১৯৮৬ সালে নিকারাগুয়াতে মহিলা সমকামীদের নিয়ে সচেতনতা আরও স্পষ্ট হয় যখন 'স্যান্ডিনিস্টা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট' পুরুষ সমকামী ও মহিলা সমকামীদের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। সরকার এইডস এর কথা ভেবে সমকামীদের দলগঠনে বাধা দেয় তবে শিক্ষার প্রসারের ফলে এই সংখ্যালঘু মানুষগুলো সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করে। প্রথম মহিলা সমকামীদের সংস্থা ছিল 'নসোত্রাস' যা ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ থেকে ১৯৯২ অবধি সমকামী পরিচয় প্রকাশ্যে আনার তাগিদের ফলে সরকার ১৯৯৪ সালে সমকামকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে যার ফলে এই সমকামকে প্রকাশ করার আন্দোলনের ইতি হয়। ২০০৪ সালে গ্রুপ সাফো গঠিত হয় এবং তার চার বছর আগে সমকামিতা আবার আইনি বলে মান্যতা পায়।

ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান নারীবাদী মহিলা সমকামীদের মিটিংগুলিকে মাঝেমাঝে 'লেসবিয়ান মিটিংস' বলা হত এবং এটি ১৯৮০ এর দশকের শেষভাগে ল্যাটিন আমেরিকার মহিলা সমকামীদের চিন্তাধারা আদানপ্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে। মিটিংগুলির পরিচালিকা পরিবর্তন হত ও বছরে দুবার করে এই মিটিংগুলি হত। এগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি এবং সামাজিক ভ্রান্ত ধারণাগুলিকে সঠিক প্রচারের দ্বারা সংশোধনের মাধ্যমে ল্যাটিন আমেরিকায় আইনিভাবে ও সামাজিকভাবে মহিলা সমকামীদের অবস্থার উন্নতি।

আফ্রিকা

বিপরীত লিঙ্গের মতো আচরণ ও মহিলাদের মধ্যে বিয়ের নিদর্শনও ৩০ এরও বেশি আফ্রিকান সমাজে পাওয়া গেছে। মহিলারা অন্য মহিলার সাথে বিবাহ করতে পারতো, তাদের সন্তান লালনপালন করতে পারতো এবং এদের মূলত নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন ও কেনিয়ার মতো দেশের সমাজে পুরুষের স্থান দেওয়া হত। সুদানের হাউসা জাতির মানুষ মহিলা সমকামীদের জন্য একটি শব্দ ব্যবহার করতো- 'কিফি', যার দ্বারা এমন পুরুষদেরও বোঝানো হত যাদের কোন নির্দিষ্ট লিঙ্গের প্রতি যৌনাকাঙ্ক্ষা সীমিত থাকতো না।

নাকুন্দ জাতির মানুষদের মধ্যে যেসব মহিলারা অন্য মহিলার সাথে যৌনতা ও মানসিক সম্পর্কে আবদ্ধ হত তাদের কঙ্গো নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে 'ইয়ায়িকা বনসাংগো' বলা হত। মহিলা সমকামীদের সম্পর্ককে ঘানার অ্যাকান জাতির মধ্যে মাতৃকুলভিত্তিক সমাজের মতো ধরা হত। লেসোথো অঞ্চলে মহিলারা সাধারণ যৌনাচারে লিপ্ত হত: তারা চুম্বন করতো, একসাথে ঘুমাতো, হস্তমৈথুন করতো, যোনিলেহন করতো এবং অন্যান্য মহিলাদের সাথেও তাদের সম্পর্ক চালিয়ে যেতো। এখানকার মানুষরা ভাবতো যৌন সম্পর্ক স্থাপনে পুরুষাঙ্গের প্রয়োজন হয় তাই পূর্ব উল্লিখিত কাজগুলিকে তারা যৌনতার আওতায় ধরতো না এবং নিজেদের আলাদাভাবে মহিলা সমকামী হিসেবে পরিচয়ও দিতো না।

দক্ষিণ আফ্রিকাতে মহিলা সমকামীদের অস্বাভাবিক যৌনাচারের জন্য শাস্তি দিতে ও সমাজের স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত রাখতে পুরুষরা ধর্ষণ করতো। সমকামকে দোষ হিসেবে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় চিহ্নিত করা হয় এবং তার শাস্তি হিসেবে এই ধর্ষণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মহিলাটির পরিবার অথবা স্থানীয় মানুষের মতেই করা হয়। মহিলা সমকামীদের এই শাস্তির ফলে তাদের মধ্যে এইচ.আই.ভি-র সংক্রমণ ছড়ায়। সংশোধন করার উদ্দেশ্যে এহেন ধর্ষণকে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনি ব্যবস্থায় অপরাধ বলে ধরা হত না যদিও সংবিধানে স্পষ্ট বলা ছিল যে, কোন অপরাধীর সাথে তার লিঙ্গ, সামাজিক অবস্থান বা কোনরকম যৌনাকাঙ্ক্ষার পরিচয়ের দ্বারা পক্ষপাতিত্ব করা হবে না। আইনিভাবে পুরুষ সমকামীর অধিকার আশ্বস্ত করা হয় কিন্তু সংশোধনের উদ্দেশ্যে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি তাই মহিলাদের পুলিশ ও তাদের ব্যবস্থার ওপর কোন বিশ্বাস ছিল না।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রমে এইধরনের ধর্ষণের হার বেড়েই চললো। "লুলেকি সিজওয়ে" নামক সংস্থার রিপোর্ট মতে, সাপ্তাহিক ১০ জন মহিলা সমকামী ধর্ষিত বা গণধর্ষিত হয়। ২০০৮ সালে 'দ্য ট্রায়াঙ্গল প্রজেক্ট' এর দ্বারা জনসমক্ষে আনা হয় যে অন্তত ৫০০ জন মহিলা সমকামী প্রতিবছর সংশোধনের উদ্দেশ্যে ধর্ষণের (কারেক্টিভ রেপ) স্বীকার হয় এবং ওয়েস্টার্ন কেপের ৮৬% কৃষাঙ্গ মহিলা সমকামী শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ভয়ে বাঁচে। এইধরনের ধর্ষণে ধর্ষিতারা বেশিরভাগই সমাজের সমকামকে নিয়ে ভুলভাল নেতিবাচক ধারণা থাকার কারণে অপরাধ নথিভুক্ত করে না।

এশিয়া

জাপানের একটি ঐতিহাসিক শুঙ্গা কাঠের ব্লক মুদ্রণে দু'জন মহিলাকে যৌন সম্পর্ক চিত্রিত করা হয়েছে।

পশ্চিমা সমাজের প্রভাবের আগে চীনের সমাজে পুরুষ ও মহিলাকে আলাদাভাবে ধরা হত। ইতিহাসে চীনের সংস্কৃতিতে যৌনাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কিত কোনরকম ধারণা পাওয়া যায়নি বা তার ওপর ভিত্তি করে মানুষকে নির্দিষ্ট ধরনের আওতায় সারিবদ্ধ করা হয়নি। যদিও পুরুষ সমকামীদের একটা স্পষ্ট চল ছিল, মহিলা সমকামীদের কোনরকম উল্লেখই পাওয়া যায়নি। নিজের স্বামীর সন্তান জন্ম দেওয়ার কাজ ব্যতীত মহিলাদের যে কোনরকম যৌনাকাঙ্ক্ষা ছিল তা বিশ্বাস করা হত না।

কিন্তু এর মানে এটা না যে মহিলারা অন্য মহিলার সাথে যৌনতায় আবদ্ধ হতে পারতো না। কিন্তু এটা স্পষ্ট ছিল যে সেইসব যৌনতার ফলে তাদের স্বামীর সাথে সম্পর্কে কোনরকম পরিবর্তন আসতো না। ইং সাও-এর লেখায় খুব কম হলেও মহিলাদের সমকামিতার উল্লেখ পাওয়া যায়। ইনি মহিলাদের মধ্যে সম্পর্কগুলোকে 'ডুই শি' বলে সম্বোধন করেছেন অর্থাৎ দুই মহিলা যারা স্বামী-স্ত্রীর মতোই আচরণ করে। সাউদার্ন চীনের "গোল্ডেন অর্কিড অ্যাসোসিয়েশনস্" বিংশ শতাব্দীতে গঠিত হয় এবং তারা মহিলাদের মধ্যে বিবাহের প্রচলন করে,পরবর্তীকালে এই মহিলারা সন্তান দত্তক নিতেও পারতো। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রসারের ফলে মানুষ শেখে যেসব যৌনতার দ্বারা সন্তানধারণ সম্ভব নয় সেগুলিও যৌনতা ও যৌনাকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পরিচয় তৈরির পর্যায়ে পড়ে।

১৮৬৫ সালে শুরু হওয়া সিল্ক ফ্যাক্টরিগুলিতে কাজ করার স্বাধীনতার ফলে কিছু মহিলা নিজেদের 'টু-জু নি' বলে পরিচয় দিতে শুরু করে অর্থাৎ যারা কোনদিন বিয়ে করবে না। এরা অন্যান্য মহিলার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে থাকতে শুরু করে। বাকি চীনারা তাদের বিবাহিত মহিলাদের মতো চুল রাখার জন্য 'সৌ-হি' বলে ডাকতে শুরু করে। এই সম্পর্কগুলি 'দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন' এর জন্য ক্রমে ভেঙে যায় এবং কমিউনিস্ট সরকার এদের অর্থাৎ মহিলা সমকামীদের সামন্ততান্ত্রিক চীনের ধ্বংসকারী বলে। সমসাময়িক চীনা সমাজগুলিতে সমকামীদের 'টংজি' (যাদের একই উদ্দেশ্য ও ক্ষমতা) বলা হত তবে বেশিরভাগ চীনারা এইভাবে নিজেদের মধ্যে কাউকে সমকামী বলে আখ্যা দিয়ে বিভেদ আনতে নারাজ ছিল।

জাপানে 'রেজুবিয়ান' (জাপানি ভাষায় লেসবিয়ানের প্রকারভেদ) শব্দটি ১৯২০ এর দশকে ব্যবহৃত হত। পশ্চিমা সমাজের প্রভাবের ফলে নারীদের স্বাধীনতা বৃদ্ধি হয় ও জাপানের কিছু মহিলা প্যান্ট পরতে পারতেন। ফিলিপাইন ও ম্যানিলাতে 'টমবয়' শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় যার দ্বারা পুরুষালি নারীদের বোঝানো হত। কোরিয়ার আদর্শ নারীরা মাতৃত্ব ও সতীত্বকে গুরুত্ব দিতো তাই এই ধারণার বাইরে বেরিয়ে খুব কম মহিলাই নিজেদের যৌনাকাঙ্ক্ষার কথা খোলামেলাভাবে প্রকাশ করতে পারতো যদিও 'কিরিকিরি' নামে মহিলা সমকামীদের একটি সংস্থা গড়ে উঠেছিল। মালয়েশিয়াতে পুরুষ সমকামীদের বোঝাতে 'পন্ডান' শব্দটি ব্যবহৃত হত কিন্তু যেহেতু ইতিহাসে মহিলা সমকামীদের কোন উল্লেখ ছিল না তাই এই শব্দটির দ্বারা ক্রমে তাদেরও বোঝানো হয়। যেহেতু বহু এশিয়ান দেশে খোলাখুলিভাবে সমকামিতা সামাজিকভাবে মেনে নেওয়া হত না সেহেতু বহু মালয়েশিয়ানরা দুইরকমের জীবন অতিবাহিত করতো।

ভারতে চতুর্দশ শতাব্দীর একটি পুঁথিতে মহিলা সমকামীর উল্লেখ পাওয়া যায় যাদের যৌনতার ফলে একটি সন্তানের জন্মও হয়। এটি সমকামিতাকে নিয়ে জনসাধারণের নীরবতার সম্পূর্ণ উল্টো ধারার একটি নজিরবিহীন ঘটনা। রুথ ভানিতার মতে, ১৯৯৬ সালে 'ফায়ার' নামক একটি সিনেমা মুক্তির পর থেকে সমকামিতাকে নিয়ে এই গোপনীয়তা প্রায় ঘুচে যায়। এই সিনেমাটি মুক্তির পর গোঁড়া ধার্মিকরা বহু সিনেমাহলের ওপর হামলা চালায়। যে শব্দ দ্বারা সমকামীদের পরিচয় নির্ধারণ করা হত সেগুলি ভারতীয় অ্যাক্টিভিস্টরা সমাজের ওপর বিরূপ প্রভাব হওয়ার ভয়ে খারিজ করে দেয় কিন্তু সমকামিতা সম্বন্ধীয় বেশিরভাগ প্রবন্ধই পুরুষদের ঘিরে ছিল। ভারতে মহিলাদের অধিকার দাবী করা দলগুলি মহিলা সমকামীদের বিষয়কে তাদের আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত করবে কিনা তা নিয়ে তর্কবিতর্ক জুড়ে দেয় যেহেতু মহিলাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা ও সমকামিতার বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়েই রাখা হত।[৯১]

জনসংখ্যা বিষয়ক তত্ত্ব

দ্য কিনসি রিপোর্ট

যৌন বিষয়ক প্রশ্নোত্তর থেকে তৈরী করা কিনসির স্কেল যেখানে বিশেষভাবে বিপরীতকামী এবং সমকামীদের দেখানে হয়েছে, মাঝখানে আছে পরিবর্তনশীল মাত্রার উভকামীরা।

প্রথমদিকে মহিলাদের সমকাম বিষয়ে সবচেয়ে বিস্তৃত গবেষণাটি 'ইন্সটিটিউট ফর সেক্স রিসার্চ' প্রস্তুত করে। ১৯৫৩ সালে আমেরিকান মহিলাদের যৌনতা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি ক'রে এরা একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট তৈরি করে। অ্যালফ্রেড কিনসি ও 'ইন্সটিটিউট ফর সেক্স রিসার্চ' এর কর্মীরা ৮০০০ এরও বেশি মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এই জিজ্ঞাসাবাদ 'সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার ইন দ্য হিউম্যান ফিমেল' বইটির অন্তর্গত করা হয় এবং এটি 'দ্য কিনসি রিপোর্ট' নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিনসি রিপোর্টে ভালোবাসার আঙ্গিক বাদ রেখে যেভাবে সমকামিতাকে মানুষের যৌনাচারের অঙ্গ হিসেবে সেটিকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল তা রীতিমত নজির গড়ে তোলে। এই স্টাডির আগে পর্যন্ত শুধু ডাক্তার ও মনোরোগ-বিশেষজ্ঞরাই এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং বরাবরই সমকামিতা বা যৌনাচারকে নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যাচাই করা হয়েছিল।

কিনসি ও ওনার কর্মচারীরা রিপোর্ট পেশ করেন যে, প্রায় ২৮% মহিলা অন্য মহিলার দ্বারা যৌনতায় উত্তেজিত হয়েছে এবং ১৯% অন্য মহিলার সাথে যৌন সংস্পর্শে এসেছে। যেসমস্ত মহিলারা অন্য মহিলার যৌনসংসর্গে এসেছে তাদের অর্ধেক থেকে দুই-তৃতীয়াংশ অর্গ্যাজমের অনুভূতি অর্থাৎ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার দরুন চূড়ান্ত সুখ লাভ করেছে। মূলত অবিবাহিত একাকী মহিলারাই সবথেকে বেশি সমকামিতায় আবদ্ধ হয়েছে, তারপর বিধবা, ডিভোর্সি ও আলাদা থাকা মহিলারা। বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে এই ধরনের যৌনাচার সবচেয়ে কম পর্যবেক্ষিত হয়েছে এবং যারা আগে থেকে সমকামে লিপ্ত ছিল তারা সমকাম বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই বিয়ে করেছে।সমকামে লিপ্ত হওয়া বেশিরভাগ মহিলাই দশবারের বেশি এইধরনের সম্পর্কে লিপ্ত হয়নি। ৫১% মহিলার সমকামের একটিই সঙ্গী ছিল। সমকামের অভিজ্ঞতা স্নাতকোত্তর মহিলাদের মধ্যে বেশি, তারপর কলেজে পড়া মহিলাদের মধ্যে এবং অষ্টম শ্রেণীর বেশি পড়াশোনা না করা মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে কম। যদিও কিনসির এই তত্ত্বের সমালোচনা হয়।

কিনসির স্কেল অনুযায়ী ০ সম্পূর্ণভাবে বিপরীতকামী মানুষকে বোঝায়, ৬-এর দ্বারা একজন সম্পূর্ণভাবে সমকামী মানুষকে বোঝানো হয় এবং এর মাঝের সংখ্যাগুলি দুইরকমের বৈশিষ্ট্য মিলেমিশে প্রস্ফুটিত হলে সেগুলিকে বোঝায়। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তাদের ৬%-কে ৬ সংখ্যাটির দ্বারা মার্ক করা হয়। যে ৭১% মহিলাকে ০ দ্বারা মার্ক করা হয় তাদের বাদ দিয়ে বাকিদের বেশিরভাগকেই অর্থাৎ প্রায় ১৫%-কেই ১ দ্বারা বোঝানো হয়। যাই হোক, কিনসির রিপোর্টে এও বলা হয় যে এই র‍্যাঙ্কিং একটা মানুষের জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময়কেই বর্ণিত করে এবং একটি মানুষের যৌনতার পছন্দ পরিবর্তনশীল। কিনসি রিপোর্ট যে সমালোচনাগুলির মুখে পড়ে তার মধ্যে একটি 'ইন্সটিটিউট ফর সেক্স রিসার্চ'-এর পরিসংখ্যানগত নমুনার ধরনকে উল্লেখ করে, যা অন্যান্য গবেষকদের (যারা কিনসির রিপোর্ট মানে নি) সমকামী সম্পর্কগুলির অতিরিক্ত প্রতিফলনে সহায়তা করে।

দ্য হাইট রিপোর্ট

২৩ বছর পরে ১৯৭৬ সালে যৌন-বিশেষজ্ঞ শ্যের হাইট ৩০১৯ মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদের ওপর ভিত্তি করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। একে 'দ্য হাইট রিপোর্ট' বলা হয়। হাইটের প্রশ্নগুলি কিনসির থেকে আলাদা ছিল এবং মূলত মহিলারা সমকামকে কী নজরে দেখে ও অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকে তারা কী পছন্দ করে তার ওপর হাইট জোর দেন। হাইটের প্রশ্নগুলির উত্তরের দ্বারা জানা যায় যে, ৮% মহিলা অন্য মহিলার সাথে যৌন সম্পর্ক পছন্দ করেন এবং ৯% নিজেদের উভকামী বলে মনে করেন অথবা মহিলা ও পুরুষ উভয়ের সাথেই তাদের যৌন সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে যদিও তারা দুই লিঙ্গের মধ্যে নির্দিষ্ট পছন্দ বলে কিছু জানায়নি।

হাইটের সিদ্ধান্তগুলি অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি না ক'রে মূলত মহিলাদের উত্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল। হাইট অবাক হয়েছিলেন যে বহু মহিলা যারা কোনদিন সমকামী সম্পর্কে জড়ায়নি, জানিয়েছিল যে তারা মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপনে আগ্রহী। উনি দেখলেন যে উত্তরকারীদের মহিলা ও পুরুষের সাথে অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট পার্থক্য ছিল ক্লিটোরাল প্রশমন এবং অধিক মানসিক টান ও অর্গ্যাজমের মধ্যে। হাইট নিজের স্টাডি ১৯৭০ এর দশকে নারীবাদের জনপ্রিয়তার সময়ে করেছিলেন তাই উনি এটাও জানিয়েছিলেন যে, মহিলারা 'লেসবিয়ান'-এর রাজনৈতিক পরিচয়টাই বেছে নিয়েছে।

আনুমানিক জনসংখ্যাতত্ত্ব

২০০০ সালে গত একবছরের মধ্যে অন্য মহিলার সাথে যৌন সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার ওপর ভিত্তি ক'রে 'ন্যাশনাল ওপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার'-এর একটি সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ২.৬% মহিলা সমকামী। আমেরিকায় একই লিঙ্গের দম্পতিদের ওপর করা সার্ভে অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সমকামী সম্পর্ককে স্বীকার করা মানুষের সংখ্যা ৩০% বেড়েছে, যা আমেরিকায় জনসংখ্যাবৃদ্ধির হারের পাঁচগুণ। এই স্টাডির ফলে বোঝা যায় যে, মানুষ নিজেকে সরকারের কাছে সমকামী বলে পরিচয় দেওয়ার মধ্যে স্বস্তি অনুভব করে।

যুক্তরাজ্যের সরকার তাদের নাগরিককে নিজের যৌন পছন্দ উল্লেখ করতে বলে না। যদিও ২০১০ সালে ইউকের 'অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস্' (ও.এন.এস) এর একটি সার্ভের দ্বারা জানা যায় ব্রিটেনের ১.৫% মানুষ নিজেদের সমকামী বা উভকামী বলে পরিচয় দেয় এবং ও.এন.এস বলে যে এটা অন্যান্য সার্ভের সাথেই সারিবদ্ধ হতে পারে যেগুলোতে এই সংখ্যাটা ০.৩% থেকে ৩% বলা হয়। মহিলা সমকামীর সংখ্যা সমলিঙ্গের পরিবারগুলির থেকে আলাদা করা হয় না যেমনটা আমেরিকার জনগণনার ক্ষেত্রেও করা হয় এবং মোট পুরুষ সমকামী, মহিলা সমকামী ও উভকামীদের সংখ্যা এভাবেই ইউকে সরকার নথিভুক্ত করে। যাই হোক, অস্ট্রেলিয়ায় চলা পোল (ভোট) অনুযায়ী জানা যায় নিজেকে মহিলা সমকামী বা উভকামী বলে পরিচয় দেওয়া মহিলাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১.৩% থেকে ২.২%-এর মধ্যে ওঠানামা করে।

স্বাস্থ্য

শারীরিক

মেডিক্যাল অনুযায়ী যেসব মহিলারা অন্য মহিলার সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় তাদেরকেই মহিলা সমকামী বলা হয়। এর কারণ হলো মহিলাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা নিয়ে সর্বসাধারণের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা ও মহিলাদের নিজেদের যৌনাকাঙ্ক্ষা ও যৌনাচারের অভিজ্ঞতা লুকিয়ে রাখার প্রবণতা এমনকী ডাক্তারের কাছেও। নিজেকে সমকামী বলে পরিচয় দেওয়া বহু মহিলা ডাক্তার দেখাতে চায় না কারণ তার ধরন সাধারণ বিপরীতকামী মহিলাদের মতো না এবং তার কোন জন্মনিরোধকের প্রয়োজনও হয় না যেহেতু যৌন জীবন শুরু হওয়ার পর থেকে বেশিরভাগ মহিলা এই কারণেই গাইনোকলজিস্ট দেখিয়ে থাকে। এর ফলে বহু সমকামী মহিলার চেক-আপ হয় না ও পাপ স্মিয়ারের (সারভিক্যাল ক্যান্সার) পরীক্ষাও হয় না। আমেরিকার সরকারের তথ্য অনুযায়ী, কিছু মহিলা সমকামী মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো এড়িয়ে চলে এবং তাদের মূলত স্বাস্থ্য বীমাও থাকে না কারণ কর্মসংস্থান দেওয়া সংস্থাগুলি বিবাহ ব্যতীত কোন সঙ্গীকে বীমার সুবিধা দিতো না।

মেডিক্যাল তথ্যসূত্র বেশি না থাকার ফলে ডাক্তার ও মহিলা সমকামীদেরও অনেকে ভাবতে শুরু করলো যে সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা কোন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা মহিলা সমকামীদের মধ্যে কম। মহিলাদের ডাক্তারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে একটু বেশি যত্ন প্রয়োজন ছিল কিন্তু মেডিক্যাল প্রফেশনালরা প্রায়ই তাদের পুরোপুরি মেডিক্যাল ইতিহাস নথিভুক্ত করতে অপারগ হত। ২০০৬ সালে ২৩৪৫ জন মহিলা সমকামী ও উভকামীদের ওপর চালানো একটি গবেষণায় জানা যায় যে মাত্র ৯.৩% মহিলা স্বীকার করেন যে তাদের ডাক্তার যৌনাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কিত প্রশ্ন করে তথ্য জানতে চেয়েছেন। উত্তরদাতাদের এক-তৃতীয়াংশ ভাবতো যে তারা যদি নিজেদের যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে বলে তাহলে সেখান থেকে একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। বাকি ৩০% তাদের ডাক্তারদের কাছে মহিলা সমকামী বা উভিকামী হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। একটা রোগীর সমস্ত তথ্য একজন ডাক্তারকে চিন্তার জায়গাগুলি বুঝতে সাহায্য করে এবং নিজেদের আন্দাজগুলিকে ঠিক করতেও সাহায্য করে। ৬৯৩৫ জন মহিলা সমকামীর ওপর করা একইরকম আরেকটি সার্ভেতে দেখা যায় ৭৭% একটি বা তার বেশি পুরুষ সঙ্গীর সাথে যৌনতার আঙ্গিকে ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং ৬% এই ঘনিষ্ঠতা তার আগের বছরে লাভ করেছে।

আমেরিকার স্বাস্থ্য ও মানব-উন্নয়ন ডিপার্টমেন্ট থেকে জানানো হয় যে মহিলাদের মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হলো হার্টের সমস্যা। যে দুটি জিনিস এই হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় তা হলো ওবেসিটি ও ধূমপান যার মূলত মহিলা সমকামী সমাজে স্পষ্ট চল আছে। তথ্য অনুসারে জানা যায়, মহিলা সমকামীদের বডি মাস অর্থাৎ দেহের স্থূলতা তুলনায় বেশি এবং এরা বিপরীতকামী নারীদের তুলনায় ওজন নিয়ে অনেক কম সচেতন। মহিলা সমকামীরা একটু তন্বী নারীদের বেশি পছন্দ করে থাকে যা সাধারণত বিপরীতকামী মহিলাদের মধ্যে দেখা যায় না। তবে মহিলা সমকামীরা বিপরীতকামী মহিলাদের তুলনায় অধিক এক্সারসাইজ করে যদিও তা বিপরীতকামী মহিলাদের মতো সৌন্দর্যের কারণে নয়। মহিলা সমকামীদের মধ্যে ওবেসিটির কারণ জানার জন্য গবেষণার প্রয়োজন।

সমকামী ও বিপরীতকামী মহিলাদের মধ্যে মেডিক্যালে খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় মহিলাদের স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলির ক্ষেত্রেও লেসবিয়ান ও নন-লেসবিয়ান পার্থক্য থাকে না। মহিলা সমকামীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের তথ্যও অসম্পূর্ণ। মহিলা সমকামীদের মধ্যে পাপ স্মিয়ার পরীক্ষা খুবই কম হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে উপস্থিতি জানতে পারাটা খুব কঠিন। বিপরীতকামী মহিলাদের তুলনায় সমকামী মহিলাদের মধ্যে ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার সংখ্যা বেশি। এর কারণ হয়তো এটাই যে, বেশিরভাগ মহিলা সমকামীদের প্রেগনেন্সি, অ্যাবরশন, জন্মনিরোধক বা ব্রেস্ট ফিডিং এর মতো কিছুই হয় না।

কিছু যৌনরোগ মহিলাদের মধ্যে সংক্রামিত হয় এবং হিউম্যান প্যাপিলোমা-ভাইরাস (এইচ.পি.ভি), জেনিটাল ওয়ার্টস-স্কোয়ামস ইন্ট্রাএপিথেলিয়াল লেইসনস্, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, সিফিলিস এবং হার্পিস সিম্প্লেক্স ভাইরাস, ইত্যাদিও। নির্দিষ্টভাবে মহিলাদের মধ্যে সংক্রামিত রোগগুলির সংক্রমণ নির্ভর করে কোন মহিলার অন্য মহিলার সাথে যৌনাচারের ওপর। সার্ভিক্যাল সিক্রেশন, ভ্যাজাইনাল মিউকোসা বা ঋতুচক্রের রক্ত যদি আঙুল বা ঢোকানোর মতো কোনকিছুর সংস্পর্শে আসে তাহলে তার দ্বারা সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ডিজিজ বা যৌনরোগ ছড়াতে পারে। মুখের সাথে যৌনাঙ্গের সংস্পর্শ যৌনরোগের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় যেমন এইচ.এস.ভি-এর সংক্রমণ (এমনকি পুরুষের সাথে যৌন সংস্পর্শে না আসা মহিলাদের মধ্যেও)।

ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস (বি.ভি) মহিলা সমকামীদের মধ্যে বেশি হয় তবে বি.ভি যৌনরোগ কিনা এই ব্যাপারটি স্পষ্ট নয় কারণ এটি যৌন সম্পর্কে থাকা অথবা না থাকা মহিলাদের মধ্যেও সংক্রামিত হয়। মহিলা সমকামীদের সম্পর্কে বি.ভি দুইজন সঙ্গীরই হয় এবং এটা মূলত সম্প্রতি চলা একটি গবেষণায় পাওয়া যায়। এখানে দেখা যায় যে, বি.ভি আছে এমন ৮১% মহিলার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গীরও বি.ভি আছে। মহিলা সমকামীদের এইচ.আই.ভি-এর সংক্রমণের ক্ষেত্রে আলাদা ভাগ হিসেবে ধরা হয় না যদিও ভ্যাজাইনাল ও সার্ভিক্যাল সিক্রেশনের দ্বারা সংক্রমণ সম্ভব। মহিলা সমকামীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এইচ.আই.ভি-এর সংক্রমণ তাদের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যারা ড্রাগ নেয় ও উভকামী পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়।

মানসিক

মেডিক্যাল সাহিত্যে এমনভাবেই সমকামিতার বর্ণনা দেওয়া শুরু হয় যে এর গোড়ার কারণ হিসেবে প্রায়ই মানসিক বিকৃতি খোঁজার চেষ্টা চালানো হয় এবং এগুলো মূলত সিগমান্ড ফ্রয়েডের তত্ত্ব দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। যদিও তিনি সব মানুষের মধ্যে সমকামের লক্ষণ আছে বলে মনে করতেন ও ভাবতেন যে সমকামিতা একটি সময় মাত্র, সম্পূর্ণভাবে সমকামিতাকে তিনি একটি ট্রমা বা অভিভাবকদের মধ্যে অশান্তি দেখে বড় হওয়ার ফল বলে মনে করতেন। মহিলা সমকামীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আরও তথ্য মূলত তাদের অবসাদ, বিদ্বেষের স্বীকার হওয়া ও আত্মহত্যাকে ঘিরে ছিল। যদিও এই সমস্যাগুলি মহিলা সমকামীদের মধ্যে স্পষ্ট ছিল তবুও এর কারণ হিসেবে সমকামিতাকে একটি বিষয়ের মধ্যে ধরার চল বন্ধ হয়ে যায় যখন ১৯৭৩ সালে 'ডায়াগনোস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল' থেকে সমকামিতাকে এক্ষেত্রে বাদ দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে পশ্চিমা সমাজে সমকামীদের সামাজিকভাবে একঘরে করে দেওয়া, আইনি ভেদাভেদ, নেতিবাচক ধারণার ফলে বিদ্বেষ ও তাদের প্রতি খুব সীমিত সমর্থনকে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ হিসেবে দেখা হয়।

যেসব মহিলারা নিজেদের সমকামী বলে পরিচয় দ্বান করে তারা নিজদের আলাদা মনে করে ও বাকিদের থেকে আলাদা থাকতে বাধ্য হয়। এই ভাবনাগুলি মহিলা সমকামীদের মধ্যে গড়ে ১৫ বছর বয়স থেকে ও উভকামীদের মধ্যে গড়ে ১৮ বছর বয়সে থেকেই আসতে শুরু করে। সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে, মহিলারা নিজেদের ও নিজের কাছের মহিলাদের সার্বিক উন্নতির জন্য চেষ্টা চালায়। তারা তাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা-ভিত্তিক পরিচয় সীমিত কিছু মানুষদের জানায় এবং প্রায়ই বোঝায় যে মহিলা সমকামী হওয়া নিজের আয়ত্তে নিজের পছন্দের ওপর।

অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডার ও অবসাদ হলো মহিলাদের দুটো সবচেয়ে সাধারণ মানসিক সমস্যা। ডিপ্রেশন বা অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা সমকামী মহিলাদের মধ্যে বিপরীতকামী মহিলাদের মতোই ছিল যদিও অ্যানজাইটি জনিত ডিসঅর্ডার সমকামী মহিলাদের মধ্যেই বেশি ছিল। যেসব মহিলারা নিজের যৌনাকাঙ্ক্ষা ও যৌন-পছন্দ তাদের বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের থেকে লুকিয়ে রাখাই শ্রেয় বলে মনে করতো সেইসব মহিলাদের মধ্যেই অবসাদ খুবই স্পষ্ট একটি সমস্যা। পুরুষদের দ্বারা বর্ণিত মহিলাদের যৌনাকাঙ্ক্ষার ফলে মহিলা সমকামীরা নিজের শরীরকে কীভাবে দেখবেন তার ওপর প্রভাব সৃষ্ট হয়। গবেষণা থেকে জানা যায় যে, সমকামী মহিলা ও বিপরীতকামী পুরুষদের মধ্যে কোন নারীরা আকর্ষণীয় তা নিয়ে ভিন্ন ধারণা বর্তমান। যেসব মহিলা সমকামীরা পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজেদের দেখতো তারা প্রায়ই হীনম্মন্যতা, খাওয়াদাওয়ার সমস্যা ও অতিরিক্ত অবসাদে ভুগতো। ১৯৯৪ সালের একটি সার্ভের উত্তরদাতাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মহিলা সমকামীদের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার বিষয়ে জানায় যে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার ভাবনা কখনো না কখনো এসেছে এবং তাদের ১৮% পূর্বে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছে।

ন্যাশনাল অ্যালকোহল রিসার্চ সেন্টারের একটি জনসংখ্যা ভিত্তিক স্টাডিতে জানা যায় যেসব মহিলারা নিজেদের সমকামী বা উভকামী বলে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে মদ ছাড়ার প্রবণতা কম। সমকামী ও উভকামী মহিলারা অ্যালকোহল সেবনের সমস্যা নথিভুক্ত করলেও তার প্রতিকারের পদ্ধতিতে নারাজ ছিলেন। মহিলা সমকামীদের অনেকগুলি কমিউনিটি পানশালা ঘিরে তৈরি এবং মদ সেবনের দ্বারা তারা সমকামী বা উভকামীদের দলে যোগদান করাকে ইঙ্গিত করেন।

প্রচারমাধ্যমের চিত্রায়ন

সাহিত্য, সিনেমা ও টেলিভিশনে দেখানো মহিলা সমকামীদের চরিত্রগুলির মাধ্যমে প্রায়ই সেই সময়ে মহিলাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কিত ভাবনাই প্রতিফলিত হয়। মহিলা সমকামীদের নিয়ে বেশিরভাগ প্রচারমাধ্যমের বিনোদন পুরুষরাই সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নিয়েছে।[৯২] ১৯৭০ এর দশক অবধি মহিলাদের প্রকাশনী কোম্পানিগুলি গঠিত হয়নি, ১৯৮০ এর দশক অবধি মহিলাদের দ্বারা সৃষ্ট মহিলা সমকামীদের বিষয়ে তৈরি সিনেমা দেখা যায়নি এবং টেলিভিশন শো'গুলিতে মহিলাদের লেখা মহিলা সমকামী চরিত্রের আবির্ভাব একবিংশ শতাব্দীতেই ঘটেছিল। ফলস্বরূপ, সমকামিতা-যা শুধুমাত্র মহিলাদের ওপর ভিত্তি করেছিল সেটা ধ্বংসের প্রতীক হিসেবে ব্রাত্য ছিল। যখন মহিলা সমকামীদের বর্ণনার চর্চা হতে লাগলো, সেগুলি প্রায়ই একপাক্ষিক, খুব সাধারণ ও স্টিরিওটাইপ হয়ে উঠেছিল।[৯৩]

সাহিত্য

সাপ্পোর সম্পাদনাগুলোর সাথে সাথে সাহিত্যের ঐতিহাসিক জেনেট হাওয়ার্ড ফস্টার 'বুক অফ রুথ' এবং প্রাচীন পৌরাণিক কিছু আচারকে ক্লাসিক সাহিত্যে মহিলাদের সমকামিতার উদাহরণ হিসেবে যোগ করেন। গ্রীকদের স্বর্গের গল্পে প্রায়ই এমন একটি নারী চরিত্র দেখা যায় যার পবিত্রতা ও সতীত্ব নষ্ট হয়নি, যার মধ্যে অধিকমাত্রায় পুরুষালি গুণ ও বৈশিষ্ট্য ছিল এবং যাকে অবিবাহিত নারীদের একটি দল অনুসরণ করতো। ফস্টার বলেন ক্যামেলিয়া ও ডায়না, আর্টেমিস ও ক্যালিস্টো এবং আইফিস ও আয়ান্থে হলো এমন পৌরাণিক নারী চরিত্রের উদাহরণ যারা একে অপরের প্রতি আশ্চর্যজনক টান ও উৎসর্গের নজির রেখেছে ও লিঙ্গভিত্তিক আশা ও দায়কে অগ্রাহ্য করে। গ্রীকদের এমন কিছু পৌরাণিক নারী চরিত্রের গল্প ছড়ানোর জন্য ক্রেডিট দেওয়া হয় যারা মূলত যোদ্ধা, এদের 'অ্যামাজনস্' বলা হয়। এন-হেডু-অ্যানা যিনি প্রাচীন ইরাকের মহিলা পুরোহিত ছিলেন নিজেকে সুমেরিয়ান দেবী ইনান্নার প্রতি উৎসর্গ করেছিলেন। এনাকে ইতিহাসে সবচেয়ে পুরনো ও প্রাচীন কবিতাগুলি গাওয়ার জন্য মনে রাখা হয়। ইনি নিজেকে "ইনান্নার প্রেমিকা/সঙ্গী" হিসেবে পরিচয় দিতেন।

রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর দশ শতক ধরে সাহিত্য থেকে মহিলাদের সমকামিতা উধাও হয়ে যায়। ফস্টার নির্দিষ্টভাবে একটি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন যে, ইভ যিনি কিনা সকল নারীজাতির প্রতীক তিনিই মনুষ্যত্বের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ান। মহিলাদের মধ্যে এই পাপ সর্বজনজ্ঞাত ছিল ও চিন্তার কারণ ছিল যেহেতু মহিলারাই জীবন সৃষ্টি করে। এই সময়ে মহিলারা মূলত অশিক্ষিত ছিল এবং বুদ্ধিমত্তা ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ দেওয়া হত না। তাই যৌনাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কিত ধারণাগুলি পুরুষরাই নির্ধারণ করতো।[৯৪]

পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ সাহিত্যে মহিলাদের মধ্যে সম্পর্ক দেখানো হয় যেখানে লেখকের লেখার ধাঁচ বিদ্বেষ সহ্য করা থেকে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টির দিকে মোড় নেয় এবং শেষমেশ একটি পুরুষের যোগদানের দ্বারা রতিক্রিয়ার শেষ ইঙ্গিত করা হয় (১৬৬৫ সালে ব্র‍্যান্টমের লেখা 'লাইভস অফ গ্যালান্ট লেডিজ', ১৭৪৯ সালে জন ক্লেল্যান্ডের লেখা 'মেমরিজ অফ আ ওম্যান অফ প্লেজার', ১৭৭৮ সালে বিভিন্ন লেখকের 'লেস্পিয়ন অ্যাংলেস')। মহিলাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়তে এই সময় প্রায়শই উৎসাহ দেওয়া হত, পুরুষের কোনরকম আপত্তি ছিল না যেহেতু তারা মহিলাদের মধ্যে সম্পর্ককে পুরুষের অনুপস্থিতি বা অভাবের ঘাটতি বলে মনে করতো। তারা মহিলাদের সমকামী সম্পর্ককে নারী ও পুরুষের পূর্ণতাপ্রাপ্ত যৌন সহবাসের সাথে তুলনার যোগ্য বলে মনে করতো না। যদি একজন মহিলা অন্য মহিলার সাথে জড়িত হত তাহলে সে অচিরেই করুণ চরিত্রে পরিণত হত। শারীরিক ও মানসিকভাবে সন্তুষ্টিলাভ পুরুষাঙ্গ ছাড়া অসম্ভব বলে মনে করা হত। তাই মহিলাদের সম্পর্কে পুরুষের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে উঠেছিল যখন একজন মহিলা নিজেকে পুরুষ ভাবতে ভাবতে পুরুষের মতো সামাজিক সুযোগসুবিধা দাবী করে বসে।

পারস্যের চিত্রশিল্পী লেসবিয়ানিজমের সাথে পতিতাবৃত্তির যোগসূত্রের ইঙ্গিত করেছেন।.

ঊনবিংশ শতাব্দীতে ফ্রেঞ্চ সাহিত্যে মহিলাদের সমকামিতা খুবই দুর্লভ হয়ে ওঠে এবং এটা মূলত পুরুষের ফ্যান্টাসি কেন্দ্রিক ও তথাকথিত নৈতিকতার ভিত নাড়িয়ে দেওয়ার মতো ছিল। অনারে ডি বালজাক ১৮৩৫ সালে তার লেখা 'দ্য গার্ল উইথ দ্য গোল্ডেন আইজ'-এ প্যারিসের তিনজনের মধ্যে মহিলা সমকামিতার সম্পর্ক দেখান। এর পরে আবার তিনি 'কাজিন বেটি' ও 'সেরাফিটা'-তেও একইধরনের নজির রাখেন। ওনার কাজের দ্বারা ঔপন্যাসিক থিওফিল গটার অনুপ্রাণিত হন ও 'ম্যাডেময়সেলে ডে মপিন' লেখেন যেখানে প্রথম একটি শারীরিক বর্ণনার দ্বারা মহিলা সমকামীকে ব্যক্ত করা হয়: লম্বা, চওড়া কাঁধ, সরু পাছা এবং খেলোয়াড়সুলভ চেহারা। চার্লস বডেলেয়ার পরপর মহিলাদের সমকামিতাকে তার কবিতা 'লেসবস', 'ফেম্মেস ড্যামনেস ১' (ড্যামনড্ উইমেন) ও 'ফেম্মেস ড্যামনেস ২'-তে থিম তথা বিষয় হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

তৎকালীন ফ্রেঞ্চ সমাজকে প্রতিফলিত করার দরুন ঊনবিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ ফ্রেঞ্চ সাহিত্যে মহিলা সমকামীদের বেশ্যা বা বারবনিতা হিসেবে দেখানো হয়: যাদের মূলত তাড়াতাড়ি মৃত্যু হয় বা শেষে নৈতিকভাবে ভয়ঙ্কর সহিংস মৃত্যু হয়। স্যামুয়েল টেলর কলরিজের ১৮১৬ সালের কবিতা 'ক্রিস্টাবেল' এবং শ্রিডান লে ফানুর ১৮৭২ সালের উপন্যাস 'কারমিলা' দুটোতেই মহিলাদের সমকামিতাকে রক্তখেকো ড্রাকুলার (ভ্যাম্পায়ারিজম) সাথে যুক্ত করা হয়। মহিলাদের সমকামিতা বর্ণিত করার ফলে শুধুই ইউরোপে এটা নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে তা নয়, ক্র‍্যাফট-এবিং বলেন যে গুস্তাভ ফ্লবার্টের 'সালামবো' (১৮৬২) এবং আর্নেস্ট ফঁদেওর 'লে কমটে ডে চালিস' (১৮৬৮) এর চরিত্রগুলি মহিলা সমকামীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দুটো উপন্যাসেই মহিলা প্রোটাগনিস্টরা সমাজের নির্ধারিত ধারণাকে অগ্রাহ্য ক'রে "অন্যরকম যৌনতা ও আবেগ"-কে প্রকাশ করে যদিও তারা সমকামী সম্পর্কে লিপ্ত হয়নি। হ্যাভলক এলিস আবার বালজাক ও অন্যান্য ফ্রেঞ্চ কবি ও লেখকদের লেখা থেকে মহিলাদের মধ্যে সমকামিতা বোঝাতে অনেক উদাহরণ তুলে ধরেছেন।

ধীরে ধীরে মহিলারা নিজেরাই নিজেদের ধারণা ও সমকামী সম্পর্কগুলোকে তুলে ধরতে নিজেরাই কলম ধরে। 'দ্য ওয়েল অফ লোনলিনেস' প্রকাশকালের আগে পর্যন্ত মহিলাদের সমকামিতা সম্বন্ধীয় বেশিরভাগ লেখনীগুলি পুরুষদের দ্বারাই সৃষ্ট ছিল। ফস্টার বলেন যে, মহিলারা যদি সমকামী সম্পর্ককে বিষয় হিসেবে লেখে তাহলে তার নিজের জীবন সম্পর্কে সন্দেহের উদ্বেগ হয়। লুসি লেব, চার্লট চার্ক ও মার্গারেট ফুলারের এই ধরনের কিছু লেখনীতে হয় তারা হয় পুরুষের সাপেক্ষে লিখেছেন আর নাহয় তাদের লেখায় কথকের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর বহু সৃষ্টিতে লেখক জর্জ স্যান্ডকে বর্ণিত করা হয়েছে। লেখিকা মারিও প্রাজ মহিলাদের মধ্যে সমকামের জনপ্রিয়তার জন্য ১৮৩০ এর দশকে প্যারিসের সমাজে স্যান্ডের উপস্থিতিকে ক্রেডিট দেন। ১৮৫৩ সালে চার্লট ব্রনটের 'ভিলেট'-এর মাধ্যমে প্রথম বোর্ডিং স্কুলকে ঘিরে সমকামিতার বিষয়বস্তুর চল শুরু হয়।

বিংশ শতাব্দীতে ক্যাথারিন ম্যান্সফিল্ড, অ্যামি লয়েল, গার্ট্রুড স্টেন, এইচ.ডি, ভিটা স্যাকভিল-ওয়েস্ট, ভার্জিনিয়া উল্ফ ও গেল উইলহেল্ম প্রমুখ বিখ্যাত কিছু লেখনীতে সমকামিতাকে মূল বিষয়বস্তু হিসেবে তুলে ধরেন। কিছু মহিলা যেমন মার্গারিট ইয়ারসেনার ও মেরি রেনল্ট কিছু লেখা লেখেন ও এমনকিছু লেখা অনুবাদ করেন যা মূলত পুরুষ সমকামী-কেন্দ্রিক যেমন কার্সন ম্যাককুলার্সের কিছু লেখাও এই ধরনেরই। এদের তিনজনই সমকামী সম্পর্কে লিপ্ত ছিল কিন্তু প্রাথমিকভাবে তাদের বন্ধুত্ব ছিল পুরুষ সমকামীদের সাথে। ফস্টার আরও বলেন যে ১৯২৮ সালটা ছিল লেসবিয়ান থিমের সাহিত্য উত্থানের চরম সময়। 'দ্য ওয়েল অফ লোনলিনেস' এর সাথেও আরও তিনটি উপন্যাস ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হয় যেগুলোর মূল বিষয়বস্তু মহিলাদের সমকামিতা: এলিজাবেথ বয়েনের 'দ্য হোটেল', উল্ফের 'অরনাল্ডো' এবং কম্পটন ম্যাকেনজির 'এক্সট্রা-অর্ডিনারি উইমেন'। এদের মধ্যে 'দ্য ওয়েল অফ লোনলিনেস' ছাড়া কোনটাই নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়নি।

পেপারব্যাক দেওয়া বইয়ের চল শুরু হয় এবং লেসবিয়ান থিমকে পাল্প ফিকশনের মধ্যে আনা হয়। পাল্প উপন্যাসের অনেকগুলিই দুখী, অসুখী মহিলাদের বর্ণিত করে যাদের সম্পর্কগুলো দুঃখের সাথে শেষ হয়। মারিজান মিকার পরে লেখেন যে, তাকে বলা হয়েছিল যেন 'স্প্রিং ফায়ার'-এ সম্পর্কের খারাপ পরিণতি লেখা হয় কারণ প্রকাশকরা বইটিকে আমেরিকার ডাক ব্যবস্থা দ্বারা বাজেয়াপ্ত করার সম্ভাবনা নিয়ে ভীত ছিলেন। প্যাট্রিসিয়া হাইস্মিথ যিনি ক্লার মর্গান নামে লিখতেন, ১৯৫১ সালে 'দ্য প্রাইস অফ সল্ট' লেখেন এবং এই চলটিকে অগ্রাহ্য করেন, তিনি শেষমেশ একটি ছদ্ম অর্থ ইঙ্গিত করেন।

স্টোনওয়াল রায়টস এর পরে সাহিত্যে লেসবিয়ান থিম অনেক বিস্তৃত ও জটিল হয়ে ওঠে। এই সময় বিপরীতকামী পুরুষদের জন্য লেখা মহিলাদের সমকামিতা ও যৌনাকাঙ্ক্ষা থেকে কেন্দ্রবিন্দু সরে গিয়ে মূলত মহিলা সমকামীদের দ্বারা ও তাদের জন্য সৃষ্টি কাজগুলি গুরুত্ব পেল। 'দ্য ফ্যুরিস' ও 'সিনিস্টার উইসডম' এর মতো নারীবাদী ম্যাগাজিনগুলি ক্রমে 'দ্য ল্যাডার'-এর স্থান দখল করলো। লেখিকারা মহিলা সমকামী চরিত্র ও তাদেরকে কেন্দ্র করে চিত্রনাট্য ব্যবহার করতো যেমন রীতা মে ব্রাউনের 'রুবিফ্রুট জাঙ্গল্' (১৯৭৩)-এ একজন নারীবাদী নায়িকার অবতরণ করা হয় যে স্বেচ্ছায় সমকামী হয়ে যায়। কবি অড্রে লর্ড তার সৃষ্টির মাধ্যমে সমকাম-বিদ্বেষ ও রেসিজমকে বিঁধেন। উনি মূলত শিশুদের ওপর সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ ও উন্নত লেসবিয়ান থিম এর ওপর জোর দেন।

সিনেমা

লেসবিয়ানিজম এর ওপর সিনেমা প্রথম থেকেই তৈরি হয়। সাহিত্যে মহিলা সমকামীদের বর্ণনা, সমাজ তাদের কীভাবে দেখতো ইত্যাদিই সিনেমাগুলির বিষয়বস্তু ছিল। মহিলারা খুব সহজেই নিজের নারীত্বকে অগ্রাহ্য করতে পারতো এবং পুরুষরা নিজেদের ক্ষেত্রে তা সহজে পারতো না। ১৯১৪ সালে 'আ ফ্লোরিডা এনচ্যান্টমেন্ট' নামক সিনেমায় চিত্রনাট্যের কারণে অভিনেত্রীরা পুরুষের চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করে এবং এখান থেকেই এডিথ স্টোরির আবির্ভাব হয়। ১৯৩০ সালে মরক্কোতে মার্লেন ডাইট্রিচ অন্য এক মহিলার ঠোঁটে চুমু খান এবং ১৯৩৩ সালে ক্যাথারিন হেপবার্ন 'ক্রিস্টোফার স্ট্রং'-এ পুরুষের চরিত্রে অভিনয় করেন ও ১৯৩৬ সালে 'সিলভিয়া স্কারলেট'-এ আবার তা করেন। হলিউডের সিনেমাগুলি এই একই ধারা অনুসরণ করে, জনগণই হার্লেমে গিয়ে উভকাম বিষয়ক শো'গুলি দেখার জন্য ভিড় জমিয়ে এই ধারা ঠিক করে দেয়।

১৯২৯ সালে 'প্যান্ডোরাস বক্স'-এ লুসি ব্রুকস ও অ্যালিস রবার্টস মহিলাদের মধ্যে অতিরিক্ত সমকামের প্রথম প্রকাশ করেন। যাই হোক, ১৯৩০ সালে হেস কোডের জন্য সমকামিতার অনেক উল্লেখকে 'সেক্স পারভার্শন' নামক সিনেমাটি থেকে নিষিদ্ধ করে। জার্মান সিনেমাগুলিতে সমকামিতা দেখানো হয় ও সেগুলি ইউরোপ জুড়ে বণ্টন করা হয়। কিন্তু ১৯৩১ সালের 'ম্যাডচেন ইন ইউনিফর্ম' সিনেমাটিতে বোর্ডিং স্কুলের একটি মহিলা শিক্ষিকার প্রতি প্রেমের জন্য সেটি আমেরিকায় চলতে দেওয়া হয়নি।

লেসবিয়ানিজম বা সমকামিতা নিয়ে দ্য চিলড্রেনস আওয়ারে কখনো কথা বলা হয় নি, তবে এটা পরিষ্কার ছিল কেন শার্লি ম্যাকলেইনের চরিত্রটি গলায় ফাঁস দিয়েছিল।

হেস কোডের জন্য ১৯৩০ সালের পরে বেশিরভাগ সিনেমা থেকেই মহিলাদের সমকামিতা অনুপস্থিত ছিল, এমনকি সেই সিনেমাগুলিতেও যেখানে অতিরিক্ত সমকামী চিত্রনাট্য ছিল। লিলিয়ান হেলম্যানের নাটক 'দ্য চিলড্রেনস আওয়ার'কে একটি বিপরীতকামী 'লভ ট্রায়াঙ্গল'-এ পরিণত করা হয় এবং 'দিজ থ্রি' নাম দেওয়া হয়। ১৯৩৩ সালে 'কুইন ক্রিশ্চিনা' নামক বায়োপিকে যিনি নায়িকা ছিলেন (গ্রেটা গার্বো) তিনি স্যুইডেনের ক্রিশ্চিনার সাথে মহিলাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা সুকৌশলে ধামাচাপা দেন। সমকামিতা বা লেসবিয়ানিজমের কথা হেস কোড চালু হওয়ার সময় কখনো উল্লিখিত হয়নি। ১৯৫৪ সালে 'দ্য পিট অফ লোনলিনেস' থেকে একটি মহিলা সমকামীর দৃশ্য সরিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে সেন্সর জানায় যে, "অনৈতিকতা নৈতিকতাকে অচিরেই গ্রাস করে"। ১৯৬১ সালের পরে এই কোডটি নমনীয় হয়। তার পরের বছর উইলিয়াম উইলার 'দ্য চিলড্রেনস আওয়ার' সিনেমাটি অড্রি হেপবার্ন ও সির্লি ম্যাকলেনের সাথে আবার তৈরি করেন। ম্যাকলেনের চরিত্র হেপবার্নের চরিত্রের প্রতি প্রেম প্রকাশ করার পর সে নিজে ফাঁসি নেয়; এটি সমকামিতা ঘিরে বানানো সিনেমা হিসেবে একটি হতাশাজনক শেষ উপস্থাপিত করে।

পুরুষ সমকামী চরিত্রগুলিরও প্রায়ই শেষে মৃত্যু হত যেমন ১৯৬৮ সালে 'দ্য ফক্স' সিনেমায় স্যান্ডি ডেনিসের চরিত্রের মৃত্যু। অসহায় হিসেবে উপস্থাপিত না করলে মহিলা সমকামীদের হয় খলনায়িকা হিসেবে দেখানো হত বা অসৎ হিসেবে যেমন ১৯৬২ সালে 'ওয়াক অন দ্য ওয়াইল্ড সাইড'-এ বারবারা স্ট্যানউইকের দ্বারা ব্রথেল ম্যাডামস এর চিত্রায়ণ থেকে শুরু করে ১৯৬৩ সালের 'দ্য ব্যালকনি'-তে শেলি উইন্টার্স এর চরিত্র। ১৯৪০ সালের 'রেবেকা'-তে মহিলা সমকামীদের আক্রমণাত্মক হিসেবে দেখানো হয় বা মহিলাদের জেল নিয়ে তৈরি সিনেমা 'কেজড'-এ(১৯৫০) বা ১৯৬৩ সালের 'ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ' সিনেমাটিতে রোসা ক্লেবের চরিত্রটির দ্বারা। ১৯৩৬ সালে 'ড্রাকুলাস ডটার', ১৯৬০ এর 'ব্লাড অ্যান্ড রোসেজ', ১৯৭১ এর 'ভ্যাম্পাইরোস লেসবস' ও ১৯৮৩ এর 'দ্য হাঙ্গার' সিনেমাগুলিতে মহিলা সমকামী ভ্যাম্পায়ার দেখানো হয়েছে। ১৯৯২ সালে 'বেসিক ইনস্টিংক্ট' সিনেমাটিতে স্যারন স্টোন একটি উভকামী খুনির চরিত্রে অভিনয় করেন এবং এই সিনেমাটি পুরুষ সমকামীদের আক্রমণাত্মক হিসেবে দেখানোর জন্য প্রচুর প্রতিবাদ ও রোষের মুখে পড়ে।

১৯৬৮ সালের 'দ্য কিলিং অফ সিস্টার জর্জ' সিনেমাটি মহিলা সমকামী বিষয়ক প্রথম গভীর সিনেমা ছিল। 'দ্য গেটওয়েস ক্লাব' নামক লন্ডনের একটি পাবে সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল। এই সিনেমাটিতে প্রথম নিজেকে মহিলা সমকামী বলে পরিচয় দেওয়া চরিত্র দেখানো হয় এবং ফিল্ম ঐতিহাসিক ভিতো রুসো একে একটি মহিলা সমকামীর অন্য মহিলা সমকামীদের প্ররোচনায় নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখার জটিলতা বলেন। ১৯৮২ সালের 'পার্সোনাল বেস্ট' ও ১৯৮৩ সালের 'লিয়ানা'-তে দক্ষতার সহিত মহিলা সমকামীদের সম্পর্ক দেখানো হয় এবং তাদের সহবাসও দেখানো হয় যদিও দুটি সিনেমাতেই সম্পর্কগুলি সুখের ছিল না। 'পার্সোনাল বেস্ট'কে তার ক্লিশে চিত্রনাট্যের জন্য সমালোচনা করা হয়। মহিলাদের সমকামী চরিত্রদের সবচেয়ে অস্পষ্ট উপস্থাপনা দেখা যায় 'সিল্কউড'(১৯৮৩), 'দ্য কালার পার্পল'(১৯৮৫) ও 'ফ্রায়েড গ্রিন টম্যাটোস' (১৯৯১) সিনেমাগুলিতে যদিও এগুলোয় সমকামিতার যথেষ্ট উপকরণ উপস্থিত ছিল।

স্বাধীনভাবে সিনেমা তৈরির যুগে লেখক, পরিচালক ও ভিন্ন গল্পগুলি সিনেমার ছত্রছায়ায় আসে। ১৯৮৫ সালের 'ডেসার্ট হার্ট' ভীষণভাবে সফল হয়। এটি জেন রুলের উপন্যাস 'ডেসার্ট অফ দ্য হার্টস' এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি ও মহিলা সমকামী ডোনা ডিচের দ্বারা পরিচালিত। এটি মধ্যবর্তী রিভিউ পেলেও পুরুষ সমকামীদের প্রেস দ্বারা প্রশংসিত হয়। ১৯৮০ এর দশকের শেষদিকে ও ১৯৯০ এর দশকের প্রথম দিকে এমন কিছু গাম্ভীর্যপূর্ণ সিনেমা মুক্তি পায় যেখানে পুরুষ ও মহিলা সমকামীদের সমানভাবে বিচার করা হয় এবং এগুলি মূলত 'নিউ ক্যুইর সিনেমা' নাম নিয়ে পুরুষ ও মহিলা সমকামীরাই তৈরি করে। যেসব সিনেমার মধ্যে মহিলাদের সমকামিতাকে বিষয় হিসেবে দেখানো হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৯৪ সালের রোজ ট্রচের রোম্যান্টিক কমেডি 'গো ফিশ' ও আফ্রিকান আমেরিকান মহিলা সমকামীদের ওপর তৈরি প্রথম সিনেমা শেরিল ডানির 'দ্য ওয়াটারমেলন ওম্যান' (১৯৯৫)।

মহিলা সমকামীদের দেখানো সিনেমাগুলিতে বাস্তবতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল কিছু ভালোবাসার গল্পে যেমন ১৯৯৫ সালের 'দ্য ইনক্রেডিবলি ট্রু অ্যাডভেঞ্চার অফ টু গার্লস ইন লভ' ও 'হোয়েন নাইট ইজ ফলিং', ১৯৯৯ সালের 'বেটার দ্যান চকোলেট' এবং ১৯৯৯ সালের সামাজিক ছবি 'বাট আয়্যাম আ চিয়ারলিডার'-এ। মহিলা সমকামীদের আক্রমণাত্মক চরিত্রে দেখানোর মধ্যে তাদের চরিত্রগুলির উপস্থাপনায় জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছিল যেমন পিটার জ্যাকসনের 'হিভেনলি ক্রিয়েচার্স' (১৯৯৪), এলিন ওয়র্নোসের অস্কারপ্রাপ্ত বায়োপিক 'মনস্টার' (২০০৩), ১৯৯৭ সালের 'চেসিং এমি', ২০০১ সালের 'কিসিং জেসিকা স্টেন' ও ১৯৯৯ সালের 'বয়েস ডোন্ট ক্রাই'-এর ক্ষেত্রে দেখা যায়। 'ভি ফন ভেনডেট্টা' সিনেমাটিতে ভবিষ্যতের ব্রিটেনে একটি একনায়কতন্ত্র দেখানো হয় যেখানে সমকামী ও সমাজের অন্যান্য ধরনের মানুষদের 'নাজি কন্সানট্রেশন ক্যাম্পস' গুলিতে নিয়মমাফিক হত্যা করা হয়। এই সিনেমায় ভ্যালেরি নামক সমকামী অভিনেত্রী যার চরিত্রটিকে এইভাবেই হত্যা করা হয়, সে ক্রমে মাস্কড রেবেল ৫ ও তার অ্যালি ইভি হ্যামন্ডকে (যে পরবর্তীকালে রাজত্বের অবসান ঘটায়) অনুপ্রাণিত করে।

থিয়েটার

প্রথম নাট্যমঞ্চে মহিলা সমকামীর মধ্যে চুম্বন ও দুটি মহিলার মধ্যে খোলাখুলিভাবে ভালোবাসা দেখানো হয় ১৯০৭ সালের সোলেম আস্ক পরিচালিত একটি ইদিশ নাটক 'গড অফ ভেঞ্জেয়ান্স'-এ। রিভকেল নামক একটি যুবতী মহিলা ও মানকে নামক একজন বেশ্যার (যে তার বাবার পরিচালিত বেশ্যালয়ে কাজ করতো) মধ্যে প্রেম হয়। ১৯২৩ সালে মার্চের ৬ তারিখ নিয় ইয়র্ক সিটি থিয়েটারে একটি নাটকের উপস্থাপনা চলাকালীন প্রযোজক ও অভিনেতাদের জানানো হয় যে তাদের একটি গ্র‍্যান্ড জুরির পক্ষ থেকে একটি পেনাল কোড লঙ্ঘন করার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এই পেনাল কোডটি তাদের উপস্থাপনাকে অশ্লীল, অসভ্য, অনৈতিক ও অপবিত্র থিয়েটার উপস্থাপনা বলে। পরের দিন যখন তারা বিচারকের সামনে হাজিরা দের, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দুইমাস পরে তাদেরকে জুরি ট্রায়ালে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রযোজকদের ২০০ ডলার ফাইন করা হয় এবং অভিনেতাদের তিরস্কার করা হয়। কয়েকজনের মতে এই নাটকটি "ইদিশ থিয়েটারের সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক"। 'গড অফ ভেঞ্জেয়ান্স' নাটকটি ২০১৫ সালে পলা ভগেলের তৈরি 'ইনডিসেন্ট' নাটকটিকে অনুপ্রাণিত করে যেখানে মহিলা সমকামী চরিত্র রিফকেলে ও মানকেকে দেখানো হয়। ২০১৭ সালে 'ইনডিসেন্ট'কে সর্বসেরা নাটক হিসেবে টনি অ্যাওয়ার্ডের জন্য এবং অসাধারণ নাটক হিসেবে ড্রামা ডেস্ক অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হয়।

ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল 'দ্য প্রম'-এ মহিলা সমকামীর চরিত্র এমা নোলান ও অ্যালিসা গ্রিনকে উপস্থাপিত করা হয়। ২০১৯ সালে এর প্রযোজক সংস্থা ছয়টি টনি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয় যার মধ্যে বেস্ট মিউজিক্যাল বিভাগও ছিল এবং অসাধারণ মিউজিক্যালের জন্য ড্রামা ডেস্ক অ্যাওয়ার্ড পায়। 'দ্য প্রম' এর একটি উপস্থাপনা ২০১৮ সালে 'মেসিস থ্যাঙ্কসগিভিং ডে প্যারেড'-এ যুক্ত হয় এবং সর্বপ্রথম প্যারেডের সমলিঙ্গের মধ্যে চুম্বন দেখিয়ে ঐতিহাসিক নজির গড়ে। 'জ্যাগড্ লিটল পিল'-এ মহিলা সমকামী চরিত্র 'জো'-কে দেখানো হয় যে তার ধার্মিক মায়ের অমান্যতার সাথে লড়াই চালাচ্ছে।

টেলিভিশন

টেলিভিশনে সিনেমার বহু পরে সমকামিতাকে উল্লেখ করা হয়। ১৯৫০ এর শতকের শেষভাগে স্থানীয় টক শো'গুলিতে প্রথম এক্সপার্টদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সমকামিতা নিয়ে আলোচনা করা হত ও মূলত সমাজে পুরুষ সমকামীদের সমস্যাগুলিকে বিষয়বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হত। মহিলাদের সমকামিতাকে খুব একটা যুক্ত করা হত না। ১৯৬০ এর শতকের প্রথমাংশে নেটওয়ার্ক টেলিভিশনে সর্বপ্রথম এন.বি.সি-র ড্রামা 'দ্য ইলেভেনথ আওয়ার'-এ মহিলা সমকামীকে তুলে ধরা হয়। এটি মূলত টেলিপ্লের একজন অভিনেত্রীকে দেখায় যে তার মহিলা পরিচালকের প্রতি আকর্ষিত বোধ করে এবং এই সমস্যায় পড়ে সে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যায়। ইনি তাকে জানান যে, সে একজন সমকামী এবং তার সমকামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট খারাপ লাগা আছে। যখন অভিনেত্রী তা বুঝতে পারে তখন সে নিজের বিপরীতকামী সম্পর্কগুলিকে চালিয়ে যায় এবং এই ব্যাপারটিকে "স্বাস্থ্যকর" বলেই দেখানো হয়েছে।[৯৫]

১৯৭০ এর শতকে যখন সমকামিতাকে নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করাই একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন সেখানে মহিলা সমকামীদের সেভাবে দেখতে পাওয়া যায়নি। প্রথমদিকে মেডিক্যাল ড্রামাগুলিতে (দ্য বোল্ড ওয়ানস, মারকাস ওয়েলবি, এম.ডি, মেডিক্যাল সেন্টার) প্রাথমিকভাবে পুরুষ রোগীদের ডাক্তারের কাছে আসা দেখানো হয়। এই শো'গুলিতে সমকামিতাকে ক্লিনিকের মধ্যে আলোচনা করার বিষয় হিসেবে সম্মতি দেওয়া হয় যেখানে মুখ্য চরিত্র পুরুষ সমকামী চরিত্রকে পথ দেখায় বা সমকাম-বিদ্বষী ভাবধারার সংশোধন করে। আবার সমকামিতাকে সাইকোসিস, অপরাধ প্রবণতা ও ড্রাগ ব্যবহারের সাথে তুলনা করা হয়।[৯৬]

১৯৭০ এর দশকে আরও একটি চিত্রনাট্যের চল ছিল এবং তা হলো পুলিশ ড্রামায় পুরুষ সমকামী চরিত্র। তারা মূলত ব্ল্যাকমেলের শিকার বা সমকামী-বিদ্বেষের দ্বারা অত্যাচারিত চরিত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতো কিন্তু বেশিরভাগ সময় অপরাধী হিসেবেও তাদের দেখানো হয়। ভিতো রুসোর মতে ১৯৬০ সালের শেষ দিকে 'এন.ওয়াই.পি.ডি', 'পুলিশ স্টোরি' ও 'পুলিশ উওম্যান'-এর সাথে সাথে গল্পে সমকামী চরিত্রের ব্যবহার আরও স্পষ্ট হয় ও বাড়তে থাকে।[৯৭] মহিলা সমকামীদের মূলত খলনায়িকা হিসেবে বা নিজেদের যৌনাকাঙ্ক্ষাকে মেরে ফেলার উদ্রেককারী হিসেবে, ভেতরে ভেতরে সমকামিতা-বিদ্বেষ বহনকারী হিসেবে বা সমকামী হিসেবে তাদের পরিচয় প্রকাশ হওয়ার ভয়ে থাকা মানুষ হিসেবে দেখানো হয়। 'পুলিশ উওম্যান' এর একটি পর্ব মুক্তির পূর্বে 'ন্যাশনাল গে টাস্ক ফোর্স' এর প্রতিবাদের মুখে পড়ে কারণ এখানে বাড়িতে বসা অবসরপ্রাপ্ত রোগীদের টাকার জন্য খুনি হিসেবে তিনজন মহিলা সমকামীর একটি দলকে দেখানো হয়।[৯৮] এন.বি.সি প্রতিবাদের ফলে পর্বটিকে সংশোধিত করে, তবে তাদের মূল অফিসে একটি মিটিং এর ব্যবস্থা হয়।[৯৯]

১৯৭০ দশকের মাঝে সমকামী পুরুষ ও মহিলাদের পুলিশ অফিসার হিসেবে বা গোয়েন্দা হিসেবে প্রত্যক্ষ করা হয়, যারা আত্মপ্রকাশ করার ব্যাপারে নানাবিধ সমস্যা ভোগ করছে। তবে কোন শো সিবিএসের জনপ্রিয় শো ১৯৮২ সালের 'কাগ্নি অ্যান্ড লেসি'-কে অতিক্রান্ত করতে পারেনি। এই শো'টিতে দুজন মহিলা গোয়েন্দা পুলিশকে দেখানো হয়। সিবিএস প্রডাকশন সজ্ঞানেই চরিত্রগুলিকে নরম প্রকৃতির দেখায় যাতে তাদের মহিলা সমকামী বলে না বোঝা যায়। ১৯৯১ সালে 'এল.এ.ল'-তে অ্যামান্ডা ডনোহ অভিনীত একজন উভকামী উকিল প্রথম স্পষ্ট সমকামী চুম্বন উপস্থাপিত করেন। এটি মূলত প্রাইমটাইমে চলা শো ছিল এবং চুম্বনটি মিশেল গ্রীনের সাথে ছিল যার ফলে 'দ্য হলিউড রিপোর্টার'-এ যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

১৯৯৭ সালে এলেন ডিজেনেরেস তার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড হাতে। মিডিয়াতে এবং তার সিটকমে সমকামী হিসেবে তার ঘোষণা, "ক্রমতালিকায়, নিঃসন্দেহে সমকামীদের ইতিহাসের সব থেকে প্রকাশ্য বহিঃপ্রকাশ", যা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে লেসবিয়ানদের মিডিয়া উপস্থিতির ধারণাকে পাল্টে দেয়।

যদিও ১৯৮০ এর শতক পর্যন্ত টেলিভিশনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমকামী চরিত্রদের দেখানো হয়নি, তবুও প্রাথমিকভাবে কিছু সিচুয়েশন কমেডি শো'তে এমন চরিত্রদের দেখানো হয় যা লেখক স্টিফেন ট্রপিয়ানোর ভাষায় 'গে-স্ট্রেট' অর্থাৎ সমকামীদের মতো বিপরীতকামী: মূলত সহকারী চরিত্র যারা মজাদার, লিঙ্গভিত্তিক সাধারণ আচরণবিহীন বা এমন ব্যক্তিগত জীবন যা সমকামী হওয়ার জন্য আদর্শ। এই চরিত্রগুলির উদাহরণ 'দ্য মেনি লভস অফ ডবি গিলিস'-এর জেল্ডা, 'দ্য বেভারলি হিলবিলিস'-এর মিস হাথওয়ে ও 'দ্য ফ্যাক্টস অফ লাইফ'-এর জো। ১৯৮০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময় থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত সিটকমগুলিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আত্মপ্রকাশের পর্ব দেখানো হয় যেখানে মূলত মুখ্য চরিত্রের কোন এক বন্ধু নিজেকে মহিলা সমকামী হিসেবে পরিচয় দেয় এবং বাকিদের তার সাথে মানিয়ে নিতে জোর করে। 'ডিজাইনিং উইমেন', 'গোল্ডেন গার্লস' ও 'ফ্রেন্ডস'-এ নির্দিষ্টভাবে এই চিত্রনাট্য ব্যবহার করা হয়।

প্রকাশিত মহিলা সমকামী চরিত্রদের পুনরুদ্ভব দেখা যায় 'ম্যারিড... উইথ চিল্ড্রেন', 'ম্যাড অ্যাবাউট ইউ' ও 'রোসেন'-এ যেখানে অতিরিক্ত প্রচার পাওয়া পর্ব নিয়ে এবিসির এক্সিকিউটিভরা ভীত ছিল যেহেতু রোসেন ও ম্যারিয়েল হেমিংওয়ের মধ্যে চুম্বনদৃশ্যের ফলে রেটিংস খারাপ হতে পারতো। যদিও এই পর্বটি উল্টো সেই সপ্তাহের সর্বোচ্চ রেটেড হয়ে দাঁড়ায়। মহিলা সমকামীদের প্রতিচ্ছবির প্রতি সবচেয়ে স্পষ্ট প্রভাব রাখে 'এলেন' নামক সিটকমটি। ১৯৯৭ সালে এলেনের 'কামিং আউট' পর্ব খুবই প্রচার পেয়েছিল; এলেন ডিজেনেরাস "দ্য পাপি এপিসোড" প্রকাশ করার আগের সপ্তাহেই 'টাইম' ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে "ইয়েপ, আয়্যাম গে" শিরোনামসহ স্থান পায়। আমেরিকার শহরে এই এপিসোডগুলি দেখার জন্য পার্টির ব্যবস্থা করা হত এবং গোঁড়া সংস্থাগুলির থেকে বিরোধের ঘটনাও ছিল তীব্র। বিরমিংহাম, অ্যালবামাতে এবিসির সংস্থা ডব্লিউ.বি.এম.এ-এল.পি স্থানীয় মানুষের গোঁড়া নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে এই এপিসোডটির প্রথমাংশ দেখাতে অস্বীকার করে। এসবের পরেও "দ্য পাপি এপিসোড" তার লেখনশৈলীর জন্য এমি অ্যাওয়ার্ড পায়। কিন্তু যেহেতু শো'টি এলেন মর্গ্যানের যৌনাকাঙ্ক্ষা ঘিরেই প্রতি সপ্তাহে মুক্তি পেত তাই নেটওয়ার্ক এক্সিকিউটিভরা অস্বস্তিজনক বোধ করে এবং শেষমেশ শো'টিকে ক্যান্সেল করা হয়।

'এল.এ.ল' এর পরবর্তী সময়ের নাটকগুলিতে মহিলাদের সমকামিতাকে বিষয় হিসেবে দেখানো হয় এবং 'রিলেটিভিটি', 'পিকেট ফেন্সেস', 'ই.আর', 'স্টার ট্রেক: দ্য নেক্সট জেনারেশন' ও 'ডিপ স্পেস নাইন'-এ চলা গল্পের ধারায় যৌনাকাঙ্ক্ষা ও লিঙ্গের সীমাগুলি নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। 'বাফি দ্য ভ্যাম্পায়ার স্লেয়ার'-এ নির্দিষ্টভাবে খুব গভীর বিষয়গুলিকে দেখানো হয়। এর চতুর্থ সিজনে তারা ও উইলো একে অপরের প্রতি ভালোবাসাকে স্বীকার করে ও এদের কোন আলাদা ভক্ত না থাকলেও এই সম্পর্ক অন্যতম রোমান্টিক সম্পর্ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।[১০০]

এর পরে বেশিরভাগ গল্পই পুরুষ সমকামী চরিত্রদের প্রতি উৎসর্গ করে তৈরি হয়। আমেরিকার 'ক্যুইর অ্যাজ ফোক' সিরিজটি পাঁচ বছর ধরে চলে ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত, এখানে মুখ্য চরিত্রগুলির দুজন মহিলা সমকামী যুগল। শোটাইম এই সিরিজটিকে কোনরকম সীমাহীন বলে প্রচার করে এবং 'ক্যুইর অ্যাজ ফোক'-এ ছবির মাধ্যমে সমকামিতা বেশি ভালোভাবে বর্ণিত করা হয়। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের লাভ হিসেবে এই শো'টি নেটওয়ার্কের হায়েস্ট রেটেড হয়ে ওঠে এবং তা প্রথম সিজনের পর শোটাইমের অন্যান্য প্রোগ্রামের রেটিং এর দ্বিগুণ বেশি ভালো রেটিংপ্রাপ্ত হয়। ২০০৪ সালে শোটাইম 'দ্য এল ওয়ার্ড' নামক একটি শো-এর উপস্থাপনা করে যা মূলত সমকামী ও উভকামীদের একটি দলের ওপর ভিত্তি করেই ছিল এবং এর শেষ সিজন ২০০৯ সাল অবধি চলেছে।

অন্যান্য দিকগুলি

মহিলা সমকামীদের জনপ্রিয় চটকদার সমাজ

১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিক থেকেই মহিলা সমকামীদের প্রকাশ্যে আসার চল শুরু হয়। এটা মূলত বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের কারণে সম্ভব হয় যারা প্রচারমাধ্যমের নিজেদের মহিলা সমকামী হওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেন ও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রাথমিকভাবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নজির গড়েন মার্টিনা নাভরাটিলোভা ও এনার গল্প অনেক বছর ধরে বহু চর্চিত হয়। ইনি মহিলা সমকামী হওয়ার কথা অস্বীকার করেন ও নিজেকে উভকামী বলে পরিচয় দেন। জনসমক্ষেই রীতা মে ব্রাউন ও জুডি নেলসনের সাথে ইনি সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন এবং এইগুলি তার অ্যাথলেটিক ক্ষেত্রে উন্নতির মতোই চর্চিত হয়। স্কলার ডিয়ান হ্যামার যেটাকে 'কন্সট্যান্ট প্রিঅক্যুপেশন' অর্থাৎ সবসময় চলতে থাকা ভাবনা বলেন, সেটাকেই নাভরাটিলোভা সমকামী যৌনাকাঙ্ক্ষার মূল হিসেবে উৎসাহ দেন।

আরও বিখ্যাত মানুষজন যারা নিজের উভকামিতা ও সমকামিতাকে মান্যতা দেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মিউজিসিয়ান কে.ডি.ল্যাং ও মেলিসা এথারিজ এবং ম্যাডোনার উপস্থাপনাগুলি যেখানে তিনি যৌনতার সীমারেখাকে অগ্রাহ্য করেন। ১৯৯৩ সালে ল্যাং ও নিজেকে বিপরীতকামী বলে পরিচয় দেওয়া সুপারমডেল সিনডি ক্রফোর্ড 'ভ্যানিটি ফেয়ার' ম্যাগাজিনের আগস্ট মাসের প্রচ্ছদের জন্য যৌন উত্তেজকভাবে ছবি তোলেন সেখানে দেখানো হয় ক্রফোর্ড ল্যাংয়ের দাড়ি কাটছেন ও ল্যাং একটি পিনস্ট্রিপ স্যুট পরে নাপিতের চেয়ারে হেলান দিয়ে আছেন। হ্যামারের মতে, এই ছবিটি 'লেসবিয়ান চিক' হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে উঠলো। ১৯৯৪ সালটিকে মহিলা সমকামীদের প্রকাশ্যে আসার সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ এর মধ্যে ম্যাডেময়শেলে, ভগ, কসমোপলিটান, গ্ল্যামার, নিউজউইক ও নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনে সেইসব মহিলাদের গল্প প্রকাশ করা হয় যারা অন্যান্য মহিলাদের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর কথা স্বীকার করেছে।

একজন অ্যানালিস্ট বলেন যে এই মহিলা সমকামীদের চটকদার সমাজ অর্থাৎ 'লেসবিয়ান চিক' সংস্কৃতির উত্থান তৎকালীন এইডস রোগের কারণে স্তিমিত হয়ে যাওয়া 'গে সাবকালচার' এর কারণে হয়েছিল। এটি মূলত ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে হয়েছিল, এর সাথে আবার ১৯৭০ এর দশকে মহিলা সমকামীদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে কুৎসিত ও মিলিট্যান্ট (যোদ্ধা) এই দুটি শব্দও মিলিয়ে যায়। এককথায় বলা যার, সাধারণ মানুষের কাছে মহিলা সমকামী আকর্ষক হয়ে ওঠে যখন তারা রাজনৈতিকভাবে সুবিধা ও সমানাধিকার পেতে শুরু করে। সংস্কৃতি তাত্ত্বিক রজার স্ট্রেটম্যাটার বলেন যে, নারীসুলভ ও আকর্ষণীয় এই নারীদের ওপর সৃষ্ট গুরুত্ব থেকে মহিলা সমকামীদের একটা কল্পিত প্রতিমূর্তির জন্ম হয় যা মূলত বিপরীতকামী পুরুষদের কল্পনাপ্রসূত। এর ফলে পর্নোগ্রাফিতেও পুরুষদের উত্তেজনার স্বার্থে মহিলা সমকামীদের আধিক্যের চল আসে।

২০০৯ সালে আবার মহিলা সমকামীর প্রকাশ ও যৌনাকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটে সিন্থিয়া নিক্সন ও লিন্ডসে লোহানের বক্তব্যের মাধ্যমে। তারা অন্যান্য মহিলাদের সাথে তাদের সম্পর্কের কথা খোলাখুলি আলোচনা করেন এবং অনেক টেলিভিশন শো'তেও সমলিঙ্গের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়। মনস্তত্ত্ববিদ ও নারীবাদিরা বলেন যে মহিলাদের মধ্যে সমকামিতা নিয়ে প্রকাশ্যে আসার প্রবণতা সামাজিকভাবে তাদের মান্যতা দেওয়ার ফলেই হয়েছে। যদিও তারা এটাও বলেন যে শুধুমাত্র একধরনেরই অর্থাৎ সুন্দর চেহারার, সুরুচিপূর্ণ ও নারীসুলভ মহিলা সমকামীদেরই সেই অর্থে সামাজিকভাবে সমাজের মূল স্রোতে মেনে নেওয়া হয়।

পরিবার ও রাজনীতি

যদিও মহিলাদের মধ্যে সমকামিতার নজির ইতিহাসের বহু সংস্কৃতিতে আছে তবুও বর্তমানে আসল ঘটনা হলো সমকামী সঙ্গীদের পরিবারের উন্নতি। ১৯৭০ এর আগে একই লিঙ্গের দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যে আজীবন সম্পর্কে আবদ্ধ থাকতে পারে তা বহু মানুষের কাছে অজানা ছিল। মহিলা সমকামীদের বেশিরভাগই (৬০% থেকে ৮০%) বহুদিন ধরে সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার কথা জানায়। সমাজবিদরা এক্ষেত্রে বেশি সংখ্যক মহিলাকেই ক্রেডিট দিচ্ছে: মহিলাদের সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাই মহিলা সমকামীদের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়ে ধরা দেয়। যেখানে বিপরীতকামী সম্পর্কে লিঙ্গ অনুযায়ী কাজ ওও দায়িত্ব ভাগ করা হয়, সেখানে মহিলা সমকামীদের সম্পর্কে সমান ভাগে দুজনে কাজ ভাগ করে নেয়। রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায় যে, মানসিক টান বিপরীত লিঙ্গের সম্পর্কের থেকে এমন সমকামী সম্পর্কে তুলনায় বেশি।[১০১]

মহিলা সমকামীদের ক্ষেত্রে পারিবারিক সমস্যা একটা বড় সমস্যা ছিল যখন পুরুষদের সমকাম নিয়ে আন্দোলন ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ এর দশকে স্পষ্টতর হয়। সন্তানের হেফাজত নিয়ে সমস্যা তৈরি হয় ও আদালত কখনওই এমন মা'কে সন্তানের দায়িত্ব দিতো না যে খোলাখুলিভাবেই মহিলা সমকামী হিসেবে পরিচিত ছিল (যদিও সাধারণভাবে বাচ্চাদের হেফাজতে মায়েরই অধিকার বর্তাত)। হেফাজত নিয়ে চলা এই সমস্যার ওপর বহু গবেষণা হয়। এগুলোয় দেখানো হয় কীভাবে বাচ্চারা সমলিঙ্গের অভিভাবকদের কাছে বেড়ে উঠতো ও কীভাবে তারা মহিলা সমকামী পরিচয় নেই এমন মায়ের (সিঙ্গেল মাদার) কাছে লালিতপালিত হয়। এতে জানা যায় যে, প্রথম ক্ষেত্রের বাচ্চাদের মানসিক অবস্থা, স্বাস্থ্য, সুখ ও পুরোপুরিভাবে থাকা দ্বিতীয় ক্ষেত্রের বাচ্চাগুলির সাথে প্রায় একইরকম ছিল। যে বাচ্চারা লেসবিয়ান মায়েদের কাছে বড় হয়েছে তাদের যৌনাকাঙ্ক্ষা, লিঙ্গ পরিচয় ও লিঙ্গভিত্তিক দায়বদ্ধতার ওপর কোনরকম বিরূপ প্রভাব পড়েনি। যে পার্থক্যগুলো পাওয়া গেছিলো তাতে যুক্ত ছিল এই যে, ডিভোর্সি মহিলা সমকামী এই মায়েরা মূলত তাদের একটি মহিলা সঙ্গীর সাথেই থাকতো এবং বাচ্চার বাবারা তুলনামূলকভাবে এই মায়েদের সাথে বেশি দেখা করতে আসতো (যারা সমকামী নয় তাদের তুলনায় বেশি)। এক্ষেত্রে লেসবিয়ান মায়েদের নিজের বাচ্চাকে আইনি পথে হারানোর ভয় বেশি থাকে।

সমলিঙ্গের দম্পতিদের পরিবার গঠনের সুযোগ বৃদ্ধির ফলে গত ১০ বছরের রাজনৈতিক চিত্রপটে প্রভাব পড়ে। সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহের জন্য আন্দোলন পশ্চিমা দেশগুলির অন্যান্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২০১২ সাল পর্যন্ত দশটি দেশ ও আমেরিকার ছয়টি রাজ্য সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহ আইন প্রণয়ন করেছিল। কিছু ইউরোপিয়ান দেশে, আমেরিকার কিছু রাজ্যে ও স্বাধীন মিউনিসিপালিটিতে সিভিল ইউনিয়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। দেশের মধ্যে ও বাইরে সন্তান দত্তক নেওয়ার ক্ষমতাও রাজনৈতিক আঙ্গিকে মহিলা সমকামীদের একটি মূল অধিকার হয়ে দাঁড়ায় এবং কৃত্রিমভাবে বীর্যরোপনের মাধ্যমে সন্তানধারণ করার পদ্ধতিতেও উন্নতি হয়।[১০২]

বর্ণভেদে মহিলা সমকামীরা

২০১২ সালের নিউ ইয়র্ক সিটি প্রাইড প্যারেডের অংশগ্রহণকারীরা।

বর্ণভেদে মহিলা সমকামীরা মূলত একটি ছোট দলের মতো ছিল যাতে আফ্রিকান-আমেরিকান, ল্যাটিনা, এশিয়ান ও অন্যান্য নন-ককেশিয়ান মহিলা সমকামীরা ছিল[১০৩] এবং এরা সমকাম-বিরোধ ও নারীবিদ্বেষের সাথে সাথে রেসিজম অর্থাৎ বর্ণবিদ্বেষেরও স্বীকার হয়।[১০৪]

কিছু বিদ্বানের মতে প্রাথমিক সমকামী সমাজগুলিতে মূলত শ্বেতাঙ্গ নারীরা ছিল এবং এগুলো আমেরিকান সংস্কৃতি দ্বারা উদ্বুদ্ধ ছিল। এর ফলে অন্যান্য বর্ণের মহিলা সমকামীদের বড় সমাজের অংশ হয়ে উঠতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এধরনের বহু মহিলা সমকামীরা জানিয়েছে যে তাদের মহিলা সমকামীদের অনেক জায়গা থেকে আলাদা রাখা হয় শুধুমাত্র এই কারণে যে তারা অন্য বর্ণের।[১০৫] আবার, এই মহিলারা নিজের নিজের স্বজাতির সমাজেও বিভিন্ন রকম বাধার সম্মুখীন হয়। অনেকেই নিজেকে একা ও অবহেলিত মনে করে কারণ এই সমাজে মহিলাদের সমকামিতাকে শ্বেতাঙ্গের ন্যায় জীবনধারণ বলে ভাবা হত এবং সমকামিতাকে মান্যতা দিলে তারা যে সমানাধিকার থেকে একধাপ পিছিয়ে আসবে এমনটাও ভাবা হত।

অন্য বর্ণের এই মহিলা সমকামীরা মূলত যারা অন্য জায়গা থেকে এসেছিল তারা প্রায়ই এমন ভাবতো যে তাদের অন্যরকম যৌনাকাঙ্ক্ষা এই প্রভাবশালী সমাজের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াত। ইতিহাস অনুযায়ী অন্য বর্ণের মহিলাদের প্রায়ই সমকামী আন্দোলনের অংশ হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হত। বিদ্বানদের মতে, এই আলাদা করার কারণ হিসেবে শ্বেতাঙ্গ মহিলা সমকামীদের অন্য লিঙ্গ, বর্ণ ও যৌনতার মেলবন্ধনকে নিজেদের পরিচয়ের সাথে গুলিয়ে না ফেলাই মূল ছিল। মহিলা সমকামী যারা বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা করতেন তারা নিজেদের আন্দোলনকে কোন শ্রেণী বা বর্ণের প্রসঙ্গ না এনে সমকামী ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধেই রাখতে চেয়েছিলেন। প্রথমদিকের মহিলা সমকামীদের নারীবাদী আন্দোলনকে বর্ণ ও শ্রেণীর প্রসঙ্গ আলাদা রাখার জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। অড্রে লর্ড, বারবারা স্মিথ ও চেরি মোরাগাকে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ বিভেদ ঘুচিয়ে বিভিন্ন সমকামী ও বর্ণ আন্দোলনের তাত্ত্বিক হিসেবে গণ্য করা হয়।

ভিন্ন বর্ণের মহিলা সমকামীদের ঘিরে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা মানসিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনার উদ্রেক ঘটাতে পারে। ভিন্ন বর্ণের মহিলা সমকামীদের বহু মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার মুখে পড়তে হয় যেমন লিঙ্গবৈষম্য, বর্ণবিদ্বেষ ও সমকাম-বিদ্বেষী মনোভাব।[১০৬] যারা মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা করেন যেমন থেরাপিস্টরা প্রায়ই মহিলা সমকামীদের সম্পর্কের পরিমাপ করার সময় বিপরীতকামী দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে অন্য বর্ণের সমকামীদের অনেক কটাক্ষের স্বীকার হতে হয়।

এরকম বর্ণান্ধ সমাজে আত্মপ্রকাশ করার সিদ্ধান্তের জন্য ভালো দাম চোকাতে হতে পারে যেহেতু পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের সমর্থন থাকে না। ভিন্ন বর্ণের মহিলা সমকামীদের প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের ফলভোগ করতে হয় যেমন সহিংসতা, ভেদাভেদ, বিপদ ও সক্রিয় আক্রমণ।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ