সালার দে ইউনি
সালার দে ইউনি (বা সালার দে তুনুপা)[১] বিশ্বের বৃহত্তম লবণাক্ত সমতল ভূমি, যা ১০,৫৮২ বর্গকিলোমিটার (৪,০৮৬ মা২)। বিশাল আয়নার মতো দেখতে এই সমভূমির দক্ষিণ পশ্চিম বলিভিয়ার পোটোসের ড্যানিয়েল ক্যাম্পোস প্রদেশের, আন্দিজের ভূত্বকের কাছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৬৫৬ মি (১১,৯৯৫ ফু) উচ্চতায় রয়েছে।[২]
সালার দে ইউনি | |
---|---|
অবস্থান | ড্যানিয়েল ক্যাম্পোস প্রদেশ, পোটোস বিভাগ |
স্থানাঙ্ক | ২০°০৮′০১.৫৯″ দক্ষিণ ৬৭°২৯′২০.৮৮″ পশ্চিম / ২০.১৩৩৭৭৫০° দক্ষিণ ৬৭.৪৮৯১৩৩৩° পশ্চিম |
উচ্চতা | ৩,৬৬৩ মিটার (১২,০১৮ ফু) |
এলাকা | ১০,৫৮২ বর্গকিলোমিটার (১০,৫৮,২০০ হেক্টর) |
গভীরতা | ১৩০ মিটার (৪৩০ ফু) |
গঠিত | বাষ্পীভবন |
ভূতত্ত্ব | লবণ প্যান, শুষ্ক হ্রদ |
বেশ কয়েকটি প্রাগৈতিহাসিক হ্রদের মধ্যে রূপান্তরের ফলস্বরূপ সালার গঠিত হয়েছিল। এটি কয়েক মিটার লবণের ক্রাস্ট দ্বারা আচ্ছাদিত, যা সালারের পুরো এলাকা জুড়ে এক মিটারের মধ্যে গড় উচ্চতা পরিবর্তনের সাথে একটি অসাধারণ সমতলতা রয়েছে। ভূত্বক লবণের উৎস হিসাবে কাজ করে এবং একটি ব্রাইনের হ্রদেকে ঢেকে দেয়, যা ব্যতিক্রমীভাবে লিথিয়াম সমৃদ্ধ। এতে বিশ্বের পরিচিত লিথিয়াম মজুদগুলির ৫০% থেকে ৭০% রয়েছে।[৩] বৃহত্তর অঞ্চল, পরিষ্কার আকাশ এবং পৃষ্ঠের ব্যতিক্রমী চ্যাপ্টা সালারকে পৃথিবীর পর্যবেক্ষণের উপগ্রহের আলটিমিটারগুলি ক্যালিব্রেট করার জন্য আদর্শ করে তোলে।[৪][৫][৬][৭][৮] বৃষ্টিপাতের পরে, মৃত শান্ত জলের একটি পাতলা স্তর সমতল ভূমিটিকে ১২৯ কিলোমিটার (৮০ মা) জুড়ে বিশ্বের বৃহত্তম আয়নাতে রূপান্তরিত করে।
সালার বলিভিয় আলতিপ্লানো জুড়ে প্রধান পরিবহন রুট হিসাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন প্রজাতির কানঠুটির একটি প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র। গ্রীষ্মকালে লবণের সমতলটির পূর্ব অংশে গঠনকারী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ক্রমবর্ধমান কমুলাস কনজেস্টাস এবং কমুলোনিম্বাস ইনকাস মেঘগুলি চিলির সীমান্ত এবং আতাকামা মরুভূমির নিকটবর্তী অঞ্চলে শুকনো পশ্চিম প্রান্ত পেরিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না বলে সালার দে ইউনি একটি জলবায়ুগত স্থানান্তর অঞ্চল।
গঠন, ভূতত্ত্ব এবং জলবায়ু
সালার দে ইউনি দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ার আলতিপ্লানোর অংশ। আলতিপ্লানো একটি উঁচু মালভূমি, যা আন্দিজ পর্বতমালার উত্থানের সময় গঠিত হয়েছিল। মালভূমিতে টাটকা এবং লবণাক্ত জলের হ্রদগুলির পাশাপাশি লবনাক্ত সমতল ভূমি রয়েছে এবং এটি নিকাশীর আউটলেট বিহীন পর্বত দ্বারা বেষ্টিত।[৯]
সালারের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস বিভিন্ন বিস্তৃত হ্রদগুলির মধ্যে ক্রমান্বয়ে রূপান্তরের সাথে জড়িত। প্রায় ৩০,০০০ থেকে ৪২,০০০ বছর আগে, অঞ্চলটি একটি বিশাল প্রাগৈতিহাসিক হ্রদ, মিনচিন হ্রদের অংশ ছিল। এর বয়স অনুমান করা হয়েছিল উদ্গত স্তরের পলল থেকে রেডিওকার্বন ডেটিং শাঁস এবং কার্বনেট রিফগুলি থেকে।
উদ্ভিদ এবং প্রাণিকুল
- সালারের অভ্যন্তরে ইনকাহুয়াসি দ্বীপের একটি অংশ, যেখানে বিশালাকার ক্যাকটি রয়েছে
- জেমসের ফ্ল্যামিংগো
- কাল্পেও
- বলিভিয়ান ভিজকাচা
- আন্দিয় হংস
- আন্দিয় হিলস্টার
- ২০১৭ সালে সালার দে ইউনির নিকটে ভিকুয়াস
ভ্রমণব্যবস্থা
এখানে ঘুরতে চাইলে নিকটবর্তী শহর থেকে পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত গাড়ি ভাড়া নিয়ে আসতে হয়। প্রতিদিন এ ধরনের প্রায় দুইশ টি গাড়িভর্তি পর্যটক এখানে ঘুরতে আসে। সালার দি ইউনি এর মাঝে কয়েকটি ছোট দ্বীপ রয়েছে। এসব দ্বীপের উপর থেকে মন ভরে উপভোগ করা যায় বিস্ময়কর এই আয়না ভুমি। দ্বীপগুলোতে রয়েছে প্রায় কয়েকশ বছরের পুরোনো ক্যাকটাস। সালার দি ইউনি র সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত নিস্বঃন্দেহে পৃথিবীর অপার সব সৌন্দর্য্য গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের থাকার জন্য এখানে বহু হোটেল রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রম হলো প্যালাসিও দে স্যাল। যার অর্থ লবণের প্রাসাদ। ২০০৭ সালে গড়ে তোলা এই হোটেলটি আক্ষরিক অর্থেই লবণের প্রাসাদ। কারণ হোটিলটির মেঝে, দেওয়াল, সাদ এমনকি খাট, চেয়ার, টেবিলসহ সকল আসবাবপত্রই তৈরী করা হয়েছে লবণ এর খন্ড দিয়ে। ভবনটি নির্মান করতে ১৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের প্রায় দশ লক্ষ লবণের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। সালার দি ইউনি শুধু পর্যটকদের লীলাভূমিই নয়, এইটি মুলত উন্মক্ত খনি। স্থানীয় আয়মারা জনগোষ্ঠী এখনকার লবণ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ধারণা করা হয়, সালার দি ইউনিতে এগারো কোটি টন লবণ আছে। সালার দি ইউনি এর প্রবেশ পথে রয়েছে একটি রেলগাড়ির সমাধি। অতীতে এসব ট্রেনের মাধ্যমে এখান থেকে লবণ পরিবহন করা হতো। স্থানীয় আদিবাসীদের আপত্তির কারণে ট্রেনের সাহায্যে এখন থেকে লবণ সরবরাহের কাজ বন্ধ করা হয়েছে।
ট্রেন সমাধি
চিত্রশালা
- ২০১৩ সালে সালার
- সালারে নুনের গাদা
- সালারে লালামাস
- সালার দে ইউনির প্রতিচ্ছবি
- সূর্যাস্তের প্রতিচ্ছবি
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- উইকিভ্রমণ থেকে সালার দে ইউনি ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।
- Lonely Planet: Salar de Uyuni ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ মে ২০১৬ তারিখে