মানুষ

মানব সমাজের একজন সদস্য হিসেবে মানুষ, হোমো সেপিয়েন্সের সাধারণ নাম
(H. sapiens থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মানুষ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জীব। আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স, প্রাথমিকভাবে এসএসপি হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স) হল হোমিনিনা উপজাতির (অথবা মানব জাতিগোষ্ঠী) একমাত্র বিদ্যমান সদস্য। শিম্পাঞ্জি, গরিলাবনমানুষের মত মানুষ বানর পরিবারের অন্তর্গত হোমিনিডি গোত্রের একটি শাখা। স্থলচর প্রাণী হিসাবে তাদের বৈশিষ্ট হল স্থির খাড়া অবস্থান এবং দ্বিপদী চলৎশক্তি; অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এবং ভারী সরঞ্জাম ব্যবহারে সক্ষমতা; অন্যান্য প্রাণির চেয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে জটিলতর ভাষার ব্যবহার, আকারে বৃহত্তর ও জটিল মস্তিষ্ক এবং খুবই উন্নত ও সংঘবদ্ধ প্রাণী[৩][৪]

মানুষ
সময়গত পরিসীমা: ০.৩৫–০কোটি
কা
পা
ক্রি
প্যা
মধ্য প্লাইস্টোসিন – বর্তমান
উত্তর থাইল্যান্ডের আখা উপজাতির একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানব পুরুষ (বাম) এবং মহিলা (ডান)।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ:প্রাণী জগৎ
পর্ব:কর্ডাটা
শ্রেণী:স্তন্যপায়ী
বর্গ:প্রাইমেট
পরিবার:হোমিনিডি
উপপরিবার:হোমিনিনি
গোত্র:হোমিনিনি
গণ:হোমো
প্রজাতি:এইচ. স্যাপিয়েন্স
ত্রিপদী নাম
হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স
লিনিয়াস, ১৭৫৮
হোমো স্যাপিয়েন্স জনসংখ্যার ঘনত্ব
প্রতিশব্দ
Species synonymy[২]
  • aethiopicus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • americanus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • arabicus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • aurignacensis
    Klaatsch & Hauser, 1910
  • australasicus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • cafer
    Bory de St. Vincent, 1825
  • capensis
    Broom, 1917
  • columbicus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • cro-magnonensis
    Gregory, 1921
  • drennani
    Kleinschmidt, 1931
  • eurafricanus
    (Sergi, 1911)
  • grimaldiensis
    Gregory, 1921
  • grimaldii
    Lapouge, 1906
  • hottentotus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • hyperboreus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • indicus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • japeticus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • melaninus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • monstrosus
    Linnaeus, 1758
  • neptunianus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • palestinus
    McCown & Keith, 1932
  • patagonus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • priscus
    Lapouge, 1899
  • proto-aethiopicus
    Giuffrida-Ruggeri, 1915
  • scythicus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • sinicus
    Bory de St. Vincent, 1825
  • spelaeus
    Lapouge, 1899
  • troglodytes
    Linnaeus, 1758
  • wadjakensis
    Dubois, 1921

প্রারম্ভিক হোমিনিন-বিশেষত অস্ট্রালোপিথেসিন, যাদের মস্তিষ্ক এবং শারীরিক গঠন অনেকটা পূর্বতন অ-মানব বানরের মতো, যাদের হমো প্রজাতির হোমিনিন না বলে "মানব" বলা হয়।[৫] এই হোমিনিনিদের কিছু অংশ আগুন ব্যবহার করত, ইউরেশিয়ার অধিকাংশ স্থান তারা দখল করে নিয়েছিল এবং আফ্রিকাতে প্রায় ২০০,০০০ বছর পূর্বে আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছিল।[৬][৭] তারা প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে আচরণগত আধুনিকতার প্রমাণ দিতে শুরু করেছিল। অভিবাসনের বেশ কয়েকটি তরঙ্গের মাধ্যমে আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে এসেছিল এবং বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে বসবাস করা আরম্ভ করেছিল।[৮]

মানুষের বিস্তার এবং তাদের বৃহত্তর ও বর্ধমান জনসংখ্যার পরিমাণ পরিবেশের বৃহৎ ক্ষেত্র এবং বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ স্থানীয় প্রজাতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই বিবর্তনীয় সাফল্য ব্যাখ্যা করে যে তাদের বিশেষভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত নিওকরটেক্স, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং অস্থায়ী ভাগসহ অপেক্ষাকৃত বড় মস্তিষ্ক সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে উচ্চ মাত্রার যুক্তি খণ্ডন, ভাষার ব্যবহার, সমস্যার সমাধান, সামাজিকতা এবং সংস্কৃতি গড়তে সক্ষম করে তুলে। মানুষ অন্য কোনও প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। তারাই একমাত্র বিদ্যমান প্রজাতি যারা আগুনের ব্যবহার সম্পর্কে দক্ষ এবং তারা খাবার রান্না করে খায় এবং তারাই একমাত্র বিদ্যমান প্রজাতি যারা লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড় পরিধান করে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিশিল্পকলা উদ্ভাবন এবং ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও তারা পারদর্শী।

বিবর্তন

মানব বিবর্তনের কালরেখা
-১ —
-০.৯ —
-০.৮ —
-০.৭ —
-০.৬ —
-০.৫ —
-০.৪ —
-০.৩ —
-০.২ —
-০.১ —
০ —
মানবসদৃশ
উল্লুক
নাকালিপিথেকাস
আওয়ারানোপিথেকাস
সাহেলানথ্রোপাস
ওরোরিন
অস্ট্রালোপিথেকাস
হোমো হ্যাবিলিস
নিয়ান্ডার্থাল
হোমো ইডাল্তু
প্রথমদিককার উল্লুক
সর্বপ্রথম দ্বিপদী
প্রথমদিককার দ্বিপদী
সর্বপ্রথম অগ্নি
আধুনিক মানুষ

প্লা





সি



মা





সি


হো

মি

নি

নি

বিবর্তনবাদী তথ্য

মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে নানা নৃতাত্ত্বিক মতবাদ আছে। বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ আর পৃথিবীতে বিদ্যমান অন্যান্য নরবানরেরা অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তিত হয়েছে এবং ভিন্ন উৎসজাত অন্যান্য শাখাগুলো থেকে অতীতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে বিদ্যমান শিম্পাঞ্জিগরিলা থেকে আলাদা ধারা বা বংশানুক্রম তৈরি করেছে। সে হিসেবে মানুষ আধুনিক নরবানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও সরাসরি উত্তরসূরী নয়। মানুষ আসলে এসেছে বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত প্রাইমেট থেকে। আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতি বা হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স উপপ্রজাতি সকল মহাদেশ ও বড় দ্বীপগুলোতে বসতি স্থাপন করে; তারা ১২৫,০০০-৬০,০০০ বছর পূর্বে ইউরেশিয়ায়,[৯][১০] ৪০,০০০ বছর পূর্বে অস্ট্রেলিয়ায়, ১৫,০০০ বছর পূর্বে আমেরিকায় এবং হাওয়াই, ইস্টার আইল্যান্ড, মাদাগাস্কারনিউজিল্যান্ডসহ দূরবর্তী দ্বীপসমূহে ৩০০ থেকে ১২৮০ খ্রিষ্টাব্দে পৌঁছে।[১১][১২]

বানর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি, বরং সঠিকভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ প্রজাতিরও উদ্ভব ঘটেছে বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের প্রাইমেট থেকে। শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং ওরাং ওটাং (বনমানুষ)-এর মতো প্রাণীকূলেরও উদ্ভব ঘটেছে সেই একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে। প্রাণের বিকাশ এবং বিবর্তনকে একটা বিশাল গাছের সাথে তুলনা করা যায়। একই পূর্বপূরুষ থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তনীয় জাতিজনি বৃক্ষের বিভিন্ন ডাল পালা তৈরি হয়েছে । এর কোন ডালে হয়তো শিম্পাঞ্জির অবস্থান, কোন ডালে হয়ত গরিলা আবার কোন ডালে হয়ত মানুষ। অর্থাৎ, একসময় তাদের সবার এক সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিলো, ১.৪ কোটি বছর আগে তাদের থেকে একটি অংশ বিবর্তিত হয়ে ওরাং ওটাং প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। তখন, যে কারণেই হোক, এই পূর্বপুরুষের বাকি জনপুঞ্জ নতুন প্রজাতি ওরাং ওটাং এর থেকে প্রজননগতভাবে আলাদা হয়ে যায় এবং তার ফলে এই দুই প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে তাদের নিজস্ব ধারায়। আবার প্রায় ৯০ লক্ষ বছর আগে সেই মুল প্রজাতির জনপুঞ্জ থেকে আরেকটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং পরবর্তিতে ভিন্ন ধারায় বিবর্তিত হয়ে গরিলা প্রজাতির উৎপত্তি ঘটায়। একইভাবে দেখা যায় যে, ৬০ লক্ষ বছর আগে এই সাধারণ পুর্বপুরুষের অংশটি থেকে ভাগ হয়ে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির বিবর্তন ঘটে। তারপর এই দুটো প্রজাতি প্রজননগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন থেকেই একদিকে স্বতন্ত্র গতিতে এবং নিয়মে মানুষের প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে, আর ওদিকে আলাদা হয়ে যাওয়া শিম্পাঞ্জির সেই প্রজাতিটি ভিন্ন গতিতে বিবর্তিত হতে হতে আজকের শিম্পাঞ্জিতে এসে পৌঁছেছে।

জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে প্রমাণ

গরিলা, শিম্পাঞ্জী এবং হোমিনিন বংশের মধ্যে পার্থক্যের সামান্য পরিমাণ জীবাশ্ম প্রমাণ রয়েছে।[১৩][১৪] হোমিনিন বংশের সদস্য হিসাবে প্রস্তাবিত প্রাচীন জীবাশ্মগুলি ছিল স্যালেনথ্রোপাস টিচডেনেসিস ৭ মিলিয়ন বছর আগের, অর্রোরিন টিউগেনেসিস ৫ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগের এবং আর্দিপীথেকাস কাদাব্বা ছিল ৫.৬ মিলিয়ন বছর আগের । এই প্রতিটি প্রজাতির হোমিনিনদের দ্বিপদী পূর্বপুরুষদের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু এই ধরনের সব দাবী অনেক বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল । এটাও সম্ভব যে এই তিনটি শাখার যেকোনো একটি আফ্রিকান এপস এর অন্য শাখার পূর্বপুরুষ, অথবা একটি পূর্বপুরুষ হোমিনিন এবং অন্যান্য আফ্রিকান হোমোনয়েডিয়ার (এপস) সাথে ভাগ করে নিয়েছে । এই প্রাথমিক জীবাশ্ম প্রজাতি এবং হোমিনিন বংশের মধ্যে সম্পর্কের প্রশ্ন এখনো সমাধান করা সম্ভব হয়নি । এই প্রারম্ভিক প্রজাতিগুলি থেকে প্রায় ৪ মিলিয়ন বছর আগে অস্ট্রালোপিথেসিন্স উদ্ভূত হয় যা পরে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল (প্যারানথ্রোপাস নামেও পরিচিত)।[১৫] সম্ভবত তাদের মধ্যে একটি শাখা হল ২৫ মিলিয়ন বছর আগের অস্ট্রালোপিথেসিন্স গর্হী, একে জেনাস হোমোর সরাসরি পূর্বপুরুষ বলে ধারণা করা হয়।[১৬]

লুসির কঙ্কালের পুনর্গঠন যা অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস প্রজাতির প্রাপ্ত প্রথম কঙ্কাল

হোমো প্রজাতির প্রাথমিক সদস্য হোমো হ্যাবিলিস ২.৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিকশিত হয়েছিল।[১৭] হোমো হ্যাবিলিস প্রথম প্রজাতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে কারণ তারা যে পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করত তার সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে । সম্প্রতি ২০১৫ সালে, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কেনিয়াতে যে পাথরের সরঞ্জামগুলি পাওয়া গেছে তা সম্ভবত হোমো হ্যাবিলিসের পূর্বাভাস দিয়েছে যেগুলি প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন বছর বয়স পুরাতন ছিল।[১৮] তবুও, হোমো হ্যাবিলিসের মস্তিষ্কগুলি শিম্পাঞ্জীর মতো একই আকারের ছিল এবং তাদের প্রধান অভিযোজন ছিল পার্থিব জীবনযাত্রার অভিযোজন হিসেবে বাইপেডালিজম (দুপায়ে চলাফেরা করা) । পরের মিলিয়ন বছরে এন্সিফালিজেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এবং জীবাশ্ম রেকর্ড অনুযায়ী হোমো ইরেক্টাস এর আগমন ঘটেছিল যাদের করোটির ক্ষমতা দ্বিগুণ ছিল। হোমো ইরেক্টাস ছিল প্রথম হোমোনিনা যারা আফ্রিকা ছেড়েছিল এবং এই প্রজাতিগুলি আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে ১.৩ থেকে ১.৮ মিলিয়ন বছর আগে ছড়িয়ে পড়েছিল। এইচ. ইরেক্টাসের একটি জনগোষ্ঠীকে কখনও কখনও একটি পৃথক প্রজাতি হোমো এরগ্যাস্টার হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় যারা আফ্রিকায় থাকত এবং পরে হোমো স্যাপিয়েন্সে পরিণত হয়েছিল। বিশ্বাস করা হয় যে তারাই প্রথম অগ্নি এবং জটিল সরঞ্জাম ব্যবহার করত। হোমো এরগ্যাস্টার / ইরেক্টাস এবং আর্কাইক মানুষেরা যেমন হোমো রোডেসিয়েন্সিস আফ্রিকা থেকে এসেছিল, কিন্তু জর্জিয়ার দুমানসিতে তাদের transitional ফর্মগুলি পাওয়া গিয়েছিল। আফ্রিকান হোমো ইরেক্টাস এর বংশধররা ৫০০,০০০ বৎসর পূর্বে ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল পরে তারা পর্যায়ক্রমে হোমো এন্টিসেসর, হোমো হাইডেলবার্গেনসিস এবং হোমো নিয়ানডার্টালেনসিস এ বিবর্তিত হয়েছিল । আধুনিক মানুষের প্রাচীন জীবাশ্ম মধ্য পেলিওলিথিক প্রায় ২০০,০০০ বছর আগে যেমন ওমো ইথিওপিয়া অবশিষ্ট আছে এবং হার্টোর জীবাশ্মকে কখনও কখনও হোমো স্যাপিয়েন্স ইডাল্টু হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। পরবর্তীকালে ফিলিস্তিন এবং দক্ষিণ ইউরোপ থেকে যে স্কাল বা আর্কাইক হোমো স্যাপিয়েন্সের জীবাশ্ম পাওয়া যায় তা প্রায় ৯০,০০০ বছর আগের ছিল।[১৯]২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী আধুনিক মানুষ প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এবং এর উৎপত্তিস্থল ছিল বতসোয়ানা[২০]

শারীরিক অভিযোজন

অস্ট্রালোপিথেসিন্স আফারেন্সিস এর পুনর্গঠন

মানব বিবর্তনটি বেশ কিছু মস্তিষ্কগত, উন্নয়নমূলক, শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত পরিবর্তনের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যা মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষের মধ্যে সংগঠিত হয়েছিল। এই অভিযোজনগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ১. দুপায়ে হাঁটা , ২. বর্ধিত মস্তিষ্কের আকার, ৩. দীর্ঘ অন্টোজেনি (গর্ভাবস্থা এবং শিশুকাল), ৪. যৌন দ্বিমাত্রিকতা (নিউটেনি)। এই সব পরিবর্তনগুলির মধ্যে সম্পর্ক চলমান বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।[২১] অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অঙ্গসংস্থানসংক্রান্ত পরিবর্তনগুলির মধ্যে ক্ষমতার বিবর্তন এবং নির্ভুল গ্রিপ অন্তর্ভুক্ত ছিল, একটি পরিবর্তন এইচ.ইরেক্টাসের মধ্যে ঘটেছিল।[২২]

বাইপেডালিজম হচ্ছে হোমিনিন লাইনের মৌলিক অ্যাডাপটিশন, এবং এটিকে সকল বাইপেডাল হোমিনিনদের কঙ্কাল পরিবর্তনের পিছনে একটি প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। প্রাচীনতম দ্বিপদীয় হোমিনিনকে বলা হয় সাহেলানথ্রপাস বা অর্রোরিন,[২৩] আর্ডিপিথেকাস হল একটি পূর্ণ বাইপেডাল[২৪] যা কিছুটা পরে ঘটেছিল। গরিলা এবং শিম্পাঞ্জি একই সময়ের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। এবং সাহেলানথ্রপাস বা অর্রোরিন হতে পারে মানুষের পূর্বপুরুষ যারা ঐসব প্রাণীদের সাথে মিল ছিল । প্রাথমিকভাবে দ্বিপদলগুলি অস্ট্রালোপিথেসিন্স যা পরবর্তীতে জেনাস হোমোতে রূপান্তরিত হয়েছিল। বাইপেডালিজমের অভিযোজনীয় মূল্যের বেশ কিছু তত্ত্ব রয়েছে। এটা সম্ভব যে বাইপেডালিজম অনুকূলে ছিল কারণ এটি পৌঁছানোর এবং খাদ্য বহন করার জন্য হাতকে মুক্ত করে দিয়েছিল । কারণ এটি চলন্ত অবস্থায় শক্তি সংরক্ষণ করেছিল যা তাদেরকে দীর্ঘ পথ চলতে এবং শিকার করতে সক্ষম করেছিল। অথবা সরাসরি সূর্যের উদ্ভাসিত পৃষ্ঠকে হ্রাস করে হাইপারথারমিয়া এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে মনে করা যেতে পারে।

মানব প্রজাতির মস্তিষ্ক অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় অনেক বড় হয়ে থাকে - সাধারণত আধুনিক মানুষের মধ্যে ১,৩৩০ সেন্টিমিটার যা শিম্পাঞ্জি বা গরিলার মস্তিষ্কের আকারের দ্বিগুণ।[২৫] এনসেফালাইজেশনের প্যাটার্নটি হোমো হ্যাবিলিসের সাথে শুরু হয়েছিল যা প্রায় ৬০০ সেন্টিমিটার শিম্পাঞ্জির চেয়ে বড় মস্তিষ্ক ছিল এবং হোমো ইরেক্টাস (৮০০-১,১০০ সেমি ) এবং এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল গড় সাইজের ১,৩০০-১,৯০০ সেন্টিমিটার যা নিনদারথালস এর মস্তিষ্ক ছিল যা কিনা হোমো স্যাপিয়েন্সের চেয়েও বড় (কিন্তু কম স্বস্তিযুক্ত)।[২৬]

মানবজাতির জন্মকালীন মস্তিষ্কের বৃদ্ধির প্যাটার্নটি অন্যান্য এপস (হিট্রোক্রনি) থেকে পৃথক যা অল্পবয়স্ক মানুষের মধ্যে সামাজিক শিক্ষা ও ভাষা শিক্ষার জন্য বর্ধিত সময়ের সুযোগ করে দেয় । যাইহোক, মানুষের মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য এপসের কাঠামোর মধ্যে পার্থক্যগুলি মাপের পার্থক্যগুলির তুলনায় আরো বেশি গুরুত্ব বহন করে।[২৭][২৮][২৯][৩০] সময়ভিত্তিক ভলিউম বৃদ্ধির ফলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকায় অসমভাবে প্রভাব পড়েছে - ভাষাগত প্রক্রিয়াগুলির জন্য কেন্দ্রগুলির অন্তর্গত সাময়িক লোবগুলি অপরিসীমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেমন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স রয়েছে যা জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত।[২৫] এনসেফালাইজেশন খাদ্য হিসাবে মাংসের উপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছিল[৩১][৩২] বা রান্নার বিকাশ ঘটেছিল,[৩৩] এবং ধারণা করা হয় যে মানব সমাজ আরো জটিল হয়ে উঠায় সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পেয়েছিল।[৩৪]

হ্রাসকৃত যৌন ডিমরফিজম প্রাথমিকভাবে পুরুষের দাঁতে তা লক্ষ্য করা গেছে অন্যান্য এপের প্রজাতি (গিবনস ব্যতীত)। মানুষের মধ্যে যৌনতা সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন বিবর্তনের সাথে জড়িত ছিল। মানব জাতিই হল বানরসদৃশ একমাত্র প্রজাতি যাদের মধ্যে মেয়েরা সারা বছর উর্বর থাকে এবং যার মধ্যে শরীরের দ্বারা উৎপাদিত কোন বিশেষ সংকেত উৎপাদিত হয় (যেমন estrus এর সময় জেনিটাল ফুলে যাওয়া)। তবুও মানুষের শরীরের চুল এবং চামড়ার অধীনস্থ ফ্যাটের মধ্যে যৌন দ্ব্যর্থতা বজায় রাখে এবং সামগ্রিক আকারে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এর পরিমাণ প্রায় ২৫% বেশি থাকে । বংশবৃদ্ধির দীর্ঘসূত্রতা বৃদ্ধির কারণে বেড়ে যাওয়া পিতামাতার জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে জোড়া সম্পর্কের উপর জোর দেয়ার কারণ হিসাবে এই পরিবর্তনগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।

হোমো স্যাপিয়েন্সের উত্থান

উচ্চ প্যালিওলিথিক সময়ের (৫০,০০০ বিপি) প্রারম্ভে, ভাষার উৎপত্তি, সঙ্গীতের উৎপত্তি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক বিশ্ব নিয়ে আচরণগত আধুনিকতার পূর্ণ বিকাশ ঘটে।[৩৫][৩৬] আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন হোমো নিনডারথালেন্সিস এবং তথাকথিত ডেনিসোভ্যানের মতো অন্য হোমিনিডদের মুখোমুখি তারা হয়েছিল। প্রারম্ভিক মানুষ এবং এই বোন প্রজাতির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া একটি দীর্ঘ বিতর্কিত উৎস ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে যে মানুষ এই আগের প্রজাতির প্রতিস্থাপিত হয়েছিল কিনা বা নাকি তারা ইন্টারব্রিডের মতই ছিল।[৩৭] এমনকি এই ক্ষেত্রে এই পূর্ববর্তী জনগোষ্ঠী আধুনিক মানুষের জিনগত উপাদানে অবদান রাখতে পারে। মানব ও নিনার্থাল জিনোমের সাম্প্রতিক গবেষণায় আর্কিয়াক হোমো স্যাপিয়েন্স, নিনেন্ডারথাল এবং ডেনিসোভানদের মধ্যে জিন প্রবাহের বৈশিষ্ট্য আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।[৩৮][৩৯][৪০] ২০১৬ সালের মার্চে, গবেষণায় দেখা যায় যে আধুনিক মানুষ হোমিনিন এবং ডেনিসোভানস এবং নেনডারথালসের সাথে প্রজনন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িয়ে পরেছিল যার প্রমাণ বহু জায়গায় পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়।[৪১]

আফ্রিকার বাহিরে এই ছড়িয়ে পড়া উত্তরপূর্ব আফ্রিকা থেকে প্রায় ৭০,০০০ বছর বিপি শুরু হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। বর্তমান প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে এটি ছিল মাত্র এক ধরনের ছড়িয়ে পড়া যা কেবল কয়েকশ লোকের সাথে জড়িত ছিল।[৪২] মানুষের অধিকাংশই আফ্রিকায় থাকত এবং বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে তারা রূপান্তরিত হতো। আধুনিক মানুষ হোমিনিনদের পরিবর্তে পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল (প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বা হাইব্রিডাইজেশনের মাধ্যমে)। তারা ইউরেশিয়া ও ওশেনিয়াতে ৪০,০০০ বৎসর বিপি এবং আমেরিকাতে অন্তত ১৪,৫০০ বৎসর বিপি বসবাস করত।[৪৩][৪৪]

ইতিহাস

সভ্যতার রূপান্তর

প্রায় ১০,০০০ বছর আগে পর্যন্ত মানুষ শিকারি-জড়ক হিসাবে বসবাস করতো । তারা ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর আধিপত্য লাভ করতে শুরু করেছিল । সাধারণত তারা গুহাগুলির মধ্যে প্রায়ই ব্যান্ড সোসাইটি নামে পরিচিত ছোট ভ্রম্যমাণ দলগুলিতে বসবাস করত। কৃষি উদ্ভাবনের ফলে নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব ঘটেছিল, খাদ্যের উদ্বৃত্ততা বেড়ে যাবার ফলে মানুষের স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল, তাছাড়া পশুপালন এবং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ধাতু সরঞ্জাম ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল। কৃষিকাজ বাণিজ্য ও সহযোগিতাকে উৎসাহিত করেছিল যা জটিল সমাজের দিকে নিয়ে গিয়েছিল ।

গিজার মহা পিরামিড,মিশর

প্রাথমিক সভ্যতাগুলি যেমন - মেসোপটেমিয়া, মিশর, ভারত, চীন, মায়া, গ্রিস এবং রোমান সভ্যতা যাদের মাধ্যমে মানব সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়েছিল।[৪৫][৪৬][৪৭] মধ্যযুগের শেষের দিকে এবং প্রারম্ভিক আধুনিক যুগের মধ্যে বিপ্লবী চিন্তাভাবনা ও প্রযুক্তির উত্থান দেখা দেয়। পরবর্তী ৫০০ বছর ধরে অনুসন্ধান এবং ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা বিশ্বের অধিকাংশ অংশ ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিল যা পরে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের দিকে জনগণকে বাধ্য করেছিল। আধুনিক বিশ্ব এবং প্রাচীন জগতের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যে দ্রুত পরিবর্তন হয়েছিল এই ধারণাটি মূলত ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। মানুষের কার্যকলাপের সমস্ত অঞ্চলে অগ্রগতির ফলে বিবর্তন এবং মনোবিশ্লেষণের মত নতুন তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছে, যা পরিবর্তিত মানবতার দৃষ্টিভঙ্গি নামে পরিচিত। উনিশ শতাব্দী পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক বিপ্লব, প্রযুক্তি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব এবং নতুনতর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে স্বাধীন আবিষ্কারের, যেমন বিমান এবং অটোমোবাইল এর উদ্ভাবন হয়েছে। তাছাড়া শক্তি উন্নয়ন, যেমন কয়লা এবং বিদ্যুৎ এর ব্যবহার বেড়েছে।[৪৮] ইহা জনসংখ্যা বৃদ্ধি (বিশেষত আমেরিকাতে)[৪৯] এবং উচ্চতর জীবন প্রত্যাশার সাথে সম্পর্কযুক্ত, বিশ্ব জনসংখ্যা দ্রুত উনিশ এবং বিংশ শতাব্দীতে অনেক বৃদ্ধি পায় যা ছিল গত শতাব্দীর ১০% বেশি।[৫০]

বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তথ্য যুগের আবির্ভাবের সাথে সাথে আধুনিক মানুষ এমন এক জগতে বাস করে যারা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ও পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে[৫১] এবং ৩.৩ বিলিয়ন মোবাইল ফোনের সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও মানুষের মধ্যে আন্তঃসংযোগ বিজ্ঞান, শিল্প, আলোচনা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য উত্সাহিত করেছে সাথে সাথে এটি সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ এবং ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদন ও ব্যবহারকেও পরিচালিত করেছে। মানব সভ্যতা পরিবেশগত ধ্বংস এবং দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে অন্যান্য প্রকারের প্রাণীর চলমান বিলুপ্তিকে ত্বরান্বিত করছে,[৫২] যা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে আর দ্রুততর করবে।[৫৩]

বাসস্থান এবং জনসংখ্যা

জনসংখ্যার পরিসংখ্যান[n ১]
  •   ১০০+ কোটি
  •   ২০–১০০ কোটি
  •   ১০–২০ কোটি
  •   ৭.৫–১০ কোটি
  •   ৫–৭.৫ কোটি
  •   ২.৫–৫ কোটি
  •   ১–২.৫ কোটি
  •   ৫০ লক্ষ –১ কোটি
  •   <৫০ লক্ষ
বিশ্ব জনসংখ্যা৮০০ কোটি
জনসংখ্যার ঘনত্বমোট এলাকা অনুসারে ১৬/বর্গ কিমি বা (৪১/বর্গ মাইল) ,শুধুমাত্র স্থলভাগে ৫৪/বর্গ কিমি বা (১৩৯/বর্গ মাইল)
বৃহত্তর শহর[n ২]টোকিও, দিল্লী, সাংহাই, সাও পাওলো, মেক্সিকো সিটি, কায়রো, মুম্বাই, বেইজিং, ঢাকা, ওসাকা, নিউ ইয়র্ক-নিউজার্সি, করাচি, বুয়েন্স আয়ার্স, চংকিং, ইস্তাম্বুল, কলকাতা, ম্যানিলা, লাগোস, রিও ডে জেনিরো, থিয়েনচিন, কিনশাসা, কুয়াংচৌ, লস অ্যাঞ্জেলেস-লং বিচ, মস্কো, শেনচেন, লাহোর, বেঙ্গালুরু, প্যারিস, জাকার্তা, চেন্নাই, লিমা, বোগোতা, ব্যাংকক, লন্ডন

প্রারম্ভিক মানুষের বসতিসমূহ জলের উৎসের কাছাকাছি ছিল এবং জীবনধারণের উপর ভিত্তি করে বেঁচে থাকার জন্য তারা অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতো, যেমন - শিকারের জন্য পশু, শস্য চাষের জন্য জমি, এবং গবাদি পশু। মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবাসনের পরিবর্তন করেছিল, যেমন - সেচ, নগর পরিকল্পনা, নির্মাণ, পরিবহন, উৎপাদন সামগ্রী, বনভূমি উজাড় এবং মরুকরণ এর মাধ্যমে।[৫৭] প্রায়ই বাসস্থান পরিবর্তন করার মূল কারণ ছিল বস্তুগত সম্পদ বৃদ্ধি, তাপের উৎস বৃদ্ধি, খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি, নৃতাত্ত্বিক উন্নতি, বা সম্পদ বা অন্যান্য মানব বসতিগুলির অ্যাক্সেসের সুবিধার উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করা। বড় আকারের বাণিজ্য ও পরিবহন অবকাঠামোর উন্নয়নের ফলে এই সম্পদগুলির কাছাকাছি থাকা অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠেছিল এবং অনেক স্থানে এগুলি জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং হ্রাসের পিছনে একটি চালিকা শক্তি নয়। তথাপি, যে পদ্ধতিতে বাসস্থান পরিবর্তিত হয় তা প্রায়ই জনসংখ্যার পরিবর্তনের একটি প্রধান নির্ধারক হিসাবে কাজ করে।

প্রযুক্তি দ্বারা মানুষ সব মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করতে এবং জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত শতাব্দীর মধ্যে মানুষ এন্টার্কটিকা,[৫৮][৫৯] সমুদ্রের গভীরে এবং বাইরের স্থান অনুসন্ধান করেছে, যদিও এই পরিবেশের বৃহৎ পরিসরে ঔপনিবেশীকরণ এখনও সম্ভবপর নয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলির মধ্যে মানুষই সংখ্যায় বেশি, প্রায় ৭ বিলিয়ন এর উপর জনসংখ্যা। অধিকাংশ মানুষ (৬১%) এশিয়ায় বাস করে। অবশিষ্ট লোক আমেরিকায় (১৪%), আফ্রিকায় (১৪%), ইউরোপে (১১%) এবং ওশেনিয়ায় (০.৫%) বসবাস করে।[৬০]

এন্টার্কটিকা এবং বাইরের স্থানে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে মানব বসতি ব্যয়বহুল এবং সাধারণত সময়কাল সীমিত। তাছাড়া বৈজ্ঞানিক, সামরিক বা শিল্প অভিযান ও ঐখানে সংরক্ষিত। মহাকাশে জীবন যাপন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে, তেরো জনের বেশি মহাকাশে বসবাসের কোন নির্ধারিত সময় নেই।[৬১] ১৯৬৯ এবং ১৯৭৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে দুইজন মানুষ চাঁদে সংক্ষিপ্ত সময় কাটিয়েছিলেন। ২০০০ সালের ৩১ শে অক্টোবর থেকে প্রাথমিক ক্রুদের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে কেউ না কেউ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করতেছে।[৬২] যাইহোক, মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থান মানুষের তৈরি বস্তু দ্বারা পরিদর্শন করা হয়েছে।[৬৩][৬৪][৬৫]

১৮০০ সাল থেকে জনসংখ্যা এক বিলিয়ন[৬৬] থেকে ৭ বিলিয়ন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে,[৬৭] ২০০৪ সালে ৬.৩ বিলিয়ন মানুষ (৩৯.৭%) এর মধ্যে ২.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যা শহুরে এলাকায় বসবাস করেছিল। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউএন এর ধারণা ছিল যে বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা শহুরে এলাকায় বসবাস করবে।[৬৮] শহরে বসবাসকারী মানুষেরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করে যেমন দূষণ এবং অপরাধ এর অন্তর্ভুক্ত।[৬৯] বিশেষ করে শহরের ভিতরে এবং উপশহরের বস্তিতে এর মাত্রা একটু বেশি লক্ষ্য করা যায় । শহরে বসবাসের সামগ্রিক জনসংখ্যার অনুপাত আগামী দশকগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।[৭০]

মানুষ এবং তাদের গৃহপালিত প্রাণীরা পৃথিবীর সমস্ত স্তন্যপায়ী জীবগোষ্ঠীর ৯৬%, অপরদিকে সমস্ত বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর হার মাত্র ৪%

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মানুষের একটি নাটকীয় প্রভাব আছে।[৭১] মানুষ হিংস্র শিকারি, তারা অন্য প্রজাতির দ্বারা কদাচিৎ শিকার হয়। বর্তমানে, জমির উন্নয়ন, জীবাশ্ম জ্বালানীর দূষণ এবং দূষণের মাধ্যমে মানুষ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ভূমিকা পালন করতেছে বলে মনে করা হয়।[৭২] যদি এটি তার বর্তমান হারে অব্যাহত থাকে তবে পূর্বাভাস দেওয়া হয় যে পরবর্তী শতাব্দীতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সব ধরনের গাছপালা ও প্রাণী প্রজাতির অর্ধেক বিপন্ন হয়ে যাবে।[৭৩][৭৪]

জীববিজ্ঞান

শারীরবিদ্যা এবং দেহতত্ব

নারী ও পুরুষ মানুষের মৌলিক শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য। এই মডেলদের শরীরের লোম ও পুরুষ মডেলের মুখের দাঁড়ি-গোঁফ অপসারণ করা হয়েছে এবং মাথার চুল ছাঁটা হয়েছে৷ নারী মডেল তার পায়ের নখে লাল নেইলপলিশ এবং আঙুলে একটি আংটি পরেছেন

মানুষের শারীরবৃত্তির বেশিরভাগ দিকগুলো পশুপাখি সম্পর্কিত অনুঘটকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বা সমানভাবে পরিচিত। মানুষের শরীর সাধারণত পা, ধড়, বাহু, ঘাড় এবং মাথা নিয়ে গঠিত । একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন (১×১০১৪) কোষ নিয়ে গঠিত। মানুষের শরীরের মধ্যে সর্বাধিক সংজ্ঞায়িত সিস্টেমগুলি হল, যেমন- স্নায়ুতন্ত্র, কার্ডিওভাসকুলার, সার্কোলেটরি, ডাইজেস্টিব, এ্যানডক্রিন, ইমিউন, ইন্টিগোমেন্টারী, লিমফেটিক, মোসকোস্কেলিটাল, প্রজনন, শ্বাসযন্ত্র এবং মূত্রনালি।[৭৫][৭৬]

অন্যান্য এপস এর মত মানুষের বহিরাগত লেজ নেই, তাদের বিভিন্ন ধরনের রক্তের গ্রুপ রয়েছে, প্রতিবাদযোগ্য অঙ্গুষ্ঠি রয়েছে এবং যৌন মিলনে তারা দ্বিরুপ। মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ছোটখাটো শারীরিক পার্থক্য রয়েছে তার মধ্যে দুপায়ে হাটা অন্যতম। একটি বড় পার্থক্য হল যে মানুষের অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত এবং আরও নির্ভুলভাবে নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রাণীজগতে মানুষ সর্বোত্তম লম্বা দূরত্বের দৌড়বিদদের মধ্যে রয়েছে, তবে অল্প দূরত্বে তারা ধীরগতি সম্পন্ন।[৭৭][৭৮] মানুষের শরীরের পাতলা চুল এবং আরও উৎপাদনশীল ঘাম গ্লান্ড দীর্ঘ পথ দৌড়ানোর সময় তাপের নিবিড়তা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে।[৭৯]

বাইপেডালিজমের ফলস্বরূপ, মানব নারীর সংকোচিত জন্ম নালি রয়েছে। পায়ের আঙ্গুলের মত মানব প্যালভিসের গঠন অন্য প্রাইমেটদের থেকে ভিন্ন। আধুনিক মানুষের পেলভির এই সুবিধার জন্য অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় শিশু জন্মদান অনেক বেশি কঠিন এবং বিপজ্জনক, বিশেষত অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানব শিশুর মাথা বড় আকারের হয়ে থাকে। এর মানে হল যে, মানবজাতির সন্তানদের জন্মের সময় অবশ্যই তাদের দিক পরিবর্তন করতে হবে, যা অন্য প্রাইমেটগুলি করে না। এবং এটি মানুষকে একমাত্র প্রজাতি বানায় যেখানে সাধারণত মেয়েদের (তাদের নিজস্ব প্রজাতির অন্যান্য সদস্য) জন্ম প্রদানে ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। আংশিক বিবর্তনীয় সমাধান হিসাবে মানুষের ভ্রূণ কম উন্নত এবং দুর্বল হয়ে জন্মায়। শিম্পাঞ্জিদের শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মানব শিশুদের চেয়ে উন্নত থাকে, যখন মানুষের মস্তিষ্কের দ্রুত উন্নয়ন শিম্পাঞ্জীদের অতিক্রম করে ফেলে। মানব নারী ও শিম্পাঞ্জী নারীদের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য হল নারীরা মেনোপজের মধ্য দিয়ে যায় এবং তাদের জীবনের শেষের দিকের কয়েক দশক তারা অনুর্বর হয়ে যায়। সকল অ-মানব বানর প্রজাতি মৃত্যু পর্যন্ত জন্ম দিতে সক্ষম। মেনোপজ সম্ভবত উন্নত হয়েছে তরুণ আত্মীয়দের বিবর্তনমূলক সুবিধা (আরও যত্নশীল সময়) প্রদান করার জন্য।বাইপেডালিজম ব্যতিরেকে, ঘ্রাণ, শ্রবণশক্তি, প্রোটিন হজম করা, মস্তিষ্কের আকার এবং ভাষার ক্ষমতা মানুষকে শিম্পাঞ্জি থেকে পৃথক করে তুলে। মানুষের মস্তিষ্ক শিম্পাঞ্জির তুলনায় প্রায় তিনগুণ বড় হয়ে থাকে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, শরীর থেকে মস্তিষ্কের অনুপাত শিম্পাঞ্জির তুলনায় মানুষের মধ্যে অনেক বেশি, এবং মানুষের একটি বৃহত্তর সংখ্যক স্নায়ুকোষের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে আরও উন্নত সেরিব্রাল কর্টেক্স আছে। মানুষের বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা অন্যান্য বানরের তুলনায় অসাধারণ। মানুষের কথা বলার ক্ষমতা প্রাইমেটদের থেকে অনন্য। মানুষ নতুন এবং জটিল ধারণা তৈরি করতে এবং প্রযুক্তি বিকাশ করতে সক্ষম, যা পৃথিবীতে অন্য প্রাণীর মধ্যে অপ্রতুল।[৭৮]

এটি অনুমান করা হয় যে, প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে পুরুষের জন্য বিশ্বব্যাপী গড় উচ্চতা প্রায় ১৭২ সেমি (৫ ফুট ৭ ১/২ ইঞ্চি) এবং বিশ্বব্যাপী বয়স্ক মেয়েদের গড় উচ্চতা প্রায় ১৫৮ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ২ ইঞ্চি)। কিছু ব্যক্তিদের মধ্যে সংকোচন মাজ বয়সেই শুরু হতে পারে আবার অত্যন্ত বয়স্ক অবস্থায়ও হতে পারে। ইতিহাস জুরে দেখা যায় মানুষ সর্বত্র লম্বা হয়ে গেছে, এর কারণ হিসাবে উন্নত পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবনযাপনের অবস্থার ফলকে দায়ী করা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড় ওজন পুরুষের জন্য ৫৪-৬৪ কেজি (১১৯-১৪১ পাউন্ড) এবং মেয়েদের জন্য ৭৬-৮৩ কেজি (১৬৮-১৮৩ পাউন্ড)। অন্যান্য অবস্থার মতো শরীরের ওজন এবং শরীরের ধরন উভয় জেনেটিক সংবেদনশীলতা এবং পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত এবং ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।[৭৮]

যদিও মানুষের অন্য প্রাইম্যাটের তুলনায় কম চুল হয়, তবে তাদের মাথায়, বগল এবং পিউবিক এলাকায় চুল অনেক লম্বা হয়। তাছাড়া মানুষের দেহের উপর হেয়ার ফলিকস এর পরিমাণ শিম্পাঞ্জির তুলনায় বেশি থাকে। প্রধান পার্থক্য হলো মানুষের চুল শিম্পাঞ্জির তুলনায় ছোট , চিকন এবং কম রঞ্জক, এইভাবে তাদের দেখতে কঠিন হয়ে যায়।[৮০] মানুষের সমগ্র দেহে প্রায় ২ মিলিয়ন ঘাম গ্লান্ড আছে যা শিম্পাঞ্জির চেয়েও অনেক বেশি । শিম্পাঞ্জির ঘাম গ্লান্ড খুব কম যা মূলত করতল এবং পায়ের পাতার উপর অবস্থিত।[৮১]

মানুষের দাঁতের সূত্র হল:২.১.২.৩২.১.২.৩

অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় মানুষের সমানুপাতিক ছোট পেলেটস এবং অনেক ছোট ছোট দাঁত থাকে । প্রাইমেটদের শুধুমাত্র ছোট এবং তুলনামূলকভাবে flush canine দাঁত আছে । মানুষের চারিত্রিকভাবে ঘন দাঁত রয়েছে, যার ফলে হারানো দাঁত থেকে ফাঁকটি সাধারণত অল্প বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দ্রুত কভার হয়ে যায় । মানুষ ধীরে ধীরে তাদের আক্কেল দাঁত হারান, কিছু ব্যক্তির মধ্যে এই দাঁতের অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়।[৮২]

বংশাণুবিজ্ঞান

স্ট্যান্ডার্ড হিউম্যান ক্যারিওটাইপের একটি গ্রাফিকাল উপস্থাপনা, স্ত্রী (XX) এবং পুরুষ (XY) উভয় যৌন ক্রোমোজোম (নীচে ডানদিকে), পাশাপাশি মাইটোকন্ড্রিয়াল জিনোম (নীচে বামদিকে "এমটি" কে স্কেল হিসেবে দেখানো হয়েছে)।

সব স্তন্যপায়ীদের মতো মানুষ একটি ডিপলয়েড ইউক্যারিওটিক প্রজাতি। মানুষের শরীরের প্রতিটি কোষে ২৩ টি ক্রোমোজমের দুটি সেট আছে, প্রতিটি সেট একজন পিতা বা মাতা থেকে প্রাপ্ত। Gametes শুধুমাত্র ক্রোমোজমের একটি সেট, যা দুইজন পিতামাতার সেটের একটি মিশ্রণ। ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ২২ জোড়া হল অটোসোম এবং এক জোড়া হচ্ছে যৌন ক্রোমোজোম। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলির মতো মানুষের XY যৌন-সংকল্প ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে নারীদের যৌন ক্রোমোজোমে XX থাকে এবং পুরুষদের XY থাকে।[৮৩]

২০০৩ সালে এক মানব জিনোমের পূর্ণতা লাভ করা হয়েছিল, এবং বর্তমানে প্রজাতির জেনেটিক বৈচিত্র্যের একটি নমুনা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা করা হচ্ছে (আন্তর্জাতিক হ্যাপম্যাপ প্রকল্প দেখুন)। বর্তমান অনুমান অনুসারে মানুষের প্রায় ২২,০০০ জিন রয়েছে।[৮৪] অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় মানুষের ডিএনএ ভিন্নতা খুব কম, সম্ভবত লেইথ প্লাইস্টোসিনের (প্রায় ১০০,০০০ বছর আগে) জনসংখ্যার প্রবাহের কথা উল্লেখ করে, যার মধ্যে মানব জনসংখ্যার একটি অল্প সংখ্যক প্রজননকারী জোড়া হ্রাস পেয়েছিল।[৮৫][৮৬] নিউক্লিওটাইড বৈচিত্র্যটি একক মিউটেশনের উপর ভিত্তি করে ঘটে যা একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিসমস (এসএনপিএস) নামে পরিচিত। মানুষের মধ্যে নিউক্লিওটাইড বৈচিত্র্যটি প্রায় ০.১%, যেমন ১০০০ বেস জোড়া প্রতি ১টি পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এক হাজার নিউক্লিওটাইডের মধ্যে একটির পার্থক্যের কারণে দুটি মানুষের জিনোমের মধ্যে প্রায় ৩ মিলিয়ন নিউক্লিওটাইডের পার্থক্য হয়।[৮৭][৮৮] যদিও মানুষের জিনোমে প্রায় ৩ বিলিয়ন নিউক্লিওটাইড রয়েছে। এই একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম(বেশিরভাগ সিএনপিএস) নিরপেক্ষ কিন্তু কিছু (প্রায় ৩ থেকে ৫%) কার্যকরী এবং আলেলেস এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ফেনোটাইপিক পার্থক্যকে প্রভাবিত করে।

প্রাকৃতিক নির্বাচনের অধীনে নয় এমন জিনোমের অংশগুলির সাথে তুলনা করে যা মোটামুটি স্থিতিশীল হারে মিউটেশনের সৃষ্টি করে সমগ্র মানব প্রজাতির একটি জেনেটিক গাছ পুনর্গঠন। প্রতিবার একটি নির্দিষ্ট পরিব্যক্তি একটি ব্যক্তির মধ্যে প্রদর্শিত হয় এবং তার বা তার পূর্বপুরুষদের কাছে প্রেরণ করা হয় যার মাধ্যমে একটি হ্যাপলোগ্রুপ গঠিত হয় সেই ব্যক্তির সমস্ত বংশধরদের সহ যা এই পরিবর্তনটি বহন করবে। শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গিয়েছিল এমন মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তুলনা করে জেনেটিক্সবাদীরা এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, সমস্ত আধুনিক মানুষের মধ্যে যে জেনেটিক মার্কার পাওয়া গেছে তা গত সাধারণ মেয়ে পূর্বপুরুষের কাছ থেকে এসেছিল। তথাকথিত মাইটোকোন্ড্রিয়াল ইভ, অবশ্যই প্রায় ৯০,০০০ থেকে ২০০,০০০ বছর আগে বসবাস করত।[৮৯][৯০][৯১]

২০০৬ সালে প্রথম বর্ণনা করা[৯২] হিউম্যান এক্সিলারেটেড অঞ্চলে মানুষের জিনোমের ৪৯ টি ভাগে বিভক্ত হয়েছে যা ক্রান্তীয় বিবর্তনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছিল কিন্তু তা মানুষের মধ্যে অদ্ভুতভাবে ভিন্ন। মানুষ এবং তাদের নিকটতম পশু আত্মীয় (শিম্পাঞ্জি) (এইচএআর১ মানব-শিম্পাঞ্জীর মধ্যে বৃহত্তম পার্থক্যের ডিগ্রী দেখানো হয়েছে) তাদের পার্থক্য অনুযায়ী তাদের নামকরণ করা হয়। একাধিক প্রজাতির জিনোমিক ডাটাবেসগুলি স্ক্যান করার মাধ্যমে যা পাওয়া যায় তাতে ধারণা করা হচ্ছে এই মিউটেটেড এলাকা মানুষের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলিতে অবদান রাখতে পারে।[৯৩]

জীবনচক্র

৫ম সপ্তাহে একটি ১০ ​​মিমি আকৃতির মানব ভ্রূণ

অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মত মানব প্রজনন যৌনক্রিয়া দ্বারা অভ্যন্তরীণ নিষেকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় পুরুষ নারীর যোনিতে তার স্থায়ী লিঙ্গকে সন্নিবেশ করান এবং সিম্যান ত্যাগ করে যাতে শুক্রাণু থাকে। শুক্রাণু যোনি ও জরায়ুর মাধ্যমে গর্ভাশয়ে বা ফলোপিয়ান টিউবগুলিতে নিষেকের জন্য ভ্রমণ করে। নিষেক এবং ইমপ্লান্টেশন এর পর মহিলাদের জরায়ুর মধ্যে গর্ভদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

ভ্রূণকোষ মহিলা জরায়ুতে বিভক্ত হয় ভ্রূণ হওয়ার জন্য, যা গর্ভধারণের ৩৮ সপ্তাহ (৯ মাস) ধরে একটি ভ্রূণে রূপান্তরিত হয়। সময়ের ব্যবধানে সম্পূর্ণরূপে ভ্রূণ মহিলার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং প্রথমবার একটি শিশু হিসাবে স্বাধীনভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। এই সময়ে বেশিরভাগ আধুনিক সংস্কৃতি শিশুকে আইনের পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার হিসাবে বিবেচনা করে, যদিও কিছু বিচারব্যবস্থা যখন তারা জরায়ুতে থাকে তখন মানুষের ভ্রূণের বিভিন্ন স্তরকে ভিন্ন ভিন্নভাবে বিচার করে।

অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় মানবজাতির জন্মদান প্রক্রিয়া অনেক বিপদজনক। ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে বেদনাদায়ক মুহূর্ত পার করতে হয় কখনও কখনও তা মা বা শিশু উভয়ই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়।[৯৪] এটি তুলনামূলকভাবে ভ্রূণের মাথার বড় পরিধি এবং মায়ের সংকীর্ণ শ্রোণিচক্র উভয়ের কারণেই হতে পারে।[৯৫][৯৬] ধনী দেশগুলির মধ্যে বিংশ শতাব্দীতে নতুন​প্রযুক্তিগুলির আবির্ভাবের ফলে সফল এবং সহজভাবে জন্মদানের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে, গর্ভধারণ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে বাচ্চা প্রসব করানোর ক্ষেত্রে পৃথিবীর উন্নয়নশীল অঞ্চলে বিপজ্জনক অনিয়ম লক্ষ্য করা যায়, এর ফলে উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশে মাতৃ মৃত্যুর হার প্রায় ১০০ গুণ বেশি।[৯৭]

উন্নত দেশগুলিতে শিশু সাধারণত ওজনে ৩-৪ কেজি (৭-৯ পাউন্ড) এবং জন্মের সময় উচ্চতা থাকে ৫০-৬০ সেমি (২০-২৪ ইঞ্চি)। তবে জন্মের সময় ওজন কম হওয়া উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সাধারণ যার ফলে এই অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার উচ্চ মাত্রার হয়ে থাকে।[৯৮] জন্মের সময়ের অসহায় অবস্থা সত্ত্বেও মানুষ সাধারণত বয়স ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে যৌন পরিপক্বতার মধ্যে পৌঁছায়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত নারীর শারীরিক বিকাশ চালতে থাকে, তবে তা পুরুষের বেলায় এই প্রক্রিয়া ২১ বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মানব জীবন বেশ কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত হতে পারে: প্রাক-শৈশবকাল, শৈশব, বয়ঃসন্ধিকাল, যৌবন, বয়স্কতা এবং বার্ধক্য।

তবে এই পর্যায়গুলির দৈর্ঘ্য সংস্কৃতি ও সময়কাল জুড়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে থাকে। অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় বয়ঃসন্ধিকালে মানুষ অস্বাভাবিক দ্রুত বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যেখানে শরীর ২৫% আকারে বৃদ্ধি পায় । উদাহরণস্বরূপ, শিম্পাঞ্জিরা শুধুমাত্র ১৪% বৃদ্ধি পায় যেখানে কোন সুস্পষ্ট বৃদ্ধির কোন লক্ষণ নেই।[৯৯] এই বৃদ্ধির উপস্থিতি শিশুদের শারীরিকভাবে ছোট রাখতে প্রয়োজন হতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা মানসিকভাবে পরিপক্বতা লাভ করে। মানুষ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে একটি প্রজাতি যেখানে মেয়েদেরকে রজোবন্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটি প্রস্তাব করা হয়েছে যে, মেনোপজটি নারীর সামগ্রিক প্রজনন সাফল্যের সাথে বৃদ্ধি করে তার বর্তমান সন্তানসন্ততিতে আরও বেশি সময় ও সম্পদ বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে এবং বয়স্কদের মধ্যে সন্তান ধারণ অব্যাহত রাখার পরিবর্তে তাদের সন্তানদের (দ্য গ্র্যান্ডমাদার হাইপোথিসিস) লালন পালন করতে মনোযোগ দিতে পারে।[১০০][১০১]

জৈব বা জিনগত কারণ সহ বিভিন্ন কারণে[১০২] পুরুষদের তুলনায় নারীরা প্রায় চার বছর বেশি বাঁচে। ২০১৩ সালের হিসাবে একটি মেয়ের বিশ্ব গড় আয়ু ৭০.২ বছর অনুমান করা হয় যেখানে পুরুষদের বিশ্ব গড় আয়ু হল ৬৬.১ বছর।[১০৩] মানুষের জীবনের প্রত্যাশা উল্লেখযোগ্যভাবে ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের সাথে প্রভাবিত হয়, বেশিরভাগ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সম্পর্কযুক্ত- উদাহরণস্বরূপ হংকংয়ে মেয়েদের গড় আয়ু ৮৪.৪ বছর এবং পুরুষদের গড় আয়ু ৭৮.৯ বছর। এবং সোয়াজিল্যান্ডে প্রাথমিকভাবে এইডসের কারণে নারী ও পুরুষের গড় আয়ু ৩১.৩ বছর হয়।[১০৪] উন্নত বিশ্বে সাধারণত বার্ধক্যজনিত বা মাঝারি বয়স শুরু হয় প্রায় ৪০ বছর বয়স থেকে। উন্নয়নশীল বিশ্বে মাঝারি বয়স শুরু হয় ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। যেখানে ইউরোপে পাঁচজন ব্যক্তির মধ্যে একজন ৬০ বছরের বা তার চেয়ে বেশি বয়সী হয়, সেখানে আফ্রিকানদের মধ্যে ২০ জনের মধ্যে মাত্র একজন ৬০ বছর বা তার চেয়েও বেশি বয়সী হয়।[১০৫] ২০০২ সালে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর ১০০ বছর বা তারও বেশি বয়সের মানুষের মোট সংখ্যা ২১০,০০০ অনুমান করা হয়।[১০৬] অন্তত একজন ব্যক্তি জেন ক্যালমেট যিনি ১২২ বছর বয়সে পৌঁছে গেছেন বলে জানা যায়।[১০৭] অনেকেরই উচ্চতর বয়স দাবি করা হয়েছে কিন্তু তারা যথাযথভাবে প্রমাণিত হয়নি।

মানব জীবনের পর্যায়সমূহ
বাচ্চা ছেলে ও মেয়েবয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে ছেলে ও মেয়ে (শিশু)কৈশোর যুবক ও যুবতীপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীবার্ধক্য পুরুষ ও নারী

সাধারণ খাদ্য

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বসবাসকারী মানুষরা খাবার তৈরি করছে

মানুষ হচ্ছে সর্বভুক প্রাণী, তারা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, পশু এবং মৎস্য উপাদান গ্রহণ করতে সক্ষম।[১০৮][১০৯] বাসস্থানের সাথে সাথে খাদ্য উৎসের পরিবর্তন হয় এবং সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আদর্শের সাথেও এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মানব গোষ্ঠীগুলির বেশিরভাগ নিরামিষভোজী থেকে মাংসভোজী হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, মানুষের খাদ্যতালিকাগত বিধিনিষেধগুলির কারণে পুষ্টির অভাব জনিত রোগ হতে পারে; যাইহোক, স্থিতিশীল মানব গ্রুপ পুষ্টিকর সুষম খাদ্যের উৎস ব্যবহার করতে জেনেটিক বিশেষজ্ঞ এবং সাংস্কৃতিক কনভেনশন উভয় মাধ্যমে অনেক খাদ্যতালিকাগত অনুকরণে নিজেরা অভিযোজিত হয়েছে।[১১০] মানুষের খাদ্য বিশেষভাবে মানুষের সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হয় এবং খাদ্য বিজ্ঞানের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়।

প্রায় ১০,০০০ বৎসর আগে কৃষি উন্নয়নের আগে, হোমো স্যাপিয়েন্স শিকারি পদ্ধতিকে তাদের খাদ্য সংগ্রহের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এটি বন্য খেলা সহ স্থায়ী খাদ্য উত্সগুলির (যেমন ফল, শস্য, কন্দ, এবং মাশরুম, পোকা লার্ভা এবং জলজ মোলাস্ক) জড়িত, যা খাওয়ার জন্য শিকার করা এবং হত্যা করা আবশ্যক।[১১১] হোমো ইরেক্টাসের সময় মানুষ খাদ্য প্রস্তুত ও রান্না করার জন্য আগুন ব্যবহার করতো বলে প্রস্তাব করা হয়েছে।[১১২] প্রায় দশ হাজার বছর আগে মানুষ কৃষিকাজকে বিকশিত করেছিল যার ফলে তাদের খাদ্যতালিকা যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়েছে।[১১৩] এই পরিবর্তনের ফলে মানুষের গঠন পরিবর্তিত হতে পারে; ডেইরি ফার্মিংয়ের মাধ্যমে খাদ্যের একটি নতুন এবং সমৃদ্ধ উৎস সরবরাহ করে যার ফলে কিছু প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ল্যাকটোজ ডাইজেস্ট করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।[১১৪][১১৫] কৃষির কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শহরগুলির উন্নয়ন হয়েছে, এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণে সংক্রামক ব্যাধির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে । যে ধরনের খাবার খাওয়া হয় এবং যা তৈরি করা হয় তা মূলত সময়, স্থান এবং সংস্কৃতি দ্বারা ব্যাপকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়।

সাধারণভাবে, মানুষ শরীরের মধ্যে জমায়িত চর্বির উপর নির্ভর করে খাদ্য ছাড়াই দুই থেকে আট সপ্তাহ জন্য বেঁচে থাকতে পারে।[১১৬] জল ছাড়াই বেঁচে থাকা সাধারণত তিন বা চারদিন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। প্রায় ৩৬ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষুধার সাথে সম্পর্কিত কারণে। বাল্যকালের অপুষ্টিও সাধারণ এবং রোগের বৈশ্বিক বোজা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।[১১৭] তবে বৈশ্বিক খাদ্য বিতরণ সুষম না হওয়ার কারণে কিছু মানুষের মধ্যে স্থূলতা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে স্বাস্থ্যগত জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু উন্নত এবং কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে । বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নের উপরে মানুষ এখন অনেক মোটা । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ৩৫% লোক স্থূল হয়ে যাচ্ছে,[১১৮] তখন এটিকে "স্থূলতা মহামারী" হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে । স্থূলতা মূলত বৃদ্ধি পায় তখনি যখন ব্যয় করার তুলনায় বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়।[১১৯] তাই অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি সাধারণত যেসব খাবারে বেশি ক্যালোরি থাকে তাদের দ্বারা সৃষ্ট হয়।[১১৮]

জৈব বৈচিত্র্যতা

জিনের সংখ্যা এবং ক্রম পরিবর্তন (এ-ডি) জনসংখ্যার মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য তৈরি করে

কোনও দুজন মানুষ-এমনকি মোনোজাইগোটিক যুগলও -জেনেটিকালি অভিন্ন নয় । জিন ও পরিবেশ মানবিক জৈব বৈচিত্র্যকে দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্যাবলী থেকে শারীরবৃত্তীয় রোগ এবং মানসিক ক্ষমতার বিষয়গুলোকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপর জিন এবং পরিবেশের সঠিক প্রভাব ভালোভাবে বোঝা যায় না।[১২০][১২১]

সর্বাধিক বর্তমান জেনেটিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পূর্ব আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের একটি সাম্প্রতিক একক উৎসকে সমর্থন করে, যা ৬০,০০০ বছর পূর্বে প্রথম স্থানান্তর করা হয়েছিল।[১২২] গ্রেট এপসের তুলনায়, এমনকি আফ্রিকান জনসংখ্যার মধ্যেও মানব জিনের ক্রমগুলি-উল্লেখযোগ্যভাবে সমজাতীয়।[১২৩] গড় মানুষের মধ্যে জিনগত মিল রয়েছে ৯৯.৯%।[১২৪][১২৫] সমগ্র মানব জিন পুলের তুলনায় বন্য শিম্পাঞ্জির মধ্যে প্রায় ২-৩ গুণ বেশি জেনেটিক বৈচিত্র্য রয়েছে।[১২৬][১২৭][১২৮]

বিভিন্ন পরিবেশগত চাপের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে মানুষের শরীরের ক্ষমতা অসাধারণ, যার ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং উচ্চতার সাথে নিজেদেরকে খাপ খাওয়াতে পারে। ফলস্বরূপ, মানুষকে পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলে মহাজাগতিক প্রজাতি হিসাবে পাওয়া, যেমন- গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্ট, শুষ্ক মরুভূমি, অত্যন্ত ঠাণ্ডা আর্কটিক অঞ্চল এবং ব্যাপকভাবে দূষিত শহরগুলি সহ। অধিকাংশ অন্যান্য প্রজাতি তাদের সীমিত অভিযোজন দ্বারা কয়েকটি ভৌগোলিক এলাকায় সীমাবদ্ধ।[১২৯]

মানব প্রজাতির জৈব বৈচিত্র্য রয়েছে- যেমন রক্তের ধরন, ক্লিনিক্যাল বৈশিষ্ট্য, চোখের রঙ, চুলের রঙ এবং টাইপ, উচ্চতা এবং বিল্ড, এবং সারা বিশ্বে চামড়ার রঙের পরিবর্তন ও লক্ষণীয় বিষয়। মানুষের শরীরের ধরন বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক উচ্চতা ১.৪ এবং ১.৯ মিটার (৪ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি) এর মধ্যে, যদিও এটি লিঙ্গ এবং জাতিগত উৎসের উপর অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে নির্ভর করে।[১৩০][১৩১] শারীরিক আকার আংশিকভাবে জিন দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং বিশেষ করে শৈশবকালে একটি প্রভাব হিসাবে খাদ্য, ব্যায়াম, এবং ঘুমের ধরন দ্বারা প্রভাবিত হয়। একটি বিশেষ জাতিগত গোষ্ঠীর প্রতিটি লিঙ্গের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক উচ্চতার জন্য আনুমানিক একটি সাধারণ বণ্টন প্রণালী অনুসরণ করে।মানুষের বিবর্তনীয় ইতিহাসের সূত্র বা জেনেটিক বৈচিত্র্যের যে দিকগুলি চিকিৎসা গবেষণার জন্য প্রাসঙ্গিক সেগুলি বিশেষ মনোযোগ পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জিনগুলি যা বয়স্ক মানুষরা ল্যাকটোজকে ডাইজেস্ট করতে পারে তাদের মধ্যে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি উপস্থিত থাকে যা থেকে অনুমান রা তারা দীর্ঘকাল ধরে গবাদি পশুর লালন পালনের সাথে জড়িত ছিল, যা গুরুর দুধের উপর নির্ভর করে জনসংখ্যার জিনের পক্ষে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রস্তাব দেয়। কিছু বংশগত রোগ যেমন সিকেল সেল অ্যানিমিয়া জনসংখ্যার মধ্যে ঘন ঘন হয় যেখানে সারা বিশ্বে ম্যালেরিয়ার জীবাণু সংক্রমণ ঘটেছে- এটা বিশ্বাস করা হয় যে একই জিনটি ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারীর মধ্যে যারা সংক্রমিত হয়নি তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে, আর্কটিক বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বা উচ্চতর উচ্চতায় অবস্থিত নির্দিষ্ট জলবায়ুগুলির দীর্ঘস্থায়ী জনগোষ্ঠীগুলি এমন পরিবেশে উৎস সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট ফেনোটাইপ তৈরি করে রেখেছে যা ক্ষতিকর পরিবেশে ছোট আকারের এবং স্টকী বিল্ডের জন্য ঠাণ্ডা অঞ্চল এবং গরম অঞ্চলের লম্বা বা ল্যাংকি, উচ্চ উচ্চতায় বসবাসের জন্য উচ্চ ফুসফুসের ক্ষমতা থাকতে হবে। অনুরূপভাবে, যাদের ত্বকের রঙ গাঢ় তারা সূর্যের অতিবেগুনী বিকিরণ থেকে অতিরিক্ত সুরক্ষা বা বিবর্তনীয় সুবিধা লাভ করে এবং যারা মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাস করে তাদের হালকা ত্বক বিশেষ সুবিধা দিতে পারে।[১৩২][১৩৩][১৩৪][১৩৫]

মানুষের চামড়া এবং চুলের রঙ মেলানিনস নামে রঙ্গকগুলির উপস্থিতি দ্বারা নির্ধারিত হয়। মানুষের ত্বকের রং অন্ধকার বাদামী থেকে হালকা কালো, অথবা এমনকি অ্যালবিনিজমের ক্ষেত্রে প্রায় সাদা বা বর্ণহীন হতে পারে।[১২৮] সাদা চুলের রঙ সাদা থেকে লাল থেকে গাঢ় বাদামী থেকে কালো রঙের হতে পারে, যা সর্বাধিক ঘন হয়।[১৩৬] চুলের রঙ ত্বক ও চুলের মধ্যে মেলানিনের পরিমাণ (একটি কার্যকরী সূর্য ব্লকিং রঙ্গক) উপর নির্ভর করে, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চুলে মেলানিনের ঘনত্ব ফেঁকাশে এমনকি সাদা হয়ে যেতে পারে চুলের। বেশীরভাগ গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে অন্ধকার ত্বক একটি অভিযোজন যা অতিবেগুনী সূর্যের বিকিরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসাবে প্রবর্তিত হয়, যা ফুলেটের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা অতিবেগুনী বিকিরণ দ্বারা ধ্বংস হয়। হালকা চামড়া রঙ্গকতা ভিটামিন ডি হ্রাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, যা তৈরি করতে সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয়।[১৩৭] সমসাময়িক মানুষ যাদের স্কিন রঙ্গক ভিন্ন পৃথিবীর চারপাশে তাদেরকে ক্লিনিক্যালি বিরক্তি অনুভব করতে হয় এবং সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা অতিবেগুনী বিকিরণের স্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত । অতিবেগুনি রশ্মির প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় মানুষের ত্বকেরও অন্ধকার (ট্যান) হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।[১৩৮][১৩৯][১৪০]

গঠনগত বৈচিত্র্য

মানব প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ডিগ্রী পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে বিদ্যমান। যদিও নিউক্লিওটাইড জেনেটিক ভ্যারিয়েশন গ্লোবাল জনসংখ্যা জুড়ে একই লিঙ্গের ব্যক্তি 0.১% থেকে বেশি নয়, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য ১% এবং ২% এর মধ্যে। যদিও প্রকৃতিতে এর ভিন্নতা বিদ্যমান, এটি মানব পুরুষ এবং পুরুষ শিম্পাঞ্জি বা মানব মহিলা এবং মহিলা শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য আছে । জেনেটিক পার্থক্য ঘটে মূলত শারীরবৃত্তীয়, হরমোনীয়, স্নায়ুতন্ত্র এবং পুরুষদের এবং মহিলাদের মধ্যে শারীরিক পার্থক্য বিদ্যমান, যদিও লিঙ্গের উপর সমাজের প্রকৃতি ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পূর্ণরূপে বুঝা যায়না । পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় গড় ১৫% ভারী এবং ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি) বেশি লম্বা হয়। তাছাড়া পুরুষ ও মহিলার শরীরের ধরন, শরীরের অঙ্গ এবং সিস্টেম , হরমোনের মাত্রা, সেন্সরীয় সিস্টেম, যৌনতা এবং পেশীর ভরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে । গড়পড়তা দেহের উপরের অংশে শরীরের শক্তি প্রায় ৪০-৫০% এবং ২০-৩০% দেহের নিচের অংশে শরীরের শক্তির দিক দিয়ে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে । মহিলাদের শরীরে চর্বি সাধারণত পুরুষদের চেয়ে আনুপাতিক হারে বেশি আছে। মহিলাদের পুরুষদের তুলনায় লাইটার ত্বক আছে; গর্ভাবস্থা এবং দুধ খাওয়ানোর সময় মহিলাদের মধ্যে ভিটামিন ডি (যা সূর্যালোক দ্বারা সংশ্লেষিত হয়) জন্য একটি উচ্চ প্রয়োজন দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে । নারী ও পুরুষের মধ্যে ক্রোমোজোমের পার্থক্য থাকার কারণে কিছু X এবং Y ক্রোমোজোম সংক্রান্ত অবস্থার এবং রোগ শুধুমাত্র পুরুষদের বা মহিলাদের উপর প্রভাব ফেলে। পুরুষদের এবং মহিলাদের মধ্যে অন্যান্য শর্তাধীন পার্থক্য যৌন ক্রোমোজোম সম্পর্কিত নয় । এমনকি শরীরের ওজন এবং ভলিউমের জন্য অনুমতি দেওয়ার পরেও পুরুষের ভয়েস সাধারণত মহিলা ভয়েসের চেয়ে একটু গভীর। সারা বিশ্ব জুড়ে প্রায় প্রত্যেক জনসংখ্যার মধ্যে নারীদের দীর্ঘ জীবনকাল রয়েছে।[১৪১][১৪২][১৪৩][১৪৪][১৪৫][১৪৬][১৪৭][১৪৮]

সাধারণত পুরুষদের বড় শ্বাসনালি এবং শাখা ব্রংকাই থাকে, প্রতি ইউনিট শরীরের ভরের প্রায় ৩০% বেশি ফুসফুসের ভলিউম থাকে। তাদের বৃহত্তর হৃদযন্ত্র রয়েছে, ১০% উচ্চ রক্তচাপের সংখ্যা , উচ্চ হিমোগ্লোবিন, বেশি অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা আছে। তাদের উচ্চতর ঘূর্ণনশীল উপাদানগুলি (ভিটামিন কে, প্রোথ্রোমোবিন এবং প্লেটলেট) আছে। এই পার্থক্য জখমের দ্রুত নিরাময় এবং উচ্চতর পেরিবারাল ব্যথা সহনশীলতা সৃষ্টি করে।[১৪৯] মহিলাদের মধ্যে বেশিরভাগ শ্বেত রক্ত​কোষ (সংরক্ষিত এবং সার্কোলেটিং), আরও বেশি গ্রানোলোসাইট এবং বি এবং টি লিম্ফোসাইট থাকে। অধিকন্তু, তারা পুরুষদের তুলনায় দ্রুততর এন্টিবডি উৎপাদন করে। অতএব তারা কম সংক্রামক রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এইগুলি অল্প সময়ের জন্য অব্যাহত থাকে।[১৪৯] থোলজিস্টরা বলে যে নারীরা, অন্যান্য নারী এবং সামাজিক গোষ্ঠীর একাধিক সন্তানসন্ততির সাথে আলাপচারিতায় একটি চ্যালেঞ্জিং সুবিধা হিসেবে এই বৈশিষ্ট্যগুলি উপভোগ করেছেন।[১৫০][১৫১][১৫২][১৫৩][১৫৪] ড্যালি ও উইলসনের মতে, "মানুষের মধ্যে মধ্যে পার্থক্য বেশি একক বিবাহের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় কিন্তু বহুবিবাহের স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলির তুলনায় অনেক কম।"[১৫৫] তবে মানুষের নিকটতম আত্মীয়ের মধ্যে যৌন দ্বিমুখীতা মানুষের তুলনায় অনেক বেশি, মানুষের যৌন দ্বিমুখীতা হ্রাস দ্বারা চিহ্নিত করা আবশ্যক, সম্ভবত কম প্রতিযোগিতামূলক মিলন নিদর্শনকে কারণ হিসাবে বিবেচনা করা আবশ্যক। একটি প্রস্তাবিত ব্যাখ্যা হল, মানুষের যৌনতা আরও উন্নত হয়েছে মানব যৌনতা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় bonobo, যা অনুরূপ যৌন দ্বিমুখীতা প্রদর্শন করে, polygynandrous এবং সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী এবং আগ্রাসন কমাতে সাহায্য করে।[১৫৬]

একই লিঙ্গের মানুষের ৯৯.৯% জেনেটিকালি অভিন্ন। মানুষের ভৌগোলিক জনসংখ্যার মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে এবং বেশিরভাগ পরিবর্তন ঘটে যা স্থানীয় এলাকার মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রয়েছে এবং তা জনসংখ্যার মধ্যে নয়।[১২৮][১৫৭][১৫৮] মানুষের মধ্যে জিনগত পার্থক্য ০.১%, ৮৫% নির্বাচিত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান, তারা ইতালীয়, কোরিয়ান বা কুর্দি হতে পারে। দুটি এলোমেলোভাবে নির্বাচিত কোরিয়ান জিনগতভাবে একজন কোরিয়ান এবং একজন ইতালীয় হিসাবে ভিন্ন হতে পারে। যে কোন জাতিগত গোষ্ঠী পৃথিবীর মানুষের জেনেটিক বৈচিত্র্যের ৮৫% অন্তর্ভুক্ত। জিনগত তথ্য দেখায় যে জনসংখ্যা গ্রুপ কীভাবে সংজ্ঞায়িত হয় তাও কোনও ব্যাপার নয়, একই জনগোষ্ঠীর দুইজন মানুষ একে অপরের থেকে ভিন্ন দুটি ভিন্ন জনগোষ্ঠী থেকে দুইজন ব্যক্তি হিসাবে ভিন্ন।[১২৮][১৫৯][১৬০][১৬১]

বর্তমান জেনেটিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে আফ্রিকান মহাদেশের মানুষের অধিকাংশ জেনেটিকালি বৈচিত্রপূর্ণ।[১৬২] আফ্রিকার মানুষের মধ্য যেমন জেনেটিক বৈচিত্র্য আছে পৃথিবীর আর কোথাও তেমন নেই। আফ্রিকার জেনেটিক গঠনে ১৪ জনগোষ্ঠীর জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করেছিল। মানব জিনগত বৈচিত্র্যটি আফ্রিকার অভিবাসী দূরত্বের সাথে স্থানীয় জনবসতিতে হ্রাস পায় এবং এটি মানব অভিবাসনের সময় বিঘ্নের ফলাফল বলে মনে করা হয়।[১৬৩][১৬৪] মানুষ দীর্ঘতম সময়ের জন্য আফ্রিকায় বসবাস করেছে যা এই জনসংখ্যার মধ্যে জিনগত পরিব্যক্তি একটি উচ্চ বৈচিত্র্য সংগ্রহের জন্য অনুমোদিত হয়েছে । শুধুমাত্র আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর অংশ মহাদেশের বাইরে চলে এসেছিল, তাদের সাথে সাথে আসল আফ্রিকান জেনেটিক বৈচিত্র্যের একটি অংশ নিয়ে এসেছিল। আফ্রিকান জনসংখ্যার আশ্রয়গত জেনেটিক আল্লেলস বিশ্বের অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায় না। আফ্রিকার বাইরের জনসংখ্যা থেকে পাওয়া সমস্ত সাধারণ আল্লেলস আফ্রিকান মহাদেশ পাওয়া যায়।[১২৮]

মানুষের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের বণ্টন জটিল এবং ক্রমাগত সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় যা জটিল মানব বিবর্তনীয় ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে। বেশিরভাগ মানুষের জৈব বৈচিত্র্য ক্লিনিক্যালি বিতরণ করা হয় যা ধীরে ধীরে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে মিশে যায়। বিশ্বজুড়ে মানব গোষ্ঠীগুলির বহুবিধ পলিমোরফিক জিনের ফ্রিকোয়েন্সি আছে। উপরন্তু, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি অসম্পর্কিত এবং প্রতিটির পৃথক পৃথক ক্লিনিকাল বৈচিত্র্য আছে। উপযোগীকরণ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং জনসংখ্যার থেকে জনসংখ্যার ভিন্ন হয়। ভৌগোলিক জনসংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর অভিযোজনীয় প্রতিক্রিয়াগুলি পাওয়া যায় যেখানে পরিবেশগত উদ্দীপনাগুলি শক্তিশালী (যেমন তিব্বতিরা উচ্চতর উচ্চতায় অভিযোজিত)। ক্লিনিক্যালি ভৌগোলিক জিনগত বৈচিত্র্যটি প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে মানব জনসংখ্যার মধ্যে স্থানান্তর এবং মিশ্রণের দ্বারা আরও জটিল হয়ে ওঠে।[১২৮][১৬৫][১৬৬][১৬৭][১৬৮]

মানুষের পরিবর্তন খুব অসঙ্গতিপূর্ণ: অধিকাংশ জিন একসঙ্গে ক্লাস্টার করেন না এবং একসঙ্গে উত্তরাধিকারসূত্রে উত্তীর্ণ হয় না । স্কিন এবং চুলের রঙ উচ্চতা, ওজন বা অ্যাথলেটিক ক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। ভৌগোলিক উপাত্তের মাধ্যমে মানব প্রজাতি একই ধরনের বৈষম্যমূলক ভাগ করে নেয় না। স্কিনের রঙ অক্ষাংশের সাথে পরিবর্তিত হয় এবং কিছু লোক লম্বা হয় অথবা তাদের বাদামী চুল থাকে। একটি জনসংখ্যার মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক আছে, কিন্তু বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ বা একসাথে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায় না। এইভাবে, জিনগুলি যা উপকারী শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য কোন কোড দরকার বলে দেয়- যেমন ত্বকের রঙ, চুলের রঙ বা উচ্চতা- মানব বংশের একটি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং তা জিনগত অনুভূতির সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া যায় এমন ডার্ক-স্কিন জনসংখ্যা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত নয়।[১৪০][১৬৮][১৬৯][১৭০][১৭১][১৭২] এমনকি একই অঞ্চলেও, শারীরিক ফেনোটাইপ জিনগত অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত নয়: অন্ধকার-ত্বক বিশিষ্ট ইথিওপিয়ানরা হালকা ত্বক বিশিষ্ট আর্মেনীয়দের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত অন্ধকার-চামড়ার বান্টু জনবসতির তুলনায়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার (আন্দামানিজ) পিগমি জনসংখ্যার আফ্রিকান পিগমি জনগোষ্ঠীর অনুরূপ শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন ছোট আকারের, গাঢ় চামড়া, এবং কোঁকড়া চুলের অনুরূপ তবে এই জনগোষ্ঠীর সাথে জেনেটিক্যালি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত নয়।[১৭৩] জেনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলি শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলির উপর প্রভাব ফেলে (যেমন ত্বকের রঙ) - জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো মূলত অর্থহীন - তারা শত কোটি নিউক্লিওটাইডগুলি একজন ব্যক্তির ডিএনএতে অন্তর্ভুক্ত করে।[১৭৪] একই রূপের সাথে মানুষের বংশবৃদ্ধি দ্বারা একে অপরকে একত্রে আবদ্ধ করা হয় না এবং একটি নির্দিষ্ট বংশের মধ্যে কেবলমাত্র একই বৈশিষ্ট্যের জটিল বৈশিষ্ট্যগুলি অন্তর্ভুক্ত নয়।[১২৮][১৬০][১৭৫]

মনোবিজ্ঞান

মস্তিষ্ক

মানব মস্তিষ্কের চিত্র যেখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো দেখা যাচ্ছে

মানুষের মস্তিষ্ক, মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ফোকাল পয়েন্ট পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া "নিচু," অনাকাঙ্ক্ষিত বা প্রাথমিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত কার্যক্রমগুলি যেমন শ্বাস ও হজম করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এটি চিন্তা, যুক্তি এবং বিমূর্ততার মতো "উচ্চতর" বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে।[১৭৬] এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলি মন গঠন করে, এবং তাদের আচরণগত পরিণতিগুলি মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অধ্যয়ন করা হয়।

সাধারনভাবে মানুষের মস্তিষ্ক উচ্চতর ক্রিয়াকাণ্ড আরও দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে পারে বলে মানব মস্তিষ্কে অন্য কোনও পরিচিত প্রজাতির চেয়ে বেশি "বুদ্ধিমান" বলে মনে করা হয়। যদিও কিছু অ-মানব প্রজাতি কাঠামো তৈরি এবং সহজ সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়- বেশিরভাগ তারা প্রবৃত্তি ও অনুকরণের মাধ্যমে করে- মানব প্রযুক্তি অনেক বেশি জটিল এবং ক্রমাগত সময়ের সাথে সাথে আরও উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে।

ঘুম এবং স্বপ্ন

মানুষ সাধারণত আহ্নিক হয়। প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের গড় ঘুমের প্রয়োজন সাত থেকে নয় ঘণ্টা এবং একজন শিশুর জন্য নয় থেকে দশ ঘণ্টা ; বয়স্ক লোক সাধারণত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমায়। ঘুমের বঞ্চনা স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যদিও এই তুলনায় কম ঘুম হওয়া মানুষের মধ্যে সাধারণ বিষয়।[১৭৭] প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার ঘণ্টা ঘুমের সাথে শারীরবৃত্তীয় সীমাবদ্ধতা এবং মানসিক অবস্থায় পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে, যেমন- স্মৃতি শক্তি হ্রাস পাওয়া, ক্লান্তি, আগ্রাসন এবং শারীরিক অস্বস্তিতে ভুগতে পারে। মানুষ ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন স্বপ্নদর্শনে মানুষ একটি দৃশ্যের মধ্যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য চিত্র ও শব্দ ব্যবহার করে, যা একজন স্বপ্নদর্শক সাধারণত একজন পর্যবেক্ষকের তুলনায় স্পষ্ট বোঝেন। ড্রিমিং পনস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় এবং যার বেশিরভাগই ঘুমের REM(অস্থায়ী স্মৃতি) ধাপে ঘটে।

চেতনা এবং চিন্তা

মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্ব-সচেতন এক প্রজাতি যারা মিররের মধ্যে নিজেদের প্রতিকৃতি দেখতে পারে।[১৭৮] ১৮ মাসের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের সন্তানরা বুঝতে পারে যে মিররের ইমেজটি অন্য কোনও ব্যক্তির নয়।[১৭৯]

মানুষের মস্তিষ্ক ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বাহ্যিক জগতকে উপলব্ধি করে, এবং প্রতিটি মানুষ তার অভিজ্ঞতা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়, যার ফলে অস্তিত্বের বিষয়ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সময় উত্তরণ ঘটে। মানুষের আছে চেতনা, আত্ম সচেতনতা, এবং মন, যাকে চিন্তাধারার মানসিক প্রক্রিয়া বলা হয়। এইগুলিকে স্ব-সচেতনতা, বুদ্ধি, দক্ষতা, এবং নিজের এবং নিজের সাথে পরিবেশের সম্পর্কের বিষয়টি অনুধাবন করার মত গুণাবলীর অধিকারী বলে বলা হয়। মানুষের মন বাইরের জগতের সৃষ্টি বা অনুভূতির কতটুকু তৈরি করে তা বিতর্কের বিষয়, যেমনটি উপরে বর্ণিত পদগুলির সংজ্ঞা এবং বৈধতা উপরে দেয়া হয়েছে।

মন এবং মস্তিষ্কের শারীরিক দিক স্নায়ুতন্ত্রের বর্ধিতকরণ দ্বারা স্নায়ুবিদ্যায় স্টাডি করা হয় এবং আচরণগত বিষয় মনোবিজ্ঞানে স্টাডি করা হয়। এবং মাঝে মাঝে সংহতভাবে সংজ্ঞায়িত এলাকা মনোবিজ্ঞানের সেই অংশে মানসিক অসুস্থতা এবং আচরণগত রোগের ট্রিটমেন্ট করা হয়। মনোবিজ্ঞান অগত্যা মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষেত্রকে উল্লেখ করে না, তবে তা মনোবিশ্লেষণীয় বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ তত্ত্বের ভিত্তিতে বিশুদ্ধভাবে তৈরি করা যেতে পারে। ক্রমবর্ধমানভাবে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বোঝার জন্য তাকে মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব এবং অনুশীলনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞানগুলির ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ বেড়ে যাচ্ছে।.[১৮০]

চিন্তার প্রকৃতি মনোবিজ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দু। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞান অধ্যয়নের মূল বিষয় হল মানসিক প্রক্রিয়া 'অন্তর্নিহিত আচরণ পর্যবেক্ষণ করা।[১৮১] এটি মনকে বোঝার জন্য একটি কাঠামো হিসাবে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবহার করে। উপলব্ধি, শেখার, সমস্যা সমাধানের, মেমরি, মনোযোগ, ভাষা এবং আবেগ সব ভালোভাবে গবেষণা করার ক্ষেত্রের হিসাবে পরিচিত। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞান একটি চিন্তার স্কুলের সাথে যুক্ত যা জ্ঞাতব্যবাদ নামে পরিচিত, যা অনুগামী মানসিক ফাংশনের তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ মডেলের জন্য যুক্তি দেয়, তাছাড়া তা ইতিবাচক ও পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের দ্বারা জানানো হয়। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞানের কৌশল এবং মডেল ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে যা মনোবিজ্ঞান গবেষণা এবং প্রয়োগ উভয় ক্ষেত্রে মানসিক তত্ত্ব মূলধারার গঠন হিসাব কাজ করে। মানুষের মনের উন্নয়নের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে বিকাশমূলক মনোবিজ্ঞান মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে যে, মানুষ কীভাবে পৃথিবীকে উপলব্ধি করে, বোঝে এবং সেই অনুসারে কাজ করে এবং এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তাদের বয়স পরিবর্তন হয়। এটি বুদ্ধিবৃত্তিক, জ্ঞানীয়, স্নায়ু, সামাজিক বা নৈতিক বিকাশের উপর দৃষ্টিপাত করতে পারে।

প্রেরণা এবং আবেগ

চার্লস ডারউইনের ১৮৭২ সালের বই দ্য এক্সপ্রেশন অফ দ্য ইমোশনস ইন ম্যান অ্যান্ড অ্যানিমালস থেকে দুঃখের চিত্র

অনুপ্রেরণা মানুষের সব ইচ্ছাকৃত কর্মের পিছনে চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে । প্রেরণা আবেগের উপর ভিত্তি করে- বিশেষত, সন্তুষ্টির জন্য অনুসন্ধান (ইতিবাচক মানসিক অভিজ্ঞতা), এবং সংঘাত পরিহার করা। ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক মস্তিষ্কের পৃথক স্তর দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়, যা সামাজিক নিয়ম দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে একজন ব্যক্তি নিজেকে আঘাত বা সহিংসতার কারণ হতে পারে কারণ তাদের মস্তিষ্ক এই কর্মগুলির একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে শর্তযুক্ত। প্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সমস্ত জানা প্রতিক্রিয়াগুলির কার্য সম্পাদনের সাথে জড়িত। মনোবিজ্ঞানের মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিহার এবং লিবিডো চেতনা প্রধান কর্মসূচী হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থনীতিতে, অনুপ্রেরণাকে প্রায়ই উদ্দীপক হিসাবে দেখা হয়; এটি আর্থিক, নৈতিক বা বাধ্যকারী হতে পারে। ধর্ম সাধারণত ঐশ্বরিক বা শয়তানের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।

সুখ বা সুখী হওয়ার অবস্থা হল মানুষের মানসিক অবস্থা। সুখের সংজ্ঞা একটি সাধারণ দার্শনিক বিষয়। কিছু মানুষ মানবসমাজ এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে ভাল অবস্থাকে সুখ হিসাবে নির্ধারণ করতে পারে। অন্যেরা তাকে অভাব এবং দুঃখকষ্ট থেকে স্বাধীনতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে ; ভাল জিনিস সংক্রান্ত চেতনা; মহাবিশ্ব বা সমাজের মধ্যে আশ্বাসের একটি জায়গা।

মনুষ্য আচরণের উপর আবেগ উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে বলা যেতে পারে, যদিও ঐতিহাসিকভাবে বহু সংস্কৃতি এবং দার্শনিকরা এই প্রভাবকে অনির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য নিরুৎসাহিত করেছেন। অনুভূতিপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলি আনন্দ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেমন ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বা উচ্ছ্বাসের সাথে, তেমনি ঘৃণা, ঈর্ষা বা দুঃখের মত অপ্রীতিকর অনুভূতির সাথে তুলনা করা যায়। সামাজিকভাবে শেখা এবং বেঁচে থাকা ভিত্তিক আবেগের মধ্যে প্রায়ই একটি পার্থক্য আছে যা স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। অন্যান্য স্নায়বিক ঘটনা থেকে মানুষের আবেগকে ভিন্ন হিসাবে নোট যোগ্য, বিশেষ করে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যেখানে আবেগকে শারীরিক অবস্থা থেকে পৃথক বিবেচনা করা হয়। কিছু সাংস্কৃতিক চিকিৎসা তত্ত্বের মধ্যে আবেগকে শারীরিক স্বাস্থ্যের নির্দিষ্ট রূপগুলির সমতুল্য বলে বিবেচিত হয় যা কোনও পার্থক্যকে বিদ্যমান বলে মনে করা হয় না। স্টোয়িক্স বিশ্বাস করেন যে অত্যধিক আবেগ ক্ষতিকর ছিল, কিছু সুফি শিক্ষক অনুভব করেছিলেন যে চরম আবেগ ধারণাগত পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে একটি , যা প্রায়শই অতিরঞ্জিত রূপে অনুবাদ করা হয়।

আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায়, কিছু সুশৃঙ্খল আবেগগুলিকে একটি জটিল স্নায়ুতন্ত্র বলে মনে করা হয় যা গৃহপালিত এবং অ গৃহপালিত স্তন্যপায়ীর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে । এগুলি সাধারণত উচ্চতর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়া এবং একে অপরের সাথে পরিবেশগত পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে; যেমন, বিশুদ্ধ অনুভূতি সব ক্ষেত্রে অনুমিত এবং প্রাকৃতিক স্নায়ু ফাংশন থেকে আলাদা নয় যেমন আগে ধারণা করা হত । যাইহোক, যখন মানুষ সভ্য টেন্ডেমের মধ্যে কাজ করে, তখন এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে চরম আবেগ অনুভূতিহীন আচরণের ফলে সামাজিক ব্যাধি এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

যৌনতা এবং ভালোবাসা

পিতামাতারা তাদের সন্তানদের জন্য পারিবারিক ভালবাসা প্রদর্শন করতে পারেন।

মানুষের জন্য যৌনতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ফাংশন আছে: এটা জৈব প্রজনন নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যক্তিদের মধ্যে শারীরিক অন্তরঙ্গতা, বন্ড এবং শ্রেণীক্রম তৈরি করে। যৌন ইচ্ছা বা লিবিডোকে একটি শারীরিক আবেগ হিসাবে মনে করা হয়, যেমন প্রেম, বিস্ময় এবং ঈর্ষাকে শক্তিশালী আবেগের সঙ্গে অনুভব করা হয়। মানব প্রজাতির মধ্যে যৌনতার তাৎপর্য প্রতিফলিত হয় তাদের মধ্যে কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে যার মধ্যে রয়েছে লুক্কায়িত ডিম্ব, বাইরের স্ক্রোটামের বিবর্তন এবং শুক্রাণু প্রতিযোগিতা, একটি ওএস লিঙ্গের অনুপস্থিতি, স্থায়ী সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য এবং জোড়া গঠনকে একটি সাধারণ সামাজিক কাঠামো হিসাবে যৌন আকর্ষণের উপর নির্ভর করে । বিপরীতে, অন্যান্য প্রাইমেটদের ঋতুকাল প্রায়ই দৃশ্যমান লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ করে, মানব মায়েদের এমন স্বতন্ত্র বা দৃশ্যমান লক্ষণ থাকে না, পাশাপাশি তারা তাদের উর্বর সময়ের বাইরে যৌন বাসনা ভোগ করে। এই অভিযোজনগুলি ইঙ্গিত দেয় যে মানুষের মধ্যে যে যৌনতা আছে তা বনবোর অনুরূপ, এবং জটিল মানব যৌন আচরণের একটি দীর্ঘ বিবর্তনীয় ইতিহাস আছে।[১৮২]

যৌনতা নিয়ন্ত্রণে মানুষের পছন্দগুলি সাধারণত সাংস্কৃতিক আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয় যা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। নিষেধাজ্ঞা প্রায়ই ধর্মীয় বিশ্বাস বা সামাজিক রীতিনীতি দ্বারা নির্ধারিত হয়। অগ্রগামী গবেষক সিগমুন্ড ফ্রয়েড বিশ্বাস করতেন যে মানুষ পলিমোরফেন বিকৃত হয়ে জন্মগ্রহণ করে, যার মানে যে কোনও বস্তু আনন্দের উৎস হতে পারে। ফ্রয়েডের মতে মানুষ যৌন উন্নয়নের পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করে এবং প্রক্রিয়া চলাকালে বিভিন্ন মানসিক যন্ত্রণার কারণে যেকোনো পর্যায়ে তা স্থির করা যায়। অন্য প্রভাবশালী যৌন গবেষক আলফ্রেড কিন্সে এর মতে, লোকেরা যেকোনো সময় যৌন অনুভূতির সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে, যেখানে কেবলমাত্র ছোট সংখ্যালঘুরা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক বা সমকামী।[১৮৩] নিউরোলজি এবং জেনেটিক্সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে বিভিন্ন রকম যৌন প্রবৃত্তি নিয়ে মানুষ জন্ম নিতে পারে।[১৮৪]

আচরণ

সামাজিক বিবর্তন

অন্যন্য বাঁদর জাতীয় স্তন্যপায়ীর মত মানুষও সাধারণতঃ দলবদ্ধ-ভাবে থাকে। কিন্তু মানুষের স্থায়ী বসতি প্রতিষ্ঠা অপেক্ষাকৃত নতুন (১৫ হাজার বছরের কম)।প্রাইমেটকে বানরের শব্দার্থ হিসেবে বিবেচনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষও একধরনের প্রাইমেট বা বানর জাতীয় প্রাণী বৈ কিছু নয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মাঙ্কি একটি অধিবর্গ বা প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ, আধুনিক ফাইলোজেনেটিক্সে প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ শক্তভাবে এড়িয়ে চলা হয়। আমরা কোন মাঙ্কি অবশ্যই নই, তবে অবশ্যই অবশ্যই আমরা প্রাইমেট। আমাদের পাশাপাশি অবস্থিত একজোড়া চোখ, ত্রিমাত্রিক, রঙ্গীন, স্টেরিও দৃষ্টি, চোখের পেছনে বিশাল বড় একটা মাথা, আড়াই শত দিনের কাছাকাছি গর্ভকালীন সময়, বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পূর্বে একটা অস্বাভাবিক রকম বিশাল শৈশব, ল্যাটেরাল থেকে ক্রমান্বয়ে স্ক্যাপুলার ডোর্সাল অক্ষে পিছিয়ে যাওয়া, পেন্ডুলার পিনেস এবং টেস্টস, অস্বাভাবিক বিকাশপ্রাপ্ত প্রাইমারি সেন্সরি কর্টেক্স আমাদের বানায় বানরজাতীয় জীব বা প্রাইমেট, এটা আমরা পছন্দ করি আর নাই করি। মানুষ সহ সব নরবানরই স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্তর্গত প্রাইমেট বর্গে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাইমেটদের দু'শরও বেশি প্রজাতির সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। মানুষকে এই প্রাইমেট বর্গের মধ্যে হোমিনিডি অধিগোত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।

ভাষার আবির্ভাব

মানুষের বুদ্ধির উন্নতি মানুষের জটিল ভাষা ব্যবহার করার ক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। তাই এরা আজ আধুনিক সভ্যতা আবিষ্কার করতে পেরেছে।

শারীরিক গঠন ও প্রক্রিয়া বিবর্তন

চার পায়ের বদলে দুই পায়ে চলতে আরম্ভ করার সাথে সাথে মানব শরীর-গঠন ও শরীর-প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে নানা পরিবর্তন দেখা দিতে আরম্ভ করে। যেমন পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে নিচে পড়ে যাওয়ার থেকে রক্ষা করার জন্য শ্রোণীচক্রের ব্যাস ছোট হয়। বাচ্চার জন্মের পথ সরু হয়ে যাওয়াতে গর্ভে মস্তিষ্ক বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাচ্চাকে ভূমিষ্ঠ হতে হয়। তার ফল সদ্যোজাত মানবশিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে পরনির্ভরশীল। তাকে বহুদিন মা-বাবা ও অন্যান্যদের অভিভাবকত্বে বড় হতে হয়। এখানে ভাষার অবদান গুরত্বপূর্ণ। মুখ ও গলার গঠনে পরিবর্তন হওয়ার কারণে মানুষ অনেক জটিল মনোভাব আদানপ্রদানে সক্ষম হয়। মানুষের উদ্বর্তনের সবথেকে মূল্যবান উপহার মস্তিষ্কের উন্নতি। মানুষের মস্তিষ্ক প্রাণীরাজ্যে বৃহত্তম না হলেও আপেক্ষিকভাবে বৃহত্তরদের অন্যতম। মানুষ জন্মাবার বহুবছর অবধি স্নায়ুতণ্ত্রের বিকাশ অব্যহত থাকে। অন্যান্য মানুষদের সঙ্গে ভাষা ও ভঙ্গীর সাহায্যে ভাব বিনিময় করতে করতে বহু আচার-ব্যবহার অধীকৃত হয়, যা জন্মগত ভাবে (জীনের মাধ্যমে) সহজে বর্তায়না। দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থাও এতে উপকৃত হয়। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে বয়স্কা মহিলদের মাসিকবন্ধ হয় তথা রজোনিবৃত্তি ঘটে বলে তাদের ভুমিকা মায়ের বদলে দিদিমায় উপনীত হয়, ফলে তাদের দুই প্রজন্ম পরের মানবশিশুদেরও সুরক্ষা বর্ধিত হয়, শিক্ষা ত্বরান্বিত হয়। মানুষই একমাত্র প্রাণী যাদের বয়ঃসন্ধিরজোনিবৃত্তি আছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "n" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="n"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন