ব্যাংকক

থাইল্যান্ডের রাজধানী

ব্যাংকক [ক] থাইল্যান্ডের রাজধানী এবং থাইল্যান্ডের অধিক জনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে একটি। থাই ভাষায় এটি ক্রুং থেপ মহা নাখন [খ] বা শুধু ক্রুং থেপ নামে পরিচিত। [গ] শহরটি মধ্য থাইল্যান্ডের চাও ফ্রেয়া নদীর বদ্বীপে ১,৫৬৮.৭ বর্গকিলোমিটার (৬০৫.৭ মা) জায়গা জুড়ে অবস্থিত এবং আট মিলিয়নেরও বেশি লোক এখানে বাস করে যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১২.৬ শতাংশ। ২০১০ সালের এক আদমশুমারিতে দেখা যায় , ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অঞ্চল সহ এর আশেপাশে চৌদ্দ মিলিয়নেরও বেশি লোক (২২.২ শতাংশ) বাস করে। যেটি ব্যাংকককে এই দেশের প্রধান শহর হিসাবে চিহ্নিত করেছে, এবং থাইল্যান্ডের অন্যান্য নগর কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বের দিক দিয়ে পেছনে ফেলেছে।

ব্যাংকক
กรุงเทพมหานคร
ক্রুং থেপ মহা নাখন
বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা
উপর থেকে, বাম থেকে ডানে: ওয়াট বেঞ্চামাবোফিট, চাও ফ্রায়া নদী স্কাইলাইন, গ্র্যান্ড প্যালেস, জায়ান্ট সুইং, ওয়াথানা জেলার একটি রাস্তায় ট্রাফিক গণতন্ত্রের স্মৃতিস্তম্ভ, এবং ওয়াত অরুণ
উপর থেকে, বাম থেকে ডানে: ওয়াট বেঞ্চামাবোফিট, চাও ফ্রায়া নদী স্কাইলাইন, গ্র্যান্ড প্যালেস, জায়ান্ট সুইং, ওয়াথানা জেলার একটি রাস্তায় ট্রাফিক গণতন্ত্রের স্মৃতিস্তম্ভ, এবং ওয়াত অরুণ
A green rectangular flag with the seal of Bangkok in the centre
পতাকা
A round seal bearing the image of Indra riding Airavata among clouds, with the words "Krung Thep Maha Nakhon" (in Thai) across the top
সীলমোহর
Map of Thailand, with a small highlighted area near the centre of the country, near the coast of the Gulf of Thailand
থাইল্যান্ডে ব্যংককের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ১৩°৪৫′০৯″ উত্তর ১০০°২৯′৩৯″ পূর্ব / ১৩.৭৫২৫০° উত্তর ১০০.৪৯৪১৭° পূর্ব / 13.75250; 100.49417[১]
দেশথাইল্যান্ড
রিজিয়নমধ্য থাইল্যান্ড
প্রতিষ্ঠাকালপঞ্চদশ শতাব্দী
রাজধানী প্রতিষ্ঠাকাল২১ এপ্রিল ১৭৮২
রাজধানী পুনঃপ্রতিষ্ঠাকাল১৩ ডিসেম্বর ১৯৭২
প্রতিষ্ঠাতাসম্রাট প্রথম রাম
গভর্নিং পরিষদব্যাংকক মেট্রপলিটন প্রশাসন
সরকার
 • ধরনবিশেষ প্রশাসনিক এলাকা
 • গভর্নরঅশ্বিন কুয়ানমুয়াং
আয়তন[১]
 • শহর১,৫৬৮.৭৩৭ বর্গকিমি (৬০৫.৬৯৩ বর্গমাইল)
 • মহানগর[২]৭,৭৬১.৬ বর্গকিমি (২,৯৯৬.৮ বর্গমাইল)
উচ্চতা[৩]১.৫ মিটার (৪.৯ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১০ আদমশুমারি)[৪]
 • শহর৮৩,০৫,২১৮
 • জনঘনত্ব৫,৩০০/বর্গকিমি (১৪,০০০/বর্গমাইল)
 • মহানগর১,৪৬,২৬,২২৫
 • মহানগর জনঘনত্ব১,৯০০/বর্গকিমি (৪,৯০০/বর্গমাইল)
বিশেষণব্যাংককিয়ান
সময় অঞ্চলথাইল্যান্ড সময় (ইউটিসি+০৭:০০)
পোস্টাল কোড১০###
এলাকা কোড০২
আইএসও ৩১৬৬ কোডTH-১০
ওয়েবসাইটwww.bangkok.go.th

পঞ্চদশ শতাব্দীতে আয়ুথাইয়া সম্রাজ্যকালে ব্যাংকক একটা ক্ষুদ্র বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। সময়ের সাথে শহরটি বেড়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে যথাক্রমে দু'টি রাজধানী শহর ১৭৬৮ সালে থনবুড়ি এবং ১৭৮২ সালে রতনাকোসিন এর অন্তর্ভুক্ত হয়। শ্যামদেশ আধুনিকীকরণে প্রাণকেন্দ্র ছিল ব্যাংকক , পরবর্তী সময়ে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে দেশটির নাম শ্যামদেশ এর পরিবর্তে থাইল্যান্ড নামকরণ করা হয়। বিংশ শতাব্দীতে ব্যাংকক থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। দেশটি তৎকালে রাজতন্ত্রকে বাতিল করে সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা জারি করে। এসময়ে অসংখ্য অভ্যুত্থান ও বিদ্রোহের মত ঘটনা ঘটে । ১৯৬০ এর দশক থেকে ১৯৮০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে এই শহরটি দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং শহরটি বর্তমান সময়ে থাইল্যান্ডের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা , গণমাধ্যম এবং আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে এশীয় বিনিয়োগের উত্থান কালে অনেক বহুজাতিক কর্পোরেশন ব্যাংককে তাদের আঞ্চলিক সদর দফতর প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে অর্থিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ব্যংকক একটি আঞ্চলিক শক্তির নাম। পরিবহন এবং স্বাস্থ্যসেবায় শহরটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র, এবং শিল্প, ফ্যাশন এবং বিনোদনের মধ্যমণি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ব্যাংকককে অন্যমাত্রা দান করেছে এর রাস্তার জন-জীবন এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলো সেই সাথে লাল-বাতি জেলাগুলো উল্লেখযোগ্য। শহরের গ্র্যান্ড প্যালেস এবং ওয়াত আরুণ ,ওয়াত ফো সহ অন্যান্য দর্শণীয় স্থান গুলোর বিপরীতে খাওসান রোড এবং ফাত ফং-এর নৈশজীবন দৃশ্য পর্যটকদের দারুনভাবে আকর্ষণ করে । ব্যাংকক বিশ্বের শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি, এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের সর্বাধিক ভ্রমণকৃত শহর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে।

ব্যাংকক দ্রুত উন্নয়ন লাভ করলেও সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার অভাবে সৃষ্টি হয়েছে শহরের সাথে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ কিছু গগনচুম্বী অট্টালিকা এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামো। একটি বিস্তৃত এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্ক থাকা সত্ত্বেও, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত হওয়ায় সরকারি গণপরিবহনগুলোর সাথে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার দীর্ঘস্থায়ী ও প্রায় স্থবির হয়ে যাওয়া যানজটের সৃষ্টি করেছে, যা ১৯৯০ এর দশকে মারাত্মক বায়ু দূষণের কারণ হয়েছিল। সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় শহরটি তখন থেকেই গণপরিবহনের দিকে ঝুঁকছে। থাইল্যান্ড সরকার এবং ব্যাংকক মেট্রোপলিটন প্রশাসনের অধীনে এখন পাঁচটি দ্রুত ট্রানজিট লাইন চালু রয়েছে এবং আরও কিছু সিস্টেম নির্মাণাধীন বা নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

ব্যাংককের ইতিহাস

১৭ শতাব্দীতে ব্যাংককের মানচিত্র (সাইমন দে লা লাউবারের ডু রয়ওমে দে সিয়াম থেকে)

ব্যাংককের ইতিহাস শুরু হয়েছে পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে, ব্যাংকক তখন আয়ুথাইয়ার শাসনামলে চাও ফ্রেয়া নদীর পশ্চিম তীরে একটি গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল।[৮] নদীর মুখের কাছে কৌশলগত অবস্থানের কারণে, শহরটি ক্রমে গুরুত্ব ক্রমে লাভ করতে থাকে। ব্যাংকক শুরুর দিকে নদীর দু'ধারে দুর্গের সাথে শুল্ক ফাঁড়ি হিসাবে ভূমিকা পালন করে আসছিল । ১৬৮৮ সালে শ্যামদেশ থেকে ফরাসিদের বিতাড়ন করা হয়েছিল এই ব্যংকক থেকেই। ১৭৬৭ সালে বার্মিজ সাম্রাজ্যের কাছে আয়ুথাইয়া সম্রাজ্যের পতন হলে নতুন রাজা তাকসিন শহরে তার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন, যা ছিল থনবুড়ি রাজ্যের ভিত্তি। ১৭৮২খ্রিষ্টাব্দে, রাজা ফুত্তাইয়োফা চুলালোক ( প্রথম রামা ) তাকসিনের স্থলাভিষিক্ত হলে রাজধানী পূর্ব তীরের রতনকোসিন দ্বীপে সরিয়ে নিয়েছিলেন, এইভাবে রতনকোসিন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। নগর স্তম্ভটি ২১ এপ্রিল ১৭৮২-এ নির্মিত হয়েছিল, যা বর্তমানে শহর ভিত্তিপ্রস্তরের তারিখ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।[৯]

ব্যাঙ্ককের অর্থনীতি ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রসার লাভ করেছিল, ১৯ শতকের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে প্রথমে চীন এবং তারপরে পশ্চিমা বণিকরা ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। রাজধানী হিসাবে, ব্যাংকক শ্যামদেশ আধুনিকীকরণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কারণ ১৯ শতকের শেষদিকে পশ্চিমা শক্তিগুলোর চাপের মুখে পড়েছিল। রাজাদের রাজত্বকালে মংকুট ( চতুর্থ রামা ১৮৫১-৬৮) এবং চুলালংকর্ণ ( পঞ্চম রামা ১৮৬৮-১৯১০) শহরে বাষ্প ইঞ্জিন, মুদ্রণযন্ত্র, রেল পরিবহন এবং ইউটিলিটি পরিকাঠামো প্রবর্তনের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রবর্তন হয়েছিল । ১৯৩৩ সালে দেশটি নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রকে বিলুপ্ত করায় ব্যাংকক সামরিক ও রাজনৈতিক অভিজাতদের ক্ষমতার লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের সাথে জোট বাঁধার কারণে এটি মিত্রশক্তির বোমা হামলার শিকার হয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মার্কিন সহায়তা এবং সরকারের-পৃষ্ঠপোষকতায় বিনিয়োগের ফলস্বরূপ ব্যাংককের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছিল। মার্কিন সামরিক বাহিনীর অবসরকালীন চিত্তবিনোদন এর গন্তব্যস্থল হিসেবে ব্যাংককের ভূমিকা এর পর্যটন শিল্পকে বেগ দান করার পাশাপাশি একে একটি যৌন পর্যটন গন্তব্য হিসাবে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। অপরিকল্পিত নগর উন্নয়নের ফলে আয়ের বৈষম্য এবং গ্রামীণ অঞ্চল থেকে ব্যাংককে অভিবাসী স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে, ১৯৬০ এর দশকে এর জনসংখ্যা ১.৮ থেকে লাফিয়ে ৩ মিলিয়নে দাঁড়ায়।

১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সৈন্য অপসারণ করায়, জাপানি ব্যবসাগুলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শীর্যস্থান দখল করেছিল এবং রফতানিমুখী উৎপাদন ব্যবস্থার প্রসারণের মাধ্যমে ব্যাংকক তার আর্থনৈতিক বাজারের প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছিল।[১০] ১৯৯৭ এবং ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে এই শহর দ্রুত বিকাশ লাভ করেছিল এবং ১৯৯৭ সালের এশীয় আর্থিক সঙ্কটের পূর্ব পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত ছিল। তন্মধ্যে, অনেকগুলো সরকারি ও সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল, এর মধ্যে শহর অবকাঠামোর জীর্ণ দশার দরুন অখ্যাত যানজট সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭৩ ও ১৯৭৬ সালের ছাত্র-অভ্যুত্থান , ১৯৯২ -এর সামরিকশাসন বিরোধী বিক্ষোভ এবং ২০০৮ সাল থেকে বিরোধী দলগুলোর ক্রমাগত সরকারবিরোধী বিক্ষোভসহ অন্যান্য জাতীয় রাজনৈতিক ব্যপারে ব্যাংকক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

মনথন ক্রুং থেপ মহা নাখন ( มณฑลกรุงเทพพระมหานคร ) -কে জাতীয় মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে, ১৯০৬ সালে রাজা চুলালংকর্ণ শহরের প্রশাসন ব্যবস্থা সর্বপ্রথম বিধিবদ্ধ করেছিলেন। ১৯১৫ সালে মনথনকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করা হয়, যদিও এর প্রশাসনিক সীমানা আরও পরে পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭২ সালে শহরটির বর্তমান আবয়ব সৃষ্টি করা হয়েছিল ব্যাংকক মেট্রোপলিটন প্রশাসনে (বিএমএ) গঠনের মাধ্যমে। পূর্ববর্তী বছরে ফ্রা নাখন প্রদেশের চাও ফ্রায়া নদীর পূর্ব তীর এবং পশ্চিমে থনবুড়ি প্রদেশ একীভূত করা হয়।[৯]

নামকরণ

ব্যাংকক নামের উৎপত্তি হয়েছে কি ভাবে তা সুস্পষ্ট নয় । ব্যাং একটি থাই শব্দ যার অর্থ 'স্রোতের উপর একটি গ্রাম',[১১] ধারণা করা হয়, নামটি ব্যাং কো (บางเกาะ), থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কো অর্থ 'দ্বীপ', যা শহরের জলাভূমিরূপ বৈশিষ্ট্য থেকে এসেছে।[৮] অন্য মত অনুযায়ী, এটি ব্যাং মাকোক ( บางมะกอก), এর সংক্ষিপ্তরূপ , মাকোক বলতে Elaeocarpus hygrophilus জাতীয় উদ্ভিদকে বুঝায়। উদ্ভিদটি জলপাই সদৃশ ফল দেয়। [ঘ] এটি ওয়াট অরুণের পূর্ববর্তী নাম দ্বারা সমর্থিত, ওয়াট অরুণ এই অঞ্চলের একটা ঐতিহাসিক মন্দির, যা পূর্বে ওয়াট মাকোক [১২] নামে পরিচিত ছিল।

আয়ুথাইয়া লোকগাঁথা অনুসারে, সরকারীভাবে শহরটি থনবুড়ি সি মহাসামুত ( ธนบุรีศรีมหาสมุทร, পালিসংস্কৃত থেকে আক্ষরিক অর্থে 'মহাসাগর শোভিত সম্পদের শহর') অথবা থনবুড়ি নামে পরিচিতি ছিল।[১৩] ব্যাংকক নাম সম্ভবত ছিল প্রচলিত নাম, বিদেশী দর্শনার্থীদের দ্বারা নামটি ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছিল , যারা নতুন রাজধানীর প্রতিষ্ঠার পরেও এই শহরটিকে উল্লেখ করার জন্য এটি ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।

যখন রাজা প্রথম রামা নদীর পূর্ব তীরে তার নতুন রাজধানী স্থাপন করেছিলেন, শহরটি উত্তরাধিকার সূত্রে আয়ুথাইয়ার আনুষ্ঠানিক নাম অর্জন করেছিল, যার মধ্যে ক্রুং থেপ থাওড়াওয়াদি সি আয়ুথাইয়া ( กรุงเทพทวารวดีศรีอยุธยา ) এবং ক্রুং থেপ মহা নাখন সি আয়ুথাইয়া ( กรุงเทพมหานครศรีอยุธยา ) সহ আনেকগুলো নাম ছিল।[১৪] এডমন্ড রবার্টস, ১৮৩৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসাবে শহরটি পরিদর্শনকালে উল্লেখ করেছিলেন যে রাজধানী হওয়ার পর থেকে এই শহরটি সিয়া-ইয়ূ'থিয়া নামে পরিচিত ছিল এবং এই নামটিই সেই সময়ের আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ব্যবহৃত হয়েছিল।[১৫]

বর্তমানে, শহরটি থাই ভাষায় ক্রুং থেপ মহা নাখন (กรุงเทพมหานคร) বা শুধু ক্রুং থেপ (กรุงเทพฯ) নামে পরিচিত, যা রাজা মংকুটের রাজত্বকালে প্রচলিত নামটির সংক্ষিপ্তরূপে ব্যবহৃত হয়েছিল। [ঙ][৯]

ক্রুংথেপমহানাখন আমনরতনাকোসিন মাহিনথারায়ুথায়া মহাদিলোকফোপ নোফারাত্রাচাথানিবুড়িরম উদম্রাচানিওয়েত মহাসাথান আমনফিনাওাতানসাথিত সাকাথাত্তিয়ায়িতসানুতাকাম্প্রাসিত।[চ]

กรุงเทพมหานคร อมรรัตนโกสินทร์ มหินทรายุธยา มหาดิลกภพ นพรัตนราชธานีบูรีรมย์ อุดมราชนิเวศน์มหาสถาน อมรพิมานอวตารสถิต สักกะทัตติยวิษณุกรรมประสิทธิ์

পালি এবং সংস্কৃত মূল শব্দের সমন্বয়ে নামটি গঠিত। এর অর্থ নিম্নরূপঃ

দেবদূত নগরী, অমর মহান নগরী, নব রত্নের জাঁকজমকপূর্ণ নগরী, সম্রাট আসন, রাজপ্রাসাদ নগরী, দেবতা অবতারালয়, দেবতা ইন্দ্রের নির্দেশে বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেছিল।[১৬]

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ১৬৮টি অক্ষরের দীর্ঘতম স্থানের নাম হিসাবে নামটি গৃহীত হয়েছে।[১৬] থাই স্কুলের বাচ্চাদের পুরো নামটি শেখানো হয়, যদিও কতিপয় ছেলে-মেয়েই এর অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারে কারণ অনেকগুলো শব্দই প্রত্নতাত্ত্বিক এবং অল্প সংখ্যক লোকই এর ব্যখ্যা করতে পারে। থাই রক ব্যান্ড আসানী – ওয়াসানের ১৯৬৮ সালে "ক্রুং থেপ মহা নাখন" গানটিতে শহরের পুরো নাম ব্যবহার করার কারণে কিছু থাই শহরটির পুরো নাম স্মরণ করতে পারে।

শহরটি এখন সরকারীভাবে পুরো আনুষ্ঠানিক নামের একটি সংক্ষিপ্ত রূপে পরিচিত, ক্রুং থেপমহা নাখন, যা পরবর্তীতে ক্রুং থেপ থেকে আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। ব্যাংকক হল সরকারীভাবে শহরের ইংরেজি নাম।

সরকার

ব্যাংককের সিটি হলের সম্মুখে শহরের আনুষ্ঠানিক নাম (আংশিকভাবে দৃশ্যমান) লেখা আছে । বিল্ডিংয়ের উপরে বিএমএ সিলটিতে ইন্দ্র ইরাওয়ানে চড়ে আছে এমন একটি ছবি বিদ্যমান।

ব্যাংকক শহর স্থানীয়ভাবে ব্যাংকক মেট্রোপলিটন প্রশাসন (বিএমএ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যদিও এর সীমানা প্রাদেশিক ( চাংওয়াত ) পর্যায়ে রয়েছে, অন্যান্য ৭৬ টি প্রদেশের বিপরীতে ব্যাংকক একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। ব্যাংককের গভর্নর সরাসরি চার বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হন। গভর্নর, চারজন নিযুক্ত ডেপুটিসহ, কার্যকরী কমিটি গঠন করেন। তারা বিএমএর স্থায়ী সচিবের নেতৃত্বে বিএমএ সিভিল সার্ভিসের মাধ্যমে নীতিমালা প্রয়োগ করতে পারেন। পৃথক নির্বাচনে প্রতিটি জেলা এক বা একাধিক সিটি কাউন্সিলর নির্বাচন করে, নির্বাচিত সিটি কাউন্সিলরদের নিয়ে ব্যাংকক মেট্রোপলিটন কাউন্সিল গঠন করা হয়। কাউন্সিলটি বিএমএর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, এবং পৌর অধ্যাদেশ এবং শহরের বাজেট নিয়ন্রণের ক্ষমতা রাখে।[১৭] তবে, ২০১৪ সালের অভ্যুত্থানের পরে সমস্ত স্থানীয় নির্বাচন বাতিল করে কাউন্সিলকে সরকার কর্তৃক ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান ব্যাংককের গভর্নর পুলিশ জেনারেল আশ্বিন কুয়ানমুয়াং। সামরিক সরকার কর্তৃক তিনি ২ ৬ শে অক্টোবর ২০১৬ তারিখে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।[১৮] সর্বশেষ নির্বাচিত গভর্নর এম আর সুখুমখন্ড পরিব্রতকে অব্যহতি দেওয়া হলে আশ্বিন কুয়ানমুয়াং তার স্থলাভিষিক্ত হন।

ব্যাংকক পঞ্চাশটি জেলায় ( খেট, অন্যান্য প্রদেশের অ্যাম্ফোর সমতুল্য) বিভক্ত, যা আরও ১৮০ টি উপ-জেলায় ( খাঁয়েং, তাম্বন এর সমতুল্য) বিভক্ত । প্রতিটি জেলা গভর্নর কর্তৃক নিযুক্ত একজন জেলা পরিচালক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রতি চার বছরের জন্য নির্বাচিত জেলা পরিষদগুলো তাদের নিজ জেলার পরিচালকদের উপদেষ্টা পর্ষদ স্বরূপ কাজ করে।

বিএমএ ষোলটি অধিদপ্তরে বিভক্ত, প্রতিটি অধিদপ্তর প্রশাসনিক দায়িত্বের বিভিন্ন দিক তদারকি করে। এই দায়িত্বগুলোর বেশিরভাগই নগরের অবকাঠামো সংক্রান্ত - নগর পরিকল্পনা, অবকাঠামো নির্মাণ, পরিবহন, বর্জ্য নিষ্কাশন ও ব্যবস্থাপনা এর অন্তর্গত। সেই সাথে শহরের সৌন্দর্যবর্ধন এর পাশাপাশি শিক্ষা, চিকিৎসা এবং উদ্ধার সংক্রান্ত পরিষেবাও এর অন্তর্গত।[১৯] অন্যান্য সহযোগী সংস্থা এর সাথে যৌথভাবেও কিছু পরিষেবা প্রদান করা হয়। বিএমএ স্থানীয় অধ্যাদেশ কার্যকর করার ক্ষমতা রাখে, যদিও নাগরিক আইন প্রয়োগ মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যুরোর এখতিয়ারে আসে।

সীলমোহরটিতে হিন্দু দেবতা ইন্দ্র ঐরাবত(স্বর্গীয় শ্বেত হস্তী থাই ভাষায় ঐরাওয়ান নামে পরিচিত) এ চড়ে আকাশ পাড়ি দিচ্ছে. ইন্দ্রের হাতে তার অস্ত্র বজ্র' এ রকম একটি চিত্র দেখা যায়।[২০] প্রিন্স নরিস এর একটি চিত্র কর্মের উপর ভিত্তি করে সিলমোহরটি তৈরি করা হয়েছে। ফিকাস বেঞ্জামিনা ব্যাংককের বৃক্ষ প্রতীক।[২১] ২০১২ সালে স্লোগানটি সরকারীভাবে গৃহীত হয়, স্লোগানটি নিম্নরূপঃ:

দেবতা কর্তৃক নির্মীত,প্রশাসনিক কেন্দ্র, অত্যুজ্জ্বল প্রাসাদগুলো এবং মন্দির সমূহ, থাইল্যান্ডের রাজধানী
กรุงเทพฯ ดุจเทพสร้าง เมืองศูนย์กลางการปกครอง วัดวังงามเรืองรอง เมืองหลวงของประเทศไทย[২২]

থাইল্যান্ডের রাজধানী হিসাবে ব্যাংকক জাতীয় সরকারের সমস্ত শাখার আসনস্বরূপ। সরকারী ভবন, সংসদ ভবন এবং সর্বোচ্চ, প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক আদালত সবই ব্যাংকক শহরে রয়েছে। ব্যাংকক হ'ল গ্র্যান্ড প্যালেস এবং দুসিত প্রাসাদের স্থান যা যথাক্রমে সরকারি বাসভবন এবং কার্যত রাজার বাসস্থল। অধিকাংশ সরকারি মন্ত্রণালয়ে্র সদর দফতর এবং কার্যালয় রাজধানিতে অবস্থিত।

ভৌগোলিক পরিচিতি

উপগ্রহ চিত্রে চাও ফ্রেয়া ব-দ্বীপ নিকটস্থ ব্যাংকক শহর। প্রতিষ্ঠিত নগর অঞ্চল উত্তর ও দক্ষিণে নন্থাবুড়ি এবং সামুত প্রাকান প্রদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

ব্যাংকক থাইল্যান্ডের ১,৫৬৮.৭ বর্গকিলোমিটার (৬০৫.৭ মা) স্থান দখল করে রয়েছে , যা থাইল্যান্ডের অন্যান্য ৭৬ টি প্রদেশের মধ্যে ৬৯ তম । এর মধ্যে প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার (২৭০ মা) নিয়ে প্রতিষ্ঠিত নগর অঞ্চল গঠিত ।[১] স্থলভাগের দিক দিয়ে বিশ্বে এর অবস্থান ৭৩ তম।[২৩] নগরীর অপরিকল্পিত নগরায়িত এলাকা নিকটস্থ ছয়টি প্রদেশের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছেছে, উত্তর-পশ্চিম থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: নন্থাবুড়ি , পাথুম থানি, চাকোএংসাও, সামুত প্রাকান, সামুত সাখন এবং নাখন পাথম । চাকোএংসাও ব্যতীত অন্যান্য প্রদেশগুলো নিয়ে বৃহত্তর ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অঞ্চল গঠিত।[২]

ভূ-প্রকৃতি

ব্যাংকক থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সমভূমির চাও ফ্রেয়া নদীর বদ্বীপে অবস্থিত । চাও ফ্রেয়া নদী শহরটিকে দক্ষিণ পাশ দিয়ে অতিক্রম করে এবং শহর কেন্দ্রের দক্ষিণ থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার (১৬ মা) দূরে থাইল্যান্ড উপসাগরে পতিত হয়। অঞ্চলটি সমতল এবং নিচু প্রকৃতির, এবং গড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১.৫ মিটার (৪ ফু ১১ ইঞ্চি) উঁচুতে অবস্থিত।[৩] [চ] অঞ্চলটির অধিকাংশই মূলত জলাভূমি ছিল। ১৬ থেকে ১৯ শতকে কৃষিকাজের সুবিধার্তে খাল ( খলং ) খননের মাধ্যমে জলাভূমিগুলো থেকে সেচের পানি সরবরাহ করা হত ফলশ্রুতিতে জলাশয়গুলো একসময় শুকিয়ে যায়। বেশ কয়েকটি শর্টকাট খাল নির্মাণের ফলে ব্যাংককের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে।

মানচিত্রে ব্যাঙ্ককের প্রধান খালগুলো, নদীর মূল গতিপথ এবং শর্টকাট খালগুলো বিশদে দেখানো হয়েছে।

নগরীর জলপথ ব্যবস্থা ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ অবধি আধুনিক রাস্তাগুলো নির্মাণ করা শুরু হওয়া্র পূর্ব পর্যন্ত প্রধান পরিবহন মাধ্যম ছিল। ততদিন অবধি বেশিরভাগ লোকেরা পানির কাছাকাছি বা জলের উপরে বাস করত,ফলে উনিশ শতকে এই শহরটি "প্রাচ্যের ভেনিস " নামে পরিচিত ছিল।[২৪] পরবর্তীতে অনেকগুলো খাল ভরাট হয়ে গেছে বা প্রশস্ত হয়েছে, তবে অন্যান্য কিছু খাল শহরটির বুক চিরে এখনো বিদ্যমান , যা নিকাশী নালা এবং পরিবহন রুটের কাজ করছে।যদিও বিএমএ বেশ কয়েকটি খালের ব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অধিকাংশ খালই এখন মারাত্মকভাবে দূষিত, ।[২৫]

ভূতাত্ত্বিকভাবে ব্যাংকক অঞ্চল পরিচিত সামুদ্রিক কাদামাটির শীর্ষ স্তর এর জন্য, স্তরটি "ব্যাংকক কাদামাটি" নামে পরিচিত, যার গড় পুরুত্ব ১৫ মিটার (৪৯ ফু), যা আটটি পরিচিত ইউনিট নিয়ে গঠিত একটি ভু-গর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এর উপর অবস্থিত। ফলে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যাপক ব্যবহার কারণে ভূ-গর্ভস্থ জলস্তরের অবনমন প্রভাব প্রশমিত হয়েছে। ১৯৭০ এর দশকে প্রথম ভূ-গর্ভস্থ জলস্তরের অবনমন প্রভাব নজরে আসে, আর শীঘ্রই ব্যপারটি একটি জটিল সমস্যার আকার ধারণ করে, ১৯৮১ সালে এই অবনমন হার ছিল প্রতি বছরে ১২০ মিলিমিটার (৪.৭ ইঞ্চি) । উপযুক্ত পদক্ষেপ ও ভূ-গর্ভস্থ জল ব্যবস্থাপনার ফলে পরিস্থিতির তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে, যদিও এখনও কমছে ১০ থেকে ৩০ মিলিমিটার (০.৩৯ থেকে ১.১৮ ইঞ্চি) হারে প্রতি বছর, এবং শহরের কিছু অংশ এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের ১ মিটার (৩ ফু ৩ ইঞ্চি) নিচে অবস্থান করছে।[২৬] ২০৩০ সালের মধ্যে শহরটি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে[২৭][২৮][২৯]

ভূ-গর্ভস্থ জলস্তরের অবনমনের ফলে বন্যার ঝুঁকির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যাংকক সমুদ্র-পৃষ্ঠ হতে স্বল্প উচ্চতা এবং অপর্যাপ্ত নিকাশী পরিকাঠামোর কারণে ইতিমধ্যেই বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।[৩০] শহরটি এখন বন্যা বাঁধ দিয়ে এবং নিকাশী নালা তৈরি ও অতিরিক্ত পানি পাম্প করে খালগুলোতে নিকাশী জলাবদ্ধকরণের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। তবে ব্যাংকক এবং এর শহরতলির কিছু অংশে এখনও নিয়মিতভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ভারী বর্ষণ বৃষ্টিপাতের ফলে নগরীর মাত্রাতিরিক্ত জলপ্রবাহের দরুন নিষ্কাশন ব্যবস্থার ব্যর্থতা, এবং উজানের অঞ্চলগুলো থেকে জলপ্রবাহের আগমন বন্যা সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ।[৩১] ১৯৯৫ এবং ২০১১ সালে শহরের অধিকাংশ অংশ ভীষণ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল। ২০১১ সালে, ব্যাংককের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় বেশিরভাগ জেলা প্লাবিত হয়েছিল, কিছু জায়গায় দু'মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্যা স্থায়ী ছিল। উপসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলের উপকূলীয় ভাঙন অপর একটি সমস্যা, যার একটি ছোট দৈর্ঘ্য ব্যাংককের ব্যাং খুন থান জেলার অন্তর্গত। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আরও গুরুতর হুমকি দিচ্ছে এবং ওইসিডি (OECD) দ্বারা করা একটি গবেষণা অনুমান করেছে যে ২০৭০ সালের মধ্যে ব্যাংককের ৫.১৩৮ মিলিয়ন মানুষ উপকূলীয় বন্যার মুখোমুখি হতে পারে, যা বিশ্বের বন্দর শহরগুলোর মধ্যে সপ্তম সর্বোচ্চ ।[৩২]

ব্যাংককে কোন পর্বত নেই। নিকটতম পর্বতমালাটি খাও খিয়াও ম্যাসিফ, প্রায় ৪০ কিমি (২৫ মা) দক্ষিণে অবস্থিত। মহানগরী অঞ্চলের একমাত্র পাহাড় ফু খাও থং উদ্ভূত হয়েছিল, ওয়াত সাকেতে রাজা তৃতীয় রামা (১৭৮৭–১৮৫১) কর্তৃক একটি খুব বড় বৌদ্ধস্তূপ নির্মাণের মাধ্যমে। নরম মাটি বৌদ্ধস্তূপটির ওজন সহ্য করতে না পারায় নির্মাণের সময় ভেঙে পড়েছিল। পরের কয়েক দশক ধরে, পরিত্যক্ত কাদা-ইটের কাঠামো একটি প্রাকৃতিক পাহাড়ের রূপদান করে এবং আগাছা দিয়ে ভর্তি হয়ে যায় । স্থানীয়রা এটিকে ফু খাও ( ภูเขา ) বলেই চেনে, যেন এটি কোনও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।[৩৩] ১৯৪০ এর দশকে, পাহাড়টির ক্ষয়রোধ করার জন্য কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল।[৩৪]

জলবায়ু

থাইল্যান্ডের অন্যান্য অঞ্চলের মতো, ব্যাংককের জলবায়ু কপেন জলবায়ু শ্রেণীর অন্তর্গত ক্রান্তীয় সাভনা জলবায়ু এবং এতে দক্ষিণ এশীয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বিদ্যমান। তিন ঋতু নিয়ে ব্যাংককঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শরৎ, যদিও বছরজুড়ে তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকে, ডিসেম্বর মাসে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ২২.০ °সে (৭১.৬ °ফা) থাকে এবং এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৫.৪ °সে (৯৫.৭ °ফা) থাকে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন হলে বর্ষাকাল শুরু হয়। সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টিপাত হয় সবচেয়ে বেশি, যা গড়ে ৩৩৪.৩ মিলিমিটার (১৩.১৬ ইঞ্চি) । বর্ষাকাল অক্টোবর পর্যন্ত ততক্ষণ স্থায়ী হয়, যতক্ষণ না ফেব্রুয়ারির উত্তর-পূর্ব তাড়াতাড়ি আসে এবং আবহাওয়া ঠাণ্ডা বায়ুর আগমন ঘটে । গ্রীষ্মকাল মোটামুটি শুষ্ক থাকে তবে মাঝে মধ্যে গ্রীষ্মকালীন ঝড় হয়।[৩৫] ব্যাংককের ভূ-তাপমাত্রা সাধারনত দিনে ২.৫° সে (৪.৫° ফা) এবং রাতে ৮° সে. (১৪° ফা.) হয়[৩৬] ব্যাংকক মহানগরীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মার্চ ২০১৩-এ ৪০.১ °সে (১০৪.২ °ফা) ,[৩৭] এবং সর্বনিম্ন রেকর্ড করা তাপমাত্রা ছিল ৯.৯ °সে (৪৯.৮ °ফা) ১৯৫৫ সালের জানুয়ারিতে।[৩৮]

নাসার গড্ডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজের জলবায়ু প্রভাব সংক্রান্ত একটি দল বিশ্বব্যাপী প্রধান শহরগুলোর জলবায়ুর ডেটা বিশ্লেষণ করেছে। দেখা গেছে যে ১৯৬০ সালে ১৯৩ দিন ব্যাংককের তাপমাত্রা ৩২° সে বা তার বেশি ছিল।[৩৯]

ব্যাংকক মহানগরী (১৯৯১–২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাসজানুফেব্রুমার্চএপ্রিলমেজুনজুলাইআগস্টসেপ্টেঅক্টোনভেডিসেবছর
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা)৩৭.৬
(৯৯.৭)
৩৮.৮
(১০১.৮)
৪০.১
(১০৪.২)
৪০.২
(১০৪.৪)
৩৯.৭
(১০৩.৫)
৩৮.৩
(১০০.৯)
৩৭.৯
(১০০.২)
৩৮.৫
(১০১.৩)
৩৭.২
(৯৯.০)
৩৭.৯
(১০০.২)
৩৮.৮
(১০১.৮)
৩৭.১
(৯৮.৮)
৪০.২
(১০৪.৪)
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা)৩২.৫
(৯০.৫)
৩৩.৩
(৯১.৯)
৩৪.৩
(৯৩.৭)
৩৫.৪
(৯৫.৭)
৩৪.৪
(৯৩.৯)
৩৩.৬
(৯২.৫)
৩৩.২
(৯১.৮)
৩২.৯
(৯১.২)
৩২.৮
(৯১.০)
৩২.৬
(৯০.৭)
৩২.৪
(৯০.৩)
৩১.৭
(৮৯.১)
৩৩.৩
(৯১.৯)
দৈনিক গড় °সে (°ফা)২৭.০
(৮০.৬)
২৮.৩
(৮২.৯)
২৯.৫
(৮৫.১)
৩০.৫
(৮৬.৯)
২৯.৯
(৮৫.৮)
২৯.৫
(৮৫.১)
২৯.০
(৮৪.২)
২৮.৮
(৮৩.৮)
২৮.৩
(৮২.৯)
২৮.১
(৮২.৬)
২৭.৮
(৮২.০)
২৬.৫
(৭৯.৭)
২৮.৬
(৮৩.৫)
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা)২২.৬
(৭২.৭)
২৪.৪
(৭৫.৯)
২৫.৯
(৭৮.৬)
২৬.৯
(৮০.৪)
২৬.৩
(৭৯.৩)
২৬.১
(৭৯.০)
২৫.৭
(৭৮.৩)
২৫.৫
(৭৭.৯)
২৫.০
(৭৭.০)
২৪.৮
(৭৬.৬)
২৩.৯
(৭৫.০)
২২.০
(৭১.৬)
২৪.৯
(৭৬.৯)
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা)১০.০
(৫০.০)
১৪.০
(৫৭.২)
১৫.৭
(৬০.৩)
২০.০
(৬৮.০)
২১.১
(৭০.০)
২১.১
(৭০.০)
২১.৮
(৭১.২)
২১.৮
(৭১.২)
২১.১
(৭০.০)
১৮.৩
(৬৪.৯)
১৫.০
(৫৯.০)
১০.৫
(৫০.৯)
১০.০
(৫০.০)
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি)১৩.৩
(০.৫২)
২০.০
(০.৭৯)
৪২.১
(১.৬৬)
৯১.৪
(৩.৬০)
২৪৭.৭
(৯.৭৫)
১৫৭.১
(৬.১৯)
১৭৫.১
(৬.৮৯)
২১৯.৩
(৮.৬৩)
৩৩৪.৩
(১৩.১৬)
২৯২.১
(১১.৫০)
৪৯.৫
(১.৯৫)
৬.৩
(০.২৫)
১,৬৪৮.২
(৬৪.৮৯)
বৃষ্টিবহুল দিনগুলির গড়১.৮২.৪৩.৬৬.৬১৬.৪১৬.৩১৭.৪১৯.৬২১.২১৭.৭৫.৮১.১১২৯.৯
আপেক্ষিক আদ্রতার গড় (%)৬৮৭২৭২৭২৭৫৭৪৭৫৭৬৭৯৭৮৭০৬৬৭৩
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড়২৭২.৫২৪৯.৯২৬৯.০২৫৬.৭২১৬.৪১৭৮.০১৭১.৮১৬০.৩১৫৪.৯১৯৮.১২৩৪.২২৬২.০২,৬২৩.৮
উৎস ১: Thai Meteorological Department,[৪০] humidity (1981–2010): RID;[৪১] Rainfall (1981–2010): RID[৪২]
উৎস ২: Pogodaiklimat.ru(High/Low Record)[৪৩] NOAA (sun, 1961–1990)[৪৪]

জেলা

ব্যাংককের পঞ্চাশটি জেলা বিএমএ-এর অধীনস্থ প্রশাসনিক মহকুমা হিসাবে কাজ করে। পঁয়ত্রিশটি জেলা চাও ফ্রেয় নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত, এবং পনেরোটি জেলা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত, যা শহরের থোনবুরি এলাকা হিসাবে পরিচিত।

জেলা কোড অনুসারে পঞ্চাশটি জেলাঃ:[৪৫]

মানচিত্রে ব্যাংককের 50 টি জেলা।
  1. ফেরা নাখন জেলা
  2. দুসিত জেলা
  3. নং চোক জেলা
  4. ব্যাং রাক জেলা
  5. ব্যাং খেন জেলা
  6. ব্যাং কাপি জেলা
  7. পাঠুম ওয়ান জেলা
  8. পোম প্রাপ সাত্রু ফাই জেলা
  9. ফ্রা খানং জেলা
  10. মিন বুড়ি জেলা
  11. লাত ক্রাবাং জেলা
  12. ইয়ান নওয়া জেলা
  13. সামফান্থাওং জেলা
  14. ফায়া থাই জেলা
  15. থোন বুড়ি জেলা
  16. ব্যাংকক ইয়েই জেলা
  17. হুয়াই খোয়াং জেলা
  18. খ্লং সান জেলা
  19. তালিং চান জেলা
  20. ব্যাংকক নোই জেলা
  21. ব্যাং খুন থিয়ান জেলা
  22. ফসি চারোইন জেলা
  23. নং খেম জেলা
  24. র‍্যাট বুড়ানা জেলা
  25. ব্যাং ফ্লাত জেলা
  1. দিন ডিং জেলা
  2. বুয়েং কুম জেলা
  3. সাথন জেলা
  4. ব্যাং সু জেলা
  5. চাটুচাক জেলা
  6. ব্যাং খো লায়েম জেলা
  7. প্রবীত জেলা
  8. খলং তোই জেলা
  9. সুয়ান লুয়াং জেলা
  10. চম থং জেলা
  11. ডন মুয়াং জেলা
  12. রতছাতাই জেলা
  13. লাত ফ্রাও জেলা
  14. ওয়াথানা জেলা
  15. ব্যাং খেই জেলা
  16. লাক সি জেলা
  17. সাই মাই জেলা
  18. খান না ইয়াও জেলা
  19. সাফান সাং জেলা
  20. ওয়াং থংলাং জেলা
  21. খ্লং সাম ওয়া জেলা
  22. ব্যাং না জেলা
  23. থাও ওয়াথানা জেলা
  24. থুং খ্রু জেলা
  25. ব্যাং বন জেলা

নগর-দৃশ্য

চাও ফ্রেয়া নদীটি বং খো লায়েম এবং খালং সান জেলাগুলোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা যায়

ব্যাংককের জেলাগুলো এর আশেপাশের কার্যকারী বিভাগগুলো বা জমির ব্যবহার সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করে না। নগর পরিকল্পনা নীতিগুলো ১৯৬০ সালের "লিচফিল্ড প্ল্যান" কমিশন দ্বারা নির্ধারিত, যা ভূমি ব্যবহার, পরিবহন এবং সাধারণ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য কৌশল নির্ধারণ করেছিল, আঞ্চলিক বিধিমালা ১৯৯২ সাল এর পূর্ব পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকর ছিল না। ফলস্বরূপ, শহর যখন দ্রুত বর্ধিত হচ্ছিল জৈবিকভাবেও সম্প্রসারিত হচ্ছিল , অনুভূমিক এবং উল্লম্ব উভয়ভাবে। অনুভূমিকভাবে নতুন নির্মিত রাস্তাগুলো ফিতা বিকাশের ন্যায় এবং উল্লম্বভাবে বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক উচুঁ স্থাপনা এবং গগনচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণের মাধ্যমে।[৪৬] শহরটি নদীকে কেন্দ্র করে বিস্তৃতি লাভ করে একটি প্রশস্ত মহানগরীতে পরিণত হয়েছে যার চারপাশের শহরতলির আবাসিক উন্নয়ন দক্ষিণে প্রতিবেশী প্রদেশগুলোতে বিস্তৃতি লাভ করেছে। অত্যধিক জনবহুল এবং ক্রমবর্ধমান শহর নন্থাবুড়ি, পাক ক্রেত, রাংসিত এবং সামুত প্রাকান এখন কার্যকরভাবে ব্যাংককের শহরতলি। এতদসত্ত্বেও, পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তের বৃহৎ কৃষিক্ষেত্রগুলো শহরের মধ্যেই পড়েছে। শহরের ভূমির ২৩ শতাংশ আবাসিক এলাকাগুলো, ২৪ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রসমূহ, এবং 30 শতাংশ বাণিজ্য, শিল্প এবং সরকার কর্তৃক ব্যবহৃত হচ্ছে।[১] বিএমএর নগর পরিকল্পনা অধিদপ্তর (সিপিডি) আরও উন্নয়নের পরিকল্পনা এবং রূপদানের জন্য দায়বদ্ধ। সিপিডি ১৯৯৯ সালে ২০০৬ সালে এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে মাস্টার প্ল্যান হালনাগাদ করেছিল ।[৪৭]

দুসিত জেলার রয়েল প্লাজা রাজা চুলালংকর্ন এর ইউরোপ সফর দ্বারা অনু্প্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল ।

ফেরা নাখন জেলার রতনকোসিন দ্বীপ ব্যাংককের ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। গ্র্যান্ড প্যালেস এবং নগরস্তম্ভ মন্দির( শহর প্রতিষ্ঠকালীন নিদর্শন) এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৌদ্ধ মন্দির দ্বীপটিতে অবস্থিত। উনিশ শতাব্দীর শেষদিকে ফেরা নাখন, পার্শ্ববর্তী পোম প্রাপ সাত্রু ফাই এবং সামফান্থাওং জেলাগুলোর সাথে, প্রধান শহরটি গড়ে উঠেছিল। সাম্পেংয়ের চীনা বসতি সহ অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী পাড়া এবং বাজার এখানে রয়েছে। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে বাদশাহ চুলালংকর্ন রাজপরিবারকে নতুন দুসিত প্রাসাদে স্থানান্তরিত করলে, শহরটি দুসিত জেলা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। প্রাসাদটির স্থাপনাগুলো যেমন, নব্যধ্রুপদী সামাখোন সিংহাসন হল-সহ রয়্যাল প্লাজা এবং রাচোদম্নোন অ্যাভিনিউ -নির্মাণে তৎকালীন ইউরোপীয় স্থাপত্যের বড়ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এ অ্যাভিনিউতে গণতন্ত্রের স্মৃতিসৌধেসহ বড় বড় সরকারি অফিসগুলো রয়েছে । অঞ্চলটি যেমন দেশের ক্ষমতার আসন তেমনি শহরের সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর একটি।

বাইয়ক টাওয়ার II (ব্যাংককের তৃতীয় উচ্চতম ভবন) থেকে সুখুমভিত এলাকাকে মনে হয় বহুতল ভবনের সমুদ্র।

অনুচ্চ দালান নিয়ে গঠিত অঞ্চলগুলোর বিপরীতে, বাণিজ্যিক জেলা, ব্যাং রাক এবং সাথন এর সি লম এবং সাথন রোড গগনচুম্বী অট্টালিকায় পরিপূর্ণ। এ অংশটিতে দেশের কিছু প্রধান কর্পোরেট সদর দফতর অবস্থিত, শহরের কিছু লাল-বাতি এলাকাও এখানে অবস্থিত। পাথুম ওয়ানের শ্যাম ও রাঁচাপ্রসং অঞ্চলগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কয়েকটি শপিংমল রয়েছে। সুখুমভিত রোডের পাশ ঘেঁষে এবং ওয়াত্থানা ও খলং তোয়ই জেলাগুলোর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রচুর খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র এবং হোটেল রয়েছে । সুখুমভিত রোডের শাখা-প্রশাখাগুলোতে আরো কিছু অফিস টাওয়ার রয়েছে, বিশেষত অসোক মন্ত্রী রোডের সোয়াইগুলোতে ('alley' বা 'lane') বিলাসবহুল আবাসিক এলাকার সন্ধান মেলে।

ব্যাংককের একক স্বতন্ত্র কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক জেলা নেই । পরিবর্তে, শ্যাম এবং রাঁচাপ্রসং-র অঞ্চলগুলো "কেন্দ্রীয় কেনাকাটার জেলা" হিসাবে কাজ করে, শহরটিতে অনেকগুলো বড় শপিং মল এবং বাণিজ্যিক অঞ্চল সেইসাথে শ্যাম স্টেশন রয়েছে, যা শহরের দুটি এলিভেটেড ট্রেন লাইনের মধ্যে একমাত্র স্থানান্তর স্থান।[৪৮] রচাথিউই জেলার ভিক্টরি মনুমেন্ট শহরটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়গুলোর মধ্যে একটি, এটি ১০০ টিরও বেশি বাস লাইনের পাশাপাশি একটি এলিভেটেদ ট্রেন স্টেশন এর সংযোগস্থল। স্মৃতিস্তম্ভ থেকে, ফাহনিয়োথিন এবং রচাউইদি   / দীন ডিং রোডগুলো যথাক্রমে উত্তর ও পূর্বের প্রধান আবাসিক এলাকাগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করে। উচ্চ- জনঘনত্ব বিকাশের অধিকাংশ অঞ্চল রতচদফিসেক ইনার রিং রোডের চারিদিকে ১১৩-বর্গকিলোমিটার (৪৪ মা) মধ্যে ১১৩-বর্গকিলোমিটার (৪৪ মা) অবস্থিত। রতচদফিসেক ব্যবসা এবং খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত, এবং অফিস দালানগুলোর উত্তর দিকে চতুচাক জেলায় রতচৌথিন সংযোগস্থলের আশেপাশে গুচ্ছাকারে অবস্থান করছে। শহরের কেন্দ্র থেকে দূরে, বেশিরভাগ অঞ্চলই মাঝারি বা নিম্ন-ঘনবসতি আবাসিক এলাকা। শহরের থোনবুড়ি দিকটি কম উন্নত, কম উচ্চতর বৃদ্ধি রয়েছে। কয়েকটি গৌণ নগর কেন্দ্র ব্যতীত, থোনবুড়ি পূর্বের জেলাগুলোর মতোই বেশিরভাগ আবাসিক এবং গ্রামীণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত।

ব্যাংককের অধিকাংশ রাস্তা দেশীয় দোকান-পাট দিয়ে সাজানো। ১৯৮০ এর দশকে অনিয়ন্ত্রিত অট্টালিকা তৈরির খামখেয়ালিপনার কারণে ব্যাংকক শহরটি গগনচুম্বী অট্টালিকা আর সু-উচ্চ দালানকোঠার নগরীতে পরিণত হয়েছে ।[৪৯] ২০১৬ সালে, ৯০ মিটারেরও ( ৩০০ ফুট) অধিক উচ্চতার ৫৮১ টিরও বেশি ভবন নিয়ে ব্যাংকক শহর বিশ্বের উচ্চতম শহরগুলোর মাঝে অষ্টম স্থান দখল করে ছিল।[৫০] অর্থনৈতিক অসমাতার ধারাবাহিকতায় , শহরে অনেকগুলো বস্তি গড়ে উঠেছে। ২০০০ সালে প্রায় ৮০০ বস্তিতে এক মিলিয়নেরও বেশি লোক বাস করত।[৫১] খলং তোয়াই জেলার ব্যাংকক বন্দরের কাছে অত্যধিক বস্তি-বসতির ঘনত্ব দেখা যায়।

রাতের রচদাম এবং সুখুমভিত এর গগনচুম্বী অট্টালিকাগ। লুম্ফিনি পার্ক কেন্দ্র করে সি লোম – সাথন বাণিজ্যিক জেলা

প্রমোদ-উদ্যান ও সবুজায়ন

লাম্ফিনি পার্ক, রচ্চাদম্রি এবং সুখুম্ভিতের গগনচুম্বী অট্টালিকাগুলোর মাঝে এক টুকরো শ্যামলিমা।

ব্যাংককের বেশ কিছু প্রমোদ-উদ্যান রয়েছে, যদিও প্রধান শহরে মাথাপিছু মোট প্রমোদ-উদ্যানের পরিমাণ মাত্র ১.৮২ বর্গমিটার (১৯.৬ ফু)। পুরো শহরের সমগ্র শ্যামল অংশ মাঝারি পরিমাণের, জন প্রতি ১১.৮ বর্গমিটার (১২৭ ফু)। নগরটির অভ্যন্তরীণ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এর পরিমাণ আরো কম, জন প্রতি ১.৭৩ এবং ০.৭২ বর্গমিটার (১৮.৬ এবং ৭.৮ ফু)।[৫২] সাম্প্রতিক সময়ে দাবি করা হয় এ সংখ্যার মান জন প্রতি ৩.৩ বর্গমিটার , যেখানে এশিয়া জুড়ে অন্যান্য শহরগুলোতে এর মান গড়ে ৩৯ বর্গমিটার [৫৩] । ইউরোপে লন্ডনে মাথাপিছু শ্যমলিমার পরিমাণ ৩৩.৪ বর্গমিটার।[৫৪] ব্যাংককে আদর্শ নগরীর শ্যামলিমার যে পরিমাণ থাকা উচিত তার থেকে ১০ গুন কম আছে।[৫৫] সবুজ বেষ্টনী অঞ্চলের প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার (২৭০ মা) শহরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের ধানখেত এবং বাগানগুলো, যদিও তাদের মূল ভূমিকা নগর সম্প্রসারণরোধের চেয়ে বরং বন্যা প্রতিরোধ অববাহিকা হিসাবেই বেশি।[৫৬] ব্যাং কাছাও, সামুত প্রাকান প্রদেশের ঠিক দক্ষিণ নদীর তীরবর্তী জেলা জুড়ে ২০-বর্গকিলোমিটার (৭.৭ মা) নিয়ে অবস্থিত চাও ফ্রেয়া নদীর একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল। সমগ্র প্রমোদ-উদ্যানের পরিমাণ জন প্রতি ৪ বর্গমিটার (৪৩ ফু) করার জন্য একটি মহা পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়েছে ।[৫২]

ব্যাংককের বৃহৎ প্রমোদ-উদ্যানগুলোর মধ্যে সি লোম-সাথন বাণিজ্যিক জেলার নিকটবর্তী কেন্দ্রীয় লুম্ফিনি পার্ক ৫৭.৬ হেক্টর (১৪২ একর) এলাকা নিয়ে অবস্থিত , ৮০-হেক্টর (২০০ একর) এলাকা নিয়ে সুয়ানলুয়াং নবম রামা শহরের পূর্ব দিকে, এবং চাতুচাক - কুইন সিরিকিত- ওয়াচিরাবেনচাহাত পার্ক কমপ্লেক্স উত্তর ব্যাংককে অবস্থিত, যাদের সম্মিলিত আয়তন ৯২ হেক্টর (২৩০ একর) ।[৫৭]

জনসংখ্যা

বিভিন্ন সময়ের আদমশুমারিতে জনসংখ্যা[৫৮]
বছরজনসংখ্যা
১৯১৯৪৩৭,২৯৪
১৯২৯৭১৩,৩৮৪
১৯৩৭৮৯০,৪৫৩
১৯৪৭১,১৭৮,৮৮১
১৯৬০২,১৩৬,৪৩৫
১৯৭০৪,০৭৭,৩৬১
১৯৮০৪,৬৯৭,০৭১
১৯৯০৫,৮৮২,৪১১
২০০০৬,৩৫৫,১৪৪
২০১০৮,৩০৫,২১৮

২০১০ সালের আদম শুমারি অনুসারে ব্যাংককের জনসংখ্যা ছিল ৮,৩০৫,২১৮ জন যা ছিল মোট জাতীয় জনসংখ্যার ১২.৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে, জনসংখ্যা প্রায় ১ মিলিয়ন হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল। এর মধ্যে অর্ধেক জনসংখ্যা ছিল অন্যান্য থাই প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসী।[৩৭] ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২,৬৭২,৪২৩ আবাসস্থলের ৫,৬৯২,২৮৪ জন বাসিন্দা ব্যাংকককে তাদের বৈধ নিবাস হিসাবে নিবন্ধিত করেছিল।[৫৯] ব্যাংককের দিবাকালীন জনসংখ্যার বেশিরভাগই আসে ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অঞ্চলের আশেপাশের প্রদেশগুলো থেকে, এ জনসংখ্যার পরিমাণ ছিল ১৪,৬২৬,২২৫। ব্যাংকক বিশ্বজনীন শহর; আদমশুমারিতে দেখা গেছে যে, এশিয়ার দেশগুলো থেকে ৫,৬৭,১২০ জন ( ৭১,০২৪ জন চীনা ও ৬৩,০৬৯ জন জাপানি নাগরিক সহ) ৫৬৭,১২০ জন ইউরোপ থেকে, ৩২,২৪১ জন আমেরিকা থেকে, ৫,৮৫৬ জন ওশেনিয়া থেকে এবং আফ্রিকা থেকে ৫,৭৫৮ জন প্রবাসী ব্যাংককে রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে ২১৬,৫২৮ জন বার্মিজ, ৭২,৯৩৪ জন কম্বোডিয়ান এবং ৫২,৪৯৮ জন লাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।[৬০] ২০১৮ সালে নিয়োগ বিভাগে নিবন্ধিত ৩৭০,০০০ জন আন্তর্জাতিক অভিবাসী ছিল, তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল কম্বোডিয়া, লাওস এবং মায়ানমার থেকে আগত অভিবাসী।[৩৭]

১৭৮২ সালে রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটি থাইল্যান্ডের বৃহত্তম জনসংখ্যা কেন্দ্র হলেও ১৮ এবং ১৯ শতকের গোড়ার দিকে ব্যাংকক কেবল সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৮২২ সালে ব্রিটিশ কূটনীতিজ্ঞ জন ক্রাফর্ড পরিদর্শনকালে ব্যাংককের জনসংখ্যা অনধিক ৫০,০০০ বলে ধারণা করেছিলেন।[৬১] মিশনারিদের পশ্চিমা ওষুধ এবং শ্যাম দেশের প্রদেশগুলো থেকে এবং বিদেশ থেকে আগত অভিবাসীদের দরুন , ১৯ শতকের শেষদিকে ব্যাংককের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছিল। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পরে ১৯৩০ এর দশকে এই বৃদ্ধি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদিও পরিবার পরিকল্পনা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ ১৯৬০ এর দশকে প্রবর্তিত হয়েছিল, শহরটি অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত প্রসার লাভ করায় অন্যান্য প্রদেশগুলো থেকে জনসমাগম বেড়ে গিয়েছিল ফলে নিম্ন-জন্ম হার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। শুধুমাত্র ১৯৯০ এর দশকে, জাতীয় হারকে অনুসরণ করে ব্যাংককের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে। থাইল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত রাজধানী কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। ১৯৮০ সালে, ব্যাঙ্ককের জনসংখ্যা হাত ইয়াই এবং সোংখলা, দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর কেন্দ্র-এর জনসংখ্যার তুলনায় একান্ন গুন ছিল এবং যা বিশ্বের বিশিষ্ট প্রাইমেট শহর হিসাবে ব্যাংকককে অন্যতম করে তুলেছিল ।[৬২][৬৩]

ব্যাংককের চিনাটাউনের কেন্দ্রস্থল ইয়াওরাত রোড । চীনা অভিবাসী এবং তাদের বংশধররা এই শহরের বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী ।

ব্যাংককের জনসংখ্যার বেশিরভাগই থাই জাতিগোষ্ঠীর, [ছ] যদিও জাতীয় আদমশুমারিতে নগরীর জাতিসত্তা সম্পর্কিত বিবরণ নথিভুক্ত না হওয়ায় নগরীর জাতিগত তথ্য ধারণা করা কষ্টকর। [জ] ব্যাংককের বহুমাত্রিক সংস্কৃতি ব্যাংকক প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের সাথে সম্পর্কিত যখন অভিবাসীদের দ্বারা বেশ কয়েকটি নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায় গঠিত হয়েছিল এবং খমার, উত্তর থাই, লাও, ভিয়েতনামী, তাভোয়ান, মোন এবং মালয় অভিবাসীরা জোরপূর্বক নগরীতে বসতি স্থাপন করেছিল।[৯] সেই সময়ে চীনা অধিবাসীরাই ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী, তারা ব্যাংককের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রধান ভূমিকায় ছিল, এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল - অনুমান করা হয় ১৮২৮ সালে মোট জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ এবং ১৯৫০-এর দশকে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ছিল চীনা অধিবাসীরা।[৬৭] [ঝ] চীনা অভিবাসীদের প্রতি ১৯৩০ এর দশক থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা ছিল তবে ১৯৪৯ সালের চীনা বিপ্লবের পরে তা কার্যকরভাবে বন্ধ হয়ে যায়। থাই চীনা তরুণ প্রজন্ম একীভূত হয়ে থাই পরিচয় গ্রহণ করায় তাদের প্রধানত্ব কমে যায়। এতদসত্ত্বেও ব্যাংকক সংখ্যাগরিষ্ঠ চীনা অধিবাসীর আবাসস্থল, চিনাটাউনের ইয়াওরাতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চীনা জনগোষ্ঠী বাস করতে দেখা যায়।

শহরের জনসংখ্যার অধিকাংশই (৯১.০ শতাংশ) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। অন্যান্য ধর্মের মধ্যে রয়েছে ইসলাম ধর্ম (৪.৭ শতাংশ), খ্রিস্টান ধর্ম (২.০ শতাংশ), হিন্দু ধর্ম (০.৫ শতাংশ), শিখ ধর্ম (০.১ শতাংশ) এবং কনফুসিয়ানিজম (০.১ শতাংশ)।[৬৯]

ইয়াওরাত ছাড়াও, ব্যাংককের আরও কয়েকটি স্বতন্ত্র জাতিগত পাড়া রয়েছে । ভারতীয় সম্প্রদায় ফাহুরাতে অবস্থিত, যেখানে ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত গুরুদ্বারা শ্রী গুরু সিং সভাটি অবস্থিত। চাম বংশধরেরা সাইন সাইপ খালের তীরবর্তী বান খরুয়া পাড়াতে বাস করে, যেখানে তাদের উত্তরপুরুষেরা ১৮ শতকের শেষভাবে বসতি স্থাপন করে্ছিল। যদিও থনবুরি আমলে বসবাসকারী পর্তুগিজরা একটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায় হিসাবে তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিল, নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত সান্তা ক্রুজ চার্চ তাদের পূর্ব ইতিহাস প্রতিফলিত করে। তেমনিভাবে, ১৯ শতকের শেষভাগ থেকে ২০ শতকের গোড়ার দিকে চারোয়েন ক্রুং রোডের ওল্ড ফারাং কোয়ার্টারস্থিত ইউরোপীয় দালানের আদলে তৈরি অ্যাসেম্পশন ক্যাথেড্রালে অনেক ইউরোপীয় কূটনীতিক ও সাওদাগর বাস করত। বিল্ডিংগুলোর মধ্যে চারোণ ক্রুং রোডের হ'ল ইউরোপীয় কূটনীতিক এবং বণিকরা। নিকটস্থিত, হারুন মসজিদ ছিল একটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কেন্দ্রবিন্দু। সুখুমভিত রোড সংলগ্ন, সয় ফ্রম ফোং এবং সয় থং লো এর নিকটবর্তী জাপানী পাড়া এবং আরব ও উত্তর আফ্রিকার পাড়া সয় নানার পাশাপাশি আরও নতুন প্রবাসী সম্প্রদায় এর দেখা মেলে। সয় সুখুমভিত ১২-তে অবস্থিত সুখুমভিত প্লাজা কোরিয়া টাউন হিসাবে পরিচিত।

অর্থনীতি

ব্যাংককের অন্যতম প্রধান আর্থনৈতিক জেলা মহানাখন।

ব্যাংকক থাইল্যান্ডের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র এবং দেশটির বিনিয়োগ এবং উন্নয়নের কেন্দ্রস্থল। ২০১০ সালে, শহরটির অর্থনৈতিক আউটপুট ছিল ৩.১৪২   ট্রিলিয়ন বাট ( ৯৮.৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ২৯.১ শতাংশ অবদান রাখছে। মাথাপিছু জিডিপি মান ৪৫৬,৯১১ বাত ( ১৪,৩০১ মার্কিন ডলার), যা জাতীয় গড়ের প্রায় তিনগুন ১৬০.৫৫৬ বাত ( ৫,০২৫ মার্কিন ডলার)। ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অঞ্চলের সম্মিলিত আউটপুট ছিল  ৪,৭৭৩ ট্রিলিয়ন বাত ( ১৪৯.৩৯ মার্কিন ডলার)   বিলিয়ন) বা মোট জিডিপির ৪৪.২ শতাংশ।[৭০] সিঙ্গাপুর, হংকং, টোকিও, ওসাকা-কোবে এবং সিওলের পরে ব্যাংকককের অর্থনীতি মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকে এশীয় শহরগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।[৭১]

শহরের অর্থনীতির বৃহত্তম খাত পাইকারী এবং খুচরা বাণিজ্য ব্যাংককের সামগ্র প্রাদেশিক পণ্যের ২৪ শতাংশ অবদান রাখে। এর পরেই আছে পণ্য উৎপাদন (১৪.৩ শতাংশ); আবাসন, ভাড়া এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম (১২.৪ শতাংশ); পরিবহন ও যোগাযোগ (১১.৬ শতাংশ); এবং আর্থিক মধ্যস্থতা (১১.১ শতাংশ)। থাইল্যান্ডের সেবা খাতে ব্যাংকক একাই ৪৮.৪ শতাংশ অবদান রাখে, যা জিডিপি-এর ৪৯ শতাংশ। যখন ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করা হয, তখন সমগ্র প্রাদেশিক পণ্যের ২৮.২ শতাংশ উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যা ব্যাংককের প্রতিবেশী প্রদেশগুলোতে শিল্প কল-কারখানার ঘনত্বকে প্রতিফলিত করে।[৭২] বৃহত্তর ব্যাংককের আশেপাশের মোটরগাড়ি শিল্প দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম উৎপাদন কেন্দ্র।[৭৩] ব্যাংকক অর্থনীতিতে পর্যটনও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে, যা ২০১০ সালে, ৪২৭.৫ বিলিয়ন বাত (১৩.১৪ বিলিয়ন ডলার) রাজস্ব আয় করেছিল।[৭৪]

শ্যাম অঞ্চলটিতে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত এবং পর্যটকদের জন্য একাধিক শপিং কেন্দ্র রয়েছে।

থাইল্যান্ড স্টক এক্সচেঞ্জ (এসইটি) অভ্যন্তরীণ ব্যাঙ্ককের রচদফিসেক রোডে অবস্থিত। বিকল্প বিনিয়োগ বাজার (এম ই আই) ও এসইটি-এর একত্রে ৪৮ টি তালিকাভুক্ত সংস্থা রয়েছে, যার সমন্বিত বাজার মূলধন ৮.৪৮৫ট্রিলিয়ন বা্ত (২৬৭.৬৪ বিলিয়ন ডলার)।[৭৫] প্রচুর বৈদেশিক প্রতিনিধিত্বের কারণে, থাইল্যান্ড বেশ কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অর্থনীতির মূল ভিত্তি এবং এশীয় ব্যবসায়ের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। গ্লোবালাইজেশন অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড সিটিজ রিসার্চ নেটওয়ার্ক ব্যাংককে একটি "আলফা" বিশ্ব শহর হিসাবে স্থান দিয়েছে এবং এটি জেড / ইয়েনের গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল সেন্টার ইনডেক্স ১১-এ ৫৯ তম স্থান অর্জন করেছে।[৭৬][৭৭]

থাইল্যান্ডের সমস্ত বড় বড় বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি দেশের বৃহত্তম সংস্থাগুলোর সদর দফতর ব্যাংককে অবস্থিত। অন্যান্য বড় বড় এশীয় বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোর তুলনায় শ্রম ও কার্যক্রম চালনা ব্যয় কম হওয়ায় প্রচুর সংখ্যক বহুজাতিক সংস্থা ব্যাংককে তাদের আঞ্চলিক সদর দফতর স্থাপন করেছে। থাইল্যান্ডের একমাত্র ফরচুন গ্লোবাল 500 কোম্পানি পিটিটি ( PTT) সহ সতেরটি থাই কোম্পানি ফোর্বস 2000 এ তালিকাভুক্ত রয়েছে, যার সবগুলো কোম্পানির কার্যক্রমই রাজধানী থেকে পরিচালিত হয়।[৭৮][৭৯]

ব্যাংকক-এ আয়ের বৈষম্য একটি প্রধান সমস্যা, বিশেষত গ্রামীণ প্রদেশ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনামূলকভাবে দক্ষ নয় এমন নিম্ন-আয়ের অভিবাসী এবং মধ্যবিত্ত পেশাদার এবং ব্যবসায়িক অভিজাতদের মধ্যে সমস্যাটি প্রকট। যদিও নিরঙ্কুশ দারিদ্র্যের হার কম --- ২০১০ সালে ব্যাংককের নিবন্ধিত বাসিন্দাদের মধ্যে কেবল ০.৬৮ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছিল, যেখানে জাতীয় গড় ৭.৭৫ শতাংশের-- তুলনায় অর্থনৈতিক বৈষম্য যথেষ্ট প্রকট ।[৮০] শহরটির জিনি সহগ ০.৪৮ , যা উচ্চ স্তরের বৈষম্য নির্দেশ করে।[৮১]

পর্যটনশিল্প

গ্র্যান্ড প্যালেসে ওয়াট ফ্রা কাও ব্যাংককের প্রধান পর্যটনস্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

ব্যাংকক বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্র। বিশ্বব্যাপী ১৬২ টি শহরের মধ্যে, মাস্টারকার্ড "গ্লোবাল ডেস্টিনেশান সিটি ইন্ডেক্স- ২০১৮"-তে ব্যাংকককে শীর্ষ দর্শনীয় শহর হিসাবে স্থান দিয়েছিল, যেখানে লন্ডনের চেয়ে ২০ মিলিয়নেরও বেশি দর্শনার্থী নিয়ে ব্যংকক এগিয়ে ছিল।[৮২] ব্যাংককের জন্য এটি ছিল ২০১৭ সালের র‌্যাঙ্কিংয়ের পুনরাবৃত্তি।[৮৩][৮৪] ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনাল ২০১৬ সালের শীর্ষস্থানীয় গন্তব্যস্থল র‌্যাঙ্কে ব্যাংকককে চতুর্থ স্থানে রেখেছিল।[৮৫] ট্র্যাভেল + লিজার ম্যাগাজিন টানা চার বছরের (২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ) পাঠক জরিপে ব্যাংকককে "বিশ্বের সেরা শহর" হিসাবে আখ্যা দিয়েছিল। ।[৮৬] যেহেতু ব্যাংকক দিয়েই থাইল্যান্ডে প্রবেশ করতে হয় সেহেতু সিংহভাগ আন্তর্জাতিক পর্যটকই মূলত ব্যাংকক ভ্রমণ করে। দেশীয় পর্যটনও উল্লেখ করার মত। পর্যটন অধিদপ্তর ২০১০ সালে ব্যাংককে ২৬,৮৬১,০৯৫ জন থাই এবং ১১,৩৬১,৮০৮ জন বিদেশী পর্যটক রেকর্ড করেছিল । অস্থায়ীভাবে আবাস নেওয়া ১৫,০৩১,২৪৪ জন পর্যটক শহরের ৮৬,৬৮৭ টি হোটেল কক্ষের আনুমানিক ৪৯.৯ শতাংশ দখল করেছিল।[৭৪] ২০১৭ সালের বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যস্থল হিসাবে তালিকার শীর্ষে ছিল ব্যাংকক।[৮৭][৮৮][৮৯][৯০]

ব্যাংককের বহুমুখী দর্শনীয় স্থান, আকর্ষণ এবং নগর জীবন দৃশ্য় বিভিন্ন পরিসীমার পর্যটকের কাছে যথেষ্ট আবেদন রাখে। রাজকীয় প্রাসাদ এবং মন্দিরগুলোর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জাদুঘর এর প্রধান ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক পর্যটক আকর্যণ কেন্দ্র। কেনাকাটা এবং খাবার-দাবারের অভিজ্ঞতাগুলো বিভিন্ন ধরনের পছন্দ এবং মান নির্ধারণ করে। শহরটি গতিময় নৈশ জীবনের জন্যেও বিখ্যাত। যদিও ব্যাংককের যৌন পর্যটন বিদেশিদের কাছে সুপরিচিত, সাধারণত এটি স্থানীয়ভাবে বা সরকার কর্তৃক প্রকাশ্যে অনুমোদিত নয়।

ব্যাংককের সুপরিচিত দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্র্যান্ড প্যালেস এবং ওয়াত ফ্রা কেউ, ওয়াত ফো এবং ওয়াত অরুণসহপ্রধান বৌদ্ধ মন্দিরগুলো। জায়ান্ট সুইং এবং এরাবন তীর্থস্থান থাই সংস্কৃতিতে হিন্দু ধর্মের গভীর প্রভাব প্রদর্শন করে। দুসিত প্রাসাদে বিমানমেক ম্যানশন বিশ্বের বৃহত্তম সেগুন দালান হিসাবে বিখ্যাত, এবং জিম থম্পসন হাউস ঐতিহ্যবাহী থাই স্থাপত্যশিল্পের উদাহরণ দেয়। অন্যান্য বড় সংগ্রহশালাগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকক জাতীয় জাদুঘর এবং রয়েল বার্জ জাতীয় জাদুঘর । চাও ফ্রেয়া নদী এবং থনবুড়ি খাল জলস্রোতে ক্রুজ এবং নৌকা ভ্রমণ নগরীর কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য এবং জীবনযাত্রার নান্দনিক দৃশ্যপট পেশ করে।[৯১]

শপিং সেন্টার এবং ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে শুরু করে শ্যাম ও রচপ্রসং-এ বিস্তৃত চাতুচাক উইকেন্ড মার্কেট পর্যন্ত কেনাকাটার জায়গাগুলো পর্যটক এবং স্থানীয় উভয়ের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়। ব্যাংককের এমন কয়েকটি বাজারের মধ্যে তালিং চ্যান ভাসমান বাজার অন্যতম। ইয়াওয়ারাত দোকানগুলোর পাশাপাশি রাস্তার পাশের খাবারের স্টল এবং রেস্তোঁরাগুলোর জন্য পরিচিত, যা শহর জুড়েও পাওয়া যায়। খাও সান রোড দীর্ঘদিন ধরে ভ্রমণপিপাসুদের গন্তব্যস্থল হিসাবে বিখ্যাত, এর সাশ্রয়ী থাকার ব্যবস্থা, দোকান এবং বারগুলো সারা বিশ্বের সকল ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করে।

বিদেশে যৌন পর্যটনের একটি প্রধান গন্তব্যস্থল হিসাবে ব্যাংককের সুনাম রয়েছে। যদিও পতিতাবৃত্তি অবৈধ এবং থাইল্যান্ডে খুব কমই খোলামেলাভাবে আলোচনা করা হয়, তবে সাধারণত ম্যাসেজ পার্লার, সনা এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা হোটেলগুলোর মধ্যে ব্যপারটা হরহামেশাই চলে, বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি এরা স্থানীয়দেরও সেবা দেয়। ব্যাংকক তার যৌন পর্যটনের জন্য "এশিয়ার সিন সিটি" (Sin City of Asia) ডাকনামটি অর্জন করেছে।[৯২]

বিদেশী পর্যটকগণ প্রায়শই যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয় তাদের মধ্যে জোচ্চুরি, অতিরিক্ত মূল্যারোপ এবং দ্বৈত মূল্য সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। থাইল্যান্ড পরিদর্শন করা ৬১৬ জন পর্যটকদের সমীক্ষায় ৭.৭৯ শতাংশ লোক কোনও কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হয়েছেন, যার মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত রত্ন কেলেঙ্কারী, যেখানে পর্যটকরা অতিরিক্ত দামের গহনা ক্রয়ের মাধ্যমে প্রতারিত হন।[৯৩]

সংস্কৃতি

ব্যাংকক আর্ট বিয়েনল ২০১৮ । সিয়াম ডিসকভারীতে অস্থায়ী ছবি প্রদর্শনী।

ব্যাংককের সংস্কৃতি থাইল্যান্ডের সম্পদ এবং আধুনিকীকরণ কেন্দ্র হিসাবে এর অবস্থ প্রতিফলিত করে। শহরটি দীর্ঘকাল ধরে পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা এবং বস্তুসামগ্রী প্রবেশের বন্দর ছিল, থাই বাসিন্দারা তাদের মূল্যবোধের সাথে মিলিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতি মানিয়ে নিয়েছে। ব্যপারটা খুব বেশি মাত্রায় দেখা যায় মধ্যবিত্তদের মাঝে। বিলাসী খরচকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তির বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ বিবেচনা করা হয় এবং শপিং সেন্টারগুলো সপ্তাহন্তের জনপ্রিয় মিলনমেলা স্বরূপ।[৯৪] মোবাইল ফোনগুলোর মতো ইলেকট্রনিক্স এবং ভোগ্য পণ্যগুলো মোটামুটিভাবে সকলেই ভোগ করার মত সমর্থ রাখে। প্রতিদিনের জীবনে ধর্মের ভূমিকা হ্রাস পাওয়ায় এর সাথে কিছুটা ধর্মনিরপেক্ষতাও এসেছে। যদিও এই জাতীয় প্রবণতা অন্যান্য নগর কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং গ্রামাঞ্চলে কিছুটা হলেও এর প্রভাব রয়েছে। বলা যায়, ব্যাংকক এর অবস্থান সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একেবারে শীর্ষে ।

ব্যাংককের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হ'ল রাস্তার বিক্রেতারা খাবার আইটেম থেকে শুরু করে পোশাক এবং আনুষঙ্গিক সামগ্রী বিক্রি করে।অনুমান করা হয় শহরটিতে প্রায় এক লক্ষেরও বেশি হকার রয়েছে। বিএমএ (BMA) শহরের ২৮৭ টি স্থান হকারদের জন্য অনুমোদন দিলেও, অন্য ৪০৭ টি স্থানের অধিকাংশ দোকানই অবৈধভাবে চালানো হয়। যদিও তারা ফুটপাথের জায়গা নিয়েছে এবং পথচারীদের যাত্রাপথ অবরুদ্ধ করেছে, নগরীর অনেক বাসিন্দা তাদের খাবারের জন্য এই বিক্রেতাদের উপর নির্ভর করে এবং তাদের সংখ্যা কমানোর জন্য বিএমএ ( BMA )-এর প্রচেষ্টা অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে।[৯৫]

২০১৫ সালে, বিএমএ ( BMA ), ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডার (থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা) এর সহায়তায় জনসাধারণের চলাচল পথ পুনঃউদ্ধার করার জন্য রাস্তার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করে। খ্লং থম, সফান লেক এবং পাক খ্লং তালাতে ফুল বাজার সহ অনেকগুলো বিখ্যাত বাজার এতে আক্রান্ত হয়েছিল। ২০১৬ সালে প্রায় ৪০,০০০ জন বিক্রেতাকে ৩৯ টি জনসাধারণের চলাচল পথ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।[৯৬] কেউ কেউ পথচারীদের অধিকারের দিকে মনোনিবেশ করার প্রয়াসকে প্রশংসা করলেও অন্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে এর ফলে শহরের বৈশিষ্ট্য নষ্ট হবে এবং মানুষের জীবনযাত্রায় প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে।[৯৭][৯৮]

উৎসব ও ঘটনাপ্রবাহ

রচদাম্নোন অ্যাভিনিউ প্রতিবছর রাজা ভূমিবলের জন্মদিন উদ্‌যাপনে্র জন্য আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।

ব্যাংককের বাসিন্দারা থাইল্যান্ডের অনেকগুলো বার্ষিক উৎসব পালন করে। ১৩-১৫ এপ্রিল সংক্রান চলাকালীন, শহরজুড়ে ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান এবং জলের লড়াই হয়। লোই ক্রাথং, সাধারণত নভেম্বর মাসে স্বর্ণ পর্বত মেলা ( Golden Mount Fair)- এর সাথে উদযাপিত হয়। নববর্ষ উদ্‌যাপন নগরের অনেক অংশেই হয়, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবশ্য সেন্ট্রাল ওয়ার্ল্ডের সামনের প্লাজা। রাজপরিবারের সাথে সম্পর্কিত উৎসবগুলো প্রধানত ব্যাংককে হয়। ২৩ অক্টোবর রয়্যাল প্লাজায় রাজা চুলালংকর্নের ঘোড়সওয়ার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়, যা কিং চুলালংকর্ন স্মৃতি দিবস হিসেবে পরিচিত। বর্তমান রাজার এবং রানির জন্মদিন যথাক্রমে ৫ডিসেম্বর এবং ১২ আগস্ট, থাইল্যান্ডের জাতীয় পিতা দিবস এবং জাতীয় মাতা দিবস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই জাতীয় ছুটির দিনগুলো রাজকীয় সভাসদ দ্বারা দিনের শুরুতেই উদযাপিত হয়, এবং উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে রাজা বা রানী বক্তৃতা দেয় এবং জনসমাগম হয় । রাজার জন্মদিন রাজকীয় প্রহরীদের এর কুচকাওয়াজের মাধ্যমে বিশেষায়িত করা হয়।

সনম লুয়াং হ'ল থাই ঘুড়ি, ক্রীড়া ও সঙ্গীত উৎসব, যা সাধারণত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়, এবং রাজকীয় লাঙ্গল অনুষ্ঠান যা মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এপ্রিলের শুরুতে রেড ক্রস মেলা সুয়ান আম্পর্নে এবং রয়্যাল প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে অনেকগুলো বুথে পণ্য, খেলাধুলা এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। চাইনিজ নববর্ষ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) এবং নিরামিষাশীদের উৎসব (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) চীনা সম্প্রদায় বিশেষত ইয়াওরাতে ব্যাপকভাবে উদ্‌যাপন করে।[৯৯]

গণমাধ্যম

ব্যাংকক থাইল্যান্ডের গনমধ্যম শিল্পের কেন্দ্রস্বরূপ। সমস্ত জাতীয় সংবাদপত্র, সম্প্রচার মাধ্যম এবং প্রধান প্রকাশক রাজধানীতে অবস্থিত। ২০০২ সালে , ২১ টি জাতীয় পত্রিকা সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন প্রায় দুই মিলিয়ন দৈনিক পত্রিকা সরবরাহ করত । যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে থাই রথ, খাও সদ এবং ডেইলি নিউজ, যার মধ্যে থাই রথ বর্তমানে দৈনিক এক মিলিয়ন কপি ছাপে,[১০০] এবং সেইসাথে ম্যাতিকন এবং ক্রুংথেপ থুরাকিজ দৈনিক পত্রিকা । ব্যাংকক পোস্ট এবং দ্য নেশন ইংরেজি ভাষার দু'টি দৈনিক পত্রিকা। এশিয়ান ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ফিনান্সিয়াল টাইমস, দ্য স্ট্রাইটস টাইমস এবং ইওমুরি শিমবুন সহ বিদেশী প্রকাশনাগুলোরও ব্যাংককে কার্যক্রম রয়েছে।[১০১] থাইল্যান্ডে দুইশত এরও বেশি ম্যাগাজিনের সিংহভাগ রাজধানীতে প্রকাশিত হয় এবং এতে খবরেরে ম্যাগাজিনগুলোর পাশাপাশি জীবনধারা, বিনোদন, গসিপ এবং ফ্যাশন-সম্পর্কিত প্রকাশনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।

ব্যাংকক থাইল্যান্ডের টেলিভিশনগুলোরও সম্প্রচারকেন্দ্র। সমস্ত ছয়টি জাতীয় ভূ- চ্যানেল, চ্যানেল ৩, ৫ এবং ৭, মডার্নাইন (Modernine ), এনবিটি ( NBT ) এবং থাই পিবিএস (Thai PBS )-সদর দফতর এবং প্রধান স্টুডিও রাজধানীতে অবস্থিত। এনবিটি ( NBT ) দ্বারা প্রচারিত স্থানীয় সংবাদ বিভাগগুলো ব্যতীত, সমস্ত কার্যক্রম ব্যাংককে করা হয় এবং সমস্ত প্রদেশে এর পুনরাবৃত্তি হয়। তবে, এই কেন্দ্রিয়ায়িত মডেলটি কেবল টেলিভিশনের উত্থানের সাথে সাথে দুর্বল হয়ে পড়ছে, যার অনেক স্থানীয় সরবরাহকারী রয়েছে। ব্যাংকক ভিত্তিক অসংখ্য কেবল এবং স্যাটেলাইট চ্যানেল রয়েছে । ট্রুভিশনস (TrueVisions) হ'ল ব্যাংকক এবং থাইল্যান্ডের প্রধান সাবস্ক্রিপশন টেলিভিশন সরবরাহকারী এবং এটি আন্তর্জাতিক কার্যক্রমও পরিচালনা করে। ২০০২ সালে থাইল্যান্ডের ৩১১ এফএম রেডিও স্টেশনগুলোর মধ্যে ৪০ টি এবং ২১২ টি এএম স্টেশনগুলোর মধ্যে ৩৮ টির মূল কেন্দ্র ছিল ব্যাংকক।[১০১] ১৯৯৭ সালের সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত সম্প্রচার মধ্যমগুলোর সংস্কার ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে, যদিও শহরে অনেকগুলো কমিউনিটি রেডিও স্টেশন স্থাপিত হয়েছে।

তেমনি, ব্যাংকক শুরু থেকেই থাই চলচ্চিত্র শিল্পে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ফিল্ম সেটিংসে সাধারণত সারাদেশের চিত্র প্রদর্শিত হয়, শহরটি সমস্ত বড় ফিল্ম স্টুডিওগুলোর আবাসস্থল। ব্যাংককে কয়েক ডজন সিনেমা ও মাল্টিপ্লেক্স রয়েছে এবং শহরটিতে বছরে দুটি বড় চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, ব্যাংকক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং ব্যাংকক বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসব।

কলা

ব্যাংককের আর্ট অ্যান্ড কালচার সেন্টার, শহরটির জনসাধারণের সমসাময়িক আর্ট ভেন্যু, বহু বিলম্বের পরে ২০০৮ সালে খোলা হয়েছিল।

চারুকলা অধিদপ্তরের ঐতিহ্য কলা কার্যালয় সহ বহু সরকারি সংস্থা ঐতিহ্যবাহী থাই শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করে। থাই শিল্প গড়ে উঠেছে মূলত বহু বছরের ধর্মীয় ও রাজকীয় আবহে। চিত্রলাদা প্রাসাদের সাপোর্ট ফাউন্ডেশন ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। শহর জুড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায় এখনও খন মুখোশ, ভিক্ষুদের ভিক্ষার বাটি এবং ধ্রুপদী সংগীত বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে। থাইল্যান্ড জাতীয় সংগ্রহশালা ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক শিল্পের স্থায়ী সংগ্রহের সমসাময়িক অস্থায়ী প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। গত দুই দশকে ব্যাংককের সমকালীন শিল্প ক্রমে অস্পষ্টতা থেকে জনসম্মুখে চলে এসেছে। পাথ্রাওয়াদী থিয়েটার এবং এইচ গ্যালারী সহ কিছু ব্যক্তিগত সংগ্রহশালার উত্থান ঘটছে। যা নবীন শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকক শিল্প এবং সংস্কৃতি কেন্দ্র শহরের বৃহত্তম প্রদর্শনী মঞ্চ।[১০২] এছাড়াও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সমকালীন শিল্প যাদুঘর সহ আরও অনেক শিল্প সংগ্রহশালা এবং যাদুঘর রয়েছে।

শহরের অভিনয় শিল্পে চিত্রিত হয় ঐতিহ্যবাহী থিয়েটার এবং নৃত্য, পাশাপাশি পশ্চিমা ধাঁচের নাটকগুলো।খন এবং অন্যান্যঐতিহ্যবাহী নৃত্যগুলো নিয়মিতভাবে জাতীয় থিয়েটার এবং সালাচেলার্মক্রুং রয়্যাল থিয়েটারে পরিবেশিত হয়, অন্যদিকে থাইল্যান্ড সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি একটি নতুন বহুমুখী ভেন্যু যা সংগীত, অর্কেস্ট্রা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অসংখ্য ভেন্যুতে নিয়মিতভাবে পুরো শহর জুড়ে বিভিন্ন পারফর্মেন্স উপস্থাপিত হয়।

খেলা

ব্যাঙ্ককের পার্ক এবং রাস্তাগুলোতে বাচ্চাদের সেপাক তাক্র খেলতে দেখা যায়।

আধুনিক ব্যাংকক একটি শক্তিশালী দর্শক ক্রীড়া সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। টেলিভিশনে রাচেদাম্নোন এবং লুম্ফিনী স্টেডিয়ামগুলোতে অনুষ্ঠিত মুয়ে থাই কিকবক্সিং ম্যাচ নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করা হয়। জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের পাশাপাশি কিকবক্সিং এর জনপ্রিয়তা এখানে চোখে পড়ার মত । বেশ কয়েকটি বিদেশী লিগ এবং প্রতিযোগিতা, বিশেষভাবে ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগের বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে ব্যাংককে এবং অন্যান্য থাই নগরকেন্দ্রে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, থাই লীগ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ব্যাংকক ভিত্তিক পুলিশ টেরো এবং মুয়াংথং ইউনাইটেড ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব ।[১০৩]

সিপাক তাক্র পুরো শহর জুড়ে খোলা জায়গাগুলোতে খেলতে দেখা যায়, বিশেষত শ্রমিক শ্রেণীর লোকজনদের, ফুটবল এবং অন্যান্য আধুনিক খেলাধুলা এখন বেশি প্রচলিত। রাজা চুলালংকর্ন -এর রাজত্বকালে পশ্চিমা খেলাধুলার সূচনা হয়েছিল এবং মূলত এটি কেবল সুবিধাভোগীদের জন্যই ছিল। এই জাতীয় পরিস্থিতি এখনও নির্দিষ্ট খেলার সঙ্গে জড়িত। গল্ফ উচ্চবিত্তদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় এবং থাইল্যান্ডের আরও বিখ্যাত ক্লাবগুলো গ্রামাঞ্চলে থাকলেও ব্যাংককেই বিভিন্ন কোর্স রয়েছে। ঘোড়া চালনা শহরের কয়েকটি অভিজাত ক্লাবে শেখানো হয়। ব্যাঙ্ককে ঘোড়দৌড় খুব জনপ্রিয় এবং ঘোড়ায় বাজি দেওয়া বৈধ। ব্যাংককে দুটি ঘোড়দৌড় ময়দান রয়েছে: "রয়েল ব্যাংকক স্পোর্টস ক্লাব" এবং "রয়্যাল টার্ফ ক্লাব অফ থাইল্যান্ড"।

ব্যাংকক জুড়ে সরকারীভাবে খেলাধুলা করার সুবিধা রয়েছে । দুটি প্রধান কেন্দ্র হ'ল ন্যাশনাল স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স, যা ১৯৩৮ সাল, এবং নতুন হুয়া ম্যাক স্পোর্টস কমপ্লেক্স, যা ১৯৯৮ এশিয়ান গেমসের জন্য নির্মিত হয়েছিল। ব্যাংকক ১৯৬৬, ১৯৭০ এবং ১৯৭৮ সালের এশিয়ান গেমসও আয়োজন করেছিল; যে কোনও শহরের চেয়ে যা সবচেয়ে বেশি। শহরটি ১৯৫৯ সালে উদ্বোধনী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমস, ২০০৭ গ্রীষ্ম ইউনিভার্সিড এবং ২০১২ ফিফা ( FIFA ) ফুটসাল বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল।

পরিবহন

স্ট্রিটল্যাম্প এবং হেডলাইটগুলো এক্সপ্রেসওয়ের মককাসন ইন্টারচেঞ্জকে আলোকিত করে। ১.৫ মিলিয়নেরো বেশি যানবাহন   প্রতিদিন এক্সপেসওয়েটি ব্যবহার করে।[১০৪]

প্রাচীনকালে ব্যাংককের খালগুলো পরিবহনের একটি প্রধান মাধ্যম ছিল। তবে বর্তমানে সড়কপথ এর গুরুত্বকে পেছনে ফেলেছে । ১৮৬৪ সালে পশ্চিমা কৌশলে সর্বোপ্রথম ছারঙ ক্রুং সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন থেকেই, ক্রমবর্ধমান নগরটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। একটি জটিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্ক যানবাহনগুলোকে শহরের কেন্দ্রের অভ্যন্তরে এবং বাইরে আনতে সহায়তা করে, তবে ব্যাংককের দ্রুত বিকাশ অবকাঠামোর উপর এক ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে যদিও ১৯৯০ এর দশক থেকেই ট্র্যাফিক জ্যাম শহরটিকে আক্রান্ত করে রেখেছে। ১৮৯৩ সালে থেকে রেল সেবা চালু হলেও ১৮৯৪ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রামস শহরটিতে চালু ছিল। .১৯৯৯ সাল থেকেই ব্যাঙ্ককের প্রথম দ্রুত ট্রানজিট ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছিল। পুরানো গণপরিবহন ব্যবস্থায় একটি বিস্তৃত বাস নেটওয়ার্ক এবং জল পরিবহন সেবা চাও ফ্রেয়া এবং দুটি খাল চালু আছে। ট্যাক্সি সেবা গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং " টুক-টুক " অটোরিকশা আকারে পাওয়া যায়।

ব্যাংকক জাতীয় হাইওয়ে এবং রেলপথের পাশাপাশি দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অভ্যন্তরীণ বিমানগুলো দ্বারা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এর শতাব্দী প্রাচীন সামুদ্রিক পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা খলং তোয়ই বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

বিএমএ-র গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং সড়ক ও পরিবহনবিষয়ক অধিদপ্তর সড়ক ব্যবস্থা এবং পরিবহন ব্যবস্থার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের তদারকি করার জন্য দায়বদ্ধ। তবে অনেকগুলো পৃথক সরকারি সংস্থা কিছু পৃথক ব্যবস্থার দায়িত্বেও রয়েছে, এবং পরিবহন-সংক্রান্ত নীতি পরিকল্পনা ও তহবিলের অনেকাংশই জাতীয় সরকার অবদান রাখে।

সড়ক

সড়ক-ভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাংককে ভ্রমণের প্রাথমিক পদ্ধতি। শহরের জৈব বিকাশের কারণে, এর রাস্তাগুলো একটি সংগঠিত গ্রিড কাঠামো অনুসরণ করে না। আটচল্লিশটি প্রধান রাস্তা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলকে সংযুক্ত করে, প্রধান রাস্তাগুলো ছোট ছোট রাস্তা এবং গলিগুলোতে বিভক্ত ( সোই ) যা স্থানীয় পাড়াগুলো কে সংযুক্ত করে। চাও ফ্রেয়া নদীর উপরস্থিত এগারোটি সেতু শহরের দুটি অংশকে সংযুক্ত করে, বেশ কয়েকটি এক্সপ্রেসওয়ে এবং মোটরওয়ে রুটগুলো শহরের ভেতরে এবং বাইরে যানবাহন আনা নেওয়া করে এবং নিকটস্থ প্রদেশগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে।

রচদাম্রি রোডের যানজট , ব্যাংককের খুবই সাধারণ ঘটনা।

১৯৮০ এর দশকে ব্যাংকক দ্রুত বিকশিত হওয়ায় যানবাহনের মালিকানা এবং যানবাহন চাহিদা খুব বেড়ে গিয়েছিল, যা ২০০৬ সালেও অব্যাহত ছিল - ব্যাংককে ৩,৯৩৩,২১১ টি ব্যবহারযোগ্য যানবাহন ছিল, যার মধ্যে ৩৭.৬ শতাংশ ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ৩২.৯ শতাংশ মোটরসাইকেল ছিল।[১০৫] রাস্তাগুলো সীমিত বহনক্ষম হওয়ায় ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। সমস্যাটি এতটাই প্রকোপ ছিল যে থাই ট্র্যাফিক পুলিশ অফিসারদের একটি দলকে সাধারণ ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষিত করা হত, যে সকল সন্তান-সম্ভাবা নারীরা সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছতে পারত না তাদের সহায়তা করার জন্য ।[১০৬] যানজটের একটি প্রধান কারণ হিসাবে প্রায়শই অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থাকে দায়ী করা হয় (বেশিরভাগ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতে ২০-৩০ শতাংশের তুলনায় ৮ শতাংশ), অন্যান্য নিয়ামকগুলোর মধ্যে উচ্চ যানবাহন মালিকানার হার সহ অপর্যাপ্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা, এবং পরিবহন চাহিদা ব্যবস্থাপনার অভাব যানজট সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে।[১০৭] সমস্যাটি নিরসনে প্রচেষ্টায় বিকল্প সংযোগ-রাস্তা নির্মাণ এবং একটি বিস্তৃত এলিভেটেড হাইওয়ে, পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নতুন দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। শহরের সামগ্রিক সড়ক ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি অবশ্য এখনো কিছুটা দুর্বল।

১৯৯০ এর দশকে ব্যাংককে বায়ু দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যার প্রধান উৎস ছিল যানবাহন। তবে বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নের প্রচেষ্টায় জ্বালানীর গুণমান উন্নয়ন এবং পোড়া জ্বালানির নির্গমন কৌশল মান নির্ধারনের মাধ্যমে ২০০০ এর দশকে সমস্যাটিকে দৃশ্যমানভাবে প্রশমিত করা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে বায়ুমণ্ডলীয় পার্টিকুলেট পদার্থের স্তর প্রতি ঘনমিটারে ৮১ মাইক্রোগ্রাম থেকে ২০০৭ সালে ৪৩ এ নেমে আসে।[১০৮] তারপরও, গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অব্যাহত দূষণ-নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার অভাব অতীতের সাফল্যেকে হুমকির মুখে ফেলছে ।[১০৯] ২০১৮ সালের জানুয়ারি – ফেব্রুয়ারি মাসে, আবহাওয়াজনিত কারণে ২.৫ মাইক্রোমিটারের (পিএম ২.৫ ) পার্টিকুলেট পদার্থটি অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল।[১১০][১১১]

যদিও বিএমএ ২৩০ কিলোমিটার (১৪০ মা) ব্যাপী ত্রিশটি সাইকেল রুট তৈরি করেছে ,[১১২] সাইকেল চালানো এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ, বিশেষত শহরের কেন্দ্রস্থলে। এই সাইকেল লেনগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পথচারীদের ফুটপাতের অংশবিশেষ। সাইকেল লেনগুলো এবং ফুটপাতগুলোর দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ, হকার এবং রাস্তার বিক্রেতাদের জবরদখল সাইকেল চালক এবং পথচারীদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে, ফলে সাইকেল চালিয়ে কিংবা পদব্রজে ব্যাংকক ভ্রমণের ক্ষেত্রে অপ্রিয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

বাস ও ট্যাক্সি

বিপুল সংখ্যক বাস, মিনিবাস এবং ট্যাক্সি একটি বিশাল গণপরিবহন কেন্দ্র, ভিক্টোরিয়া মনুমেন্ট-এ পথ ভাগাভাগি করে চলছে।

বৃহত্তর ব্যাংকক অঞ্চলে স্থানীয় পরিবহন পরিষেবা সরবরাহকারী একটি বিস্তৃত বাস নেটওয়ার্ক রয়েছে। ব্যাংকক গণ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিএমটিএ) বেসরকারী খাতের জন্য যথেষ্ট ছাড় দিয়ে বাস সার্ভিস একচেটিয়াভাবে চালাচ্ছে। বাস, মিনিবাস ভ্যান এবং সং থাইও সমগ্র অঞ্চল জুড়ে মোট ৪৭০ টি পথে চলাচল করে।[১১৩] ২০১০ সাল থেকে বিএমএ-এর মালিকানাধীন বাসগুলোর জন্য পৃথক দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যেটি শুধু বিআরটি হিসাবে পরিচিত, ব্যবস্থাটি বর্তমানে বাণিজ্যিক জেলা সাথন থেকে শহরের পশ্চিমে রতচাফ্রুয়েক পর্যন্ত একটি একক সারি নিয়ে গঠিত। ট্রান্সপোর্ট কোং, লিমিটেড বিএমটিএর দীর্ঘ-দূরত্ব ব্যবস্থাপনার সহযোগী, যা ব্যাংককের বাইরে সমস্ত প্রদেশে পরিষেবা প্রদান করছে।

ট্যাক্সিগুলো ব্যাংককে সর্বব্যাপী এবং পরিবহনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। আগস্ট ২০১২ অনুযায়ী, ট্যাক্সি হিসাবে ব্যবহারের জন্য ১০৬,০৫০টি গাড়ি, ৫৮,২৭৬টি মটরসাইকেল এবং ৮,৯৯৬টি যন্ত্র চালিত ট্রাইসাইকেল টুক-টুক নিবন্ধিত রয়েছে।[১১৪] ১৯৯২ সাল থেকে গাড়ি ট্যাক্সিগুলোর জন্য মিটারের সাহায্যে ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও টুক-টুকে ভাড়া সাধারণত আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। মোটরসাইকেলের ট্যাক্সিগুলো নিয়মিতভাবে ক্রমানুযায়ী নির্ধারিত বা আলোচনাসাপেক্ষ ভাড়ায় চালিত হয় এবং সাধারণত অপেক্ষাকৃত স্বল্প ভ্রমণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তাদের জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, যাত্রীদের অনুরোধকৃত রাস্তা চালকদের সুবিধানুযায়ী না হলে ট্যাক্সিগুলো প্রায়শই যাত্রীদের প্রত্যাখ্যান করে ফলে ট্যাক্সি ব্যবস্থা বাজে খ্যাতি অর্জন করেছে।[১১৫] মোটরসাইকেলের ট্যাক্সিগুলো আগে নিয়ন্ত্রিত ছিল না এবং সংগঠিত অপরাধ দলগুলোর দ্বারা চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছিল। ২০০৩ সাল থেকে মোটরসাইকেল ট্যাক্সি ক্রম নির্ধারণের জন্য নিবন্ধনকরণের প্রয়োজন ছিল এবং চালকরা এখন তাদের নির্দিষ্ট নম্বরযুক্ত পোশাকগুলো পরিধান করেন এবং যেখানে তাদের যাত্রী গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়।

রেল ব্যবস্থা

একটি বিটিএস ট্রেন ব্যস্ত সালা দ্যাং মোড় পেরিয়ে গেছে। এমআরটি এই স্থানে রাস্তার নিচেও অতিক্রম করে।

হুয়া ল্যাম্ফং রেলওয়ে স্টেশনটির অবস্থান ব্যাংককে, এটি , থাইল্যান্ড স্টেট রেলওয়ে (এসআরটি) দ্বারা পরিচালিত জাতীয় রেল নেটওয়ার্কের মূল টার্মিনাস। দূরপাল্লার পরিষেবাগুলো ছাড়াও, এসআরটি ব্যস্ত সময়ে নগরীর উপকণ্ঠ থেকে এবং উপকণ্ঠে প্রতিদিন কিছু যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করে থাকে।

ব্যাংককে তিনটি দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে সেবা দান করা হয়ঃ বিটিএস স্কাইট্রেন, ভূ-গর্ভস্থ এমআরটি এবং এলিভেটেড এয়ারপোর্ট রেল লিঙ্ক । যদিও ১৯৭৫ সাল থেকে ব্যাংককে দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল,[১১৬] ১৯৯৯ সালে বিটিএস অবশেষে এর কার্যক্রম শুরু করেছিল।

বিটিএসে দুটি লাইন রয়েছে, সুখুমভিত এবং সিলোম, ৫১.৬৯ কিলোমিটার (৩২.১২ মা) বরাবর ৪৩ টি স্টেশন রয়েছে।[১১৭] এমআরটি ২০০৪ সালের জুলাইয়ে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল এবং বর্তমানে দুটি লাইন ব্লু লাইন এবং পারপল লাইন নিয়ে গঠিত। ২০১০ সালের আগস্টে উন্মুক্ত হওয়া এয়ারপোর্ট রেল লিঙ্কটি শহরের কেন্দ্রকে পূর্বদিকের সূবর্ণভূমি বিমানবন্দরের সাথে সংযুক্ত করে। এর আটটি স্টেশন ২৮ কিলোমিটার (১৭ মা) ব্যাপী বিস্তৃত।

যদিও শুরুর দিকে যাত্রী সংখ্যা কম ছিল এবং তাদের সেবার ক্ষেত্র দীর্ঘদিন অভ্যন্তরীণ শহরে সীমাবদ্ধ রয়েছে, তবুও এই ব্যবস্থাগুলো অনেক যাত্রীদের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বিটিএস ২০১২ সালে গড়ে ৬,০০,০০০ টি দৈনিক ভ্রমণের কথা জানিয়েছিল,[১১৮] যেখানে এমআরটিতে প্রতিদিন ২,৪০,০০০ যাত্রী ভ্রমণ করে।[১১৯]

জুলাই ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী লাইট রেড গ্রেড-বিচ্ছিন্ন যাত্রী রেললাইন নির্মাণ সহ নগর-প্রশস্ত পরিবহন ব্যবস্থার আয়ত্তে আনয়নে সম্প্রসারণজনিত নির্মাণ কাজ চলছে। ব্যাংকক মেট্রোপলিটন অঞ্চলে পুরো মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট মাস্টার প্ল্যান আটটি মূল লাইন এবং চারটি ফিডার লাইন সমন্বয়ে ৫০৮ কিলোমিটার (৩১৬ মা) ব্যাপী বিস্তৃত যা ২০২৯ এর মধ্যে শেষ করা হবে। এছাড়াও, দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা এবং ভারী রেল লাইনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মনোরেল সিস্টেমের জন্য প্রস্তাবনা রয়েছে।

জল পরিবহন

যদিও এর অতীতের তুলনায় অনেকটা হ্রাস পেয়েছে, তবুও জল-ভিত্তিক পরিবহন ব্যাংককে এবং নিম্ন প্রবাহ প্রদেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিতভাবে বেশ কয়েকটি জল বাস যাত্রীদের সেবা প্রদান করে থাকে। চাও ফ্রেয়া এক্সপ্রেস নৌকা নদীর ধারে চৌত্রিশটি স্টপে সেবা প্রদান করে থাকে, ২০১০ সালে প্রতিদিন গড়ে ৩৫,৫৮৬ জন যাত্রী বহন করত, আর ছোট খলং সাইন সাইপ নৌকা প্রতিদিন সাইন সাইপ খালে সাতাশটি স্টপে ৫৭,৫৫৭ জন যাত্রীকে সেবা প্রদান করত। চাও ফ্রেয়া নদীর দীর্ঘ-পুচ্ছ নৌকাগুলো পনেরোটি নিয়মিত রুটে চলাচল করত এবং বত্রিশটি নদী পারাপারে যাত্রীবাহী ফেরিগুলো ২০১০ সালে গড়ে ১,৩৬,৯২৭ জন যাত্রী বহন করত।[১২০]

ব্যাংকক বন্দর, খলং তোয়ই বন্দর নামেই বেশি পরিচিত, ১৯৪৭ সালে উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে ১৯৯১ সালের গভীর সমুদ্র-বন্দর লাইম চব্যাং বন্দর দ্বারা অধিগ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত থাইল্যান্ডের প্রধান আন্তর্জাতিক বন্দর ছিল। এটি মূলত একটি কার্গো বন্দর, যদিও এর অভ্যন্তরীণ অবস্থানটি ১২,০০০ ডেডওয়েট টন বা তারও কম ওজন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজের প্রবেশে সীমাবদ্ধ। ২০১০ অর্থবছরে দেশের মোট আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোর ২২ শতাংশ কার্গো এই বন্দরে খালাস হয়েছিল। [১২১][১২২]

বিমানবন্দর

ব্যাংকক এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ততম বিমান পরিবহন কেন্দ্র । দুটি বাণিজ্যিক বিমানবন্দর শহরটিকে সেবা দান করে, পুরনো ডন মুয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং নতুন ব্যাংকক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা সাধারণত সুবর্ণভূমি নামে পরিচিত। ২০০৬ সালে উদ্বোধনের পরে ব্যাংককের মূল বিমানবন্দর হিসাবে ডন মুয়াংকে প্রতিস্থাপনকারী সুবর্ণভূমি ২০১৫ সালে ৫২,৮০৮,০১ জন যাত্রীকে সেবা দিয়েছিল,[১২৩] যাত্রীর পরিমাণে এটি বিশ্বের বিশতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর । যদিও বিমানবন্দরটি প্রস্তাবিত যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৪৫ মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীকে সেবা দান করছে । ডন মুয়াং ২০০৬ সালে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য পুনরায় চালু করা হয়েছিল,[১২৪] এবং অক্টোবরে ২০১২ সাল থেকে স্বল্প ব্যয়ের বাহন হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিষেবা পুনরায় চালু করা হয়েছে।[১২৫] সুবর্ণভূমিকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৬০ মিলিয়ন এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৯০ মিলিয়ন যাত্রী ধারণক্ষম করার জন্য জন্য সম্প্রসারণের কাজ চলছে।[১২৬]

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা

শিক্ষা

প্রতিষ্ঠিতলগ্ন (১৯১৭ সাল) থেকেই চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি গ্রামীণ খেত দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। পথুম ওয়াং জেলা তখন থেকে ব্যাংকক শহরের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।

ব্যাংকক দীর্ঘকাল ধরে থাইল্যান্ডের আধুনিক শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। দেশের প্রথম স্কুলগুলো এখানে উনিশ শতকের পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখন শহরে স্কুল সংখ্যা ১,৩৩১ টি ।[১২৭] শহরটিতে দেশের প্রাচীনতম চুলালংকর্ন, থমাসত, ক্যাসেটসার্ত, মাহিডল এবং সিলপাকর্ন পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালগুলো ১৯১৭ থেকে ১৯৪৩ সালের মধ্যে নির্মীত হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার অধিকাংশ সরকারি এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাংকক বা মেট্রোপলিটন অঞ্চলে অবস্থিত। চুলালংকর্ন এবং মহিডল একমাত্র থাই বিশ্ববিদ্যালয় যা কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৫০০-তে হয়েছে।[১২৮] ব্যাংককে অবস্থিত অপর একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিং মংকুত প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, থোনবুড়ি, ২০১২-১৩ টাইমস উচ্চতর শিক্ষা বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৪০০-এর মধ্যে একমাত্র থাই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।[১২৯]

গত কয়েক দশক ধরে থাই শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনের আকাঙ্খা মেটাতে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে । ব্যাংকক এমন এক জায়গা যেখানে অভিবাসী এবং প্রাদেশিক থাই জনগণ সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনেরও সুযোগ পায়। ১৯৭১ সালে রামখামেয়েং বিশ্ববিদ্যালয় থাইল্যান্ডের প্রথম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে; যার শিক্ষার্থী সংখ্যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বাধিক। উচ্চশিক্ষার দাবিতে আরও অনেক সরকারি ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রধান প্রধান প্রদেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হলেও, বৃহত্তর ব্যাংককে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। নগরীতে উচ্চ শিক্ষায় অ-ব্যাংককিয়ান নাগরিকদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এই পরিস্থিতি শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৬০-এর দশকে, স্কুলেগামী ১০- ১৯ বছর বয়সী ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ লোক মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ব্যাংককে পাড়ি জমাত। প্রদেশগুলোতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভাব এবং রাজধানীতে অপেক্ষাকৃত শিক্ষার উচ্চ মান এর জন্য প্রধানত দায়ী।[১৩০] যদিও এই বৈষম্যটি অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে, এখনও হাজার হাজার শিক্ষার্থী ব্যাংককের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা করে। ব্যাংকককে কেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা দীর্ঘকাল ধরে একটি প্রধান উপাদান হিসেবে ভূমিকা পালন করছে এবং দেশকে বিকেন্দ্রীকরণে সরকারের প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

স্বাস্থ্যসেবা

অধিকাংশক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবায় রাজধানী ব্যাংককে অসম অনুপাত দেখা যায়, ২০০০ সাল, ব্যাঙ্ককে দেশের ৩৯.৯ শতাংশ চিকিৎসক ছিলেন এবং সেখানে চিকিৎসক ও জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ১: ৭৯৪ , যেখানে অন্যান্য প্রদেশগুলোতে এর অনুপাত ছিল ১: ৫,৬৬৭।[১৩১] শহরটিতে ৪২ টি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে যার মধ্যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, পাশাপাশি ৯৮ টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং ৪,০৬৩ টি নিবন্ধিত ক্লিনিক রয়েছে। [১৩২] বিএমএ তার চিকিৎসা সেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে নয়টি সরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করে, এবং এর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আটষট্টিটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রাথমিক দেখভাল করে থাকে। থাইল্যান্ডের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারী সেবা সংস্থার অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রদান করা হয়।

দেশের বৃহত্তম গবেষণা-ভিত্তিক মেডিকেল স্কুলগুলোর মধ্যে সিরীরাজ, কিং চুলালংকর্ন মেমোরিয়াল এবং রামথিবোদি হাসপাতালগুলো প্রধান, দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎ্সা সেবা এসব হাসপাতাল প্রদান করে থাকে সেই সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত রেফার করা রোগীদের গ্রহণ করে থাকে। ইদানীং বেসরকারী খাতে চিকিৎসা পর্যটনে অনেক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদের মধ্যে বুমরুনগ্রাদ ও ব্যাংকক হাসপাতালের মতো হাসপাতালগুলো বিদেশীদের বিশেষভাবে সেবা প্রদান করে। ২০১১ সালে আনুমানিক ২০০,০০০ চিকিৎসা প্রত্যাশী পর্যটক থাইল্যান্ড সফর করেছিলেন, যা ব্যাংকককে চিকিৎসা পর্যটনের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল হিসাবে গড়ে তুলেছে।[১৩৩]

অপরাধ এবং নিরাপত্তা

২০১০ সালে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক ক্র্যাকডাউন অভিযানের খন্ডচিত্র ।রাজনৈতিক সহিংসতা মাঝে মাঝে ব্যাংককের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় ব্যাংককে অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে কম।[১৩৪] সড়ক দুর্ঘটনা বড় ধরনের বিপর্যয় এখানে[১৩৫], যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ খুব কমই ঘটে । অন্তর্বর্তীকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মাঝেমধ্যে সন্ত্রাসী হামলার ফলে প্রাণহানির মত ঘটনাও ঘটেছে।[১৩৬]

যদিও ব্যাংককে অপরাধ তুলনামূলকভাবে কম, তারপরও অহিংস অপরাধ যেমন- পকেট-মার, পার্স ছিনতাই এবং ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির মতো ঘটনা হরহামেশা ঘটে থাকে।[১৩৪] ব্যাংককে ১৯৬০ এর দশকের পর থেকে ক্রমবর্ধমান অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আংশিকভাবে নগরায়ন, অভিবাসন, বেকারত্ব এবং দারিদ্র্যতাকে দায়ী করা যায়। ১৯৮০ এর দশকের শেষভাগে, ব্যাংককের অপরাধের হার দেশের অন্যান্য অংশের চেয়ে চারগুণেরও বেশি ছিল। পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে শহরের বাসা-বাড়িতে চুরি থেকে শুরু করে হামলা , হত্যার মত অপরাধ দমনে ব্যস্ত ছিল।[১৩৭] ১৯৯০ এর দশকে যানবাহন চুরি এবং সংগঠিত অপরাধের উত্থান ঘটেছিল, বিশেষত বিদেশী দলগুলোর মদদে।[১৩৮] দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য পাচার বিশেষত ইয়া বা মেথামফেটামিন বড়ি পাচার, এর মত অপরাধও ঘটছে।[১৩৯][১৪০]

পুলিশ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১০ সালে মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যুরো সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পেয়েছিল বাসা-বাড়িতে চুরি সংক্রান্ত, ১২,৩৪৭ টি মামলা এসেছিল সে বছর। এরপরে অবস্থান ছিল মটরসাইকেল চুরির ৫,৫০৪ টি, হামলার ৩,৬৯৪ টি এবং তহবিল তছরূপের ২,৮৩৬ টি মামলা । গুরুতর অপরাধের মধ্যে ১৮৩ টি খুন, ৮১ টি গণধর্ষণ, ২৬৫টি ডাকাতি, ১টি অপহরণ এবং ৯টি অগ্নিসংযোগ মামলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধগুলো খুবই সাধারণ ঘটনা ছিল এবং এর মধ্যে ৫৪,০৬৮ টি মাদকদ্রব্য সম্পর্কিত মামলা, পতিতাবৃত্তির সাথে জড়িত ১,,২৩৯ টি এবং জুয়ার সাথে সম্পর্কিত ৮,৬৩৪ টি মামলা।[১৪১] বিচার মন্ত্রণালয়ের অফিস অফ জাস্টিস অ্যাফেয়ার্স দ্বারা পরিচালিত ২০০৭ সালের থাইল্যান্ড ক্রাইম ভিকটিম সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২.৭ শতাংশ জরিপকৃত পরিবারের একজন সদস্য অপরাধের শিকার। এর মধ্যে ৯৬.১ শতাংশ সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট অপরাধ, ২.৬ শতাংশ জীবন ও ব্যক্তি সম্পর্কিত অপরাধ এবং ১.৪ শতাংশ তথ্য-সম্পর্কিত অপরাধ ছিল।[১৪২]

ব্যাংককে রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ আন্দোলন খুবই সাধারণ বিষয়। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ ঘটনা শান্তিপূর্ণ ছিল, তবে ২০০৬ সাল পরবর্তী প্রতিবাদগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রায়শই সহিংস হয়ে উঠছে। ২০১০ সালের মার্চ-মে মাসে বিক্ষোভগুলো একটি ক্র্যাকডাউনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল, যেখানে সশস্ত্র ও নিরস্ত্র প্রতিবাদকারী, সুরক্ষা বাহিনী, বেসামরিক নাগরিক এবং সাংবাদিকসহ ৯২ জন নিহত হয়েছিল। ব্যাংককে সন্ত্রাসবাদী হামলার মত ঘটনাও ঘটেছে, বিশেষত ২০১৫ সালে ব্যাংককের ইরাওয়ান ধর্মশালায় বোমা হামলা হয়েছিল এবং ২০০৬–-০৭ নববর্ষের আগের দিনে একাধিক বোমা হামলা হয়েছিল।

ব্যাংককে সড়ক দুর্ঘটনা বড় ধরনের সমস্যা।. ২০১০ সাল শহরটিতে ৩৭,৯৮৫ টি দুর্ঘটনা ঘটেছিল, ফলস্বরূপ ১৬,৬০২ জন আহত এবং ৮ ৪৫৬ জন নিহত হয় এবং আর্থিকভাবে ৪২৬.৪২ মিলিয়ন বাত ক্ষতি হয়। তারপরও, মারাত্মক দুর্ঘটনার হার থাইল্যান্ডের অন্যান্য শহরের তুলনায় খুব কম। ব্যাংককে দেশের সমগ্র সড়ক দুর্ঘটনার ৫০.৯ শতাংশ ঘটে থাকে, তবে মাত্র ৬.২ শতাংশ দুর্ঘটনা আশংকাজনক হয়ে থাকে।.[১৪৩] ব্যাংককের পথের কুকুরগুলো অপর একটি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুতর সমস্যার জন্য দায়ী। ধারণা করা হয় প্রায় তিন লক্ষ কুকুর শহরের পথে-ঘাটে ঘোরাঘুরি করে,[১৪৪] ব্যাংকক হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলোতে কুকুরেরে কামড়জনিত দূর্ঘটনার চিকিৎসা খুবই সাধারণ ঘটনা। কুকুরগুলোর মধ্যে জলাতংক রোগ বিদ্যমান থাকায়, কুকুকের কামড়জনিত চিকিৎসা নাগরিকদের মারাত্মক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।.[ঞ]

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীরা।

শহরের আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিএমএ-র আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয়। এর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সিস্টার শহর চুক্তির মাধ্যমে অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোর সাথে অংশীদারত্ব করা, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোতে অংশগ্রহণ ও সদস্যতা এবং শহরটিতে অবস্থিত বহু বিদেশী কূটনৈতিক মিশনের সাথে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা অন্তর্ভুক্ত।.[১৪৬]

আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব

ব্যাংকক অসংখ্য আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং আঞ্চলিক নগর পরিচালনা নেটওয়ার্ক এর সদস্য, এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব মেজর সিটিজ ২১, জাপান-নেতৃত্বাধীন এশিয়ান-পাসিফিক সিটি সামিট, দ্য সি ফরটি সিটিজ ক্লাইমেট লিডারশীপ গ্রুপ, ইস্কাপ-পৃষ্ঠপোশকতায় রিজিয়নাল নেটওয়ার্ক অব লোকাল অথরিটিজ ফর ম্যানেজমেন্ট অব হিউম্যান সেটলমেন্ট ইন এশিয়া এন্ড পাসিফিক (সিটিনেট), জাপানের কাউন্সিল অব লোকাল অথরিটিজ ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস, দ্য ওয়ার্ল্ড এসোসিইয়েশন অব দ্য মেজর মেট্রপলিস এবং লোকাল গভর্ণমেন্ট ফর সাসটেইনাবিলিটি, সহ অন্যান্য।[১৪৬]

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ড প্রাণকেন্দ্রে এবং এশিয়ার অন্যতম পরিবহন কেন্দ্র হিসাবে, অনেক আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সংগঠনের প্রধান কার্যালয় রয়েছে। অন্যদের মধ্যে, ব্যাংককে জাতিসংঘের ইকোনমিক ও সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া এন্ড দ্য পাসিফিক (ইসক্যাপ) এর সচিবালয়, পাশাপাশি ফুড এন্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও) , আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইসিএও), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), আন্তর্জাতিক টেলিযোগযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ), জাতিসংঘ শরণার্থী হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এর সদর দফতর অবস্থিত.[১৪৭]

ভগিনী শহর

২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংককের ভগিনী শহরগুলির একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল।

আরও দেখুন

টীকা

তথ্যসূত্র

{{সূত্র তালিকা|3|refs=

গ্রন্থপঞ্জি

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ