আর দেকো

২০শ শতাব্দীর গোড়ার দিকের স্থাপত্য ও শিল্প শৈলী

আর দেকো (Art Deco) বলতে দৃশ্যকলা, স্থাপত্যকলা ও পণ্য নকশাকরণে ব্যবহৃত একটি শৈলীকে বোঝায়, যা ১৯১০ সালে ১ম বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে ফ্রান্সে আবির্ভূত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯২০-এর দশক থেকে ১৯৩০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিকাশ লাভ করে।[১] আর দেকো কথাটি ফরাসি শব্দবন্ধ আর দেকোরাতিফ-এর (Arts Décoratifs) সংক্ষিপ্ত রূপ; একে কদাচিৎ কেবল দেকো নামেও ডাকা হয়। এটিকে বৃহৎ স্থাপনা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাকার বস্তু পর্যন্ত যেকোনও কিছুর বহির্ভাগ ও অভ্যন্তরভাগের শৈলী ও নকশাতে প্রয়োগ করা হয়, যার মাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষের সাজ (পোশাক, বেশভূষাশৈলী ও গহনা), সেতু, ভবন (আকাশচুম্বী অট্টালিকা থেকে চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ), জাহাজ, রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, ট্রাক, বাস, আসবাব ও দৈনন্দিন বস্তু যেমন বেতারযন্ত্র, পরিস্কারক শোষকল (ভ্যাকুয়াম ক্লিনার), ইত্যাদি দেখতে কেমন হবে, তার উপর এটি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

আর দেকো
উপর থেকে নিচে: নিউ ইয়র্ক নগরীতে আর দেকো শৈলীতে নির্মিত ক্রাইসলার ভবন (১৯৩০); শিকাগো বিশ্বমেলার প্রাচীরপত্র (পোস্টার), ১৯৩৩; র‍্যনে লালিকের সৃষ্ট মস্তকাভরণ ভিক্তোয়ার (১৯২৮)
সক্রিয় বছরআনু. ১৯১০-এর দশক থেকে ১৯৫০-এর দশক
দেশবিশ্বব্যাপী

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে ১৯২৫ সালে অনুষ্ঠিত এক্সপোজিসিওঁ আঁতেরনাসিওনাল দেজার দেকোরাতিফ এ আঁদ্যুস্ত্রিয়েল মোদের্ন (আধুনিক শোভাবর্ধক ও শিল্পজাত বস্তুর শিল্পকলা বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী) নামক প্রদর্শনীর নাম থেকে এই শৈলীটির নামকরণ করা হয়।[২]

আর দেকোতে ২০শ শতকের প্রারম্ভের আধুনিকতাবাদী অগ্রসেনা (আভঁ-গার্দ) জাতীয় শৈলীর সাথে ফরাসি ঐতিহাসিক নকশার সূক্ষ্ম কারিগরি ও সমৃদ্ধ উপাদানগুলির মেলবন্ধন ঘটানো হয়। তবে কদাচিৎ অপশ্চিমা সংস্কৃতিগুলি থেকে আগত মূলভাব বা মোটিফও এতে স্থান পেয়েছে। শুরু থেকেই আর দেকোতে ঘনকবাদ ও ভিয়েনার বিচ্ছিন্নতাবাদে পরিলক্ষিত সাহসী জ্যামিতিক আকৃতিগুলির প্রভাব পড়েছিল। ফোভবাদ বা বালে রুসের উজ্জ্বল রঙ, রাজা ষোড়শ লুই ও ১ম লুই ফিলিপের আমলের আসবাবপত্রের পরিণত কারিগরি শৈলী, চীন, জাপান, ভারত, পারস্য, প্রাচীন মিশর ও প্রাচীন মায়া সভ্যতার বিচিত্র-ভিনদেশী শৈলীগুলিও এর উপর প্রভাব ফেলে।

খ্যাতির শীর্ষে আর দেকো শৈলীটি বিলাসবাহুল্য, মোহময়তা, প্রাচুর্য, সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতি আস্থার একটি প্রতীক ছিল। এই শিল্পকলা আন্দোলনটিতে দুর্লভ ও ব্যয়বহুল উপাদান যেমন আবলুস কাঠ ও হাতির দাঁতের পাশাপাশি নিখুঁত কারিগরি দক্ষতা প্রকাশ পেত। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ক্রাইসলার বিল্ডিং ও ১৯২০ ও ১০৩০-এর দশকে নির্মিত অন্যান্য গগনচুম্বী অট্টালিকাগুলি আর দেকো শৈলীর একেকটি স্মৃতিসৌধ হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

১৯৩০-এর দশকে মহামন্দার সময় আর দেকোর প্রভাব ধীরে ধীরে ফিকে হওয়া শুরু করে এবং তার স্থানে আন্তর্জাতিক শৈলী ও মধ্য-শতাব্দীর আধুনিক শৈলীর আগমন ঘটে। নতুন উপাদান যেমন ক্রোমিয়ামের প্রলেপ, মরিচারোধী ইস্পাত ও প্লাস্টিকের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৩০-এর দশকে কাঁটছাঁট আধুনিক শৈলী (স্ট্রিমলাইন মডার্ন) নামক একটি অপেক্ষাকৃত মসৃণ চাকচিক্যময় শৈলীর উদয় হয়, যেখানে বক্র আকৃতি এবং মসৃণ পালিশকৃত পৃষ্ঠতলের মতো বৈশিষ্ট্যগুলি দেখতে পাওয়া যায়।[৩] আর দেকো প্রকৃতপক্ষেই একটি আন্তর্জাতিক শৈলী ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে এর আধিপত্যের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং কঠোর ব্যবহারবাদী ও নিরাভরণ-নিরলঙ্কার শৈলীর আধুনিক স্থাপত্য ও আন্তর্জাতিক শৈলী একে অনুসরণ করে।[৪][৫]

তথ্যসূত্র

গ্রন্থ ও উৎসপঞ্জি

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:History of architectureটেমপ্লেট:Modern architectureটেমপ্লেট:Architecture in the United States

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ