ইয়ামুসুক্রো
ইয়ামুসুক্রু (/ˌjæmʊˈsuːkroʊ/;[২] ফরাসি উচ্চারণ: [jamusukʁo], locally [jamsokʁo]) হচ্ছে কোত দিভোয়ারের দে জুরি রাজধানীর একটি। এটি সেদেশের রাজনৈতিক রাজধানী। এছাড়াও এটি একটি স্বশাসিত জেলা। অন্যদিকে কোত দিভোয়ারের অর্থনৈতিক রাজধানী হচ্ছে আবিজান। আবিজান থেকে ২৪০ কিলোমিটার (১৫০ মা)উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শহরটি দেশের প্রশাসনিক কেন্দ্র। আঁকাবাঁকা পাহাড় এবং সমভূমিগুলো সহ এই শহরটির ক্ষেত্রফল ৩,৫০০ বর্গকিলোমিটার (১,৪০০ মা২)।
ইয়ামুসুক্রো | |
---|---|
শহর, autonomous district, sub-prefecture and কমিউন | |
নীতিবাক্য: "Solidarité-Paix-Développement" | |
কোত দিভোয়ারে অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ০৬°৪৮′৫৮″ উত্তর ০৫°১৬′২৭″ পশ্চিম / ৬.৮১৬১১° উত্তর ৫.২৭৪১৭° পশ্চিম | |
দেশ | কোত দিভোয়ার |
জেলা | ইয়ামুসুক্রো |
Department | ইয়ামুসুক্রো Attiégouakro |
সরকার | |
• Governor | Augustin Abdoulaye Thiam Houphouët |
• Lord Mayor | Gnrangbe Kouakou Kouadio Jean |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৫০০ বর্গকিমি (১,৩৫০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (2020 est[১]) | |
• মোট | ৩,৬১,৮৯৩ (শহর) ৪,১৫,০২০ (জেলা) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি |
ওয়েবসাইট | www |
২০১১ এর আগে, বর্তমান ইয়ামুসুক্রো জেলা ল্যাকস অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১১ জেলায় রূপান্তরিত করা হয়। [৩] জেলাটিকে ইয়ামুসুক্রো এবং আতিয়েগুয়াক্রো ডিপার্টমেন্টে বিভক্ত করা হয়। এই জেলায় সর্বমোট ১৬৯টি জনবসতি রয়েছে। ইয়ামুসুক্রো শহরটি ইয়ামুসুক্রো বিভাগের একটি উপ-অঞ্চল (সাব-প্রিফেকচার) এবং কমিউন। ২০১২ সালে এটি কমিউনে রূপান্তরের মাধ্যমে ইয়ামুসুক্রো স্ব-শাসিত জেলায় একমাত্র কমিউনে পরিণত হয়।
২০১৪ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ইয়ামুসুক্রো স্বায়ত্তশাসিত জেলার জনসংখ্যা ছিল ৩,৫৫,৫৭৩ জন। অন্যদিকে ইয়ামুসুক্রো শহরের জনসংখ্যা ছিল ২,৮১,০৭১ জন। ফলশ্রুতিতে জনসংখ্যার দিক দিয়ে এই শহরটি কোত দিভোয়ারের ৫ম বৃহত্তম শহর।
জেলার বর্তমান গভর্নর হলেন আগস্টিন থিয়াম ।
আইভরীয়রা সাধারণত 'ইয়ামুসুক্রো'-কে "ইয়াম-সো-ক্রো" উচ্চারণ করে থাকে।
ইতিহাস
প্রাক-ইতিহাস
কোত দিভোয়ারের পাওয়া কয়েক হাজার বছরের পুরনো পাথরের তৈরি যন্ত্রপাতি থেকে বুঝা যায় যে, ইয়ামুসুক্রো এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রাচীন কাল থেকেই মানব বসতি রয়েছে। সাহারা মরুভূমির ক্রমবর্ধমান মরুকরণের ফলে, কঠোর পরিস্থিতি এড়াতে অনেকেই দক্ষিণে চলে এসেছিল।
ঔপনিবেশিক আমল
কৌয়াসাই এন'গো এর ভাইঝি রানী ইয়ামৌসৌ ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে ১৯২৯ সালে এন'গোক্রো নামক শহর পত্তন করেন। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় ইয়ামুসুক্রো। বাউলি ভাষায় ক্রো প্রত্যয়ের অর্থ হচ্ছে শহর।
তৎকালীন কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা হলেও ১৯০৯ সালে জামলাবোর প্রধানের নির্দেশে আকৌ প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ইয়ামুসুক্রো থেকে ৭ কিলোমিটার (৪.৩ মা) দূরে অবস্থিত বৌয়াফ্লি রোডের বনজি স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেখানকার ফরাসি প্রশাসক সাইমন মরিস শুধুমাত্র কৌয়াসাই এন'গোর হস্তক্ষেপের ফলে তা আঁচ করতে পেরেছিলেন।
পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ায় সাইমন মরিস, বনজি এলাকা বিদ্রোহের কবল থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে বিবেচনা করে সেখানকার ফরাসি সামরিক ঘাটিটি ইয়ামুসুক্রোতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। বিদ্রোহ দমনের পর ফরাসি প্রশাসনের প্রতি আনুগত্যের প্রতিদান সরূপ আকৌর বিদ্রোহের ফলে নিহত কৌয়াসাই এন'গোর স্মৃতিতে ফরাসিরা একটি পিরামিড নির্মান করে। [৪]
১৯১৯ সালে ইয়ামৌসৌক্রোর সিভিল স্টেশনটি এখান থেকে সরানো হয়। কোত দিভোয়ারের (আইভরি কোস্ট) ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স হওফোয়েত-বোদরি এখানকার নেতা হন। তারপর একটি দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। ইয়ামুসুক্রো তখনো একটি গতানুগতিক কৃষিভিত্তিক শহর হিসেবেই রয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোত দিভোয়ারে আফ্রিকান কৃষি ইউনিয়ন গঠিত হলেও এর অবস্থা অপরিবর্তিত থাকে। তবে স্বাধীনতার সাথে সাথেই ইয়ামুসৌক্রো পর্যন্ত উত্থান পর্বের সূচনা হয়। [৫]
১৯৫০ সালে এই এলাকায় ৫০০ জন বাসিন্দা ছিল। [৬]
স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস
১৯৬০ সালে আইভরি কোস্টের স্বাধীনতার কয়েক বছর পরে, ১৯৬৪ সালে ইয়ামুসুক্রোর সন্তান ফেলিক্স হওফোয়েত-বোদরি আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রপতি হন ও অনেক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করে ইয়ামুসুক্রোকে ঢেলে সাজানো শুরু করেন। ১৯৬৫ সালের একদিন, তিনি কাউন্টির নেতাদের সাথে বৃক্ষরোপণকার্য পরিদর্শন করেন এবং এই অঞ্চলের প্রচেষ্টা ও কৃষিকাজগুলি তাদের নিজ গ্রামে স্থানান্তরিত করার জন্য তাদেরকে আমন্ত্রণ জানান। এটি পরে ইয়ামুসুক্রোর বড় শিক্ষা নামে পরিচিতি পায়। ২১ জুলাই ১৯৭৭ সালে, হওফোয়েত রাষ্ট্রে তার বৃক্ষরোপণকার্য শুরু করার প্রস্তাব দেন।
১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্রপতি হাফৌত-বোইনি ইয়ামৌসৌক্রোকে আইভরি কোস্টের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক রাজধানী করেন, কারণ এই শহরটি তাঁর জন্মস্থান ছিল।[৭] এর ফলে একশ বছরের মধ্যেই চারবার সেদেশের রাজধানী পরিবর্তিত হয়। আইভরি কোস্টের পূর্বের রাজধানী শহরগুলো ছিল গ্র্যান্ড-বাসম (১৮৯৩), বিঞ্জারভিলি (১৯০০) এবং আবিজান (১৯৩৩)। যদিও দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বেশিরভাগ অংশ এখনও আবিজানে সংঘটিত হয় এবং এটি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের "অর্থনৈতিক রাজধানী" হিসাবে মনোনীত হয়।
ইয়ামুসুক্রো বেইলিয়ার ডিপার্টমেন্টের অংশ না হলেও এটি ইয়ামুসুক্রো ডিপার্টমেন্ট এবং পার্শ্ববর্তী বেইলিয়ার ডিপার্টমেন্টের একটি আসন।
সরকার ব্যবস্থা
২০০১ সালের শুরুর দিকে ইয়ামুসুক্রো শহরটি ল্যাকস অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ইয়ামুসুক্রো বিভাগের অংশ হিসাবে পরিচালিত হতো। ২০১১ সালে বিভাগটি বিলুপ্ত করে ল্যাকস অঞ্চল থেকে পৃথক করে ইয়ামুসুক্রো স্ব-শাসিত জেলা গঠিত হয়। এবং ল্যাকস অঞ্চলের বাকি অংশ নিয়ে নতুন ল্যাকস জেলা গঠন করা হয়।
ইয়ামুসুক্রো স্বায়ত্তশাসিত জেলাটি দেশের বেশিরভাগ জেলা থেকে ভিন্ন। কারণ এটি অন্যান্য জেলার মতো বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত নয়। জেলাটি অবশ্য বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট), উপ-অঞ্চল (সাব-প্রিফেকচার) এবং একটি কমিউনে বিভক্ত। জেলাটি আতিয়েগুয়াক্রো এবং ইয়ামুসুক্রো বিভাগ নিয়ে গঠিত। বিভাগ গুলো আবার আতিয়েগুয়াক্রো, কোসৌ, লোলোবো এবং ইয়ামুসুক্রো উপ-অঞ্চলে বিভক্ত। এই জেলায় ইয়ামুসুক্রো নামেই একটি কমিউনে রয়েছে। ২০১১ সালে ইয়ামুসুক্রোর মেয়রের পদ রাজ্য প্রধান দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকে প্রতিস্থাপন করা হয়।
স্থাপত্য
ইয়ামুসুক্রোর উল্লেখযোগ্য স্থাপনা গুলোর মধ্যে রয়েছে কোসৌ বাঁধ, পিডিসিআই-আরডিএ হাউস, ফলিক্স হাউফৌত-বোইনি জাতীয় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন স্কুল, টাউন হল, প্রোটেস্ট্যান্ট মন্দির, মসজিদ, প্যালেস অফ হোস্ট ইত্যাদি। ১৯৯৫ সালে ইয়ামুসুক্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গড়ে ছয় শতাধিক যাত্রী এবং ৩টি ফ্লাইট ছিল। এটি আফ্রিকার দুটি বিমানবন্দরগুলির মধ্যে একটি (জিব্যাডোলাইট সহ) যাতে কনকর্ড বিমান অবররণ ও ফ্লাইট পরিচালনা করতে সক্ষম
উপাসনালয়
ইয়ামুসুক্রোর উপাসনালয় গুলো প্রধানত খ্রিস্টান ধর্মীয় গীর্জা। যেমন, ইয়ামুসুক্রোর রোমান ক্যাথলিক ডায়োসিস (ক্যাথলিক চার্চ), ইউনাইটেড মেথোডিস্ট চার্চ আইভরি কোস্ট, আইভরি কোস্টের মিশনারি ব্যাপটিস্ট গীর্জা ইউনিয়ন (ব্যাপটিস্ট ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স), ঈশ্বরের মণ্ডলী।[৮] ছাড়াও এখানে মসজিদও রয়েছে।
ইয়ামুসুক্রোতে বিশ্বের বৃহত্তম খ্রিস্টান চার্চ ব্যাসিলিকা অফ আওয়ার লেডি অফ পিস অবস্থিত। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন পোপ দ্বিতীয় জন পল এটি প্রতিষ্ঠাপিত করেন।[৯][১০][১১]
অর্থনীতি
এই শহরের প্রধান অর্থনৈতিক কার্যাবলী হলো মাছ ধরা, বনজ এবং সুগন্ধি শিল্প। [১২]
জলবায়ু
কোপেন-গাইগার জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি অনুসারে ইয়ামুসুক্রোর জলবায়ু হচ্ছে ক্রান্তীয় আর্দ্র-শুষ্ক জলবায়ু (Aw)। [১৩] শহরটিতে মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত দীর্ঘ বর্ষা মৌসুম বিরাজ করে। বাকি ৪ মাস জুড়ে একটি স্বল্প সময়ের শুষ্ক মৌসুম বিরাজ করে। পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য শহরের মতো, ইয়ামুসুক্রোতেও হরমাতান ঋতু বিরাজ করে। এর প্রভাবেই সেখানে শুষ্ক মৌসুমের আবির্ভাব ঘটে। দীর্ঘ বর্ষা মৌসুম থাকা সত্ত্বেও, ইয়ামুসুক্রোতে আবিজানের তুলনায় অনেক কম বৃষ্টিপাত হয়। ইয়ামুসুক্রোতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১,১৩০ মিলিমিটার (৪৪ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়।
ইয়ামুসুক্রো-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩১.৫ (৮৮.৭) | ৩৩.৫ (৯২.৩) | ৩৩.৫ (৯২.৩) | ৩২.৯ (৯১.২) | ৩১.৭ (৮৯.১) | ৩০.১ (৮৬.২) | ২৮.৬ (৮৩.৫) | ২৮.৫ (৮৩.৩) | ২৯.৩ (৮৪.৭) | ৩০.১ (৮৬.২) | ৩০.৭ (৮৭.৩) | ৩০.১ (৮৬.২) | ৩০.৯ (৮৭.৬) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ২৫.২ (৭৭.৪) | ২৭.৩ (৮১.১) | ২৭.৬ (৮১.৭) | ২৭.৩ (৮১.১) | ২৬.৫ (৭৯.৭) | ২৫.৬ (৭৮.১) | ২৪.৫ (৭৬.১) | ২৪.৫ (৭৬.১) | ২৪.৮ (৭৬.৬) | ২৫.২ (৭৭.৪) | ২৫.৫ (৭৭.৯) | ২৪.৫ (৭৬.১) | ২৫.৭ (৭৮.৩) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১৮.৯ (৬৬.০) | ২১.২ (৭০.২) | ২১.৮ (৭১.২) | ২১.৮ (৭১.২) | ২১.৩ (৭০.৩) | ২১.১ (৭০.০) | ২০.৪ (৬৮.৭) | ২০.৬ (৬৯.১) | ২০.৪ (৬৮.৭) | ২০.৪ (৬৮.৭) | ২০.৩ (৬৮.৫) | ১৯ (৬৬) | ২০.৬ (৬৯.১) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১৩ (০.৫) | ৪২ (১.৭) | ১০৮ (৪.৩) | ১২৬ (৫.০) | ১৫৫ (৬.১) | ১৬৫ (৬.৫) | ৮৮ (৩.৫) | ৮৩ (৩.৩) | ১৭০ (৬.৭) | ১২৫ (৪.৯) | ৩৬ (১.৪) | ১৫ (০.৬) | ১,১২৬ (৪৪.৫) |
উৎস: Climate-Data.org, উচ্চতা: ২৩৬ মিটার[১৩] |
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- ইয়ামোসোক্রো ছবির গ্যালারী
- ওপেনস্ট্রিটম্যাপে ইয়ামুসুক্রো সম্পর্কিত ভৌগোলিক উপাত্ত