উদারনীতিবাদ

একধরনের বৈশ্বিক রাজনৈতিক এবং নৈতিক দর্শন

উদারনীতিবাদ বা উদারপন্থী মতবাদ সাম্য ও মুক্তির উপর নির্ভর করে সৃষ্ট একধরনের বৈশ্বিক রাজনৈতিক দর্শন[১][২] এ দুইটি নীতির উপর ভিত্তি করে উদারতাবাদকে অনেক বিস্তৃত আকার দেওয়া হয়েছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, জনগণের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মুক্তবাণিজ্য, ব্যক্তিগত মালিকানা প্রভৃতি ধারণার উদ্ভব ঘটেছে এ দর্শনের উপর ভিত্তি করে।[৩][৪][৫][৬][৭] উদারতাবাদের ইংরেজি Liberalism উদ্ভব হয়েছে লাতিন শব্দ liberalis থেকে।[৮]

সাংকেতিক ভাষায় উদারনীতিবাদ

উদারনীতিবাদের সাধারণ অর্থ হলো রাষ্ট্রীয় কতৃত্ববাদ এর বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বাধীনতা নীতি প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হব হাউসের মতে উদারনীতিবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যেখানে প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা জীবনের কণ্ঠস্বর তাদের চিন্তা বিকাশ-এ বিকশিত হয়। উদারনীতিবাদের প্রধান ও প্রতিপাদই হলো স্বাধীনতা।উদারনীতি এমন একটি রাজনৈতিক মতবাদ যেখানে ব্যক্তির স্বাধীনতাকে রক্ষা করা ও এর উন্নতিসাধন করাকে রাজনীতির মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উদারপন্থীরা বিশ্বাস করেন ব্যক্তিবিশেষকে অন্যদের সৃষ্ট ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারের প্রয়োজনীয়তা আছে, কিন্তু তারা এও বিশ্বাস করেন যে সরকার নিজেও ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য হুমকি হতে পারে। মার্কিন বিপ্লবী লেখক টমাস পেইন ১৭৭৬ সালে লিখেছিলেন যে সরকার এক ধরনের "প্রয়োজনীয় মন্দলোক"। ব্যক্তির স্বাধীনতা ও জীবন সুরক্ষার জন্য আইন, বিচারব্যবস্থা ও পুলিশের দরকার আছে, কিন্তু এগুলির দমনমূলক ক্ষমতা ব্যক্তির বিরুদ্ধেই প্রযুক্ত হতে পারে। সুতরাং সমস্যা হচ্ছে এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা সৃষ্টি করা যাতে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা থাকবে কিন্তু একই সাথে সেই ক্ষমতার যাতে অপব্যবহার না হয়, সেটিও প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকবে।

রাজনৈতিক দর্শনের একটি বিশেষ মতবাদ হিসেবে উদারতাবাদের বয়স দেড়শ বছরের কিছু বেশি হলেও এর উৎস মূল ষোড়শ শতাব্দীর রেনেসাঁ ও রিফর্মেশন আন্দোলন পর্যন্ত বিস্তৃত। রেনেসাঁ ও রিফর্মেশন আন্দোলনে ব্যক্তিকে তার স্বকীয় সত্তায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে প্রয়াস চালানো হয় তার পরোক্ষ ফলশ্রুতি হিসেবে উদারতাবাদের জন্ম হয়। উদারতাবাদ তার বিকাশপথে প্রথমে একটি নেতিবাচক আন্দোলন হিসেবে, এবং পরে একটি ইতিবাচক আদর্শ হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। নেতিবাচক আন্দোলন হিসেবে এটি যুগ যুগ ধরে মানুষের প্রগতি ও মুক্তির পথে সৃষ্ট বাধাসমূহকে দূর করার কাজে নিয়োজিত হয় এবং ইতিবাচক আদর্শ হিসেবে মানুষের মধ্যে যে বিপুল শক্তি ও সম্ভাবনা প্রোথিত রয়েছে তার সার্থক বিকাশ সাধনের মাধ্যমে মানুষকে তার স্বকীয় সত্তায় প্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্রতী হয়। উদারতাবাদ যদিও মূলত একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, তবু তা শুধুমাত্র রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনেও সম্প্রসারিত হয়েছে। জন হলওয়েলের মতে, উদারতাবাদ নিছক একটি চিন্তাধারা নয়, এটি একটি জীবনদর্শনও বটে। জীবনদর্শন হিসেবে তা মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক আকাঙ্ক্ষাসমূহকে প্রতিফলত করে।[৯]

ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে উদারতাবাদ রোমান ক্যাথলিকবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় এবং ক্যালভিনপন্থীদের, ফরাসী হুগুয়েনটদের ও অন্যান্য প্রটোস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতার সংগ্রামকে রাজনৈতিক সমর্থন প্রদান করে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধকালে উদারতাবাদ ব্রিটিশ নন-কনফর্মিস্ট আন্দলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিশেষাধিকারের দাবিকে নস্যাৎ করে দেয়। মোট কথা, সপ্তদশ শতাব্দী থেকে উদারতাবাদ শুধু যে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ থেকে স্বাধীন ধর্মাচরণের অধিকারকে রক্ষা করার চেষ্টা করে তাই নয়, চার্চের প্রভাব থেকে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে মুক্ত করার প্রয়াসেও লিপ্ত হয়।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ