চিবা প্রশাসনিক অঞ্চল
চিবা প্রশাসনিক অঞ্চল (千葉県? চিবা কেন্) হল জাপানের বৃহত্তম দ্বীপ হোনশুর কান্তোও অঞ্চলের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। বৃহত্তর টোকিও মহানগর এলাকার মধ্যে চিবাকে ধরা হয়,[১] আর ভূমিরূপগতভাবে এর অধিকাংশই বোওসোও উপদ্বীপের মধ্যে পড়ে। এর রাজধানী চিবা নগর।[২]
চিবা প্রশাসনিক অঞ্চল 千葉県 | |
---|---|
প্রশাসনিক অঞ্চল | |
জাপানি প্রতিলিপি | |
• জাপানি | 千葉県 |
• রোমাজি | Chiba-ken |
দেশ | জাপান |
অঞ্চল | কান্তোও |
দ্বীপ | হোনশু |
রাজধানী | চিবা |
আয়তন | |
• মোট | ৫,১৫৬.১৫ বর্গকিমি (১,৯৯০.৮০ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ২৭শ |
জনসংখ্যা (১লা মে, ২০১৬) | |
• মোট | ৬২,৩৬,৫১৭ |
• ক্রম | ৬ষ্ঠ |
• জনঘনত্ব | ১,২০৯.৫৩/বর্গকিমি (৩,১৩২.৭/বর্গমাইল) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | JP-12 |
জেলা | ৬ |
পৌরসভা | ৫৪ |
ফুল | সেইয়ো আবুরানা ফুল |
গাছ | কুসামাকি |
পাখি | মেডো বান্টিং |
মাছ | সী ব্রীম |
ওয়েবসাইট | pref.chiba.lg.jp/ ইংরেজি |
ইতিহাস
আদিম যুগ
চিবা প্রশাসনিক অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মানুষের বসতি আছে। জোমোন যুগের নিদর্শন গোটা চিবা থেকেই পাওয়া গেছে। জাপানে বৃহত্তম এঁটো শামুক-ঝিনুকের খোলার পাহাড় এখানেই পাওয়া গেছে, যা থেকে বোঝা যায় এক বর্ধিষ্ণু অধিবাসী গোষ্ঠীর কথা, যারা খাদ্যের জন্য নিকটস্থ সমুদ্রের উপর নির্ভর করত। চিবায় অনেকগুলো কোফুন সমাধিক্ষেত্রও আছে; সবচেয়ে বড়টি টোকিও উপসাগরের কাছে ফুৎৎসুতে।
আসুকা ও নারা যুগ
আসুকা যুগে (৫৩৮-৭১০ খ্রিঃ) ৬৪৫ খ্রিঃ তাইকা সংস্কারের সময় আঞ্চলিক শাসনপ্রণালীতে রদবদল ঘটে। পূর্বতন ফুসা প্রদেশ, যা আজকের চিবা ও ইবারাকি প্রশাসনিক অঞ্চলের সিংহভাগ জুড়ে ছিল, তা উত্তরে শিমোওসা বা শিমোফুসা ও দক্ষিণে কাযুসা প্রদেশে বিভক্ত হয়ে যায়। ৭১৮ খ্রিঃ কাযুসা থেকে দক্ষিণের আওয়া প্রদেশ পৃথক হয়। এই অবস্থায় প্রদেশগুলি মেইজি পুনর্গঠন পর্যন্ত বহাল থাকে।[৩]
হেইআন যুগ
নারা ও হেইয়ান যুগে রাজসভা ক্রমে প্রদেশগুলির উপর দৃঢ়তর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। কিয়োতোর কাছে পূর্বোক্ত তিনটি প্রদেশের সমৃদ্ধ কৃষি ও অন্যান্য সামগ্রী করের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে ওঠে। তিনটি প্রদেশ জুড়ে অনেকগুলি শোওয়েন সামন্ত খামার বানান হয়। হেইয়ান যুগের পরবর্তীকালে অবশ্য স্থানীয় কোকুশি শাসকরা কিয়োতোর নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করতে আরম্ভ করেন। চিবা পরিবার সাম্রাজ্যের শাসন থেকে বেরিয়ে গিয়ে কামাকুরা শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অন্যতম মূল ভূমিকা নেন।[৪]
আধুনিক যুগ
১৮৭৩ খ্রিঃ ১৫ই জুন কিসারাযু ও ইন্বা প্রশাসনিক অঞ্চলের সংযুক্তির মাধ্যমে চিবা প্রশাসনিক অঞ্চল স্থাপিত হয়। ১৯২৩ এর বৃহৎ কান্তোও ভূমিকম্পে বিশেষত বোওসোও উপদ্বীপে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ১৩০০ নাগরিকের মৃত্যু ঘটে। ফুনাবাশি, ইচিকাওয়া ও অন্য কয়েকটি জায়গায় ভূমিকম্পের পর কোরীয় ও অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর হিংসার ঘটনা ঘটে।[৫]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ১৯৪৬ খ্রিঃ মার্চ মাসে স্থলপথে টোকিও আক্রমণের জন্য অপারেশন করোনেট পরিকল্পিত হয়। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের পর জাপান আত্মসমর্পণ করে বলে এই পরিকল্পনা রূপায়িত করার প্রয়োজন হয়নি।
২০১১ তোওহোকু ভূমিকম্প ও সুনামি
২০১১ এর ১১ই মার্চ বৃহৎ তোওহোকু ভূমিকম্প চিবা প্রশাসনিক অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ইচিহারার তেল শোধনাগারের তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের ট্যাঙ্কে আগুন লাগে এবং ট্যাঙ্কগুলি ১০ দিন ধরে জ্বলেছিল।[৬] সমুদ্র বুজিয়ে বানানো কৃত্রিম ভূভাগে মাটির তরলায়নের ফলে চিবার উত্তর ও পশ্চিম অংশে বিশেষত আবাসন প্রকল্পগুলিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়। অধিকন্তু ফুকুশিমা দাই-ইচির নিকটস্থ বলে পরিবেশে তেজস্ক্রিয়তাও বেড়ে যায়। এই ব্যাপক দুর্যোগের পর চিবার জনসংখ্যা ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের পর প্রথম বার হ্রাস পায়।[৭][৮]
ভূগোল
চিবা প্রশাসনিক অঞ্চলের উত্তরে ইবারাকি প্রশাসনিক অঞ্চল ও তোনে নদী, পশ্চিমে এদো নদীর পাড়ে টোকিও ও সাইতামা প্রশাসনিক অঞ্চল, দক্ষিণে টোকিও উপসাগর ও পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর। চিবার অধিকাংশ বোওসোও উপদ্বীপের অন্তর্গত। উপদ্বীপটি উর্বর ও সমতল; এখানে ধান চাষ হয়। স্থানীয় ভাষায় সমভূমিটির অতি উর্বর পূর্বাঞ্চল কুজুকুরি সমভূমি নামে পরিচিত।[৯]