নৃগোষ্ঠী

(জাতিতত্ত্ব থেকে পুনর্নির্দেশিত)

নৃগোষ্ঠী (ইংরেজি: Ethnic group) বলতে কোনও মানবসমাজে বিদ্যমান বহুসংখ্যক মানুষের একটি গোষ্ঠীকে বোঝায় যার সদস্যরা কিছু অংশিদারী সামাজিক অভিজ্ঞতা ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একে অপরের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং অনুরূপ অন্যান্য গোষ্ঠী থেকে নিজেদেরকে স্বতন্ত্র হিসেবে গণ্য করে। অংশীদারী অভিজ্ঞতা ও বৈশিষ্ট্যগুলি ইতিহাস, ঐতিহ্য, পূর্বপুরুষ, বংশ, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সামাজিক রীতিনীতি, ইত্যাদির যেকোনও ধরনের সমবায় হতে পারে।[১][২][৩] তাত্ত্বিকভাবে নৃগোষ্ঠী এমন এক ধরনের সামাজিক বিভাজন যার সাথে মানুষের আর্থ-সামাজিক মর্যাদার কোনও সম্পর্ক নেই; বরং একই নৃগোষ্ঠীতে সমাজের সকল আর্থ-সামাজিক স্তরের মানুষ থাকতে পারে।

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কোলাজ: আফার মানুষ, তুয়ারেগ মানুষ, সান ম্যান, কানাডার ইনুইট মানুষ, ব্রাজিলের তেরেনা আদিবাসী মানুষ, কাজাখ মানুষ, জাপানি মানুষ, রাজস্থানী মানুষ (ভারত), বুরিয়াত মানুষ, মালয় মানুষ, কাতারের আরব মানুষ, সামি নরওয়ের মানুষ, সুইডিশ মানুষ, ইতালিয়ান মানুষ, টোঙ্গান মানুষ, আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান।

যদিও নৃগোষ্ঠী ও জাতি দুইটি স্বতন্ত্র ধারণা, তার পরেও কখনও কখনও নৃগোষ্ঠীগত জাতীয়তাবাদের (Ethnic nationalism) ক্ষেত্রে নৃগোষ্ঠী ও জাতি পরিভাষা দুইটি সম অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে। নৃগোষ্ঠী সাথে সম্পর্কিত কিন্তু স্বতন্ত্র আরেকটি ধারণা হল নরগোষ্ঠী (Race), যাতে সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গের চেয়ে শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলির উপরে বেশি জোর দেওয়া হয়।

নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় মানুষ বংশানুক্রমে অর্জন করতে পারে, কিংবা যে সমাজে বাস করে তার উপর ভিত্তি করে এই পরিচয় নির্মিত হতে পারে। একটি নৃগোষ্ঠীকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বংশ, অভিন্ন উৎস-সংক্রান্ত পৌরাণিক কাহিনী বা কিংবদন্তি, ইতিহাস, মাতৃভূমি, ভাষা, উপভাষা, প্রতীকী ব্যবস্থা যেমন ধর্ম, পুরাণ, ধর্মীর আচারানুষ্ঠান, রন্ধনশৈলী, পোশাকশৈলী, শিল্পকলা, এমনকি বাহ্যিক দৈহিক রূপ, ইত্যাদির অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[৪][৫][৬]

নৃগোষ্ঠীর ধারণাটি সুদৃঢ় ও সুস্পষ্ট বিভাজনমূলক নয়, বরং স্থিতিস্থাপক ও পরিবর্তনশীল। ভাষিক সরণ (language shift), ভিন্ন সংস্কৃতি আত্তীকরণ (acculturation), পরিগ্রহণ (adoption) এবং ধর্মান্তরকরণ (religious conversion) ইত্যাদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এক নৃগোষ্ঠী পরিত্যাগ করে আরেক নৃগোষ্ঠীর সদস্যে পরিণত হতে পারে। একটি নৃগোষ্ঠী থেকে অনেকগুলি উপগোষ্ঠী বা গোত্রের উৎপত্তি হতে পারে। এই অপত্য উপগোষ্ঠীগুলি সময়ের সাথে সাথে সবর্ণবিবাহ কিংবা ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে তাদের মাতৃ-নৃগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বতন্ত্র নৃগোষ্ঠীতে পরিণত হতে পারে। এর বিপরীতে অতীতে পৃথক ছিল, এমন একাধিক নৃগোষ্ঠী একত্রিত বা সংযুক্তি হয়ে একটি সর্ব-নৃগোষ্ঠী (Pan-ethnicity) গঠন করতে পারে এবং এইরূপ মিলনের শেষ পরিণতি হিসেবে একটি মাত্র নৃগোষ্ঠীর উদ্ভব হতে পারে। বিভাজনের মাধ্যমেই হোক বা সম্মিলনের মাধ্যমেই হোক, নতুন ও পৃথক কোনও নৃগোষ্ঠী গঠিত হওয়ার ঘটনাটিকে "নৃগোষ্ঠীর উদ্ভব" (Ethnogenesis) বলা হয়।

নৃগোষ্ঠীর প্রকৃতি নিয়ে এখনও বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলমান। আদিমবাদীরা (Primordialists) নৃগোষ্ঠীগুলিকে একটি বাস্তব ঘটনা হিসেবে গণ্য করেন, যাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত টিকে আছে।[৭] এর বিপরীতে অন্য অনেক পণ্ডিত নৃগোষ্ঠীগুলিকে এক ধরনের সামাজিক নির্মিতি হিসেবে গণ্য করেন; তাদের মতে সমাজের প্রচলিত নিয়ম মেনে ব্যক্তির গায়ে এক ধরনের নৃগোষ্ঠীগত পরিচয় এঁটে দেওয়া হয়।[৮][৯]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: প্রধান পাতাবিশেষ:অনুসন্ধানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর২০২৪ আইসিসি পুরুষ টি২০ বিশ্বকাপকাজী নজরুল ইসলামবাংলাদেশ ডাক বিভাগশেখ মুজিবুর রহমানএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশছয় দফা আন্দোলনক্লিওপেট্রাবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০২৪আবহাওয়ামুহাম্মাদব্লু হোয়েল (খেলা)বাংলা ভাষাইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনবাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকাভারতভূমি পরিমাপবাংলা ভাষা আন্দোলনমহাত্মা গান্ধীমিয়া খলিফামৌলিক পদার্থের তালিকাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলপহেলা বৈশাখপদ্মা সেতুলোকসভা কেন্দ্রের তালিকামাইকেল মধুসূদন দত্তসুনীল ছেত্রীবাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তালিকাবিশেষ:সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহআসসালামু আলাইকুমপশ্চিমবঙ্গবাংলাদেশে পালিত দিবসসমূহশেখ হাসিনাবাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রীজয়নুল আবেদিন