তড়িৎ বিশ্লেষণ

তড়িৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরের উপায়

রসায়ন বিদ্যায় যখন কোন তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রাবনে দ্রবীভূত পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করা হয় তখন ঐ তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে নতুন রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়, এই পদ্ধতিকে তড়িৎ বিশ্লেষণ বা 'Electrolysis' বলে।[১] তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতি খনিজ পদার্থ থেকে বিভিন্ন ধাতু উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।[২] তড়িৎবিশ্লেষণে তড়িৎশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

ল্যাবরটরিতে তড়িৎ বিশ্লেষনের জন্যে ব্যবহার করা যন্ত্র।

ইতিহাস

কর্ম পদ্ধতি

তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কোন আয়নিক পদার্থের (তড়িৎ-বিশ্লেষ্য) দ্রবণ বা তার গলিত অবস্থার মধ্য দিয়ে সমক্ষ তড়িৎ প্রবাহ (Direct Current) পাঠালে তড়িৎদ্বারে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় এবং ঐ পদার্থের বিয়োজন হয়ে নতুন ধর্মের পদার্থ উৎপন্ন হয়। তড়িৎ-বিশ্লেষণের জন্যে প্রয়োজনীয় হলঃ

(১) তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ, (২) সমক্ষ তড়িৎ প্রবাহের উৎস এবং (৩) দুইটি তড়িৎদ্বার

ব্রাইনের তড়িৎবিশ্লেষণ। অ্যানোডে (A) ক্লোরাইড (Cl) জারিত হয়ে ক্লোরিন উৎপন্ন করে। ক্যাথোডে (C) জল বিজারিত হয়ে হাইড্রোক্সাইড এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে

উদাহরণ স্বরূপ, ব্রাইনের তড়িৎবিশ্লেষণে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপাদনের জন্য সোডিয়াম ক্লোরাইডের জলীয় দ্রবনকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করা হয়। ব্রাইনের সম্পৃক্ত দ্রবণকে একটি প্রকোষ্ঠে প্রেরণ করা হয় যেখানে ক্লোরাইড আয়ন অ্যানোডে জারিত হয়, ইলেকট্রন হারিয়ে ক্লোরিন গ্যাস তৈরী করেঃ

2Cl → Cl2 + 2e

ক্যাথোডে জল থেকে উৎপন্ন ধনাত্বক হাইড্রোজেন আয়ন হাইড্রোজেন গ্যাস এবং হাইড্রোক্সাইড আয়ন উৎপন্ন করেঃ

2H2O + 2e → H2 + 2OH

মেমব্রেন সেলের মেমব্রেনটি আয়ন ভেদী এজন্য একে আয়ন-এক্সচেঞ্জ মেমব্রেন বলে। এই মেমব্রেন সোডিয়াম আয়নকে (Na+) অপরপার্শ্বে যেতে দেয় যেখানে হাইড্রোক্সাইড আয়নের সাথে বিক্রিয়া করে কস্টিক সোডা (NaOH) প্রস্তুত করে। ব্রাইনের তড়িৎবিশ্লেষণের সামগ্রিক বিক্রিয়াটি নিম্নরূপঃ

2NaCl + 2H2O → Cl2 + H2+ 2NaOH

তড়িৎ বিশ্লেষণের সূত্রাবলী

ফ্যারাডের প্রথম সূত্র :

মাইকেল ফ্যারাডে 1832 সালে তার পরীক্ষা দ্বারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় যেকোন তড়িৎদ্বারে সংঘটিত রাসায়নিক পরিবর্তনের পরিমাণ অথবা কোন তড়িৎদ্বারে উৎপন্ন পদার্থের পরিমাণ তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত মোট তড়িতের সমানুপাতিক।[৫]

অর্থাৎ,

অথবা,

যেখানে, Z একটি স্থির সংখ্যা যা তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের ওপর নির্ভরশীল।

ফ্যারাডের দ্বিতীয় সূত্র

গলিত বা দ্রবীভূত বিভিন্ন তড়িৎ বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে একই পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ বা একই পরিমাণ বিদ্যুৎ আধান সমান সময়ের জন্যে প্রবাহিত করলে তবে তড়িৎ দ্বারে জমাকৃত বা দ্রবীভূত পদার্থের ভর ওই পদার্থ সমূহের তড়িৎ রাসায়নিক তুল্যাংকের সমানুপাতিক হবে।[৫]

ফ্যারাডের সুত্রের প্রযোজ্যতা ও প্রয়োগ

ফ্যারাডের তড়িৎ বিশ্লেষণের সূত্রাবলী কেবল মাত্র তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের ওপর প্রযোজ্য। তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের ভৌত অবস্থা গলিত বা দ্রবীভূত হওয়া আবশ্যিক। এই সূত্রগুলির ওপর চাপ, তাপমাত্রা এবং দ্রাবক এবং দ্রবনের ঘনত্ব কোন প্রভাব ফেলে না।[৬]

ফ্যারাডের সূত্রের সীমাবদ্ধতা

ফ্যারাডের সূত্রাবলী ইলেকট্রনীয় পরিবাহীর (যেমন, ধাতু) ওপর প্রযোজ্য নয়। একসঙ্গে একাধিক তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের উপস্থিতির ফলে একাধিক বিক্রিয়া সংঘটিত হলে গণনায় ত্রূটি দেখা দিতে পারে।[৬]

ব্যবহার

তড়িৎ বিশ্লেষণ মূলত ধাতু নিষ্কাশনে ব্যবহার হয়। অ্যালুমিনিয়াম, লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং কপার এই পদ্ধতিতে নিষ্কাশন করা হয়।[৭] বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ যেমন, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, সোডিয়াম ক্লোরেট, পটাশিয়াম ক্লোরেট, ট্রাই ফ্লুরো অ্যাসেটিক এসিড তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও ক্লোরিন এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদনে তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

এক ধাতুর ওপর আরেক ধাতুর প্রলেপ দেওয়ার জন্য তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।[৭]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ