তোলুই খান
তোলুই খান, (ধ্রুপদি মঙ্গোলীয়: ᠲᠥᠯᠦᠢ, মঙ্গোলীয়: Тулуй хаан, চীনা: 拖雷) (১১৯২-১২৩২) ছিলেন চেঙ্গিস খানের চতুর্থ ছেলে। ১২২৭ সালে চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর মঙ্গোলিয়ায় তিনি তার বাবার উত্তরাধিকারী হন। ওগেদাই খান সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় খাগান হওয়ার পূর্বে তিনি প্রশাসন পরিচালনা করেছেন। এর পূর্বে মঙ্গোলদের অভিযানে অংশ নিয়েছেন। মঙ্গোলিয়া ও ইলখানাতের সম্রাটদের অধিকাংশের তিনি সরাসরি পূর্বপুরুষ।
তোলুই খান | |||||
---|---|---|---|---|---|
মঙ্গোল সাম্রাজ্যের রাজপ্রতিভূ | |||||
রাজত্ব | ২৫ আগস্ট ১২২৭ – ১৩ সেপ্টেম্বর ১২২৯ | ||||
পূর্বসূরি | চেঙ্গিস খান | ||||
উত্তরসূরি | ওগেদাই খান | ||||
জন্ম | ১১৯২ | ||||
মৃত্যু | ১২৩২ মঙ্গোলিয়া | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | সোরগাগতানি বেকি | ||||
বংশধর | মংকে খান (১২০৯–১২৫৯) কুবলাই খান (১২১৫–১২৯৪) হালাকু খান (১২১৭–১২৬৫) আরিক বোকে (১২১৯–১২৬৬) | ||||
| |||||
রাজবংশ | বোরজিগিন | ||||
পিতা | চেঙ্গিস খান | ||||
মাতা | বোরতে |
তোলুই নিজে কখনো খাগান উপাধি ব্যবহার করেননি। তার ছেলে মংকে খান তাকে খাগান উপাধি দিয়েছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
চেঙ্গিস খানের উত্থানের সময় তোলুই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার মত বয়সে পৌছাননি। পাঁচ বছর বয়সে এক তাতার তাকে হত্যা করতে প্রায় সফল হয়েছিল। তার বোন আলতানি ও চেঙ্গিস খানের দুই সঙ্গী সেসময় তাকে বাঁচান।[১] তোলুই ও তার স্ত্রী সোরগাগতানি বেকির প্রথম পুত্র মংকে খান ১২০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তোলুই ১২১৩ সালে জিন রাজবংশের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই করেছেন।
১২২১ সালে চেঙ্গিস খান তাকে খোরাসান প্রেরণ করেন। নিশাপুরের প্রতিরক্ষাকারীরা তোলুইয়ের শ্যালক তোকুচারকে ১২২০ সালের নভেম্বরে হত্যা করেছিল। তোলুইয়ের নির্দেশে নিশাপুর ও মার্ভের সকল বাসিন্দাকে হত্যা করা হয়েছিল।[২]
চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকার
তোলুইয়ের উচ্চ সামরিক দক্ষতা ছিল এবং তিনি একজন সফল সেনাপতি ছিলেন। তবে তার বাবা চেঙ্গিস খান রাজনৈতিকভাবে অধিক সক্ষম ওগেদাই খানকে নিজের উত্তরসূরি মনোনীত করেছিলেন।
চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর তোলুই দুই বছর পর্যন্ত মঙ্গোল সাম্রাজ্যের তত্ত্বাবধান করেছেন। এসময় তার অধীনে কেন্দ্রীয় মঙ্গোলিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ ও শক্তিশালী বাহিনী ছিল। তোলুই নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী খাগানের ব্যাপারে সিদ্ধান্তের পক্ষপাতী ছিলেন। এতে চেঙ্গিস খানের ইচ্ছা অনুযায়ী ওগেদাই খাগান নির্বাচিত হন।
১২৩১-৩২ সালে তোলুই উত্তর চীনে ওগেদাইয়ের সাথে অভিযানে অংশ নিয়েছেন। জিন রাজধানী কাইফেঙে দুইটি বাহিনী প্রেরণ করা হয়েছিল। জিনদের অধিকাংশ প্রতিরক্ষা ভেদ করার পর তারা উত্তরে ফিরে আসেন।[৩]
মৃত্যু
দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অব দ্য মঙ্গোলস অনুযায়ী চীন অভিযানের সময় ওগেদাইয়ের রোগমুক্তির জন্য তোলুই নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। শামানরা জানিয়েছিলেন যে চীনের মাটি ও পানির প্রেতাত্মার কারণে ওগেদাই অসুস্থ হয়েছেন। তারা পরিবারের এক সদস্যকে উৎসর্গ করতে বলার পর তোলুইকে বিষাক্ত পানীয় পান করে নিজেকে উৎসর্গ করেন এবং ওগেদাই সুস্থ হন। তবে আতা-মালিক জুওয়াইনির মতে তোলুই অত্যধিক মদপানের কারণে মারা যান।[৪]
তোলুই ও তার নেস্টরিয়ান খ্রিষ্টান স্ত্রী সোরগাগতানি বেকির ছেলেরা হলেন মংকে খান, কুবলাই খান, আরিক বোকে ও হালাকু খান। প্রথম তিনজনের প্রত্যেকে খাগান খেতাব ধারণ করেছিলেন। অন্যদিকে হালাকু খান ইলখানাত প্রতিষ্ঠা করেন। কুবলাই খান চীনের ইউয়ান রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তোলুইয়ের ছেলে কুবলাই ও আরিক বোকের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় ভাঙ্গন ধরেছিল। পরবর্তী গৃহযুদ্ধে খানাতগুলি পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।
মংকে খান ১২৫২ সালে তার বাবাকে মরণোত্তর খাগান খেতাব দিয়েছিলেন।[৫] ১২৭১ সালে কুবলাই খান ইউয়ান রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করার পর তিনি দাপ্তরিক বিবরণে তার বাবা তোলুইকে রুইজং হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছেন। তোলুইয়ের বংশধররা ১৬৯১ সাল পর্যন্ত মঙ্গোলিয়া শাসন করেছেন।
পরিবার
তোলুইয়ের অনেক স্ত্রী ও উপপত্নী ছিল। তাদের মধ্যে সোরগাগতানি ছিলেন প্রধান। তিনি তোলুইয়ের চার শাসক পুত্রের মা। তোলুইয়ের ছেলেদের মধ্যে রয়েছেন মংকে খান, জুরিখা, কুতুগতু, কুবলাই খান, হালাকু খান, আরিক বোকে, বুজেক, মুখা, সাতুখতাই, সাবুখতাই।
বংশলতিকা
হোলান | ইয়েসুগেই | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোরতে | তেমুজিন (চেঙ্গিস খান) | হাসার | হাচিয়ান | তেমুগে | বেলগুতেই | বেহতের | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জোচি | চাগাতাই | ওগেদাই | তোলুই | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
- মংকে খান
- কুবলাই খান
- হালাকু খান
- ইউয়ান রাজবংশ
- ইলখানাত
তোলুই খান বোরগিজিন বংশ (১২০৬–১৬৩৫) জন্ম: ১১৯২ মৃত্যু: ১২৩২ | ||
শাসনতান্ত্রিক খেতাব | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী চেঙ্গিস খান | মঙ্গোল সাম্রাজ্যের রাজপ্রতিভূ ১২২৭–১২২৯ | উত্তরসূরী ওগেদাই খান |