দেনপাসার
দেনপাসার (বালীয়: ᬤᬾᬦ᭄ᬧᬲᬃ) ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ তথা বালি প্রদেশের রাজধানী এবং দ্বীপের প্রধান প্রবেশদ্বার। শহরটি ক্ষুদ্রতর সুন্দা দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য শহরের জন্যও একটি প্রসাশনিক কেন্দ্র।
দেনপাসার ᬤᬾᬦ᭄ᬧᬲᬃ | |
---|---|
শহর | |
দেনপাসার নগর কোটা দেনপাসার | |
নীতিবাক্য: ᬧᬸᬭᬟᬶᬧᬪᬭᬪᬯᬦ (বালীয়) পুরাডিপ ভর ভবন (রাজধানী দেশকে সমর্থন করে) | |
বালিদ্বীপে অবস্থান | |
বালিদ্বীপে অবস্থান##ক্ষুদ্রতর সুন্দা দ্বীপপুঞ্জতে অবস্থান##ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৮°৩৯′ দক্ষিণ ১১৫°১৩′ পূর্ব / ৮.৬৫০° দক্ষিণ ১১৫.২১৭° পূর্ব | |
রাস্ট্র | ইন্দোনেশিয়া |
অঞ্চল | ক্ষুদ্রতর সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ |
প্রদেশ | বালি |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৭৮৮ |
সরকার | |
• মেয়র | আই.জি. নগুরা জয় নেগারা |
• সহকারী মেয়র | আই কাদেক আগাস আর্য উইবাওয়া |
আয়তন | |
• শহর | ১২৭.৭৮ বর্গকিমি (৪৯.৩৪ বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ৭২৪ বর্গকিমি (২৮০ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ১,৭৪৯.৮৩ বর্গকিমি (৬৭৫.৬১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০২০) | |
• শহর | ৭,২৫,৩১৪ |
• জনঘনত্ব | ৫,৭০০/বর্গকিমি (১৫,০০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ১৭,৭৯,১২২ |
• মহানগর | ২২,৪৫,৬২০ |
• মহানগর জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৩০০/বর্গমাইল) |
[১][২] | |
জনতত্ত্ব | |
• জাতিগোষ্ঠী (২০১০) | বালীয় (৬৫.১৮%) যবদ্বীপীয় (২৫.৭৮%) চৈনিক (১.১৩%) সাসাক (১.০৫%) মাদুরা (০.৭৮%) সুন্দানি (০.৭০%) ফ্লোরেস (০.৫৩%) বাতাক (০.৪৩%) অন্যান্য (৪.৪২%)[৩][৪] |
• ধর্মবিশ্বাস (২০২০) | হিন্দু ৬৭.৩% ইসলাম ২২.৮% প্রোটেস্টান ৫.০৪% ক্যাথলিক ২.৩৬% বৌদ্ধ ২.৩৭% কনফুসীয়বাদ ০.০৩% অন্যান্য ০.০২% [৫] |
• ভাষা | ইন্দোনেশীয় (সরকারি) বালীয় (আঞ্চলিক) ইংরেজি (আন্তর্জাতিক) জাভাই (ঊনজন) |
সময় অঞ্চল | ইন্দোনেশিয়ার মধ্য সময় অঞ্চল (ইউটিসি+৮:০০) |
এরিয়া রোড | (+৬২) |
যানবাহন নিবন্ধন | ডিকে |
এইচডিআই | ০.৮৩৬ (অনেক বেশি) |
ওয়েবসাইট | denpasarkota.go.id |
বালিতে পর্যটন শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধির সাথে, ডেনপাসার ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং উদ্যোগকে উৎসাহিত ও প্রচার করেছে, যা সংশ্লিষ্ট খাতে বালি প্রদেশে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ২০২০ সালের সর্বশেষ জনগণনায় দেনপাসারের জনসংখ্যা ছিল ৭,২৫,৩১৪ জন,[৬] যেখানে ২০১০ সালের জনগণনায় শহরটির জনসংখ্যা ছিল ৭,৮৮,৪৪৫ জন। আপাতভাবে জনসংখ্যা হ্রাস মনে হলেও ঘটে যাওয়া মহামারীর কারণে ২০১৫ সালে ৮,৭৯,০৯৮ জন বসতি স্থাপন করলেও তা কমে যায়। ২০২০ সালেই দেনপাসার মহানগর অঞ্চলের (সারবাগিতা নামে পরিচিত) জনসংখ্যা ছিল ২৩,৮৮,৬৮০ জন। মহামারী ও ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধি নিষেধের কারণে আনুমানিক এই শহরের জনসংখ্যা ২০২২ সালে কমে ৬,৫৩,১৩৬ জন মতো হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান।
নামকরণ
দেনপাসার (মূল প্রতিবর্ণী দেন্পসর্) শব্দটি এলেছে দুটি বালীয় শব্দ থেকে, যার "দেন্" শব্দের অর্থ উত্তর এবং "পসর্" শব্দের অর্থ বাজার। নামের এই ইতিহাস থেকে শহরটির উৎস সম্বন্ধে আন্দাজ পাওয়া যায়। বর্তমানে শহরের উত্তর দিকে যেই বাজারটি রয়েছে তার নাম কুম্বাসারি মার্কেট (পূর্বনাম "পেকেন পায়ুক")।[৭]
ইতিহাস
ঔপনিবেশিক যুগ
অষ্টাদশ এবং উনবিংশ শতাব্দীতে দেনপাসার ছিল বাদুঙের হিন্দু মজাপহিৎ বা বিল্বতিক্ত রাজত্বের রাজধানী।[৮] একারণে শহরটির পুরাতন নাম ছিল বাদুং। ১৯০৬ সালে ওলন্দাজরা বালির রাজনিবাসে লুঠপাট ও ভাঙচুর চালায়। ওলন্দাজদের লুঠতরাজের বিরুদ্ধে হাজার বালীয় মানুষ এবং রাজ পরিবারের সদস্যগণ নতি স্বীকার করার বিপরীতে গণ আত্মহত্যাক তথা স্থানীয় ভাষায় পুপুতানকে বেছে নেন। ১৯০৬ শালীর এই স্মৃতিকে স্মরণ করে দেনপাসারের সেন্ট্রাল স্কোয়ারে শহীদদের উদ্দেশ্যে তামান পুপুতান স্মৃতিসৌধ রয়েছে।[৯]
স্বাধীনতা কাল
১৯৫৮ সালে দেনপাসারে বালি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় সরকারি কার্যালয় স্থাপন হয়। পরে এটি বাদুং রিজেন্সি ও দেনপাসার শহরাঞ্চল উভয়েরই সদর দপ্তরে পরিণত হয়।
দেনপাসার ও বাদুং রিজেন্সি উভয়ই খুব দ্রুত প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বৃদ্ধি চাক্ষুষ করেছে।[১০] দেনপাসার শুধুমাত্র সরকারের দপ্তরের প্রশাসনিক স্থান নয়, বাণিজ্য, শিক্ষা, শিল্প এবং পর্যটনের কেন্দ্রও হয়ে উঠেছে।[১০]
বার্ষিক গড় ৪.০৫% জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে দ্রুত উন্নয়নের পথে বিভিন্ন ধরনের শহুরে সমস্যা দেখা দেয়। পরে বাদুং রিজেন্সি থেকে ডেনপাসারকে প্রশাসনিকভাবে আলাদা করে দেওয়ার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান শহুরে সম্প্রদায়ের চাহিদা এবং চাহিদা মেটানো সর্বোত্তমভাবে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়।[১০]
দেনপাসারের মর্যাদা একটি স্বায়ত্তশাসিত শহরের হিসাবে উন্নীত করার জন্য ১৯৯২ সালের ১৫ই জানুয়ারি একটি চুক্তি করা হয়েছিল, যা ১৯৯২-এর ১নং আইন নামে পরিচিত। এর ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে দেনপাসার শহর প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। ১৯৯২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর সূচনা করেন।[১০]
২০০৯ সালের ১৬ই নভেম্বর প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের সময়ে রেগুলেশন নং ৬৭ দ্বারা দেনপাসার কিছু এলাকা বাদুঙে যুক্ত করে মাঙ্গুপুরাকে বাদুং রিজেন্সির সদরে পরিণত করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ভুগোল
দেনপাসার শহরটি সমুদ্র তল থেকে ৪ মি (১৩ ফু) উচ্চতায় অবস্থিত। শহরের ক্ষেত্রফল ১২৭.৭৮ বর্গ কিলোমিটার, যা সমগ্র বালি প্রদেশের ক্ষেত্রফলের ২.১৮ শতাংশ। জমির ২,৭৬৮ হেক্টর ধানী জমি, ১০,০০১ হেক্টর জমি শুষ্ক ও ঊষর আবার ৯ হেক্টর জমি অন্যান্য কাজে ব্যবহার হয়।
বাদুং নদী দেনপাসার শহরকে বিভক্ত করে বেনোয়া উপসাগরে পতিত হয়।[১১]
আবহাওয়া
নিরক্ষরেখার ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত ডেনপাসারে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমী জলবায়ু (কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিভাগ: Am) অঞ্চলের অন্তর্গত। এখানে সারা বছর উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া থাকে। এই কারণে, সারা বছর তাপমাত্রার পরিবর্তন খুব সামান্য হয়, গড় তাপমাত্রা প্রায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে। বছরে দুটি ঋতু দেখা যায়, যথা আর্দ্র এবং শুষ্ক। আর্দ্র ঋতু মোটামুটি নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত স্থায়ী হয়, আবার শুষ্ক ঋতু জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
দেনপাসার, বালি-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩০.৮ (৮৭.৪) | ৩১.০ (৮৭.৮) | ৩১.২ (৮৮.২) | ৩১.৭ (৮৯.১) | ৩১.৫ (৮৮.৭) | ৩০.৭ (৮৭.৩) | ২৯.৯ (৮৫.৮) | ৩০.২ (৮৬.৪) | ৩০.৯ (৮৭.৬) | ৩১.৪ (৮৮.৫) | ৩১.৬ (৮৮.৯) | ৩১.৩ (৮৮.৩) | ৩১.০ (৮৭.৮) |
দৈনিক গড় °সে (°ফা) | ২৬.৯ (৮০.৪) | ২৭.০ (৮০.৬) | ২৭.০ (৮০.৬) | ২৭.১ (৮০.৮) | ২৬.৮ (৮০.২) | ২৬.০ (৭৮.৮) | ২৫.৬ (৭৮.১) | ২৫.৮ (৭৮.৪) | ২৬.৩ (৭৯.৩) | ২৬.৯ (৮০.৪) | ২৭.২ (৮১.০) | ২৭.২ (৮১.০) | ২৬.৭ (৮০.০) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ২৩.১ (৭৩.৬) | ২৩.১ (৭৩.৬) | ২২.৯ (৭৩.২) | ২২.৫ (৭২.৫) | ২২.২ (৭২.০) | ২১.৪ (৭০.৫) | ২১.৪ (৭০.৫) | ২১.৪ (৭০.৫) | ২১.৮ (৭১.২) | ২২.৫ (৭২.৫) | ২২.৯ (৭৩.২) | ২৩.১ (৭৩.৬) | ২২.৪ (৭২.২) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ৩২৩ (১২.৭) | ২৫১ (৯.৯) | ১৯৯ (৭.৮) | ৮৯ (৩.৫) | ৮৬ (৩.৪) | ৭৫ (৩.০) | ৬৭ (২.৬) | ৪৭ (১.৯) | ৪৬ (১.৮) | ১১৭ (৪.৬) | ১৬২ (৬.৪) | ২৭৯ (১১.০) | ১,৭৪১ (৬৮.৬) |
মাসিক সূর্যালোক ঘণ্টার গড় | ১৭৩.১ | ১৭৪.০ | ২১০.৭ | ২২৪.৭ | ২৪২.৯ | ২২৮.১ | ২৪৬.৮ | ২৬১.৭ | ২৫১.৩ | ২৫২.৫ | ২২৪.৪ | ১৭৬.৪ | ২,৬৬৬.৬ |
অতিবেগুনী সূচকের গড় | ১৩ | ১৩ | ১৩ | ১৩ | ১১ | ৯ | ৯ | ১২ | ১৩ | ১৩ | ১৩ | ১৩ | ১২ |
উৎস ১: [১২] | |||||||||||||
উৎস ২: WeatherOnline (2000 - 2019 sunshine data)[১৩] |
জনতত্ত্ব
শহরের জনসংখ্যা ২০১০ সালে ৭,৮৮,৪৪৫ জন গণনা করা হয়েছিল, যা আগের দশকে ৫,৩৩,২৫২ ছিল। প্রাদেশিক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এর জনসংখ্যা ৮,৯৭,৩০০ জন তালিকাভুক্ত হয়।[১]
২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেনপাসারের জনসংখ্যা প্রতি বছর প্রায় ৪% হারে বৃদ্ধি পেলেও ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের বৃদ্ধি আগের পাঁচ বছরে থেকেও দ্রুত হারে ছিল। ২০০২ সালের বালি বোমা হামলার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে সেখানকার পর্যটন, চাকরি, এবং অন্যান্য দ্বীপ থেকে অভিবাসনের উপর। তবে বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকলে ডেনপাসার সহজেই পরবর্তী জনগণনায় এক মিলিয়নের অধিবাসীর গণ্ডি অতিক্রম করবে, তা প্রত্যাশিত। ডেনপাসারে নারীদের তুলনায় প্রায় ৪.৫৭% বেশি পুরুষ রয়েছেন। ২০১৫ সালের ইন্টারসেনসাল সার্ভে (সাপস) অনুযায়ী শহরের তৎকালীন জনসংখ্যা ছিল ৮,৭৯,০৯৮।[১৫]
শহরের প্রায় ৬৩.৩% মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, যেখানে ২৮.৬৫% ইসলাম, ৬.৪৫% খ্রিস্টান, ১.৪৭% বৌদ্ধ এবং ০.০৩% কনফুসীয়বাদ ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।[৫]
প্রশাসন
প্রশাসনিকভাবে, নগর প্রশাসন চারটি জেলায় বিভক্ত রয়েছে, রয়েছে ২০৯ টি গ্রামের ও ৪৩ টি উপজেলা। জনসাধারণের প্রতি পরিষেবা উন্নত করার জন্য দেনপাসার পুর প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন।[১৬]
জেলা
দেনপাসার চারটি জেলায় বিভক্ত, ২০১০ সালের জনগণনা অনুসারে এগুলি নিম্নরূপ:[১৭]
- দেনপাসার সেলাতান (দক্ষিণ দেনপাসার) ২,৪৪,৮৫১
- দেনপাসার তিমুর (পূর্ব দেনপাসার) ১.৩৮,৪০৪
- দেনপাসার বারাত (পশ্চিম দেনপাসার) ২,২৯,৪৩৫
- দেনপাসার উতারা (উত্তর দেনপাসার) ১,৭৫,৮২৯
বৃহত্তর দেনপাসার
বৃহত্তর দেনপাসার একাধিক পর্যটন অঞ্চলে বিভক্ত এর মধ্যে দুটি হল কুটা ও উবুদ। ক্রম বর্ধমান নগরায়ণের ফলে পেটাং জেলা বাদে বাদুং রিজেন্সির সমগ্র, পায়াঙ্গান বাদে গিয়ানিয়ার রিজেন্সির অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে তৈরি এই ক্ষেত্রটি দেনপা"সার", "বা"দুং, "গি"য়ানিয়ার, "তা"বানান থেকে সারবাগিতা নাম পেয়েছে। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল রেগুলেশন নাম্বার ৪৫ এর অধীনে এই নামটিকে সরকারি তকমা দেওয়া হয়।[১৮] যদিও তাবানান পুরোপুরিভাবে নগরায়িত হয়নি।
প্রশাসনিক বিভাগ | ক্ষেত্রফল (বর্গ কিলোমিটার) | জনসংখ্যা (২০১০ জনগণনা) | জনঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে) |
---|---|---|---|
দেনপাসার পৌরসভা | ১২৩.৯৮ | ৭,৮৮,৪৪৫ | ৬,৩৫৯.৪৫ |
বাদুং রিজেন্সি | ৪১৮.৫২ | ৫,৪৩,৩৩২ | ১,২৯৩.৩৭ |
গিয়ানিয়ার রিজেন্সি | ৩৬৮.০০ | ৪,৭০,৩৮০ | ১,২৭৮.২১ |
দেনপাসার মহানগর | ৯১০.৫০ | ১৮,০২,১৫৭ | ১,৯৭৯.৩০ |
তাবানান রিজেন্সি | ৮৩৯.৩৩ | ৪,২০,৯১৩ | ৫০১.৪৯ |
দেনপাসার সম্প্রসারিত মহানগর (সারবাগিতা) | ১,৭৪৯.৮৩ | ২২,২৩,০৭০ | ১,২৭০.৪৫ |
অর্থনীতি
পর্যটনের বিকাশ এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়ন দেনপাসারের অর্থনীতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। ব্যবসা, হোটেল এবং রেস্তোরাঁর প্রাধান্য শহরের মোট আঞ্চলিক দেশীয় পণ্যের (গ্রস রিজিওনাল ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) উৎস।[১৯]
এছাড়াও স্মারক খোদাই এবং ভাস্কর্যের মতো কারুশিল্পের সামগ্রীর উৎপাদন দেনপাসারের অর্থনীতিকে পরিপুষ্ট করে। বৈশ্বিক আর্থিক সংকট এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া ও চীনের মতো অন্যান্য এশীয় উন্নয়নশীল দেশগুলির প্রতিযোগিতার প্রভাবের কারণে কারুশিল্প বর্তমানে চাপের সম্মুখীন হচ্ছে৷ এই প্রতিযোগী দেশগুলি শিল্প প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের উৎপাদনের মাত্রা সর্বাধিক করে তুললেও দেনপাসারে কারুশিল্প উৎপাদনের পরিমাণ সীমিত করে ঐতিহ্যগত দক্ষতা এবং হাতে তৈরি পণ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়।
স্থাপত্য সজ্জা
বালি একসময় কাদামাটির দেয়াল এবং খড়ের গেটের জন্য পরিচিত ছিল কিন্তু বর্তমানে এর প্রচলন কমে গেলেও আবাসিক উন্নয়ন এবং দোকান ঘরে এই ধরনের সাজই এখন বালির শহুরে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য।[২০]
উনিশ শতকের শেষের দিকে শহরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে শহরের পারিপার্শ্বিক নির্মিত হয়েছিল ফলে তৎকালীন শাসক পরিবারের বাসভবন বর্তমান শহরের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়।[২১]
মার্কেট স্কোয়ারগুলি বাদুং রাজত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি যখন বালিতে নিয়ন্ত্রণ করতে আসা শুরু করে তখন এগুলির রাজত্বের রশি ধরে রেখেছিল। বিংশ শতকের দিকে দেনপাসার রাজনৈতিক পরিবর্তনের দ্বারা সৃষ্ট শহুরে পরিবেশ পরিবর্তনের সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়েছিল। ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা এখানে যে উন্নয়ন হয়েছিল তা বালির আদিবাসী সংস্কৃতির পরিপন্থী তথা ক্ষয়কারী হিসাবে গণ্য করা হয়। দেনপাসার 'ঔপনিবেশিক নগরী' হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও পুরাতন সংস্কৃতির প্রতি তাদের প্রবল টান রয়েই যায়।[২২]
একাদশ শতাব্দীতে দেনপাসারে ব্যাপকভাবে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হয়। পর্যটনের সম্প্রসারণের কারণে শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্রমবর্ধমান আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় বহু অত্যাধুনিক নির্মাণও করা শুরু হয়। তা সত্ত্বেও, মার্কেট স্কোয়ার ও তার সম্মুখভাগের প্রবেশ পথ বালীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
পর্যটন
দেনপাসারের বিভিন্ন আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। দ্বীপ জুড়ে সাদা বালুকাময় সৈকত সুপরিচিত। সেরাঙ্গান দ্বীপ হল বালির অন্যতম সার্ফিং করার সমুদ্র সৈকত। সানুর সৈকতে শান্ত জল ও সূর্যস্নান দৃশ্য কাইটসার্ফিংয়ের জন্য চমৎকার।
নাগুরাহ রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে কুটা শহর অবস্থিত (বাদুং রিজেন্সির মধ্যে ও প্রশাসনিকভাবে শহরের এলাকাভুক্ত নয়), যেখানে পর্যটকদের জন্য অনেক হোটেল, রেস্তোঁরা, মল, ক্যাফে, মার্কেটপ্লেস এবং স্পা রয়েছে। দেনপাসার এলাকার স্থানীয় দোকানগুলিতে সমস্ত ধরনের বালীয় হস্তশিল্প উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শিল্পকর্ম, মৃৎশিল্প, টেক্সটাইল এবং রৌপ্যকর্ম। সমগ্র দেনপাসার জুড়ে বাটিক কাপড় তথা বাটিক সারং এবং পুরুষদের শার্ট সহজলভ্য।
শহরে ও আশেপাশে কিছু উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হল,
- তানাহ লোত
- বজ্র সন্ধি স্মারক
- সিন্ধু মার্কেট
- মিউজিয়াম লে মাইউর
- ওয়ের্ধি বুদায়া আর্ট সেন্টার
- সেমারা সমুদ্র সৈকত
- সানুর সমুদ্র সৈকত
- সাকেনান মন্দির
- পুরা আগুং জগন্নাথ
- বালি মিউজিয়াম
- বাদুং মার্কেট
- বাতুবুলান ট্র্যাডিশনাল ভিলেজ
- বালি ওয়েক পার্ক
- নুংনুং জলপ্রপাত
- টার্টেল কনজারভেশন এন্ড এডুকেশন সেন্টার
- বিগ গার্ডেন কর্নার
- পুরা তীর্থ এম্পুল সেগারা মের্তাসারি
- পুরা তামান সরস্বতী
- বালি পাখিরালয়
- লাপাঙ্গান পুপুতান বাদুং
- গ্রাউন্ড জিরো মেমোরিয়াল
- আপ সাইড ডাউন ওয়ার্ল্ড মিউজিয়াম
- আর্ট মার্কেট কুম্বসারি
- কের্তালাঙ্গু
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
দেনপাসারের কিছু উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হল,
- উদয়ন বিশ্ববিদ্যালয়
- বার্মাদেব বিশ্ববিদ্যালয়
- ইউনিভার্সিটি অব ন্যাশনাল এডুকেশন
- দ্বিজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
- মহাসরস্বতী ইউনিভার্সিটি অব দেনপাসার
- ইন্দোনেশিয়ান ইনস্টিটিউট অব দ্য আর্টস, দেনপাসার
পরিবহন
আকাশপথ
দেনপাসার শহরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর নাগুরাহ রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। [২৩]
সমুদ্রপথ
বেনোয়া পোতাশ্রয় হল সমুদ্রপথে দেনপাসারের প্রবেশদ্বার এবং বর্তমানে এটি পিটি পেলিণ্ডো ৩ দ্বারা পরিচালিত হয়।[২৪] ১৯২৪ সাল থেকে কার্যকর এই বন্দরটি সিটি সেন্টার থেকে দশ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
স্থলপথ
দেনপাসারে জন পরিবহন বিশেষ করে নগর পরিবহন পরিষেবা অকার্যকর হয়ে উঠছে এবং ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩০% যানবাহন চালু আছে।[২৫] জন পরিবহন শহরে ততটাও জনপ্রিয় নয়, বরং জনসংখ্যার মাত্র ৩% মানুষই এর নিয়মিত উপভোক্তা।[২৬] উল্টোদিকে, ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকানার বৃদ্ধির হার প্রতি বছর ১১% এবং নতুন রাস্তা নির্মাণের সাথে এই পরিসংখ্যান তুলনা করার যোগ্য না। এই কারণে দেনপাসার শহরে যানজট অনিবার্য।
২০১১ সালের আগস্ট থেকে শহরটিতে ট্রান্স সারবাগিতা নামে একটি দ্রুত বাস পরিষেবা পদ্ধতি পরিচালনা করা হচ্ছে। দুটি প্রধান পথ এবং কিছু ফিডার পথে প্রতিদিন সকাল ৫ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত বাস পরিচালিত হয়। বাসগুলির জন্য কোনও নির্দিষ্ট লেন নেই, এরা প্রধান রাস্তায় চলে। ২০১২ সালে প্রতিদিন গড়ে ২,৮০০ জন যাত্রী এই পরিষেবাটি ব্যবহার করতেন।[২৭]
- কোরিডর ১ কোটা–জিডব্লিউকে
- কোরিডর ২ কোটা–নুসা দুয়া
কেন্দ্র সরকারের পরিবহন দপ্তর ২০২০ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর তারিখে ট্রান্স মেট্রো দেওয়াতা দেবতা নামে একটি নতুন প্রকল্প শুরু করে দিয়েছে। শহরের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চাহিদার কথা বিবেচনা করে ব্যবস্থাটি পাঁচটি আলাদা আলাদা কোরিডরে আলাদা লেন ছাড়াই পরিবহন পরিষেবা দিচ্ছে।[২৮] [২৯]
- কোরিডর ১ (কে১বি): সেন্ট্রাল পার্কির কুটা বাদুং – টার্মিনাল পেশিয়াপান তাবানান
- কোরিডর ২ (কে২বি): জিওআর নাগুরাহ রাই – বন্দর নাগুরাহ রাই
- কোরিডর ৩ (কে৩বি): টার্মিনাল উবুং – পান্তাই মাতাহারি টার্বিট
- কোরিডর ৪ (কে৪বি): টার্মিনাল উবুং – সেন্ট্রাল পার্কির মাংকি ফরেস্ট
- কোরিডর ৫ (কে৫বি): সেন্ট্রাল পার্কির কুটা বাদুং–টার্মিনাল উবুং
সড়ক ব্যবস্থার দুটি বড় ধরনের উন্নয়ন সম্পন্ন হয় ২০১৩ সালে। আগস্ট মাসে রুসি মোড়ে একটি আন্ডারপাস খোলা হয়। এটি দেনপাসারের সীমানার কিছুটা বাইরে হলেও ডেনপাসারের ট্রাফিকের উপর প্রত্যাশিত ইতিবাচক প্রভাবের কারণে শহর দ্বারা সহ-অর্থায়ন করা হয়েছিল।[৩০]
তারপর ১লা অক্টোবরে চার লেনের বালি মান্দারা টোল রোড খুলে দেওয়া হয়, যা বেনোয়া পোতাশ্রয়, নগুরা রাই বিমানবন্দর এবং নুসা দুয়াকে সংযুক্ত করে।
ক্রীড়া
দেনপাসারে অসংখ্য আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা করেছে। বালিতে ২০০৮ সালে এশিয়ান বিচ গেমসের স্থান ছিল তার রাজধানী দেনপাসারেই। দেনপাসারে ২০০৯ সালে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপও আয়োজন করা হয়েছে।
ফুটবলের ক্ষেত্রে দেনপাসার হল ফুটবল ক্লাব পার্সেডেন ডেনপাসারের হোমফিল্ড, এই দলটি লিগা ৩-এ অংশগ্রহণ করে।[৩১]
সংস্কৃতি ও দর্শনীয় স্থান
দেনপাসারে শিল্প ও সংস্কৃতি হিন্দু শিল্প ও সংস্কৃতির সমার্থক হলেও সেখানে অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতির সংস্কৃতির সাথে বেশ ভালো মিলমিশ রয়েছে, যা বিভিন্ন চিন্তাধারার দর্শনার্থীদের এক সূত্রে বেঁধেছে। হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান দ্বারা অনুপ্রাণিত ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ এখনও শহরটিকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করে।[৩২]
ঐতিহ্যবাহী বালীয় সংস্কৃতি এখনও দেনপাসারের জনগণের মনে গভীরভাবে প্রোথিত। এটি পুরুষতান্ত্রিক আত্মীয়তা ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে সমাজে মূল্যবোধ, নিয়ম এবং আচরণ পরিবাহিত করে। তবে সময়ের সাথে সাথে অনেক প্রথাগত আইন মানুষের দ্বারা বিতর্কিত রূপ পেয়ছে, বিশেষ করে লিঙ্গ এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়।[৩৩]
দেনপাসারে দর্শনীয় স্থান হল:
- পুরা জগন্নাথ এটি দেনপাসারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু মন্দির। ১৯৫৩ সালে এটি নির্মাণ করা হয়।[৩৪]
- পুরী পেমেকুটান হল দেনপাসারের প্রাক্তন রাজপ্রাসাদ, যেটি ১৯০৬ সালে বালিতে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপের সময় আগুনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। প্রাসাদটি তুলনামূলকভাবে শালীন শৈলীতে পুনর্নির্মিত হয়েছিল এবং এটি পরিদর্শন করা যেতে পারে।[৩৫]
- পুরা মোয়াসপহিৎ হল চতুর্দশ শতকে নির্মিত একটি হিন্দু মন্দির যা, ১৯১৭ সালের বালি ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং পরে পুনর্নির্মিত হয়েছিল।[৩৬] মন্দিরটিতে একটি গরুড় এবং রহস্যময় দৈত্য বাটারা বায়ুর দুটি চিত্তাকর্ষক মূর্তি রয়েছে।
- সেন্ট জোসেফ চার্চ হল হিন্দু পদ্ধতিতে তৈরি একটি রোমান ক্যাথলিক গির্জা।
- দেনপাসার শহর ভ্রমণ (সিটি ট্যুর) [১] - বালির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক এবং সমসাময়িক উভয় ক্ষেত্রেই গভীরভাবে মজে যাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কোন উপায় নেই।
- বজ্র সন্ধি স্মৃতিস্তম্ভ [২] রেনন স্কোয়ারের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত ডেনপাসারের একটি প্রধান ল্যান্ডমার্ক (স্থানীয়ভাবে 'পুপুতান রেনন' নামে পরিচিত)। স্থানটি বালি প্রশাসনিক অফিসের সংলগ্ন এবং এর বিশাল কাঠামোর সাথে একজন বালীয় হিন্দু পুরোহিতের প্রার্থনার ঘণ্টা বা 'বাজ্র'-এর মতো আকারে অবয়ব রয়েছে। এর ভিতরে একটি যাদুঘর রয়েছে যা স্বাধীনতার জন্য জনগণের অতীত সংগ্রামের বিভিন্ন ঐতিহাসিক কার্যক্রম প্রদর্শন করে।
যাদুঘর
বালি যাদুঘর বালীয় শিল্পপদ্ধতি ও বালির ইতিহাসের পৃষ্ঠপোষকতা করে। যাদুঘরটি ঐতিহাসিক বালীয় পদ্ধতিতে তৈরি। যাদুঘরের ভেতর চারটি মূল ভবন রয়েছেযার প্রতিটির অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে।[৩৭]
- বালির রীতিনীতি
- বালি যাদুঘর
- হিন্দু মন্দির পুরা মাওসপহিৎ
- পুরী পেমেকুটান রাজপ্রাসাদ
- সেন্ট জোসেফ রোমান ক্যাথলিক গির্জা
ভগিনী শহর
দেনপাসারের ভগিনী শহরগুলি হল:
আরও দেখুন
- বালি যাদুঘর
- নাগুরাহ রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
- ইন্দোনেশিয়ার যমজ নগর ও ভগিনী শহরগুলির তালিকা