বক্ষবন্ধনী

একপ্রকার অন্তর্বাস

বক্ষবন্ধনী বা কাচুলি বা ব্রা হল নারীদের অন্তর্বাস যা তাদের স্তনযুগল সঠিক স্থানে রাখতে সহায়তা করে। স্তনের আকারে তৈরী দুটি অর্ধ গোলাকসম বস্ত্রখণ্ডকে একপ্রস্থ ফিতার সাহায্যে কাঁধ থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় এবং আরেক খণ্ড ফিতে দিয়ে পিঠ পর্যন্ত টানা দেয়া হয়।

বক্ষবন্ধনীর সম্মুখভাগ
বক্ষবন্ধনীর পশ্চাৎভাগ
বক্ষবন্ধনী পরিহিত জাপানি নারী

বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে বক্ষবন্ধনী বিভিন্ন বৈচিত্রময়; শুধুমাত্র নারীরা তাদের স্তন সমর্থনের জন্যই নয়, ফ্যাশন পণ্য হিসেবেও তারা এর বিকাশ ঘটিয়েছে। কিছু পোশাক, যেমন ক্যামিসোল, ট্যাংক টপ এবং পশ্চাতবিহীন পোশাকে সন্নিবেশিত স্তন সমর্থনের ব্যবস্থা রয়েছে, যা আলাদা বক্ষবন্ধনী পরিধানের প্রয়োজনীয়তা লাঘব করে।

স্তন অবধারণের প্রাথমিক উপযোগিতা ছাড়িয়ে বক্ষবন্ধনী নারীত্বের সাংস্কৃতিক প্রতীক হয়ে উঠেছে। কিছু নারীবাদী,[১] নারীর অবদমিত কামনা-বাসর প্রতীক হিসেবেও বক্ষবন্ধনী বিবেচনা করে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

নামকরণের ব্যুৎপত্তি

বক্ষবন্ধনীর ইংরেজি "brassiere" (ইউকে: /ˈbræzɪər/ বা ইউএস: /brəˈzɪər/) শব্দটি সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা হয় ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে।[টীকা ১] সংক্ষেপে ও সাধারণত এটি ব্রা /ˈbrɑː/ নামেই উল্লেখিত।যদিও ফরাসী ব্রেসিয়ার শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল বাহুরক্ষক। প্রতিদিন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মহিলা যে অন্তর্বাসটি পরিধান করে থাকেন, ইংরিজিতে যার নাম ব্রাসিয়ের কিংবা ব্রা, সেই বক্ষবন্ধনীর পেটেন্ট নথিভুক্ত করা হয় ১২ই ফেব্রুয়ারি ১৯১৪ তারিখে৷[২]

ইতিহাস

২০ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বক্ষবন্ধনী প্যাকেজ। মুসিও দেল অবজিতো দেল অবজেতো সংগ্রহ থেকে।

প্রাচীন গ্রীসে নারীর স্তনযুগল সমর্থন করতে একটি বিশেষ পোশাক পরিধানের নকশা করা হয়েছিল। নারীরা অ্যাপোডিসমোস (গ্রিক: ἀπόδεσμος[৩]), পরবর্তীতে stēthodesmē (Gr: στηθοδέσμη[৪]), মাসটোডিসমোস (Gr: μαστόδεσμος[৫]) এবং মাসতোডিটন (Gr: μαστόδετον[৬]), সবগুলোর অর্থ "স্তন-বন্ধনী", উল বা লিনেনের একটি বন্ধন যা স্তনযুগল আড়াঅড়িভাবে মুড়ে রাখতো এবং পেছন থেকে বেঁধে রাখতো। ষোড়শ শতক থেকে পাশ্চাত্যের ধনী নারীরা অন্তর্বাস হিসাবে করসেট ব্যবহার করতেন যা মূলত স্তনযুগলকে উপরের দিকে তুলে রাখতে সাহায্য করত।

উদ্দেশ্য

নারীরা বহু কারণে বক্ষবন্ধনী পরিধান করে – এগুলোর মধ্যে রয়েছে আরামপ্রদতা, দৃষ্টিগোচরতা, বা সামাজিক চাহিদা মেনে চলা। কিছু বক্ষবন্ধনী স্তনযুগলের আকৃতি বৃদ্ধি করতে নকশা করা হয়ে থাকে, তবে অধিকাংশই সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নকশা করা হয়। অন্যান্য অন্তর্বাস নার্সিং বা অনুশীলনের জন্য নকশা করা হয়ে থাকে।

কাঠামো ও আকার

বক্ষবন্ধনীর কাঠামো মূলতঃ এই যে, নারীস্তনের আকারে তৈরী দুটি অর্ধ গোলাকসম বস্ত্রখণ্ডকে একপ্রস্থ ফিতার সাহায্যে কাঁধ থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় এবং আরেক খণ্ড ফিতা দিয়ে পিঠ পর্যন্ত টানা দেয়া হয়। ফিতায় ইলাস্টিক ব্যবহার করা হয় যাতে টানায় কিছুটা চাপ থাকে এবং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বক্ষবন্ধনী থেকে স্তন অবমুক্ত না হয়ে যায়। যেহেতু নারীস্তন ছোট-বড় বিভিন্ন নানা আকৃতির হয়ে থাকে তাই অর্ধ গোলকের আকারও ছোট-বড় করা হয়। অন্যদিকে ফিতার মাপ বক্ষপিঞ্জরের মাপ অনুযায়ী হ্রস্ব অথবা দীর্ঘ হয়ে থাকে। বক্ষপিঞ্জর বরাবর আটকে রাখার ফিতা পেছন পৃষ্ঠদেশে বাকল বা হুক দিয়ে সংযুক্ত করার ব্যবস্থা থাকে।

বক্ষবন্ধনী আকারের বিভিন্নতা

বক্ষবন্ধনীর আকার পরিমাপের দুটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত বক্ষপিঞ্জরের প্রশস্ততা অনুযায়ী আকার যা ইঞ্চি বা সেন্টিমিটারে পরিমাপ করা হয়। দ্বিতীয়তঃ স্তনের আকার অনুযায়ী আকার বা ‘কাপ সাইজ’ যা A, B, C, D ইত্যাদি দিয়ে নির্দেশ করা হয়। বিভিন্ন দেশে বক্ষবন্ধনীর কতিপয় আকার পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে।[৭] অধিকাংশ বুকের পরিপাশ্বিক অবস্থার দিক থেকে পরিমাপ পদ্ধতি এবং কাপের আকার এ-বি-সি+ ব্যবহার করে থাকে, কিন্তু সেখানে কিছু গুরত্বপূর্ণ পার্থক্য বিদ্যমান। অনেক বক্ষবন্ধনী সচরাচর ৩৬ আকার পর্যন্ত সহজলভ্য হয়ে থাকে,[৮] কিন্তু বক্ষবন্ধনী লেবেলকরণ পদ্ধতি ব্যবহার বিশ্বজুড়ে বিভ্রান্তিকর এবং দ্বন্ধসৃষ্টিকারী। কাপ এবং ব্যান্ডের আকৃতি বিশ্বজুড়েই শুধু্ হেরফের হয় না, একই দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যেও এর অমিল দেখা যায়।

বক্ষবন্ধনীর প্রকারভেদ

স্বাস্থ্যগত বিষয়

ব্রা এর স্বাস্থ্যগত সমস্যা বলতে তেমন কিছু নেই। তবে কেউ কেউ মত প্রদান করে থাকেন যে ঘুমানোর সময় ব্রা পড়া অনুচিত। বেশি সময় ধরে ব্রা পড়ে থাকলে ঘামের কারণে চুলকানি জাতীয় সমস্যা হতে পারে। সঠিক মাপের বক্ষবন্ধনী ব্যবহার না করলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, প্রায় ৮০% মহিলাদের দেখা যায় ভুল মাপের বক্ষবন্ধনী পরতে; হয় খুব আটো (টাইট) কিংবা ঢিলেঢালা গড়নের বক্ষবন্ধনী পরে যা কিনা পরবর্তীতে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মেরুদণ্ডে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, মানসিক অস্বস্তি খুবই সাধারণ যা প্রায়ই দেখা যায়। অনেক বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, ভুল মাপের বক্ষবন্ধনী ব্যবহারে স্তন ঠিক জায়গায় না থেকে বরং নিচের দিকে ঝুলে পরার প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে।[৯]

বিকল্প ধারার বক্ষবন্ধনী

জাপানি মেয়েদের রং-বেরঙের ব্যাগ কেনার বাতিককে নিরুৎসাহিত করতে অন্তর্বাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ট্রায়াম্প ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বাজারে আনে ব্যাগ-যুক্ত ব্রা। এজাতীয় বক্ষবন্ধনির কাপের মধ্যে ভাঁজ করা অবস্থায় লুকিয়ে থাকে ব্যাগ, যা প্রয়োজনে শপিংব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দাবি, এজাতীয় অন্তর্বাস, পলিথিন ব্যাগ ক্রয়ে নারীকে নিরুৎসাহিত করবে ও পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। এছাড়া ট্রায়াম্প মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে গরম করে ঘর উষ্ণ রাখা যায় এমনও একটি ব্রা বাজারে ছেড়েছিলো ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে। এতে শীতের সময় ঘর গরম করার বাড়তি খরচ বেঁচে যায়।[১০]

আরও দেখুন

পাদটিকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

প্যাটেন্ট
🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ