মানব স্ত্রী প্রজননতন্ত্র

প্রজননতন্ত্র

অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক যৌন অঙ্গগুলির সমন্বয়ে গঠিত মানব স্ত্রী প্রজননতন্ত্র মূলত নতুন সন্তানের জন্মদানে সাহায্য করে। মানুষের মধ্যে, নারীর প্রজনন ব্যবস্থা জন্মের সময়কালে অপরিণত থাকলেও এটি বয়ঃসন্ধিকালে পরিণত হয় এবং তা জননকোষ (ইংরেজি: Gametes) সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এটি পূর্ণ সময়ের জন্য ভ্রূণকে বহন করতেও সক্ষম। অভ্যন্তরীণ যৌন অঙ্গগুলি যোনি, জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান নালি এবং ডিম্বাশয় নিয়ে গঠিত। যোনি যৌন মিলন এবং জন্মদানে সাহায্য করে এবং এটি সারভিক্স (বা, জরায়ুর গলদেশ) জরায়ুর সাথে সংযুক্ত থাকে। জরায়ু বা গর্ভাশয়ের সমন্বয়ে থাকা ভ্রূণ ফিটাসে বিকশিত হয়। জরায়ু, জরায়ু স্রাব উৎপাদনের মাধ্যমে শুক্রাণুকে ফ্যালোপিয়ান নালিতে স্থানান্তরিত করে এবং সেখানে শুক্রাণু ডিম্বাশয় দ্বারা উৎপাদিত ডিম্বাণুকে (ইংরেজি: Ova) নিষিক্ত করে। বাহ্যিক যৌন অঙ্গগুলিকে যৌনাঙ্গও বলা হয়ে থাকে এবং এগুলি ভগোষ্ঠ, ভগাঙ্কুর এবং যোনিদ্বার[১] সহ প্রজনন দ্বারের (ইংরেজি: Vulva) অঙ্গ।

স্ত্রী প্রজননতন্ত্র (মানুষ)
স্ত্রী প্রজনন তন্ত্রের একটি চিত্র.
বিস্তারিত
শনাক্তকারী
লাতিনsystema genitale femininum
মে-এসএইচD005836
টিএ৯৮A09.1.00.001
টিএ২3469
এফএমএFMA:45663
শারীরস্থান পরিভাষা
১. ভালভা: ২. বৃহঃ ভগোষ্ঠ; ৩. ক্ষুদ্র ভগোষ্ঠ; ৪. চাঁদনি; ৫. ভগাঙ্কুর: (সঙ্গে ৬. শিশ্নাগ্র এবং ৭. দেহ).৮. চাঁদনি কন্দ ৯. যোনি; ১০যোনিচ্ছেদ; ১১. লুমেন; ১২. প্রাচীর; ১৩. যৌনাঙ্গ (পার্শ্বীয়); ১৪. জরায়ু: অংশ:১৫. সারভিক্স; ১৬. দেহ এবং ১৭. ফান্ডাস; ১৮. ছিদ্র: বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ; ১৯. সারভিক্স নালি; ২০. জরায়ুজ গহ্বর;স্তরসমূহ: ২১. এন্ডোমেট্রিয়াম; ২২. মায়োমেট্রিয়াম এবং ২৩. পেরিমেট্রিয়াম ; ২৪. ফ্যালোপিয়ান নালি: ২৫. ইসথ্মাস; ২৬. অ্যাম্পুলা; ২৭. ইনফান্ডিবুলাম; ২৮. ফিমব্রি (সঙ্গে ২৯. ফিমব্রিয়া ওভারিকা); ৩০. ডিম্বাশয়; ৩১. অভ্যন্তরীণ শ্রোণীর আবরকঝিল্লি: ৩২. বিস্তৃত সন্ধিবন্ধনী (সঙ্গে ৩৩. মেসোসালপিক্স; ৩৪. মেসোভেরিয়াম এবং ৩৫. মেসোমেট্রিয়াম) সন্ধিবন্ধনী: ৩৬. গোলাকার; ৩৭. ডিম্বাকার; ৩৮. ডিম্বাশয়ের নিলম্বন;
রক্তবাহ: ৩৯. ডিম্বাশয়ের ধমণী এবং শিরা ৪০. জরায়ুর ধমণী এবং শিরা; ৪১. যোনির ধমণী এবং শিরা;
অন্যান্য: ৪২. গবিনী; ৪৩. শ্রোণীতল (লিভেটর এনি); ৪৪. ঊরূ শীর্ষ; ৪৫. নিতম্বের হাড়; ৪৬. অভ্যন্তরীণ ইলিয়াক ধমণী (অগ্রবর্তী শাখা); ৪৭. বাহ্যিক ইলিয়াক ধমণী; ৪৮. উদর গহ্বর।

নির্দিষ্ট সময় অন্তর, ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু নির্গত হয়, যা ফ্যালোপিয়ান নালির মধ্য দিয়ে জরায়ুতে যায়। এই স্থানান্তরের সময়, যদি এটি শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়, তখন একটি একক শুক্রাণু (একক কোষ বিশিষ্ট) ডিম্বাণুটিতে প্রবেশ করে এবং একক কোষবিশিষ্ট সেই ডিম্বাণুটিকে (একক কোষ বিশিষ্ট) নিষিক্তকরণের মাধ্যমে জাইগোটের (একক কোষ বিশিষ্ট) সৃষ্টি করে থাকে। সাধারণতঃ নিষিক্তকরণ ফ্যালোপিয়ান নালিতে ঘটে এবং ভ্রূণের জন্মের সূচনা করে। জরায়ুর প্রাচীরে অবস্থানরত জাইগোটটি পর্যাপ্ত পরিমাণ কোষে বিভক্ত হয়ে একটি ব্লাস্টোসিস্ট তৈরি করে। এটি গর্ভাবস্থার সময়কাল থেকে শুরু করে পূর্ণ সময় পর্যন্ত ভ্রূণটিকে বিকাশ করতে থাকে। যখন ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিণত হয়, তখন সারভিক্স প্রসারিত হয় এবং নবজাতক জরায়ুর সংকোচনের মাধ্যমে জন্মপথে (বা, যোনিপথ) চালিত হয়। পুরুষদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সমতুল্য হল পুরুষ প্রজননতন্ত্র।

বাহ্যিক প্রজনন অঙ্গ

স্ত্রীদেহে বাহ্যিক প্রজনন অঙ্গগুলি হল তাদের গৌণ অঙ্গ, যা বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান।

প্রজনন দ্বার

স্ত্রী দেহে প্রজনন দ্বার বা ভালভা সমস্ত বাহ্যিক অংশ এবং কলাসমূহ নিয়ে গঠিত এরমধ্যে মন্স পিউবিস, পুডেন্ডাল ছিদ্র, বৃহঃ ভগোষ্ঠ, ক্ষুদ্র ভগোষ্ঠ, বার্থোলিনের গ্রন্থি, স্কেনের গ্রন্থি, ভগাঙ্কুর এবং যোনিছিদ্র উল্লেখযোগ্য।

অভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গ

স্যাজিটাল এম আর আই জরায়ুর সামনের দিকে অস্বাভাবিক বাঁক সহ একটি মহিলা পেলভিসের চৌম্বকীয় অনুরণন চিত্র।।
নারী প্রজনন ব্যবস্থার চিহ্নিত চিত্র (স্যাজিটাল ভিউ)
প্রজনন অঙ্গের বিন্যাস (সামনের দৃশ্য)

মহিলাদের অভ্যন্তরীণ প্রজনন অঙ্গগুলি হল যোনি, জরায়ু, ফ্যালোপিয়ান টিউব, সারভিক্স এবং ডিম্বাশয়

যোনি

যোনি হল একটি ফাইব্রোমাসকুলার (যা তন্তু এবং পেশীবহুল কলা দ্বারা গঠিত) টিউবাকৃতি নালিকা, যা স্ত্রীদেহের বাইরে থেকে জরায়ুর সারভিক্স বা গর্ভাশয় পর্যন্ত বিস্তৃত। গর্ভাবস্থায় "জন্ম পথ" হিসাবেও এটিকে উল্লেখ করা হয়। যৌন মিলনের সময় পুরুষের লিঙ্গ মহিলাদের যোনিতে অবস্থান করে। প্রচণ্ড যৌন উত্তেজনায় যোনিতে পুরুষদের বীর্যপাত ঘটে, এবং শুক্রাণুযুক্ত সেই বীর্য যোনি মারফৎ জরায়ুতে ডিম্বাণু কোষের (ডিম্বাণু) নিষিক্তকরণ সম্ভব করে।

সারভিক্স

সারভিক্সকে "জরায়ুর ঘাড়" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সারভিক্স হল জরায়ুর নীচের, সরু অংশ যা যোনির উপরের অংশের সাথে মিলিত হয়। এটি নলাকার বা শঙ্কু আকৃতির হয় এবং উপরের অগ্রবর্তী যোনি প্রাচীরের মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়। এর প্রায় অর্ধেক অংশ দৃশ্যমান, বাকি অংশ যোনিপথের উপরে থাকে যা দেখা যায় না। যোনিপথের বাইরে একটি পুরু স্তর রয়েছে এবং প্রসবকালীন অবস্থায়, ভ্রূণ বের করার সময় এটি উন্মুক্ত হয়।

জরায়ু

জরায়ু বা জরায়ু গর্ভ হল মহিলাদের প্রধান প্রজনন অঙ্গ। বিকাশমান ভ্রূণ (১ থেকে ৮ সপ্তাহ) এবং পরিণত ভ্রূণকে (৯ সপ্তাহ থেকে প্রসব পর্যন্ত) জরায়ু যান্ত্রিক সুরক্ষা, পুষ্টি সহায়তা এবং বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করে। এছাড়াও, জন্মের সময় ভ্রূণকে বাইরের দিকে ধাক্কা দেওয়ার ক্ষেত্রে জরায়ুর পেশীবহুল প্রাচীরের সংকোচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জরায়ুতে তিনটি নিলম্বিত সন্ধিবন্ধনী (ইংরেজি: Suspensory Ligament) থাকে যা জরায়ুর অবস্থানকে স্থিতিশীল করতে এবং এর চলাচলের পরিসরকে সীমিত করতে সাহায্য করে। জরায়ুজ সন্ধিবন্ধনীগুলি (ইংরেজি: Uterosacral Ligament) এর দেহকে নিকৃষ্টভাবে সামনের দিকে নড়াচড়া করা থেকে বিরত রাখে। বৃত্তাকার সন্ধিবন্ধনীগুলি জরায়ুর পিছন দিকের নড়াচড়াকে সীমাবদ্ধ করে। মৌলিক সন্ধিবন্ধনীগুলি জরায়ুর নিকৃষ্ট নড়াচড়াকে বাধা দেয়।

নাশপাতি আকৃতিবিশিষ্ট পেশীবহুল অঙ্গ হল জরায়ু। এর প্রধান কাজ হল, একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু গ্রহণ করে তা এন্ডোমেট্রিয়ামে রোপণ করা এবং রক্তনালী থেকে পুষ্টি লাভের মাধ্যমে এটির বিকাশ ঘটানো। নিষিক্ত ডিম্বাণু একটি বিকাশমান ভ্রূণে পরিণত হয়, এবং পরে তা পরিণত ভ্রূণের সৃষ্টি করে এবং প্রসব পর্যন্ত জরায়ুতেই গর্ভধারণ ঘটে। পরিণত ডিম্বাণু জরায়ুর প্রাচীরের মধ্যে নিহিত না থাকলে একজন মহিলার মাসিক শুরু হয় এবং মাসিকের মাধ্যমে ডিম্বাণুর নির্গমন ঘটে।

ফ্যালোপিয়ান নালি

ডিম্বাশয় থেকে জরায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত দুটি নালির নাম হল ফ্যালোপিয়ান নালিডিম্বাণু পরিণত হওয়ার সময়, গুটিকা (ইংরেজি: Follicle) এবং ডিম্বাশয়ের প্রাচীর ফেটে যায়, যার ফলে ডিম্বাণু বেরিয়ে ফ্যালোপিয়ান নালিতে প্রবেশ করে। সেখানে এটি নালির ভেতরের আস্তরণে থাকা সিলিয়ার নড়াচড়ার মাধ্যমে ধাক্কা খেতে খেতে জরায়ুর দিকে যায়। এই ঘটনা কয়েক ঘন্টা বা এক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যদি এই অবস্থায় ডিম্বাণুটি ফ্যালোপিয়ান নালিতে নিষিক্ত হয়, তবে এটি সাধারণত জরায়ুতে পৌঁছালে এন্ডোমেট্রিয়ামে রোপিত হয়, যা গর্ভাবস্থার শুরুর সংকেত দিয়ে থাকে।

ডিম্বাশয়

ডিম্বাশয় হল ক্ষুদ্রাকৃতি, জোড়যুক্ত অঙ্গ যা শ্রোণী গহ্বরের পার্শ্বীয় প্রাচীরের নিকটে অবস্থিত। এই অঙ্গগুলি ডিম্বকোষ (ডিম্বাণু) এবং হরমোন নিঃসরণের জন্য দায়ী। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিম্বকোষ (ডিম্বাণু) নির্গত হয়, তাকে "ডিম্বস্ফোটন" (ইংরেজি: Ovulation) বলা হয়ে থাকে। ডিম্বস্ফোটনের গতি পর্যায়ক্রমিক হয় এবং এটি সরাসরি একটি মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

ডিম্বস্ফোটনের পরে, ডিম্বাণু কোষ ফ্যালোপিয়ান নালি দ্বারা আধৃত হয় এবং ফ্যালোপিয়ান নালি থেকে জরায়ুতে যাওয়ার মাঝে একটি আগত সক্রিয় শুক্রাণু দ্বারা এটি নিষিক্ত হয়। নিষিক্তকরণের সময় ডিম্বকোষ একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি নির্দিষ্ট কিছু অণুকে নির্গত করে থাকে যা বিশেষত শুক্রাণুর "পথনির্দেশক" এর ভূমিকা পালন করে এবং ডিমের আবরণকে শুক্রাণুর আবরণের সাথে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে। ডিম্বাণু তখন শুক্রাণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষিক্তকরণের সূচনা করে।

শারীরবৃত্তীয় গঠন

প্রজনন নালি (বা জননাঙ্গ নালি) হল একটি লুমেন; যা যোনিপথের মধ্য দিয়ে একটি একক পথ হিসাবে শুরু হয়ে জরায়ুতে দুটি লুমেনে বিভক্ত হয়ে যায়। এই লুমেনদ্বয় ফ্যালোপিয়ান নালির মধ্য দিয়ে চলতে থাকে এবং উদর গহ্বরের ছিদ্র ডিস্টাল অস্টিয়াতে গিয়ে শেষ হয়। নিষিক্তকরণের অনুপস্থিতিতে মাসিকের মাধ্যমে যোনি থেকে বের না  হওয়া পর্যন্ত ডিম্বাণু, ফ্যালোপিয়ান নালি থেকে সম্পূর্ণ প্রজনন নালিকে অতিক্রম করে থাকে। প্রজনন নালিটি বিভিন্ন ট্রান্সলুমিনাল পদ্ধতির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেমন: ফার্টিলোস্কোপি, অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভধারণ নির্ধারণ এবং ট্রান্সলুমিনাল নির্বীজন প্রভৃতি।

প্রজনন তন্ত্রের বিকাশ

গর্ভধারণের সময় ক্রোমোজোমের বৈশিষ্ট্য ভ্রূণের জন্মগত লিঙ্গ নির্ধারণে সাহায্য করে। এটি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের উপর নির্ভরশীল। যেহেতু মায়ের ডিম্বাণুতে কেবল মাত্র একটি X ক্রোমোজোম থাকে এবং পিতার শুক্রাণুতে একটি X অথবা Y ক্রোমোজোম থাকে, তাই পুরুষই ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করে। যদি ভ্রূণ পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে একটি X ক্রোমোজোম পায়, তাহলে ভ্রূণটি মহিলা হয়। এই ক্ষেত্রে, টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি না হওয়ার কারণে উলফিয়ান নালীটির ক্ষয় হয় এবং মুলেরিয়ান নালীটি মহিলার যৌন অঙ্গে বিকশিত হয়। উলফিয়ান নালীর অবশিষ্টাংশই হল ভগাঙ্কুর। অন্যদিকে, ভ্রূণ যদি পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে Y ক্রোমোজোম পায়, তাহলে ভ্রূণটি পুরুষ হয় এবং এক্ষেত্রে,  টেস্টোস্টেরনের উপস্থিতি উলফিয়ান নালীকে উদ্দীপিত করে যা পুরুষের যৌন অঙ্গের বিকাশ ঘটায় এবং মুলেরিয়ান নালীটির ক্ষয়[২] ঘটে।

চিকিৎসাগত গুরুত্ব

যোনিপথের প্রদাহ বা ভ্যাজিনাইটিস

ভ্যাজিনাইটিস (ইংরেজি: Vaginitis) হল যোনিপথের প্রদাহ এবং মূলত এটি যোনির সংক্রমণের কারণে ঘটে থাকে। এটি সকল রোগের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত[৩] অবস্থা। যোনি প্রদাহের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী এমন কোন একটি জীবাণু নির্ণয় করা কঠিন কারণ এটি বিভিন্ন বয়সে, যৌন ক্রিয়াকলাপে এবং জীবাণু সনাক্তকরণের পদ্ধতির ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়। ভ্যাজিনাইটিস শুধুমাত্র যৌন সংক্রমণের জন্য হয় না, কারণ- এমন অনেক সংক্রামক জীবাণু থাকে যা শ্লেষ্মা ঝিল্লির নিকটে এবং এর ক্ষরণে অর্থাৎ শ্লেষ্মায় অবস্থান করে। ভ্যাজিনাইটিস সাধারণত যোনি স্রাবের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয়, যার একটি নির্দিষ্ট রঙ, গন্ধ বা গুণমান থাকে[৪]

ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস

এটি মহিলাদের একপ্রকার যোনিপথের সংক্রমণ। এটি ভ্যাজাইনাইটিস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয় কারন এতে কোনোরূপ প্রদাহ হয়না। ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস হল বহুজীবাণু (ইংরেজি: Polymicrobial) দ্বারা সৃষ্ট একরোগ, যা বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া সমন্বয়ে গঠিত। নিম্নলিখিত চারটি মানদণ্ডের মধ্যে তিনটি উপস্থিত থাকলে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস নিরাময় করা সম্ভব: (১) সমজাতীয়, পাতলা স্রাব, (২) যোনির পি এইচ ৪.৫ হলে, (৩) ব্যাকটেরিয়া যুক্ত যোনির এপিথেলিয়াল কোষগুলির উপস্থিতি, বা (৪) মাছের মতো আঁশটে গন্ধ। এন্ডোমেট্রিটাইটিসের[৪] মতোই অন্যান্য যৌনাঙ্গের সংক্রমণের ঝুঁকি হিসাবে এটিকে চিহ্নিত করা হয় ।

যোনিতে ছত্রাকের সংক্রমণ

এটি যোনিতে জ্বালাপোড়ার একটি সাধারণ কারণ। রোগ নির্ণয় এবং রোগ নিরাময় কেন্দ্রের তথ্যানুসারে কমপক্ষে ৭৫% প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা তাদের জীবনে অন্তত একটিবার এই সমস্যাটির অনুভব করেছেন। যোনিতে ক্যান্ডিডা নামক পরিচিত এক ছত্রাকের অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে যোনিতে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়। ছত্রাকের সংক্রমণ সাধারণত যোনিতে পি এইচ (ইংরেজি: pH) এর ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়ে থাকে, যা সাধারণ অবস্থায় আম্লিক প্রকৃতির হয়। অন্যান্য কারণ যেমন গর্ভাবস্থা, মধুমেয়, দুর্বল রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা, আঁটসাঁট পোশাক, বা ডুচিংয়ের ফলেও এটি হতে পারে। ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে নিন্মলিখিত লক্ষণগুলি যেমন চুলকানি, জ্বালাপোড়া, অস্বস্তি এবং যোনি থেকে তুলো বা পনিরের মতো সাদাস্রাবের নির্গমন প্রকাশ পায়। অনেক মহিলাদের মতে তারা এসময় বেদনাদায়ক সহবাস এবং প্রস্রাবে জ্বালাও অনুভব করে থাকেন। ছত্রাকের উপস্থিতির প্রমাণের জন্য, যোনি স্রাবের নমুনা সংগ্রহ করে তাকে একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে রাখলে ছত্রাকের সংক্রমণ নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসার জন্য বিভিন্নধরনের ক্রিম যা যোনি এলাকায় অথবা তার আশেপাশে প্রয়োগ করা যেতে পারে। অনেক সময় মৌখিক ট্যাবলেটগুলি ছত্রাকের বৃদ্ধিকে[৪] বন্ধ করতে সাহায্য করে।

যৌনাঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নারীর যৌনাঙ্গকে বিকৃত করার অনেক ধরনের প্রথা রয়েছে। সবচেয়ে সাধারণ দুই ধরনের যৌনাঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ হল ক্লাইটোরিডেক্টমি বা ভগাঙ্কুরের অপসারণ এবং ভগাঙ্কুরের চারপাশের আবরকত্বক অর্থাৎ প্রিপিউসকে কেটে ফেলা। এই মহিলাদের সকলেই বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল স্বাস্থ্যগত পরিণতির (যেমন রক্তপাত, অপূরণীয় কলার ক্ষতি এবং সেপসিস) সম্মুখীন হতে হয়, যা কখনও কখনও মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে।

যৌনাঙ্গে অস্ত্রোপচার

জেনিটোপ্লাস্টি বলতে এমন এক অস্ত্রোপচারকে বোঝায়, যা বিশেষত কর্কট রোগ এবং এই রোগের চিকিৎসার পরে ক্ষতিগ্রস্ত যৌনাঙ্গগুলির মেরামত করার জন্য করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিকল্প অস্ত্রোপচার পদ্ধতিও রয়েছে যা কেবল বাহ্যিক যৌনাঙ্গের চেহারা পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ

মহিলাদের জন্য অনেক ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হরমোনগত বা শারীরিক প্রকৃতির হতে পারে। মৌখিক গর্ভনিরোধক মেনোরেজিয়ার[৫] মতো বিভিন্ন চিকিৎসা অবস্থার ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে সক্ষম। কিন্তু তা সত্বেও, এই মৌখিক গর্ভনিরোধকগুলির বিষণ্নতার[৬] মতো বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।


প্রজনন অধিকার সংক্রান্ত বিষয়

স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত অনুশীলনে, স্ত্রীদের যত্নের মান বৃদ্ধিতে , এবং সর্বোপরি মহিলাদের মঙ্গল প্রচারের জন্য ১৯৫৪ সালে আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অফ গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১০ সাল পর্যন্ত মোট ১২৪ টি দেশ এর সাথে জড়িত ছিল। প্রজনন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আইনি অধিকারকেই "প্রজনন অধিকার" বলা হয়। মহিলারা এর মাধ্যমে যৌনতা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সহ তাদের যৌনতা সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাখে। জোরপূর্বক গর্ভধারণ, জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ, জোরপূর্বক গর্ভপাত এবং যৌনাঙ্গচ্ছেদ এই অধিকারগুলি লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে। মহিলার বাহ্যিক যৌনাঙ্গের সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণকেই মহিলাদের যৌনাঙ্গ বিচ্ছেদ বলা হয়ে থাকে ।

ইতিহাস

হিপোক্র্যাটিক লেখনীতে দাবি করা হয় যে, গর্ভধারণের জন্য পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই তাদের বীজ সৃষ্টিতে অবদান রাখে; অন্যথায়, শিশুদের উভয়ের সঙ্গে অথবা পিতামাতা উভয়ের (বা, এককের) সঙ্গে শিশুদের কোনো সাদৃশ্য থাকত না। চারশত বছর পরে, বিজ্ঞানী গ্যালেন নারীর প্রজনন অঙ্গে ডিম্বাশয় হিসেবে 'মহিলা বীর্য'-এর উৎসকে "শনাক্ত" করেছিলেন। [৭]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ


🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ