মার্টিন স্কোরসেজি
মার্টিন স্কোরসেজি[১] (পূর্ণ নাম: Martin Marcantonio Luciano Scorsese ইংরেজি উচ্চারণ: মার্টিন মার্ক্যান্টোনিও লুচিয়নো স্করসেসি,[২] ইতালীয় উচ্চারণ: মার্তিন মার্কান্তোনিও লুচানো স্কোরসেজি)[ক] (জন্ম নভেম্বর ১৭ ১৯৪২)[৩][৪][৫][৬] একজন জনপ্রিয় ও বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র নির্দেশক। স্কোরসেজির কাজের ধারা মূলত ইতালীয়-মার্কিন অস্তিত্ব, পাপবোধ আর মুক্তির ক্যাথলিক ধারণা, পৌরষবোধ আর আমেরিকার সমাজব্যবস্থায় সন্ত্রাসের প্রভাব সংশ্লিষ্ট। তিনি সমালোচকদের মাঝে তার চলচ্চিত্র নির্দেশনার জন্য প্রশংসিত।
মার্টিন স্কোরসেজি | |
---|---|
জন্ম | |
মাতৃশিক্ষায়তন | নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার |
কর্মজীবন | ১৯৬৩–বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | লারাইনে মারি ব্রেনান (১৯৬৫–১৯৭১) জুলিয়া ক্যামেরুন (১৯৭৬-১৯৭৭) ইসাবেলা রোসেলিনি (১৯৭৯–১৯৮২) বারবারা ডি ফিনা (১৯৮৫–১৯৯১) হেলেন শ্চের্মের্হন মরিস (১৯৯৯–বর্তমান) |
সন্তান | ৩ |
পিতা-মাতা | চার্লস স্কোরসেজি (পিতা) ক্যাথরিন স্কোরসেজি (মাতা) |
অস্কারজয়ী এই বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্দেশককে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তি সব চলচ্চিত্র নির্দেশকদের মাঝে একজন অন্যতম প্রধান ও প্রভাবশালী নির্দেশক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ২০০৬ সালে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। সবচেয়ে বেশি একাডেমি পুরস্কারে মনোনীত জীবিত পরিচালকদের মধ্যে তিনি প্রথম এবং সামগ্রিক ভাবে পরিচালকদের মধ্যে মনোনয়ন জন্য বিলি ওয়াইল্ডার এর সাথে তিনি দ্বিতীয়।
বন্ধু জর্জ লুকাস, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, স্টিভেন স্পিলবার্গ ও ব্রায়ান ডি পালমাদের সাথে হলিউড নিউ ওয়েব সিনেমার সৃষ্টির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন মার্টিন স্কোরসেজি। ১৯৯০ সালে তিনি চলচ্চিত্র ফাউন্ডেশন, একটি অলাভজনক চলচ্চিত্র সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৭ সালে তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্র ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য তিনি আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট (এএফআই) আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য একাডেমি পুরস্কার (অস্কার), কান চলচ্চিত্র উৎসব এ স্বর্ণপাম এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার, সিলভার লায়ন, গ্র্যামি পুরস্কার, এমি পুরস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা পুরস্কার এবং ডিরেক্টর গিল্ড অব আমেরিকা পুরস্কার লাভ করেছেন।
বন্ধু রবার্ট ডি নিরো এর সাথে ভালো বোঝা-পড়া থাকায় শিল্পগুণে সমৃদ্ধ বহু চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছে এই পরিচালক-অভিনেতা জুটি। সিনেমা ইতিহাসের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ভিয়েতনাম যুদ্ধ পরবর্তী চরম অস্থির সময় নিয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং ১৯৮০ সালের আমেরিকান সাদাকালো জীবনী নির্ভর স্পোর্টস ড্রামা রেজিং বুল।
প্রারম্ভিক জীবন
স্কোরসেজি ১৯৪২ সালের ১৭ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক রাজ্যের নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্কুলে যাওয়ার পূর্বে তার পরিবার ম্যানহাটনের লিটল ইতালিতে চলে যায়।[৭] তার পিতা চার্লস স্কোরসেজি এবং মাতা ক্যাথরিন স্কোরসেজি (জন্ম কাপ্পা) দুজনেই নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের গার্মেন্ট জেলায় কাজ করতেন। তার পিতা অভিনেতা এবং মাতা অভিনেত্রী ছিলেন।[৮] মার্টিনের পিতার পিতা-মাতাগণ সিসিলির পালের্মো অঙ্গরাজ্যের পলিজ্জি জেনেরোসা থেকে অভিবাসিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং তার মায়ের পিতা-মাতাগণও পালের্মো থেকে বা আরও নির্দিষ্ট করে সিমিন্না থেকে আসেন। মার্টিন ক্যাথলিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠেন।[৩] বাল্যকালে তার শ্বাসকষ্ট থাকায় তিনি অন্য বাচ্চাদের সাথে কোন খেলায় বা অন্য কোন কাজে অংশ নিতে পারতেন না। এজন্য তার পিতা-মাতা এবং তার বড় ভাই তাকে চলচ্চিত্র দেখতে নিয়ে যেতেন। এই সময়ে তার চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হয়। কৈশোরে ব্রোক্সে থাকাকালীন তিনি একটি দোকান থেকে পাওয়েল ও প্রেসবার্গার পরিচালিত দ্য টেলস অব হফম্যান চলচ্চিত্রের রিল ভাড়া নিতেন। ঐ দোকানে এই ছবির একটি রিলই ছিল। স্কোরসেজি ঐ দোকান থেকে এই ছবির রিল ভাড়া নেওয়া দু'জনে একজন। এছাড়া তিনি পরে জর্জ এ রোমেরোর নাইট অব দ্য লিভিং ডেড ছবির রিল ভাড়া নিতেন।[৯]
ব্যক্তিগত জীবন
স্কোরসেজি পাঁচ বার বিবাহ করেন। তার প্রথম স্ত্রী লারাইনে মারি ব্রেনান, তাদের এক কন্যা ক্যাথরিন। ১৯৭৬ সালে তিনি লেখিকা জুলিয়া ক্যামেরনকে বিয়ে করেন, তাদের এক কন্যা ডোমেনিকা ক্যামেরন স্করসেসি। ডোমেনিকা একজন অভিনেত্রী এবং তিনি দি এজ অব ইনোসেন্স চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ক্যামেরনের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিকে মাত্র এক বছর। তাদের কন্যা কেপ ফেয়ার চলচ্চিত্রে ডোমেনিকা স্করসেসি নামে অভিনয় করেন এবং পরবর্তীতে অভিনয় করা, লেখা, পরিচালনা করা ও প্রযোজনা করা চালিয়ে যান।[১০] স্কোরসেজি ১৯৭৯ সালে অভিনেত্রী ইসাবেলা রোজেলিনিকে বিয়ে করেন এবং ১৯৮৩ সালের তাদের বিচ্ছেদ হয়।[১১] তিনি পরে ১৯৮৫ সালে প্রযোজক বারবারা দে ফিনাকে বিয়ে করেন। তাদের বিচ্ছেদ হয় ১৯৯১ সালে। স্কোরসেজি পরে ১৯৯৯ সালে হেলেন শ্চের্মের্হর্ন মরিসকে বিয়ে করেন। তাদের এক কন্যা ফ্রান্সেস্কা। তিনি দ্য ডিপার্টেড ও দি অ্যাভিয়েটর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
স্কোরসেজি নিউ ইয়র্ক সিটিতে বাস করেন। তিনি বলেন, "আমি বিচ্যুত ক্যাথলিক। কিন্তু আমি রোমান ক্যাথলিক, এ থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নেই।"[১২] ২০১০ সালে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে স্কোরসেজি ডেভিড লিঞ্চ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১০,০০০ বয়োজ্যেষ্ঠ সৈন্যকে অতীন্দ্রিয় ধ্যানের মাধ্যমে পোস্টট্রমেটিক স্ট্রস ডিজঅর্ডার থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবেন,[১৩] এবং স্কোরসেজি গণমাধ্যমকে জানান যে তিনি নিজেও অতীন্দ্রিয় ধ্যানের অনুশীলন করেন।[১৪]
প্রিয় চলচ্চিত্র
২০১২ সালের সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের জরিপে সমসাময়িক চলচ্চিত্র পরিচালকদের তাদের প্রিয় ১০টি চলচ্চিত্র নির্বাচন করতে বলা হয়। এই জরিপে স্কোরসেজির পছন্দের ১২টি চলচ্চিত্র হল:[১৫]
- ২০০১: আ স্পেস অডিসি
- অত্তো এ মেজ্জো
- পপোই ই দিয়ামান্ত
- সিটিজেন কেইন
- ইল গেত্তোপার্দো
- পাইসাঁ
- দ্য রেড শুজ
- সালভাতোরে জুইয়ানো
- দ্য সার্চার্স
- উগেতসু মনোগাতারি
- ভার্টিগো
চলচ্চিত্রের তালিকা
পুরস্কার ও মনোনয়ন
পাদটীকা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে মার্টিন স্কোরসেজি (ইংরেজি)
- টার্নার ক্লাসিক মুভিজ ডেটাবেজে স্কোরসেজি মার্টিন স্কোরসেজি (ইংরেজি)
- রটেন টম্যাটোসে মার্টিন স্কোরসেজি (ইংরেজি)
- গ্রন্থাগারে মার্টিন স্কোরসেজি সম্পর্কিত বা কর্তৃক কাজ (ওয়ার্ল্ডক্যাট ক্যাটালগ) (ইংরেজি)
- সি-এসপিএএন-তে উপস্থিতি