মাহাথির বিন মোহাম্মদ

আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি


ডা. মাহাথির বিন মোহাম্মদ (জন্ম: ১০ জুলাই, ১৯২৫) মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল পর পর পাঁচবার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তিনি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৩ সালের ৩০শে অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। অবসর গ্রহণের দীর্ঘ পনের বছর পর ৯২ বছর বয়েসে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ব্যাপক দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতার কারণে মাহাথির মোহাম্মদ আবারও আসেন রাজনীতিতে। ২০১৮ সালের ৯ মে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পরদিন ১০ মে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।[২] সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর ২০২২ নির্বাচনে হেরে যান।

ইয়াং বেরহরমাত তুন ডা.
মাহাথির বিন মোহাম্মদ
এসএমএন ডিকেআই (জহর) ডিকে (কেদাহ) ডিকেএনএস ডিকে (পেরলিস) ডিইউকে এসইউএমডব্লিউ ডিইউএনএম ডিইউপিএম এসপিডিকে এসবিএস এসপিএনজে ডিপি এসএসডিকে এসপিএনএস এসএসএপি এসপিসিএম এসএসএমটি পিআইএস এমপি এনপিকে
২০১৮ সালে মাহাথির
৪র্থ এবং ৭ম মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১০ মে ২০১৮ – ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
অন্তর্বর্তীকালীন: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ – ১ মার্চ ২০২০
সার্বভৌম শাসক
  • মুহাম্মদ পঞ্চম
  • আব্দুল্লাহ
ডেপুটিওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল
পূর্বসূরীনাজিব রাজাক
উত্তরসূরীমুহিউদ্দিন ইয়াসিন
কাজের মেয়াদ
১৬ জুলাই ১৯৮১ – ৩০ অক্টোবর ২০০৩
সার্বভৌম শাসক
  • আহমদ শাহ
  • ইস্কান্দার
  • আজলান শাহ
  • জা'ফর
  • সালাহউদ্দিন
  • সিরাজুদ্দিন
ডেপুটি
পূর্বসূরীহোসাইন ওন
উত্তরসূরীআব্দুল্লাহ আহমদ বাদাভি
হোমল্যান্ড ফাইটারস' পার্টি-এর
১ম চেয়ারম্যান
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১২ আগস্ট ২০২০
রাষ্ট্রপতিমুখরিজ মাহাথির
পূর্বসূরীঅবস্থান প্রতিষ্ঠিত
মালয়েশিয়ান ইউনাইটেড ইনডিজেনিয়াস পার্টি-এর
১ম চেয়ারম্যান
কাজের মেয়াদ
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ – ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
রাষ্ট্রপতিমুহিউদ্দিন ইয়াসিন
পূর্বসূরীঅবস্থান প্রতিষ্ঠিত
উত্তরসূরীমুহিউদ্দিন ইয়াসিন (ভারপ্রাপ্ত)
ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের ৫ম সভাপতি
কাজের মেয়াদ
২৮ জুন ১৯৮১ – ৩১ অক্টোবর ২০০৩
ডেপুটি
পূর্বসূরীহোসাইন ওন
উত্তরসূরীআব্দুল্লাহ আহমদ বাদাভি
মন্ত্রীর দায়িত্ব
১৯৭৪–১৯৭৮শিক্ষামন্ত্রী
১৯৭৬–১৯৮১উপ প্রধানমন্ত্রী
১৯৭৮–১৯৮১বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী
১৯৮১–১৯৮৬প্রতিরক্ষামন্ত্রী
১৯৮৬–১৯৯৯স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
১৯৯৮–১৯৯৯অর্থমন্ত্রী
২০০১-২০০৩অর্থমন্ত্রী
২০২০ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী
অন্যান্য দায়িত্ব
২০০৩জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের মহাসচিব
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমাহাথির এ/এল ইস্কান্দার কুট্টি[১]
(1925-07-10) ১০ জুলাই ১৯২৫ (বয়স ৯৮)
আলোর সেতার, কেদাহ, অসংযুক্ত মালয় রাজ্য, ব্রিটিশ মালয় (বর্তমান মালয়েশিয়া)
রাজনৈতিক দল
  • ইউএমএনও
    (১৯৪৬–১৯৬৯, ১৯৭২-২০০৮, ২০০৯-২০১৬)
  • বেরসাতু
    (২০১৬-২০২০)
  • স্বতন্ত্র
    (২০২০)
  • পেজুয়াং
    (২০২০ থেকে)
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
  • বারিসান নাসিওনাল
    (১৯৪৬–১৯৬৯, ১৯৭২-২০০৮, ২০০৯-২০১৬)
  • পাকাতান হারাপান
    (২০১৭-২০২০, মিত্র : ২০২০ থেকে)
দাম্পত্য সঙ্গীসিথি হাসমাহ (বি. ১৯৫৬)
সন্তান৭ (মারিনা, মখজানি এবং মুখরিজ সহ)
আত্মীয়স্বজনইসমাইল মহম্মদ আলি (শ্যালক)
বাসস্থাননং. ৫৮, মাইনস রিসোর্ট শহর, সেরি কেমবানগান, সেলাঙ্গর, মালয়েশিয়া
শিক্ষাসুলতান আবদুল হামিদ কলেজ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকিং এডওয়ার্ড সপ্তম মেডিসিন কলেজ (বর্তমান সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) (এমবিবিএস)
পেশা
জীবিকাডাক্তার
পুরস্কারসম্মাননা ও পুরষ্কারের তালিকা
স্বাক্ষর
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট
টেমপ্লেট:Pom

জন্ম

কেদাহর আলোর সেতারে মাহাথিরের পৈতৃক বাড়ি

ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ ১৯২৫ সালে মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর এ্যালোর সেটর-এ এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা-মাতার নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম। তার পিতা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন এবং পরবর্তীকালে একজন সরকারি অডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। তার মা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন এবং মাহাথিরকে বাসায় পবিত্র কোরআন শিক্ষা দিতেন।[৩]

শিক্ষা

মাহাথির শৈশবে প্রথমে মালয় ও পরে শহরের একমাত্র ইংরেজি স্কুলে শিক্ষা লাভ করেন। বাসায় তাদের একজন ধর্ম শিক্ষক ছিলেন যিনি প্রতিদিন বাড়িতে এসে পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্মের উপর বিশ্বাস এবং ধর্মীয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান শেখাতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে জাপান মালয়েশিয়া আক্রমণ করে। তারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বন্ধ করে দেয় এবং একটি জাপানি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। মাহাথিরের বয়স তখন ষোল। প্রথমে তিনি জাপানি স্কুলে যেতে চান নি। ঐ সময় মাহাথির একটি স্থানীয় ছোট বাজারে কলা বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু পিতার চাপে তিনি পরবর্তীতে ঐ জাপানি স্কুলে ভর্তি হন। মালয়েশিয়ায় জাপানি শাসন প্রায় তিন বছর স্থায়ী ছিল। [৩]

১৯৪৭ সালে তিনি সিঙ্গাপুরের কিং এডয়ার্ড মেডিসিন কলেজে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া ফিরে আসেন।

পরিবার

মাহাথির ও তাঁর স্ত্রী সিতি

সিঙ্গাপুরে পড়ার সময় মাহাথিরের সিথি হাসমাহর সাথে সাক্ষাৎ হয়। সিথি হাসমাহ তখন দ্বিতীয় মালয় মহিলা হিসেবে সিঙ্গাপুরে বৃত্তি নিয়ে একই কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ছিলেন। পরবর্তীতে মাহাথির ও সিথি হাসমা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের মোট সাত জন সন্তান আছে, যার মধ্যে তিন জনকে তারা দত্তক নিয়েছিলেন। পরিবার সম্পর্কে মাহাথির বলেন, "প্রত্যেকের নিজ পরিবার একটি নিরাপদ জায়গা - যা আমাদের এই জটিল সমাজে স্থিরতা আনে।"

কর্মজীবন

১৯৫৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এসে মাহাথির একজন চিকিৎসক হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার ঠিক পূর্বে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে নিজ শহর এ্যালোর সেটরে মাহা-ক্লিনিক নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক শুরু করেন। শহরের পাঁচটি প্রাইভেট ক্লিনিকের মধ্যে এটি একমাত্র মালয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক ছিল। তিনি রোগীদের বাড়িতে যেতেন এবং মাঝে মাঝে ছোট খাট অস্ত্রোপচার করতেন। মাহাথিরের মতে চিকিৎসক হিসেবে তার প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন তার মধ্যে স্থিরতা এনেছিল ও তাকে যে কোন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে সক্ষম করেছিল। তিনি একবার 'দ্যা ইকোনমিষ্ট' পত্রিকাতে বলেছিলেন, "চিকিৎসা বিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের জন্য রাজনীতি একটি ভাল পেশা। একজন ডাক্তার রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, স্বাস্থ্যগত ইতিহাস রেকর্ড করেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন, ল্যাব পরীক্ষা করেন এবং চূড়ান্তভাবে রোগ নির্ণয় করেন। এ প্রক্রিয়াটি রাজনীতির মতই।" ১৯৭৪ সালে মন্ত্রী হবার আগ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসা পেশা অব্যাহত রেখেছিলেন।[৩]

রাজনীতি

কিশোর বয়সে রাজনীতি

মাহাথিরের বয়স যখন কুড়ি বছরের একটু বেশি তখন তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। সহপাঠীদের একত্র করে তিনি গোপনে 'মালয়ান ইউনিয়ন' প্রস্তাবের বিরুদ্ধচারণ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জাপানীরা চলে যাবার পূর্বে তৎকালীন মালয়েশিয়াকে তারা থাই সরকারের শাসনাধীনে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা আবার ফিরে আসে এবং 'মালয়ান ইউনিয়ন' প্রতিষ্ঠা করে। মালয়ান ইউনিয়ন সত্যিকার অর্থে সম্পূর্ণ উপনিবেশ ছিল। মাহাথির ও তার বন্ধুরা তখন রাতের অন্ধকারে সারা শহরে রাজনৈতিক বাণী সংবলিত পোষ্টার লাগাতেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সীমিত, 'মালয়ান ইউনিয়ন' প্রস্তাবের সমাপ্তি এবং প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা ফিরে পাওয়া। সাইকেল চালিয়ে তারা সমগ্র প্রদেশ ঘুরে ঘুরে জনগনকে ব্রিটিশ বিরোধী হিসেবে সংঘটিত ও সক্রিয় করার কাজে ব্যস্ত থাকতেন। সংগঠনে মাহাথির সাধারণত সম্পাদক বা দ্বিতীয় অবস্থানটা বেছে নিতেন, কারণ দ্বিতীয় ব্যক্তিকেই বেশি সাংগঠনিক কাজ করতে হয় ও অন্য দলগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়। [৩]

মাহাথির প্রথম কেদাহ মালয় যুব ইউনিয়ন এবং পরে কেদাহ মালয় ইউনিয়ন নামে রাজনৈতিক দল সংগঠিত করেন যা পরবর্তিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন বা ইউএমএনও (UMNO) হিসেবে পরিচিত হয়।

সিঙ্গাপুরে মাহাথির

সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন মাহাথির সেখানের কলেজের মালয় ছাত্রদের নিয়ে 'মালয় ছাত্র সংগঠন' গঠন করেন। তবে এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের শিক্ষার মান ও ফলাফল উন্নয়ন করা। এর কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।

জাতীয় রাজনীতি

সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন তিনি সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে পারেন নি। নিজ ক্লিনিক চালু করার পর তার জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। ইউএমএনও-এর প্রাদেশিক শাখার ঊর্ধ্বতন পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৬৪ সালে ৩৯ বছর বয়সে মাহাথির প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপরও এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাহায্যে তিনি ডাক্তারি প্রাকটিস অব্যাহত রাখেন। ১৯৭৪ সাল নাগাদ তিনি এই পেশা ধরে রেখেছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বার নির্বাচনে প্রার্থী হন। সেই বছর ইউএমএনও এর নেতৃত্বে জোটবদ্ধ সম্মিলিত সরকার গঠিত হয়। ইউএমএনও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। কয়েকটি প্রদেশে তারা সরকার গঠন করতেও সক্ষম হয়নি। ১৯৬৯ সালের ৩০শে মে কুয়ালালামপুরে যখন চীনা ও মালয় জাতির মধ্যে তুমুল-দাঙ্গা শুরু হয় তখন রাজনৈতিক সংকট চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে। এই দাঙ্গার জন্য মাহাথির ইউএমএনও নেতৃত্বকে দোষারোপ করে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আব্দুর রহমানকে কড়া ভাষায় চিঠি লেখেন ও পদত্যাগের পরামর্শ দেন। এ সমালোচনা পার্টি নেতৃবৃন্দের সহ্য করলেন না, তার মাহাথিরকে দল থেকে বহিষ্কার করলেন। পরবর্তী তিন বছর তিনি নিজ দেশেই রাজনীতি থেকে নির্বাসনে ছিলেন। ১৯৭২ সালে মাহাথিরকে আবার দলের সদস্য ও সিনেটর হিসেবে পুনর্বহাল করা হয়। [৩]

রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণ

১৯৭৪ সালে দল নির্বাচনে জয়ী হবার পর তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। মাত্র দুই বছর পর মাহাথির ১৯৭৬ এ উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতে তিনি সফল হন। উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের জন্য অনেক কিছু করার পরিকল্পনা থাকলেও মাহাথির স্বাধীনভাবে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে সক্ষম ছিলেন না। ১৬ই জুলাই, ১৯৮১ সালে প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি তার সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণ মুক্ত হন। সেই থেকে টানা ২২ বছর মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর মধ্যে প্রতিবার তিনি ও তার দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। মাহাথির মোহাম্মদ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় যাবৎ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ সালের ওআইসি সম্মেলনের সফল সমাপ্তির পর ৩০শে অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।[৩]

১৯৯৭ এর অর্থনৈতিক সংকট

রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন

মাহাথির বারবার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ১মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদ (1MDB) দুর্নীতি কেলেঙ্কারির জন্য পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।[৪]৩০ আগস্ট ২০১৫-এ, তিনি এবং তার স্ত্রী, সিতি হাসমাহ, বেরসিহ ৪টি সমাবেশে যোগদান করেছিলেন, যেখানে হাজার হাজার লোক নাজিবের পদত্যাগের জন্য বিক্ষোভ দেখায়।[৫] ২০১৬ সালে, মাহাথির নাজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য পাকাতান হারাপান এবং এনজিও-র সহায়তায় মালয়েশিয়ার নাগরিক ঘোষণায় নিজেরাই বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ করেছিলেন।[৬][৭]দুর্নীতির অভিযোগে নাজিবের প্রতিক্রিয়া হল উপ-প্রধানমন্ত্রীকে স্থলাভিষিক্ত করে, দুটি সংবাদপত্র স্থগিত করে এবং প্রধানমন্ত্রীকে অভূতপূর্ব ক্ষমতা প্রদান করে এমন একটি বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বিল সংসদের মাধ্যমে পাশ করে ক্ষমতায় তার দখল শক্ত করা।[৮][৯]

মাহাথির ২০১৬ সালে ইউএমএনও ত্যাগ করেন, পার্টি প্রিবুমি বেরসাতু মালয়েশিয়া (বেরসাতু) গঠন করেন।[১০][১১] নতুন দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিবন্ধিত হয় এবং মাহাথির এর চেয়ারম্যান হন।[১২]২০১৭ সালের মধ্যে, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী জোট পাকাতান হারাপানে যোগ দিয়েছিলেন। পাকাতান হারাপান-এর সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তাকে প্রস্তাব করা হয়েছিল।[১৩][১৪]

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদ (২০১৮-২০২০)

মাহাথির ২০১৮ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সাথে সাক্ষাৎ করেন
মাহাথির এবং ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি রদ্রিগো দুতার্তে, ১৫ জুলাই ২০১৮

মাহাথির ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ের পর পাকাতান হারাপান জোটের প্রধান হিসেবে ওই বছরের ১০ মে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।[১৫] এটি ছিল তার দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ।

আধুনিক মালয়েশিয়া

ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ বিশ্বময় আধুনিক মালয়েশিয়ার প্রধান রূপকার হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি সকল বিষয় পুনঃপরীক্ষা করেন। সকল নীতি, পদ্ধতি, সরকার চালাতে প্রাত্যহিক সকল কাজ, আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়। তার সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ওয়ার্ক-ফ্লো চার্ট আর অফিস ম্যানুয়েল প্রবর্তন করেন। মাহাথির ও তার সরকার দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি তৈরি করেন যার মাধ্যমে প্রত্যেকে তার নিজ নিজ ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হয়। ব্যবসা এবং রাজনীতিতে ফুটপাতের লোক থেকে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পর্যন্ত দেশের জন্য নিজের জন্য কাজ করবে।

১৯৯০ সালে মালয়েশিয়া বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৮% ছাড়িয়ে যায়।[৩] মাহাথির ১৯৭১ সালে প্রনিত নিউ ইকোনমিক পলিসি (এনইপি) সফল ভাবে বাস্তবায়নে সচেষ্ট হন। এনইপির উদ্দেশ্য ছিল জাতি নির্বিশেষে দারিদ্র্য বিমোচন এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাতি পরিচয় মুছে ফেলা। নতুন সম্পদ সৃষ্টি করা এবং এর বৃহত্তর অংশ দরিদ্রদের জন্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে সম্পদের পুনঃবণ্টনের চেষ্টা করা হয়। ১৯৯১ সালে বিশ বছর মেয়াদি এনইপি শেষ হয়। দারিদ্র্য বিমোচন বহুলাংশে অর্জিত হয়। সমৃদ্ধির একটি পর্যায়ে পৌছে মালয়েশিয়া বিভিন্ন জাতির সুসম্পর্কসহ একটি জাতিতে পরিনত হয় যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঈর্ষনীয়। বিশ বছর মেয়াদি এনইপি শেষ হবার পর দশ বছর মেয়াদি ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি (এনডিপি) প্রনয়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নতুন সংস্কৃতি

ভিশন - ২০২০

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

🔥 Top keywords: রাম নবমীমুজিবনগর দিবসপ্রধান পাতামুজিবনগর সরকারবিশেষ:অনুসন্ধানইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগএক্স এক্স এক্স এক্স (অ্যালবাম)বাংলাদেশবাংলা ভাষামিয়া খলিফারাজকুমার (২০২৪-এর চলচ্চিত্র)আনন্দবাজার পত্রিকাআবহাওয়ারামপহেলা বৈশাখউয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগইসরায়েলইরানরবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমুজিবনগরইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউনরিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব২০২৪ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগক্লিওপেট্রাচর্যাপদভূমি পরিমাপশেখ মুজিবুর রহমানজনি সিন্সকাজী নজরুল ইসলামঈদুল আযহাফিলিস্তিনইউটিউবভারতবিকাশআসসালামু আলাইকুমসৌদি আরববাংলা প্রবাদ-প্রবচনের তালিকামুহাম্মাদ