যৌন সংখ্যালঘুর পরিবার প্রতিপালন
ব্যক্তি নারী হোক বা পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রুপান্তরকামী হয়েও তার সন্তান পরিচর্যা করার যে পাঠ, তাই যৌন সংখ্যালঘুর পরিবার প্রতিপালন (ইংরেজিতে এলজিবিটি প্যারেন্টিং) হিসেবে নির্দেশিত করে এ নিবন্ধে আলোকপাত করা হবে। যেসব সন্তান সমলিঙ্গ দম্পতির দ্বারা বেড়ে উঠে তারা যেমন এই নিবন্ধের অন্তর্ভুক্ত একইভাবে যেসব সন্তান বিপরীত লিঙ্গের পিতামাতার দ্বারা প্রতিপালিত হয়, কিন্তু সেখানে অন্তত একজন পিতা অথবা মাতা যৌন সংখ্যালঘু (সমকামী, উভকামী, রুপান্তরকামী) থেকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের নিয়েও এই নিবন্ধে আলোচনা করা হবে।
যৌন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন বিভিন্ন উপায়ে পিতামাতা হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন। তারা সহপিতা-মাতা, দত্তক নেওয়া, ডোনার এর সহযোগিতায় গর্ভাধান, রিসিপ্রোকাল আইভিএফ এবং সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে পারেন।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী, সমলিঙ্গ দম্পতির সন্তানেরা বিপরীত লিঙ্গের সন্তানের ন্যায় ভালো ফলাফল তো করেই এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিষমকামী দম্পতিদের তুলনায়ও তারা ভালো ফলাফল করে।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭][৮][৯][১০][১১][১২][১৩][১৪][১৫]
যৌনসংখ্যালঘু সদস্যদের পরিবারের প্রকারভেদ
যৌন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন বিভিন্ন উপায়ে পিতামাতা হওয়ার স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন। তারা সহপিতা-মাতা, দত্তক নেওয়া, ডোনার এর সহযোগিতায় গর্ভাধান, রিসিপ্রোকাল আইভিএফ এবং সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে পারেন।[১৬][১৭] সমকামী নারী অথবা পুরুষ অথবা পরবর্তীতে রুপান্তরিত ব্যক্তি বিপরীত লিঙ্গের সম্পর্ক বিশেষত মিশ্র অভিমুখী বিবাহের মত বিভিন্ন কারণে সন্তান লাভ করেন।[১৮][১৯][২০][২১][২২][২৩][২৪]
কিছু শিশু জানেই না, তাদের পিতামাতা যৌন সংখ্যালঘুদের একজন। কারণ সমকামী হিসেবে প্রকাশ্যে আসার (কামিং আউট) মত বিষয়টি সন্তান কী হিসেবে তা ভেবেই তারা দ্বিধাগ্রস্ত থাকে।
বেশিরভাগ উভকামী, রুপান্তরকামী বা সমকামীরা পিতামাতার অধিকার পালন করেন। উদাহরণ স্বরুপঃ ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি অনুযায়ী ৩৩ শতাংশ নারী সমকামী দম্পতি ও ২২ শতাংশ পুরুষ সমকামী দম্পতির গৃহে ১৮ বছরের নিচে অন্তত একজন সন্তান আছে।[২৫] ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ২ লক্ষ ৭০ হাজার ৩১৩ জন শিশু সমকামী দম্পতির দ্বারা প্রতিপালিত হচ্ছে।[২৬]
সারোগেসি
কিছু পুরুষ সমকামী দম্পতি সন্তান লাভের জন্য সারোগেট গর্ভাবস্থার দ্বারস্থ হন। সারোগেট হলো একজন নারী; যিনি উক্ত সমকামী দম্পতির একজন থেকে প্রাপ্ত শুক্রাণু দ্বারা তার ডিম্বাণু নিষিক্ত করে তা গর্ভে ধারণ করেন। কিছু নারী অর্থপ্রাপ্তির আশায় আবার কেওবা নিছক মানবতার খাতিরে, আবার কেওবা উভয়ের জন্যই সারোগেট মাতা হতে রাজি হন।[২৭] যেসব পিতামাতা সারোগেসি পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, তারা অপবাদগ্রস্থও হতে পারেন।[২৮]
গর্ভাধান
ইনসারমিনেশন বা গর্ভাধানের এই প্রক্রিয়া মুলত নারী সমকামী দম্পতিরা অনুসরণ করেন। এখানে দুইজন নারী সমকামী দম্পতির যে কোনো একজন সিরিঞ্জ দিয়ে দাতার স্পার্ম বা বীর্য দিয়ে তার ডিম্বাণু নিষিক্ত করেন। কোনো পুরুষ তার বীর্য দান করেন মানবিক কারণে কেও বা দান করেন অর্থালাভে, আবার কেও উভয় কারণেই দান করেন। কিছু দেশে দাতা তার পরিচয় লুকিয়ে রাখতে পারে (যেমনঃ স্পেইন) আবার কিছু দেশে যারা দাতা তার পরিচয় প্রকাশও করতে পারে (যুক্তরাজ্য)।
রিসিপ্রোকাল আইভিএফ
পারস্পরিক ইভিএফ বলতে বুঝানো হয়, একজোড়া দম্পতির দুইজন সদস্যই নারীর জনন অঙ্গ ধারণ করবেন এবং ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে একজন সঙ্গী ডিম্বাণু দান করবেন, যা ল্যাব বা পরীক্ষাগারে নিষিক্ত করে ভ্রূণ সৃষ্টির পর অপর সঙ্গীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তিনি সফলভাবে গর্ভসঞ্চার করবেন।[১৭]
অন্যান্য পদ্ধতি
আধুনিক সময়ে বিজ্ঞানীরা সচেষ্ট হয়েছেন মানুষের পিতৃত্ব বা মার্তৃত্বকে এমন ছাচে ঢেলে সাজানোর, যাতে করে সমলিঙ্গের দম্পতিরাও সম্পূর্ণ নিজের মত করে সন্তান লাভ করতে পারেন।[২৯] এরকম একটি সম্ভাবনা হলো, চামড়ার স্টেম কোষ থেকে শুক্রানু সৃষ্টির গবেষণার অগ্রগতি চালানোর পদক্ষেপ নেওয়া।[৩০]
পরিসংখ্যান
ডিসেম্বর ২০০৭ যুক্তরাষ্ট্রের শুমারী অনুযায়ী, সন্তান আছে, এরূপ সমকামী দম্পতির আর্থিক অবস্থা বিষমকামী বিবাহিত দম্পতির তুলনায় খারাপ এবং সমকামী দম্পতির নিজেদের ঘরের মালিকানা থাকার হার বিষমকামী দম্পতির চেয়ে কম।[২৬]
২০১৩-১৪ সালে পোল্যান্ডে বসবাসরত ৩০০০ জন সমকামী উভকামী রুপান্তরকামীর উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, তাদের ৯ শতাংশ দম্পতি (১১.৭ শতাংশ নারী সমকামী দম্পতি ৪.৬ শতাংশ পুরুষ সমকামী দম্পতি) পিতামাতা হওয়ার অধিকার অর্জন করেছে।[৩১] ২০১১ সালে কানাডীয় আদমশুমারীতে পোলিশ গবেষণার ন্যায় ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, কানাডার সমকামী দম্পতিদের ৯.৪ শতাংশ সন্তান প্রতিপালন করছেন।[৩২]