হনুমান চালিশা
হনুমান চালিশা হল রামায়ণের অন্যতম মুখ্য ব্যক্তিত্ব হনুমানের প্রতি নিবেদিত অওধী ভাষায় লিখিত একটি জনপ্রিয় ভক্তিমূলক চালিশা অর্থাৎ চল্লিশটি চৌপাই নিয়ে রচিত কবিতা।[২][৩][৪][৫] জনপ্রিয় মত হল এটি রচনা করেন রামচরিতমানস রচয়িতা কবি তুলসীদাস, সাম্ভাব্য রচনাকাল ১৫৭৫ খ্রীষ্টাব্দ।[৬] চল্লিশটির মধ্যে শেষ চৌপাইটিতে তুলসিদাসের উল্লেখ সেই মতকেই সমর্থন করে। তবে ভিন্ন মতে এটি অনেক পরের রচনা।[৭] যদিও অবধী হিন্দির একটি উপভাষা মাত্র, কিন্তু শুধুমাত্র হিন্দিভাষীদের মধ্যেই নয় ভারতের অনেক অঞ্চলেরই লোক যারা হিন্দী বোঝেনা তাদের মধ্যেও প্রেরণাত্মক মন্ত্র বা স্তোত্র বা গান হিসাবে এটি লোকপ্রিয়।[৮][৯][১০][১১] দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই রামায়ণের বহু চরিত্র এখোনো জনপ্রিয় এবং তাদের মধ্যেও হনুমান চালিশার ব্যবহারের উদাহরণ আছে।[১২] চ্যালিসিসের বিবরণে হনুমান তার জ্ঞানের ভিত্তিতে, রামের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শূন্য অর্থে ব্যক্তি।[১৩]
হনুমান চালিশা | |
---|---|
তথ্য | |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
রচয়িতা | তুলসী দাস |
ভাষা | অবধি ভাষা[১] |
শ্লোক | ৪০ |
ভারতে হনুমানের মন্দিরের সংখ্যা অন্যতম সর্বোচ্চ এবং হনুমান চালিশা জপ অন্যতম জনপ্রিয় হিন্দু লোকাচার।[১৪]
মূলপাঠ
দোহা
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
শ্রীগুরুর চরণরুপ কমলের পরাগের দ্বারা নিজের মনরূপ দর্পণ পরিষ্কার করে, রঘুবর শ্রীরামচন্দ্রের বিমল যশ বর্ণনা করতে প্রবৃত্তি হচ্ছি, শ্রীরামের এই কীর্তিগাথা ধর্ম, অর্থ, কাম, এবং মোক্ষ - এই চতুর্বিধ পুরুষার্থই প্রদান করে।[১৫][১৬]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
কিন্তু আমি যে নিতান্তই নির্বোধ (সুতরাং এই কর্মে অক্ষম) তা বুঝে, পবননন্দন হনুমানকে স্মরণ করছি, কৃপা করে আমায় সেই ক্ষমতা, বুদ্ধি এবং বিদ্যা দান করুন, আমার সর্বপ্রকার ক্লেশ এবং তজ্জনিত বিকারসমূহ হরণ করুন।[১৬][১৭][১৮][১৯]
[২০] চোপাঈ(মূল চালীসা)
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
হে হনুমান, জ্ঞান ও গুণের সাগর , আপনার জয় হোক। আপনি কপি (বানর) শ্রেষ্ঠ ত্রিভুবনেই (পাতাল, মর্ত্য (পৃথিবী) এবং স্বর্গ) প্রসিদ্ধ আপনার নাম।[১৬][২১][২২]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
আপনি শ্রীরামের দূত অতুলনীয় আপনার বল ও তেজ। আপনি অঞ্জনির পুত্র এবং পবন-পুত্র নামেও পরিচিত।[১৭][২১][২৩]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
আপনি মহান বীর, মহাবিক্রমশালী।বজরঙ্গবলী আপনি কুমতির নিবারণকর্তা শুভবুদ্ধির সঙ্গী(অর্থাৎ শুভ বুদ্ধি প্রদানকারী)।[১৭][২১][২৪]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
স্বর্ণবর্ণ দেহে শোভন বেশে কর্ণে কুণ্ডল(কানের দুল)।কুঞ্চিত কেশের শোভায় দর্শনীয় আপনার রূপ।[২৫]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
আপনার হস্তে বজ্র ধ্বজা বিরাজিত, স্কন্ধে(কাঁধ) মুঞ্জাতৃণ নির্মিত উপবীত শোভমান।[২৬]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
মহাদেবের অংশ জাত আপনি, বানর শ্রেষ্ঠ কেশরী আপনার পিতা তেজ এবং প্রতাপে আপনি সর্বজগতে পূজনীয়।[১৭][২১][২৭]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
সর্বপ্রকার বিদ্যা ও সকল গুণে ভূষিত আপনি উদ্দেশ্যসাধনে অতিশয় দক্ষ ও চতুর, বিশেষতঃ শ্রীরামের কার্যসম্পাদনে আপনি সর্বদা তৎপর।[২৮]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
প্রভু রামচন্দ্রের চরিতকথার রসগ্রাহী শ্রোতা আপনি, আপনার হৃদয়ে শ্রীরাম, লক্ষ্মণ এবং সীতার নিত্য বসতি।[২৯]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
আপনি ক্ষুদ্র দেহ ধারণ করে সীতাদেবীকে দেখা দিয়েছিলেন, আপনি লঙ্কা দহনের সময় বিকট রূপ ধারণ করেছিলেন।[৩০]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
রাক্ষসদের সংহারকালে আপনার রূপ অতি ভয়ঙ্কর, শ্রীরামচন্দ্রের কার্যোদ্ধারের জন্য আপনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করেন।[৩১]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
সঞ্জীবনী ঔষধি নিয়ে এসে, আপনি লক্ষ্মণ'কে পুনর্জীবিত করেন। (আপনার এই অসামান্য কর্মকুশলতা দর্শনে) আনন্দিত চিত্তে শ্রীরাম আপনাকে বক্ষে জড়িয়ে ধরেন।[১৭][৩২][৩৩]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
রঘুপতি আপনার অশেষ প্রশংসা করেন এবং বলেন, "তুমি ভরতেরই মতো আমার পরম প্রিয় ভ্রাতা"।[১৭][৩২][৩৪]
দেবনাগরী | বাংলা লিপ্যন্তর |
আমি সহস্র বদনে তোমার যশ কীর্তন করি, এই কথা বলে শ্রীরাম আপনাকে কন্ঠলগ্ন করেন।
বাংলা লিপ্যন্তর | |
ব্রহ্মাদি সনকাদি মুনি নারদ সকলে তোমার মহিমা বর্ননা করেন।[১৭][৩২]
বাংলা লিপ্যন্তর | বাংলা অনুবাদ |
য়ম কুবের দিগপাল জহাং তে । কবি কোবিদ কহি সকে কহাং তে ॥১৫॥ | কবি এবং পণ্ডিতরা ইত্যাদি এমনকি যমরাজ, কুবের এবং দিগপালের মতো দেবতারাও হনুমানের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে ব্যর্থ। ॥১৫॥ |
তুম উপকার সুগ্রীবহি কীন্হা । রাম মিলায় রাজপদ দীন্হা ॥১৬॥ | তুমি সুগ্রীবের একটি মহান উপকার করেছো, তাকে শ্রী রামের সাথে একত্রিত করে রাজকীয় সিংহাসনে স্থাপন করেছ ॥১৬॥ |
তুম্হরো মন্ত্র বিভীষণ মানা । লংকেশ্বর ভয়ে সব জগ জানা ॥১৭॥ | তোমার ভগবান রামের উপদেশ বিভীষণ মানে, লঙ্কার অধীশ্বরের (রাবণ) ভয় সম্পর্কে সমস্ত বিশ্ব জানে ॥১৭॥ |
য়ুগ সহস্র য়োজন পর ভানূ । লীল্যো তাহি মধুর ফল জানূ ॥১৮॥ | সহস্র যোজন উর্দ্ধে সূর্য্যদেবকে দেখে, ভুল করে তারে মিষ্টি ফল ভেবে গ্রাস করেছিলে ॥১৮॥ |
প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহী । জলধি লংঘি গয়ে আচার্য নাহী ॥১৯॥ | প্রভু রামের আংটি মুখে নিয়ে তুমি নির্দ্বিধায় সমস্ত বাঁধাকে তুচ্ছ করে সাগর পারি দিয়ে ছিলে ॥১৯॥ |
দুর্গম কাজ জগত কে জেতে । সুগম অনুগ্রহ তুমহ্রে তেতে ॥২০॥ | দুর্গম কাজ যা পৃথিবীতে কেউ সম্পন্ন করতে পারেনা, তা তোমার অনুগ্রহে সহজ সরল হয়ে যায় ॥২০॥ |
রাম দুয়ারে তুম রখবারে । হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে ॥২১॥ | প্রভু রামের দুয়ারে তুমি চিরকালের রক্ষী, তোমার আজ্ঞা ছাড়া কেহ না প্রবেশ করতে পারে ॥২১॥ |
সব সুখ লহৈ তুম্হারী শরণা । তুম রক্ষক কাহূ কো ডরনা ॥২২॥ | তোমার কৃপায় আমি সর্বসুখ লাভ করি, তুমি যেথা রক্ষী, সেথা আর কারে ডরি ॥২২॥ |
আপন তেজ সম্হারো আপৈ । তীনোং লোক হাংক তে কাংপৈ ॥২৩॥ | নিজের তেজ, তুমি নিজেই করো সম্বরণ, তোমার হুঙ্কারে দেখো কাঁপে ত্রিভুবন ॥২৩॥ |
ভূত পিশাচ নিকট নহি আবৈ । মহাবীর জব নাম সুনাবৈ ॥২৪॥ | ভুত, প্রেত, পিশাচ কভু কাছে না আসে, মহাবীর নাম তবে যে স্মরণ করে। ॥২৪॥ |
নাসৈ রোগ হরৈ সব পীরা । জপত নিরন্তর হনুমত বীরা ॥২৫॥ | রোগ, কষ্ট ও দুর্দশা সব দূর হয়, যে জন তোমার নাম জপ করে ॥২৫॥ |
সংকট সে হনুমান ছুড়াবৈ । মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ ॥২৬॥ | বিপদ ও সংকটে একমাত্র মহাবীর হনূমান উদ্ধার করে, যে তার নাম (হনুমান ) চিরকাল ধ্যান করে ॥২৬॥ |
সব পর রাম তপস্বী রাজা । তিনকে কাজ সকল তুম সাজা ॥২৭॥ | যে মহাপ্রভু রামের ধ্যান তপস্যা করে, তুমি তাদের সমস্ত কঠিন কাজকে সহজ করো ॥২৭॥ |
ঔর মনোরধ জো কোয়ি লাবৈ । সহি অমিত জীবন ফল পাবৈ ॥২৮॥ | তোমার চরণে যে অন্তরের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে সমর্পণ করে, তবে সে জীবনের সীমাহীন ফল লাভ করে ॥২৮॥ |
চারো যুগ প্রতাপ তুম্হারা । হৈ প্রসিদ্ধ জগত উজিয়ারা ॥২৯॥ | তোমার নামের খ্যাতি ছড়াবে চার যুগে, তোমার মহিমাতে আলোকিত হবে জগৎ জুড়ে ॥২৯॥ |
সাধু সন্ত কে তুম রখবারে । অসুর নিকংদন রাম দুলারে ॥৩০॥ | হে হনুমান, তুমি রক্ষা করো সাধু সন্ত, অসুর সংহার করে তুমি শ্রী রামের প্রিয় ভক্ত ॥৩০॥ |
অষ্ঠসিদ্ধি নব নিধি কে দাতা । অস বর দীন্ জানকী মাতা ॥৩১॥ | তুমি অষ্ট সিদ্ধি ও নব নিধির শক্তি দান করতে পারো, যা তুমি বরদান রূপে পেয়েছো, জানকি মাতার থেকে ॥৩১॥ |
রাম রসায়ন তুম্হারে পাসা । সদা রহো রঘুপতি কে দাসা ॥৩২॥ | হে হনুমান, তুমি রাম নামের অমৃতের অধিকারী, সর্বদা ভগবান রঘুপতির সেবক হয়ে থাকো ॥৩২॥ |
তুম্হরে ভজন রামকো পাবৈ । জনম জনম কে দুখ বিসরাবৈ ॥৩৩॥ | তোমার আরাধনা করে, কেউ ভগবান রামের ভক্তি লাভ করতে পারে, এবং তা করে জন্ম জন্মের সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্ত হতে পারে ॥৩৩॥ |
অন্ত কাল রঘুপতি পুরযায়ী । জহান জনম হরিভক্ত কহায়ী ॥৩৪॥ | রঘুপতি রামের সেবায়, যে জীবন নিবেদন করে, তিনি প্রতি জন্মে হরি (ভগবান বিষ্ণুর) ভক্ত হবে ॥৩৪॥ |
ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরায়ে । হনুমত সেযি সর্ব সুখ করায়ে ॥৩৫॥ | অপর কোন দেবতার প্রতি চিত্ত নিবিষ্ট না করেও কেবল হনুমানের সেবা করেই সর্বফল লাভ করা যেতে পারে ॥৩৫॥ |
সংকট কটৈ মিটৈ সব পীরা । জো সুমিরৈ হনুমত বল বীরা ॥৩৬॥ | রোগের সমস্ত বিপদ থেকে মুক্তি পায় সে, যে মহাবলী বীর্যবীর হনুমান কে স্মরণ করে ॥৩৬॥ |
জয় জয় জয় হনুমান গোসায়ী । কৃপা করহু গুরুদেব কী নায়ী ॥৩৭॥ | হে প্রভু হনুমানজি, তোমার জয় হোক, জয় হোক, জয় হোক। তোমার গুরুদেবের মতোই তুমি আমাকে কৃপা করো ॥৩৭॥ |
যো শত বার পাঠ কর কোয়ী । ছূটহি বন্দি মহা সুখ হোয়ী ॥৩৮॥ | এই হনুমান চালিশা যে শত বার পাঠ করবে, সে পার্থিব বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে প্রভুত্ব সুখ ও সৌভাগ্য লাভ করবে ॥৩৮॥ |
জো য়াহ পড়ে হনুমান চালীসা । হোয়ে সিদ্ধি সাখী গৌরীশা ॥৩৯॥ | যিনি এই হনুমান চালিশা ভক্তি সহকারে পাঠ করেন, স্বয়ং ভগবান শিব সাক্ষী, তিনি অবশ্যই সিদ্ধি লাভ করেন ॥৩৯॥ |
তুলসীদাস সদা হরি চেরা । কীজৈ নাথ হৃদয় মহ ডেরা ॥40॥ | তুলসীদাস (নিজ নাম) সদা প্রভু হরির ভক্ত, এই বিশ্বাস করে হৃদয়ে স্থান দাও ॥40॥ |
তথ্যসূত্র
এই পাতাতে দোহার ১৫ থেকে ৪০ পংক্তিগুলির লিপান্তর ও অনুবাদ হনূমান চালিসার বাংলা অনুবাদ সাইট টি থেকে নেওয়া হলো।